অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৪

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৪
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_এভাবে আমাকে কি*ডন্যাপ করে আনার মানে কি, ডাক্তারসাহেব?
আমি যখন চোখ খুললাম দেখলাম কপালে জলপট্টি। পাশে তাকিয়ে দেখি আঁধার ফোনে কথা বলছে। ফোন রাখতেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম কথাটা

_নিজের বউকে কেউ কি*ডন্যাপ করে নাকি!ষ্টু*পিড !বউ অসু*স্থ তাই সেবা করে সু*স্থ করার জন্য নিজের কাছে এনেছি।
তার ধমকে আমি ভ্যা*বাচেকা খেলাম। একে তো এখানে এভাবে এনেছে আবার মেজাজ দেখাচ্ছে! তারপর সে জ্বর চেক করে দেখলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_আগের তুলনায় এখন অনেক কমেছে।উঠো ফ্রেশ হও দ্রুত।এরপর খাবার খেয়ে মেডিসিন নিবে।
উনি গম্ভী*র গলায় বললেন। এবার আমার রাগ লাগলো। আমি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম। বললাম
_আপনি আমাকে এটা কোন জায়গায় এনেছেন? আমি বাসায় যাবো। ভাইয়া চিন্তা করছে আমার জন্য।
সে আমার কো*মড় জড়িয়ে তার দিকে টেনে নিলেন,
_আমার বউ এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে, তোমার ভাইয়া আমি জানিয়ে দিয়েছি।তাই চিন্তা মুক্ত থাকবে সে।
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

_বউ তাও আবার ছ’মাস এর তাইনা, ডক্টর এ.আর.সি?দেখি ছাড়ুন,, কেন করছেন এসব!কি লাভ পাচ্ছেন? আপনি তো চেয়েছেন আমি যেন চলে যাই তাহলে?ছাড়ুন আমাকে।নতুন করে আর কি চান আপনি!এখুনি আমি চলে যাবো এখান থেকে। আটকে রাখতে পারবেন না আপনি।
সে তো ছাড়লোই না বরং আরও তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী স্বরে বললেন,

_তুমি বুঝো না আমি কী চাই?নাকি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করছো?বিয়ের রাতের বলা কথাগুলোর প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি?আমার অনুভূতির কোনো মুল্য নেই তোমার কাছে?
শুনো মেয়ে,, আমার তোমাকে চাই। তোমায় সারাজীবন এর জন্য নিজের করে রাখতে চাই।পারছি না তোমার অনুপস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে।তাই তোমাকে লাগবেই আমার।তুমি আমার কাছে থাকতে না চাইলে বেধে রাখবো। আজীবন ব*ন্দী করে রাখবো।
তার কথায় আমি অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে। কি বলছেন উনি!উনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন তাহলে আমি দরকার কেন!

_বললেই হলো বন্দী করে রাখবো! আমি থাকলে তো রাখবেন! এখান থেকে এখুনি চলে যাবো।কোনো ইচ্ছে নেই এমন রাগী কন্ট্রোল লেস মানুষের সাথে থাকার। থাকবোনা আপনার মতো মানুষ এর কাছে। আর আপনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে আবার কেন দরকার! কয়টা লাগবে আপনার!
আমার কথায় সে চোখ মুখ শক্ত করে বললেন,

_তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। এতে তোমার ইচ্ছা থাক বা না থাক আই ডোন্ট কেয়ার।আর হ্যাঁ, আমার শুধু তোমাকেই লাগবে।আর কাউকে না। কিন্তু তুমি তা বুঝবা কিভাবে! তোমার তো মাথায় সব কাদা।কিছুটা গোবর থাকলে তাও কাজে লাগানো যেত।
এ কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি আহাম্মক এর মতো দাড়িয়ে আছি।উনি কি আমাকে ভালোবাসে!আমি এবার সত্যিই কনফিউজড!!

আলো নিজের রুম গোছাচ্ছিল। এতক্ষণ বেকার সমাজ তার রুমের বেহাল অবস্থা বানাই ফেলছে।তার মা ঠিকই ছিল। আধারকে বাসায় আনার জন্য মিথ্যে বলেছিল সে। হঠাৎ দরজা লক করার শব্দে সে পিছনে ফিরে তাকালো।ভোর মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
_আরে তুমি এখন এলে যে?তোমার তো কাল আসার কথা ছিল!
ভোর আলোর কাছে এসে তার কাধে হাত রেখে বলল,

_তোমায় ভীষণ মিস করছিলাম তাই একপলক দেখতে চলে এলাম। তোমায় কিন্তু লাল জামায় ওড়না ছাড়া ভীষণ গরম সুন্দরী লাগছে!
ভোরের কথা আলোর বোধগম্য হতেই সে চোখ বড় বড় করে ফেললো।এক ধাক্কায় তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো
_ছি!কথার কি ছিরি তোমার!বিদেশের হাওয়া গায়ে লাগলে এমনই হয়।দূরে থাকো
_আশ্চর্য, ছি বলছো কেন? আমি বউকেই বলছি। অন্য মেয়েদের তো নয়!
_অন্য কাউকে বলে দেখো শুধু একটা বার,তোমায় খুন করে ফেলবো আমি।

ভোর এবার আলোর কাছে এসে তাকে নিজের কাছে একদম টেনে নিলো।আলো তার এই আচরণে কিছুটা নড়েচড়ে উঠে ।ভোরের স্পর্শ যেন তাকে শিউরে তুলছে।ভোর আলোর নাকে নিজের নাক ঘসে দিয়ে বলল,
তোর এতটা মায়াভরা হাসির মাঝে কি আমি আছি?
নাকি পুরোটা জুড়েই কেবল মাদকতা?
যদি ছুঁয়ে দিই তোর ঠোঁট?
চোখ ভাঙা ঘুমে ভালোবাসবি? প্রচন্ড?
নাকি কেবল ভালোবাসার অবরোধ?
আলো অস্পষ্ট স্বরে বলল,

_এখন অবরোধ,,
_আমি এই অবরোধ আজ মানতে পারলাম না, প্রিয়তমা।
একথা বলে ভোর তার প্রিয়তমার শুষ্ক অধর যুগল তার অধরের মাঝে মিলিয়ে দিলো।

আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি আঁধার রুমে খাবার নিয়ে এসেছে।আমাকে দেখে বললো,
_এসো, বসে দ্রুত খাবার কমপ্লিট করো।
_আমি খাবো না।বাসায় যাবো। আমাকে ওই বাসায় দিয়ে আসুন।
আমার কথায় সে বসা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। যা দেখে আমি কিছুটা ভরকে গেলাম। সে আমার বরাবর দাড়িয়ে বললো,

_ত্যাড়ামী করছো!ওকে ফাইন।খাবার খেতে হবে না। আসো আমার আদর খাও। তাতেই পেট ভরে যাবে।
একথা বলেই আমার গায়ের ওড়না ধরতেই আমি হকচকিয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,
_লাগবেনননা।আমি খাবার খাবো। আমার খিদে পেয়েছে।
বলেই আমি দ্রুত সোফায় বসে প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।এই মানুষ ভীষণ ভয়ংকর হয়ে গেছে। সাংঘাতিক রকমের কথাবার্তা বলতেছে।আমার দ্রুত খাওয়া দেখে সে বলে উঠলো,

_আজকাল ভালো মানুষের দাম নেই।চেয়েছি তোমায় বুঝিয়ে ভাইয়ের বাসা থেকে নিয়ে আসবো কিন্তু তুমি তো ঘাড় ত্যাড়া। তোমার মতো ত্যাড়া কে কিভাবে লাইনে আনতে হয় তা ভালো করেই জানা আছে আমার।এবার এই মেডিসিন গুলো খাও।

তার কথা শুনে আমার গা জ্বলে উঠলো। ব্যাটা শয়তান, আমাকে একা পেয়ে খুব হুকুম চালাচ্ছে।একবার এখান থেকে পালাতে পারি তারপর তোর ত্রিসীমাও আর ঘেঁষবো না। শালা লেজ কাটা বাদর, পরীমনির আট নাম্বার জামাই,মিথিলার তিন নাম্বার প্রেমিক। দুনিয়ায় সব গালি তোর।
খাবার শেষে উনি সব জিনিসপত্র নিয়ে রুম ত্যাগ করলেন। আমি দরজায় গিয়ে দেখি লক করা। কেমন লাগে এভাবে বন্দী করে রাখার মানে কি!আশ্চর্য!!

বিকেলের দিকে আঁধার রুমের দরজার লক খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। বিছানায় তাকিয়ে দেখলো ঐশী গুটিসুটি হয়ে ঘুমোচ্ছে।এতো বড় বিছানায় তাকে নিতান্তই ক্ষুদ্র মানবীর মতো লাগছে।একদম ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো। সে এসে তার মুখ বরাবর বসলো, কপালের অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুজে দিলো।তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,

মায়াদেবী,
তুমি তো জানো না,,সেই কবেই আমার হৃদয় জুড়ে নিজের অজান্তেই অধিপত্য বিস্তার করছো তুমি!
মায়াকন্যা,
আমি তোমার ঠিক ততটাই কাছে থাকতে চাই। যতটা কাছ থেকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তোমায় আমি আজীবন দেখতে পারি।
বাতাসে তোমার ঠোঁটের উপর আছড়ে পড়া অবাধ্য কুন্তল সরিয়ে তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে পারি।
কোমললতা,

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৩

নেবে অতটা কাছে; তোমার?
আমার যে প্রচন্ড ইচ্ছে হয়; তোমায় ভীষণ ভাবে ভালোবাসার।
প্রেয়সী
ভালোবাসি; বলে দিলাম আরো একবার।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৫