জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৩৩ || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

 জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৩৩
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

অবাধ্য সময় তার নিজস্ব গতিতে বয়ে চলেছে। সে কখনই কারো কথা শোনেনা, বোঝেনা, কারও অপেক্ষাও করেনা এটা সবাই জানে। কিন্তু তবুও সময়কে হাতের মুঠোয় বেঁধে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা অনেকেই করে। আবার অজান্তেই সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া মানুষের অভাব নেই। কেউ নিজের সুখের সময়টাকে ধরে রেখে দিতে চায়, আবার কেউ কষ্টের সময়গুলোকে দ্রুত পার করে ফেলতে চায়। কিন্তু সময়তো তার নিজস্ব ধারাতেই চলে। কারো সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। আবার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী তো সময় শুধু মানুষকে নিরাশ করতেই পটু। দেখতে দেখতে দুটো বসন্ত পেরিয়ে গেছে। সময় নিজের সাথে সাথে অনেককিছুই বদলে দিয়েছে। কিন্তু যত যাই হোক জীবন কারোর জন্যে থেমে থাকেনা। তাই সকলের জীবনই নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে এগোচ্ছে সেটাই ভাবার বিষয়।

” Thanks sir, hope you got your answer. It was good to talk. see you at the next meeting.”
” Sure.Good luck to you.”
কথাটা বলে সামনের ব্যাক্তির সাথে হ্যান্ডশেক করে তাকে বিদায় দিল সৌহার্দ্য। ল্যাপটপটা বন্ধ করে চোখ থেকে চিকন ফ্রেমের চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস ফেলল। এরপর টেবিলের ওপরের লাল বাটন চাপতেই দ্রুত দরজার সামনে একজন ছেলে এসে উপস্থিত হয়ে বলল,
” ইয়েস স্যার?”
” পূট এভরিথিং ইন ওর্ডার এন্ড দেন গো। আ’ম লিভিং।”
ছেলেটা মাথা নাড়ল। সৌহার্দ্য কিছু না বলে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেল নিজের ফ্লাটের উদ্দেশ্যে। সৌহার্দ্য ফ্লাটের ঢোকার সাথেসাথেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা জানতে চাইলেন যে এখন সৌহার্দ্য কী খাবে এখন।
” ব্রিং আ কাপ অফ ব্লাক কফি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মহিলাটি কফি আনতে চলে গেলেন। সৌহার্দ্য ফ্রেশ হতে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি একটা ধোঁয়া ওঠা কফির মগ নিয়ে এসে টেবিলে রেখে চলে গেল। সৌহার্দ্য ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে কফির মগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো বারান্দায়। বিশাল উঁচু বিল্ডিং এর ব্যালকনি থেকে দেখছে শহরটাকে। বেশ রাত হয়ে গেছে। তবুও শহরটাতে আলো ঝলমল করছে। সূর্য ডুবে যাওয়ায় আলোর বোধ হয় কোন কমতি হয়না এ শহরে। বরং আলোর মাত্রা বেড়ে যায় বলেই মনে হয় সৌহার্দ্যর কাছে। আকাশচুম্বী সব টাওয়ার, বিশাল বিশার আধুনিক স্হাপত্য, এতো আলো, নিচের সমতল বিস্তৃত রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা অগনিত যানবাহন। ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ব্যাংককের এই সৌন্দর্য দেখছে সৌহার্দ্য।

কিন্তু উপভোগ করছে কি-না সেটা বলা মুসকিল। চারপাশে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে চোখজোড়া নিচে নামালো সৌহার্দ্য। হাসিটাতে সম্ভবত তাচ্ছিল্যই মিশে ছিল। হয়ত নিজের ওপরই হাসল ও। সত্যিই জীবনটা অদ্ভুত দিকে মোড় নিয়েছে ওর। দুই বছর অনেকটা সময় কাউকে বদলে দেওয়ার জন্যে। সৌহার্দ্যর মধ্যেও বদল ঘটেছে তবে সেটা অন্যরকম। সৌহার্দ্য আগের মত থাকলেও নিজের জীবন নিয়ে ওর আর কোন সিরিয়াসনেস নেই। ও ওর বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভাবছেও না। ওর জীবনের এখন একটাই উদ্দেশ্য যতদিন বেঁচে আছে ততদিন বাবার এই ব্যবসা সামলে যাওয়া। নিজের জীবন নিয়ে অদ্ভুত ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠল সৌহার্দ্য। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল ওর মা মিসেস নাহার ফোন করেছে। সৌহার্দ্য ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিলো। মিসেস নাহার সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

” কেমন আছিস, বাবা?”
সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বলল,
” ভালো। নিজে থেকে একটু ফোনও তো করতে পারিস বল। নিজেকে এভাবে গুটিয়ে রাখার কোন মানে আছে?”
” গুটাতে আর পারলার কই? এতোগুলো পিছুটান আছেতো। গুটিয়ে তো অন্যকেউ গেছে। ছাড়ো এসব, তুমি কেমন আছো? বাবা কেমন আছে? আপুই ঠিক আছে তো? আর চ্যাম্প?”
” আমরা সবাই ঠিক আছে। তোর ফুপা-ফুপি বলছিল..”
বিহান শক্ত কন্ঠে বলল,
“ওনারা কী বলছিল আমি শুনতে চাইনা।”
মিসেস নাহার লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

“তুই তোর কথা বল, সবার কথা আর কত ভাববি? এবার নিজের জীবনটা গুছিয়ে নে।”
” সবতো গোছানোই আছে।”
মিসেস নাহার এবার একটু রাগী কন্ঠে বললেন,
” না নেই, আর কত এভাবে থাকবি। এবারতো বিয়ে করে নে। নাতি-নাতির মুখ দেখে মরতে দিবিনা না-কি? মেয়েতো আমরা ঠিক করেই রেখেছি। তুই এলেই বিয়ে হবে।”
সৌহার্দ্য বিরক্ত হয়ে বলল,
” মা আমি আগেই বলেছি যা বলার। এসব বলতে ফোন করোনা প্লিজ। আমি কিন্তু ধরব না।”
” আচ্ছা ঠিকাছে বলবনা আর।”
সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” বিহানের কোন খোঁজ পেয়েছ?”
” না রে। কোথায় পাবো। দু’বছর যাবত ছেলেটার কোন খোঁজ নেই। জানিনা কোথায় চলে গেছে।”

সৌহার্দ্য একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকাল। সবকিছুই এমন এলোমেলো হওয়ার কী খুব দরকার ছিল? দু’বছর আগে দেশ ছেড়ে আসাটা কী ভুল ছিল? হয়ত। কিন্তু ও কী করত? ওতো মানুষ পরপর দুজন কাছের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ধাক্কা সামলাতে পারেনি ও। ওখানে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, তাইতো চলে এসছিল। ওর মা এখন বিয়ের জন্যে মাঝেমাঝেই খুব চাপ দিচ্ছে ওকে। কিন্তু ওতো পারেনি আর কাউকে মনে জায়গা দিতে। একবার চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল এখানেই বিয়ে করবে। মেয়েটাকে ভোলা প্রয়োজন। কিন্তু পাত্রীর সাথে দুমিনিট কথা বলেই অস্হির হয়ে পরেছিল ও।

পারছিল না অন্যকাউকে নিয়ে কিছু ভাবতে। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে অবশেষে মস্তিষ্কের হার হয়েছিল। করতে পারেনি অন্যকাউকে বিয়ে। কিন্তু ওর বাবাও নাছোড়বান্দা নিজেই মেয়ে দেখে রেখে দিয়েছে, সৌহার্দ্য ফিরলে যেকোন ভাবেই হোক বিয়ে দেবেনই। একটা ছেলে এভাবে চিরকুমার হয়ে বসে থাকবে সেটা মানা যায়না। কিন্তু সৌহার্দ্য মনে তো এখনও এক রমনীর চঞ্চলতা খেলা করে, সেই খিলখিল হাসি, অদ্ভুত কথা কীকরে ভুলবে? সারাদিন মন থেকে সরিয়ে রাখলেও প্রতিটা নিস্তব্ধ রাতে তুর্বী নামক এই নিষ্ঠুর রমনী হামলা করে সৌহার্দ্যর স্মৃতিজুড়ে, ক্ষতবিক্ষত করে দেয় হৃদয়কে। কেমন আছে ও? নিশ্চয়ই ভালো আছে! আচ্ছা এখনও কী একাই আছে? না-কি বিয়ে করে নিয়েছে।

কথাটা ভাবলেই আজও গলা শুকিয়ে আসে সৌহার্দ্যর। আর বিহান? সৌহার্দ্য বিদেশ চলে যাওয়ার পর সৌহার্দ্যর বাবা, বিহানের বাবা-মা সবার ক্ষোভ বিহানের ওপরেই পরে। সেদিন বিহানের বাবা বিহানের ফ্লাটে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মত মেরেছিল বিহানকে। প্রথমবারের মত এবারেও বিহান টু শব্দটিও করেনি। পরেরদিন বিহানকে আর ওর সেই ফ্লাটে দেখা যায়নি। কোথায় আছে সেটা আদোও কেউ জানেনা। খবরটা অনেক পরে পৌঁছেছিল সৌহার্দ্যর কানে। সবটা শুনে বেশ রেগে গেছিল সৌহার্দ্য। ফুপার সাথে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তবে ও ফিরতে পারেনি। বিহানের কথা ভেবে সৌহার্দ্যর ভেতর থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড় হল। একসঙ্গে কাটানো অনেক স্মৃতি এসেও ভর করল। সৌহার্দ্য চোখ বন্ধ করে অস্বুট স্বরে বলল, ‘বিহান’।

প্রচন্ড গরম পরেছে। বিকেল হয়ে গেজে, কিন্তু রোদ এখনও মাথার ওপরে আছে এমনই মনে হচ্ছে আজ। যেমন তীব্র ঝলমলে আলো তেমনই তার উষ্ণতা। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন এই গরম প্রায় সবার অবস্থাই নাজেহাল করে দেয়। লোডশেডিং হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জে এই লোডশেডিং নামক ঘটনাটা তুলনামূলক একটু বেশিই ঘটে। কারেন্ট না থাকায় গরমে সবার অবস্থা আরও খারাপ। রিখিয়া অফিসরুমে নিজের টেবিলে বসে ঘাম মুছছে আর লিখছে। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে এই মুহূর্তে ওর। হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল শাফিন হাওয়া করছে ওকে। এ দু’বছরে শাফিনের সাথে রিখিয়ার সম্পর্কটা একটু ভালো হয়েছে। গ্রামে চলে আসার পর ওকে অনেকভাবে হেল্প করেছে শাফিন। ওর বাবে-মাকেও অনেক সাহায্য করে। ওখান থেকেই আস্তে আস্তে ফ্রি হয়েছে দুজন। প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হলেও পরে রিখিয়া মুচকি হেসে বলল,

” শাফিন ভাই, আপনি এখানে?”
উত্তরে শাফিনও মুচকি হেসে বলল,
” এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম দেখা করে যাই। বাড়ি ফিরবে না?”
” হ্যাঁ হাতের কাজটা শেষ করেই ফিরব।”
” চল তাহলে একসাথে ফেরা যাক।”
রিখিয়া সম্মতি জানালো। কাজ শেষ করে দুজনেই গ্রামের রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে যাচ্ছে। হঠাৎ শাফিন দেখল আইসক্রিম ওয়ালা যাচ্ছে। রিখিয়া খাবে কি-না জিজ্ঞেস করতে রিখিয়া হ্যাঁ বলে দিল। কারণ প্রচন্ড গরম পরেছে তাই ঠান্ডা কিছু খেলে ভালোই লাগবে। তবে এই আইসক্রিম দামী ক্রিমি আইসক্রিম নয়। এটা কাঠিওয়ালা সস্তার আইসক্রিম, যাকে আইসবারও বলে। দুজনেই ওরেঞ্জ ফ্লেবারটাই নিল। দুজনে পায়ে হেটে এগোচ্ছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। গাছপালা থাকায় মাঝেমাঝে হালকা বাতাসও লাগছে। হঠাৎ শাফিন বলে উঠল,

” কিছু ভেবেছ রিখিয়া?”
রিখিয়া জানে শাফিন কী জানতে চাইছে। কিন্তু ওর উত্তর বদলানোর নয়। তাই বরাবরের মত চুপ করে রইল। শাফিনও রিখিয়ার মৌনতার মানে বুঝে ফেলল তাই আর কিছু বলল না।
বাড়ি ফিরে রিখিয়া দেখতে পেলো ওর ভাই রায়হান আজও এসছে। রিখিয়ার ভ্রু কুচকে গেল। এই দু-বছরে কম করেও হাজারবার এসছে। রিখিয়া বিয়ে করবেনা এটা সে কেন বুঝতে চায়না? রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে রুমে চলে গেল। রায়হান বরাবরের মতই কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে চলে গেল। রায়হান চলে যাওয়ার পর রিখিয়া ওর বাবা মায়ের কাছে এলো। এতক্ষণে চেঞ্জ করে নিয়েছে ও। বাবার শরীর ইদানিং খুব খারাপ হয়ে গেছে, যেকোন সময় যা খুশি হয়ে যাবে তাই রিখিয়া রায়হানের ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গিয়ে বলল,

” বাবা তোমার ঔষধ সব ঠিকঠাক আছে তো? শেষ হলে মনে করে বলো কিন্তু।”
রেজাউল ইসলাম গম্ভীর মুখে বললেন,
” এখানে বস।”
রিখিয়া কথা না বাড়িয়ে বসল। রেজাউল ইসলাম ওর মাথায় হাত রেখে বলল,
” অনেকতো করলি মা আর কত? নিজের জীবনটাকে আর নষ্ট করিস না। বিয়েটা করে নে এবার। শাফিনকে দেখেছি আমি। খুব ভালো ছেলে।”
রিখিয়া অসহায় গলায় বলল,
” বাবা তুমিও এবার আমাকে জোর করবে?”
রেজাউল ইসলাম একটু কেশে নিয়ে বললেন,
” জোর না মা, আমিতো বাবা। কোন বাপের তার মেয়েকে এভাবে দেখতে ভালোলাগে বল? তাও আমি সুস্থ থাকতাম, বড়লোক হতাম একটা কথা ছিল। আমি আজ আছি কাল নেই। তোকে কার ভরসায় রেখে যাবো তুই বল? আমি জানি আমার মেয়ে অনেক স্ট্রং। সে একা বাঁচতে জানে। কিন্তু আমারও তো ইচ্ছে যে তোর একটা সাজানো সংসার হোক।”
রিখিয়া মাথা নিচু করে ফেলল। কান্না আসতে চাইছে ওর কিন্তু কাঁদতে পারবেনা বাবা-মার সামনে। রিখিয়ার মা বললেন,

” হ্যাঁ তুমিই বোঝাও। আমি তো বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেললাম। এখন যে তোমার বুঝ হয়েছে এটাই অনেক। তবুও তো শাফিন ছেলেটা এখন ও তোকে চায়। আমাদের মত বাড়ির মেয়েকে যে ওনারা নিতে চান এটাই তো ভাগ্য।”
” আহা, এভাবে বলছ কেন? আমার মেয়ে একদম খাটি সোনা। নিতে তো চাইবেই।”
” হ্যাঁ সেই সোনা সিন্দুকে তুলে রেখে দাও।বলছি বয়সতো আর কম হচ্ছেনা। এরপর বেশি বয়স হলে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারব? আমরা যখন থাকবনা ওর কী হবে ভেবে দেখেছ?”

 জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৩২

রিখিয়া ছোট শ্বাস ফেলে উঠে চলে গেল ওর রুমে। দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেলল। ওরও তো স্বপ্ন আছে। একজন ভালো স্বামী, শশুর বাড়ি, সংসারের। আর পাঁচটা মেয়ের মত ওও স্বাভাবিক জীবন চায়। কিন্তু ও কী করবে? যতবার সবাই বিয়ের কথা তোলে বিহানের মুখটা ভেসে ওঠে, বিহানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো বড্ড মনে পরে। ভালোবাসাটা আজ ও একইরকম আছে, পারেনি ও বিহানকে ভুলে যেতে, পারবেও না। তারমানে এটা নয় যে ওর বিয়ে না করতে চাওয়ার কারণ বিহান। যেখানে ও জানে বিহান কোনদিন ওর হবেনা তখন তার কথা ভেবে বিয়ে না করে সারাজীবন বসে থাকাটা ভিত্তিহীন।

ওর বাবা-মার কথা ভেবেই বিয়ে করতে চায়না ও। মানুষ দুটো তে ওকে ছাড়া বড্ড অসহায়। আচ্ছা বিহান নিশ্চয়ই ওর ভালোবাসার বা পছন্দের কাউকে বিয়ে করে ভালো আছে। ও সবসময় ভালো থাক এটাই চায় রিখিয়া। ও না হয় সারাজীবন একতরফা ভালোবেসে যাবে। মোবাইলটা হাতে নিতেই ওয়ালপেপারে তুর্বীর সাথে ওর ছবিটা দেখে কান্নার গতি বেড়ে গেল ওর। কেমন আছে তুর্বী? কোথায় আছে? গ্রামে আসার পর ওর বাবা স্ট্রোক করে বসে। সবকিছুর মধ্যে তুর্বীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে তুর্বীকে ফোনে আর পায়নি ও।দুমাস পর রিখিয়া শহরে গেছিল ওর খোঁজ নিতে কিন্তু সেখানে পায়নি ওকে। অফিসে গিয়ে শুনল তে তুর্বী ঐ জব ছেড়ে দিয়েছে। তুর্বী এখন কোথায় সেটা রিখিয়ার জানা নেই। ছবিটাতে হাত বুলিয়ে ফোনটা বুকে চেপে ধরে একটু আওয়াজ করেই কেঁদে দিয়ে বলল, ” মিসিং ইউ তুর।”

 জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৩৪