অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৭ || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৭
Ishita Rahman Sanjida

ইশান মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলো। গায়ে হোয়াইট কালারের টিশার্ট আর এ্যাশ কলারের টাউজার। ইফাজ ড্রাইভার দিয়ে ইশানের পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে। এসেই মীরার ফোন থেকে ইফাজের সাথে কথা বলেছিল ইশান। আর নিজের পোশাক পাঠিয়ে দিতে বলেছিল। ড্রাইভার না আসা অব্দি মুহিতের প্যাচাল শুনতে হয়েছে।
মুহিত চিপস খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। মীরা এতক্ষণ পিহুর রুমে ছিলো। বের হয়ে নিজের রুমে যেতেই ওর চক্ষু চড়কগাছ। ইশান ওর তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতেছে। মীরা দৌড়ে গিয়ে এক টানে তোয়ালে নিয়ে যায়। রেগে বলল,’এটা কি হলো??’

ইশান মীরার দিকে ঘুরে হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে বলল,’আমার তো একই প্রশ্ন এটা কি হলো??’
মীরা খানিকটা চেঁচিয়ে বলে,’আমায় তোয়ালে কেন নিয়েছেন?? জানেন না একজনের তোয়ালে আরেকজনের ব্যবহার করতে নেই??’
‘হুম জানি তবে তোর তোয়ালে আমি ব্যবহার করতে পারবো।’
মীরা কটাক্ষ করে বলল,’ওহ তাই?? তাহলে তোয়ালে কেন আমার একটা থ্রিপিস দেই ওটাও পরেন। পারফেক্ট দেখতে লাগবে।’
মীরার কথা শুনে ইশান বোকা বনে গেলো। বলল,’থ্রিপিস???কি বলছিস এসব??থ্রিপিস কি ছেলেরা পরে নাকি??’

‘আপনি পরে দেখবেন তবে আপাতত আমার রুম থেকে বের হন। বাথরুমে যেতে দিয়েছি বাট রুমে এক মুহুর্ত থাকতে পারবেন না।’
ইশান অসহায় হয়ে বলল,’একটু থাকি না মীরা??ওই মুহিত আমার কান ঝালাপালা করে দেয়। এতো কথা বলে বিরক্ত লাগে। তুই টলারেড করিস কিভাবে??’
‘ওভাবেই।’ বলতে বলতে মীরা বাথরুমে ঢুকলো। শ্যাম্পুর গন্ধে ম ম করছে চারিদিকে। রুমেও পাচ্ছিল মীরা। না জানি কতখানি শ্যাম্পু শেষ করেছে ইশান। মেয়েরাও বোধহয় এতো শ্যাম্পু ইউজ করে না। মীরা শ্যাম্পুর বোতল ঝাঁকিয়ে দেখলো ঠিকই আছে। বের হয়ে দেখলো ইশান এখনও দাড়িয়ে আছে। মীরা বলল,’এখনও যাননি কেন??’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইশান আয়েশ করে বিছানায় বসলো। মীরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,’বসলেন কেন?? উঠুন??’
ইশান শুয়ে পড়লো টানটান হয়ে। মীরা হতভম্ব হয়ে গেল ইশানের কাজে। সে জোর গলায় বলল,’আপনি মনি’মায়ের কাছে যান আমার রুম ছেড়ে দিন।’
ইশান একরোখা ভাবে জবাব দিলো,’যাব না আমি। তোর রুমে তোর সাথেই ঘুমাবো??’
মীরার বড়বড় চোখ করে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার সাথে ঘুমাবেন মানে??বের হন এখুনি।’
ইশান কাত হয়ে মীরার দিকে ফিরে বলল, ‘কেন ছোট থাকতে তো তুই একদিন আমার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছিলি তাই আম্মু আর তোকে নেয়নি সারারাত আমার পাশেই ঘুমিয়েছিলি। তাই আজকে আমি তোর বিছানায় ঘুমাবো। হিসেব মতে তুই ও ঘুমাবি।’

ইশানের লাগামহীন কথাবার্তায় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে মীরার। ইচ্ছে করছে ইশানকে চিবিয়ে খেতে। মীরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’আপনার ঘুমানো হচ্ছে।’ মীরা চেঁচিয়ে বলল,’মুহিত তোকে তোর ইশান ভাইয়া ডাকছে,,,,,,।’
ইশান এক লাফে বিছানা থেকে উঠে মীরার মুখ চেপে ধরে। মীরা ছোটাছুটি শুরু করে দিলো। ইশান আরো জোরে মীরাকে চেপে ধরল। একহাত মুখে আরেক হাত কোমড়ে তার। ইশান ফিসফিস করে বলল,’ওকে ডাকিস না মীরা। আমি ক্লান্ত ও এসে আমার মাথা ঘুরিয়ে দেবে। প্লিজ মীরা,,,,।’
মীরা শান্ত নয়নে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশানও মীরার চোখে চোখ রাখলো।
‘বলি এখানে কি স্টার জলসার সিরিয়াল হচ্ছে??’

মুহিতের কন্ঠস্বর শুনে ওরা দুজনেই চমকে তাকালো। দরজার সাথে হেলান দিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুহিত। মুহিতকে দেখে মীরা এক ঝটকায় ইশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’আবার থাপ্পর খাওয়ার শখ জেগেছে?? তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হন আমি এসে যেন রুম ফাঁকা পাই।’
মীরা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মুহিত এখন ও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মীরা চলে যেতেই সে ইশানকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার বউ এভাবে চলে গেলো কেন??আর তুমি এভাবে ওকে ধরে রেখেছিলে কেন??’

ইশানের রাগ হলো। কথায় কথায় বউ বউ করার দরকার কি??মুহিতের মাথায় চাটি মেরে বলল,’তা দিয়ে তুই কি করবি??আর সারাদিন বউ বউ করিস কেন??’
মুহিত হেসে বলল,’তুমি কি জেলাস ফিল করছো??’
ইশান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,’কেন বলতো??’
মুহিত খাটের উপর পা তুলে বসলো। ইশানকেও টেনে বসিয়ে বলল,’তুমি কি আমার সিনিয়র বউকে পছন্দ করো??’
ইশান মাথা নাড়িয়ে বলল,’নাহ।’
‘তাহলে ভালোবাসো??’
‘নাহ।’
‘তাহলে???’

ইশান তার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ঠোটের নিচে স্লাউড করতে করতে বলল,’বিয়ে করতে চাই তোর সিনিয়র বউকে।’
মুহিত বুকে হাত দিয়ে বলল,’আল্লাহ কি বলো এসব???এক স্বামী দুই বধু হয়। এখন তো দেখছি দুই স্বামী এক বধু হবে।’
‘কে বলেছে তোকে?? তুই মীরার স্বামী হওয়ার যোগ্য নস। তাই ভালোয় ভালোয় কেটে পর। নাহলে তোকে লন্ডনের টেমস নদী দেখিয়ে আনব।’
মুহিত ভাব নিয়ে বলল,’টেমস আমি দেখেছি।অন্য কিছু দেখাতে হবে। আচ্ছা বাদ দাও। আগে বলো তুমি কি মীরা আপুকে তোমার মনের কথা বলেছিলে??’
‘হুম।’
‘তারপর??’

‘তারপর আর কি??এক হালি থাপ্পর পরলো আমার দুগালে।’
মুহিত করুন স্বরে বলল,’ইশশ। বউটা এরকমই একটুতেই রেগে ফায়ার হয়ে যায়। তখন পদ্মার সব পানি দিয়েও সেই আগুন নেভানো যায় না। তারপর বলো একহালি ভালোবাসা কাকে বলে??সেদিন তো বললে যে মীরা আপুকে এক হালি ভালোবাসা দিতে এসেছো। কিভাবে দেয় সেই ভালোবাসা??’
ইশানের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এতো প্রশ্ন করে কেন মুহিত??ইশান রাগে ফুঁসছে মুহিত আবারও জিজ্ঞাসা করতেই ইশান উঠে দাঁড়িয়ে যেতে যেতে বলল,’বিয়ের পর এক হালি বাচ্চা হওয়াকেই এক হালি ভালোবাসা দেওয়া বলে। স্টুপিড কোথাকার।’

মুহিত বড়বড় চোখে ইশানের চলে যাওয়া দেখলো। বলল,’এ্যা,,,,মীরা আপুকে এভাবেই এক হালি ভালোবাসা দেবে নাকি??বলতে হচ্ছে মীরা আপুকে।’
ইশান ততক্ষণে রুম থেকে বের হয়ে গেছে। মুহিত গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে। ভালোবাসার মিনিং জানলেও এক হালি ভালোবাসার মিনিং সে আজকে জানলো। যদিও ইশান রাগের মাথায় বলেছে মুহিত তাই সত্যি ভেবে নিয়েছে। মাথা চক্কর দিচ্ছে মুহিতের। মীরাকে কথাগুলো না বলা পর্যন্ত ওর পেটের ভাত হজম হবে না।
ইশান পিহুর রুমে গিয়ে দেখল পিহু বসে আছে। ইশান গিয়ে পিহুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ক্লান্তি যেন ওর সব উবে গেল। পিহু ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,’কোথায় ছিলি সারাদিন। রাস্তাঘাট তো কিছুই চিনিস না হারিয়ে গেলে কি হতো??’
ইশান মায়ের হাত ধরে বলল,’এতদিন তো হারিয়েই ছিলাম এখন আর কোথাও হারাব না। তোমার কাছেই থাকব।’

পিহু মৃদু হেসে বলল,’কেন লন্ডন ফিরে যাবি না??’
‘গেলে তোমাকে নিয়েই যাবো।’
পিহুর মুখটা মলিন হয়ে গেল। বলল,’আমি যাবো না। তুই তোর বাবার সাথে যাস। এবিষয়ে আমাকে না জড়ালেই ভালো হবে।’
ইশান পিহুর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, ‘আমি তোমাকে আব্বুর সাথে থাকতে বলছি না তুমি আমার সাথে থাকবে। তোমার জন্য আমি আলাদা করে সবকিছু সাজাবো। সেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকবো। তাহলে হবে তো??’
পিহু হাসলো ইশানের কথা শুনে। ইশান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মীরা দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কথাও শুনে ফেলেছে নিশ্চয়ই।ইশান মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’তুই কি ভাবছিস??তোকেও নিয়ে যাবো লন্ডন।’

লন্ডনের কথা শুনে মীরার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। ওখানে তো ও কোনদিন ও যাবে না। ছেলেমেয়ে রা সব বারে গিয়ে নাচানাচি ঢলাঢলি করে। যা মীরা একদম দেখতে পারে না। মীরা গম্ভীর গলায় বলল,’দরকার নেই আমার যাওয়ার। আপনার মা’কে নিয়ে আপনি যান। অসহ্য লাগে সব।’
মীরা চলে গেলো। পিহু বলল,’মীরা তোর সাথে এরকম করে কেন?? কিছু বলেছিস তুই??’
‘ওকে কিছু বলা লাগে নাকি?? আমিও বুঝি না ও এমন করে কেন?? তুমি একটু বলে দিও।’
‘আচ্ছা বলবো। এখন একটু রেস্ট নে।’

পিহু ইশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তখনই ইশানের ফোন বেজে উঠল।
ইফাজের পাঠানো সিম ফোনে সেট করেছে ইশান। পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করতেই ইফাজ বলে উঠলো,’পেয়েছিস সবকিছু??’
‘হ্যা আব্বু পেয়েছি। আমি আজকে আসবো না। আম্মুর কাছেই থাকবো।’
ইফাজ হেসে বলল,’মাকে পেয়ে এখন আমাকে ভুলে গেছিস দেখছি। ভালো ভালো থাক মায়ের কাছে।’
ইফাজের কথা পিহু ঠিকই শুনতে পেল তবে কিছু বলল না। ইশান একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’সবে তো এলাম।’

‘কালকে চলে আসিস তাড়াতাড়ি। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব। তোর দাদা দাদী আসছে।’
ইফাজের এই কথাটাও পিহুর কর্ণগোচর হলো। ইশান বলল,’তাতে আমার কি?? তবে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না। এর শেষ দেখে ছাড়বে।’
‘এজন্যই তো বললাম তুই আয়। আমি একা কিভাবে সব সামলাবো??’
ইশান কিছু বলার আগেই পিহু ফোন নিয়ে বলল,’এসব করে এখন কি হবে?? সবকিছু কি আগের মতো হবে??হবে না। আমি আর ফিরতে চাই না। তাহলে এসব কেন করছো?? ওনাদের বয়স হয়েছে। এই বয়সে এই ধাক্কা মেনে নিতে পারবে না। কেসটা তুলে নাও।’

পিহুর কন্ঠস্বর শুনে থমকে গেছে ইফাজ। তবে ভালো লাগছে তার। সে বলল,’সেটা আমি বুঝবো। তোমাকেও তো কোর্টে থাকতে হবে। রেডি থেকো।’
পিহু খানিকটা জোরে বলল,’আমি কোথাও যাব না। কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। তাহলে আমি গিয়ে কি করবো??’
ইফাজ শব্দ করে হাসলো বললো,’অন্তত তো আমার জন্য এসো??কারো প্রতি অভিযোগ না থাকলেও তো আমার প্রতি তোমার হাজার অভিযোগ আছে।’

পিহু থেমে গেল। ইফাজের সাথে সে কথায় কখনোই পেরে ওঠে নি তাই আজও পারছে না। রাগ হচ্ছে ইফাজের উপর পিহুর। কেন এখন এরকম করছে ইফাজ বুঝে উঠতে পারছে না পিহু। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিল। ইশানের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলল,’তোর বাবাকে বলিস কেস যেন তুলে নেয়। আমার এসব ঝামেলা ভালো লাগে না।’
ইশান পিহুর কোল থেকে উঠে বসে বলল, ‘আমি জানি এসব করেও কোন লাভ হবে না। তুমি ফিরবে না আব্বুর কাছে। তবুও যারা প্রকৃত পক্ষে দোষী তাদের শাস্তি প্রাপ্য। তুমি প্লিজ না করো না।’
পিহু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ইফাজের বাবা মায়ের জন্যও খারাপ লাগছে। ইফাজের জেদ সম্পর্কে অবগত পিহু। কিন্তু ইফাজকে থামাতে হলে পিহুকে আবার ইফাজের মুখোমুখি হতে হবে। পিহু ভাবছে তাই করবে সে।

খাবারের টেবিলে বসে আছে সবাই। মীরা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। ইশান গালে হাত দিয়ে বসে আছে। খেতে ইচ্ছে করছে না ইশানের। পিহু বলল,’খাচ্ছিস না কেন??’
ইশান মুখটা গোমড়া করে বলল,’আব্বু একা একা কি করছে কে জানে?? আমাকে ছাড়া আব্বু খেতে পারে না। সেখানে একটা দিন কেটে গেছে। রাতে নিশ্চয়ই না খেয়ে থাকবে আমি শিওর।’
পিহুর এবার চিন্তা হলো। না খেয়ে থাকলে তো ইফাজের শরীর খারাপ করবে। কিন্তু এখন কি করা যায়??পিহু কিছু বলছে না। মাঝখান থেকে মুহিত বলে উঠলো,’আঙ্কেলের জন্য খাবার পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়??তাহলে আঙ্কেল খেতে পারবে আর ইশান ভাইয়ার ও ভালো লাগবে।’
পিহু বলে উঠলো,’কে যাবে খাবার দিতে??’

মুহিত শার্টের কলার ঠিক করে বলল,’কেন মানুষের কি অভাব পড়েছে নাকি??আমি আছি মীরা আপু আছে ইশান ভাইয়া আছে। তুমি চাইলে তুমিও যেতে পারো নো প্রবলেম।’
এই প্রথম মুহিতের কথা ভালো লাগলো ইশানের। এতোটাই খুশি ইশান যে মুহিতকে জড়িয়ে ধরতে পারলে ভালো লাগতো। এই প্রথম একটা কাজের কথা বলেছে মুহিত। ইশান কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুহিতের দিকে। মুহিত ও সৌজন্য মুলক হাসি দিলো। কিন্তু ইশান মুহিতকে যেতে দিলো না। বুদ্ধি খাটিয়ে মীরাকেই নিয়ে গেল। পিহুও কিছু বলল না। টিফিন বক্সে করে খাবার নিয়ে মীরা আর ইশান রওনা হলো। রাতের বেলা ঢাকার শহরটা ভালো লাগছে ইশানের। হালকা বাতাস এসে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। ইশান বারবার মীরার দিকে তাকালেও মীরা তাকাচ্ছে না। রাতের শহর দেখছে সে। রাতের বেলা মীরা খুব কম বের হয়। তাই সবটা মুগ্ধ হয়ে দেখতেছে।

রাতের বেলা ইশান আর মীরাকে দেখে ইফাজ অবাক হয়ে গেল। ওরা এতো রাতে কেন এসেছে??ল্যাপটপে কাজ করছিল ইফাজ। ইশান আর মীরাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘তোরা এখানে এতো রাতে??’
ইশান টিফিন বক্স টি টেবিলে রেখে বলল,’তুমি তো আজ রাতে খাবে না তা আমার জানা আছে। না খেয়ে থাকলে তো শরীর খারাপ করবে তাই তো আম্মু খাবার পাঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।’
ইফাজের চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সত্যি পিহু ওর জন্য খাবার পাঠিয়েছে?? তাহলে সে না খেয়ে থাকে কিভাবে?? একজন সার্ভেন্ট ডেকে খাবার সার্ভ করতে বলল ইফাজ।

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৬

খাবারের আইটেম এর দিকে তাকালো ইফাজ। শর্ষে ইলিশ আর মুরগির মাংস। পিহুই রান্না করেছে তা দেখেই বুঝতে পেরেছে ইফাজ। সে খুব তৃপ্তি করে খেলো। কতদিন পর পিহুর হাতের রান্না খেলো সে। মীরা অবাক হয়ে ইফাজের খাওয়া দেখছে। মনে হচ্ছে কতদিন পর বাঙালি খাবার খাচ্ছে। আর ইশান বসে বসে আপেল খাচ্ছে।

খাওয়া শেষে ইফাজের থেকে বিদায় নিয়ে ইশান আর মীরা চলে আসে। পথে দোকান থেকে কিছু চকলেট কিনলো ইশান। মুহিতের জন্যই নিলো। বেচারা এতো বড় উপকার করলো ট্রিট তো দিতেই হবে। মীরার দিকে একটা চকলেট এগিয়ে দিলো ইশান। মীরা দ্বিধা না করেই হাত বাড়ালো চকলেট নিতে। কিন্তু ইশান তা আবার ফেরত নিয়ে গেলো। মীরা রাগ হলো এতে। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রিকশায় গিয়ে বসে। ইশান হেসে মীরার পাশে বসে চকলেটের প্যাকেট খুলে মীরার দিকে এগিয়ে দিলো। মীরা নিলো না তাই ওর হাতে গুজে দিলো। মীরা চকলেটে কামড় বসালো। চকলেট খেতে খুব একটা পছন্দ না করলেও অপছন্দ করে না। তাই সে খেতে লাগল। কিন্তু মাঝখানে এসে ইশান ওর হাত থেকে চকলেট নিয়ে কিছুটা খেয়ে ফেলল। মীরা হতভম্ব হয়ে ইশানের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। আজকে আর ঝগড়া করার মুড নেই তার।

বাড়িতে ফিরেই আবার মুহিত। মীরা মুখ ঘুরিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। ইশান পকেট থেকে চকলেট গুলো বের করে মুহিতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’থ্যাঙ্কস আজকে বুদ্ধি টা দেওয়ার জন্য। তাই তোর জন্য ট্রিট।’
মুহিত গাল ফুলিয়ে বলল,’আমি কি বাচ্চা??যে আমার জন্য চকলেট এনেছো?? আমার এসব লাগবে না। তবে কিছু প্রশ্ন ছিলো??’
ইশান ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,’আবার প্রশ্ন?? তুই তো প্রশ্নের ঝুলি।’
ইশান মুহিতের ঘাড় ধরে রুমে নিয়ে যেতে যেতে বলল,’চল ছাগল তোর সব ম্যা ম্যা আজকে শুনবো। আর উওর দেবো। আজকে আমার মনটা বেশ ফুরফুরে আছে।’

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ১৮