রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১ || নাফিসা মুনতাহা পরী

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ১
নাফিসা মুনতাহা পরী

সদ্য কলেজে পা দেওয়া মেয়ে পরী। ৬ জন বন্ধু-বান্ধবী মিলে একটা কম্পিউটার কোচিং সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছে। আজ তারা সবাই মিলে এখানে ভর্তি হতে এসেছে। পরন্ত বিকালে দাবদহ রোদে পুরে যাচ্ছে শরীর। একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে তারা। সামনে কাছে থাকা মসজিদ থেকে আসরের আযান ভেসে আসছে।
রুপম ভিতরে গিয়েছে কথা বলতে। একটু পর দরজায় দাড়িয়ে ওদের ইশারা করে ভিতরে ঢুকতে বলল রুপম।
সবাই এক এক করে ভিতরে ঢুকেই “আহ্ কি শান্তি” বলে এদিক ওদিক তাকালো। মোটামুটি বড় একটা রুম। এয়ার কন্ডিশন রয়েছে। ভিতরের পরিবেশটাই অন্যরকম। এমন পরিবেশে ক্লাস করা মানেই শান্তি আর শান্তি। পরীর মুখ থেকে ওয়াও কথাটা বেরই হয়ে গেল।
রুমে কোন স্টুডেন্ট নেই। খানিকটা দুরে একটা ছেলে বসে কম্পিউটারে টাইপিং করছে আর পাশে একটা ছেলে বসে আছে।
রুপম আর পাভেল গিয়ে তাদের কাছে আমাদের সবার ফ্রম পুরুন করার ইনফরমেশন দিচ্ছে । আর ছেলেটা একাধারে সব পুরুন করছে।
রেজাল্টের প্রশ্ন করতেই রুপম গর্ব ভরে বলল,” এসএসসি তে প্লাস।”

– “গুড।”
আমাদের স্কুলের মধ্য সেরা রেজাল্ট রুপমের।খুব মেধাবী আমার ফ্রেন্ড। জিবনে ১ম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। বলে একটা মুচকি হাঁসল পাভেল।
আমাদের শুভ্রের ঝুলিতে ক্লাস ফাইভ এর ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, ক্লাস এইটেও একই রেজাল্ট এবং এসএসসি ও এইচ এস সি তে গোল্ডেন প্লাস। তাছাড়া অর্নাস কম্পলিট করেছে কেমেস্ট্রি নিয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছে বলে পাশের বসে থাকা ছেলেটি তাচ্ছিল্য সহকারে প্রশ্ন ছুড়ে মারল রুপমকে।
রুপমের যত অহংকার ছিল তার রেজাল্ট নিয়ে সব যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেল। মুখ ভার করে দাড়িয়ে রইল। কারন এখানে তার থেকেও বড় দাদা রয়েছে।
অহ্ তাহলে ছেলেটির নাম শুভ্র। যাক ভালয় হল। রুপমের রেজাল্ট নিয়ে সব সময় ভাব দেখাইতো। এখন কিছুটা ভাব কমে গেছে বলে ফিক করে হেঁসে উঠল মিতা।
পরী ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,” রুপম যদি জানতে পারে তাহলে তোকে আস্ত রাখবেনা।”
~”ধ্যুর ছাড় তো! কিন্তু ভাইয়াটা এখানকার কি মাস্টার মসাই!”
~” কি জানি! দেখেতো সেটা মনে হচ্ছেনা।”
সেদিনের মত সবাই ভর্তি হয়ে বাসায় চলে আসলো।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

পাঁচদিন ক্লাস করেছে পরী। আজকে একটু আগেই আসা হয়েছে। ক্লাসরুমে কেউ নেই। তাই বোরখার মুখটা কেবল খুলতে যাবে এমন সময় অফিস রুম থেকে শুভ্র বের হয়েই পরীকে দেখতে পেল।
~” মুখের নেকাব না খুললেই কি নয়!”
এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠে পিছন দিকে চেয়ে দেখলাম উনি দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। এখনো কেউ আসেনি তাই একটা ছেলেকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। এখন সমাজের যা অবস্থা তাতে কাউকে বিন্দু পরিমান ভরসা করাও দায়। আমি ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি।
শুভ্র পরীর কাছে এসে মুখে একটা চমৎকার হাসি টেনে বলল,
~” কি ভয় পেয়েছেন?”
~” মোটেও না।”
~” তাহলে এমন করে কাঁপছেন কেন?”
নাহ্ ব্যাটার অভিসন্ধি তো খারাপ দেখছি! চিৎকার মারবো নাকি? এমন ভাবনা মাথায় আনতেই উনি আমার ভাবনায় ঢিল ছুড়ে বললেন,
~” আমি শুভ্র। আর আপনি?”
কথার জবাব দিব কিনা ভাবছি। মাথায় হাজারটা ভয় এসে ইয়ারফোনের তারের মত জড়িয়ে গেল। অস্পষ্ট স্বরে বলেই উঠলাম,
~”আমি পরী..”
~” নাইস নেম। আমাকে দেখে কি ভয় পাচ্ছেন?”
মনে হাজার ভোল্টের সাহস নিয়ে ঢোক চিপে বললাম, ভয় পাব কেন! আপনি বাঘ না ভাল্লুক তাই আপনাকে ভয় পেতে হবে?
আমি বাঘ না ভাল্লুক সেটা জানিনা কিন্তু আমার সিক্স সেন্স বলছে, এখন আমি আপনার কাছে হয় ভয়ের কারন না হয় উটকো ঝামেলা। ভালো থাকুন বলেই শুভ্র চলে গেল।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আর বাবার জন্মেও এত আগে ক্লাসে আসবোনা। সমস্ত জড়তা কাটতে না কাটতে এক এক করে অনেক স্টুডেন্ট আসতে শুরু করল।
সেদিন ক্লাস করে বাসায় চলে আসলাম। ফিরতে একটু সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। মিতাদের পাল্লায় পড়ে আজ দেরি হয়ে গেছে।

বাসায় ফিরেই মায়ের কাছে এক হাড়ি গালি আর ঝাড়ি খাইলাম। মায়ের একই প্রশ্ন, সন্ধ্যা কেন হল! জানিসনা তোর সমস্যা, তাহলে রাত কেন লাগল?
বাবা এসে মাকে একটা ধমক দিয়ে বলল,” মেয়েকে বকা দিচ্ছো কেন? নিশ্চয় কোন কাজ ছিল তাই ফিরতে দেরী হয়েছে।”
বাবার সার্পোট পেয়ে কোনমতে রুমে আসলাম। তারপর ফ্রেস হতেই আপু আবার বকার ঝুলি নিয়ে হাজির হল। উফ্ বলে রুম থেকে বের হলাম। এরা আমায় এত শাসন করে কেন? আমি কি বাচ্চা আছি নাকি?
ডাইনিং রুমে এসে সোফায় বই নিয়ে পড়তে বসলাম। মা আর কিছু বললনা। অহ্ একটা কথা তো বলায় হয়নি, আমি প্যারানরমাল এট্যাক্ট একটা মেয়ে। আজ তিন বছর হল জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত আমি। কোন কিছু দিয়েই ভাল হচ্ছিনা। বাবা বা আপু কেউই বিশ্বাস করেনা কিন্তু আমার মা বিশ্বাস করে আমার ভিতর কিছু সমস্যা রয়েছে। তাই সন্ধ্যায় কেন বাসায় ফিরলাম সেটা নিয়েই মায়ের যত সমস্যা।
রাত এগারোটায় রাতের খাবার শেষ করে নিজের রুমে এসে সুয়ে পড়তেই ফোনে কল আসলো। অচেনা নাম্বার দেখে রিসিভ করবো কি করবোনা সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কল কেটে গেল, আবার কল আসলো। এবার চট করে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ভেঁসে উঠলো,

~” কল রিসিভ করতে এত টাইম লাগে?”
~” কে আপনি?”
ছেলেটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” আমি শুভ্র।”
ব্যাটা আমার নাম্বার কই থেকে পেল? মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক করতে লাগলো। বুকের ভিতর হাতুরি পিটা শুরু করে দিয়েছে। সব দূর্বলতা মন থেকে ঝেড়ে পাশের ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে বললাম,” এই আপনার ভদ্রতা! মেয়ে মানুষদের নাম্বার সংগ্রহ করে রাত-বিরাতে বিরক্ত করেন? আপনিতো আচ্ছা মানুষ?”
~” আমিতো ভালোয় মানুষ। তোমাকে কিছু বলার ছিল,মনযোগ দিয়ে শোন।”
আমার সাথে তার কি কথা থাকতে পারে? ভাবলাম হয়ত ক্লাসের কোন রুটিং চেঞ্জ হয়েছে বা হঠাৎ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে তাই তিনি ফোন দিয়ে সবাইকে সেই কথা বলছেন। কিন্তু উনিতো টিচার না। মাঝে মাঝে ওনার মামার কাছে এসে মামাকে হেল্প করেন। তাহলে আমার সাথে তার কি কথা!
মুখে গম্ভীরতার ভাব এনে বললাম,” আমিতো কাল এমনি ক্লাসে যাবোনা। তাই আমাকে না বললেও চলতো।”
~” এই মাথা মোটা মেয়ে, তুমি কি বাড়তি কথা বলা ছাড়া কিছুই জানোনা? আর জানবেই বা কি করে? যা রেজাল্টের শ্রী দেখে মনে হয় লাষ্ট বেঞ্চির ছাত্রী। ”
লাষ্ট বেঞ্চির স্টুডেন্টেসের সাথে তাহলে কথা বলতে আসেন কেন? আমার সাথে কথা বলার জন্য আমি আপনার পায়ে ধরেছি বলেই দুম করে কল কেটে দিলাম।
আমার রেজাল্ট নিয়ে কথা বলতে আসে, ব্যাটার সাহস দেখে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। এবার আসিস সামনে, ওখানেই তোকে কাবাব বানিয়ে পার্কের সামনে দোকান বসিয়ে কাবাবের রমরমা ব্যবসা দিব। ব্যাটাকে বালতি বালতি গালি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পুরো ১৫ দিন চোখের সামনে তাকে আর দেখতে পাইনি। একদিন কলেজ শেষ করে বাসার পথে হেটে আসছিলাম এমন সময় ঝড়ের বেগে আমার সামনে একটা বাইক এসে থামল।
আমিতো ভাবছি, আজ আমি শেষ। আজ আমি নিশ্চয় মরে ভূত হয়ে যাব। চোখটা খুলেই দেখলাম শুভ্র দাড়িয়ে আছে। চোখগুলো পাঁচ টাকার মার্বেলের মত করে বললাম, আবার আপনি আমার সামনে এসেছেন? এবার কিন্তু ভালো হবেনা। স্যারকে বলে দিব।
শুভ্র মুখে হাসি টেনে বলল,” বলতে পারো পরী। আগে বলতো, সেদিন কল কেনো কেটে দিয়েছিলে?”
~” আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই কেটে দিয়েছি। আপনার তাতে কি?”
~” আমার অনেক কিছু। এবার যদি কল কেটে দাও তাহলে তোমার বাবার নাম্বারে কল দিয়ে তোমাকে চাইবো। সেটা নিশ্চয় তোমার জন্য ভালো হবেনা। রাতে কল দিব…. রিসিভ করা না করা এখন তোমার ব্যাপার।”

উনি কথাগুলো বলেই ঝড়ের বেগে বাইক নিয়ে চলে গেলেন। বাবাকে আমরা বাসার সবাই যমের মত ভয় করি। যম বললে ভুল হবে আজরাঈলও বলা চলে তাকে। এমন কিছু যদি ঘটে তাহলে আমাকে জান্তু মাটিতে পুঁতে সেই দিনই চল্লিশা বের করবে। এই ব্যাটা আমার কাছে চায় কি? এ তো দেখছি আমার রাতের ঘুম হারাম করে ছাড়বে। হুম বেশি টেরিবেরি করলে ভুত দিয়ে ভয় দেখিয়ে ছাড়ব।
সেদিনের মত বাসায় চলে আসলাম। আমার কোন খেলার সাথী বা কথা বলার ক্লোজ ফ্রেন্ড নেই। তাছাড়া বাবা বা আপু, আমার ফ্রেন্ড থাকুক সেটা একদমই পছন্দ করেন না। তাই কারো সাথে ভয়েও মিশতে পারিনা।
বাবা অফিস থেকে এসে রেষ্ট করেন। ছেলেমেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলেন। মা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আপু আর ছোটভাই ওদের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। শুধু খাবার সময় দেখা হয়। শুক্রুবারে একটু একসাথে থাকা হয়। এটাই হল আমার নিরামিষ পরিবার।

আজ শরীরটা অন্য দিনের থেকে একটু বেশিই ব্যাথা করছে তাই জলদি ভাত খেয়ে মেডিসিন নিয়ে সুয়ে পড়লাম। মা একবার এসে জিঙ্গাসা করলো কিছু হয়েছে কিনা? আমি শুধু না বলে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। মা কি বুঝলো না বুঝলো জানিনা কিন্তু সরিষার তেল এনে পায়ে মালিশ করতে লাগলো। আস্তে আস্তে ব্যাথা বেড়েই চলছে। জানি কিছু একটা ঘটতে চলছে। মা অনেকক্ষন ধরে তেল মালিশ করে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন। শরীরে আমার হু হু করে জ্বর এসে গেল।
ব্যাথা হঠাৎ করে এতই বেরে গেল যে অন্য পাশ ফিরতে পারলামনা। ওভাবেই সুয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরে ফোনে কল আসল। ভাইব্রেশনে ফোনটা কেঁপেই চলছে। অনেক কষ্টে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম শুভ্র কল দিয়েছে। আমার কোন ক্লোজ ফ্রেন্ড নেই তাই এই মুহুত্বে মনে হচ্ছে ও আমার অনেক কাছের মানুষ। ফোনটা রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে শুভ্রর কন্ঠ ভেঁসে আসলো,” বাহ্ ম্যাডাম দেখছি অনেক সভ্য হয়ে গেছে।”
শুভ্রর কথা শুনে আমি নিজেকে আর কন্টোল করে রাখতে পারলামনা। ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলাম।

শুভ্রতো হাজার ভোল্টের শর্ক খেল পরীর কান্না শুনে। এই পরী তোমার কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? আমাকে বল, তোমার কি সমস্যা হয়েছে!”
শুভ্রর কথা শুনে আমি শব্দ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার পুরো শরীর যেন কারো আয়ত্বে চলে গেছে। এত এত ব্যাথা করছে যেন মনে হয় প্রতিটা মাংসের কোষ কেউ খুলে নিচ্ছে।
শুভ্র পরীকে স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো। নানা গল্পের মধ্য পরীকে মনযোগী করে তুলল। তারপর পরী আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল। ব্যাথার মেডিসিন হয়ত কাজ করেছে তাই চোখে ঘুম এসেছে।
শুভ্র আরো কিছুক্ষন লাইনে থেকে তারপর কল কেটে দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।

আমার অবস্থা পরের দিন আরো খারাপ হয়ে গেল। পরের দিন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারলাম না। শেষে একগাদা ব্যাথার মেডিসিন নিয়ে একটু স্বাভাবিক হতেই বাবা আমাকে নিয়ে ছুটলো ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার আবার সেই এতগুলো টেষ্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,” সেগুলো টেষ্ট করে আনতে।”
আবার সেই ব্লাড টেষ্ট, এটা টেষ্ট, ওটা টেষ্ট করে ডাক্তার কে সব রির্পোট দেখিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলাম। ডাক্তার কোন রোগই ধরতে পারেনা। কেন এত শরীর ব্যাথা করছে।
এভাবে আরো ৭টা দিন কেটে গেল। ফোন বন্ধ ছিল তাই শুভ্রর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। ৯ দিন পর কলেজ গেলাম। ক্লাস আর করলাম না। সোজা নদীর পাড়ে এসে ঘাসের উপর বসে এক মনে পানির ঢেউ গুনতে লাগলাম। মন খারাপ হলে এখানে এসে এই কাজটা করি। দুরে এক পানকৌড়ি ডুব দিয়ে তার শিকার ধরছে।
শুভ্র যে কখন আমার পিছে এসে দাড়িয়ে আছে আমি জানিনা। পরী বলে ডাকতেই চমকে উঠে পিছনে চেয়ে দেখলাম উনি দাড়িয়ে আছে।

~” আপনি?”
~” তুমি খোজ নিবানা তাই বলে আমি নিবনা সেটা কি হয় নাকি?”
~” আপনার খোঁজ আমাকে কেন নিতে হবে?”
~” আমি চাই বলে।”
শুভ্র পরীর পাশে বসে অন্য দিকে চেয়ে বলল,” এই প্যারানরমাল সমস্যা গুলো কবে থেকে শুরু হয়েছে।”
ওনার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। একজন এডুকেটেড ছেলে এসব আবার বিশ্বাস করে? যেখানে আমার বাবা, আপু কেউ বিশ্বাস করেনা।
আরে বোকা এত ভাবছো কেন? আমার মাও এমন অনেক সমস্যার ফেস করছে। আমি ছোটবেলা থেকেই এসব দেখে আসছি। বাবা মারা যাওয়ার পর একটু কমে গেছে।
~”আপনার বাবা নেই?”
শুভ্র খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখন বাবা মারা গেছে হার্ড আর্ট্যাকে। বাবা ব্যাংকে জব করতো আর মা প্রাইমারী স্কুলের টিচার।”
শুভ্রর কথা শুনে আমার একটা মায়া জন্মিল ওনার উপর। এই কথা সেই কথার একপর্যায়ে আমার সব কথা ওনাকে বলে ফেললাম।
শুভ্র পরীর কথা মনযোগ দিয়ে শুনে বলল,” তুমি তো তোমার বরের সাথে সংসার করতে পারবেনা।”
~” আমি তো বিয়েই করবোনা।”
~” জানি তুমি এমন কথায় বলবে। ইনশাল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সেদিন ওনার সাথে অনেক কথা হল। উনি আমাকে রিক্সাই তুলে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলেন।

সেদিনের পর থেকে শুভ্রর সাথে পরীর একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। মাঝে মাঝে দেখা হয়। শুভ্রও কলেজে আসে মাঝে মধ্য পরীর সাথে দেখা করতে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন শুভ্রর নাম্বার বন্ধ দেখায়। পরী ওকে পাগলের মত খোঁজে কিন্তু কোন খোঁজ পায়না। ভিষন রাগ হয় পরীর। মনে হয় নিজেকে শেষ করে দিবে। বাসায় চুপ করে থাকে। কারো সাথে ঠিকমত কথা বলেনা।
কোন এক প্রয়োজনে পরী ওর বান্ধবীদের সাথে সেদিন শপিং এ গিয়ে দেখে শুভ্র কিছু ট্রীশার্ট পছন্দ করছে।
শুভ্রকে দেখে আমার হিতাহিত বোধটুকুও চলে গেল। আমি সোজা গিয়ে শুভ্রের হাত ধরতেই শুভ্র চমকে উঠলো। পরী তুমি এখানে?
আপনি আমার সাথে আসেন বলে ওর হাত ধরে টেনে নিচে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। সিড়িতে লোকজন নেই দেখে সোজা ওকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে ফেললাম। আপনার ফোন বন্ধ কেন?
~” আমায় ছাড়ো পরী, সবাই দেখলে তোমার সমস্যা হবে।”
~” না ছাড়বোনা, যা হয় হবে। আজ আপনাকে ছাড়ছিনা। আপনার সাহস কিরে হয় ফোন বন্ধ করে রাখা!”
~” কি ব্যাপার, এত আক্রোশ কেন? সেদিন তো ঠিকি বলেছিলে শুভ্রকে তোমার চাইনা। তাহলে আজ এত অস্থিরতা কেন?”
পরী চাতক পাখির মত ওখানে দাড়িয়েই ওর মাথাটা শুভ্রর বুকে লাগিয়ে বলল,” কেন এত বেহাপানা তা জানিও না বা বুঝতেও চাইনা। কিন্তু মনতো অন্য কথা বলে শুভ্র!”
~” বাহ্, ম্যাডাম দেখছি আমার নাম ধরে ডাকাও শিখে গেছ। আমি ভাবতেই পারছিনা তোমার এত উন্নতি হল কোথা থেকে!”

“””””””””””””””””””””””””””””””””””””?
পরীর কোন জবাব না পেয়ে শুভ্র মলিন মুখে বলল,
“ওকে, যাও সব ফ্রেন্ডদের বাই বলে আসো। তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।”
~” কই যাবো।”
~” কেন, আমার সাথে যেতে তোমার ভয় করছে?”
~” আমি মোটেও কাউকে ভয় পাইনা বরং মানুষ আমায় ভয় পায়।”
কনফিডেন্স থাকা খুব ভালো পরী। ওকে, তাহলে সবাইকে বাই বলে আসো বলতেই আমি দৌড়ে ওদের কাছে যেতেই ওরা বলল,” ঐ ভাইয়াটা কে রে? তোর বয়ফ্রেন্ড? ”
ওদের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে এল। কেন যে পাগলামি করতে গেলাম এখন কি করি?
এমন সময় শুভ্র এসে বলল,” পরী এখনো ওদের বাই বলিসনি? জলদি কর আমি নিচে আছি।”
শুভ্র আমাকে তুই বললো। আমি এই তুই শব্দটা একদম অপছন্দ করি। যাহ্ ওর সাথে আর দেখাই করবোনা। গাল ফুলে মাথা গরম করে বললাম,” আমাদের বাসার মালির ছেলে। একটু বেশি পড়াশুনা করেছে তো তাই নিজেকে বড় মনে করে।”
তুলি চট করে বলে উঠলো, তুই পাগল হয়েছিস? শুভ্র ভাইয়া তোদের মালির ছেলে হতে যাবে কেন? ওনাকে আমি ভালো করে চিনি। আমাদের ম্যাডামের ছেলে উনি। তোকে উনি চিনলো কিভাবে?
ধ্যুর, আমার আপুর ফ্রেন্ড। আমি আসছি বলেই সেখান থেকে দৌড়ে নিচে নেমে দেখি উনি দাড়িয়ে আছেন। রাগ কে চেক না দিতে পেরে সোজা বলেই ফেললাম,” আমাকে তুই বলার কি খুব দরকার ছিল?”

হুম, অনেক দরকার ছিল বলে একটা রিক্সা ডেকে আমাকে তুলে দিয়ে উনি বাইক নিয়ে রিক্সার পিছন পিছন আসতে লাগলো।
একটা বাসার সামনে এসে রিক্সা থামলো। উনি এই প্রথম আমার হাত ধরলেন। ওনার স্পর্শ পেয়ে আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ চমকালো। হাতটা আমিই সরিয়ে নিলাম তারপর ওনাকে অনুসরন করে ওনার পিছে সিড়ি বেয়ে উঠলাম। তারপর কলিংবেল বাজাতেই একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল।
মেয়েটা অত্যান্ত খুশি হয়ে বলল,” এই শুভ্র, তুই এখানে! ভুলে এখানে আসছিস নাকি হুম! কেমন আছিস?”
ভালো আছি। পিছনে মেহমান আছে বলে শুভ্র ভিতরে চলে গেল। আর রিতা পরীকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলেন বলে শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র আমার হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, ” বস এখানে।”
আমার খুব নার্ভাস ফিল হওয়া দেখে শুভ্র বলল,” রিতা, পরীকে এক গ্লাস পানি এনে দে তো?”
~”পানি কি করবো?”
আমার মনে হচ্ছে তোমার পানি দরকার বলেই শুভ্র ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে গোছাতে লাগলো।
~” এগুলো কিসের পেপারস?”
~”আমি স্কালারসীপে ইংল্যান্ডে যাচ্ছি পরী। আমার ভিসার একটু সমস্যা হচ্ছিল তাই এই ক’দিন খুব দৌড়ের উপর ছিলাম। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।”
আপনি ইংল্যান্ড যাচ্ছেন কথাটি বলতেও যেন আর বলতে পারলাম না। চোখে পানি চলে এসেছে। তাই উঠে জানালার কাছে গিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে রইলাম। কেবল একজনকে এত ভালো লাগতে লাগল আর সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।

~” পরী এখানে আসো?”
মনে একরাশ অভিমান নিয়ে বললাম,” ওখান থেকেই বলুন।”
শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” আজই হয়ত আমাদের শেষ দেখা।”
শুভ্রর কথাগুলো আমার কানে বাজছে। আমি তবুও চুপ করে আছি। নড়ার শক্তি নেই আমার। এবার শুভ্র নিজেই আমার কাছে এল। পাগল ছেলেটা আমার হাত ধরতে চেয়েও আর ধরলনা। শেষে আমার হিজাবের এক কোনা ধরে বলল,” পরী, আমায় বিয়ে করবে?”
এমন একটা প্রস্তাব শুভ্রর কাছ থেকে আসবে সেটা আমি কোন দিনও কল্পনা করিনি।
~”আপনি আমাকে কখনো দেখেছেন! না দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিলেন?”
দেখার প্রয়োজন বোধ মনে করছিনা। আমার চোখের সামনে তোমার ছবি ছিল তবুও আমি ইচ্ছা করেই দেখিনি। আমার হাতে সময় খুব কম পরী। আমি তোমাকে পুরোপুরি ভালবাসতে পারছিনা। যাতে ১০০% ভালোবাসতে পারি তাই এই ব্যবস্থা। তুমি কি আমাকে সেই সুযোগ দিবে পরী?
আমি এবার ওর সামনে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,” আপনি তো চলে যাচ্ছেন। ”

~” যাচ্ছি বলেই তো তোমাকে হারাতে চাইনা। আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেনা?”
মাথায় কিছু আসছেনা। কি বলব আর কি করবো। আমি শুভ্রকে ভালোবাসি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমি এতবড় এক সিদ্ধান্ত নিই কি করে। হঠাৎ মাথায় ভুত চেপে বসল। এই মানুষটাকে আমার চাই চাই।
সেদিন রিতা, ওর স্বামী সহ আরো ৫ জনকে সাক্ষী রেখে আমাদের বিয়ে পড়ানো হল। আমি সেদিন শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড কেঁদেছি।
আমার কান্না দেখে শুভ্র পরম তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে বলল,” পরী, সেদিন তোমার এই কান্নার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার শুধু একটাই কথা বার বার মনে হচ্ছিল, তুমিই আমার জন্য পারফেক্ট। আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেতো?”
~”সারাজিবন ধরে অপেক্ষায় থাকবো।”
~”সারাজিবনের দরকার নেই, একটা নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই চলবে।”
~” প্রাচুর্য আর বিলাশিতায় আপনি আমাকে ভূলে যাবেন না তো?”
~” আমি চেষ্টা করলেও হয়ত ভুলতে পারবোনা। কারন আমাকে তোমার খুব দরকার।”
~” করুনা করছেন আমাকে?”

~” নাহ্, তোমার সমস্যা গুলো নিজের করে নিতে চাচ্ছি। আমার মা যে কষ্টে তার জিবন অতিবাহিত করেছে আমি চাইনা আমার এই প্রিয় মানুষটাও সেই কষ্টের ভিতর জিবন কাটাক। আমার শুধু একটাই অনুরোধ, যাই হোকনা কেন! মাথা গরম করে আমাকে ভূল বুজবেনা। মাথা সবসময় ঠান্ডা রাখবা। তোমার মেন সমস্যা হল, সহজে তুমি রেগে যাও আর ভূল ডিসিশন নাও। কথা দাও, রাগ জিনিসটাকে তোমার জিবনে প্রশয় দিবেনা। তারা তোমাকে বার বার রাগানোর চেষ্টা করবে। যদি তুমি রেগে যাও তাহলে তুমি তাদের ফাঁদে পা দিবে আর আমি সারা জিবনের মত তোমাকে হারিয়ে ফেলব।”
চুপ করে শুভ্রর সব উপদেশ মনযোগ সহকারে শুনলাম।
সেদিনও শুভ্র আমার চেহারা দেখেনি। আমাকে নিয়ে ও সেদিন অনেক শপিং করল। ওখানে গিয়ে ওর যা যা প্রয়োজন হবে সব কিছু আমাকে নিয়েই শপিং করলো। তারপর বিকেলের দিকে বাসায় চলে আসলাম। আমার জানা ছিলনা সেটা শুভ্রর সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ ছিল।

বাসায় এসে সেদিন রাতে শুভ্রের সাথে অনেক কথা হল। পরেরদিন আমি আমার ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় ফিরছিলাম সেদিন মাঝপথে রুপমের সাথে দেখা।
আমাকে দেখে রুপম কাছে এসে বলল,” খুবতো নিজেকে পর্দাশীল করে রেখেছিস আর অন্যর সাথে ফষ্টিনষ্টি ঠিকি করে বেরাস। বড়লোকের ছেলে আবার দেশের বাহিরে পড়তে যাচ্ছে। তাকে কখনো হাত ছাড়া করা যায়?
~” কি বলছিস সব?”
কি বলছি বুঝিসনা বলেই রূপম আমার স্কার্ফ ধরে টান দিল রাস্তার মাঝখানেই।
আমিও সাথে সাথে স্কার্ফ হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম,” রূপম, আমার স্কার্ফ ছাড় বলছি? তাছাড়া কিন্তু খুব খারাপ হবে।”
কি হবে! নষ্টা মেয়ে কোথাকার বলেই পরীকে ধাক্কা দিল রূপম।
কিছু মানুষ জড়ো হতেই রূপম বাইক নিয়ে চলে গেল। আমার এত সম্মানে লাগলো সেটা বলার বাহিরে ছিল। কোনমতে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এলাম।

কথাটা শুভ্রর কাছে গোপন থাকেনা। কে যেন শুভ্রকে বলে দেয় রাস্তায় পরীকে রূপম বেইজ্জতি করেছে। শুভ্রর মাথা গরম হয়ে যায়। যেখানে রূপম পরীকে অপমান করেছে সেখানেই রূপমকে রাস্তায় ফেলে বেল্ট দিয়ে মারে। রূপমকে একদম আধমরা করে ফেলে। শুভ্রকে ওর ফ্রেন্ডগুলো আটকায়।
ছাড় আমাকে, পরীর গায়ে ও হাত দেয় কোন সাহসে? কুত্তার বাচ্চা, মেয়ে মানুষ পেয়ে রাস্তায় যা খুশি তাই করবি? তুই কে হে ওর কাছে কৈফিয়ত চাওয়া? জিবনে যদি আর একবার দেখি ওর পাশ দিয়ে হাটা তাহলে সেদিন তোর এর থেকেও অবস্থা খারাপ করে ছাড়বো।
সবাই সেদিন রূপমকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়ে শুভ্রকে বাসায় নিয়ে আসে।
কিন্তু রূপমের বাবা বিপত্তি ঘটায়। একদম শুভ্রের নামে মার্ডারের কেস ঠুকে দেয়। এতে শুভ্রের ভিসা বাতিল হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। শেষে তীরে এসে তরী ডুবে যাবে! তাই ওর মামারা মিলে অনেক অর্থ খরচ করে শুভ্রকে আগেই ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয় থানা ক্যাপচার করে। বাঁকিটা ওর মামারা সব সামলিয়ে নেয়।

১৩ দিন হয়ে যায় শুভ্রর কোন খোঁজ নেই। আমি শুভ্রের নাম্বার বার বার ট্রাই করেছি কিন্তু বার বারই বন্ধ দেখায়। শেষে ওর বাসার নাম্বারে কল দেই। একটা মহিলা ফোন রিসিভ করে বলল,” কাকে চান?”
~” সালাম দিয়ে বললাম,” আপনি শুভ্রের কে হন!”
~” বড় আপু, শুভ্রকে কি দরকার?”
~” আপু একটু শুভ্রর সাথে কথা বলতাম, ওকে একটু দেওয়া যাবে?”
সাথে সাথে কল কেটে দিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে আরো কয়েকবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ হলোনা।
শেষে মাসেজ করলাম, এবার যদি রিসিভ না হয় তাহলে সুইসাইড করবো।
এবার উনি ফোন রিসিভ করে বলল,” এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?”
~” আপু আমি একবার শুভ্রের সাথে একটু কথা বলতে চাই। কান্না করতে করতে কথা গুলো বললাম।”
~” ওকে কি দরকার?”
~” আপু, আপু প্লিজ একবার ওকে ফোন দেন, একমিনিট কথা বলবো। আর কোনদিনও কল দিবনা।”
পরীর কান্না শুনে শুভ্রের আপু বিরক্ত হয়ে বলল,” শুভ্র নেই, ও এক সপ্তাহ আগে ইংল্যান্ডে চলে গেছে। এখানে আর কল দিবানা। এমনি আমরা অনেক সমস্যার ভিতর আছি।”
কথাগুলো বলেই উনি কল কেটে দিলেন।

কিহ্ শুভ্র চলে গেছে? আমাকে না বলে ও কিভাবে চলে গেল! এই ওর ভালোবাসা? ওর প্রতি এত অভিমান হল যা বলার বাহিরে। প্রথমে সিমটা খুলেই ভেঙ্গে ফেললাম।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। জোড়েও কাঁদতে পারছিনা। বাসায় যদি কেউ কিছু জানতে পারে তাহলে বাবা প্রথমে আমার মাকে শাস্তি দিবে যেটা আমি সহ্য করতে পারবোনা। বাথরুমে ঢুকে পানি কল ছেড়ে দিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। শুভ্র চলে গেছে আমাকে ছেড়ে…..
আর শুভ্রর সাথে কথা হয়নি।

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ২