প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৮ || golper mohol

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৮
সুমাইয়া জাহান

আবির সেন্সলেস হতেই যেন আশেপাশের সব মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচলো।সঙ্গে নার্স মেয়েটিও।নার্স মেয়েটি এসেছিলো আবিরের জন্য কিছু মেডিসিন নিয়ে।কিন্তু দরজা পর্যন্ত আসার সাথে সাথেই তো আবির লাফিয়ে পরলো মেয়ের উপর।আবিরকে কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে পুনরায় বেডে শুইয়ে দিলো।
পাশ থেকে একজন ডক্টর রাগী গলায় নার্স মেয়েটির দিকে রাগী গলায় বললো,
—- আপনি অনুমিত ছাড়া কেবিনে ঢুকেছেন কেন?আপনি জানেন এতে পেশেন্টের কতোটা ক্ষতি হতে পারতো!
ডক্টরের কথায় নার্স মেয়েটি অবাক হয়ে ডক্টরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আসলে হচ্ছে টা কি এখানে?তারপর নিজের কৌতূহল মেটাতে ডক্টরকে প্রশ্ন টা করেই ফেললো,
—- কিন্তু স্যার আমাদের হসপিটালে তো এমন কোনো নিময় নেই যে পেশেন্ট এর কেডিনে কোনো নার্স মেডিসিন নিয়ে ঢুকতে অনুমতি লাগে!আর এই পেশেন্ট বা এমন করলো কেন?
*** সবার জন্য বালতি বালতি ঠান্ডা পানির সমবেদনা। দরজার সামনে রিমি না নার্স মেয়েটি ছিলো।

ডক্টর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবিরের দিকে তাকিয়ে আবিরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা বললো।
—- তাই এই ছেলেটা কোনো মেয়েকে দেখলেই মনে করে সেই মেয়েটা ওকে মারার জন্য আবার এসেছে।যেমন আপনি একটু আগে কেবিনে আসতেই এমন করলো।এমনকি ছেলেটার মাও কেবিনে আসতে পারছে এই কারণে!সবাই কেই ওই মেয়েটা ভাবছে।প্রচন্ড ভয় ঢুকে গেছে পেশেন্টের মনে।
??
আমি আর নীর আজ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হলাম।আমাদের ক্লাস শুরু হতে এখনো দেড় থেকে দুইঘন্টা বাকি।তাও খুব তাড়াহুড়ো করে আমরা যাচ্ছি। আজ আর মামনীকে জোর করে আমাকে খাওয়াতে হয়নি। আমি নিজে থেকেই আধাঘন্টা আগে খেয়ে রেডি হয়ে নিয়েছি।আজ যে আমি খুব এক্সাইটেড!একটু পরে কি হতে চলেছে তা নিয়ে আমি উফস সরি শুধু আমি না নীরও মানে আমরা দুইজনই ভিষণ এক্সাইটেড!
ফ্লাশব্যাক………

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ভোর ছয়টা হবে হয়তো তখন আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বরাবরই আমার সকালবেলার ঘুম টা বেশি গভীর হয়।তাই এইসব আমাকে কেউ পিটিয়েও ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না।হঠাৎ করে ফোন টা বেজে উঠলো।প্রথমবার ধরিনি পরে আবার বাজাতে চোখ না খুলেই ফোনটা রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,
—- যেই ফোন করে থাকুন না কেন এখন ফোনের মালিক ঘুমিয়ে আছে তাই দুই ঘন্টা পর আবার ফোন করুন।তখন ফোনের মালিক আপনার সাথে কথা বলবে।
কথা বলেই ফোনটা রাখতে যাওয়ার আগেই রিমি ঝাড়ি মেরে বললে উঠলো,
—- তূবা একদম ফোন রাখবি না আমার তোর সাথে খুব জরুরি কথা আছে।
ফোন না কেটেই বিরক্তি নিয়ে বললাম,
—- ওকে তাড়াতাড়ি আপনার জরুরি কথাটা বলেন ফোনের মালিক আবার ঘুমাবে।
রিমি এবার নিচু সুরে বললো,
—- তূবা আমি এখন একদম মজা করার মুডে নেই। আবিরকে কোন হসপিটালের ভর্তি করা হয়েছে তুই জানিস?
আমি ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠলাম ওর কথায়।ও আবার আবিরের খোঁজ নিচ্ছে কেন?ছেলেটাকে কি আবার মারবে নাকি?এবার খুব সিরিয়াস ভাবে রিমিকে বললাম,
—- দেখ রিমি অনেক হয়েছে এবার অন্তত ছাড়!একটা কথার জন্য তুই ওকে আধমরা করে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছিস।শুনেছি ওর এখন খুব খারাপ অবস্থা। কোনো মেয়েকে দেখলেই ভয় পেয়ে যায়।ওর সাথে ওর মাও দেখা করতে পারছে না।আর তুই ওকে আবার মারার জন্য ওর ঠিকানা চাচ্ছিস?হ্যাঁ মানছি তোর রাগ বেশি রাগ উঠলে যা খুশি তাই করিস তখন নিজের ভেতর থাকিস না।কিন্তু এখন তো আর রেগে নেই তুই।তাহলে এখনো কি তোর মনুষ্যত্ব কাজ করছে না?
রিমি আমাকে ধমক দিয়ে বললো,

—- ওই পুরো কথা না শুনে নিজেই বলে যাচ্ছিস! আমাকে তো আগে পুরো কথা শেষ করতে দে!আসলে আমি আজ ওকে মারতে না ওর কাছে ক্ষমা চাইতে যাচ্ছি। কাল আমি ওর সাথে সত্যি খুব খারাপ করেছি।তাই আমার কাজের জন্য ওর কাছে ক্ষমা চাইতেই যেতে চাইছি মারতে না হুম!
রিমির কথা শুনে কিছুক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছি।নিজেই নিজে একটা চিমটি কেটে যখন বুঝতে পারলাম আমি বাস্তবেই আছি তখন রিমিকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
—- আমি একটুআগে যা শুনলাম তাকি সত্যি!
—- হুম আমি সত্যি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত! আজ ভার্সিটির আগেই হসপিটালে যাবো।আমি একা গেলে আবির ভয় পাবে তুই আর নীর ভাইয়াও আমার সাথে যাবি।আমি ভার্সিটিতেই আসবো তোরা আমাকে ওখান থেকে পিকআপ করেনিস ওকে।
তারপরই রিমি ফোন কেটে দিলো।আমি অবাক হয়ে এখনো রিমির কথাগুলো নিজের মাথার ভিতরে একের পর এক ঢুকাতে লাগলাম।নীরের কথা মনে পরতেই তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ওঠে পরলাম।আমি একা কেন অবাক হবো?ওকেও একটু অবাকের ভাগ করে আসি।যেই ভাবা সেই কাজ নীরের ঘরের দিকে এগোলাম।

নীর সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠে।আর উঠেই প্রতিদিনের রুটিন মাফিক এই সক্কাল বেলা ব্যায়ামে লেগে পরে। আজও ব্যামায়ই করছিলো সেই সময়ই আমি ঢুকলাম ওর ঘরে।আমাকে দেখে আমার দিকে একবার তো ঘড়ির দিকে একবার তাকায় আবার নিজের চোখ ডলতে থাকে।কিছুক্ষণ এগুলো করেই অবাক কন্ঠে বললো,
—- সূর্য আজ ঠিক জায়গাতে উঠেছে তো?
—- সূর্য তো ঠিক জায়গাতেই উঠেছে শুধু আমি একটু তাড়াতাড়িই উঠেছি এই আরকি!ওসব বাদদে এখন শোন তোর জন্য দারুণ একটা সুখবর আছে!আমিতো ভিষণ খুশি তুই শুনলেও খুব খুশি হবি!
নীর আমার কথায় আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে চোখমুখ খিঁচে বললো,
—- ইম্পসিবল! এটা কিছুতেই হতে পারে না!
আমি ওর কথা অবাকের উপর অবাক।কি বলছে কি ও আমি তো এখনো কিছুই বললাম না। চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বললাম,
—- কিসের ইম্পসিবল? কি বলছিস কি তুই?
—- আমাদের বিয়ে একবছর হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের কিছুই হয়নি তাহলে তুই মা হলি কি করে?জাস্ট ইম্পসিবল! রিপোর্ট টা একদম ভুয়া।আমি হান্ড্রেড পার্সেন সিউর এটা অন্য কারো রিপোর্ট। বিশ্বাস কর ওই টা তোর না……….
—– চুপ করবি তুই???? (রেগে+চিৎকার দিয়ে)
আমার চিৎকারে নীর একদম চুপ করে মুখে আংগুল দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর আমার রাগে এখনো গা ফেটে যাচ্ছে। আমি কি বলতে এসেছি আর এই বজ্জাতের হড্ডি কি না কি বানিয়ে রচনা লিখে ফেলেছে।রেগে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,
—- রেডি হয়ে থাকবি একঘন্টা পর আমরা ভার্সিটি গিয়ে রিমিকে পিকআপ করে আবিরের হসপিটালে যাবো।
তারপর আমি চলে যেতে নিলে নীর পিছন থেকে বলে ওঠলো,
—- কেন?
আমি গরম চোখে ওর দিকে তাকাতেই ও চুপসে গেলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
—- গেলেই দেখতে পাবি।

বর্তমানে…….
সকালের কথা ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির সামনে এসে পরেছি।রিমি ভার্সিটির গেইটের সামনেই ছিলো।রিমিকে দেখেই নীর গাড়ি থামালো।রিমি তাড়াতাড়ি গাড়ির পিছনের ডোর খুলে গাড়িতে উঠে পরলো।আজ নীর বাইকে না এসে গাড়িই নিয়েছে।তারপর নীর গাড়ি ঘুরিয়ে হসপিটালের দিকে চললো।

হসপিটালে এসেই পরেছি বিপদে।আবিরের কেবিনে কিছুতেই আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না।আমি আর রিমি আগেই ঢুকেছি হসপিটালে তখন থেকেই ডক্টরকে হাজার বার বোঝানোর চেষ্টা করছি আমাদের ঢোকাটা প্রয়োজন তবুও ডক্টর কিছুতে ঢুকতে দিচ্ছে না।ডক্টর এবার বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—- দেখুন মিস তূবা আপনি কেন বুঝতে পারছেন না পেসেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ।কোনো মেয়েকে দেখলেই ভিষণ ভয় পেয়ে যাচ্ছে। আমরা কিছুতে আপনাদের কে ঢোকার অনুমতি দিতে পারবো না।
প্রতিত্তোরে কিছু বলতে যাবো তার আগেই পিছন থেকে চিরচেনা কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলেন,
—- সরি ডক্টর মিস নয় মিসেস তূূবা চৌধুরীর হবে।

আমরা সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখি নীর দুই হাত ভাজ করে গম্ভীর হয়ে দাড়িয়ে আছে। এতোক্ষণ গাড়ি পার্কিং করতে গিয়েছিলো।তাই আসতে দেড়ি হয়ে গেছিলো। নীরের মুখে মিসেস চৌধুরী কথাটা শুনতেই মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করছে।নীরকে দেখে ডক্টর একটু থমথমে খেয়ে যায়।নিজেকে সামলিয়ে হাসি মুখ করে বললো,
—– সরি সরি মিস্টার চৌধুরী আমি জানতাম না উনি মিসেস চৌধুরী।বাট মিস্টার চৌধুরী মিসেস চৌধুরী যা বলছেন তাতে তো পেসেন্টের ক্ষতি হতে পারে তাই…..
শেষের কথাটা খুব নিচু সুরে বললো ডক্টর।নীর আস্তে এগিয়ে এসে আমার পাশের চেয়ারটাতে বসলো।
—- চিন্তা করবেন না ডক্টর পেসেন্টের কিছুই হবে না।পেসেন্ট আমাদের বন্ধু হয়।ওর কোনো ক্ষতি হোক আমরাও তা চাই না।ওর সাথেআমরা জাস্ট পাঁচ মিনিট দেখা করবো।
ডক্টর কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—- ওকে মিস্টার চৌধুরী আপনি যখন বলছেন তখন আপনারা যেতে পারেন। তবে পেসেন্ট কোনো রকম রিয়েক্ট করলে প্লীজ সাথে সাথেই বেরিয়ে যাবেন।
—- থ্যাংক্স ডক্টর।

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৭

আবিরের কেবিনে ঢুকে দেখি আবির ঘুমিয়ে আছে।রিমি আস্তে আস্তে আবিরের দিকে এগিয়ে গেলো।ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।সামন্য একটা কথার জন্য রাগের মাথায় কিনা করেছে ছেলেটার সাথে।সারাশরীরে ব্যান্ডেজ করা।রিমির চোখে পানি এসেগেলো আবিরের অবস্থা দেখে।রিমির চোখ বেঁয়ে দু’ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পরলো আবিরের মুখের উপর।আবিরের মুখে চোখের পানি পরতেই আবির জেগে গেলো।আর চোখ গুলে রিমিকে দেখেই লাফিয়ে উঠতে গেলেই রিমি ওকে একহাত দিয়ে ওর হাত দুই টা ধরে আরেক হাত দিয়ে আবিরের মাথায় বলিয়ে দিয়ে করুন গলায় বললো,
—- ভাই প্লীজ তুমি একটু শান্ত হও।আমি তোমাকে কিছু করবো না।আমাকে দু’মিনিট সময় দেও।তারপর তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।
রিমির কথায় আবির কিছুটা শান্ত হলো।তা দেখে রিমি মুচকি হাসলো আর বলতে লাগলো,
—- আসলে আমি একটা সমস্যা আছে আমি রেগে গেলে নিজের ভিতর থাকি না তখন আমি কি করি না করি কিছুই বুঝতে পারি না।কাল যখন যখন তোমার জন্য আমাকে স্যারের সামনে ওভাবে অপদস্ত হতে হয়েছে তারপর পুরো ক্লাস দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে তখন আমার রাগটা এতোটাই বেড়ে গিয়েলো যে তোমার সাথে আমি কি করেছি তা আমি নিজেও জানি না।আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না তাও তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। বোন মনে করে একটি বার আমাকে ক্ষমা করা যায় না ভাই!

আরমান সিকদার গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ চৌধুরী বাড়ির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো।এবাড়িতপ যে তাকে আবার আসতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারেনি।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাড়ির ভিতর ঢুকলো।বাড়িতে ঢুকে তূবাকে ডাকতে লাগলো,
—- তূূবা মামনী তুমি কোথায়?এই দেখ আমি তোমাকে নিতে এসেছি…….
তূবাকে ঢাকতে ঢাকতেই আরমান সিকদারের সিড়ির দিকে চোখ যেতেই বলে উঠলো,
—- নীলিমা!

প্রেমের সাতকাহন পর্ব ৯