অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৬

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৬
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

আঁধার ছাপিয়ে চমৎকার এক কাক ডাকা ভোর এলো। ওম পেয়ে গভীর নিদ্রায় থাকা অরুর ঘুম ভাঙলো রামির কোমল ডাকে। এক হাতে আলতো করে অরুর চুল কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ডাকলো,“অরু, উঠবি না? ক্লাস আছে তো তোর।”
অরু নড়েচড়ে ফের মুখ ডুবিয়ে দেয় সুঠাম দেহী রামির বুকে। জড়োসড়ো হয়ে দু-হাতে গলা পেঁচিয়ে রাখে। রামি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।

এই যে অরু তাকে কাছে টানলো, অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত উপহার দিল তাকে, এতেই বড্ডো সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। ইচ্ছে করছে না নিষ্ঠুরতা করতে। অরুর এত সুন্দর ঘুম নষ্ট করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ডাকতে হচ্ছে। ক্লাস এটেন্ড না করতে পারলে পরে তার উপরই রা*গ ঝাড়বে। তাই রিস্ক নিলো না রামি। মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলো,“অরু, এ্যাই অরু।”
অরু ঘুমঘুম চোখে চাইলো। দৃষ্টি ক্ষীণ করে রামির মুখে নজর বুলিয়ে শুধালো, “কী হয়েছে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রামি ঠোঁট প্রশস্ত করে অরুর নাক টিপে বলল,“ভোর হয়েছে খুকুমণি। এবার উঠুন, ক্লাস আছে আপনার।”
অরু হাই তুলে ঠোঁট উল্টে বলল,“আজ যেতে ইচ্ছে করছে না। আমার ঘুম পুরো হয়নি।”
রামি মিটিমিটি হেসে বলল,“কেন ঘুম হয়নি?”

অরু চট করে সরে গেল রামির কাছ থেকে। মুহূর্তেই তরতর করে তার লজ্জা বাড়লো। রামিটা খুব খা*রা*প। শুধু তার পেছনে লেগে থাকা। এই যে এখন কেমন লজ্জায় ফেলে দিল!
রামি ভুরু নাচিয়ে শুধালো,“কেন ঘুম হয়নি? বললি না তো?”
অরু ঝটপট বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে হাঁটা ধরলো। মৃদু শব্দ করে বলল,“তুমি একটা অ*স*ভ্য।”
রামি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বলল,“তুই অ*স*ভ্য হতে বাধ্য করেছিস।”

অরু ঠা*স করে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। আয়নায় চোখ পড়তেই লজ্জা মিশ্রিত হেসে দুহাতে মুখ ঢেকে নিলো। গতরাত ছিলো তার জন্য অপ্রত্যাশিত। আচানক দু’জনের কাছে আসা। অরু সময় নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। রামি ততক্ষণে ঘুমে বিভোর। একপলক শুভ্র মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে টুপ করে অধর ছুঁইয়ে দিলো রামির ওষ্ঠদ্বয়ে। সময় ব্যয় না করে ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ইরা রান্নাঘর থেকে চা হাতে বের হলো। সাদাদ রোজ ফজরের নামাজ শেষে চা খায়, এটা তার অভ্যাস। ইরা চা বানাতেই এসেছিল। অরুকে চো*রে*রে মতো রামির ঘর থেকে বের হতে দেখে বলল,“এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস অরু?”

অরু ধপ করে থেমে গেল। পা ঘুরিয়ে ইরার দিকে তাকালো। মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলল,“ক্লাস আছে ভাবি। তাই তাড়াতাড়ি উঠতে হলো।”
হঠাৎ ইরার চোখ পড়লো অরুর বাঁ ঘাড়ের উপর। মিটিমিটি হাসছে সে। অরু ইরার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকালো। মুহূর্তে কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ওড়না টে*নে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বলল,“আমি আমি আসছি।”
ইরা চা*পা হেসে বলল,“ঠিক আছে।”

অরু এক ছুটে দরজার বাইরে বেরিয়ে চোখমুখ খিঁচে ফেললো। ইশ! ইরা ভাবি কেমন করে তাকালেন। অতিরিক্ত লজ্জায় রামিকে মনে মনে দো*ষা*রো*প করলো সে। সব দো*ষ রামির। তার কারণেই অরুকে সকাল সকাল অস্বস্তিতে পড়তে হলো। বাসায় এসে বেল দিতেই বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন। অরু ভেতরে ঢুকে গেল। আজ নাস্তা বুয়া বানাবেন। অরু ধীরেসুস্থে গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে বের হলো। নাস্তা করে একেবারেই বের হবে। মিঠু নাস্তার অপেক্ষা করলো না। তার তাড়া থাকায় বেরিয়ে গেল। ইলেকশনের সময় খুব কম। আজ মিছিল তাছে। তাড়া দেখিয়ে নাস্তা না করেই বের হলো। অরু নাস্তা করে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই তার সামনে এসে বাইক থামলো। রামি মুচকি হেসে বলল,“ওঠ।”

অরু দ্বিরুক্তি করলো না। বাইকে উঠে রামিকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে বসলো। অরুকে নামিয়ে দিয়ে রামিও বাইক স্ট্যান্ড করে দাঁড়ালো। অরু যেতে নিতেই রামি ওঁকে হাত ধরে থামিয়ে দিল। লোকসমাগমের মাঝেই সময় না নিয়ে অরুর ললাটে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বলল,“যা।”
অরু সাবধানী চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে রামিকে চোখ রাঙালো।
“এটা তোমার বেডরুম? সবাই দেখছে।”
রামি ভাবলেশহীন জবাব দিলো,

“তো? আমার বউ, আমি চুমু খাবো, জড়িয়ে ধরবো, যা ইচ্ছে করবো। তাতে মানুষের কী?”
“তুমি কিন্তু নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”
রামি দূরত্ব ঘুচিয়ে মাথা ঝুঁকে তাকালো অরুর পানে। চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বলল,“এই নির্লজ্জ মানুষটাকেই তোর সহ্য করতে হবে, অরু।”
অরু ভড়কালো না। চোটপাট দেখিয়ে রামিকে পেছনে ফেলে এসে নিজেও আড়ালে হাসলো। রামির পাগলামোগুলো তাকে আনন্দ দেয়।

সুহা আজ দেরি করেই ঘুম ছেড়ে উঠলো। অবনি অফিসের জন্য তৈরি। সুহাকে দেখতেই বলল,“এত করে ডাকলাম উঠলিনা। দ্রুত তৈরি হয়ে নে। দুজন নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়বো।”
সুহা ধীর স্বরে জবাব দিলো,“আমি আজ অফিস যাবো না। তুই যা।”
অবনিকে উদ্বিগ্ন দেখালো। ত্রস্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে শুধলো,“শরীর খা*রা*প করছে?”
সুহা হেসে ফেললো। বলল,“আমি ঠিক আছি। আজ অন্যকাজে যাবো।”

“কী কাজ?”
জানতে চাইলো অবনি।
সুহা আনমনে জবাব দিলো,“এসেই বলবো।”
অবনি আর কথা বাড়ালো না। সুহা যখন বলেছে তখন নিশ্চিয়ই বলবে। সে নাস্তা করে বেরোনোর আগে বলে গেল, “নাস্তা করে বের হবি। আমি যাচ্ছি।”

সুহা মিষ্টি করে হাসলো। গতরাতে একটা সিদ্ধান্ত নিলো। সে বাড়ি যাবে। একটা সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছে। পরিবারের মানুষগুলোর দোয়া নেওয়া উচিত। কেউ তার খোঁজ নেয়নি রাগে, অভিমানে। তাই বলে কি সে-ও জানাবে না? পরে যদি মানুষগুলো কখনো অভিযোগ করে বসে ‘তুই আমাদের জানিয়েছিস?’ বলে। সুহা জানে একটা ঝড় বয়ে যাবে তার উপর। তবুও সে দমে গেল না। সবাই তাকে মা*রু*ক, কা*টু*ক, সে এবার বাড়িমুখো হবেই। নাস্তা করে অবনির মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো।

বহুদিন পর প্রিয় বাড়িটির সামনে দাঁড়াতেই বুক কেঁপে উঠলো সুহার। হাত-পা কাঁপছে। পা চলছে না। শক্ত খুঁটির মতো আটকে রইলো এক জায়গায়। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দে বেড়ে চলেছে, ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছে শরীর, মন দুটোই। সুহা চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টা*ন*লো। আ*ত*ঙ্ক নিয়ে বাড়ির গেটে প্রবেশ করলো। কাঁপা হাতে দরজায় বেল দিয়ে অপেক্ষা করলো।

কিছুক্ষণের মাঝে দরজা খুঁলে গেল। একজন ব্যস্ত নারী হাতে খুন্তি নিয়ে এসে দরজা খুললেন। বাইরে সুহাকে দেখেই ভদ্রমহিলার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। সুহা ফুঁপিয়ে উঠলো। চাইলেও অধিকার খাটিয়ে সামনের মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না। অনেকটা সময় পেরোনোর পর মামী একবার পেছনে তাকালেন। বসার ঘরটা ফাঁকা। দমকা হাওয়ার মতোই ঝাপিয়ে পড়ে সুহাকে ঝাপটে ধরলেন তিনি। নিজের বুকে সুহার ছোট্ট মাথাটি চেপে ধরে রুদ্ধশ্বাসে বললেন,“এতদিন পর আমার কথা মনে পড়লো তোর?”

সুহা নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না। সে-ও হামলে পড়লো। হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো মামিকে ধরে। মামি সাবধানী গলায় সুহাকে বললেন,“আস্তে, তোর মামা আছেন ভেতরে। তোকে দেখলেই ক্ষে*পে যাবেন।”
অতঃপর আফসোসের সুরে বললেন,“কেন যে ওই ছেলেটার সাথে নিজেকে জড়ালি!”
সুহা মুখ খুললো।

“আমি অনিককে বিয়ে করিনি মামি।”
মামির চোখেমুখে হাজারও প্রশ্ন জমা হলো। তিনি দ্রুত সুহাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন,“বিয়ে না করে কীভাবে ছিলি?”
সুহা কান্নামাখা চোয়ালে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,“আমি ওঁর সাথে ছিলাম না মামি। ওঁ পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে নিয়েছে। আমি ভার্সিটির এক বান্ধবীর বাসায় ছিলাম। ওখান থেকে আলাদা বাসায় উঠেছি।”
মামি বললেন,“তুই আমাদের কাছে ফিরে এলি না কেন?”
সুহার অসহায় কন্ঠস্বর,“কীভাবে ফিরতাম? তোমাদের মানসম্মান ডুবিয়ে কোন মুখ নিয়ে ফিরতাম? তাই আর লজ্জায় ফিরিনি।”

মামির চোখমুখ উজ্জ্বল হলো। ভদ্রমহিলা ভীষণ সরল মনের। সুহাকে বড়ো মেয়ের মতোই পেলেপুষে বড়ো করেছেন। কথায় আছে না, পোষা পাখির জ্বালা বেশি। সুহার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসার কমতি রাখেন নি। নিজের সন্তানদের যেভাবে আগলে রেখেছিলেন, সুহাকেও তেমনই আগলে বড়ো করেছেন। মাঝখান থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সুহা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে দূরে সরে গেল। বিয়ে করেনি জেনে মামি একবুক সাহস নিয়ে সুহাকে ভেতরে ঢুকালেন। হাঁক ছেড়ে সব ছেলেমেয়েকে ডাকলেন।

“কই রে তোরা? দেখা যা কে এসেছে।”
মায়ের হাঁক শুনে একে একে সবাই বেরিয়ে এলো। সাথে সুহার মামাও বেরিয়ে এলেন। সকলেই সুহাকে দেখে থমকালো। মামার চোখে চোখ পড়তেই ভয়ে জমে গেল সুহা। এতক্ষণ ধরে যতটুকু সাহস সঞ্চয় করা ছিলো, এখন তার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই। তিনি সুহাকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে উঠলেন,“এই মেয়ে এখানে কী করে? আমার বাড়িতে ঢোকার সাহস পেল কোথায়?”

কেঁপে উঠলো সুহা। মামি তাকে আড়াল করে স্বামীর সামনে এসে দাঁড়ালেন। নরম গলায় বললেন,“আগে কথা তো শুনুন।”
খেঁকিয়ে উঠলেন মামা,
“কী শুনবো? আমার কিচ্ছু শোনার নেই। এই বাড়ি ছাড়ার আগে কেউ কি আমার কথা শুনেছিল?”
“মেয়েটা ছোটো মানুষ, না জেনে অল্প বয়সে একটা ভুল করে ফেলেছিল।”
“ছোটো মানুষ? ছোটো হলে এত বড়ো স্পর্ধা দেখাতে পারতো না। যেদিন ওই ছেলেটার জন্য বাড়ি ছেড়েছিল, সেদিনই আমার ভাগ্নী মা*রা গিয়েছে। এই মেয়েকে বের হতে বলো।”

“আপনি আগে ঠান্ডামাথায় আমার কথা শুনুন।”
“কী শুনবো তোমার কথা? তুমি ওঁর হয়ে সাফাই দিতে এসো না।”
সুহা মামা-মামির কথার মাঝখানে এসে মামার পায়ের সামনে পড়লো।
“আমায় ক্ষমা করে দিন মামা। খুব বড়ো অন্যায় করেছি আমি। আমি অনিককে বিয়ে করিনি মামা।”
মামার কপালে ভাঁজ পড়লো।

সুহা পরপরই বললো,“আমি অনিককে বিয়ে করিনি, আর লজ্জায় বাড়িও ফিরতে পারিনি।”
মামা সূঁচলো চোখে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে প্রশ্ন করলেন,“ছিলি কোথায়?”
সুহা মুখ তুলে চাইলো। ভয়ে ভয়ে জবাব দিল,“আমার বান্ধবী অবনির বাসায় ছিলাম। সেখান থেকে আলাদা বাসা নিয়েছি। এখন আবার ওদের বাসাতেই থাকি।”

“কেন? তোমার প্রেমিক বুঝি ধোঁ*কা দিয়েছে?”
সুহা মাথানিচু করে নিলো। নিচু স্বরে বলল,“ওঁর সিদ্ধান্তের কারণেই আজ আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। দুজনই খুব বড়ো পা*প থেকে মুক্তি পেয়েছি।”

মামি অনুনয় করে বললেন,“আর রাগ করে থাকবেন না। ক্ষমা করে দিন না মেয়েটাকে?”
“প্রশ্নই আসে না। সেদিন আমার কথার মূল্য ছিলো না যার কাছে, তাকে ক্ষমা করা অসম্ভব।”
“মেয়েটা তো ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে।”
“ওই ছেলে ধোঁ*কা না দিলে কখনোই ফিরতো না। এখন ফিরেছে কেবল নিরুপায় হয়ে।”

বলে মামা নিজ কক্ষে চলে গেলেন। সুহা কান্নায় ভেঙে পড়লো। মামাতো ভাই-বোনেরা এবার সাহস করে এগিয়ে এলো। মামি সহ সকলেই তাকে তুলে দাঁড় করালো। সুহা কাঁদতে কাঁদতে বললো,“আমি আবার তোমাদের দেখতে আসবো মামি। আজকের মতো বিদায় দাও।”

মামি আৎকে উঠে বললেন,“কোথায় যাবি তুই? এখানেই থাকবি। তোর মামার রাগ ধীরে ধীরে কমে যাবে। এখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার মতো ভুল করিস না।”
মামি আর কাজিনরা জোরপূর্বক রেখে দিল সুহাকে। অবনিকে ফোন করে জানিয়ে দিল সে বাড়িতে এসেছে। আজ আর ফিরবে না।

অবনি ভারি অবাক হলো। তবে অপেক্ষা করলো সুহা ফেরার। সামনাসামনি নাহয় সব শুনে নেবে।
রাতে মিঠুর ফোন পেতেই সচকিত হয় সুহা। পাশে ঘুমন্ত মামাতো বোনকে একবার দেখে নিয়ে সাবধান হয়ে কল রিসিভ করলো।

ফোন কানে তুলতেই মিঠুর সুদৃঢ় কন্ঠস্বর ভেসে এলো,“বারান্দায় আসুন সুহা, জলদি।”
সুহা চোখ বুজে নিলো। মিঠুর কন্ঠে তীব্র অধিকারবোধ। সুহা শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে মন্থর কন্ঠে বলল,“আমি অবনির বাসায় নেই, বাড়িতে এসেছি।”

মিঠুর ধারাজ কন্ঠ,“জানি, অবনি বলেছে। আমি আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। জলদি বারান্দায় আসুন।”
চমকে উঠলো সুহা। শিরদাঁড়া বেয়ে স্রোত বয়ে গেল। এই ঠান্ডার মাঝেও দরদরিয়ে ঘাম ছুটলো। নাক আর ঠোঁটের উপরিভাগে চিকন ঘাম দিয়েছে। গলা রোধ হয়ে আসছে। তবুও সুহা ঠেলেঠুলে শব্দগুচ্ছ বের করলো। আ*ত*ঙ্কি*ত গলায় বলল,“প্লিজ এখান থেকে চলে যান। মামা দেখলে স*র্ব*না*শ হয়ে যাবে।”

মিঠুর মোহাচ্ছন্ন কন্ঠস্বর,“আমার স*র্ব*না*শ তো করেছেন আপনি, সুহা।”
সুহা অনুনয় করে বলল,“প্লিজ চলে যান!”
“যাবো, আপনি তবে নিচে আসুন।”
সুহা আকুতি কতে বলল,“এখানকার পরিস্থিতি খুবই গরম। আমি এক মুহূর্তের জন্য বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারবো না।”
মিঠু কিছু একটা বুঝে বলল,“তবে একবার বারান্দায় আসুন। দেখেই চলে যাব।”

সুহা সাবধানী চোখে আরো একবার মামাতো বোনকে দেখে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। সুস্পষ্টভাবে সুহার চেহারা বোঝা না গেলেও মিঠুকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছে সুহা। লোকটাকে দেখেই ভেতরে তড়াক করে উঠলো। ভীষণ একটা ধাক্কা লগলো বুকে। কেমন এলোমেলো অবস্থা। তবুও কেমন মাতাল করা হাসি ঠোঁটে এঁটে রেখেছে। সুহা নিচুস্বরে ফোন কানে চেপে বলল,“এবার বাসায় চলে যান। আপনাকে উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে।”

মিঠু গম্ভীর গলায় বলল,“আমার এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী সুহা। দ্রুত আমার দায়িত্ব নিন। নয়তো কিছু অনর্থক হয়ে যাবে।”
সুহা চাপা হাসলো যেন। মিনমিনে স্বরে সুধালো,“কী অনর্থক হবে?”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৫

মিঠুর তেজহীন ব্যাকুল স্বর,“আমি বেসামাল হয়ে পড়লে আপনারই ক্ষ*তি সুহা। তখন সময়ের আগেই বুকের খাঁচায় আটকে ফেলবো। বলুন না কবে আপনি আমার হবেন?”

অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী সিজন ২ পর্ব ২৭