অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৬

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৬
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

_ইচ্ছে তো করছে তোমাকে ক*ষে কয়েকটা থা*প্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিতে, বেয়া*দব মেয়ে।আমি ভালো ব্যবহার করছি দেখে এই কতদিনে অতিরিক্ত পাখা গজিয়েছে তোমার!একে তো অ*ন্যায় করো আবার শাসন করলে বলো জামাই তোমার উপর অ*ত্যাচার করে।তোমাকে রোজ দিনে তিন বেলা খাবার এর সাথে থাপ্প*ড় দিতে হবে। তাহলে তোমার মতো ই*ডিয়ট কে মানুষ বানানো যাবে।

কথা গুলো একদমে বলে আমার বা*হু চেপে ধরলেন আঁধার। এতোক্ষন তার সান্নিধ্যে নিজেকে নিরাপদ মনে করলেও তার রাগা*ন্বিত চেহারা দেখে মুহুর্তেই সেই ভাবনা উবে গেল। মনে পড়লো নিজের করা ভু*লের কথা।সাথে নিজের কা*ন্নার গতিও বাড়লো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

_নিজের অব*স্থা দেখেছো!আমি যদি সময় মতো না আসতাম তখন কি হতো!কোনো উত্তর আছে তোমার কাছে??বোকার মতো পালি*য়েছো কেন আমার হাত থেকে?আমি কি তোমায় তুলে এনে খেয়ে ফেলছিলাম! তোমার এই সামান্য ভুলের কারণে আজ কি কি ঘটে যেত, ধারণা আছে তোমার!তোমার কিছু হলে নিজেকে কীভাবে ক্ষমা করতাম আমি!পাগল মেয়ে!
তার কথায় কিছুক্ষণ আগের পরিস্থিতি মনে পড়ে গেল আমার।গায়ে কা*টা দিয়ে উঠলো। শরীরে ভ*য়ংকর কাপু*নি সৃষ্টি হলো।আল্লাহ বড়জোর বাচিঁয়ে দিয়েছেন আমায়।মানুষটি সময় মতো না আসলে কি ঘটতো তা ভাবতেই রীতিমতো ভ*য় করছে!

কিন্তু যা হয়েছে এতে আমার কি দো*ষ! সব দো*ষ তো উনার।উনার কারণেই তো আমি পালিয়েছি।তারপর এই বি*শ্রীরকম ভয়া*নক পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি।কতটা মানু*সিকভাবে আ*ঘাত পেয়েছি। আমার এমন অবস্থায় কোথায় উনি সহানুভূতি দেখাবেন। কিন্তু না!শয়তান ব্যাটা আবার ও রাগ দেখাচ্ছে! থাপ্প*ড় মারার হুম*কি দিচ্ছে। এই অ*সভ্য লোকের সাথে একদম থাকব না।মনে তার প্রাক্তন প্রেমিকা রেখে আবার আমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য উঠে পরে লেগেছে! বেয়া*দব পুরুষ!!

তাই নিজের ভয় ভীতি কে উপেক্ষা করে বললাম,
_আমি আপনার সাথে থাকবো না তাই পালিয়েছি।আপনার সাথে থাকার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।
উনি আমার বাহু তো ছাড়লোই না বরং টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সীট বেল্ট লাগিয়ে বললেন,

_তোমাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। এতে তোমার ইচ্ছা থাক বা না থাক, আই ডোন্ট কেয়ার।। বলেছি না, তুমি না থাকলেও বেধে রাখবো। এমনি তেই তিন দিনে আমাকে হাফ পাগল বানিয়ে দিয়েছো আর একটু আগে তো পুরোটাই পাগল করে ছেড়েছো।তাই এক মুহূর্তও তোমাকে চোখের আড়াল করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
তার কথা শুনে মুহূর্তেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, প্রতিবাদের ভাষায় বললাম,

_এতো কিসের অধিকার দেখাচ্ছেন আপনি? আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের ছ’মাস পর ডিভোর্স হবার কথা?তাহলে এখন কেন আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইছেন না।আমার সাথে যখন এতোই সংসার করার শখ তাহলে বিয়ের রাতে আমার আত্মসম্মানহানি করে এরকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছেন কেনো? পরেরদিন তো গরম কফি ঢেলেছেন আমার হাতে!আবার সেদিন আরাফ ভাইয়া র জন্মদিন এর অনুষ্ঠানে একটা সামান্য ব্যাপার এ খারাপ ব্যবহার করেছেন আবার থাপ্পড় ও মেরেছেন!

আপনার কি মনে হয়! এতকিছুর পরও আমি আপনার মতো বদরাগী,বদমেজাজি আর অসভ্য পুরুষ মানুষ এর কাছে থাকবো? আমাকে কি এতোটাই আত্মসম্মানহীন মনে হয়????
তাছাড়া আপনার তো প্রেমিকা আছেই তারপরও আমাকে ছাড়ছেন না কেন আপনি??
আমি একনাগাড়ে এতো গুলো প্রশ্ন করে হাপিয়ে গেছি। আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমার দিকে ফিরে তার দু’হাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করে বললো,

__ভালোবাসি তোমায়।তাই আজীবন আমার সাথেই থাকতে হবে তোমাকে।বাকী প্রশ্নের উত্তর পরে পাবে।এখন আর একটা কথা মুখ থেকে বের করলে থাপড়িয়ে দাত সব ফেলে দিবো।।
বলেই সে আমার কপালে তার ঠোঁট স্পর্শ করে ড্রাইভ শুরু করলেন ।তার এই কাজে আমি পুরোই শকড হয়ে গেছি।আর তার বলা কথায় তো ভীষণ অবাক! উনি আমাকে ভালোবাসেন!! কীভাবে সম্ভব!! উনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন,,

সেই তো তার প্রেমিকা!তাহলে আমাকে কেনো ভালোবাসার কথা বলছেন!! এই ব্যাটার চরিত্রে দোষ আছে।গণহারে ভালোবাসার মানুষ পাল্টাচ্ছেন উনি। বেয়াদ্দপ, অসভ্য, চরিত্রে সমস্যা যুক্ত পুরুষ! এই জন্যই আমি ব্যাটা মানুষদের দেখতে পারতাম না। আর সেই আমিই এই অসভ্য পুরুষে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম! ছ’মাস পর ডিভোর্স জেনেও একতরফা ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে!!ভুল করেছিলাম

মাত্রই গাড়িতে চোখ লেগে এসেছিল কিন্তু রিংটোন এর আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো। মাথাটা এবার প্রচুর ব্যাথা করছে। তাকিয়ে দেখি আঁধারের ফোন বাজছে। কিন্তু ব্যাটা উধাও। আরে ভাই উধাও হবি তো নিজের ফোন নিয়ে উধাও হহ।আরেক জনের বাশ দেওয়ার জন্য এখানে এইটারে রাইখে গেলি কেন। তুই শালা আমি মরলে কবরেও আমারে জালাইতে যাবি।শালা হিটলার,বনমোরগ, শয়তান কোম্পানির ম্যানেজার
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নিদ্রা আপু কল।মেজাজ টা এবার আমার পুরাই খারাপ। এরা প্রেমিক, প্রেমিকা আমার শান্তির বারোটা না বাজাইলে এদের পেটের খাবার হজম হয় না।রিসিভ করবো কি করবো না তা ভাবতেই কল কেটে গেছে। আবার বেজে উঠতেই আমি রিসিভ করলাম,

__ধ্রুব , ঐশীর কোনো খবর পেলে?আমি কালই কল দিতাম তোমায় কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি। পেয়েছো কোনো খবর?
নিদ্রা আপুর প্রশ্নে বিরক্ত লাগছে আমার। আরে তোর বয়ফ্রেন্ড আমারে এখানে কিডন্যাপ করে আনছে।আর তুই বেডি এখন জিজ্ঞেস করছ!বিরক্তি নিয়েই বললাম,
_আপু আমি ঐশীই বলছি।আপনার প্রেমিক পুরুষ আমাকে কিডন্যাপ করে নিজের কাছেই রেখেছে। আপনি একটু তাকে বুঝান সে যেন আমার পিছন ছেড়ে আপনাকে বিয়ে করে নেয়
আমার কথার মাঝখানেই নিদ্রা আপু বলে উঠলো,

_কীসের প্রেমিক!, কিসের বিয়ে!তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ঐশী??
__কেন আপনি আঁধারের প্রাক্তন প্রেমিকা না?
আমার প্রশ্ন শুনে নিদ্রা আপু বললেন,

_তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ঐশী। আমি কেন ধ্রুবের প্রাক্তন হতে যাবো!আমি,ধ্রুব আর ভোর তো অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। এখনো আছি।ধ্রুব তো তখন আমাদের ফিমেল ফ্রেন্ডস দের মধ্যে কারো সাথেই রিলেশনশিপ এ ছিলো না।।
আর তাছাড়া তখন তো আমার ফাইজের সাথে রিলেশনশিপ ছিলো। আমরা বিয়ে করেছি যে তিন বছর হবে।তোমার বর তো সবটাই জানে।ও বলে নি তোমায় কিছু?

নিদ্রা আপুর কথায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। আঁধারের প্রেমিকা যদি নিদ্রা আপু না হয়,, তাহলে সে কে!!আমার ভাবনার মাঝেই নিদ্রা আপু আবার বলে উঠলো,
_ঐশী তুমি হয়তো ধ্রুব আর আমার কথাবার্তা আর মেলামেশা দেখে আমাকে ওর প্রেমিকা ভেবে ভুল সন্দেহ করে বসে আছো।আসলে আমাদের ফ্রেন্ডশীপ বন্ডিং টাই এমন।আর আমিও অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম তাই ওখানে এসব কমন ম্যাটার। তুমি হয়তো খেয়াল করছো কিনা জানিনা, আমি কিন্তু ভোরের সাথেও সেইম বিহেভিয়ার করতাম।আচ্ছা এই ব্যাপার নিয়ে কি তোমার আর ধ্রুবর এর মাঝে ঝগড়া হয়েছিল?
আপুর কথায় আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,

_না, আপু। অন্য ব্যাপার। আচ্ছা আপু আমার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা- করছে।তুমি পরে উনি আসলে কথা বলে নিও।
একথা বলেই আমি কলটা কেটে দিলাম।ভালো লাগছে না। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে
কিছুক্ষণ এর মাঝেই আঁধার ফিরে এসেছে। গাড়িতে উঠে আমাকে তার দিকে ফিরাতেই খেয়াল করলাম তার হাতের জিনিসপত্রগুলো ।তাহলে উনি এতোক্ষণ ডিসপেনসারিতে ছিলেন।
এরপর উনি আমার কাটা স্থান গুলো জীবানু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিলেন। আমি যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি। উনি আমার গলার স্কার্ফ ধরতেই হুশে ফিরলাম

_আরে স্কার্ফ এ হাত দিচ্ছেন কেন? হাত সরান
বলেই নিজের গলা থেকে তার হাত সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। সে ঘাড়ের কিছুটা অংশ থেকে কাপড় সরিয়ে সেখানেও মলম লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
_আই নো, আমরা গাড়িতে আছি তবুও এটা পাবলিক প্লেস।তাই এরকম একটা জায়গায় তোমার সাথে রোম্যান্স করার জন্য গলার কাপড় সরাবো এতটা বেকুব আমি নই।সময় মতো সব সুদে আসলে নিয়ে নিবো।

গাড়িটা অনেকক্ষন পর একটা নির্জন জায়গায় এনে তিনি থামালেন। ডোর লক খুলে আমাকে নামতে বলে নিজেও নামলেন।রাতের অন্ধকারে লাইটিং এর কারণে ভীষণ সুন্দর লাগছে জায়গা টা।রাত একটু বেশি তাই তেমন লোকজন নেই। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট থেকে আমরা ডিনার শেষে আবার এই দিক টায় চলে এলাম। অনেক শীতল বাতাস বইছে মনে হচ্ছে মধ্যরাত এর দিকে বৃষ্টি হবে।তার পাশাপাশি হাটছি আমি।গাড়ির সামনে এসে সে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বললেন,

_তোমার সবপ্রশ্নের 95পারসেন্ট উত্তর আজকে পেয়ে যাবে। 50 পারসেন্ট তো তখনই দিয়ে দিলাম। now বাকি 45 পারসেন্ট ও দিয়ে দিবো।
এ কথা বলে সে হাতে থাকা ফোনে একটা ভিডিও ফুটেজ আমার সামনে ধরলেন

বি.দ্র:আসসালামু আলাইকুম পাঠক মহল।গতপর্বের কয়েকটা কমেন্ট পড়ে আমার ভীষণ অদ্ভুত লাগলো।যারা ভাবছেন আমি গল্পের আঁধার নামক চরিত্রকে ফেরেশতা বানাচ্ছি তাদের উদ্দেশ্যে,আমি গল্পটা নিশ্চয়ই আগেই পুরোটা ভেবে তারপর লিখছি।আমি কিছু ঘটনা স্কিপ করেছি যা আগামী পর্বে তুলে ধরা হবে।এরপর (আঁধার) ক্যারেক্টর নিয়ে আই হোপ আপনাদের আক্ষেপ থাকবে না।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৫

আর যারা বলেছেন নায়িকার উপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে, ভাই গল্পটা প্রথম থেকে পড়ুন, তাহলে বুঝতে পারবেন একচুয়ালি কতটা অত্যাচারিত হয়েছে আপনাদের নায়িকা। আঁধার থাপ্পড় টা আপদের নায়িকাকে কিন্তু অকারণে মারে নি। বাকিটা আমি আগামী পর্বে ক্লিয়ার করে নিবো।
আর হ্যাঁ,আমার আসলে স্টার সিরিজের সিরিয়াল গুলো কখনো দেখা পড়ে নি তো তাই আমার গল্পটা কেন আপনার স্টারজলসা মনে হলো সেটার কারণ আইডেন্টিফাই করতে পারছি না। এরপরও যদি আপনার জলসা সিরিজ মনে হয় তাহলে প্লিজ গল্পটা স্কিপ করুন।ভালো থাকবেন

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩৭