জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৪০ || লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৪০
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

সকালবেলা বিছানায় বালিশের ওপর দু হাত রেখে হাতের উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রিখিয়া। নিজের জীবনটা নিয়ে ভাবছে ও। সত্যিই কী ওর জীবনটা অন্যরকম হতে পারত না? সেই ক্লাস এইট থেকে টিউশনি করে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যাত্রা শুরু হয়েছিল ওর। এতো টানাপোড়েনের সংসারে ঠিক কীভাবে যে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সেটা ওই জানে। যে বয়সে মেয়েরা মুক্ত পাখির মত উড়তে চায়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে চায়, আড্ডা দিতে চায়; সেই বয়স থেকেই ও নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে।

নিজের সবরকমের শখ-আল্লাদের বিসর্জন দিয়েছে। নিজের জন্যে কিছু করেনি। কোন স্বপ্নই ছিলোনা। শুধু একটাই স্বপ্ন ও যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে শুধু সেই ওকে ভালোবাসবে তা না। ওও তাকে নিজের সবটা উজার করে ভালোবাসবে। কিন্তু যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসল সে ওকে ভালোবাসতে পারেনি। এতে সেই ব্যাক্তিরও হয়তো তেমন দোষ নেই। ভালোবাসা তো আর জোর করে হয়না। এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাতটা বাজে। ওর বাবা-মায়ের ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়ে গেছে। ওনাদের আবার চা করে দিতে হবে। রিখিয়া উঠে বেড়িয়ে দেখল সত্যিই ওনারা উঠে গেছেন। দুজন বসে ছোট ছোট আওয়াজে গল্প করছেন। একটু হাসল রিখিয়া। বিয়ের কতগুলো বছর হয়ে গেছে, শেষ বয়সে এসেও দুজনের কত মিল, ভালোবাসা একটুও কমেনি।

যারা বলে যে, অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়, তারা হয়তো এদের মত মানুষদের দেখেই নি। শত অভাবের মাঝেও হাতে হাতে ধরে একসাথে বেঁচে আছে এরকম উদাহরণ খুঁজলে কম পাওয়া যাবেনা। কিন্তু আমরা তো সবসময় শুধু নেতিবাচক দিকটাই চোখে বেশি দেখি। সেটারই চর্চা করি। কার বউ কাকে ছেড়ে চলে গেছে, কার বর কাকে ডিবোর্স দিয়েছে, কার সাথে কার ব্রেকআপ হয়েছে এসব নিয়েই মাতামাতি করি। চলার পথে এসবেরই উদাহরণ দেই। কিন্তু আশেপাশের ছোট্ট কুঁড়েঘরে কত দম্পতি সুখী জীবন কাটাচ্ছে সেদিকে তাকিয়েও দেখিনা। তাদের একটা প্রচলিত কথা আছে ‘ এগুলো শুধু সিনেমা, নাটক, উপন্যাসেই মানায়, বাস্তবে এসব হয় না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ এমনভাবে বলবে মনে হবে যেন সারাপৃথিবীর সমস্তরকম মানুষের সমস্তরকম জীবনধারা এরা দেখে মুখস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু মনের এসব নেতিবাচকতাকে দূরে সরিয়ে, সবকিছুর মধ্যে যদি ইতিবাচক দিকগুলো খোঁজার মানসিকতা তৈরী করতে পারো। জীবনটাকে নিজের মত করে উপভোগ করার চেষ্টা করতে পারো। জীবনের খারাপ সময়গুলোকে ইন্টারেস্টিং এডভেঞ্চার, আর ভালো সময়গুলোকে ফেস্টিভ্যাল হিসেবে নিতে পারো তাহলে দেখবে জীবন ঐসব সিনেমা, নাটক, উপন্যাসের চেয়েও বেশি সুন্দর মনে হবে।
রিখিয়া ভালোভাবে চা বানিয়ে, কাপে ঢেলে ওর বাবা-মার রুমে গেল। দরজার কাছে গিয়ে বলল,

” বাবা, আসবো?”
রেজাউল ইসলাম মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল,
” হ্যাঁ আয় মা। ভেতরে এসে বস।”
রিখিয়া ভেতরে গিয়ে রেজাউল ইসলামের দিকে চায়ে কাপ এগিয়ে দিল ,এরপর জাহানারার দিকে। নিজের কাপ হাতে নিয়ে ছোট্ট হালকা ফাটল ধরা ট্রে টা পাশে রেখে একটা প্লাস্টিকের বড় মোড়া টেনে বসল। তারপর বলল,
” বসতে বললে যে? কিছু বলবে বাবা?”
” না তেমন কিছু না। দুদিন যাবত দেখছি বেশি চুপচাপ হয়ে গেছিস। অফিস থেকে এসে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকিস। কী হয়েছে মা?”
রিখিয়া নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলল,
” তেমন কিছুই না বাবা। আসলে শরীরটা ভালো নেই।”
জাহানারা চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললেন,
” সারাদিন এমন গাধার খাটনি খাটলে শরীরের আর কী দোষ?”

” কোথায় আর খাটি মা? ওইতো একটু অফিস যাই, সকালে ঘর ঝাড়ু দিয়ে তোমাদের চা করে দেই, নাস্তা বানাই, রাতের রান্নাটা করি আর ঘর মুছি। আর কী করি? বাকি সবতো তুমিই করো?”
” বাকিটা কী রইল শুনি?”
” কেন? দুপুরের রান্নাটা।”
জাহানারা আর না হেসে পারলেন না। রিখিয়াও হাসল। রেজাউল ইসলাম বললেন,
” দেখ মা, তোকে আর বিয়ের জন্যে আমরা জোর করব না। তোর যা ইচ্ছে হয় সেটাই করবি। তবুও এরকম মুখ গোমড়া করে কথা বলিস না।”

রিখিয়ার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থেকে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” আমি বিয়ে করতে রাজি বাবা। তোমরা চাইলে শাফিন ভাইর পরিবারের সাথে কথা বলে দেখতে পারো।”
রেজাউল ইসলাম আর মিসেস নাহার দুজনেই বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন রিখিয়ার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খুশি কন্ঠে বলে উঠলেন,
” তুই সত্যি বিয়ে করতে চাইছিস?”
জাহানারা বেগমও প্রচন্ড উল্লসিত কন্ঠে বললেন,
” আমি ঠিক শুনছি? সত্যিই তুই বিয়ে করবি?”
বাবা-মায়ের এতো খুশি দেখে রিখিয়া মলিন হাসি দিল। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ।”
রেজাউল ইসলাম বললেন,
” সত্যিই মন থেকে বলছিস তো? না-কি আমাদের খুশির জন্যে..
” না বাবা, মন থেকেই বলছি। একটা কথাতো ঠিকই। কতদিন আর এভাবে থাকব? তোমরা জানিয়ে দাও ওনাদের যে আমি রাজি।”
” ঠিকাছে আমরা কথা বলছি।”
আর কথা না বাড়িয়ে ঐ রুম থেকে বেড়িয়ে চলে রিখিয়া। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরল। ওখানে থাকলে ওনাদের সামনেই কেঁদে ফেলত। খুব মনে পরছে বিহানের কথা আজ। ঐ লোকটার কী ওর কথা একটুও মনে পরেনা? একটুও মন কাঁদেনা ওর জন্যে? এতগুলো মাস একসাথে কাটানোর পরেও কী বিহানের মনে একটুও দাগ কাটতে পারেনি রিখিয়া? রিখিয়ার চেঁচিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছেনা। মন শুধু একটা কথাই বলছে, কী হতো বিহান আমায় ভালোবাসলে? কেন একটু ভালোবাসতে পারলেন না? আমি কী এতোটাই খারাপ ছিলাম? এতোটাই অযোগ্য ছিলাম আপনার?”

সৌহার্দ্য বেশ বিরক্ত হচ্ছে এই মুহূর্তে। এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। সেদিন কেন যে মার কথায় রাজি হয়েছিল কে জানে। ওতো জানতো কয়েকদিন কেন? যুগ যুগ ধরে কোন মেয়েকে নিয়ে ঘুরলেও ওর মনে সেই অনুভূতি আসবেনা। আর না ও বিয়ের জন্যে হ্যাঁ বলবে। এখন ওর বাবা-মা যেই মেয়েটাকে দেখেছিল ওর জন্যে তার সাথে শপিং এ যেতে হবে ভাবলেই গা জ্বলছে। একরাশ বিরক্তি নিয়েই রেডি হচ্ছে যাওয়ার জন্যে। তখনই দরজায় কেউ নক করে বলল,
” আসতে পারি?”
সৌহার্দ্য তাকিয়ে দেখল এটা আর কেউ নয় সেই মেয়েটাই। নাম দোলা। সৌহার্দ্য সৌজন্যতামূলক হাসি দিয়ে বলল,
” হ্যাঁ আসুন।”
” আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। আমি অনেক ছোট আপনার। আর আমি রেডি। আপনি কতটুকু রেডি হয়েছেন দেখতে পাঠাল আন্টি।”
সৌহার্দ্য ঘড়ি পরতে পরতে বলল,

” দেখুন, আমি আগেই অাপনাকে কিছু কথা বলে রাখি। আমি এমনিতেও আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। শুধু বাবা-মার মনে শান্তির জন্যে কটা দিন আপনার সাথে ঘুরতে ফিরতে হবে। কিন্তু প্লিজ আমার কাছে কিছু এক্সপেক্ট করবেন না।”
দোলার চোখে মুখে প্রথমে একরাজ্যের বিষ্ময় ফুটে উঠলেও হঠাৎ করেই চোখে মুখে খুশি ঝলক দেখা দিল। ও খুশি হয়ে বলল,
” আর ইউ সিরিয়াস? আপনি জানেন আমিও আপনাকে এটাই বলতে চাইছিলাম। ভাবতে পারিনি আমার কাজটা এতো ইজি হয়ে যাবে। উফফ! থ্যাংকস্ থ্যাংকস্।”
সৌহার্দ্য বোকার মত তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। সৌহার্দ্য এরকম দৃষ্টি দেখে দোলা হেসে বলল,

” বোঝেন নি কিছু তাইনা? আচ্ছা বলছি শুনুন। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তেমন বড় চাকরি করেনা। কিন্তু যেটুকু করে আমাদের চলে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। দেখতেও আপনার মত এতো সুন্দর না কিন্তু আমার কাছে সে বেস্ট ওয়ান। কিন্তু বাবা-মা মানছেই না। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার বাবা-মা প্রস্তাব দিয়ে সব বরবাদ করে দিল। আমিও শর্ত দিয়েছি যে যদি অাপনার আমাকে পছন্দ না হয়। তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে ওর সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে। ওনারাও রাজি হয়েছেন। আমিতো ভেবেছিলাম এসে আপনাকে রিকোয়েস্ট করে না বলাব। কিন্তু এখন তো দেখছি সব আগে থেকেই সেট।”
সৌহার্দ্য অবাক হয়ে সব শুনছিল। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওও হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,

” যাক দুজনের জন্যেই কাজটা সহজ হয়ে গেল তাহলে?”
” হুম। আপনিতো রেডি চলুন! যাওয়া যাক? বাকি কথা ঘুরতে ঘুরতে বলব।”
” হুম চল।”
এদিকে তুর্বী গাড়ির জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। শপিং মলে যেতে হবে একটু। সকালে ওর ভাই হস্টেল থেকে ফোন করেছিল। ফোনে বলল যে,
” আপু, প্লিজ একবার এসে দেখা করে যা। কতদিন দেখিনা তোকে।”
” আমি ঢাকাতেই আছি ভাই।”
” কি? সত্যিই? প্লিজ আয়না একবার।”
” আসছি আমি। বিকেলের দিকে যাবো।”
” শোননা আপু। আমার জন্যে দুঠো জিন্স আর একটা কালো রঙের ঘড়ি আনবি প্লিজ? পরীক্ষা চলছে। বেড় হতেও পারছিনা ঠিকমতো।”
” আচ্ছা নিয়ে আসব।”

হঠাৎ একটা খালি প্রাইভেট কার চোখে পরতেই হাত দিয়ে থামালো ও। তারপর শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গাড়িতে থাকাকালীন মিরাজের ফোন এসছিল। ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিয়েছে। আজ ওর ভাইর সাথে দেখা করে কালকেই রিখিয়াদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরবে ও। ওর রিখিয়ার সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন, খুব তাড়াতাড়ি। শপিং মলের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে ভেতরের দিকে হাটা শুরু করল ও।
সৌহার্দ্য আর দোলা শপিং মলে হেটে হেটে বেশ কিছু জিনিসপত্র কিনেছে। তখনই দোলার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটল ওর। সৌহার্দ্য দিকে তাকিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলল,
” বয়ফ্রেন্ড।”

সৌহার্দ্যও চোখের ইশারায় ওকে কথা বলার জন্যে যেতে বলল। দোলা একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করল। নিজের মনেই একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল সৌহার্দ্য। সবার জীবনেই ভালোবাসা আছে। খুব কী ক্ষতি হত যদি ওর ভালোবাসাও আজ ওর সাথে থাকত? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেল। প্রথমে ভাবল চোখের ভুল। কিন্তু পরে আরও ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝল যে না ও ঠিক দেখছে। তুর্বী আসছে এদিকে। হ্যাঁ এটা তুর্বীই। আর যাই হোক তুর্বীকে চিনতে ও ভুল করবে না। এদিকে তুর্বীর চোখও সৌহার্দ্যর ওপর পরতেই ও থমকে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। ওর পায়ের গতিও ধীর হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে এগোচ্ছে সৌহার্দ্যর দিকে। ও যে হতভম্ব হয়ে গেছে সৌহার্দ্যকে দেখে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সৌহার্দ্যর হাত থেকে আপনাআপনি শপিংব্যাগগুলো পরে গেল। গলা কাঁপছে ওর, শুকনো ঢোক গিলছে বারবার। তুর্বীর দৃষ্টিও খুব শান্ত। তখনই দোলা এসে বলল,

” একি? ব্যাগগুলো ফেলে দিয়েছেন কেন? সামান্য কটা ব্যাগ ধরে রাখতে পারলেন না? কী যে করি আপনাকে নিয়ে।”
বলে ব্যাগগুলো তুলতে লাগল। সৌহার্দ্যর সেদিকে খেয়াল নেই। ও তুর্বীকে দেখায় ব্যস্ত। কাধের নিচে পরা চুলগুলো এখন কিছুটা বড় হয়েছে। শার্ট, টিশার্ট আর টপসের বদলে এখন হাটু অবধি কুর্তি পরেছে। চোখে মুখে সেই চাঞ্চল্য ভাবটা নেই। ঠিক আছে তো তুর্বী? এমন লাগছে কেন?

মেয়েটাকে সৌহার্দ্যর পাশে দেখেই তুর্বী থেমে গেছে। বুকের মধ্যে কেমন করতে লাগল। সৌহার্দ্য কী বিয়ে করেছে? করাটাই তো স্বাভাবিক। ও তো সৌহার্দ্যকে রিজেক্ট করে দিয়েছিল। সৌহার্দ্যতো সারাজীবন বসে থাকবেনা। তাহলে ওর কষ্ট হচ্ছে কেন? তাহলে কী এই দুবছর যেটা সন্দেহ করেছিল সেটিই ঠিক? তবে সৌহার্দ্যকে দেখে ও খুশি হয়েছে। যাক দেশে ফিরেছে তাহলে। এবার বিহানের সাথে কথা বলিয়ে সবটা ঠিক করে দেওয়া যাবে।
হঠাৎ করেই সৌহার্দ্য নিজেকে সামলে নিল। চোখ ঝাপটে ছলছলে ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে, নিজেকে একেবারে স্বাভাবিক করে নিয়ে তুর্বীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৩৯

” ভালো আছো?”
তুর্বীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে চোখের কোণে আঙুল বুলিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,
” আছি। তুমি?”
সৌহার্দ্য একটু অবাক হল। তুর্বীর গেট আপের সাথে ভয়েজ টোনের পরিবর্তন এসছে। চাঞ্চল্যের জায়গায় গাম্ভীর্য এসে ভর করেছে। তবুও হাসি মুখে বলল,
” বেশ ভালো।”
সৌহার্দ্য বেশ ভালো কথাটা তুর্বীর মনে লাগছ? সত্যিই এতো ভালো আছে ওকে ছাড়া? তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
” ওহ।”
দোলা এগিয়ে এসে বলল,
” কী হল? যাবেন না? এখনও আমার পায়েল কেনা বাকি।”
সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” তুমি যাও। আমি আসছি।”

দোলা চলে গেল। সৌহার্দ্যও যেতে নিলে তুর্বী আরেকবার কষ্ট পেল। ওকে দুটোবছর পর দেখেও এটুকু কথা বলেই চলে যাচ্ছে। খারাপ লাগাটাকে চাপা দিয়ে তুর্বী বলল,
” সৌহার্দ্য?”
সৌহার্দ্য ঘুরে তাকাল। এই মেয়ে আবার কেন ডাকছে ওকে? ও কী বোঝেনা যে ওর সামনে নিজেকে সামলে রাখতে সৌহার্দ্যর কষ্ট হচ্ছে? সৌহার্দ্য পেছন ফিরে বলল,
” কিছু বলবে?”
তুর্বী কয়েকসেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
” তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে আমার। খুব আর্জেন্ট। একটু সময় দিতে পারবে আমাকে? বেশি সময় নেবনা, জাস্ট কিছুক্ষণ নেব।”

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৪১