অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১১ || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১১
Ishita Rahman Sanjida

রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে ইশান মীরার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাত নাড়ছে। মুহূর্তেই মীরার মেজাজ বিগড়ে গেল। সকাল সকাল ফুরফুরে মেজাজে উঠেছিল সে। ইশান এসেই ওর মনটা খারাপ করে দিলো। কফির মগটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় সে। ইশান একটা টিশার্ট আর জিন্স পড়ে আছে। গলায় সানগ্লাস ঝুলানো তার। এতক্ষণ সে মীরার জন্যই অপেক্ষা করছিল। ইশান রাস্তা পার হয়ে বারান্দার নিচে এসে দাঁড়ায়। মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’গুড মর্নিং মীরা।’

মীরা ছোট ছোট চোখে তাকালো ইশানের দিকে। চোখে তার একরাশ বিরক্তি। ইশান আবার বলল,’আমাকে মর্নিং বলবি না??’
মীরা এবার উওর দিলো,’ইটস্ আ ব্যাড মর্নিং ফর মি।’
‘সেজন্য কি আমাকে বলা যায় না?? আমার তো আজকের সকালটা দারুন লাগছে।’
মীরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,’কি চাই এখানে??কেন এসেছেন এখানে??’
ইশান মুখটা গোমড়া করে বলল,’চাই তো কতকিছুই। কিন্তু তুই তো দিবি না। যাই হোক আপাতত নিচে আয় তোর সাথে কথা আছে।’

ইশানের কথা শুনে মীরা অবাক হচ্ছে। সে বলল,’আপনি বলবেন আর আমি চলে যাবো??হাউ ফানি??গো টু হেল।’
‘দেখ মীরা এরকম করিস না। মানছি আমাদের অনেক বড় মিস্টেক হয়েছে। কিন্তু একবার আমার কথাগুলো শোন তাহলে সব বুঝতে পারবি।’
মীরা একটু চেঁচিয়ে বলল,’এখান থেকে যাবেন নাকি??’
‘নাহলে কি করবি??মারবি??মারতে হলেও তোকে নিচে নামতে হবে। লেট করিস না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মীরার গা রাগে শিরশির করে উঠলো।এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না। হাতের মগের দিকে তাকাতেই দেখল কফি থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে। মীরা এক সেকেন্ড দেরি না করেই মগ থেকে কফি ছুঁড়ে মারে ইশানের দিকে। ইশান মীরার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাই সে দ্রুত সরে গেল। কফি পড়লো রাস্তার উপরে। ইশান চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,’তোর এই অভ্যাসটা এখনও যায়নি মীরা??রাগ উঠলে হাতে যাই থাক তা ছুড়ে মারিস কেন??এর আগে তুই গরম চা দিয়ে আমার হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলি আর আজকে কফি??’

মীরা কটমট করে ইশানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,’তোকে গরম পানিতে চুবিয়ে তোর ছাল ছাড়াবো বাঁদর।’
ইশান গলা উঁচিয়ে বলল,’জোরে বল শুনতে পাচ্ছি না।’
মীরা এবার আরো রেগে গেলো। হাত উঁচিয়ে মগটা ছুঁড়ে মারতে গিয়েও মারলো না। মীরা বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। খিদে পেয়েছে খুব। মীরা কিচেনে গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাতে লাগলো। জিনিয়া ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে কিচেনে এসে নিজের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেল। চোখে তার এখনও ঘুম। মাস্তি করা আর ঘুম এটাই জিনিয়ার দুনিয়া। আর কে কি করলো তার সেটা দেখার বিষয় নয়।
কলিং বেল বাজতেই জিনিয়া দরজা খুলে দিল। এসময়ে ইশান কে দেখে জিনিয়া চমকালো কিন্তু কিছু বলল না। ইশান বলল,’গুড মর্নিং জেনি।’
জিনিয়া আস্তে করে বলল,’মর্নিং,কাম।’

ইশান জিনিয়ার সাথে সোফায় বসতেই জিনিয়া বলল,’হ্যাভ কফি??’
‘ইয়াহ।’
জিনিয়া উঠতে নিলেই ইশান ওকে থামিয়ে দিলো। ইশান নিজেই গেল কিচেনের দিকে। জিনিয়া উঠতে মন চাইছিল না। ইশান যাওয়াতে একটু হাফ ছাড়লো সে। ইশান হঠাৎ কেন কিচেনে গেল তা ওর জানতে ইচ্ছে করছে না তার মাথাটা ধরেছে।
ইশান কিচেনে উকি দিয়ে দেখলো মীরা ফ্রাইপ্যানে হাতা চালাচ্ছে। সে পা টিপে টিপে মীরার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ‘ভাউউউউউউ’ করে উঠতেই মীরা মৃদু চিৎকার করে উঠলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো ইশান ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। মীরার রাগ হলো। জোর গলায় বলল,’আপনি এখানে কেন এসেছেন??’

ইশান বলল,’কেন আসতে পারি না বুঝি??’
‘না এখানে আসার কোন রাইট নেই আপনার।’
ইশান নির্লিপ্ত ভাবে বলল,’এটা আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি আমি আসতেই পারি।’
মীরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যতদিন ও এখানে থাকবে ইশান এসে ওকে জ্বালাবেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মীরা বাংলাদেশে ফিরে যাবে। মীরা বলল,’আসতে পারেন কিন্তু কিচেনে কি করতে এসেছেন??’
‘আমি আজকে এখানেই ব্রেকফাস্ট করবো তাই দেখতে এলাম কি রান্না করছিস!!’
মীরা হাতের খুন্তি উঁচু করে ধরে বলল,’তাহলে দেখুন।’

বলেই খুন্তিটা ইশানের‌ হাতে ছুঁইয়ে দিলো তবে সাথে সাথে আবার সরিয়ে নিল। ইশান ‘আউচচ’ শব্দ করে পিছিয়ে গেল বলল,’এটা কি করলি মীরা??আমার হাত জ্বলছে।’
মীরা মুচকি হেসে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’এতে আমার খুব ভালো লাগছে।’
ইশান অসহায় মুখে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’তুই এতটা নিষ্ঠুর হলি কবে থেকে মীরা??’
মীরা ইশানের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘রান্না করা কি আরো দেখবেন??খুন্তি কিন্তু এখনো গরম আছে।’

ইশান ব্রেসিনে হাত ভিজিয়ে পোড়া জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,’যাচ্ছি যাচ্ছি কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না।’
ইশান দু’পা এগতেই মীরা পেছনে না তাকিয়ে বলল,’যতোই চেষ্টা করুন না কেন মিস্টার ইশান!!এই মীরাকে কখনো মানাতে পারবেন না।’
ইশান মুচকি হেসে বলল,’তোকে মানানোর ইচ্ছে আছে আমার আর তুই মানবি এটা আমার ভরসা। এদুটোই তোকে মানাতে সাহায্য করবে আমাকে মীরা।’
ইশান কিচেন ছেড়ে বের হয়ে গেল। মীরা সাথে সাথে পিছনে ঘুরে তাকালো। কি বলে গেল ইশান?? কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে মীরা আবার কাজে মন দিলো।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে মীরা গেল না। নিজের খাবার নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল।ইশানকে কিছু বলার সুযোগটুকু দিলো না। ব্রেকফাস্ট শেষে ইশান চলে গেল। মীরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মীরা আর দেরি করতে চায় না। সে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে সাবরিনের সাথে কথা বলতে হবে। বেচারি মীরার সাথে একটু ঘোরাঘুরি করতে চেয়েছে। মীরা তাই ঠিক করেছে একদিন দুজনে ঘুরবে তারপর চলে যাবে।

জিনিয়া চলে গেছে। এখন মীরা শুধু বাড়িতে একা তাই সে দরজা আটকিয়ে বের হলো আশেপাশে হাঁটার জন্য। বাড়ি থেকে কিছুদূর যেতেই বড় একটা পার্ক। দশটা বাজে এখন তাই পার্কে খুব একটা মানুষ জন নেই। তবে বিকেল হলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আনাগোনা বাড়ে। মীরা ঘুরে ঘুরে সব দেখতেছে। সবুজ গাছপালায় ভরা পার্কটা। ভালোই লাগছে মীরার। একটু ঘুরে সে বাইরে আসতেই কেউ ওর নাম ধরে ডাকলো। মীরা ওর বাম পাশে তাকিয়ে দেখলো ইফাজ। গাড়ির ভেতর বসে স্টেয়ারিং এ হাত দিয়ে বসে আছে। ইফাজের চোখজোড়া মীরার দিকে। মীরার এবার খুব বিরক্ত হলো। সে বিড়বিড় করে বলল,

‘উফফ এরা বাপ বেটা কি পেয়েছে?? আমার পিছু নিয়েছে কেন??খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই নাকি??’
ইফাজ আবারো মীরাকে ডাকলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মীরা গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইফাজ অত্যন্ত নরম গলাতে বলল,’আমি জানি মীরা তুমি আমার উপর রেগে আছো। এটা স্বাভাবিক,আমি যা করেছি তার ক্ষমা হয়না। কিন্তু এতে ইশানের কোন দোষ নেই। ও তখন ছোট ছিল। কিছু বুঝতো না। তাই তখন যা দেখেছে শুনেছে তাই বিশ্বাস করেছে। ভুল আমি করেছি তাই ক্ষমা আমি চাইবো।’
মীরা কিছুক্ষণ ইফাজের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’ক্ষমা চাইতে বড্ড দেরী করে ফেলেছেন আপনি। আর এতো দেরি করে আরো বড় অন্যায় করেছেন। এতগুলো অন্যায়ের ক্ষমা করা সম্ভব নয়। না আমি ক্ষমা করব আর না আমার মনি’মা।’

‘ক্ষমা চাওয়ার কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই মীরা।আল্লাহর কাছে মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ও ক্ষমা চাইতে পারে। এবং আল্লাহ ক্ষমাও করেন।’
মীরা কাট কাট গলায় জবাব দিলো, ‘সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের তুলনা হয় না।তার মতো উদার এই পৃথিবীতে কেউ নেই। তাই বলে এই না যে তিনি কাউকে শাস্তি দেয় না!!অন্যায়কারিকে তিনি অবশ্যই শাস্তি দেয়।’

ইফাজ স্নিগ্ধ হেসে বলল,’আমার শাস্তি তো তিনি সতের বছর ধরেই দিচ্ছে। আমার দোষ আছে এটা আমি মানি। কিন্তু বিশ্বাস করো মীরা আমি পিহু ইশান একটা পরিস্থিতির শিকার।’
মীরা নিচের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসল তারপর ইফাজের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনারা পরিস্থিতির শিকার নন। বরং পরিস্থিতি আপনাদের শিকার। এরকম পরিস্থিতি আপনিই তৈরি করেছেন।’
মীরার কথা শুনে ইফাজ অবাক হলো। এত কথা কিভাবে বলে মেয়েটা??এত কথা শিখলোই বা কি করে??ইফাজ বলল,’অনেক কথাই শিখে গেছো তুমি মীরা।’

‘আমি আর ছোট নেই। এখন বড় হয়ে গেছি।কথা তো শিখতেই হবে। এটাই তো স্বাভাবিক।’
ইফাজ বুঝলো মীরাকে এভাবে বোঝানো কঠিন। মীরা ওর থেকে বয়সে ছোট হলে কি হবে কথায় সে অনেক এগিয়ে গেছে। ইফাজ জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,’একবার ভেবে দেখো মীরা?? তোমার মনি’মায়ের কথাও ভাবো??’
‘সতের বছর ধরে শুধু ভেবেই এসেছি। তবে আর ভাবতে পারবো না। এটুকুই এনাফ। আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আশা করি আর কিছু জানতে চাইবেন না আসি।’

মীরা চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে ইফাজ বলল,’মীরা আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই??’
‘তার কোন দরকার হবে না আমি একাই যেতে পারবো।’
‘বড়দের কথা শুনতে হয় এটা নিশ্চয়ই তোমার মনি’মা তোমাকে শিখিয়েছে।’
পিহুর কথা শুনে মীরা থমকে গেল। তাকে কথার জালে আটকে ফেলেছে ইফাজ। মীরা ইফাজের দিকে তাকাতেই ইফাজ বলল,’প্লিজজজ।’
মীরা কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ইফাজ গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইফাজ এবার মীরাকে জিজ্ঞাসা করল,’পড়াশোনা কতদূর তোমার??’

মীরার এবার অস্বস্তি লাগছে। একে তো একধরনের ব্লাকমেইল করে গাড়িতে উঠিয়েছে আবার কথাও বলছে। না চাইতেও সে উওর দিলো,’অনার্স শেষ করেছি। বাংলাদেশে ফিরে মাস্টার্সে ভর্তি হবো।’
ইফাজ সামনের দিকে চোখ রেখে বলল, ‘ভালো। আর পিহু কি করছে??’
মীরা এবার রাগে গজগজ করছে। ইফাজের মুখে সে পিহুর নাম শুনতে চায় না। ইফাজ বুঝতে পারে যে মীরা রাগে ফুঁসছে। তাই সে বলল,’বললে সমস্যা কি??আমি তো আর পিহুর সাথে দেখা করতে চাইছি না শুধু এটুকু জানতে চাইছি।’

মীরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে, ‘মনি’মা কলেজে চাকরি নিয়েছে।’
ইফাজ হেসে বলে,’ওহ’
ততক্ষণে জিনিয়ার বাড়ির সামনে চলে এসেছে ওরা। গাড়ি থামতেই মীরা দ্রুত বের হয়ে চলে যায়। একবারের জন্যও ইফাজের দিকে তাকায় না।
ইশান ইফাজের সাথে মীরাকে দেখে অবাক হয়। এতক্ষণ সে রাস্তার ওপাশের একটা বেঞ্চে বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিচ্ছিলো। ইফাজের গাড়ি থেকে মীরা নামতেই ইশান অবাক হয়ে তাকালো। মীরা ইশানকে খেয়াল করলো না। মাথা নিচু করে সে চলে গেছে। ইফাজ গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগেই ইশান গাড়ির জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’আব্বু তুমি এখানে!!আর মীরা তোমার সাথে?? ব্যাপারটা কি??’

ইফাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর চোখ গেল ইশানের হাতের দিকে। ইফাজের দৃষ্টি অনুসরণ করে ইশান নিজের হাতের দিকে তাকালো। ওর হাতে বিয়ারের ক্যান। ইশান দ্রুত তা পিছনে লুকিয়ে ফেলে। ইফাজ কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,’এসব খেতে বারণ করেছি না?? আমার কথা শুনিস না কেন??তোর মা যদি জানতে পারে তাহলে তো আমাকে আরো খারাপ ভাববে। এমনিতেই তো তোর মায়ের চোখের বালি হয়ে বসে আছি। তোকে এরকম ভাবে দেখলে বালির সাথে এঁটেল মাটি দোআঁশ মাটি বেলে মাটি সব হয়ে যাবো।’

ইফাজের কথা শুনে ইশান হাসলো বলল, ‘আম্মুর সাথে দেখা হলে আর খাবো না। আম্মুকে বুঝতেই দেব না।’
ইফাজ কটাক্ষ করে বলে,’মীরা যেমন মেয়ে দেখ গিয়ে এখনই ফোন করে তোর মাকে সব বলে দিয়েছে।’
ইশান হতাশ হয়ে বলল,’ঠিকই বলেছো তুমি। মীরাকে মানানো বড়ই কষ্টকর।’
‘তোর মা আমাদের মেনে নেবে ক্ষমাও করে দেবে কিন্তু মীরা বোধহয় পারবে না ইশান। ওর চোখেমুখে আমি আমাদের জন্য ঘৃণা দেখতে পাচ্ছি শুধু।’

ইশান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’তুমি আম্মুকে মানাও আমি মীরাকে দেখছি।’
ইফাজ ছোট ছোট চোখে ইশানের দিকে তাকালো। ইশান তার মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। ইফাজ কিছু বলল না গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। মীরা এতক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। ইশান আর ইফাজ কথা বলছিল কিন্তু দূর থেকে ওদের কথা শুনতে পায়নি। মীরার অসহ্য লাগছে। এই দুজন ওর পিছনে পড়েছে কেন?? এখন ওর সাথে ভাব করার মানে কি??আর মীরা এতো সহজে কি ওদের ক্ষমা করবে??নাহ কখনো না। এতবছর ধরে কেন সত্যিটা জানার চেষ্টা করলো না ওরা? এখন মীরা সব বলেছে তাই এসেছে ক্ষমা চাইতে?করবে না সে ক্ষমা।এসব ভাবতে ভাবতে মীরা নিজের রুমে চলে গেল। আজকে সে পণ করেছে যে বাইরে বের হবেই না। লুকিয়ে থাকবে নিজের রুমে। তাই মীরা রুমের দরজা আটকিয়ে বসে আছে। বসে বসে যাতে বোরিং না হয় সেজন্য পিহুকে ফোন করেছে সে। কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলে মীরা গোসলে গেল।

গোসল সেরে মীরা তোয়ালে মাথায় প্যাঁচিয়ে বের হয়। চুল মুছতে মুছতে মীরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়াতেই পিঠে একটা পাথরের টুকরো এসে পড়লো। বেশ জোরে আসাতে মীরা ব্যথায় মুখ দিয়ে ‘আহ্’ শব্দ করে উঠলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো মেঝেতে ছোট পাথরের টুকরো পড়ে আছে। পাথরের টুকরো টা হাতে তুলে নিয়ে মীরা বারান্দার দিকে তাকালো। বারন্দার দরজা খোলাই। মীরা এবার কিছুটা বুঝতে পারলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। ইশান ততক্ষণে আরেকটা পাথর ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। মীরাকে দেখেই সে থেমে গেলো।

মীরা রক্তচক্ষু নিয়ে ইশানের দিকে তাকালো।গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,’সমস্যা কি আপনার?? কুকুরের মতো আমার পিছনে পড়ে আছেন কেন??’
ইশান হা হয়ে গেল মীরা ওকে কুকুরের সাথে তুলনা করছে। ইশান হাতের পাথরের টুকরো ফেলে দিয়ে বলল,’কি??আমি কুকুর??তুই আমাকে কুকুর বললি??’
‘শুধু কুকুর নয় বিদেশি কুকুর। সেম টু সেম আছেন। নাক কান সবই কুকুরের মতোই খাড়া খাড়া। গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আমার পেছন পেছন চলে এসেছেন। শুধু জিহ্বা টা ছোট। কুকুরের মতো লম্বা হলে বেশ হতো।’

মীরার কথায় ইশান ও এবার চটে গেল বলল,’তুই একটা কুকুর কথায় কথায় আমাকে কামড়ে দিতি মনে নেই। সেই ছোট্ট কুকুর এখন বড় হয়েছে। আর তাই তো কথায় কথায় খালি ঘেউ ঘেউ করিস।’
মীরা রেগে ওর হাতের পাথরের টুকরো ইশানের দিকে ছুঁড়ে মারে। রাগে কটমট করতে করতে বলল,’তুই কুকুর তোর শ্বশুর বাড়ির চৌদ্দগুষ্টি কুকুর।’
‘এই খবরদার আমাকে বলছিস কিছু বলিনি আমার বউ আর শ্বশুর বাড়ির কাউকে কিছু বললে ভালো হবে না।’

‘আপনি থাকেন আপনার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে। দুই বাপ বেটা কি পেয়েছে কে জানে?? আমার পিছনে পড়ে আছে শুধু। আমি আর থাকবোই না এখানে!!’
মীরা এসব বলতে বলতে রুমে চলে গেল। এইসব আর ভালো লাগছে না। বাংলাদেশে ওকে যেতেই হবে। তাহলে যদি এদের থেকে রেহাই পায়?? কিন্তু এরা যদি ওর পিছু পিছু বাংলাদেশে ও চলে যায়??উফফফ মীরার মাথা ধরে গেছে। জলদি গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে খায়।
রাতে মীরা বের হয়। মূলত সাবরিনের সাথে দেখা করার জন্য। সাবরিনের ফ্ল্যাট থেকে দু’জনে একটা রেস্তরাঁয় যায়। মীরা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সাবরিন কিছুক্ষণ মীরার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,’তুমি আপসেট কেন মীরা??’

মীরা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো বলল, ‘প্যারায় আছি আমি। ইশান আর ইফাজ খান আমাকে জ্বালিয়ে মারছে তাই খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যেতে পারলেই ভালো।’
‘কিন্তু ওনারা তো বাংলাদেশেও চলে যেতে পারে?? তখন কি করবে??’
‘বাংলাদেশে গিয়ে ঘাপটি মেরে কোথাও বসে থাকব তবুও এখানে থাকব না। খুব টেনশন হচ্ছে আমার।’
সাবরিন মুচকি হেসে বলল,’তোমার টেনশন এখন আরো বেড়ে যাবে।’
‘কেন কেন কেন??’
‘জারা পিছে তো দেখো??’

মীরা পিছনে তাকিয়ে দেখলো ইশান এদিকেই আসছে। রাগে মীরা হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে টেবিলের উপর রাখলো। টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। ইশান চট জলদি মীরার সামনের চেয়ারে এসে বসে বলল,’আরে মীরা তুই এখানে ঘুমাচ্ছিস কেন?? বাড়িতে গিয়ে ঘুমা।’
মীরা মাথা তুলে বলল,’আমার ইচ্ছে। আমি এখানে ঘুমাব নাকি বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো,আর দরকার পড়লে ফুটপাতে ঘুমাবো। আপনি বলার কে??’

ইশান শার্টের কলার ঠিক করে বলল,’না মানে তুই এত দূর থেকে এসেছিস তাই তোর যত্ন নিতে হবে তো। নাহলে আম্মু কি ভাববে বল?? তখন বলবে আমরা তোর কেয়ার করি নাই।’
‘কেয়ারের নিকুচি করেছে।’
ইশান কিছু বলার আগেই টেবিলে থাকা মীরার ফোন বেজে উঠলো। ইশানের চোখ গেল ফোনের স্ক্রিনের দিকে। মনি’মা লেখাটা ভেসে উঠেছে। ইশান হাত বাড়িয়ে ফোনটা ধরতে গেলে মীরা ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো। তারপর,,,,,

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১০

রিডার্সদের মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে। আমি কিছু কিছু সলভ করে দিলাম,,,,,
প্রশ্ন১: মীরা এতো ন্যাকামি করছে কেন??যেখানে পিহু সবটা মেনে নিয়েছে সেখানে মীরার এতো ন্যাকামি করার মানে কি??মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি!!

উওর: আমার মতে মীরা ওর জায়গায় ঠিক আছে। মায়ের থেকে তো মাসির দরদ বেশি হবে। কারণ যদি মা মেয়েকে মাসির কাছে রেখে সতের বছর পার করে দেয় সেখানে তো মাসি আর মেয়ের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরি হয়ে যায় মা এবং মেয়ের মতো। ইশান আর ইফাজ তো এতদিন দূরেই ছিল বলে মীরা অভিমান করেছে। আর পিহুর সাথে তার ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছে। পিহু মুখে কিছু না বললেও মনে মনে কোথাও অভিমান রয়েই গেছে। মীরা যেহেতু পিহুর কাছের ব্যক্তি সেহেতু মীরার রাগ করাটাই শ্রেয়। অভিমান সহজে করা গেলেও অভিমান ভাঙাটা আদৌ সহজ নয়।

প্রশ্ন২:ইফাজ আর পিহুর লিগ্যাল ডিভোর্স হয়ে গেছে। ইসলামের মতে এরপর দুজনে একসাথে থাকলে তা হারাম হবে। তাহলে ওদের মিল কি করে হবে???

উওর:এই প্রশ্ন টা অনেকেই করছে। আরে বাবা আমি তো এখনও সেই পর্যন্ত আগাতে পারিনি। আস্তে আস্তে তো সবটা ক্লিয়ার করা হবে। এতো অধৈর্য না হয়ে শেষ পর্যন্ত দেখুন কি হয়?? গল্পের এন্ডিং তো আমি সাজিয়ে রেখেছি।

প্রশ্ন৩:গল্প শেষ করবেন কবে??কত পর্বের হবে গল্পটা??

উওর:গল্পটা যেহেতু শুরু করেছি শেষ তো করবোই। এতো তাড়া কিসের??আর গল্পটা তো আমি পুরো লিখিনি তাহলে কিভাবে বলব যে কত পর্বের হবে!!

শেষকথা: গল্পের সামনে কি হবে তা না ভেবে এখন কি হচ্ছে সেটা দেখুন। আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার হবে। আর যদি অধৈর্য হয়ে পড়েন তাইলে তো মাশআল্লাহ।
তাই বলছি পরবর্তী পর্বে কি হবে তা না ভেবে চলমান পর্বে লাইক আর পর্ব সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করে সাথে থাকুন। দেখবেন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ সবাইকে। হ্যাপি রিডিং

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১২