অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৭+৮+৯

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৭+৮+৯
written by Nurzahan Akter Allo

–“আমি ইউ ফুরীর খতাই খইয়াম। ই ফুরীর লাগে তোর বিয়া দিতাম নায়।” (নানু)
একথা শুনে নক্ষত্রের ভুরু কুঁচকে নানুর দিকে তাকালো। নানু তিতিক্ষাতে দেখেই নি। তাহলে এরকম মন্তব্য করার কারণ নক্ষত্র বুঝতে পারছে না। নানু আবার কিছু বলতে চাইলে, তার আগেই নক্ষত্র বলল,
–” আমি আবেগ প্রবণ হয়ে তো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি নানু । আমার ভালো-মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে।”
নক্ষত্রের নানু পারছেনা নক্ষত্র কে গিলে খেতে। নানু চোখ বড় বড় করে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে নক্ষত্র এখনো নিজেকে স্বাভাবিক রেখে চুপ করে বসে আছে। এটাই নক্ষত্রের বিশেষ একটি গুণ। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে। আর এখানে তিতিক্ষা কে নিয়ে কথা উঠেছে। ভেবে ,চিন্তে, মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ নেওয়াটাই নক্ষত্রের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হচ্ছে। নানু নক্ষত্রের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নানুর এমন রূপ দেখে নক্ষত্র মুচকি হেসে শান্ত গলায় বললো,

–“আমি মানলাম তিতিক্ষাকে তোমার পছন্দ হয়নি। এবার বলতো কেন তোমার ওকে পছন্দ হয়নি ?”
নক্ষত্র কথা শুনে নানু আরো ক্ষেপে গেল। উনি রেগে গিয়ে উচ্চ স্বরে বলল,
–“আমি তোর লাগি ওনো ফুরী দেখিয়া রাখছি। তাইর লগেউ তর বিয়া দিমু। আমি আর কিচ্ছু হুনতাম নায়। আমি যেখান কইছি অকান অইব। তুমি এখন যাও গিয়া ঘুমাইলে ঘুমাও।”
তখনই বড় মামির সাথে একটা মেয়ে রুমে প্রবেশ করলো। গ্রাম্য বেশে শাড়ি পরা মাথায় এক হাত ঘোমটা দেওয়া। নক্ষত্র উনাদের দেখে বাহিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই নানু বলল,
–“ওককা তর হবু বউ। নক্ষত্র ই ফুরিরে দেকিয়া কোনো মাত মাতিবে না। অগুরেউ তরে বিয়া খরা লাগবো।”
নক্ষত্র কিছু বলছ না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বড় মামি সবার মুখে মুখে তাকাচ্ছে। উনি আশেপাশে তাকিয়ে তিতিক্ষাকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও তিতিক্ষা নেই। নক্ষত্রের আম্মু বড়মামিকে দিয়ে এই মেয়েটাকে নানুর রুমে পাঠিয়েছে। বড়মামিও এই মেয়েকে চেনে না। নক্ষত্রের আম্মু এই রুমের দিকে আসেনি। নক্ষত্র এখনও চুপচাপ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ নক্ষত্র এখানে কথা বলার আর কোন প্রয়োজনই মনে করছে না। তিতিক্ষা এখন ওর হবু বউ । আর এখন এই বিষয়টাকে আবার নতুন করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। নানুর এমন বোকা বোকা যুক্তিতে নক্ষত্রের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সেই মেয়েটি চুপচাপ রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। নক্ষত্র রুমের বাইরে পা বাড়াবে। তখনই নানু আবার বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“এখবার তা ওউ ফুরিটার ছান্দর লাখান মুকখান দেকি লা। ইগু ফুরিরে আর মনো ফরতো নায়।”
নক্ষত্র মুচকি হেসে পিছনে ফিরলো। ওর দুই হাতদুটো পকেটে ঢুকিয়ে হাসি হাসি মুখে বলল,
–“তিতিক্ষার চাঁদের মত মুখ থাকুক আর নাই বা থাকুক। সে আমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দু।”
কথাটা শুনে নানু হো হো করে হেসে দিল। উনি আর নক্ষত্রকে ঘাটালো না। উনি উনার নাতি পরীক্ষা নেওয়ার পালা সমাপ্ত করলো। নানু উনার হাতের ইশারায় ঘোমটাওয়ালীকে উনার পাশে বসালো। নানু মেয়েটার ঘোমটা তুলে দিলেন। এরপর হাসতে হাসতে বলল,
–” কিতারে কিলা দিছি সারপ্রেরাইজ। আমার কিন্তু হতিন যে বালা লাগে।”
নক্ষত্র নানুর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে গিয়ে, আচানক ভাবে মেয়েটার দিকে চোখ পড়ল। নক্ষত্র প্রথমে চোখ সরিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে কে চিনতে নক্ষত্রের দু’সেকেন্ড সময়ও লাগেনি। কারন ওটা তিতিক্ষা ছিলো। নক্ষত্র একটু অবাক হয়েছে তিতিক্ষাতে এখানে দেখে। তবে সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।
যদিও নক্ষত্র তিতিক্ষাকে এখানে এই অবস্থায় মোটেও আশা করিনি। আর এরকম গ্রাম্য সাজে যে
তিতিক্ষা ছিল। এটা নক্ষত্রেরও জানার কথা না। একটা সবুজ শাড়ি বাঙালি ভাবে পড়া, চুলে খোঁপা করা, হাতে চুড়ি, চোখে কাজল। এতটুকুই ছিলো তিতিক্ষার সাজ। নক্ষত্র আর কিছু বলার ভাষা পেলো না । তবে সে যে খুব খুশি এটা ওর চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে। নক্ষত্র ওর মাথা চুলকে ,ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

মিস্টার আবরারের বাইরে থেকে কেবল আসলো। আসার সময় অনেক ফাস্ট ফুডও সাথে করে এনেছে। মিস্টার আবরার আর নক্ষত্রের মামারা একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মিসেস আবরার নক্ষত্রকে ওর মামাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল। কারণ এখানে আপাতত কোন রুম ফাঁকা নেই । অদ্রি আর পাতা বসে বসে আচার খাচ্ছে আর গল্প করছে। তিতিক্ষা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে নানুর পাশে বসে আছে। নানু তো এই ব্যাপারটাতে খুব মজা নিচ্ছে। নক্ষত্রের বলা কথায় তিতিক্ষা যে ঠিক কতটা খুশি হয়েছে। এটা সে প্রকাশ করতে পারছেনা।
এদিকে তিতিক্ষার মামনি আর উনার হাসব্যান্ড তুমুল ঝগড়া করছে। বিভা আর আহান সোফাতে বসে দুজনের ঝগড়া দেখছে। দুইজনে গালে দুই হাত দিয়ে একবার সামনের দিকে তাকাচ্ছে। একবার ওনার হাজবেন্ডের দিকে তাকাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে ওদের বাবা মায়ের কথা অনুযায়ী দুজনে ঠিক ঠিক বলে স্লোগান দিচ্ছে। আজকে ওনাদের ঝগড়ার মূল বিষয় হলো,’ আহানে বাবা বাইরে থেকে হালিম খেয়ে এসেছে। তারপর থেকে উনার ডায়রিয়া শুরু হয়েছে।’ উনি একটু পর পর ওয়াশরুম ভ্রমণে যাচ্ছে। মামনি অগ্নি কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো,
–“এই বুড়া বয়সেও কি তোমার ভীমরতি কমবে না? কতবার বলেছি? যে বাইরে খোলা জায়গার খাবার খাবে না। বেশ হয়েছে! দোয়া করি যাতে তুমি সারা বছর এইরকম ডায়রিয়ার রুগীই থাকো। অসভ্য লোক একটা। ”

মামণির কথা শুনে আহান আর বিভা মুখ টিপে হাসছে। এটা নতুন কিছু না। তারা সবসময়ই ওর বাবা মায়ের এরকম ঝগড়া দেখে অভ্যস্ত। তবে ওদের বাবা কখনো এর প্রতিউত্তর করে না। কারণ উনিও ভালো করেই জানে। উনার মিসেস উনার ভালোর জন্যই এত বকাঝকা বলে। মামনি যখন উনার হাজবেন্ডকে বকা দেয়। তখন উনার হাজবেন্ড মামনির দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা একটা হাসি দেয়। এ বোকা বোকা হাসি দেখে তনুকা, বিভা, আহান, নবীন, হেসে লুটোপুটি খায়। এমন সিরিয়াস মুহূর্তে ছেলেমেয়েদের হাসি দেখে মামনি আরো রেগে যায়। তখন ওনার হাজবেন্ডের সব রাগ ছেলে মেয়ের উপর ঝাড়ে।
তিতিক্ষার আব্বু, আম্মু বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সারাদিন দু’জনেরই খুব ব্যস্ত সময় কাটে। তিতিক্ষার আম্মু কলেজ থেকে ফিরে কাগজ পত্র নিয়ে বসেছে। উনার কলেজে সামনে সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। এজন্য সব টিচারদের একটু ব্যস্ত সময় কাটছে। শীত বাড়ছে পরীক্ষাটা হয়ে গেলে সবাই স্টুডেন্টাও বাঁচবে সাথে টিচাররাও।
নক্ষত্র কেবল হট সাওয়ার নিয়ে বের হলো। নক্ষত্রের আম্মু খাবার নিয়ে নক্ষত্রের রুমে এলো। নক্ষত্র আর কিছু না বলে
খেতে বসলো। নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“তিতিক্ষাকে নিয়ে কোথাও একটা ঘুরে এসো। দু’জন দুজনকে একট সময় দাও। তাহলে দেখবে দুজনের সম্পর্কটা সহজ হয়ে যাবে।”
নক্ষত্র কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো। আসলেই ব্যাপারটা নক্ষত্রও ভেবেছে। তিতিক্ষা এখনো ওর সাথে সহজ হতে পারেনি। এজন্য সে নক্ষত্রকে দেখলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। নক্ষত্রের আম্মু আরও কিছু কথা বললো। নক্ষত্র চুপ করে ওর আম্মুর সব কথা শুনলো। নক্ষত্র খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এসে বললো,

–” আমাকে তো বললে। কিন্তু তোমার পুত্রবধূ কি আমার সাথে যেতে রাজি হবে আম্মু ?”
নক্ষত্রের আম্মু মুচকি হাসলো। উনি এসে নক্ষত্রের পাশে বসতেই নক্ষত্র ওর আম্মুর কোলে শুয়ে পড়লো। নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের চুল টেনে দিতে দিতে থাকলো। প্রশান্তিতে নক্ষত্র ওর চোখ বন্ধ করে নিলো। নক্ষত্রের আম্মু বললো,
–“সম্পর্কটাকে সহজ করতে চাইলে দুজন দুজনকে সময় দিতে হয়। বোঝার চেষ্টা করতে হয় একে অপরকে। তিতিক্ষা তো তোমার সাথে তেমনভাবে একটা সময় কাটায়নি। তুমি যে মানুষ হিসেবে কেমন সেটা তো সে জানেনা। ফোনে কথা বলে কতটুকই বা মানুষ চেনা যায়? এই বার দিয়ে তিনবার হলো তোমাদের দেখা। তবুও দুজন দুজনকে সেভাবে সময় দাওনি। আর সম্পর্কটাকেও সহজ করতে পারো নি।
এজন্য মনে হয় তিতিক্ষা তোমার থেকে পালিয়ে বেড়ায়। তোমরা যাতে দুজন দুজনকে সময় দিতে পারো। তিতিক্ষা আর তোমাকে এই কারনেই এখানে এনেছি। এটা তিতিক্ষার বাসার সবাই জানে। আর সবাই চাই তোমরা একে অপরকে চেনো, বুঝো। আমি জানি আমার ছেলের মতো বিবেক আর বুদ্ধিসম্পূর্ণ ছেলে হয় না। তবুও বলছি, সময় দিতে গিয়ে এমন কিছু ভুল করোনা। যাতে আমাদের সবার মাথা হেট হয়।”
নক্ষত্র বুঝলো ওর আম্মু ওকে কি বুঝাতে চাচ্ছে। নক্ষত্র ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,

–” কালকে সকালে আমরা বের হবো। এই কথাটা তোমার পুত্রবধূকে জানিয়ে দিও। আর হ্যা চারদিন আমরা বাসায় ফিরছিনা। এই চারদিন তোমার পুত্রবধূকে সিলেট ঘুরিয়ে দেখাবো । আর আম্মু চিন্তা করো না। তোমার ছেলে তোমার মেয়েকে আগলে রাখবে। আমার নামে নেগেটিভ কোন অভিযোগ তোমার কাছে আসবেনা।”
নক্ষত্রের আম্মু ছেলের কথা শুনে হাসলো। নক্ষত্র এখন ঘুমাবে ভেবে নক্ষত্রের আম্মু চলে গেল। নক্ষত্র ওর ফোনটা বের করে তিতিক্ষাকে কল দিলো। তিতিক্ষা কলটা রিসিভ করলো। নক্ষত্র বললো,
–“তোমার লজ্জামাখা মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তুমি একটু লজ্জা পাও তো, আমি বসে বসে দেখি।” (আদুরে সুরে)
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা সত্যিই লজ্জা পেলো। হুট করে ফোন দিয়ে এভাবে কেউ কথা বলে। তিতিক্ষা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এমন আদুরে সুরে নক্ষত্রের বলা ভয়েজটা খুব মারাত্মক । নক্ষত্রের এমন আদুরে ভয়েজটা তিতিক্ষার যেন সরাসরি হার্টে গিয়ে বিঁধে। তিতিক্ষা ফোনটা কানে নিয়ে চুপ করে আছে। লজ্জায় ওর মুখটা লাল আভা ধারণ করেছে। গলুমলু গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে আছে। নক্ষত্রের বলা কথাটা শুনে ওর শরীর মৃদুভাবে কাঁপছে। তিতিক্ষা চুপ করে আছে দেখে নক্ষত্র বললো,
–“আমি কি তোমার রুমে আসতে পারি ? শুধুমাত্র
তোমার এই লজ্জামাখা মুখশ্রীটা দেখে আমার দু’চোখের তৃষ্ণা মেটাতে।” (নক্ষত্র মুচকি হেসে)
নক্ষত্র ইচ্ছে করেই তিতিক্ষাকে লজ্জাতে ফেলতে চাচ্ছে। ইস! ছেলেটা আসলেই খুব ফাজিল। তার না হলে এভাবে কেউ লজ্জা দেয়। নক্ষত্রের এসব বললেই বা ওকে কেন লজ্জা পেতে হবে? এই কথার উত্তরটা তিতিক্ষার অজানা। তিতিক্ষার চুপ করে থাকাতে নক্ষত্র দুষ্টু হেসে আবার বলে উঠলো,

–“তোমাকে পুরো টমেটোর মতো লাগছে। আমার যদিও টমেটো খুব একটা পছন্দ না। তবে তুমি নামক টমেটো বউটা আমার খুব বেশি পছন্দের। ” (আদুরে সুরে, স্লো ভয়েজে)
তিতিক্ষার এবার যায় যায় অবস্থা। নক্ষত্রের বলা কথাগুলো শুনে ওর হার্ট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। তিতিক্ষা লজ্জায় কিছু বলতেও পারছেনা। নক্ষত্রের বলা এমন কথায় প্রতিউত্তরে কি বলবে তিতিক্ষা খুঁজে পাচ্ছে না। তিতিক্ষা চুপ করে থেকে মনে মনে ভাবছে,
–“এই ছেলেটা আজকে উনার প্রতিটা কথায় আমাকে লজ্জা দেওয়া জন্যই মনে হয় উঠে পড়ে লেগেছে।”
তিতিক্ষা কিছু একটা মনে করে মাথা তুলে সামনে তাকালো। নক্ষত্র তখন দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। নক্ষত্রের দৃষ্টি তখন তিতিক্ষার মুখ পানে। নক্ষত্র মুচকি মুচকি হাসছে।
তিতিক্ষা নক্ষত্রকে দেখে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নিলো। নক্ষত্র হাসলো তিতিক্ষার কান্ড দেখে। অদ্রি তখনই তিতিক্ষাকে ডাকতে রুমে আসলো। নক্ষত্রকে দেখে অদ্রি ভ্রু কুঁচকে বললো,

–“ভাইয়া তুই কি এখন ভাবমণির সাথে প্রেম করতে এসেছিস?”
অদ্রির কথা শুনে নক্ষত্র ঘাড় ঘুরে পাশ ফিরে তাকালো। অদ্রি ওর কোমরে দুই হাত রেখে নক্ষত্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অদ্রির এমন বেআক্কেলের মত কথা শুনে, নক্ষত্র অদ্রির মাথাতে একটা ঠুয়া মেরে চলে গেছে। অদ্রি মাথা নাড়তে নাড়তে রুমে ঢুকলো। তিতিক্ষা তখনও চুপ করে মাথা নিচু করে বসে ছিলো। অদ্রি তিতিক্ষার পাশে বসে বললো,
–“ভাবিমণি চলো সবাই বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। তোমাকেও ডাকছে।”
অদ্রির কথা শুনে তিতিক্ষা উঠে দাঁড়ালো। দুজনেই গেলো রুমের বাইরে। নক্ষত্র তখন একটু দূরে ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল। সামনে রাখা আছে হরেক রকমের নাস্তা। সবাই খাচ্ছে আর জমপেশ আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ির সবাই এখানে উপস্থিত আছে শুধু পলক ছাড়া। নক্ষত্র ফোনে কথা বলা শেষ করে এসে দাঁড়াতেই অদ্রি বলে উঠলো,
–” আম্মু তোমার ফাজিল ছেলে একটা আকাম করেছে। সে ভাবিমণির রুমে উঁকি দিচ্ছিল। ভাবি মণিকেও সে কিছু একটা বলেছে। যার কারণে ভাবিমণি এক্কেবারে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তুমিই দেখো ভাবিমণির মুখটা এখনো লজ্জায় লাল হয়ে আছে। তোমার ভদ্র ছেলের এই আকামটা আমি দেখে ফেলেছি। তাই সে আমাকেও মেরেছে।”
লে এবার অদ্রি একঘর মানুষের সামনে নক্ষত্রের ইজ্জতের ফালুদা করে দিলো। নক্ষত্র আড়চোখে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষার অদ্রির কথা শুনে আরো বেহাল দশা। তখনই নানু বাজখাঁই গলাতে বলে উঠলো,
–“অই ফুরি আমার নাত্তি রে কি কালাজাদু খরসত এখবারে বউর ফাগল অইগেছ।”

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#part_08

— “অই ফুরি আমার নাত্তি রে কি কালাজাদু খরসত এখবারে বউর ফাগল অইগেছ।”
নানুর কথা শুনে বড়রা মুখ টিপে হাসছে। নক্ষত্রও এবার লজ্জা পেলো। বিশেষ করে ‘বউ’ শব্দটা শুনে। তিতিক্ষা এখন নক্ষত্রের বউ; এই কথাটা শুনলেই নক্ষত্রের মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আর তিতিক্ষার মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে মাটির নিচে ঢুকে পড়তে। যেমন ফাজিল ভাই তেমনি হয়েছে তার বোন। আর নানু সে তো আছে একধাপ উপরে। বড় মামিরাও হাসছে অদ্রির কথা শুনে। বড়দের সাথে সামনে লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতি। তিতিক্ষার ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে রুমে গিয়ে বালিশের নিচে মুখ লুকাতে। সবাই তিতিক্ষাকে লজ্জাতে ফেলার প্রতিযোগিতায় যেন নাম লিখিয়েছে। এজন্য যখন তখন যে যার মতো করে ওকে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে।
নক্ষত্র সবার দিকে আড় চোখে একবার তাকালো। এরপর নরম সুরে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “তুমি শীতের ড্রেস পড়ে এসো। আমরা একটু বাইরে বের হবো।”
নক্ষত্রের আম্মু কথাটা শুনে নক্ষত্রকে বললো,
— “আব্বু রাতের বেলায় আবার বের হবি? এত জার্নি করে এসে এখন একটু রেস্ট নিলে হতো না?”
নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নক্ষত্র ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে বললো,
— “আম্মু আমার একটু কাজ আছে।”
নক্ষত্রের আম্মু আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু বড় মামির মেয়ে পাতা নক্ষত্রের আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “ফুপিমণি তুমি এত টেনশন করছো কেন? ভাইয়ার এখন আর এক্সটা এনার্জির প্রয়োজন নেই। ভাইয়ার পাওয়ার ব্যাঙ্ক তো ভাইয়ার সাথেই যাচ্ছে।”
পাতার কথা শুনে নক্ষত্রও হাসলো। নক্ষত্র অদ্রি আর পাতার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “ফিরে এসে আপনাদের প্রাপ্য পিটুনিটুকু পরিশোধ করে দিবো।”
নক্ষত্রের কথা শুনে অদ্রি আর পাতা একে অপরের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে রেডি হয়ে আসতে বললো। তিতিক্ষা রুমে যেতে যেতে পাতার পুরো কথাটাই শুনেছে। এদিকে নক্ষত্রের সাথে এখন ওর যেতে হবে। এটা ভাবলেই ওর শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নক্ষত্র ছোট্ট মামার থেকে গাড়ির চাবিটা নিলো। আর নিজেও শীতের ড্রেস পড়ে আসলো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার রুমে এসে দেখে, তিতিক্ষা চুপ করে বসে আছে। তিতিক্ষা অসহায় মুখ করে বললো,
— “ও আম্মু আমি না গেলে কিছু হবে? প্লিজ তোমার ছেলেকে বলো না যে আমি যাবো না।”
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার কথা শুনে রাগী চোখে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। নক্ষত্রের আম্মুর রাগী চোখে তাকানো দেখে তিতিক্ষা ওর চোখ নামিয়ে নিলো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে রেডি করতে করতে বললো,
— “নিজের ফিওন্সের সাথে যাচ্ছিস, তাহলে এত লজ্জা কিসের শুনি? আমার ছেলেটা তোর সাথে সময় কাটাবে বলে শীতের মধ্যে তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছে। আর তুই কিনা এখানে এসে লজ্জায় মরে যাচ্ছিস?”
তিতিক্ষা কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেল না। নক্ষত্রের আম্মু যে এখন কিছুতেই তিতিক্ষার সাপোর্ট করবে না। এটা তিতিক্ষা খুব ভালো করে বুঝলো। ওর শাশুড়িই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম শাশুড়ি; যে ছেলের সাথে প্রেম করতে যেতে নিজে শাশুড়ি হয়ে বৌমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে নক্ষত্রের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,
— “এই নে আমার মেয়েকে। যেমন ভাবে দিলাম ঠিক তেমন ফেরত নেব। যদি কোনভাবে ওর ঠান্ডা লাগে। তাহলে আমি তোর বারোটা বাজাবো। মনে থাকে যেন।”

নক্ষত্র ওর আম্মুর কথা শুনে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা কে দেখতে পুরো পুতুলের মত লাগছে। নক্ষত্রের আম্মু একদম বাচ্চাদের মত তিতিক্ষা কে সাজিয়ে দিয়েছে। তিতিক্ষার আম্মু নক্ষত্রের আম্মুকে বারবার করে বলে দিয়েছে যে তিতিক্ষার অল্পতেই ঠান্ডা লাগে। তিতিক্ষাকে যেন উনি একটু দেখেশুনে রাখেন। নক্ষত্রের আম্মুও কোন রিক্স নিতে চায় না। এজন্য তিতিক্ষাকে উনি একেবারে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শীতের পোশাকে মুড়িয়ে দিয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মুচকি হেসে ওর আম্মুকে বলল,
— “হুম! আমার বয়েই গেছে তোমার পুতুল মেয়েকে ঠান্ডা লাগাতে।”
নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের পিঠে একটা থাবা দিলো। নক্ষত্রের তিতিক্ষাকে গাড়িতে উঠে বসতে বলল। নক্ষত্র নিজেও গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। নক্ষত্রের আম্মু ওদের সাবধানে যেতে বলল। নক্ষত্র ওর আম্মুকে ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলে গাড়ি স্টার্ট দিল। তিতিক্ষা জানালার দিকে তাকিয়ে চুপ করে করে বসে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— “এই যে পুতুল কন্যা আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন? এভাবে চুপ করে আছেন কেন?”
তিতিক্ষা একনজর নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
— “ভ ভ ভয় পাবো কেন?”

নক্ষত্র তিতিক্ষার কথা শুনে আবারও হাসল। তিতিক্ষার লজ্জা মাখা মুখটা নক্ষত্রের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে একটু রাগানোর জন্য বলল,
— “তুমি কি জন্ম গতই তোতলা? নাকি বিয়েগত তোতলা?”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা ভুরু কুঁচকে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। জন্মগত শব্দটার মানে তিতিক্ষা খুব ভালো করে বুঝে। কিন্তু বিয়েগত শব্দটার মানে তিতিক্ষার অজানা। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে মৃদু স্বরে বলল,
— “বিয়েগত? এই কথাটার মানে ঠিক বুঝলাম না।”
নক্ষত্র এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর অন্য হাত দিয়ে নিজের চুল গুলোতে হাত বুলাচ্ছে। নক্ষত্রের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি স্পষ্ট। নক্ষত্র তিতিক্ষা কে বলল,
— “জন্মগত মানে জন্ম থেকেই। আর বিয়ে গত মানে বিয়ে থেকেই। যদিও আমাদের বিয়ে হয়নি তবে এনগেজমেন্ট তো হয়েছে। পুরোপুরি ভাবে আমি তোমাকে পাইনি । তবে এখন অর্ধেকটা তো পেয়েছি। এনগেজমেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম তুমি তোতলা না। কিন্তু এখন আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলেই তুমি তোতলাও। ঐজন্য আমি ভাবলাম তুমি বিয়েগত তোতলা।”
তিতিক্ষা হতভম্ব হয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র যে এরকম একটা যুক্তি দেখাবে তিতিক্ষা কল্পনাও করেনি। নক্ষত্র একটু পর গাড়ি থামালো। তিতিক্ষা কে নামতে বলে সে নিজেও নামলো। অসম্ভব সুন্দর একটা ব্রীজের উপরে ওরা এসেছে। চারদিকে লাইটের ঝলকানি। ব্রিজের উপর দিয়ে অনেক গাড়ি যাচ্ছে। ঠিক রাতের যমুনা সেতুর সৌন্দর্যতা যেমন দেখায় কিছুটা তেমন মনে হলেও দুটোর সৌন্দর্য দুই ধরনের। তিতিক্ষা নক্ষত্রের পাশে এসে দাঁড়ালো। তিতিক্ষা অবাক চোখে দেখছে ব্রিজের সৌন্দর্য। আর নক্ষত্র দেখছে তিতিক্ষার হাস্যজ্জল প্রাণবন্ত মুখশ্রীটাকে। তিতিক্ষা ওর দুই গালে হাত থেকে অবাক হয়ে নক্ষত্র কে জিজ্ঞাসা করল,

— “ওয়াও! এটা কোন জায়গা? জায়গাটা তো অসম্ভব সুন্দর!”
নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “যেটা ন্যাচারাল বিউটি সেটার সাথে কখনো কারো তুলনা হয় না। ন্যাচারাল হলো একদম সবার থেকে ভিন্ন কোয়ালিটির।” ( ধীর কন্ঠে)
তিতিক্ষা আবারও জানতে চাইলো ওরা এখন কোথায় আছে? নক্ষত্র ছোট্ট করে উত্তর দিল,
— “এই ব্রিজটার নাম ক্বীন ব্রিজ।”
এই ব্রিজটার এমন অদ্ভুত নাম শুনে তিতিক্ষা সামনের দিক থেকে ওর দৃষ্টি সরিয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার আগ্রহসূচক দৃষ্টির মানে বুঝে নিজে থেকেই বললো,
— “গত শতকের তিরিশ দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্নর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয় । এবং এই ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্নর মাইকেল ক্বীনের নামানুসারে।”
তিতিক্ষা এবার বুঝতে পারলে এমন অদ্ভুত নামের কারণ। আরো বেশ কিছুক্ষন ওরা ওখানে থেকে গাড়িতে উঠে বসলো। পাঁচ মিনিট পর নক্ষত্র আবার গাড়ি থামিয়ে তিতিক্ষা কে গাড়ি থেকে নামতে বললো। তিতিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে নিচে দাঁড়ালো। নক্ষত্র গাড়ি লক করে তিতিক্ষা কে নিয়ে সামনে এগুলো। নক্ষত্র একটা চায়ের দোকানের সামনে এসে চাওয়ালা কে বলল,
— “মামা দুই কাপ বুলেট চা দিয়েন।”
নক্ষত্র কথা শুনে দোকানী মাথা নাড়িয়ে বললো,
— “জি মামা এখনই দিতেছি।”
তিতিক্ষা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে অনেকগুলো মানুষ ভিড় জমিয়েছে চা খাওয়ার জন্য। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে এসে দাঁড়াতেই একটা ছেলে এসে ওদের চা দিয়ে গেল। নক্ষত্র ছেলেটার হাত থেকে চায়ের কাপ দুটো নিলো। একটা কাপ তিতিক্ষার দিকে এগিয়ে দিল। তিতিক্ষা নক্ষত্রের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে নিল। তিতিক্ষার অবস্থা দেখে নক্ষত্র হো হো করে হেসে দিল। তিতিক্ষা অবাক চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম নক্ষত্রকে তিতিক্ষা এভাবে হাসতে দেখলো । নক্ষত্র যে এমন প্রাণখোলা হাসি হাসতে পারে; এটা তিতিক্ষা আজকে জানলো। নক্ষত্র হাসি থামিয়ে বললো,
— “এটা সাধারন চা না। এই চায়ের নাম বুলেট চা। তেতুল, লবণ, কাঁচা মরিচ, চা, আর চিনির সংমিশ্রণে এই চা টা বানানো হয়। এর টেস্ট টা দারুন না?”

তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথায় মাথা নাড়িয়ে শুধু হ্যাঁ বোঝাল। নক্ষত্রের হাসির শব্দটা তিতিক্ষা কানের কাছে বেজে উঠছে। ওর হৃদস্পন্দন টা আবার কম্পিত হতে শুরু করেছে। তিতিক্ষা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে একটা পা এক পা করে সামনের দিকে এগোচ্ছে আর চায়ে চুমুক দিচ্ছে। এই চায়ের টেস্টা আসলেই অসাধারণ। হুট করে কোথা থেকে একটা লোক এসে তিতিক্ষার পাশে দাঁড়ালো। তিতিক্ষা লোকটিকে দেখে নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে আসতেই, লোকটিও তিতিক্ষার সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করল। নক্ষত্রের দৃষ্টি ওদের দিকে নিবন্ধ। লোকটির এমন কাজে তিতিক্ষা দ্রুত পায়ে এসে নক্ষত্রের পাশে দাঁড়ালো। নক্ষত্র লোকটির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে একটু জোরে বললো,
— “আপনি কি আমার বউয়ের পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন?” নক্ষত্রের মুখে বউ শব্দ টা শুনে লোকটি থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সেই লোকটি ভেবেছিল তিতিক্ষা একা। এজন্য তিতিক্ষা কে ডিস্টার্ব করতে এসেছিল। একা মেয়ে থাকলে যেরকম হয়ে থাকে। নক্ষত্র তিতিক্ষা হাত ধরে লোকটির সামনে এসে দাড়ালো। লোকটি মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “উনি তোমার মামার বয়সী। উনাকে মামা সম্মোধন করে উনার সাথে ইন্ট্রুডিউস করে নাও। আর মামা আপনি আপনার ভাগ্নীকে কি বলবেন?”

লোকটি আমতা আমতা করে জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো। মাইনকার চিপায় পড়লে মানুষ যেমন হাসিটা দেয় তেমন! নক্ষত্রের ঠান্ডা মাথায় দেওয়া বাঁশ লোকটি বিনাবাক্যে হজম করে নিলো। চায়ের দোকানের কয়েকজন এগিয়ে আসলো। উনারাও এতক্ষণ লোকটির কান্ড দেখছিলো। দোকানের ছেলেগুলো লোকটিকে কিছু বলতে যাবে। তখনই লোকটি এদিক ওদিক তাকিয়ে ভৌ-দৌড় দিয়ে সে স্থান ত্যাগ করল। তিতিক্ষা নক্ষত্রের মুখপানে চেয়ে আছে। নক্ষত্র চায়ের বিল দিয়ে ওখান থেকে সরে আসলো। সাথে তিতিক্ষা ছিলো এজন্য নক্ষত্র ছেলেটাকে তেমন কিছু বলেনি।
বড়মামা আর নক্ষত্রের আম্মু বসে গল্প করছে। পাশে ছোট্ট মামি বসে ফল খাচ্ছে। বড় মামী নক্ষত্রের আম্মুর দিকে তাকালো বললো,
— “আপা নক্ষত্র আর তিতিক্ষাকে এভাবে একা ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে?”
নক্ষত্রের আম্মু মুচকি হেসে বললো,
— “দিন পাল্টেছে এখন। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে চেনে না জানে না। ওদের তো দুজন দুজনকে চেনা উচিত, সময় দেওয়া উচিত। আর নক্ষত্রের উপর আমার বিশ্বাস আছে।”
নক্ষত্র গাড়িতে বসেই তিতিক্ষাকে এটা ওটা দেখাচ্ছে। ওই ব্যাপারটা নিয়ে তিতিক্ষা তখন ভয় পেয়েছিলো। কিন্তু নক্ষত্র ব্যাপারটাকে এমনভাবে সমাধান করবে তিতিক্ষা ভাবতেও পারেনি। নক্ষত্র কে নিয়ে তিতিক্ষার মনে অদ্ভুত একটা অনুভূতি বাসা বাঁধছে। তিতিক্ষা একবার নক্ষত্রের দিকে তাকাতেই নক্ষত্রের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। তিতিক্ষা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। নক্ষত্র মুচকি হাসলো। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে ওর আঙুল মোচড়াচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে স্বাভাবিক করতে বললো, “তিতিক্ষা তুমি কিতা সিলেটি মাত বুজো নি?”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের মুখে সিলেটি কথা শুনে হাসলো। আর বললো একটু আধতু বোঝে। নক্ষত্র ওর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বললো,
— “আমার টেমেটু বউ। তুমারে ফুতুল ওর লাখান লাগের। খাল্কে থাকি আমরা দুইজনে মন কুলিয়া প্রেম/ফেম করমু।”
তিতিক্ষার নক্ষত্রের কথা বুঝতে একটুও সময় লাগেনি। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে দুই হাত মুখ ঢেকে নিলো। আর নক্ষত্র হো হো করে হেসে দিলো।

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু ??
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_09

নক্ষত্রের কথা বুঝতে তিতিক্ষার একটুও সময় লাগেনি। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে দুই হাত মুখ ঢেকে নিলো। আর নক্ষত্র হো হো করে হেসে দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে লজ্জাতে ফেলে আবারও ওর লজ্জা মাখা মুখশ্রীটা দর্শন করে নিলো। নক্ষত্রের ইচ্ছে করে ওকে বারবার লজ্জাতে ফেলতে চাচ্ছে। এটা তিতিক্ষারও বুঝতে আর বাকি নেই। তিতিক্ষার লজ্জামাখা মুখশ্রীটকে দেখার জন্য নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বারবার লজ্জায় ফেলতেও দ্বিধা করছে না। লজ্জা পেয়ে গাল দুটো লাল বর্ণ হয়ে, তিতিক্ষার দ্রুত ওর চোখ সরিয়ে নেওয়াটা নক্ষত্রের কেন জানি খুব ভালো লাগে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের চোখের দিকে সরাসরি কখনোই তাকায় না; এ ব্যাপারটা নক্ষত্র খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে। প্রতিবারই ভুল করে চোখাচোখি হলেও তিতিক্ষা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। যেন নক্ষত্রের চোখের দিকে তাকালে, সে অনুভূতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। অজানা অনুভূতিরা এসে ওকে যেন পরিপূর্ণভাবে গ্রাস করে নিবে। ভুল করেও যখন ওদের চোখাচোখি হয়ে যায়। তখন একবার তাকানোতেই তিতিক্ষা বুঝতে পারে; নক্ষত্রের চোখে অজানা এক মাদকতায় ছড়াছড়ি। যে মাদকতা থেকে নিজেকে নিস্তার করার সাহসীকতা তিতিক্ষার কোনদিন হয়ে উঠবে কিনা জানা নেই।
তিতিক্ষা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাতের ঘুরে বেড়ানো ব্যাপারটা তিতিক্ষার আগে থেকেই খুব পছন্দের। কেন জানি রাতটাকে বেড়ানোর জন্য ওর মোক্ষম সময় বলে মনে হয়। রাতের বেলায় মানুষের আনাগোনা কম থাকে। সৌন্দর্যটাকেও ভাল করে উপভোগ করা যায়। মৃদু বাতাস, বুনো ফুলের গন্ধ,

রাতের লাইটের ঝলকানি, কয়েকজন মানুষের আনাগোনা, মাথার ওপরে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রের মেলা, ঠিক তার বিপরীত পাশে ইয়া বড় একটা চাঁদ। এত এত নক্ষত্রের ভিড়ে চাঁদ ওর সর্বোচ্চ আলোটুকু দিয়ে অন্ধকার নিরাময় করার চেষ্টা করবে। লক্ষ লক্ষ নক্ষত্ররা তাদের এক চিমটি আলো দিয়ে জানান দিবে রাতের অন্ধকারে তার উপস্থিতি। এর সাথে পাশে যদি প্রিয় মানুষটা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। পরম যত্নে আঙ্গুলে আঙ্গুল রেখে। মৃদু পায়ে হেঁটে দুজন দুজনার অনুভূতিকে ভালবাসা চাদরে মুড়িয়ে একসাথে সামনের পথে অগ্রসর হবে । আবার কখনোও প্রিয়জনের সঙ্গে একই রিক্সায় একই চাদরের আড়ালে উষ্ণতা ভাগাভাগি করে নিবে। এমন টুকরো টুকরো অনুভুতি গুলোই তো ধীরে ধীরে অনুভুতির শীর্ষবিন্দুতে রুপান্তিত হবে।
তিতিক্ষা চুপ করে আছে। কিন্তু ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা স্পষ্ট। তিতিক্ষাকে হাসতে দেখে নক্ষত্রের মনটা আরো ভালো হয়ে গেল। নক্ষত্র চেয়েছিল তিতিক্ষা ওর সাথে একটু সময় কাটাক। দু’জনকে কাছে থেকে অনুভব করুক। খুব কাছে থেকে চিনে নিন একে অপরের ভাল লাগা মন্দ লাগা গুলোকে। এই প্রথম নক্ষত্র তিতিক্ষার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছে। এজন্য সে এই সময়টুকু কাজে লাগাচ্ছে। নক্ষত্র ওর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আবারও বললো,
— “অই ফুরি আমি তোমার কিতা? তুমি আমারে দেকিয়া অতো শরম ফাও খেনে।”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা হাসলো। গাড়ির স্পিডটা কমিয়ে দিয়ে নক্ষত্র ধীর কন্ঠে বললো,
— “ওহ ফুতুল বউ আমার ফক্ষে আফনারে দুরই রাখা সম্ভব অর না। অনুভূতিরা আমারে আইয়া আইঞ্জা খরি দরছে। যতো আউজ্ঞান ফারি তুমারে আমার বউ বানাইলাইমু।”

তিতিক্ষা মুখে হাত দিয়ে হাসছে। নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষার গাল দুটো গাল হয়ে গেছে। নক্ষত্র আড়চোখে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে ড্রাইভে মন দিলো।
তিতিক্ষার শীতের রাতের সৌন্দর্যটাকে দেখতে থাকলো। নক্ষত্র সিলেটে আরো বেশ কিছু জিনিস তিতিক্ষাকে দেখালো। কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে রাতের ডিনার সেরে একেবারে ওরা বাসায় ফিরলো। নক্ষত্র বাসার সামনে গাড়ি থামালো। তিতিক্ষা গাড়ি থেকে নামতে গেলো, তখনই নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে আটকে দিলো। তিতিক্ষার ঘাড় ঘুরিয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। এই প্রথম নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা স্পর্শ করলো। তিতিক্ষার নক্ষত্রের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। তিতিক্ষার হৃদস্পন্দনটা দ্রুত গতিতে লাফানো শুরু করেছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
— “শীতের রাত। সাবধানে থাকবে। আর হ্যা, ঠান্ডা যেন না লাগে।”
তিতিক্ষা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। গাড়িতে থেকে নেমে বাসায় ঢুকে গেল। নক্ষত্র গাড়ি পার্ক করে ওর রুমে চলে গেল। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
তিতিক্ষা পা টিপে টিপে রুমে ঢুকে দেখে অদ্রি ঘুমিয়ে গেছে। অদ্রি না ঘুমালে তিতিক্ষাকে যে এখন জেরা করা শুরু করতো এটা তিতিক্ষার অজানা নয়। রুমের দরজা আটকে তিতিক্ষা শব্দহীনভাবে ড্রেস বদলে ফ্রেশ হয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।
বিভা আর তনুকা পাশাপাশি শুয়ে আছে। বিভা তনুকাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “আপু আজকে নক্ষত্র ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়েছিলো।
তনুকা হেসে বললো,
— “হুম দিতেই পারে।”
বিভা ওর মাথার নিচের বালিশটা ঠিকঠাক করে নিলো। এরপর তনুকার দিকে ফিরে বললো,
— “ভাইয়া ফোন দিয়ে সবার খোঁজ খবর নিলো। আর তিতু আপুর কি পছন্দ অপছন্দ সবটা জেনে নিলো। যাতে আপুর ওখানে কোন সমস্যা না হয়। আপু আর ভাইয়া একসাথে আছে। উফফ! ওরা এখন চুটিয়ে প্রেম করবে। ধুর! আমি যে কি ভাবছি। তিতু আপু যে লজ্জাবতী। দেখা যাচ্ছে, সে লজ্জায় ভাইয়ার থেকে বিশ হাত দুরে দুরে থাকবে। তবে নক্ষত্র ভাইয়ার আপুর প্রতি এতটা কেয়ার দেখে আমার খুব ভালো লাগে। রায়হান ভাইয়াও তো তোমাকে চোখে হারায়।
তিতু আপুও তোমার মত খুব লাকি তাই না রে আপু?”
তনুকা মুচকি হাসলো বিভার কথা শুনে। এরপর বললো,

— “হুম নক্ষত্র খুব ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে। আর মেইন কথা হলো, আমাদের তিতুর জন্য নক্ষত্র একদম পার্ফেক্ট।”
নক্ষত্র রুমে আসতেই ওর ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো। রুহান ফোন দিয়েছে। নক্ষত্র জানালো সে সিলেটে এসেছে। আপাতত কিছুদিন সে সিলেটে থাকবে। রুহান যখন শুনলো তিতিক্ষা এখানে আছে। তখন নক্ষত্রকে একটু খোঁচা মারলো। বন্ধুরা যেমন মজা করে তেমন আর কি। নক্ষত্র কিছু বললো না, শুধু হাসলো।
তিতিক্ষার আব্বু তিতিক্ষার আম্মুকে তিতিক্ষার কথা জিজ্ঞাসা করলো। আজকে তিতিক্ষার সাথে কথা হয়নি ওর আম্মুর। তিতিক্ষা ফোন দিয়েছিলো কিন্তু তখন উনি ব্যস্ত ছিলেন। এজন্য তখন কথা বলতে পারেনি। যদিও জানে নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবে। তবুও একটু টেনশন হচ্ছে এই আর কি! মামনী ফোন দিয়েও ওদের খোঁজ খবর নিয়েছে। তিতিক্ষার আম্মুর তিতিক্ষার সাথে কথা না হলেও নক্ষত্রের সাথে হয়েছে। নক্ষত্রের এখন সিলেটে আছে; এ কথাশুনে তিতিক্ষার আম্মু আরো নিশ্চিন্ত হয়েছেন। তিতিক্ষা শুয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসছে। নক্ষত্র যে ওর প্রতি কতটা কেয়ারিং এটা খুব ভাল করেই তিতিক্ষা বুঝতে পারছে। এই প্রথম নক্ষত্রের সাথে কাটানো মুহূর্তটুকু তিতিক্ষার।কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিতিক্ষা কিছু একটা ভেবে বালিশের পাশে থেকে ওর ফোনটা তুলে নক্ষত্রকে মেসেজ করলো,
— “নাহিয়ান আবরার আপনাকে ধন্যবাদ। ”
মেসেজ টা সেন্ড করে তিতিক্ষা নিজেই লজ্জা পেলো। নক্ষত্রের হাতেই তখন ফোনটা ছিলো। মেসেজ টোন বেজে উঠতেই তিতিক্ষার মেসেজটা দেখে নক্ষত্র সাথে রিপ্লাই দিলো,
— “শুধু ধন্যবাদে কাজ হবে না। অন্যকিছু চাই।”
তিতিক্ষা মেসেজটা পড়ে। নক্ষত্রকে মেসেজ লিখলো,
— “কি চাই?”

তিতিক্ষা মেসেজটা লিখে সেন্ড করার আগেই নক্ষত্র মেসেজ আসলো। তিতিক্ষা মেসেজটা পড়ে হাসলো,
— “যেদিন চাইবো; সেদিন আমাকে ফিরাতে পারবে না। যখন আমার প্রয়োজন হবে ঠিক তখনই আমি তোমার থেকে চেয়ে নিবো।”
তিতিক্ষা আর কথা বাড়ালো না। ফোনটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। নক্ষত্র শব্দ করে হাসার কথাটা মনে পড়তেই তিতিক্ষা নিজেও হেসে দিলো। নক্ষত্র ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও শুয়ে পড়ল। যদিও দুজনের চোখেই ঘুম নেই। আজকে মনে হয় ওদের চোখে আর ঘুম আসবে না। কারণ দুজনেই তো একে অপরকে নিয়ে ভাবতে বিভোর। প্রিয় মানুষটাকে হাজারো স্বপ্ন বুনছে ওদের অনুভুতিরা।
পরেরদিন সকালে নক্ষত্র ফ্রেশ হয়ে মামাদের বাসায় আসলো। তিতিক্ষা, পাতা আর অদ্রি তিনজনে মিলে হাঁটতে বের হয়েছিল। ওর নানু বাসার পাশেই ওদের সবজি ক্ষেত। এটা নক্ষত্রের ছোট মামা করেছে টাটকা সবজি খাওয়া জন্য। পাতা একটি ডালা হাতে নিয়ে গিয়েছিলো। সেই ক্ষেত থেকেই টমেটো, ধনেপাতা, লালশাক আর বেগুন তুলে আনলো। একদম টাটকা হওয়ার জন্যে দেখতেও সুন্দর দেখাচ্ছে। তিতিক্ষা এই প্রথম ক্ষেতে ঢুকে নিজে হাতে শাক তুলেছে। আর অদ্রি সে তো সেলফি তুলতে ব্যস্ত। হালকা হালকা কুয়াশা জমে আছে শাকগুলোর পাতার উপর। পাশের ঘাসগুলো কুয়াশাতে ভিজে একাকার হয়ে আছে। একটু দুরে শিউলি গাছের নিচে অনেকগুলো শিউলি ফুল পড়ে আছে। তিতিক্ষার একমুঠো ফুল তুলে নিলো। এরপর তিনজনেই বাসায় ঢুকলো।

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৪+৫+৬

নক্ষত্রের আম্মু তিনজনকেই বকা দিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন। বকা খেয়ে তিন জনেই হাসতে হাসতে রুমে চলে গেল। তিতিক্ষা রুমের দিকে এগোতেই নক্ষত্রের সাথে চোখাচোখি হল। নক্ষত্র কফির মগ হাতে নিয়ে বসে ছিল। মিস্টার আবরার ফোনে কথা বলতে বলতে এসে নক্ষত্রের পাশে বসলো। নক্ষত্র ইশারায় তিতিক্ষাকে বললো,
— “মাথাতে কুয়াশা পড়েছে, দ্রুত মাথা মুছে নাও।”
বড় মামি নক্ষত্রের আম্মু আরো কয়েকজন মিলে রান্না ঘরে নাস্তা রেডি করছে। তিতিক্ষা ফ্রেশ হয়ে আসতেই সবাই একসাথে খেতে বসলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। নক্ষত্র পানির গ্লাস হাতে নিয়ে তিতিক্ষাকে বলল,
— “তিতিক্ষার রেডি হয়ে নাও। আমাদের বের হতে হবে।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুর দিকে তাকালো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে রুমে নিয়ে গেল। উনি নিজে হাতে জিন্স আর লাল কামিজ বের করে দিলেন। তিতিক্ষার চেঞ্জ করে এসে দাঁড়ালো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার চুলগুলো রিবণ দিয়ে উঁচু করে ঝুঁটি করে দিলো। আর কামিজের উপরে কালো লেডিস জ্যাকেট পড়িয়ে দিলেন যাতে বাইরের বাতাসে শীত না লাগে। লাল সিফনের ওড়নাটা পড়িয়ে দিলে নেক র‍্যাপ স্টাইলে। এই ধরণের স্টাইলে ওড়না কে ঘাড়ের দুদিক দিয়ে পেছিয়ে স্টোলের মত নেওয়া হয়ে থাকে। যা দেখতে ভীষণ স্মার্ট লাগে।
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে উনার মন মত করে রেডি করিয়ে দিলো। নক্ষত্রের আম্মু যথেষ্ট স্টাইলিশ। এজন্য ছেলে বউকেও উনি স্টাইলিশ ভাবে সাজিয়ে দিলো। তিতিক্ষা রুমে গিয়ে রেডি হয়ে এসে দাঁড়াতেই নক্ষত্র তখন চলে আসলো। অদ্ভুত ভাবে নক্ষত্র কালো আর লাল মিলিয়ে পড়েছে। নক্ষত্রের লাল আর কালোর সংমিশ্রণের টির্শার্ট। আর টি-শার্টের উপরে কালো জ্যাকেট যদিও জ্যাকেটটা বেশ স্টাইলিশ সাথে কালো জিন্স। ওদের দুজনকে দেখে নানু বললো,

— “দুইও গুরে যে বালা লাগের। জলদি বিয়া খরিয়া নাত্তি নসার মুক দেখা।”
নানুর কথা শুনে তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। এরপর সবাই ওদের সাবধানে যেতে বললো। নক্ষত্র তার তিতিক্ষা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।
দুজনের পাশাপাশি হাঁটছে। সামনের দিকে এগোতে নক্ষত্র একটা সিএনজি দেখতে পেল। সিএনজি ড্রাইভার আর নক্ষত্র কি কি বলাবলি করল। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে সিএনজিতে বসতে বললো। দুজনেই পাশাপাশি সিএনজিতে বসলো। তিতিক্ষা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো। সিএনজি চলছে তার আপন গতিতে। তিতিক্ষা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমতা আমতা করে নক্ষত্রকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা মুখে খুশির আভা স্পষ্ট । ওর স্নিগ্ধ মুখশ্রীটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব খুশি। বন্দী পাখি খাঁচা থেকে ছাড়া পেলে যেমন মনের সুখে উঠতে থাকে। তেমনি তিতিক্ষাকেও দেখে মনে হচ্ছে সেও আপন মনে উড়তে চাচ্ছে। সেও যেন এতদিন বন্দী থেকে আজকে অনেকদিন পর ছাড়া পেয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষা কে বললো,
— “আপাতত আমরা একটা রিসোর্টে উঠবো এখন। তারপরে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়বো লোভাছড়া দেখার উদ্দেশ্যে।”
— “রিসোর্ট?”
তিতিক্ষার কন্ঠে অবাকের সুর। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সে রিসোর্টে উঠবে। তিতিক্ষা এখনো নক্ষত্রের মুখ পানে চেয়ে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আর মনে মনে বললো,
— “কেবল তো শুরু ডিয়ার হার্টবিট।”

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ১০+১১+১২