অতঃপর প্রেম পর্ব ৭+৮+৯

অতঃপর প্রেম পর্ব ৭+৮+৯
লেখনীতে আয়ানা আরা

আমি তৃপ্তি করে রসমালাই খেতে লাগলাম। ফুপিমা আমার কাছে এসে বলে,’আস্তে খা তোর ভাগের টা কেউ নিয়ে যাবে না।’
আমি ফুপিমার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে চেটেপুটে খেতে লাগলাম। ফুপিমাকে বললাম,’তা ফুপিমা তোমার দানব গরিলা ইঁচড়েপোকা ছেলে আসেনি কেনো।’
আম্মু আমার কাছে এসে ধমক দিয়ে বলে,’বড়দের এইভাবে বলতে হয়?’
আম্মুর ধমক খেয়ে আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। ফুপিমা বলেন,’আরে বলিস না ছেলেটাকে কতোবার বললাম তোর মামির বাসায় আমার সাথে আয় সে তো আসলোই না কিন্তু বিকালে আসবে।

(বলে রাখা ভালো ফুপিমা আমার নিজের ফুপি না। ফুপিমা আমার দাদার ভাইয়ের মেয়ে। আর আমার দাদা আর দাদার ভাই এক বাসায় থাকতো তাই আমি ফুপিমাকে ফুপিমা বলি। ফুপিমার একটা ছেলে আর মেয়ে আছে। ফুপিমার ছেলেকে আমি আমার তিন বছর বয়সে দেখেছিলাম পরে আর দেখিনি তাই নাম আর চেহারাও মনে নাই কেউ বলেও নাই?‍♀️।)
আমি রসমালাই খেয়ে রোথিকে বললাম,’রোথি চল ডোরেমন মুভি দেখবো আজকে।’
আমার কথা শুনে রোথি হাত তালি দিয়ে বলে,’ইয়েএ।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমাদের দুইজনে কার্টুন অনেক ফেবারেট। ও আমাদের বাসায় আসলেই আমরা সবসময় কার্টুন দেখি আর এইবারও ব্যতিক্রম নয়। আমি আর রোথি টিভি তে ডোরেমনের মুভি ‘বার্থ অব জাপান’ ছাড়লাম। মুভি দেখতে দেখতে এক ঘন্টা পার হয়ে যায়। লাস্টের সিনে আমি আর রোথি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। আমাদের কান্নার মাঝেই দরজায় কলিং বেল বাজলো। আমি দরজা খুলে দেখি এক সুর্দশন পুরুষ দাঁড়ানো।আমি তাকে দেখে ভ্রুকুচকে বলি,’কাকে চাই?’
ছেলেটা আমার পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আমি দৌড়ে গিয়ে বাধা হয়ে দাড়ালাম। ছেলেটা দাঁত কিরমির করে বলে,’মেইড মেইডের মতো থাকুন। গেট আউট।’

ছেলেটার কথা শুনে আমি রাগে ফুলে গেছি। আমি তার দিকে আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফুপিমার আওয়াজ শুনলাম
‘আরে রোশান তুই এসেছিস।’
আমি আর রোশান নামের ছেলেটা ফুপিমার দিকে তাকালাম। রোশান নামে বাদরটা বলল,’হুম মা।’
আমার কাছে এখন সব জলের মতো ক্লিয়ার হয়ে গেলো। রোশান নামের ছেলেটা আর কেউ না রোথির ভাই। রোশান বলে,’মা এই মেয়েটা কে?এই বাড়ির মেইড?’
রোশানের কথা শুনে মনে হচ্ছে বেটার মাথা ফাটাই দেই। ফুপিমা হেসে বলেন,’তুই ছোট বেলায় যার জন্য পাগল ছিলি যাকে বউ বউ বলে সারা বাসায় ঘুরতি সেই এই।’

আমি রোশানের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। তার সারা মুখ হঠাৎই অন্ধকার হয়ে গেছে। ফুপিমা বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে বলে,’আচ্ছা আয় তোর মামির সাথে দেখা করে যা।’
রোশান জোরপূর্বক হেসে বলে,’হুম চলো।’
রোশান যেতেই রোথি এসে আমার পাশে দাড়ালো। রোথি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,’বেশি দেখিও না আমার ভাইকে প্রেমে পড়ে যাবা।’
রোথি এই কথা বলে দৌড় দিলো আমিও ওর পিছে পিছে দৌড় দিলাম।
রাতে খাবার টেবিলে-

মেহেদী ভাই,রোশান ভাই,আব্বু-আম্মু,আমি,রোথি,ফুপিমা একসাথে বসে খাবার খাচ্ছিলাম। আব্বু ফুপিমার উদ্দেশ্যে বললেন,’রোশনি এইবার কিন্তু এই দুইদিন থাকলে চলবে না। আমরা মেহেদীর জন্য মেয়ে ঠিক করেছি।’
আব্বুর এই কথা শুনে মেহেদী ভাই কাশতে শুরু করে দিলো। আমি আর আম্মু মুখ টিপে হাসছি। আব্বু হেসে বলে,’তাও আবার মেহেদী পছন্দের মেয়ের সাথে।’
ফুপিমা হেসে বলে,’ভাইয়া কি বলো মেহেদীর পছন্দের কে সেই মেয়ে?’
‘মেয়েটার নাম হচ্ছে ইরহা।’
আমি মেহেদী ভাইকে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বলি,’ঘটকালি কিন্তু আমি করেছি তাই ঘটক আমি।হিহিহি’
মেহেদী ভাই বলল,’তারমানে তুই বলে দিয়েছিস?’
আমি একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলি,’হুম।’
‘তবে রে।’

ফুপিমা আব্বুকে জিজ্ঞেস করলো,’ভাইয়া বিয়ে ঠিক করেছো কবে?’
‘দুই সপ্তাহ পর ঠিক করেছি আর ইরহামাকে কাল আংটি পড়াতে যাবো তাই তোদের থাকতে হবে।’
পুরোটা সময়ই রোথি আর রোশান ভাইয়া চুপ ছিলো। রোথি খাওয়া শেষে চুপচাপ চলে যায় আমার সাথে। আমি খেয়াল করেও কিছু বলি না।
মাঝরাতে আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখনই কারো ফুপানো আওয়াজ কানে ভেষে আসে। প্রথমে ভ্রুক্ষেপ না করলেও এখন আমি উঠে দেখি রোথি ফুপাচ্ছে মানে নিরবে কাঁদছে। আমি ওকে উঠিয়ে বলি,’রোথি কাঁদছিস কেনো।’

রোথির কান পর্যন্ত আমার কথা যায়নি সে ঠোঁট চেপে কাঁদছে। আমি রোথির গালে আলতো করে হাত রেখে বললাম,’কি হয়েছে রোথি?’
রোথি এইবার আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,’সব ভালোবাসা কি পূর্নতা পায় না আপু?’
ওর এহেন প্রশ্নে আমি চমকে উঠি। রোথি বরাবরই নিরামিষ টাইপের মেয়ে। এইসব ভালোবাসা,প্রেম ওর দ্বারা কখনোই হয় না। হঠাৎ এরকম মেয়ের মুখে প্রেম,ভালোবাসা টাইপ প্রশ্ন শুনলে অবাক হওয়ারই বিষয়। আমি রোথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,’হঠাৎ এই প্রশ্ন?’
‘না আগে তুমি বলো।’
আমি মুচকি হেসে বললাম,’সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। কিছু কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতা পাওয়াই উত্তম।’
রোথি আমাকে ছেড়ে চোখে পানি মুছলো। আমি ওকে বললাম,’এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলি কেনো বললি না যে?’
‘না এমনি।’

আমি বুঝতে পারলাম রোথি আমার প্রশ্ন এড়িয়ে চলল তাই আমিও আর কিছু না বলে শুতে চলে গেলাম।
সকালে ফুপিমার ডাকে ঘুম ভাঙে। আমি আর রোথি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাই। দেখি দানবটা সোফায় বসে মোবাইল দেখছে। আমি মনে মনে বেটাকে একটা ভেংচি কেটে ব্রেকফাস্ট করতে টেবিলে গেলাম। ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমি ফোন নিয়ে সোফায় বসলাম। এফবিতে লগইন করে দেখলাম নিশা মেসেজ দিয়েছে। আমি ওর মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলাম। আজকে যেহেতু মেয়েকে আংটি পড়াতে যাবো তাই অনেক তোড়জোড় চলছে বাসায়। রোশান ফুপিমাকে আমার উদ্দেশ্যে বলে,’মা এই মেয়েকে নিয়ে যাও ওর ভাইয়ের বিয়ে আর ও নিজেই কোনো কাজ করছে না এটা কেমন কথা।’

আম্মুও ফুপিমার সাথে ছিলো তাই সে নিজেও রোশান হনুমানের কথায় সায় দিয়ে বলল,’হুম ঠিক বলেছো রোশান। মেয়েটা আমাকে কিছুতেই সাহায্য করে না। সারাক্ষন টোইটোই করে ঘুরে বেরায়।’
পরে আর কি হনুমানটার জন্য আমার সকাল সকাল কাজ করতে হলো। মন চাচ্ছে হনুমানটা চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। এখন এইসব বলে লাভ কি যা করার করেই ফেলছে।

‘রোদ তুই সত্যি বলছিস তো?তোর বিয়ে হয়ে গেছে।’
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছিলো রোদ। তার জানের জিগার বন্ধুর কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,’আমি কি ফাউল কথা বলছি তুই ভাবছিস?’
রোদের কথা শুনে ওর বন্ধ কৈশিক হচকিয়ে যায়। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ বিয়ের পেপারস গুলো নিয়ে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে দেয়। কৈশিক বলে,’এখন কি করবি?’
রোদ ভ্রুকুচকে কৈশিকের দিকে তাকিয়ে বলে,’মানে আমি আবার কি করবো?’
কৈশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’একদিন না একদিন সত্যি তো সামনে আসবেই।’
‘শুন এটা কোনো বিয়ে না। ইনফ্যাক্ট আমি আর মেহেক দুইজনেই এই বিয়ে মানি না। তবে..
‘তবে?’

‘ওর সামনে গেলে আমার এক অজানা অনুভুতি জন্ম নেয়। সেই অনুভুতির নাম কি আমি জানি না।’
বন্ধুর কথা শুনে কৈশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,’ভালোবাসা হয় যদি?’
কৈশিকের কথা শুনে রোদ চমকে উঠে।
‘না এটাকে ভালোবাসা বলে না আর ওকে আমি চিনিই বা কতোদিন যে ভালোবাসবো?’
‘ভালোবাসা কাউকে কয়ে আসে না। ভালোবাসার প্রথম ধাপ একটা অজানা অনুভুতি যেটা অনেকে অনেক তাড়াতাড়ি বুঝে আবার দেরীতেও বুঝে।’
এই বলে কৈশিক উঠে চলে যায়। রোদকে এই কথাগুলো অনেক ভাবনার মধ্যে ফেলে দেয়।

আমি কাজ শেষে রুমে যেয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হই।অতঃপর বিছানায় গা এলিয়ে দেই আর রোশানকে হাজারো গালি দিতে থাকি। রোশানকে গালি দিতে দিতে এক পর্যায়ে আমি ঘুমিয়ে যাই। রোথির ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। সে আমাকে বলে,’মেহু আপু লাঞ্চ করবি না?’
আমি ঘুমু ঘুমু চোখে ওকে বলি,’হুম করবো।’
‘চলো তাহলে।’
রোথি আমাকে টেনে ফ্রেশ হতে পাঠালো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেই আমরা দুইজন নিচে চলে গেলাম খেতে।খাবার টেবিলে হরেকরকমের খাবার ছিলো। আমি আর রোথি বেশ মজা করে খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষে আমরা যার যার রুমে চলে গেলাম রেডি হতে কারণ এখন আমরা ইরহা ভাবিকে আংটি পড়াতে যাবো।আমি রোথিকে বলি,’রোথি জলদি রেডি হো।’
‘আপু তোমরা যাও আমি যাবো না।’
‘আল্লাহ এটা কেমন কথা তুই ননদ তুই যাবি না।’
‘শরীর ভালো লাগছে না আপু তোমরা যাও।’

আমি রোথির গালে হাত রেখে বললাম,’কিছু হয়েছ?কাল রাতেও আজগুবি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলি আবার এখন যেতে চাস না’
‘কিছু না আপু।’
‘দেখ তুই আমাকে বলতে পারিস।’
‘না আপু কিছু হয়নি।’
আমি আর কিছু না বলে ওকে একটা ড্রেস হাতে ধরিয়ে দিয়ে রেডি হতে চলে গেলাম। আমরা সবাই রেডি হয়ে নিচে গেলাম। ইরহা ভাবির বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমরা। ইরহা ভাবির বাসায় পৌছে ভিতরে যেয়ে যাকে দেখতে পেলাম তাকে দেখে অনেক অবাক হয়েছি কারণ আমি আর কাউকে না স্বয়ং রোদ স্যারকে দেখছি। রোদ স্যার আমার আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলছেন তাই খেয়াল করেননি আমাকে। আমি সামনে যেতেই উনি বলেন,’মেহেক তুমি?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,’জ্বী স্যার।’
‘তুমি মেহেদীর কে হও?’
‘বোন।’
‘ওহ।’
আমি আর এক মিনিট ও না দাঁড়িয়ে ভোঁ দৌড় দিলাম। উনার সামনে গেলে আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। এক অজানা অনুভুতির সৃষ্টি হয়।

কথার কথায় জানতে পারি রোদ স্যার ইরহা ভাবির চাচাতো ভাই। ইরহা ভাবি আর মেহেদী ভাইয়ের আংটি বদল হলো। এবং আগামী সপ্তাহে বিয়ে দিন ধার্য করা হলো। অবাক করার বিষয় আমি কোথাও নিশাকে খুজে পেলাম না। তাই রোদ স্যারকে জিজ্ঞেস করি,’স্যার নিশা কোথায়?’
‘ও আসেনি।’
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম। রোদ স্যার আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আনমনে বললেন,’কি সেই অজানা অনুভুতি?আমি কি সেই অজানা অনুভুতির নাম খুজে বের করতে পারবো?

ইরহা ভাবির বাসা থেকে এসেছি অনেকক্ষন হয়েছে। সবাই বলছে কাল সকালে সবাই শপিং এ যাবে। আমি নিজের রুমে এসে জানালার কাছে বসে ভাবছি যে রোদ স্যারের সামনে গেলে এমন অনুভুতির জন্ম নেওয়ার মানে কি? উনাকে কি আমি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি?না,,না এমন হতে পারে না মেহেক উনি তোর স্যার স্যারের মতোই থাকবে। বুঝি না উনাকে নিশার সাথে দেখলে আমার অনেক রাগ লাগে।

রোদ নিজের ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছে হঠাৎই ওর চোখে মেহেকের আইডি এসে পড়ে। রোদ আনমনেই মুচকি হেসে প্রোফাইলে ঢুকে। মেহেকের একটা শাড়ি পড়া ছবিতে অনেক ছেলে লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে যা দেখে রোদের অনেক রাগ লাগে। ও ফোন খাটে ছুড়ে ফেলে দেয়।

আমি আর রোথি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে এসেছি। রোথি হঠাৎই আমাকে জিজ্ঞেস করে,’ভালোবাসা মানে কি আপু?’
আমি ওর দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলি,’এক অজানা অনুভুতি’
‘তুমি কি কখনো ভালোবেসেছো?’
‘না।’
রোথি কিছু না বলে শুয়ে পড়লো। আমিও লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম ওর পাশে। আমার কাছে রোথিকে ইদানিং অনেক আলাদা লাগছে। যে মেয়ে কিনা চঞ্চল আর আজকাল সে চুপ করে আছে। ভালো ঠেকছে না বিষয়টা আমার কাছে। রোথি আর যাই করুক কখনো এতোটা চুপ থাকে না। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে যাই।

সকালে আমি মেডিক্যাল যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। রোথি চুপচাপ বসে আছে পাশে। হঠাৎই রোশান এসে বলে,’আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই।’
আমি বলি,’নো থ্যাংক্স আমি একাই যেতে পারবো।’
আম্মু এসে আমাকে ধমক দিয়ে বলে,’রোশান যখন বলছে তুই তাহলে ওর সাথেই যাবি।’

মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আম্মু আমার না রোশানের। সবসময় এই হনুমানটার সাপোর্ট নেয় অসহ্য। তারপর আর কি হনুমানটার সাথে যেতে হলো আমাকে মেডিক্যাল। আমি ক্লাসে যেতেই কেউ আমার হাত হেঁচকা টান দিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে যায়…..
কেউ একজন হেঁচকা টান দিয়ে ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে যায়। আমি চিৎকার করতে যাবো তার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে যার কারণে খালি উম,উম আর চোখের ইশারা ছাড়া কিছুই করতে পারছিলাম না। অন্ধকার থাকার কারণে লোকটার চেহারাও দেখতে পারছিলাম না ভালো করে। লোকটা আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,’ছেলেটা কে ছিলো?’

লোকটা কথা শুনে আমি যতটা না অবাক হই কন্ঠটা শুনে তারচেয়েও বেশি অবাক হই কারণ এই কন্ঠ আমার পূর্বপরিচিত কিন্তু এই মূহুর্তে এই কন্ঠটা কার মনে পড়ছে না। তাই এইসব চেষ্টা বাদ দিয়ে আমি ছটফট করতে থাকি। লোকটা পুনরায় বলে,’ছেলেটা কে ছিলো?’
আমার শুধু উম উম ছাড়া কিছুই বের হচ্ছিলো না। লোকটা বুঝতে পেরে ছেড়ে দেয় মুখ। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো লোকটার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা যার কারণে তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। আমি লোকটাকে বলি,’কোন ছেলে হ্যা?আর আপনি কে?’
‘আমি কে সেটা নাহয় অজানাই থাকুক আর যে ছেলেটার সাথে এসেছো সেই ছেলেটা কে?’
লোকটা আমার এক হাত ধরে রাখার জন্য আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরে দিয়ে এক দৌড় দেই। ক্লাস রুমে এসে হাঁপাতে থাকি নিশা এসে বলে,’আর ইউ ওকে?’

আমি দুইবার বড় বড় শ্বাস ফেলে বলি,’হুম।’
নিশা বলে,’আচ্ছা তাহলে চলো স্যার এসে পড়বে একটু পর
পরে আমি আর নিশা সিটে বসে পরি। কিছুক্ষন পর রোদ স্যার এসে ক্লাস করানো শুরু করে সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো সে আমার দিকে বারবার আড় চোখে দেখছিলো যেটা মোটেও আমার ভালো ঠেকলো না। ক্লাস শেষে স্যার আমার কাছে এসে বলে গেলেন তার ডেস্কে যেতে। আমিও ভদ্র স্টুডেন্টদের মতো মাথা নাড়ালাম।
স্যার যেতেই আমিও বেরিয়ে পড়লাম উনার ডেস্কে যাওয়ার জন্য।

স্যারের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। স্যারের পাশে ডেস্কে রাখা কিছু বই। যা উনি শাস্তি সরূপ আমাকে করতে বলেছেন। কিসের শাস্তি উনি আমাকে দিচ্ছেন সেটা বলছেন না। হঠাৎই আমি উনার গালে আমি থাপ্পড়ের দাগ খেয়াল করি। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করি,’স্যার আপনার গালে থাপ্পড়ের দাগ কেনো। নিশা দিয়েছে নাকি?’
স্যার আমাকে ধমক দিয়ে বলে,’এই মেয়ে স্যারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?আর কিসের থাপ্পড়ের দাগ। আমি তো দেখিনা’
আমি উনার ধমক খেয়ে চুপ করে একটু ঝুঁকে ইশারা করে থাপ্পড়ের দাগটা দেখালাম। কিছু সেকেন্ডের জন্য আমার হাত উনার গালে ছুয়ে গেলো। আমি তড়িৎ গতিতে উঠে স্যারের কাছে পারমিশন নিয়ে চলে যাই। ক্লাস রুমে যেয়ে সিটে বসতে যাবো ওমনেই নিশার প্রশ্ন শুরু। আমি নিশাকে কিছু বুঝিয়ে চুপ করে রাখি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিশার অনেক বিরক্তি লাগছে আমার রোদের সাথে দেখা করা। আমি খেয়াল করেও চুপ থাকি।

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে যায়। আজকে মেহেদী ভাইয়া আর রোজ [মেহেকের ভাবীর নাম চেঞ্জ করে রোজ দিয়েছি।] ভাবীর গায়ে হলুদ। সেই উপলক্ষে বাসায় অনেক তোড়জোড় চলছে। রোজ ভাবীর জন্য অনেক শাড়ি কিনে এনেছে। বিকালে ভাইয়ার গায়ে হলুদ। তারপর রাতে আমরা আবার রোজ ভাবীকে হলুদ দিতে তাদের বাসায় যাবো। সকাল থেকে রোথি অনেক মনমরা হয়ে বসে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করলে ত্যাড়া ভাবে উত্তর দিচ্ছে। তাই আমি ওকে নিয়ে আলাদা রুমে যাই। রোথিকে কিছু কর্কশ গলায় বলি,’কি শুরু করেছিস দিনদিন?এইভাবে ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছিস কেনো?’

রোথি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে। আমি ওকে সোজা করে বসিয়ে বলি,’রোথি!!তুই আমাকে বল কি হয়েছে তোর?মেহেদী ভাইয়ার বিয়েতে তুই খুশি না আমার মনে হয়।’
রোথি তাও কিছু বলে না ঠোঁট চেপে বসে আছে। যে কেউ দেখেই বলতে পারবে অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে রেখেছে। একটু পরেই কেঁদে দিবে। আমি রোথিকে বলি,’দেখ রোথি তুই যে কান্না আটকিয়ে রেখেছুস বহুত কষ্টে সেটা তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সো প্লিজ কান্না আটকিয়ে রাখিস না তাও আমার সামনে।’
রোথি এইবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আমি কিছুই বুঝতেছি না হঠাৎ ওর কি হলো। ও আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আপু ভালোবাসা কি খারাপ?’

অতঃপর প্রেম পর্ব ৪+৫+৬

আমি ওকে বলি,’মানে কি বলছিস?ভালোবাসা খারাপ কেনো হবে?’
‘আমি জানো একজনকে ভালোবেসেছিলাম। তারপর জানতে পারি সে আগে থেকেই কাউকে পছন্দ করে।’
আমি রোথিকে শান্তনা দিয়ে বলি,’দেখ রোথি তোর এই বয়সটাই আবেগ,মোহে ভরা! আর তুই অনেক আবেগী সহজেই যে কারো মোহে পরে যাস।’
( রোথি আমার দুইবছরের ছোট মানে ও ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে মাত্র উঠেছে।)
রোথি আমাকে বলে,’এই মোহ,আবেগ থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায় আপু??’

আমি বলি,’শুন আল্লাহ হয়তো তুই যার মোহে আটকে পরেছিলি তাকে তোর কপালে রাখেনি। আল্লাহ যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্যই করেন। তুই বিশ্বাস রাখ এর থেকেও উত্তম জীবণসঙ্গিনী তুই পাবি।’
‘তোমাকে কিভাবে বলবো আপু আমি কাউকে না তোমার ভাইকেই ভালোবাসি'[মনে মনে]
আমি রোথিকে ছাড়িয়ে বলি,’দেখো তো চোখের পানি নাকের পানি সব এক করে ফেলেছে মেয়েটা যা জলদি ফ্রেশ হয়ে আয় নিচে যাবো অনেক কাজ আছে পরে তো আবার রেডিও হতে হবে আমাদের।’
‘আমি মেহেদী ভাইকে ভুলে যাবো। ভুলে যাবো মেহেদী নামের কেউ আমার জীবনে ছিলো। আপু হয়তো ঠিকই বলেছে আমি মেহেদী ভাইয়ের মোহে আটকে পরেছিলাম।’

আমি রোথিকে ভাবনার মধ্যে দেখে একটা ধাক্কা দিয়ে বলি,’কিরে কি ভাবনার মধ্যে আবার ডুবে গেলি। এখন এইসব ভাবনা দয়া করে অম্য সাইডে রেখে চল নাহলে পরে আম্মুকে এসে এক রামধমক দিবে।’
রোথি শুধু ‘হুম’ বলে। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ওকে নিয়ে নিচে চলে আসলাম। ভাইয়া নিজের রুমে আরামসে ঘুমাচ্ছে। রোশান ভাইয়া আব্বুর সাথে আলাপ পারছে। ফুপিমা আর আম্মু কাজ করছে। আমি আর রোথিও উনাদের সাহায্য করলাম…

অতঃপর প্রেম পর্ব ১০+১১+১২