অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৪+৫+৬

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৪+৫+৬
written by Nurzahan Akter Allo

–“আমি কি আপনার ভেজা মুখটা আর একটাবার দেখার সুযোগ পেতে পারি?”(নক্ষত্র)
নক্ষত্রের গলার ভয়েজ শুনে তিতিক্ষা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।নক্ষত্র এখন এই মুহূর্তে যে উপস্থিত হবে এটা তিতিক্ষার কল্পনারও বাইরে ছিলো।তিতিক্ষা এখন কি বলবে?কি করবে? সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।রাতের পড়ে থাকা কুঁচকানো কামিজটারও বেহাল দশা।চুল গুলো তো কোন রকম কাটা দিয়ে আটকে রাখা।মুখে ফেসওয়াসের ফেনা লেগে আছে।এমন একটা সময়েই নক্ষত্রকে আসতে হলো?ইস!এই আলুথালু অবস্থায় কিভাবেই বা নক্ষত্রের সামনে ঘুরে দাঁড়াবে?এমন লজ্জাজনক অবস্থায় না পড়লেও তো হতো?তবে এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে। তিতিক্ষা ওর ভাবনা-চিন্তাকে পাশে রেখে, বোকার মত আর না দাঁড়িয়ে পানির কল ছেড়ে মুখটা ধুয়ে নিলো।এরপর সামনে তাকিয়ে দেখে আহান দাঁত বের করে হাসছে।আর আহানের হাতের ফোনের মধ্যে নক্ষত্রকে দেখা যাচ্ছে।সে তার মুখে মুচকি হাসি মিশ্রিত মুখশ্রীটাকে নিয়ে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে আছে।তিতিক্ষা ওর কোমরে দুই হাত রেখে আহানের দিকে রাগী চোখে তাকালো।ততক্ষণে
নক্ষত্র হুট করে কল কেটে দিয়েছে।আহান একদৌড়ে তিতিক্ষার রুমের বাইরে চলে গেল।তিতিক্ষাও আহানের পেছনে ছুটতে গিয়ে থেমে গেল।এখন আহানকে ধরা ওর পক্ষে সম্ভব হবেনা।তাই অযথা আর দৌড়ে না গিয়ে চিৎকার করে বললো,

–“আহান্য তোরে আমি পরে দেখছি দাঁড়া। ফাজিল ছেলে একটা।”
অদ্রি কলেজে চলে গেছে।মিসেস আবরার রান্নাঘর থেকে এসে কফির মগ দু’টো সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো।একটা মগ তুলে মিস্টার আবরারের দিকে তুলে ধরলেন।মিস্টার আবরার উনার হাতে থাকা ফাইলটা রেখে উনার মিসেসের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন।উনার মিসেস তখন কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বললো,
–“আচ্ছা একটা দিনের মধ্যে আমি তোমাকে যতবার কফি করে দেই।তুমি ততবারই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসো। কিন্তু কেন?”
মিসেস আবরারের কথা শুনে মিস্টার আবরার আবারও হাসলো।উনার হাসি দেখে মিসেস আবরার উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মিস্টার আবরার
বললো,
–“আমার জন্য তুমি এত কষ্ট করে কফি বানিয়ে আনলে। তাই আমি তোমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তোমার কষ্টের একবিন্দু কষ্টের মূল্য পরিশোধ করার চেষ্টা করি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মিসেস আবরার আর কিছু বললো না।তবে মনে মনে খুব খুশি হয়েছে।এসব ছোট্ট ছোট্ট ভাললাগার অনুভূতি গুলোই একএ হয়ে সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।মিস্টার আবরারের মত কিছুটা হয়েছে নক্ষত্র।সে তার মধুমাখানো কথা বলে যে কারো হৃদয় হনন করতে সক্ষম।নক্ষত্র ছোট্ট থেকেই দেখে আসছে, ওর আব্বু ওর আম্মুকে কখনো কটু কথা বলেনা,উচ্চ স্বরে কথা বলেনা,গালাগাল করেনা। ওর আব্বু ওর আম্মুকে যতটুকু পারুক সময় দেওয়া চেষ্টা করে।তারা একে অপরের ইচ্ছেকেও তারা প্রাধান্য দেয়।বাবা মায়ের এমন মিষ্টি মধুর সম্পর্ক দেখে নক্ষত্রের মনেও ভালবাসা নিয়ে অনেক বীজ বোনা।বউ নামক #বুকের_বা_পাশে স্বযত্নে আগলে রাখা রমণীকে নিয়ে তারও হাজারও কল্পনা গেঁথে রেখেছে ওর মনের কোঠরে।অপ্রকাশিত আদুরে কিছু ইচ্ছে, আহ্লাদ, সে তো সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাই শুধু তার প্রিয়সীকে ঘিরে।
যদিও নক্ষত্র ওর বাবা মায়ের সম্পর্কটাকে একটু একটু করে নতুনভাবে আবির্ভাব হতে দেখেছে।সুস্থ সুন্দর একটা সম্পর্ক কেমন হয় এটা নিজের চোখে দেখেছে।মন থেকে এই অনুভূতি গুলোকে অনুভব করেছে।আর এখানে নক্ষত্র ওর পরিবারের থেকে ভালো শিক্ষাটুকু সাদরে গ্রহন করেছে।কারন সেও চাই তার প্রিয় মানুষটাকে ওর #অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আগলে রাখতে।

বাবা মায়ের উচিত নয় ছেলে মেয়েদের সামনে ঝগড়া করা,গালাগাল করা।কারন ছেলেমেয়ের সামনে ঝগড়া করলে বাবা মায়ের প্রতি ছেলে ছেলেমেয়ের মনে নেগেটিভ একটা ধারণা তৈরী করে।যেমন বাবারা রেগে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও একটা গালি দেয়।তখন গালিটা ছেলেমেয়েরাও শুনে।আর বাবাকে খারাপ ভাবে।তিন বছরের একটা বাচ্চার সামনে যদি গালি দেয়। তখন বাচ্চাটার মনে হবে,”বাবা খুব পঁচা। শুধু শুধু আম্মুকে বকা দিচ্ছে।” অযচ একদিন বা দুইদিন পর স্বামী স্ত্রীর রাগ কমে যায়। তখন উনাদের রাগ, অভিমান, ভুলে ঠিক হয়ে যায়।কিন্তু বাচ্চার মনে জন্ম হওয়া সেই নেগেটিভ মনোভাবটা একটু হলেও থেকে যায়।বাবা মা ঝগড়া শুরু হলে আমাদের উচিত আমাদের ছোট ভাই বোনদেরকে ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া।কারন বাচ্চাদের ব্রেন পজেটিভ কিছুর থেকে নেগেটিভ কিছু দ্রুত ক্যাচ করে।ভাল কথার থেকে খারাপ কথা তারা সহজেই শিখে ফেলে।তখন খারাপ কথাটাই বার বার তোতাপাখির পাখির মতো আওড়াতে থাকে।আর এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সবার একটু সচেতনার প্রয়োজন।এজন্যই কথাতেই বলে,

–“নিজের ঘরের শিক্ষায় হলো বড়ো শিক্ষা।”
তবে এটা ছাড়াও অপ্রিয় একটা সত্যি আছে।আর সেটা হলো,
–“একটা বাচ্চার প্রথম চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটে। তার নিজের বাসস্থানের পরিবেশ মোতাবেক।আর সেই পরিবেশ হোক সুস্থ অথবা অসুস্থ। সুস্থ পরিবেশে শিখবে ভিক্ষুকের সাথে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভাবে কথা বলা।আর অসুস্থ পরিবেশ থেকে শিখবে অশ্রব্য সব গালাগালির ফুলঝুরি।”
তিতিক্ষা ওর ড্রেস বদলে একটা কামিজ পড়ে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ালো।সোফার দিকে তাকিয়ে ওপর পা টা যেন থমকে গেছে।চোখ বড় বড় করে তিতিক্ষা সেদিকেই তাকিয়ে আছে।কারন স্বশরীরে “নাহিয়ান আবরার নক্ষত্র” সোফাতে বসে আছে।আহানও পাশে বসে কি যেন করছে দু’জন মিলে।বিভা এসে তিতিক্ষাকে একটা ধাক্কা দিলো।তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।তনুকা রুম থেকে বের হয়ে বললো,”তিতু সোনা নক্ষত্রের জন্য কফি করে আনতো।” নক্ষত্র এতক্ষণ ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ তিতিক্ষার নাম শুনে নক্ষত্র চোখ তুলে সামনে তাকালো।আর তখনই তিতিক্ষার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।বিভা ফট করে বললো,”বনু জিজুর সাথে পরে শুভদৃষ্টি করো।আগে কফিটা তো করে আনো।” বিভার কথা শুনে তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। তাই কোন কথা না বাড়িয়ে ওখান থেকে দ্রুত সরে গেল।তিতিক্ষার লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করা নাক আর গালদুটো দেখতে নক্ষত্র মিস করেনি।তিতিক্ষাও নক্ষত্রের ঠোঁটে মুচকি হাসি রেখা দেখেছে।তবে তিতিক্ষা যে নক্ষত্রকে দেখলে খুব লজ্জা পায়। এই কথাটা নক্ষত্রেরও অজানা নয়।তবে এই ব্যাপারটা নক্ষত্র খুব ইনজয় করে।
তিতিক্ষা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে এলাহী সব কান্ড।মামনি আর জোসনা কাজে খুব ব্যস্ত।মামনি ডুবো তেলে কাবাব ভাজছে। আর জোসনা পাশের চুলার উপরে রাখা প্যান থেকে নুডলস তুলছে।তিতিক্ষাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মামনি তিতিক্ষাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“আম্মু দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত হাতে কফি করতো।নক্ষত্র একা একা বসে আছো তো।”
তিতিক্ষা ওর মামনির কথা শুনে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ওর কাজে লেগে গেল।এর মধ্যে বিভা, আহান, নক্ষত্র, তনুকা, রান্নাঘরে এসে হাজির।নক্ষত্রকে দেখে মামনি বললো,”নক্ষত্র বাবা তুমি এখানে আসতে গেলে কেন?” নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,
–“আপনাদের সবার সাথে সময় কাটাতে।আপনাদের ছাড়া ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলো না।”
নক্ষত্রের এই কথাটা বলতে না বলতেই আহান এর প্রতিউত্তরে বলে উঠলো,
–“আমাদের ছাড়া নাকি তিতু আপুকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করছিলো না জিজু?”

আহানের কথা শুনে বিভা আর তনুকা শব্দ করেই হেসে দিলো।মামনিও হাসলেন তবে আঁচলে মুখ লুকিয়ে। আহানের কথাটা শুনে তিতিক্ষা আড়চোখে একবার নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র মুচকি হাসলো।তবে এর প্রতিউত্তরে কিছু বললো না।সবাই হাসলেও শুধু হাসলো না তিতিক্ষা। সে তো এমনিতেই লজ্জাতে কুঁকড়ে আছে।নক্ষত্রকে ব্ল্যাক পোশাকে ব্ল্যাক রাজ্যের কিং দের মতো লাগছে।নক্ষত্রকে আজকে তিতিক্ষা সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করলো।তারপর থেকেই তিতিক্ষার হৃদপিন্ডটের কম্পনটা আপনা আপনিই বেড়ে গেছে।শরীরটাও অকারনেই মৃদুভাবে কাঁপছে।তিতিক্ষা বোঝার চেষ্টা করছে যে ও নতুন রোগে আক্রান্ত হলো কি না? নক্ষত্রকে দেখলেই ওর কেনই বা এমনটা হয়?আচ্ছা এই নতুন রোগটার নাম নক্ষত্র নয় তো?এটা ভাবলেই তো ওর মাথাটা আরো ভনভন করে ঘুরছে। আর মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় রক্তচলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
হতচ্ছাড়া হৃদপিন্ডটা এতো দ্রুত গতিতে কম্পনের সাথে সাথে ছিটকে না বেরিয়ে যায়।তিতিক্ষা আড়চোখে একবার ওর মামনির দিকে তাকালো।এরপর কাঁপা কাঁপা হাতে কফি মগে ঢালতে ঢালতে মনে মনে বললো,
–“আল্লাহ রক্ষা করো।যে জোরে আমার হার্ট টা দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। মামনি না টের পেয়ে যায়।”(মনে মনে)
এর মধ্যে মামনি কাবাবের প্লেটটা নক্ষত্রের সামনে রেখে নক্ষত্রকে বললো,”নক্ষত্র তুমি কালকে রাতে নাকি লন্ডন যাবে শুনলাম?” নক্ষত্র বললো,”জ্বি মামনি!আমার একটা কাজ পড়ে গেছে।এজন্য যেতে হচ্ছে ।” বিভা বললো,”তা কয়দিনের জন্য যাচ্ছেন জিজু?” নক্ষত্র ছোট্ট করে বললো,”এক সপ্তাহ।”

গল্প করতে করতে সবাই টুকটাক নাস্তা করলো।মামনি তিতিক্ষাকে বললো নক্ষত্রকে ওদের ছাদটা দেখিয়ে আনতে।তিতিক্ষা তনুকার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।তনুকা হাসতে হাসতে ইশারাতে যেতে বললো।বিভা তিতিক্ষার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।আহান ওদের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মামনি আহানকে কাছে ডেকে নিলো।নক্ষত্র একসাইডে গিয়ে ফোনে কথা বলছিলো।কথা বলা শেষ করে নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে এসে দাঁড়ালো।বিভা তিতিক্ষার দিকে একটা পাতলা চাদর এগিয়ে দিলো।ছাদে মৃদু বাতাসে শীত লাগবে। তাই তিতিক্ষা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিলো।আর কোন উপায় না পেয়ে নক্ষত্রকে বললো,”আসুন আমার সাথে।” নক্ষত্র তিতিক্ষার পেছন পেছন গেল। নক্ষত্রের মুখে মুচকি হাসি রেখা স্পষ্ট।যেন সে অপ্রত্যাশিত ভাবে অমূল্য কিছু পেয়ে গেছে।
রুহান, আফান, আর সাফওয়ান একসাথে বসে আছে।আজকে এক সপ্তাহ পর সবার সাথে সবার দেখা হলো।যদিও নক্ষত্র আজকে আসেনি।সে তো গেছে তার প্রিয়সীর কাছে।এজন্য তিনজন মিলে একটা লেকের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আফান ডাক্তারী পেশায় নিযুক্ত আছেন।সামনে মাসে আফান অস্ট্রোলিয়া চলে যাচ্ছে।আর রুহান সে ব্যাংকার। আর সাফওয়ান প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। সবাই আলাদা আলাদা পেশায় নিযুক্ত। এজন্য তারা খুব কমে সময় পাই আড্ডা দেওয়ার।তবুও চার বন্ধুর ভালবাসা কমে না কারো প্রতি কারোর।এটাই হয়তো বন্ধুত্বের জোর।
তিতিক্ষা নক্ষত্রকে নিয়ে ছাদে আসলো।নক্ষত্র চোখ বুলিয়ে ছাদের সৌন্দর্য দেখছে।নক্ষত্র ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।নক্ষত্রের দৃষ্টি এখন তিতিক্ষার দিকে নিবদ্ধ।তিতিক্ষা মুখ কাচুমাচু করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।সে কোন কথা না বলে মনোযোগ সহকারে তিতিক্ষার চুলের খোঁপাটা দেখছে। তিতিক্ষা ওর হাতে থাকা কফির মগটা নক্ষত্রের হাতে দিলো। নক্ষত্র মগটা নিয়ে পাশে রেখে দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নক্ষত্র বললো,

–“আমি কিছু দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি।মূলত এজন্যই দেখা করতে আসলাম।”
তিতিক্ষা কিছু বললো না। আর কি বা বলবো, গলা তো শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে।নক্ষত্র মৃদুস্বরে আবারও বললো,
–“তুমি আমাকে কিছু বলবেনা?”
তিতিক্ষা বেশ একবার ঢোক গিলে নিলো।জিহ্বা দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
–“সাবধানে যাবেন।ন ন নিজের খেয়াল রাখবেন।প্রয়োজনীয়ও কাজ সেরে আবার সাবধানে ফিরে আসবেন।”
তিতিক্ষা কথা শুনে নক্ষত্র মৃদু হাসলো। তিতিক্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।নক্ষত্র ওর পকেটে হাত রেখে তিতিক্ষার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।এরপর পকেট থেকে কিছু একটা বের করে তিতিক্ষার চুলের খোঁপাতে আটকে দিলো।তিতিক্ষা দুই হাত দিয়ে ওর কামিজটা খামচে ধরে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয় আছে।নক্ষত্রকে দেখলেই তিতিক্ষার অবস্থা বেগতিক হয়ে দাঁড়ায়।আর এখন নক্ষত্র তিতিক্ষার এতে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।তিতিক্ষা দম আটকে আসছে।নিঃশ্বাস নেওয়াটাও যেন সে ভুলে গেছে।আবার বুকের ভেতর ধুকপুকানিরটা বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে আজকেই নক্ষত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ওর হার্ট অ্যাটাক করিয়েই ছাড়বে।এজন্যই মনে হয় আজকে হুট করে নক্ষত্রের এখানে আগমন ঘটেছে।
নক্ষত্র তিতিক্ষার চুলের খোঁপাতে মাঝারী সাইজের স্টার আকৃতির রুপার তৈরী একটা চুলের কাটা আটকে দিয়েছে।যেটা রোদের আলোতে জ্বল জ্বল করছে।তিতিক্ষার চুলের সাধারণ হাত খোঁপাটার সৌন্দর্যটা একনিমিষেই যেন দ্বিগুন হারে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে এসে তিতিক্ষার দিকে তাকালো।তিতিক্ষার অবস্থা দেখে নক্ষত্র মুচকি হেসে স্লো ভয়েজে বললো,
–” ইংলিশে স্টার বাংলাতে যার মানে হলো
তারকা/নক্ষত্র। তাই স্টার অর্থাৎ নক্ষত্রের মাঝেই তোমার খোঁপার সৌন্দর্যটা আবদ্ধ করে দিলাম।”(মুচকি হেসে)

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#part_05

–” ইংলিশে স্টার বাংলাতে যার মানে হলো
তারকা/নক্ষত্র। তাই স্টার অর্থাৎ নক্ষত্রের মাঝেই তোমার খোঁপার সৌন্দর্যটা আবদ্ধ করে দিলাম।” (মুচকি হেসে)
তিতিক্ষার এবার যায় যায় অবস্থা। নক্ষত্র তিতিক্ষার লজ্জায় রাঙা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।তিতিক্ষা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।মৃদু বাতাসে তিতিক্ষা সামনের চুল গুলো মাঝে মাঝে নড়ে উঠছে।
নক্ষত্র আশে পাশে একটা বার চোখ বুলিয়ে নিলো।
ছাদটা আহামরি সুন্দর ভাবে সাজানো নেই।তবে মোটামোটি সুন্দর বলা যেতে পারে।নক্ষত্র ওর পকেটে দুই হাত রেখে বললো,
–“চলো এবার আমরা নিচে যায়।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।দু’জন মিলে নিচে গেল।মামনি তখন ড্রয়িংরুমে ছিলো।বিভা সোফাতে বসে ছিলো।তনুকা ওর রুমে।নক্ষত্র এসে সোফাতে বসলো।মামনি নক্ষত্র কে দেখে মুচকি হাসলো।তিতিক্ষা ওখানে আর না দাঁড়িয়ে ওর রুমে চলে গেল।নক্ষত্র মামনিকে বললো,
–“মামনি আমার এবার যেতে হবে।”

মামনি নক্ষত্রকে এখন যেতে দিতে নারাজ। নক্ষত্র বুঝিয়েও মামনিকে রাজি করাতে পারলো না।
মামনি নক্ষত্রকে যেতে তো দিলোই না।বরং আহানকে ডেকে নক্ষত্রকে তিতিক্ষার রুমে পাঠিয়ে দিলো।তিতিক্ষা কেবল ঢকঢক করে পানি খেয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে ওর সামনে নক্ষত্র দাঁড়িয়ে।হুট করে নক্ষত্র সামনে চলে আসায় তিতিক্ষা ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়।নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে তিতিক্ষা সদ্য পানি খাওয়া গ্লাস থেকে পানি খেলো।নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমি যদি এখন তোমার বেডে বসি তাহলে কি তুমি মাইন্ড করবে?”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বললো। নক্ষত্র তখন
তিতিক্ষার বেডের উপর আধশোয়া হয়ে বসলো।তখনই নক্ষত্রের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।নক্ষত্র ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করলো।তিতিক্ষা রুম থেকে যাওয়া জন্য এক পা বাড়াতেই ওর ওড়নাতে টান পড়লো।তিতিক্ষা সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল।
তনুকার উডবি হাজবেন্ড রায়হান। তনুকা রায়হানের সাথে কথা বলছে।আহান দৌড়ে এসে তনুকার গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।তনুকা ভয় পেয়ে চমকে উঠলো।আহান তখন ওর সব দাঁত বের করে হাসতে আরম্ভ করলো।তনুকা উঠে আহানের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো।আহান তখন গলা ফাটিয়ে তনুকাকে বললো,

–“উফ!মুটকি আপু তুমি আমাকে এত জোরে মারলে কেন?”
তনুকা রাগী চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“বেশ করেছি। তুই হুট করে এসে আমাকে ভয় দেখালি কেন?”
আহানও ওর গলার জোর বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–“আমিও বেশ করেছি।রায়হান ভাইয়া এই মুটকিকে বিয়ে করবেন না।রাক্ষসীর মত সারাদিন খায় আর মুটকি হয়।একে বিয়ে করলে আপনি এক সপ্তাহের মধ্যে গরীব হয়ে যাবেন।এটা হলো আমাদের বাসার ছোট খাটো হাতি একটা।”
আহানের কথা শুনে তনুকা আর এক ঘা বসানোর আগেই আহান দৌড় দিলো।যদিও যাওয়ার আগে তনুকার চুলে টান দিয়ে গেছে আহান। তনুকা তখন বিরবির করে আহানকে বকা দিলো।ফোনের ওপাশে থাকা রায়হান হেসে দিলো দুই ভাইবোনের ঝগড়া করার কথা শুনে।
তিতিক্ষা ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো।তিতিক্ষা ভেবেছিলো কিছু সাথে হয়তো ওর ওড়না আটকে গেছে।কিন্তু না নক্ষত্রই তিতিক্ষার ওড়নার একটা কোণা ধরে আছে।তিতিক্ষা ওড়না ধরে রেখেই সে ফোনে কথা বলাতে ব্যস্ত।কথা বলা শেষ করে নক্ষত্র ফোন কেটে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
তিতিক্ষা মৃদুস্বরে বললো,
–“রুমের বাইরে।কেন কিছু লাগবে আপনার?”
তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো,
–“হুম। আপাতত তোমার থেকে কিছুক্ষণ সময় পেতে চাই।”
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছিলো।তিতিক্ষা তখন সেগুলোর উত্তর দিচ্ছিলো।এরপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে নক্ষত্র চলে গেছে।নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার জন্য শীতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো পাঠিয়েছে।বাসার সবার জন্যও অনেক কিছুই আছে।তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুকে ফোন দিয়ে কথা বলে নিলো।কালকে রাতেও তিতিক্ষার আম্মুর সাথে কথা হয়েছে।উনিও বলেনি যে আজকে নক্ষত্র আসবে।সবাই চেয়েছিলো নক্ষত্রকে হুট করে দেখে তিতিক্ষা সারপ্রাইজড্ হবে।কিন্তু কেউ এটা ভাবেনা যে এমন সারপ্রাইজ তিতিক্ষার জন্য হার্ট এট্যাকের মত অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। তিতিক্ষা অদ্রি আর নক্ষত্রের আব্বুর সাথে কথা বললো।এরপর বউ শাশুড়ি মিলে অনেকক্ষণ গল্পও করে ফোন রাখলো।
আজকে চারদিন হলো নক্ষত্র লন্ডনে গেছে। ফোন কল আর মেসেজে তিতিক্ষার সাথে নক্ষত্রের কথা হয়েছে।তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষাকে ফোন দিয়ে বার বার বলে দিয়েছে। যে তিতিক্ষা যেন নক্ষত্র সহজ ওর আব্বু আম্মুরখোঁজ নেয়।তিতিক্ষার এখন তেমনভাবে কোন পড়াশোনা চাপ নেই।তবুও পড়াগুলো এগিয়ে রাখে। যাতে পরে চাপটা বেশি না পড়ে।নবিন এক সপ্তাহের জন্য ছুটি এসেছে।বাসাটা আরো চনমনে হয়ে উঠেছে।ভাই বোন গুলো আড্ডা, খুনশুটি,সাথে মামনি হালকার উপর ঝাপসা করে বকা।সকালে বেলা উঠে ইউনিভার্সিটি, দুপুরে এসে খেয়ে ঘুমানো,বিকেলে আড্ডা, সন্ধ্যায় নক্ষত্রের সাথে কথা বলা,পড়তে বসা,আর ঘুমানোর আগে নক্ষত্রের ছবি দেখে ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়া।এসব মিলিয়ে তিতিক্ষার দিন কাল ভালোই যাচ্ছে।
সন্ধ্যার একটু আগে মামনি হুট করে তিতিক্ষাকে জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে বললো।তিতিক্ষা মামনিকে জিজ্ঞেস করলো,

–“কেন মামানি?”
মামনি তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এক সপ্তাহের জন্য তুই সিলেটে যাচ্ছিস।”
তিতিক্ষা অবাক হয়ে মামনির দিকে আছে।মামনি তিতিক্ষার ব্যাগে জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে।মামনি ব্যাগ গুছাতে গুছাতে তিতিক্ষাকে রেডি হয়ে নিতে বললো।তিতিক্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেডি হতে চলে গেল।তিতিক্ষা জারুল ফুলের কালারের একটা থ্রিপিস পড়ে নিলো।রেডি হয়ে মাথাতে হিজাব পড়ে, গায়ে লাল আর কালো সংমিশ্রণের শাল জড়িয়ে নিলো।বাইরে শীতের প্রকোপ বেড়েছে।আর তিতিক্ষা শীত কাতুরে ওর অল্পতে ঠান্ডা লাগে যায়। তিতিক্ষা
একবারে রেডি হয়ে দাঁড়াতেই,নিচে থেকে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলো। মামনি তিতিক্ষাকে নিয়ে নিচে চলে গেল।নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষা দেখে মুচকি হেসে কপালে একটা আদর দিলো।তিতিক্ষার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।
মামনি সবাইকে বার বার উপরে যেতে বললোও কেউ গেল না।নক্ষত্রের আম্মু মামনির থেকে বিদায় নিয়ে তিতিক্ষাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।অদ্রি তিতিক্ষাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো।নক্ষত্রের আব্বু ড্রাইভারের পাশে বসা।নক্ষত্রকে গাড়িতে দেখতে না পেয়ে তিতিক্ষা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।গাড়ি ছুটছে তার গন্তব্য অনুসারে।মিসেস আবরার তিতিক্ষাকে বললো,
–“আমরা সিলেট যাচ্ছি। তুই তো এখন ফ্রি আছিস এজন্য ভাবলাম তোকেও সাথে করে নিয়ে যায়।”
তিতিক্ষা উনার কথা শুনে মুচকি হাসলো। তিতিক্ষা
জিজ্ঞেস করলো,
–“হুট করে সিলেট কেন আম্মু?”
মিসেস আবরার তিতিক্ষার মুখে আম্মু ডাক শুনে খুব খুশি হয়েছেন।সেটা ওনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। উনি তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“আমার মা অসুস্থ এজন্য দেখতে যাচ্ছি।”

তিতিক্ষা আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ালো না।তবে তিন জনে মিলে অনেকক্ষণ গল্প করলো।অদ্রি ওর নানু বাড়ির গল্প বললো।নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের দুষ্টুমির কথাও বললো।মিস্টার আবরারও ওদের সাথে যোগ দিয়ে অনেক কথায় বললো।তিনটা মেয়ে একসাথে বসে থাকবে। আর সেখানে কোন গল্প হবেনা।এটা তো অবিশ্বাস্য ঘটনা। গল্প করতে করতে অদ্রি আর নক্ষত্রের আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে।তিতিক্ষা জানালার দিতে তাকিয়ে রাতের আকাশ দেখছে।যদিও শীতের কারনে গাড়ি গ্লাসটা তুলে দেওয়া। তারপরেও দেখতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।আবছা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বেহায়া চাঁদটাও মনে হচ্ছে ওর সঙ্গ পেতে চাচ্ছে।ওদের সাথে সাথেই চুপিচুপি চাঁদটা যাচ্ছে । চাঁদটার থেকে একটু দুরে আবছাভাবে একটা নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে।মিটমিট করে জ্বলে সে তার উপস্থিতিটা জানান দিচ্ছে।
তিতিক্ষা চাঁদটার পাশে নক্ষত্রটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।তখনই ওর ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠলো।তিতিক্ষা ওর ফোনের আসার মেসেজটা ওপন করে দেখলো নক্ষত্রের মেসেজ,
–“এই যে আমার ঘুমপরীটা আপনি কি ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন?”
নক্ষত্রের মেসেজ দেখে তিতিক্ষা মুচকি হেসে ছোট্ট করে মেসেজ করলো,
–“না।”

এরপর নক্ষত্র তিতিক্ষার মেসেজ পেয়ে আবার মেসেজ করলো।মেসেজ টোন আবার বেজে উঠতেই
তিতিক্ষা ওর ফোনটা সাইলেন্ট করে নিলো।না হলে মেসেজের টোনের শব্দে সবার ঘুম ভেঙে যেতো।কিছুক্ষণ এভাবেই দুজনের কথাবার্তা চলতে থাকলো।কথা বলতে বলতে তিতিক্ষা একটা সময় ঘুমিয়ে পড়েছে।তিতিক্ষা আর মেসেজ না পেয়ে নক্ষত্র বুঝে নিয়েছে তিতিক্ষা ঘুমিয়ে গেছে।নক্ষত্র বালিশের উপর ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। ফোনে তিতিক্ষার একটা পিক বের করে দেখছে আর মুচকি হাসছে।এই পিকটা ওদের এনগেজমেন্টের দিনের তোলা।নক্ষত্র যখন তিতিক্ষা ফিসফিস করে বলেছিলো যে,
–“এমন মায়াবী অনায়াসে কাউকে ঘায়েল করা কাজল কালো দু’নয়নে অশ্রুর ফোঁটা বড্ড বেমানান। প্রিয় থেকে প্রিয়তরও মানুষটার চোখে অশ্রু দেখলে যে কোন একজনের কলিজাটাও যে কেঁপে ওঠে।এটা কি কেউ বুঝে?” (আদুরে সুরে ধীর কন্ঠে)
এই কথাটা বলার পরে তিতিক্ষা যে অবাক চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।চোখে মুখে বিষ্ময়ের ছাপ স্পষ্ট।কাজল কালো চোখের কোণে একফোঁটা
অশ্রুবিন্দু জমে আছে।নাকের উপরে বিন্দু বিন্দু ঘাম। যে ঘামার্ত নাকের সৌন্দর্যটা নক্ষত্রের মাতোয়ারা করে তোলে।নক্ষত্রে দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকানোর এমন মুহূর্তটাকে রুহান ক্যামেরা বন্দী করেছিলো।আর সেই পিকটাই এখন নক্ষত্র দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার নাকে আলতো করো টোকা দিয়ে আদুরে সুরে বললো,

–“এই যে প্রাণ প্রিয়সী।আপনি কোন মায়াপরী নাকি মায়াজাল বলুন তো? আপনার মায়াজাল তো আমাকে তো অদৃশ্যভাবে আঁকড়ে ধরেছে।তিতিক্ষা নামক মায়াজালে যে আমি খুব মারাত্মকভাবে জড়িয়ে গেছি।”
সকাল ৬ টার দিকে নক্ষত্রের আম্মুর ডাকে তিতিক্ষার ঘুম ভাঙ্গে।তিতিক্ষা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। নক্ষত্রের আম্মু বলে ওরা নাকি সিলেটে পৌঁছে গেছে।সকালে বেলা শীতটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তিতিক্ষা ওপর শালটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো।চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। অদ্রি আর মিস্টার আবরার তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তিতিক্ষাও প্রতিউত্তরে হাসলো।মিস্টার আবরার আর মিসেস আবরার সামনে এগোলো। অদ্রি আর তিতিক্ষা গল্প করতে করতে আসছে।
সকাল বেলা হালকা একটু একটু কুয়াশার দেখা মিলছে।শীতের সকালে সূর্যটা আড়মোড়া ভেঙে উঠতেও যেন আলসেমি করে।এজন্য বুঝি সূর্য মামা পূর্বাকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে একটু দেরীতেই তার উপস্থিত জানান দেন।পাখিরা কিচিরমিচির শব্দ করে জানান দিচ্ছে সকালের আলো ফোঁটার বার্তা।ঘাসের উপর কুয়াশার বিন্দু বিন্দু হয়ে জমে আছে।সবুজ ঘাসের উপর সাদা একবিন্দু শুভ্র জলকণা।আর জলকণা গুলোকে দেখে যেন মনে হচ্ছে রুপোর এক একটা ফোঁটা।
তিতিক্ষার আব্বু ফোন দিয়েছে। তিতিক্ষারা সিলেটে পৌঁছে ছে কি না এটা জানার জন্য? তিতিক্ষা উনাদের জানিয়ে দিলো ওরা পৌঁছে গেছে। সাথে তনুকাকেও ফোন দিয়ে জানিয়ে দিল ওদের পৌঁছানোর কথা। এরপর অদ্রি তিতিক্ষাকে নিয়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করলো।তখনই একজন ভদ্রলোক তিতিক্ষা দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,
–“উ মা কিতা খয়রায়?”
তিতিক্ষা কথাটার মিনিং টা ঠিক বুঝতে পারেনি।এজন্য বোকার মত অদ্রির দিকে তাকালো। অদ্রি তিতিক্ষার তাকানোর মানে বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে।তখনই একজন ভদ্রমহিলা তিতিক্ষার সামনে এসে দাঁড়ালো।উনি হাসি হাসি মুখে তিতিক্ষার থুতনী ধরে বললো,
–“ওমা কিতা সুন্দরী ফুরি গো?”

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#part_06

–“উমা কিতা সুন্দরী ফুরি গো?”
এই কথাটার মানে বুঝে তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। মুখের উপর কেউ এমন কথা বললে তো লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। অদ্রি এবার ভদ্রমহিলাকে দেখিয়ে তিতিক্ষাকে বললো,
–“ভাবিমণি এটা আমার বড়োমামি। আমরা সবাই মামনি ডাকি। আর দরজায় দাঁড়ানো সেই ভদ্রলোকটাকে দেখছো না?ওটা আমার বড়ো মামা।”
তিতিক্ষা উনাদের দু’জনকেই সালাম দিলো। উনারা তিতিক্ষার সালামের উত্তর নিলো। অদ্রি বললো,
–“ভাবিমণি মামা তখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করলো কিতা খয়রায়? এর মানে হলো,’কেমন আছো’ ?”
তিতিক্ষা এবার বুঝলো কথাটার মানে। তিতিক্ষা বড়মা মামার সামনে গিয়ে বললো,
–“আলহামদুলিল্লাহ! আমি অনেক ভাল আছি মামা।আপনি কেমন আছেন?”
বড়মামা হেসে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! আমি অনেক ভালো আছি আম্মু। আমাদের কথা বুঝতে তোমার একটু সমস্যায় হবে।”
তিতিক্ষা মুচকি হাসলো উনার কথা শুনে। মিস্টার আবরার আর মিসেস আবরার ফ্রেস হতে গেছে।বাসার অনেকে ঘুম থেকে উঠেনি এখনো। বড়মামি তিতিক্ষাকে নিয়ে একটা রুমে গেল। এখানে অদ্রি আর তিতিক্ষা থাকবে। অদ্রি এসেই বেডের উপর রাখা ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে ঢুকে পড়লো। তিতিক্ষা ওয়াশরুমের ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিলো। অদ্রিকে জোর করে তিতিক্ষা উঠিয়ে ওয়াশরুমের পাঠিয়ে দিলো। বড়মামি হালকা নাস্তার সাথে গরম গরম ভাপা পিঠা এনে দিলো। তিতিক্ষা একটা পিঠা নিয়ে খেতে লাগলো। অদ্রি আবার এসে ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর পা ঢুকিয়ে বসে পড়লো ওর ফোনটা হাতে নিয়ে।তিতিক্ষা বড়মামিকে বললো,

–“মামনি বসুন।আপনার সাথে একটু গল্প করি।”
বড়মামি বললো উনি নাকি রান্না ঘরে পিঠা বানাচ্ছে। এজন্য এখন বসতে পারবেনা। তিতিক্ষা নিজে উঠে
বড়মামির সাথে কথা কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে গেল। সারারাত জার্নি করে আসার পর এখন রুমে বসে থাকার কোনো ইচ্ছে তিতিক্ষার আপাতত নেই। বড় মামি সিলেটি ভাষায় কথা বলছে দেখে তিতিক্ষার বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে। ব্যাপারটা বড়মামি লক্ষ্য করলো এবং তিতিক্ষার সুবিধার্থে উনি এবার শুদ্ধ ভাষায় তিতিক্ষার সাথে কথা বলছেন। তিতিক্ষা বড়মামির সাথে কথা বলতে বলতে জানলো, যে বড়মামি অনার্স পযন্ত পড়াশোনা করেছেন। বড়মামির বাবার বাড়ি ফেনীতে। উনার এক ছেলে আর এক মেয়ে। নক্ষত্রের দুইটা মামা। ছোট মামি সাত মাসের অর্ন্তসপ্তা। শীতের মধ্যে তাকে একটু দেরী করেই ঘুম থেকে উঠতে বলা হয়েছে। এটাই ছোট মামির প্রথম বাচ্চা। তাও বিয়ে ছয় বছর পরে।বাড়ির সবাই কড়া করে নিষেধ করার পর উনি একটু দেরী করেই রুম থেকে বের হয়। সে প্রথমবার মা হবে। সে হিসেবে সবাই উনার দিকে একটু বেশিই খেয়াল রাখে।
বড়মামি পিঠা বানাতে বানাতে বাসার সবার গল্প করছে। আর তিতিক্ষা পাশে একটা টুলে বসে উনার গল্প শুনছে। পাশেই গ্যাসের চুলার ব্যবস্থা আছে। তবুও বড় মামি মাটির চুলোতে পিঠা বানাচ্ছেন। বড়মামি দেখতে খুব সুন্দরী। সেটা উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সবুজ রঙের শাড়ীর সাথে লাল রংয়ের থ্রি কোয়াটার হাতার ব্লাউজ ।আর উনার গায়ে একটা কালো রংয়ের শাল জড়ানো। চুলোতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আর বড় মামির দেওয়া লাকড়ি গুলোকে আগুন যত দ্রুত সম্ভব গোগ্রাসে গিলছে। যেন এখানে আগুন আর লাকড়ির কোন একটা প্রতিযোগিতা চলছে।
তিতিক্ষা রান্নাঘরটাতে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। রান্নাঘরটা বেশ বড় আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও বটে।একসাইডে শুকনো কাঠ, শুকনো ডাল,এসবের স্তুপ করা।তিতিক্ষা বড়মামিকে বললো,

–“মামনি গ্যাসের চুলা তো আছেই।তাহলে কষ্ট করে মাটির চুলোয় কেন?”
তিতিক্ষার কথা শুনে বড়মামি মুচকি হাসলো। এরপর চুলোতে একটা শুকনো গাছের ডাল ভেঙে দিয়ে বললো,
–“আমার শাশুড়ি মা গ্যাসের চুলায় রান্না করা তরকারি খেতে পারেনা। একটু শেকেলে মানুষ তো। মা বলে মাটির চুলোর রান্নার নাকি অন্য রকম একটা স্বাদ। গ্যাসের চুলার রান্না করা তরকারি নাকি স্বাদ লাগেনা। গ্যাসে চুলোয় রান্না করলে তরকারির মধ্যে নাকি আর সেই গ্যাস ঢুকে তরকারির সব স্বাদ খেয়ে ফেলে। আমরা সেই তরকারি খেলে নাকি আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। এসব যুক্তি আমার শাশুড়ি মায়ের ভাষ্যমতে আর কি। তবে প্রথম প্রথম আমি চুলায় রান্না করতে পারতাম না। কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন মাটির চুলায় রান্না করা খাবার খেতে খেতে গ্যাসের চুলায় রান্না খাবার খেতে একটু অন্যরকম লাগে আমাদের কাছেও। তাই মায়ের জন্য রান্না করতে করতে আমরাও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর মা যা বলে আমরা সবাই অক্ষর অক্ষরে পালন করি। আর মায়ের কথা অনুযায়ী মাটির চুলাতেই বেশি রান্না করা হয়।”
তিতিক্ষা এবার বুঝলো আসল কাহিনি। মামনি তিতিক্ষাকে রুমে গিয়ে রেস্ট করতে বললো।কিন্তু তিতিক্ষা ওখানেই বসে রইলো।সে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে আর এই মুহুর্তের সৌন্দর্য টাকে লুটে নিচ্ছে। সব পরিবেশেরই এক একটা ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। এটা খুঁজে নিতে জানলে সব পরিবেশই নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। সব স্থানেই কোন না কোন সৌন্দর্য বিদ্যমান থাকে। শুধু কোথায় সৌন্দর্য কম আর কোথায় সৌন্দর্য বেশি এটাই পার্থক্য।

রান্নাঘরের পাশেই একটা পুকুরপাড় দেখা যাচ্ছে। পুকুরপাড়ে ঠান্ডা বাতাস শরীরে এসে লাগলে শরীর শিউরে উঠছে।পাশেই মনে হয় শিউলি ফুলের গাছ আছে। শিউলি ফুলের সুগন্ধ টা বারবার নাকে এসে লাগছে। হঠাৎ গড়গড় শব্দ করে উঠাতে তিতিক্ষা বাড়ির উঠানের দিকে তাকানো।কেউ একজন চাপ কলে পানি তুলছে মনে হয়। চাপ কলে পানি তুলতে গেলে সাধারণত এমনভাবেই শব্দ হয়।নক্ষত্রের নানুর এই বাসাটা গ্রাম্য বাড়ির মতো উঠোন ওয়ালা। এটা নক্ষত্রের নানা বানিয়েছেন খুব শখ করে। নক্ষত্রের নানা মারা যাওয়ার পরে ওর নানু এই বাড়ি থেকে কোথাও যেতে চাইনা। তবে নক্ষত্রের নানা বেঁচে থাকতেই এই বাসার পাশেই দুই ছেলেকে ফ্ল্যাট করে দিয়েছে। যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়াতে ভরপুর।
মিস্টার আবরার অদ্রির রুমে এসে দেখল তিতিক্ষা রুমে নেই। মিসেস আবরার অদ্রিকে তিতিক্ষার কথা জিজ্ঞাসা করল। অদ্রি জানালো তিতিক্ষা বড় মামির সাথে রান্নাঘরে। মিসেস আবরার রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ওইদিকে নক্ষত্রের খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। ফোনটা হাতে নেওয়ার সময় সে পাচ্ছে না। তবুও কাজের ফাঁকে তিতিক্ষাকে একটা মেসেজ করে রাখলো,
–“শুভ সকাল নাহিয়ান আবরার।আপনি কি ঘুম থেকে উঠেছেন? শুনুন আজকে আমি কাজে একটু বেশিই বিজি থাকবো। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আর খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করবেন। ঠান্ডা যেন না লাগে এই কথাটাও মাথায় রাখবেন।আর আমি ফ্রি হয়ে আপনাকে জানাবো। আল্লাহ হাফেজ।”

তিতিক্ষার ওর ফোনটা রুমে রেখে এসেছে। অদ্রি তিতিক্ষার ফোনে নক্ষত্রের মেসেজ দেখে মুচকি হাসলো। অদ্রি ফোনটা নিয়ে দূর থেকে উঠতে যাবে। তখনই তিতিক্ষা রুমে ঢুকলো।অদ্রি ওর নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“উহুম! উহুম! ভাবিমণি তোমার আর্কিট্রেক্ট সাহেব বার্তা পাঠিয়েছে।”
তিতিক্ষা এই অার্কিট্রেক্ট সাহেবকে চিনতে পারেনি।এজন্য তিতিক্ষা অদ্রির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
–“অার্কিট্রেক্ট সাহেবটা আবার কে?”
তিতিক্ষার কথা শুনে অদ্রি চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে, হো হো করে উচ্চশব্দে হেসে দিলো। হাসির চোটে অদ্রি কথা বলতে পারছেনা।তিতিক্ষা বোকার মত অদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্রি কোন রকমে হাসি থামিয়ে বললো,
–” ‘নাহিয়ান আবরার নক্ষত্র ‘ হলেন একজন অার্কিট্রেক্ট। উনি এই কাজেই নিয়োজিত আছেন। এজন্য তোমার উনাকে অার্কিট্রেক্ট সাহেব বললাম। এবার তো বুঝলে?”

তিতিক্ষা কেবল জানলো নক্ষত্র একজন অার্কিট্রেক্ট। তিতিক্ষা এবার অদ্রির সামনে লজ্জা পেলো। হবু বর কি পেশায় নিয়োজিত? এটাও কি না সে এখন জানলো। অদ্রি তিতিক্ষাকে লজ্জা পেতে দেখে তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। ভাবিমণি তুমি ভাইয়ার সাথে কথা বলো। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।”
অদ্রি তিতিক্ষাকে নক্ষত্রের সাথে কথা বলার একটা সুযোগ করে দিয়ে চলে গেল। তিতিক্ষা ওর ফোনটা হাতে নিয়ে নক্ষত্রের মেসেজটা দেখলো। তিতিক্ষার ঠোঁটের কোণে লজ্জার আভা। আসলে নক্ষত্র যে কি করে এটা জানার কথা ওর মাথাতেই আসেনি। আর বাসার কেউ তো বলেনি। আর নিজে থেকে কাউকে জিজ্ঞাসাও করা হয়নি। তিতিক্ষা মনে বললো,
–“তা এজন্যই বুঝি অার্কিট্রেক্ট সাহেব লন্ডনে গেছে।”
নক্ষত্র একজন অার্কিট্রেক্ট ৷ এই পেশাতে যারা নিয়োজত তারা বিল্ডিংয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজটা করে থাকেন। অনেকে আবার এই পেশাকে ভাবে যে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার।কিন্তু অার্কিট্রেক্ট আর ইন্জিনিয়ারি পেশার কাজ বিল্ডিং,হসপিটাল, স্কুল, কলেজ হয়ে থাকলেও এদের কাজের প্রকার ভেদ আলাদা। একজন ইন্জিনিয়ার বিল্ডিং বাড়ি বানায় আর আর্কিট্রেক্টরা তাদের বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিল্ডিংটাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। আর আর্কিট্রেক্ট পেশাতে আর্ট জানাটা আবশ্যিক। কারন তাদের কাজের প্রধান বাহক হলো স্কেচ, নকশা। ডিজাইনের মাধ্যমে যে সুন্দর বিল্ডিং তৈরি করা হয় সে বিল্ডিংকেও আর্কিটেকচার বলা হয়। তাই আর্কিটেকচার দিয়ে একাধারে বিল্ডিং ডিজাইন এর প্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়ার ফলাফল দুটোই বোঝায়। আর যিনি এই কাজের ডিজাইন করেন সেই ব্যক্তি হলেন আর্কিটেক্ট।
“(আর্কিটেক্ট পেশাটা কি? আশা করি আমি আপনাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।)”

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ১+২+৩

মিস্টার আবরার আর মিসেস আবরার সহ বাড়ির সকলে এক জায়গায় বসে আছে। তিতিক্ষা আর অদ্রি এসে ওখানে যোগ দিলো। মিসেস আবরার বাড়ির সকলের সাথে তিতিক্ষার পরিচয় করে দিল। তিতিক্ষা সবাইকে উদ্দেশ্য করে আরেকবার সালাম দিল। বড় মামির মেয়ে পাতা এসে তিতিক্ষাকে জরিয়ে ধরল। বড় মামির ছেলে পলক এখন বাসায় নেই । তিতিক্ষা ছোটমামী আর ছোট মামার সাথে কথা বলল। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নক্ষত্রের নানু কে কোথাও দেখতে পেল না। বাড়ির সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো। তিতিক্ষার একটা জিনিস দেখে বড্ড বেশী ভাল লাগল। যে সবার সাথে সবার খুব মিল। বড় মামি আর ছোটমামীকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুই বোন। ছোট মামীর সব আহ্লাদী আবদার বড় মামির কাছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে মিসেস আবরার তিতিক্ষাকে নক্ষত্রের নানুর রুমে নিয়ে গেল। তিতিক্ষা ভয়ে ভয়ে নানুর রুমে প্রবেশ করলো। নানু তখন বালিশে হেলান দিয়ে বসে ছিল। উনার মুখে পান , আর উনি আরামসে বসে উনি চিবুচ্ছে। তিতিক্ষা নানুকে সালাম দিয়ে উনার পাশে বসে কুশল বিনিময় করলো। নানু ওকে যা যা জিজ্ঞাসা করছে, তিতিক্ষা সেগুলোর উত্তর দিচ্ছে। তবে তিতিক্ষা একটা জিনিস খেয়াল করলো। নানু যতই কথায় বলুক। উনার মুখে গম্ভীর একটা ভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
বিকালের দিকে অদ্রি আর তিতিক্ষা বাসা থেকে বের হলো। অদ্রি তিতিক্ষা কে ঘুরে ঘুরে সব দেখাচ্ছে।তিতিক্ষা আর অদ্রির সম্পর্কটা অন্যরকম। দুজনে দুজনের সাথে বন্ধুর মতো করে মিশে গেছে। ওরা একসাথে থাকলে ওরা ননদ ভাবি এটা ওদের দেখে বোঝাই যায়না। দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে গল্প করছে। অদ্রি দৌড়ে গিয়ে ওর মামাদের ফ্ল্যাটের পাশের পেয়ারা গাছটা থেকে চারটা পেয়ালা ছিনিয়ে আনলো। দুটো পেয়ারা তিতিক্ষাকে দিল। আর দুটো নিজের নিলো। তিতিক্ষা আর অদ্রি দুজনের পেয়ারাতে কামড় বসালো।অদ্রি ওর মামাদের ফ্ল্যাট , মামাদের বাগান, পুকুর, এসবই দেখাচ্ছে।তখনই তিতিক্ষার ফোনে মামনির ফোন দিল। তিতিক্ষা ফোনে কথা বলছে আর দুজনে সামনে হাঁটছে।
প্রায় দুই দিন পর..!

নক্ষত্রকে ওর আম্মু জানালেও ওর নানু এখন গুরুতর অসুস্থ। এমন খবর শুনে নক্ষত্র বাসায় না গিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট এসেছে। লন্ডনে যে কাজে গেছিল ।সে কাজটা সাকসেসফুল করে এসেছে। নক্ষত্র যে এখানে এসেছে তিতিক্ষা জানেনা। তিতিক্ষা যে এখানে আছে এটা নক্ষত্রও জানেনা। নক্ষত্র ওর নানুর পাশে বসে মুচকি হেসে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই ওর নানু গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–“ওই ফুরী ইগু আমার কাটিছে না। কোন কালেই ই ফুরীর লাগে তোর বিয়া দিতাম নায়।” (নানু)
নক্ষত্র নানুর কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর আম্মুর দিকে তাকালো। ওর নানু কোন মেয়ের কথা বলছে? নক্ষত্র এটাই ঠিক বুঝতে পারছে না। নক্ষত্রের আম্মু হুট করে নক্ষত্রকে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নক্ষত্র নিজেকে স্বাভাবিক রেখে নানুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–“নানু তুমি কি আমাকে তিতিক্ষার কথা বলছো?”
নানু নাক ফুলিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব রেগে আছে।নানু উনার কণ্ঠকে আরো গম্ভীর করে বলল,
–“আমি ইউ ফুরীর খতাই খইয়াম। ই ফুরীর লাগে তোর বিয়া দিতাম নায়।” (নানু)

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৭+৮+৯