অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ১৮

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ১৮
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

অরু আজ দুদিন বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করেই ক্লাস কমপ্লিট করছে। প্রথমদিকে আয়েশা সুলতানা সহ সবার মতামত ছিলো রামি আর অরুকে আপাতত দূরে রাখা। যদিও এতে শতভাগ সাদাদের কানপড়া ছিলো। রামিকে ক্ষে*পা*নো*র জন্যই সে এমন একটা শর্ত দিয়েছে। যেন অরু থেকে দূরে থাকে। রামির হাবভাবে মনে হচ্ছে না সে বেশিদিন শর্ত মানতে পারবে। মাহমুদের মতামতও রামির পক্ষে। বিয়ে তো হয়েছেই। তাহলে অযথা দুজনের মাঝে ভি*লে*ন হওয়ার মানে কী? তাছাড়া, রামির মতো প্রেমিক পুরুষ সেও ছিলো। দায়িত্ব নিয়ে মাকে বুঝালো।

আয়েশা সুলতানা বলে দিলেন অরুকে হল ছেড়ে দিতে। বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করবে। বাড়িতে থাকলে পড়াশোনা হবে না বলে গাঁইগুঁই করলো অরু। আয়েশা সুলতানা বললেন,
“পড়াশোনা না হয়ে যাবে কই? মানুষ পে*টা*তে পারবো না, প্রয়োজনে পড়াশোনাকে লা*ঠি দিয়ে পি*টি*য়ে সোজা করবো। পড়ার সময় কেউ বিরক্ত করবে না তোমায়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরু আর কথা বাড়ালো না। সবাইকে ছেড়ে একা থাকতে তারও ইচ্ছে করে না। নিজের ভ*ন্ডা*মি*কে কন্ট্রোলে রাখতেই হলে ওঠা। এবার মনে হচ্ছে আয়েশা সুলতানার কবলে পড়ে ভ*ন্ডা*মি পইপই করে পালাবে আর পড়াশোনা মাথায় জায়গা করে বসবে। সাদা এপ্রন হাতে নিয়ে চশমা ঠিক করতে করতে বের হলো অরু। রামি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুপচাপ বাইকের পেছনে বসে পড়লো অরু। রামি খেয়াল করলো অরু আজ বেশ চুপচাপ। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

“মন খা*রা*প অরু? তুই কি হলে থাকতে চাচ্ছিস? তাহলে আমি মায়ের সাথে কথা বলে ম্যানেজ করে নেব।”
অরু নিভু নিভু গলায় বলল,
“না, মন খা*রা*প না।”
“তাহলে?”
“এমনিই, ভালোলাগছে না।”
রামি আরেকটু বিচলিত হলো। তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে শুধালো,
“শরীর খা*রা*প লাগছে?”
“হুম।”

অরু ছোটো করে জবাব দিলো। রামি একপাশ করে বাইক থামিয়ে দিল। যত্নশীল হয়ে বলল,
“শরীর খা*রা*প হলে যাওয়ার কী প্রয়োজন?”
অরু বলল,
“ইমপোর্টেন্ট ক্লাস। মিস দেওয়া যাবে না। তুমি বাইক স্টার্ট দাও।”
রামি অরুকে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। আস্তে করে বলল,
“পিঠে মাথা ঠেকিয়ে রাখ।”

অরু বিনা বাক্যব্যয়ে রামির পিঠে মাথা ঠেকিয়ে পুরো রাস্তা এলো। তাকে নামিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো রামি। তার মুখশ্রীতে দুশ্চিন্তার বলিরেখা। অনবরত পায়চারি করেই তার সময় কাটলো। অরু ক্লাস সেরেই বেরিয়ে এলো।
রামিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক গলায় শুধালো,
“তুমি আবার কখন এলে?”
রামি তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে দ্রুত দু-পা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“এখন শরীর ঠিক আছে?”
“না, অস্বস্তি লাগছে।”

রামি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে অরুর হাত চেপে ধরলো। তাকে টে*নে নিয়ে যেতে দেখে অরু জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?”
“চল আমার সাথে।”
রামি কথা খাটো করে অরুকে নিয়ে হসপিটালে ঢুকলো। জোরপূর্বক ডাক্তার দেখিয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো। তেমন গুরুতর কোন সমস্যা না। পর্যাপ্ত ঘুম আর খাবারের কমতি থাকায় শরীর অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অরুকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে রামি জিজ্ঞেস করলো,

“সকালে খেয়ে বেরিয়েছিস?”
অরু সোজাসাপটা জবাব দিলো।
“সকাল সকাল খেতে ইচ্ছে করেনি।”
রামি আর কথা বাড়ালো না। না অরুকে ধ*ম*ক দিলো। তাকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকলো। একটুখানি খেয়েই অরু মুখে হাত দিয়ে বসলো। রামি চোখে চোখ রাখতেই বলল,
“বমি আসছে আমার।”

সকাল থেকেই না খাওয়ার ফল। অরুর চেহারা দেখে আর কিছু বললো না রামি। অরু ওয়াশরুমে ঢুকলে রামি বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। বিল মিটিয়ে রামি জিজ্ঞেস করলো,
“বাইকে বসতে পারবি? না-কি সিএনজি ডাকবো?”
“বসতে পারবো।”

অরু ঠিক আগের মতোই বসলো রামির পিঠে মাথা ঠেকিয়ে। রামি হাত দুটো টে*নে তার বুকের কাছটায় রাখলো। অরু হাত সরালোনা। ওভাবেই রামিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। ওঁকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে তরীর কাছে গেল রামি। অরুর অসুস্থতার কথা জানাতেই তরী তাদের বাসায় যেতে নিলো। আয়েশা সুলতানা শুনতে পেয়ে রামিকে বললেন,
“তরীর সাথে গিয়ে অরুকে এ বাসায় নিয়ে আয়। অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়েটা একা-একা কী করবে?”

রামি মায়ের বাধ্য ছেলের মতো তরীর সাথে অরুকে নিয়ে আসলো এ বাসায়। তরীর বাবা প্রথমে না করলেও পরক্ষণে মেয়ের কথা ভেবে আসতে দিলেন। সবটা ঠিকঠাকই হলো। ঝামেলা বাঁধালো রামি নিজেই। অরুকে তার ঘরে নিয়ে যেতে নিলেই অরু বলে উঠলো,

“আমি তোমার ঘরে যাবো না।”
কপাল কুঁচকে গেল রামির। বলল,
“কোথায় থাকবি?”
“এ বাসায় কি আর ঘর নেই?”
“তুই কি এই বাসার মেহমান?”
মাঝখানে ইরা এসে বাঁধা দিলো।
“অরুকে কোথায় নিচ্ছিস?”

রামি ইরার বাঁধা বুঝতে পেরেই ইরাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কোথায় থাকছো?”
“আমাদের ঘরে।”
“অরুকেও নিয়ে যাচ্ছি আমাদের ঘরে।”
ইরা আবারও বাঁধা দিয়ে বলল,
“তোর ভাইয়ার শর্ত ভুলে গেলি?”
রামি তেতে উঠলো।

“বউ আমার, বিয়ে করেছি আমি। সে কোথায় থাকবে এটার সিদ্ধান্ত নেবে তোমার স্বামী? আজ থেকে তুমিও তাহলে ঈশুর সাথে ঘুমাও। দেখবে তোমার ওই বুড়ো স্বামী হার্ট অ্যাটাক করে বসে আছে। আমার হার্ট তো আরও দুর্বল। যদি ম*রে*ট*রে যাই? তোমার দু-নম্বরের স্বামী আবার আমার বউ নিয়ে টা*না*টা*নি করবে। এসব আমার সহ্য হবে না বলে দিলাম।”

ইরা টি*ট*কা*রি করে বলল,
“মনে হচ্ছে মানুষ একাই বিয়ে করেছে।”
“হ্যাঁ, আমি একাই বিয়ে করেছি। দুনিয়ার আর কেউ বিয়ে করেনি। এবার শান্তি?”
বলেই অরুকে নিয়ে হাঁটা ধরলো রামি। সবার আগে বিছানা দখল করে চোখ বুজে রইলো অরু। সাদাদ বাসায় ফিরে ইরার কাছে সবটা শুনে ছুটে এলো রামির ঘরের দিকে। বড়ো ভাইয়াকে আসতে দেখে দ্রুত দরজা আটকে দিল রামি। সাদাদ বাইরে থেকে দরজায় করাঘাত করে গর্জে উঠে বলল,

“রামি দরজা খোল্। তোকে এতবড়ো সাহস কে দিয়েছে? কার অনুমতি নিয়ে অরুকে তোর ঘরে ঢুকিয়েছিস?”
রামি দরজা না খুলেই ভেরত থেকে জবাব দিলো,
“কারো অনুমতি কেন নেব আমি? আমার সাহসের দেখেছোটা কী?”
“ভুলে যাস না রামি, অরু আমার…”
রামি থামিয়ে দিল সাদাদকে।
“থামো ভাই, এখানেই থেমে যাও।”
অতঃপর অরুকে বলল,

“এই অরু, তুই আমাদের ঘরের বুড়ো গরুটাকে কখনো পাত্তা দিয়েছিস? জিজ্ঞেস কর তো এত লাফাচ্ছে কীসের জোরে?”
অরু দাঁতে দাঁত চেপে এতক্ষণ সবটা হজম করলো। ক্লান্ত শরীর, মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে তার। চোখ দিয়ে রামিকে ভস্ম করে দিচ্ছে। একটা বালিশ ছুঁড়ে মে*রে বলল,
“আমি আমার বাসায় থাকতাম। অন্তত শান্তিতে একটু বিশ্রাম নেওয়া যেত।”
রামি আমতা আমতা করে বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে, তুই ঘুমা। আমিই বাইরে যাচ্ছি।”
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে সাদাদের হাত ধরে বসার ঘরে টে*নে নিয়ে আসলো রামি।
“কী সমস্যা তোমার?”
“তুই আমার শর্ত অমান্য করে অরুকে নিয়ে ঘরে ঢুকেছিস কোন সাহসে?”
রামি মুহূর্তেই পল্টি নিলো। বলল,

“কীসের শর্ত? কোন শর্তটর্ত আমি মানি না।”
“অরু আমার….”
রামি ইরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই, তোমার বুড়োকে সামলাও বলে দিলাম। নয়তো একেবারে বুড়িগঙ্গা নিয়ে ভালোভাবে চুবিয়ে দেব। এক পা কবরে নিয়েও আমার বউয়ের দিকে নজর দেয়।”

ইরা কটমট চোখে তাকালো সাদাদের দিকে। বাজখাঁই গলায় বলল,
“আজ তোমার ঘরে জায়গা নেই। অরু নিয়েই থাকো।”
ইরা ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল। সাদাদ ইরার পেছনে ছুটতে ছুটতেই রামির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে ভুললো না। রামি ভাবলেশহীন বসে রইলো। তার অভিব্যক্তি বলছে “পারলে কিছু করে দেখাও। অরু আমার ঘরেই থাকবে”।
রাতে ঘুমাতে গিয়ে অরু আর রামির মাঝে বাঁধলো আরেকদফা ঝগড়া। দুজনেই বিছানার ডানদিকে ঘুমাবে। অরু নিজের জায়গা ছাড়তে নারাজ। বলল,

“তুমিই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো। আমি জায়গা ছাড়বো না। তুমি বাঁ পাশে যাও।”
ত*র্কা*ত*র্কি শেষে পরাজিত হয়ে বাম পাশেই শুতে হলো রামিকে। চোখ বুজে এপাশওপাশ করলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই ধীরে ধীরে অরুর দিকে চেপে এলো। অরু ঝট করে চোখ খুলে তাকালো। কিছু বলতে নিতেই রামি অতি দ্রুত দুহাতে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে বলল,

“কথা বলিস না অরু। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
অরু ছটফট করে বলল,
“আমি অসুস্থ।”
“তো? আমি কি তোকে মা*র*ধ*র করছি?”
অরু আর কথা বাড়ালো না। চোখমুখ খিঁচে চুপ করে রইলো।

বাড়িওয়ালা চাচা সুহার ফ্ল্যাটে এলেন। বাড়ি ভাড়া তো ক্লিয়ার। সুহা বুঝতে পারলো না তিনি হঠাৎ কী মনে করে এসেছেন। ভদ্রতা করে ভদ্রলোকের জন্য চা বানাতে যেতে নিলেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“জি চাচা, আপনার জন্য চা বানাতে।”
তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন,
“চা বানাতে হবে না। তুমি বসো।”
সুহা একটা চেয়ার টে*নে বসলো। বাড়িওয়ালা গম্ভীর হয়ে বললেন,

“তুমি দু-বছর এখানে থাকছো। তোমার স্বামী প্রবাসী। কিন্তু ইদানীং আমার চোখ অন্যকিছু দেখছে। বাইরের মানুষ এসে তোমার জানালা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকে।”
সুহা বুঝে গেল উনি কার কথা বলছেন। তড়িঘড়ি করে বলল,
“চাচা আমি উনাকে চিনি না। উনি কেন দাঁড়িয়ে থাকেন, আমি জানিনা। আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না।”
লোকটি নেহাত ভদ্র বলে ঠান্ডা গলায় বললেন,

“সম্পর্ক আছে কী নেই সেটা তুমি জানো। আমি সেদিনও তোমাকে নিচে নেমে ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখেছি। সাথে আরেকটি মেয়েও ছিল। শোনো, এসব রাজনীতি করা ছেলেদের সাথে মিশবে না। এরা ভালো হয়না। উপরে সবাই নিজেকে ভালো দেখায়। তাছাড়া তোমার স্বামী আছে। তোমাকে দিয়ে এমন কিছু আমি আশা করিনি। দ্রুত বাসা ছেড়ে দিও।”
“চাচা আমার কথা..

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ১৭

সুহাকে কথা সম্পন্ন করতে না দিয়ে তিনি হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন।
“আর কোন কথা বলো না।”
বলে অপেক্ষা করলেন না। দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। সুহার সমস্ত রা*গ গিয়ে পড়লো মিঠুর উপর। তার জন্যই এখন বাসা ছাড়তে হচ্ছে। শুধুই কি বাসা ছাড়তে হচ্ছে? নিজের সম্মানে আঁচ লাগেনি!

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ১৯