জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৯ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৯
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা একটা আবছা অন্ধকার রুমে বিছানায় ফেলে রাখা হয়েছে তুর্বীকে। অনেকক্ষণ যাবত ছটফট করে যাচ্ছে আর চেঁচাচ্ছে কিন্তু কেউ আসছে না।কোথায় আছে সেটাও জানেনা কারণ চোখও বাঁধা। তবুও নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে ও আর বার বার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ওকে ছেড়ে দিতে বলছে সাথে কিডন্যাপার এর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ভার করে দিচ্ছ। তার সাথে এটাও ভাবছে যে ওকে কে কিডন্যাপ করল? আর কেনই বা করল? ও তো কোন বড় মন্ত্রী বা ব্যবসায়ীর মেয়ে নয়। খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। ওকে ধরে এনে কার কী লাভ? পাচার-টাচার করে দেবেনা তো ওকে? তাহলে তো আশেপাশে আরো মেয়ে থাকতো। অফিস থেকে বেড়িয়ে স্টান্ডের দিকেই যাচ্ছিল ও।

কিন্তু তার আগেই একটা গাড়ি এসে ওর পথ আটকায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে কিছু লোক বেড়িয়ে এসে লোকগুলো ওকে গাড়িতে তুলে মুখ, হাত বেঁধে ফেলে। বেশিক্ষণ চেচানোর সুযোগ হয়নি ওর। এরপর ওকে এই রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে পা টাও বেঁধে দিয়েছে। মুখটা খুলে দিল যাতে কোন কিছু হলে বলতে পারে। বাঁধার সময় ও বারবার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছিল, ওরা কারা? কেন তুলে এনেছে? কী মতলব? কিন্তু তারা কোন উত্তর না দিয়েই বাইরে চলে গিয়ে দরজাটা লক করে দিল। বেশ কিছুক্ষণ অযথাই ছটফট আর চেঁচামেচি করে নিজেই থেমে গেল ও। এখন শুধু অপেক্ষা করছে ওর কিডন্যাপার আসার। কারণ ও শুনেছে লোকগুলোর কাছে কেউ বলেছে ওকে কিডন্যাপ করতে। ওও জানতে চায় যে ওর মত অনাথ একটা মেয়েকে তুলে এনে কার কী লাভ হল? ও মরে গেলেও তো কারো কিছু যায় আসবে না রিখিয়া ছাড়া। এতো পরিশ্রম করে ওর মত ইউসলেস একটা মেয়েকে তুলে আনার মত বোকামি কে করল?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেটা জানার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে ওর। আর তুলে এনেছে ভালো কথা, এভাবে বেঁধে রাখারই বা কী ছিল? কিছু খাবার জিনিস দিয়ে গেলেও তো হতো। বসে বসে খেতে খেতে টাইমপাস করতে পারত। কিন্তু এখন ওকে মূর্তির মত বসে থাকতে হচ্ছে। যেই ওকে কিডন্যাপ করেছে লোকটা মহা কিপটে, সাথে বোকাও। নাহলে এমন গাধার মত কাজ করে? কিডন্যাপার কখন আসবে সেটাও জানে না ও। কতক্ষণ থাকা যায় এভাবে? আসছে না কেন? রিখিয়াও নিশ্চয়ই প্রচন্তরকম টেনশন করছে। এসব ভেবে ভেবেই মেজাজ প্রচন্ডরকম খারাপ হচ্ছে ওর। এদিকে প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে ওর। খুবই বিরক্ত লাগছে ওর এখন। কিছু না ভেবেই ও ওভাবেই বিছানায় শুয়ে পরল। অফিসের কাজ করে টায়ার্ড ছিল তারওপর এমন ধকলে ক্লান্তও ছিল। তাই কিডন্যাপারের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরল ও।
সৌহার্দ্য বাড়ি থেকে সবে বেড়োলো ফার্মহাউজের উদ্দেশ্যে। মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসছে সেই কখন, কিন্তু ওই এখনও পৌছতে পারল না। কাজের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল ও। তাই দেরী হল। তুর্বীকে কিছুটা হলেও চিনেছে ও। মেয়েটা ওখানে কী কান্ড ঘটাচ্ছে কে জানে? সকালের পর বিহানের সাথেও দেখা হয়নি ওর। ঐ ছেলে আবার কোথায় কী করছে সেটা বিহানই জানে। এসব ভাবতে ভাবতে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।

রিখিয়া রাস্তা দিয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক হাটছে আর বারবার ফোন করে যাচ্ছে তুর্বীর নাম্বারে। কিন্তু তুর্বীর ফোন বন্ধ বলছে। টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে রিখিয়ার। রাত পোনে একটা বাজে এখন। তুর্বীর খুব বেশী দেরী হলে এগারোটা বাজে। তাও সেরকম হলে ফোন করে জানায় রিখিয়াকে। কিন্তু আজ ফোন না করায় টেনশন হলেও মনে করেছে ফোন বন্ধ হয়ত। কিন্তু এগারোটার বেশি বাজাতে রিখিয়ার টেনশন বেড়ে যায়। ও তুর্বীর অফিসে ফোন করে জানতে পারে তুর্বী অনেক আগেই বেড়িয়ে গেছে। এবার রিখিয়ার রিতীমত ভয় হচ্ছিল। বারোটা বাজার পর ও আর ফ্লাটে থাকতে পারেনি। ঐ রাতেই বেড়িয়ে গেছে বাইরে। তুর্বীর অফিসের রাস্তা দিয়ে পায়ে হাটতে হাটতে দেখছে ওও। গাড়িতে গেলে খুঁজতে সমস্যা আছে। মাথা খাজ করা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ওর। ওর মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল তুর্বীকে খুঁজে পেতে হবে, সেটা যেকোন মূল্যে। মেয়েটা যে বড্ড চঞ্চল, যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়? তুর্বীর চিন্তায় ওর মাথাতেই নেই যে ওর সাথেও খারাপ কিছু হতে পারে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করেই তিনজন ছেলে ওর পথ আটকে ধরল। রিখিয়া চমকে উঠল। ও এমনিতে একটু ভীতু টাইপের মেয়ে। তাই ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলল। ওদের মধ্যে একটা ছেলে মুখে বাঁকা টাইপ হাসি ফুটিয়ে বলল,

” কী গো সুন্দরী। এত রাতে একা একা কোথায় যাচ্ছ?”
” দ-দেখুন যেতে দিন আমাকে।”
বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ছেলেটা হিট দিয়ে পথ আটকে ধরল। পাশের ছেলেটা দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিয়ে বলল,
” এত তাড়া কীসের খুকুমণি? এত রাত করে মেয়েরা একাএকা তো আমাদের জন্যেই বেড়োয়। আর তুমি যেতে চাইছ? এটা কী ঠিক?”
অন্য পাশের ছেলেটা মাথা নেড়ে বলল,
” উহু একদম না।”
রিখিয়ার এবার কেঁদেই দিয়েছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে ওর। আশেপাশে তাকিয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইবে তেমন কাউকেই দেখছে না। সব চলমান গাড়ি। ও চেঁচালৈও কেউ গাড়ি থামাবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রিখিয়া দৌড় দিতে নিলেই একজন ওর হাত ধরে ফেলে বলল,
” আরে মামুণি কোথায় যাচ্ছো? সবে তো এলে এখনই যেতে দেই কীকরে হ্যাঁ?”
রিখিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,
” প্লিজ, হাত ছাড়ুন আমার।”

ছেলেগুলো জোরে হেসে উঠল। হঠাৎ করেই কোথা থেকে ওখানে বিহান এসে হাজির হল। হাফাতে হাফাতে বলল,
” আরে তুমি এখানে? কখন থেকে খুঁজছি তোমাকে। কোথায় চলে গেছিলে।”
বিহান কি বলছে সেটা রিখিয়া বুঝতে না পারল না। কিন্তু এমন মুহূর্তে অল্প হলেও পরিচিত কাউকে পেয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না ও। বিহানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল। ছেলেগুলো একে ওপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। বিহানের হঠাৎ করেই কেমন যেন অনুভব হল। এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে রিখিয়া ওর বুকে মাথা রাখাতে। প্রতিনিয়ত বুকে জ্বলতে থাকা যন্ত্রণার আগুনে যেন কেউ শীতল স্পর্শ দিয়ে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই এক হাতে জড়িয়ে ধরল রিখিয়াকে। রিখিয়া তাতে আরও জোরে কেঁদে দিল। বিহান ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কিছু বলবেন ভাই? আসলে আমার ওয়াইফ। শহরে নতুন তো রাস্তা চেনেনা। হুট করেই হারিয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না হ্যাঁ?”

তারপর রিখিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
” আরে কেঁদোনা। এসে গেছিতো আমি।”
বিহানের মুখে বউ শুনে ছেলেগুলো চলে গেল। হঠাৎ করে রিখিয়ার মনে পরল ও কী করছে। মনে পরতেই এক ঝটকায় দূরে সরে গেল। বিহান হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল ওর দিকে। রিখিয়া চোখ মুছে নাক টেনে টেনে বলল,
” আপনি কেন বললেন যে আমি আপনার ওয়াইফ?”
” তো কী করতাম? বাংলা সিনেমার হিরোদের মত ‘ডিসকাও’ ‘ডিসকাও’ করে ফাইট করে আপনাকে বাঁচাতাম? তাতে কী লাভ হত? তুমি তো আর হিরোয়িনদের মত আমার প্রেমে পরতে না। পরলে না হয় ফাইট করা যেত।”
এরপর রিখিয়ার দিকে ঝুকে বলল,

” কী বল? পরতে? প্রেমে? তাহলে বল? ওদের খুঁজে এনে তারপর মেরে দিচ্ছি।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলল,
” এই মেয়েটাও না। না ঠিক করে সরি বলতে জানে আর না থ্যাংকস বলতে জানে। এনিওয়ে এত রাতে একা একা বেড়িয়েছ কেন?”
রিখিয়ার মাথায় আবার তুর্বীর চিন্তা নাড়া দিলো। ও আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠল,
” তু-তুর.. সেদিন পুলিশ স্টেশনে যেই মেয়েটা ছিল আমার সাথে। ওকে খুঁজে পাচ্ছিনা। ফোন লাগছেনা। বাড়িও আসেনি।”
বিহান চমকে উঠল। তুর্বী মিসিং? তাহলে কী সৌহার্দ্য নিজের কাজ করে ফেলেছে? বিহান এসব ভাবতে ভাবতেই রিখিয়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেল। বিহান এখন শিওর যে ওর ভাই ই কিছু করেছে। কিছু একটা ভেবে নিয়ে ও রিখিয়ার কাধে হাত রেখে হাত রেখে বলল,

” আচ্ছা ডোন্ট ক্রাই। চল আমি হেল্প করছি তোমাকে। আমরা গাড়ি স্লো চালিয়ে চারপাশটা দেখছি। দেখি পাই কী না?”
রিখিয়া বলল,
” পুলিশের কাছে যাই চলুন।”
বিহান বিড়বিড়িয়ে বলল, ” তাহলে তো গন্ডগল হয়ে যাবে”। তারপর নিজেকে সামলে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আগে ভালো করে সবটা খুঁজে তো দেখি। হতে পারে রাস্তাতেই কোথাও আটকে গেছে? আগে নিজেরা একটু খুঁজি?”
রিখিয়া সম্মতি দিল। বিহান রিখিয়াকে নিয়ে গাড়িতে তুলল। বিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর রিখিয়া চারপাশে খুঁজছে। বিহানও মাঝেমাঝে খোঁজার ভান করছে। কারণ ও তো ভালোভাবে জানে যে তুর্বী কোথায় থাকতে পারে।

এদিকে দরজার বাইরে পাহারায় থাকা দুজনের মধ্যে একজন বলল,
” বাপড়ে! কী ডেঞ্জারাস মেয়ে। আমরা চারজন মিলে এইটুকু পথ আনতেই ঘাম বেড়িয়ে গেছে।”
অপরজন বলল,
” হ্যাঁ সেই! স্যারকে ফোন করেছিলি?”
” হ্যাঁ স্যার এলে আমরা বাকি টাকাটা নিয়ে আমরা চলে যাবো। জীবনে প্রথম এমন কাজ করলাম ভাই।”
” শুধুমাত্র সৌহার্দ্য স্যার বলেছেন বলে। অনেক বছর তো হল ওনাকে চিনি, মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করবেনা। এটা শিওর।”
এরমধ্যেই ওখানে চলে এলো সৌহার্দ্য। সৌহার্দ্য আসতেই দুজন সোজা হয়ে দাঁড়াল। সৌহার্দ্য ওদের সামনে এসে দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
” মেয়েটা কোথায়?”
” ভেতরে আছে স্যার।”
সৌহার্দ্য পকেট থেকে টাকা বেড় করে এগিয়ে দিল ওদের দিকে। টাকাটা নিয়ে ওদের মধ্যে একজন হেসে বলল,
” থ্যাংক ইউ স্যার!”
সৌহার্দ্যও হেসে বলল,
” সরি হ্যাঁ! আমার জন্যে কিডন্যাপিং ও করতে হল।”
” কী যে বলেন স্যার। অাপনার জন্যে এটুকু করতেই পারি।”

ওরা চলে যেতেই সৌহার্দ্য দরজা খুলে ভেতরে এল। ভেতরে ঢুকে চরম অবাক হল ও। কারণ তুর্বী নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। চোখ বাধা তাই ঘুমোচ্ছে কি না শিওর হতে হালকা নাড়া দিল সৌহার্দ্য কিন্তু দেখল হ্যাঁ আসলেই ঘুমোচ্ছে। ও শকড হয়ে হাত পা চোখ বাঁধা ঘুমন্ত তুর্বীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এটা মেয়ে নাকি এলিয়েন? এমন মুহূর্তে কেউ এভাবে ঘুমোতে পারে? আনবিলিভএবল! কিন্তু না এই মেয়েকে শান্তির ঘুম ঘুমাতে দিতে তো তুলে আনেনি সৌহার্দ্য। একটা পাকাপোক্ত শিক্ষা দিতেই তুলে এনেছে। তাই পাশের রাখা জগ থেকে হাতে পানি নিয়ে তুর্বীর মুখে ছুড়ে মারল। প্রথমবারে নড়ে উঠলেই ‘উমম’ শব্দ করে ঘুমের ঘোরেই মুখ মুছে নিল ও। সৌহার্দ্য আবারও একই কাজ করল। মুখে পানির ছেটায় চমকে উঠল তুর্বী। চোখ বাঁধা আছে তাই দেখতে পারছেনা কে। ওর সবটা মনে পরতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। আর বুঝতে পারল ওর সেই কিডন্যাপার এসে গেছে। মিনিট দুই চুপচাপই ছিল দুজন। ততক্ষণে তুর্বী ঘুম ভাব কাটিয়ে উঠেছে। সৌহার্দ্য একটু এগিয়ে আসতেই তুর্বী বলল,

” এই যে মিস্টার মিস নাকি মিসেস হোয়াটএভার। আমায় এভাবে তুলে এনেছেন কেন হ্যাঁ? দেখুন আমি কোন বড়লোকের বেটি নই যে কিডন্যাপ করে ব্লাকমেইল করে পরিবার থেকে টাকা নিতে পারবেন। তাই সেই আশায় আমাকে কিডন্যাপ করে থাকলে আপনার জন্যে এক বালতি নো নো এক ড্রাম সমবেদনা।”
সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। ও তো মেয়েটার ওপর যত রাগ করতে চায় কিন্তু মেয়েটার কথা শুনলেই সব রাগ এমনিই চলে যায়। কী আছে মেয়েটার কথায়? শুধুই চঞ্চলতা? নাকি চঞ্চলতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক সরল নির্মল মন? কী জানি? হয়ত আছে কিছু একটা।সৌহার্দ্য মুখে একটা কাপড় বেঁধে নিল যাতে ভয়েজ কিছুটা অন্যরকম শোনায় আর তার ওপর দিয়ে পুরো মুখ কাভার করে এমন একটা কালো রঙ এর মাস্ক পরে নিল। যদিও তুর্বীর চোখ এখন বাঁধা, তবুও। সৌহার্দ্য চুপচাপ বিছানায় বসল। সামনে থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তুর্বী বলল,

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৮

” কী হল? কোথায় গেলেন?”
” আছি, আপনার সামনেই আছি।”
” হ্যাঁ, তো মৌনব্রত পালন না করে তাড়াতাড়ি কাজের কথা বলুন। আর আমার চোখ কেন বেধেছেন? দেখতে এতটাই খারাপ যে মুখ দেখাতে চাইছেন না? কে আপনি?”
” আপনার মোস্ট হেটেড পার্সন। S.R.”
তুর্বী অবাক হয়ে গেল। S.R. ওকে তুলে নিয়ে এসছে? এটা কীকরে হয়? ও কাঁপাকাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,
” এটা কেমন অসভ্যতা হ্যাঁ? আপনি না সবাইকে এত এত জ্ঞানের বাণী শোনান? আমায় কেন তুলে এনেছেন?”
সৌহার্দ্য তুর্বীর ঘাবড়ে যাওয়াতে বেশ মজা পেল। তাই ওকে আরো ভয় দেখাতে বলল,
” তুমি আমারই শো তে কল করে আমাকেই উইদআউট ডিটার্জেন দিয়ে ধুয়ে দেবে। আমার পেজে আমারই নামে গুনকীর্তন করে কম্পিজশন আকারে পোস্ট করবে। আমার পোস্টে আমাকে বাঁশ দিয়ে প্রাগ্রাফ আকারে কমেন্ট করবে, আর আমি? আমি চুপচাপ সবটা সহ্য করব? এটাই ভাবছিলে তুমি? সিরিয়াসলি?”

” ক্ কী করবেন?”
” একটা ছেলে একটা মেয়েকে এরকম নির্জন একটা ফার্মহাউজে কেন নিয়ে আসতে পারে?”
তুর্বী শীতেও একটু ঘামছে এবার। শুকনো ঢোক গিলে বলল,
” কেন?”
” প্রাকটিক্যালি করে দেখাই?”
তুর্বী এবার একটু জোরে বলর,
” আমি কিন্তু জোরে চেঁচাবো এবার!”
সৌহার্দ্য তুর্বীকে আরও ভয় পাওয়ানোর জন্যে ওর একদম কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

” এখানে তুমি গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও কেউ শুনবে না। ফার্মহাউজে যারা আছে সব আমার লোক। ওরা এখানে আমায় আই মিন আমাদের ডিসটার্ব করতে আসবেনা। তোমার এক্সপিরেয়েন্স চাই না রিলেশনশীপের?”
সৌহার্দ্য এত কাছে আসাতে কেমন যেন একটা লাগছে তুর্বীর। সৌহার্দ্যর কথায় তুর্বী যথেষ্ট ভয় পেয়েছে। ও একা একটা মেয়ে কী বা করতে পারবে এখন? যদি সৌহার্দ্য ওর সাথে সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে তাহলে এরকম কিছু হবে সেটাও ভাবেই নি। এতদিন যেভাবে জ্বালিয়েছে S.R. কে এর শোধ যে সে গুনে গুনে নেবে সেটাতো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে বদলা নেবে?

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১০