অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৫

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৫
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে কারো নিশ্বাস মুখজুড়ে আছড়ে পড়ছে।চোখ খুলে দেখি আঁধার আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমার সাথে চোখাচোখি হতেই ঝটপট উঠে দাড়ালেন।আমি উঠে বসতেই তিনি বললেন,

_বোরখা পড়ে রেডি হও। বেরোবো আমি।
তার কথা বিপরীতে বললাম,
_আমাকেও যেতে হবে?
_বোরকা পড়তে বলেছি নিশ্চয়ই তোমায় গাছে চড়ার জন্য নয়!বদল! রুমে তুমি ব্যতীত আর কেউ নেই যে তাকে বলবো!
_আমি বাসায় যাবো। আমাকে এখন সেখানে দিয়ে আসবেন। আমি আপনার সাথে থাকবো না।
একথা বলে আমি দ্রুত নিজের বোরখা পরে নিলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গাড়ি চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর উনি একটা শপিংমল এর কাছে গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলেন। আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো কিন্তু উনি ডোর লক করে রেখে গেলেন।কেমন লাগে!ভেবেছিলাম তার চোখ ফাকি দিয়ে পালাবো কিন্তু তার সব রাস্তা উনি বন্ধ করে গেছেন।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর সে কতগুলো শপিংব্যাগ নিয়ে ফিরলেন। আচ্ছা উনি কি আমাকে ঐ বাড়িটায় ব*ন্দী করে রাখবে বলে এতো ব্যবস্থা করছেন। তার মানে উনার সবটাই অভিনয়। এভাবে আর কতো জ্বালাবেন আমায়!আমি তো তাদের জীবন থেকে চলে যেতে চাইছি তাহলে কেন উনি আমার সাথে এমন করছেন! যাইহোক আমাকে এখান থেকে পা*লাতে হবে। থাকবো না আমি এই বদ লোকের সাথে।
উনি গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পূর্বেই আমি বললাম,

_দাড়ান, আমি নামবো। বমি পাচ্ছে আমার।
উনি ডোর খুলে দিয়ে নিজেও সাথে নেমে দাড়ালেন।আমি এবার নিজের করা পরিকল্পনা কাজে লাগালাম। তাকে ধা*ক্কা মে*রে দিলাম দৌড়। আমাকে আর পায় কে।উনি পিছন থেকে ডাকছিলেন কিন্তু আমি তাকে সম্পূ*র্ণ অগ্রা*হ্য করে ছুটে পালালাম।অনেক টা যাওয়ার পর তার শব্দ আর শোনা যায় নি।

এশার আযান দিচ্ছে। আমি কিছুটা দূর পর্যন্ত এসে একটা গলির মধ্যে ডুকে লু*কিয়ে পড়লাম। এই গলিটা অনেক নিরিবিলি। রাতের অন্ধকারে আরও বেশি নিরিবিলি মনে হচ্ছে
এরকম জায়গায় আমার আগে কখনো আসা পরে নি। গলির সামনের কয়েকটি বন্ধ দোকান ফেলে আসার পর দেখলাম গলিতে ঘরবাড়ি নেই একদম। কেমন যেন আ*তংক কর জায়গা।আমি পনেরো মিনিট যাবত হাটলাম। গালিটাকে আমার তেমন সুবিধার লাগছিলো না। তাই বেড়িয়ে আসতে যাবো তখন ই ঘটলো বিপত্তি।

বের হবার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। কোন চিপা রাস্তা থেকে কোনটায় গেলাম মনে পড়ছে না।এলোমেলো লাগছে সবটা। নিজের চিনা এলাকা হলে সুবিধা থাকে।একদম অপরিচিত জায়গায় আমি পালিয়ে ঠিক করিনি এখন বুঝতে পারছি।সামনে কোনো মানুষ পেলে জিজ্ঞেস করা যেত। কিন্তু এখানে তো কোনো মানুষের চিহ্ন ও নেই।আরও কতটুকু যাওয়ার পর ও কোনো লাভ হয়নি। হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে তাই একটু দাড়িয়ে জিরিয়ে নিলাম।

আবার হাটতে যাবো তখন টের পেলাম দুটো কুকুর আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।ছোট বেলা থেকেই কুকুর প্রাণী টাকে আমি ভীষণ ভাবে ভয় পাই। আর এখন তো দুইটা।
কোন কিছু না ভেবেই দিলাম দদৌড়। কুকুর গুলো ও আমার পিছনে পরে গেলো। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি কিছু একটার সাথে উস্টা খেয়ে নিচে পড়লাম। আজ হয়তো আর র*ক্ষে নেই। কুকুর কামড় খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে যাবে।ঠিক তখনই রাস্তার পাশের দোকান খোলার শব্দ পাই। তাকিয়ে দেখি তিনজন লোক। দুই জনের হাতে সিগা*রেট। তখন খেয়াল করলাম কুকুর গুলো নেই পিছনে।

সামনের লোক গুলো কে আমার মোটেই সুবিধার মনে হয় নি।বি*শ্রী তাদের চাহনি।আমাকে পড়া থেকে উঠতে দেখে তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো
_মামা,আজকে কি ভাগ্য! পাখি একদম উইড়া উইড়া আমাগো এলাকায় আসছে!
তার কথার ধরনে বুঝতে পারলাম আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে। তার ইংগিত যে খুব খারাপ তা বুঝতেও সময় লাগলো না আমার।

_কি গো ফুলটুসি!ঐ খানে দাড়াইয়া কি ভাবতেছো!আমাগো কাছে আসো। আমাগো আনন্দ দেও।এভাবে বোরকা পইড়া আছো কেন!আমরা খুইলা দিমু তাই!
এইকথা বলেই একজন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
এবার আমার ভীষণ ভয় করছে!আমার নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে!কেন যে পালিয়ে নিজেকে এরকম জঘন্য পরিস্থিতিতে ফেললাম! তার কাছে থাকলে আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হতো কিন্তু এখন তো! আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো।

_চলো গো সুন্দরী! তোমারে দিয়া আজ তৃপ্তি মিটিয়ে ছাড়মু নে
একথা বলেই লোকটা আমার হাত ধরতে যাবে তখনই আমি হাতে মুঠোয় নেয়া ধূলো বালি গুলো তার চোখে মেরে আবার ও ছুটে পালালাম।
_ঐ শালিরে ধর।ওর আজকে কি হাল যে করমু।শালি আমার লগে বাটপারি করে!ধর শালিরে!
আমি প্রাণ পনে ছুটছি।নিজেকে কিভাবে বাচাবো সেই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।

কিছুদূর যাওয়ার পর পিছনে তাদের আসার শব্দ আর পেলাম না।
আরেক টু সামনে যেতেই মেইন রাস্তা দেখতে পেলাম। নিজের কলিজায় এবার পানি এলো। মনে মনে আল্লাহ কে হাজার বার শুকরিয়া জানালাম।
ছুটেই রাস্তার দিকে যাবো তার আগেই একটা হাত আমায় টেনে থাপ্পড় দিলো। থাপ্পড় এর জোর এতটা ছিলো যে আমি ছিটকে পড়লাম। তাকিয়ে দেখি তিনজন লোকই দাঁড়িয়ে বিশ্রী ভাবে হাসছে। থমকে গেলাম আমি। বেচে ফেরার আশাটা মুহূর্তেই নিভে গেলো।গালের ব্যাথাকে উপেক্ষা করে আবার পালাতে গেলাম কিন্তু হলুদ রঙের শার্ট পড়া লোকটা আমার হাত ধরে ফেললো,

_এবার পালাইবি কই,ছেরি?গায়ে তেজ অনেক বেশি তাইনা? তোর তেজ আজকে ভালো মতো মিটামো দেখি কতক্ষণ থাকে এই তেজ।
আমি চিল্লাচ্ছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখানে কোনো মানুষের আনাগোনা নেই একেবারে। তাদের সাথে আর পেরে উঠলাম না। তাদের টানাটানি তে বোরখা পুরো টা খুলে গেছে। হিজাবের টানাটানি তে গলায় ও ব্যাথা পেয়েছি।কিন্তু পিনের কথা মনে আসতেই কৌশলে একটা পিন নিলাম।যেই লোকটা আমার হাত ধরে রেখেছে তার হাতের মধ্যে পিন টা দুই তিন বার ঢুকিয়ে দিতেই সে চিৎকার করে আমার হাত ছেড়ে দিলো।সেই একইভাবে পিছনে ধরে রাখা দুজন কেই পিনের আঘাত করে নিজেকে ছাড়ালাম তাদের কাছ থেকে।

এবার দ্রুত ছুটে রাস্তায় উঠলাম। পিছনে ফিরে দেখি হারামি গুলো আবারও আসছে।আমি সামনে পিছনে না ভেবেই আবার ছুটলাম। হিজাবের পিন গেথে যাওয়ার আর চুল খুলার কারণে ছুটতে অসুবিধা হচ্ছিল তাই ছুটতে ছুটতেই হিজাব খুলে গলায় পেচিয়ে নিলাম। আরও কয়েক টা পিন হাতে রাখলাম আক্রমণ করার জন্য।
পিন হাতে সামনে ছুটতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পিছিয়ে গেলাম।আবার ধরা পরলাম। আজ কি তবে সম্মান এই পশুর জাত এর কাছেই বিসর্জন দিতে হবে! তবে আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো নিজেকে বাচানোর!

পিন দিয়ে আক্রমণ করার জন্য সামনে এগিয়ে তাকাতেই ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে সামনে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টিকে দেখে নিজের জান ফিরে পেলাম। কোনো কিছু না ভাবাই ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম সামনে থাকা ব্যক্তিকে।
আঁধার অনেকক্ষন যাব ৎ ঐশী কে খুজেছে। একবার এই দিকে খুঁজে সে পুনরায় আবার এসেছে।কারণ এখানের গলিগুলো খোঁজ করে নি।একটা গলিতে খোঁজ করার পর সে আরেকটা তে যাবে তার পূর্বেই ঐশী কে এই অবস্থায় দেখে তার নিঃশ্বাস আটকে যাবার অবস্থা।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৪

পিছনের লোকগুলিকে দেখতেই ঐশীর অবস্থার কারণ সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। এবার তার মেজাজ একেবারেই বিগ*ড়ে গেছে। ঐশী তাকে জরিয়ে ধরে থরথর করে কাপছে। লোকগুলো আঁধার কে দেখে পুনরায় আবার সেই গলির দিকে ঢুকে পড়লো।আঁধার ঐশী কে ছাড়িয়ে গলির সামনে গিয়ে তাদের কোনো চিহ্ন খুঁজে পেল না।রাগে নিজের গাড়িতে জোরে এক লাথি মার*লো।তবুও তার রাগ কমছে না।সামনে দাঁড়িয়ে ঐশী কে কাদতে দেখে রাগ তার আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৬