অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১২ || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১২
Ishita Rahman Sanjida

ইশান অসহায় মুখে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। চেয়েছিল পিহুর সাথে কথা বলতে কিন্তু মাঝখানে মীরা খলনায়িকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইশান অসহায় চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল। মীরা ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। ততক্ষণে ফোনের রিং বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। মীরা ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমি এখন মনি’মায়ের সাথে কথা বলব। মুখটা যেন বন্ধ থাকে নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।’

ইশান ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,’আমি একটু আম্মুর সাথে কথা বলি প্লিজ!!!’
মীরা কটমট করে তাকিয়ে বলল,’চুপপ বেশি কথা বলবেন না। কথা বললে নাক ফাটিয়ে দেব।’
সাবরিন ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’ভাইয়া আপনি একটু চুপ করুন। মীরা কিন্তু সত্যি মেরে দেবে!!’
‘সেটা আমি জানি। ওর মুখের চেয়ে হাত আর দাঁত চলে বেশি।’

সাবরিন আর মীরা দু’জনেই উৎসুক দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকালো। ইশান মেকি হাসি দিয়ে বলল,’এতে তোর কি কোন সন্দেহ আছে মীরা??’
মীরা কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। মীরা ইশানের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,’মুখটা বন্ধ রাখবেন।’
ইশান মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে গেল। মীরা ফোন রিসিভ করে বলল,’হ্যা মনি’মা বলো।’
‘কি রে কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি ফোন ধরছিস না কেন??’

মীরা আমতা আমতা করে বলল,’ও ওই ফোনটা সাইলেন্ট মোডে ছিল তাই খেয়াল করি নি।’
ইশান একথা শুনেই বলে উঠলো,’মিথ্যা বলেছিস কেন মীরা,,,,,!!’
মীরা চট করেই ইশানের দিকে ঝুঁকে ওর মুখে হাত চাপা দিলো। ইশান অবাক হয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল। মীরা নিজের ইচ্ছায় ওকে টাচ করেছে!!এতো অবিশ্বাস্য!!বড়বড় চোখে সে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল। মীরা বলল,’ত তুমি কেমন আছো?? ঠিকমতো মেডিসিন নিচ্ছো তো??’
পিহু জোরে শ্বাস ফেলল যা মীরাও শুনতে পেলো। পিহু বলল,’ওখানের কি অবস্থা?? ওদের কে খুঁজে পেয়েছিস??’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মীরার হাত এখনও ইশানের মুখে উপর। গরম চোখে মীরা একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’নাহ পাইনি। এতবড় শহরে খোঁজা তো মুশকিল। তবে চিন্তা করো না। তাড়াতাড়ি ওদের পেয়ে যাবো। আর আমিও তাড়াতাড়ি চলে আসবো। তোমাকে খুব মিস করছি।’

ইশান বুঝতে পারলো যে পিহু হয়তো ওদের কথা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু মীরা তো মিথ্যা বলছে ইশান মীরার হাত সরিয়ে বলল,’আম্মুউউ’ মীরা এবার রেগে গেল। টেবিল থেকে ঝাল সসের বোতল থেকে সস নিয়ে ইশানের মুখে দিয়ে দিলো। ঝালে ইশান দাঁড়িয়ে পড়লো। ইশান একদম ঝাল খেতে পারে না। ঝালে সে হাত দিয়ে মুখে বাতাস করতে লাগলো। সাবরিন দ্রুত পানি এগিয়ে দিলো ইশানের দিকে কিন্তু পানি খেয়েও ইশানের ঝাল কমলো না। ঝালে একপ্রকার কাত হয়ে গেছে। মীরা কোনরকমে পিহুকে বুঝিয়ে ফোন কেটে দিলো। সাবরিন চিন্তিত হয়ে বলল,’এটা কি করলে মীরা??এই সসটা সত্যি খুব ঝাল। এখন কি হবে??’

‘ঝালে মরুক তাতে আমার কি?? বলেছিলাম না চুপ থাকতে???এখন বুঝুক। তোমার সাথে তো ঘোরা হয়েই গেছে তাই না??আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখানে আর থাকব না। আমি আসি।’
সাবরিন মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। মীরা তার ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল। ইশান বলে উঠলো,’মীরা মীরা মীরা,,,দাঁড়া।’
মীরা ইশানের কোন কথা শুনলো না। গটগট করে হেঁটে চলল সে। ইশান মীরার পিছু পিছু গেল না আগে তার ঝাল কমাতে হবে। ইশান দৌড়ে রেস্তরাঁর ভেতরে ঢুকে গেল।

মীরা রাগে হাঁটছে। মেজাজটাই ওর খারাপ করে দিলো। ওর পেছনে আসলে কি হবে?? ও তো কিছুতেই ইশানকে ক্ষমা করবে না। এটা কি ইশান বুঝতে পারছে না??রেগে থাকার ফলে মীরা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। ক্যাব না নিয়ে ও হাটতেছে। হাঁটতে হাঁটতে ফাঁকা রাস্তায় চলে এসেছে। রাস্তার একপাশে কতগুলো ফর্সা ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। মীরাকে একা দেখতে পেয়ে ছেলেগুলো ওর পিছু নেয়। কিন্তু মীরা সেসব খেয়াল করল না। সে ইশানকে মনে মনে হাজারটা গালি দিতে ব্যস্ত। হঠাৎ ওর ব্যাগে টান পড়তেই মীরা রেগে গেলো। নিশ্চয়ই ইশান টেনে ধরেছে। এবার তো একটা থাপ্পর সে দিবেই দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মীরা ঘুরেই থাপ্পর বসালো ছেলেটার গালে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল। ছেলেটাকে দেখে তো মীরার চক্ষু চড়কগাছ। মীরা অস্থির হয়ে বলল,’সরি সরি সরি। আ’ম রেইলি সরি,,,,’

ছেলেটা রেগে বলল,’হোয়াটস রং???’
মীরা অসহায় হয়ে বলল,’সরি,,,প্লিজ ফরগিভ মি??’
পাশের ছেলেটা বাকা হেসে বলল,’নো বেইব। ইটস্ ওকে। ইউ লুকিং সো হট আই লাইক ইট।’
ছেলেটার কথা শুনে মীরা ভাবলো থাপ্পর মেরে ভালোই করেছে। ছেলেগুলো বাজে তা এখন মীরা বুঝতে পেরেছে। মীরা টান মেরে ব্যাগটা নিয়ে নিলো। বলল,’আই হ্যাভ টু গো।’
মীরা চলে যেতে নিলে ছেলেগুলো ওর সামনে গিয়ে পথ আটকায়। একজন বলে,’কাম অন বেইব লেটস ইনজয়। কাম অন।’

মীরার এবার একটু ভয় হতে লাগলো। এই অচেনা জায়গায় কে ওকে বাঁচাবে??তাও আবার ফাঁকা রাস্তা এখন। আশেপাশে তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। মীরা ওদের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। একটা ছেলে তো ওর হাত ধরে বসেছে। মীরা রেগে ছেলেটার গায়ে হাত তুলতে নিলে সে ধরে ফেলে। মীরার দুহাত বদ্ধ করে ফেলেছে। মীরা এবার চিৎকার করে হেল্প হেল্প বলছে কিন্তু ওর চিৎকার শোনার মতো কেউ নেই।

হঠাৎ গাড়ির তীব্র আলো এসে ছেলেগুলোর চোখে পড়তেই তারা চোখের উপর হাত দিলো। মীরা পিছনে তাকিয়ে দেখলো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির আলো এসে ওর চোখেমুখে বিঁধছে। মীরা হাত দিয়ে আলো আড়াল করলো। ভাবল বোধহয় কোন শুভাকাঙ্খিক এসেছে ওকে বাঁচাতে। মীরা এক ঝটকায় ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে গেল। তখনই গাড়ির দরজা খুলে গেল।
হাতে বিয়ারের ক্যান নিয়ে বের হয়ে এলো ইশান। ইশানকে দেখে হতাশ হলো মীরা। শেষমেষ ইশানের থেকে হেল্প নিতে হবে তার??ইশান বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিতে দিতে গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। একবার ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’একটু আগে তো ভালোই কথা বলছিলি। এখন বেলুনের মতো ফুসস হয়ে গেলি কেন?? হাওয়া বের হয়ে গেছে এতেই??’
ইশানের লাগামহীন কথাবার্তায় মীরার রাগটা আরো বেড়ে গেল বলল,’একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। আমি কি আপনার থেকে হেল্প চেয়েছি??’

ইশান মাথা কাত করে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’তাহলে দৌড়ে এখানে এলি কেন??যা ফাইট কর ওদের সাথে। যদি ওদের ভাগাতে পারিস তাহলে বুঝব তোর শুধু মুখের ধার না কাজের ধার ও আছে।’
‘বাজে কথা বলবেন না।’
‘বাজে কথা বললাম কোথায়??’ সহজ ভাবেই বলল ইশান। মীরা চুপ করে রইলো। ইশান আবার বলল,’কি হলো??যা??’

মীরা রাগন্বিত স্বরে বলল,’এতো আমার বা হাতের খেল। এরকম কতো ছেলেদের সাইজ করেছি বাংলাদেশে আর এতো বিদেশি বাঁদর।কলা দিলে খোসা খায়। নো প্রবলেম।’
মীরার এহেম কথায় হাসলো ইশান। তা দেখে মীরা ছোট ছোট চোখে তাকালো ইশানের দিকে। কিন্তু ইশানের কোন ভাবান্তর নেই। সে হেসেই চলছে। মীরা কি করবে তা বুঝতে পারছে না। সে মনকে বলল নাহ মীরা তোকে ভেঙে পড়লে চলবে না এই ইশান খানকে দেখিয়ে দিতে হবে যে তোরও সাহস আছে।মীরা একপা একপা করে সামনে এগোচ্ছে। ছেলেগুলোর একটু কাছে এসে মীরা দুহাত প্রসারিত করে দিয়ে বলে,’কাম অন। লেটস ফাইট।’

বলতে বলতে মীরা এগিয়ে যাচ্ছে। মীরা ভয়ও পাচ্ছে এই বুঝি ছেলেগুলো ওকে হামলা করলো। বুকটা মীরার ধকধক করছে। কিন্তু ছেলেগুলো মীরাকে অবাক করে দিয়ে পেছোতে লাগলো। মীরা অবাক হলেও সামনে এগোতে লাগলো। কিন্তু ছেলেগুলো যেন ভয় পাচ্ছে মীরাকে তাই পালাতে লাগলো। এতে মীরা বেশ খুশি হয়। যাক শেষমেষ নিজের সম্মানটা বাঁচলো। নাহলে ইশানের সামনে আজকে ওর ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেতো। মীরা চেঁচিয়ে বলল,’ওই বিদেশি বাঁদরের দল কোথায় পালাচ্ছিস??ফাইট করবি না আমার সাথে?? আমার নামও মীরা। আমাকে হারানো অতো সহজ নয়। তাই তো দেখেই পালাচ্ছিস। শালা বাঁদর, বাঁদরামি করার জায়গা পাস না??’

ছেলেগুলো ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। মীরা কিন্ঞ্চিৎ হেসে বলল,’উফফফ বাঁচা গেল।’
পিছনে ঘুরতেই দেখল ইশান ওর পেছনে দাড়িয়ে আছে। মীরা তার এক ভ্রু উঁচু করে বলল,’বলেছিলাম না যে এসব আমার বা হাতের খেল। আমাকে দেখা মাত্রই পালিয়েছে।’
ইশান মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,’কাম আমার আর নাম তোমার।’
মীরা সন্দিহান চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’কি বললেন??’
ইশান হালকা হেসে বলল,’নাহ কিছু না। তুই সত্যি অলরাউন্ডার। কাজে কথায় সবকিছুতেই আগে। নাহলে আমিও ভাবছি ছেলেগুলো পালালো কেন??’

ঠোঁটের কোণায় বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো ইশান। তবে মীরার মনেও এই একই প্রশ্ন!! ছেলেগুলো পালালো কেন??একটু আগেই তো মীরাকে তুলে নিয়ে যাওয়া ধরছিল। যাই হোক মীরা এখন এসব ভাবা বাদ দিলো। অতীত নিয়ে ভাবা বোকার কাজ। মীরা কিছু না বলে আবার হাঁটা দিলো। ইশান তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,’কোথায় যাচ্ছিস??চল আমি তোকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।’
ইশানের কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল মীরার মুখে। বাপ বেটা দু’জনেই শুধু লিফট দিতে চায়। মীরা গলা উঁচিয়ে বলল,’তার আর দরকার হবে না। আমি একাই চলে যেতে পারব।’

ইশান মীরার একটু কাছে এসে বলল,’জেদ করিস না মীরা। আমি ছিলাম বলে তোর বিপদ হয়নি। তাই বলে এই না যে তোর বিপদ কমেছে। সামনে হয়তো আরো বিপদ হতে পারে। তাই বলছি চল আমার সাথে।’
মীরা এবার বুঝতে পারলো যে হয়তো ছেলেগুলো ইশানকে দেখেই পালিয়েছে নাহলে ইশান এসব বলতো না। এই ছেলে তো দেখছি ক্রিমিনালদের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। ছেলেগুলো দেখেই পালালো!!

‘হোক বিপদ তাও আমি আপনার সাথে যাবো না।’
‘ঘৃনা করিস মানলাম। আমাকে সহ্য করতে পারিস না তাও মানলাম। কিন্তু এভাবে নিজের ক্ষতি করার কোন মানে হয় না।’
মীরাও জেদ ধরে বললো,’বলছি তো যাবো না।’
ইশান এবার একটু রেগে গেল। এতো জেদ দেখায় কেন মেয়েটা?? নিজের ভালো মন্দ কি বোঝে না?? নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে। ইশানের ইচ্ছে করছে কোলে তুলে মীরাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু এটা করলে তো মীরা আরো রেগে যাবে। ইশান শান্ত হয়ে বলল,’এত জেদ করিস কেন তুই??চল আমার সাথে??’

ইশান মীরার হাত ধরতে নিলে মীরা নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,’আমাকে ছোঁয়া বা আমার হাত ধরার চেষ্টাও করবেন না।’
ইশান এবার বেশ রেগে গেল। এই মেয়ের ঘাড়ের রগ ত্যাড়া তা বেশ বুঝতে পারছে। ভাঙবে তবু মচকাবে না। ইশান খপ করে মীরার চুলের মুঠি ধরে ফেলল। ব্যথায় মীরা ‘আহ’ করে উঠলো। ইশানের এরকম কাজে হতভম্ব হয়ে গেছে মীরা। ইশান ওর চুল ধরেছে??বড়বড় চোখে সে ইশানের দিকে তাকিয়ে রইল। ইশান আর একমুহূর্ত দেরি না করে মীরাকে টেনে গাড়িতে বসায়। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। মীরা ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেন তার রক্ত ঝরছে। ইশান সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’ওভাবে কি দেখছিস??’

‘আপনি এটা কি করলেন??’
ইশানের সহজ স্বীকারোক্তি,’তুই তো বললি তোর হাত না ধরতে। তাই ধরিনি, কিন্তু পা ধরে আনলে তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবি। আর বাকি রইল তোর গরুর লেজের মতো চুল।তাই বাধ্য হয়ে চুল ধরতে হয়েছে। সিটবেল্ট পরে নে।’
মীরা সিটবেল্ট বেঁধে বাইরে তাকালো। এসব যেন দিনদিন অসহ্য হয়ে পরছে। ইশান গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুক্ষণ ওদের মধ্যে নিরবতা পালন করলো। একটু পর ইশান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,’তুই বাংলাদেশে ফিরে যাবি মীরা??’
ইশানের কন্ঠে মীরা একরাশ হতাশা দেখলো। বাইরে দৃষ্টি রেখেই সে বলল,’আমি তো এখানে আজীবন থাকতে আসিনি চলে তো যেতেই হবে।’

কন্ঠে গম্ভীরতা এনে ইশান বলল,’তুই কি কোনদিন আমাকে ক্ষমা করতে পারবি না??আমি তো বললাম যে আমি অনুতপ্ত। আমি আম্মুর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইব ইভেন আব্বুও চাইবে তাহলে তুই কেন মানতে পারছিস না??’
মীরা কোন কথা বলল না চুপ করেই রইল। ইশান বুঝলো যে মীরা মুখে কুলুপ এঁটেছে। ওকে এখন বোম মারলেও কথা বলানো যাবে না। গাড়ি এসে থামলো জিনিয়ার বাড়ির সামনে। মীরা গাড়ি থেকে নেমে দরজা না আটকিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনাদের ক্ষমা চাওয়াতে যদি সতেরটা বছর ফিরে পাওয়া যেত তাহলে অবশ্যই আপনারা ক্ষমা পেতেন। না এতগুলো বছর ফিরে পাওয়া যাবে আর না আপনাদের ক্ষমা করা যাবে।’

এটা বলেই মীরা ওখান থেকে চলে গেল। ইশান শান্ত দৃষ্টিতে মীরার চলে যাওয়া দেখলো। মীরার কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সত্যি এতগুলো বছর ফিরে পাওয়া যাবে না। এই চারজনের জীবনটা শুধু একটা ভুল ওলট পালট করে দিলো।
জীবন থেকে কি ভুল শব্দটা কোনভাবে তুলে ফেলা যায় না?? তাহলে আর কোন মানুষ ভুল করতো না। আর ভুলের মাশুল দিতে প্রিয় মানুষদের হারাতে হতো না। ভুল শোধরাতে শোধরাতে জীবন পার হতো না।

এখনকার মানুষের করা ভুল শোধরাতে সারাজীবন লেগে যায়। সামান্য একটা ভুল জীবন নষ্ট করতে অল্পসময় নেয়। কিন্তু সেই ভাঙ্গা জীবনকে জোড়াতে সারাজীবন নিয়ে নেয়। মানুষের মনে একবার কষ্টের দাগ লেগে গেলে তা কোনদিন তোলা যায় না। কষ্টটা কোন পেন্সিলের দাগ নয় যে রাবার ঘষে তুলে ফেলবে। কষ্টের দাগ কলমের দাগের মতোই দীর্ঘস্থায়ী। মনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যাবে তবুও কষ্টের দাগ উঠবে না।
ইশান ওখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।

সকাল সকাল জিনিয়াকে নিজের রুমে দেখে অবাক হয় মীরা। কারণ গত একমাসে জিনিয়াকে নিজের রুমে কখনোই আসতে দেখেনি মীরা। তাহলে আজকে কেন এসেছে?? কেমন যেন লাগছে মীরার। ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই মীরা জিনিয়াকে দেখলো হাতে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মীরার জন্যও এনেছে। মীরা অবাক হলেও কিছু বলল না। জিনিয়া মীরাকে মর্নিং জানালো। মীরাও জিনিয়াকে একই কথা বলে। কিছুক্ষণ গল্প করে জিনিয়া চলে যায়। মীরা এতে আর মাথা ঘাটালো না। ভাবল ও হয়তো চলে যাবে তাই এসেছিল। মীরা নিজের লাগেজ গোছানো শুরু করে দিল। টিকেট বুক করা হয়নি এখনও। তবে সবকিছু তো গোছাতে হবে। যদি ভুলে কিছু ফেলে যায়??এজন্যই গোছাচ্ছে মীরা।
কিছু কিছু গুছিয়ে মীরা তার ছোট ব্যাগে হাত দিলো পাসপোর্ট বের করার জন্য। টিকিট বুক করতে হলে পাসপোর্টের প্রয়োজন আছে। কিন্তু মীরা অবাক হলো। কারণ তার পাসপোর্ট এখানে নেই!! তাহলে কোথায় গেল?? মীরা পুরো ব্যাগ খুঁজেও পেল না। সে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে চেক করলো। বিছানার তোশক উল্টিয়ে দেখলো কিন্তু পেল না।

তখনই জিনিয়ার ডাক পরলো। ব্রেকফাস্ট করার জন্য জিনিয়া ডাকছে। মীরা তাই আর
খুজলো না। ভাবলো হয়তো কোথাও আছে। খুঁজলেই পেয়ে যাবে।
মীরা ব্রেকফাস্ট করতে চলে যায়। ব্রেকফাস্ট সেরে দু’জনেই গল্প করলো টিভি দেখলো। মীরার আর রুমে ফেরা হলো না। জিনিয়া আজকে বাড়িতে থেকে গেল। দুজনে দুপুরের রান্না করলো একসাথে। সময়টা বেশ ভালোই লাগলো মীরার। আজকে ইশানের সাথে একবারও দেখা হয়নি। দেখা হবে কি করে আজকে তো মীরা বের হয়নি।

রান্না শেষে দু’জনেই গোসল করে নিলো। খাওয়া দাওয়া করে জিনিয়া চলে গেল। মীরা এবার দ্রুত রুমে ফিরে এলো। পুরো রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাসপোর্টের হদিস পাওয়া গেল না। মীরার এবার সন্দেহ হচ্ছে। কারণ ওর স্পষ্ট মনে আছে যে পাসপোর্ট ব্যাগেই রেখেছিল। পাসপোর্টের তো হাত পা নেই যে হেঁটে কোথাও চলে যাবে?? মীরার এবার জিনিয়াকে সন্দেহ হলো। মেয়েটা আজকে ওর রুমে আসলো আর আজকেই ওর পাসপোর্ট হাওয়া!! মীরার তখন মনে পরলো জিনিয়া তো ইশানের বন্ধু। ইশানের কথা তো জিনিয়া শুনতেই পারে। তাহলে কি জিনিয়া মীরার পাসপোর্ট ইশানকে দিয়েছে??যাতে মীরা বাংলাদেশে যেতে না পারে। হ্যা তাই হবে।

রাগে মীরার গা জ্বলে যাচ্ছে। মানুষ কতটা নির্লজ্জ হতে পারলে এরকম জঘন্য কাজ করতে পারে তা জানা নেই মীরার। রাগে কিছুক্ষণ রুমেই বসে রইল সে। এভাবেই দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। মীরা এবার উঠে দাঁড়ালো। নাহ এভাবে হবে না ওকে কিছু করতেই হবে। জিনিয়াকে এর মধ্যে অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু সে ধরেনি। এতে মীরা আরো বুঝে গেছে। মীরা দ্রুত রেডি হয়ে নিয়ে ইফাজের বাড়িতে গেলো। এবার গার্ডরা মীরাকে দেখেই ঢুকতে দিলো। মীরা বাড়ির ভেতরে ঢোকা মাত্রই ইফাজের সামনে পরলো। ইফাজ এসময় মীরাকে দেখে অবাক হয়ে বলল,’মীরা তুমি এখানে??’
মীরা তেজি স্বরে বলল,’আগে আপনার গুনধর ছেলেকে ডাকুন তারপর বলছি।’
‘কিন্তু ইশান তো বাড়িতে নেই। কি হয়েছে মীরা আমাকে বলো??’

‘আপনার ছেলে আমার পাসপোর্ট নিয়ে গেছে কোন সাহসে??যাতে আমি বাংলাদেশে না যেতে পারি??একটা কথা শুনে রাখবেন আমি বাংলাদেশে ফিরবোই কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। আর আমার পাসপোর্ট চাই।’
ইফাজ এবার আরো অবাক হয় বলে,’ইশান তোমার পাসপোর্ট নিয়েছে??আমি তো এসবের কিছুই জানি না।’
‘জানার দরকার নেই আগে বলুন আপনার ছেলে কোথায়??’
‘জানি না তবে হয়তো বারে গেছে।’

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১১

মীরা আবার চলে এলো। ইফাজ অনেকবার ডাকলো কিন্তু মীরা ফিরেও তাকাল না।
বারে মানুষ গিজগিজ করছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সে বারে এলো। এমনিতেই মাথা গরম মীরার আবার বারে এসে আরো মাথা গরম হয়ে গেল। রাগে সে থরথর করে কাঁপছে। আজকে যদি ইশানকে পায় আস্ত চিবিয়ে খাবে। মানুষ ঠেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘুরে ঘুরে ইশানকে খুজতেছে কিন্তু বান্দা লাপাত্তা। কোথায় গেল?? অবশেষে মীরার চিরুনি অভিযান শেষ হলো। দূরে সোফায় বসে থাকা ইশানের দিকে চোখ গেল তার। সাথে সব বন্ধুরাও আছে। মীরা বিড়বিড় করে বলল,’আমার পাসপোর্ট সরিয়ে মদ গেলা হচ্ছে তোর দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে।’

মীরা সেদিকে এগিয়ে যেতে লাগল। ইশান মীরাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। মীরার লাল রঙা মুখটা দেখে বুঝতে পারলো যে এখন ওর সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। তাই হলো, মীরা ঝড়ের গতিতে এসে ইশানের গালে থাপ্পড় বসালো। একটা নয় পরপর তিনটা। তারপর ভরাট গলায় বলল,’এই থাপ্পর আমার আরো আগে মারা উচিত ছিল। আমার পাসপোর্ট কোথায় সরিয়েছেন?? বলুন,,,,,,’
মীরার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইশান জড়িয়ে ধরলো মীরাকে। শক্ত করেই নিজের সাথে চেপে ধরে,,,,,,,

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৩