অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ১০+১১+১২

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ১০+১১+১২
written by Nurzahan Akter Allo

তিতিক্ষার কন্ঠে অবাকের সুর। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সে রিসোর্টে উঠবে। তিতিক্ষা এখনো নক্ষত্রের মুখ পানে চেয়ে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষা মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
— “কেবল তো শুরু ডিয়ার হার্টবিট।”
নক্ষত্র মুখে আর কিছু বললো না। বেশ কিছুক্ষণ সিএনজি চলার পর একটা রিসোর্টের সামনে গিয়ে থামলো। নক্ষত্র সিএনজি ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে তিতিক্ষাকে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকলো। ওদের দেখে ম্যানেজার সামনে এগিয়ে আসলো। নক্ষত্র ম্যানেজারের থেকে রুমের চাবি নিয়ে রুমে চলে গেল। নক্ষত্র একটা রুমে ঢুকে তিতিক্ষার ব্যাগটা রাখলো। তিতিক্ষা দৌড়ে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

— “আপাতত ব্যাগ গুলো রাখার জন্য এসেছিলাম। এবার ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর আমরা লোভাছড়া যাবো।”
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে কথাটা বলে রুমের বাইরে পা বাড়ালো। তিতিক্ষা বাইরে সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত। নক্ষত্রের পায়ের শব্দ শুনে তিতিক্ষা পেছনে ঘুরে তাকালো। নক্ষত্রকে চলে যেতে দেখে তিতিক্ষা সাথে সাথে বললো,
— “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে শান্ত সুরে বললো,
— “একরুমে থাকার পারমিশন পায়নি। তাই পাশের রুমে যাচ্ছি।”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। নক্ষত্র মুচকি হেসে পাশের রুমে চলে গেল। তিতিক্ষা ফ্রেশ হয়ে নিলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা হালকা কিছু নাস্তা সেড়ে রিসোর্ট থেকে বের হলো।
লোভা নদী আর লোভাছড়া চা-বাগান যেতে হলে সিলেট শহর থেকে যাত্রা শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে গন্তব্য হবে কানাইঘাট। সহজ পথ হচ্ছে দরবস্ত-চতুল হয়ে কানাইঘাট সদর। এ ছাড়া গাজী বোরহানউদ্দিন সড়ক ধরে গাছবাড়ি হয়েও কানাইঘাট সদর পৌঁছানো যায়। সারা বছরই এখানে বেড়ানো যায়। তবু বর্ষায় লোভা নদীর মজাই আলাদা। আর বৃষ্টির দিন হলে তো কথাই নেই। এখানে সবুজ পাহাড় আর লোভা নদীর অসাধারণ স্বচ্ছ পানি। একবার দেখলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা লোভাছড়া চা-বাগানের বহু পুরোনো ঝুলন্ত সেতুর সঙ্গে এখানকার খাসিয়া গ্রাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নক্ষত্রদের সিএনজি চলছে আপন গতিতে। তিতিক্ষা আশেপাশে তাকিয়ে চারপাশটা দেখছে। পথের দুধারে ঘন বাঁশের জঙ্গল। সে সব বাঁশগাছের সারি যেন কুর্নিশ করে যেন ওদের স্বাগত জানাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওরা পেয়ে যায় ওদের কাঙ্ক্ষিত সেই লোভার মুখ। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা কানাইঘাটে এসে পৌঁছোলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে একটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঠিক করলো। নক্ষত্র শুধু ওদের দু’জনের জন্য ভাড়া নিলো নৌকাটি। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে একা একা এই মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিতে চাই। তিতিক্ষার যেন খুশির শেষ নেই। অবাক চোখে সে চোখ বুলাতে ব্যস্ত। তিতিক্ষার খুশিতে আত্মাহারা হয়ে নক্ষত্রকে বলেই ফেললো,
— “প্লিজ আমার হাতটা ধরবেন? আমার শরীর পুরোটা কাঁপছে। আমি স্বশরীরের দাঁড়িয়ে কখনোও এত সুন্দর আকাশ, মেঘালয় পাহাড়, স্বচ্ছ পানি দেখিনি।”
তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা শক্ত করে ধরলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের মুখে সব সময় হাসি বিরাজমান। নক্ষত্র হাতটা ধরার পর তিতিক্ষার এখন স্বাভাবিক লাগছে। নক্ষত্রের হাতের মুঠোয় এখনো তিতিক্ষার হাত। হাতটা নক্ষত্র আলতো করে ধরে আছে। তিতিক্ষার বিশাল আকাশের সৌন্দর্য দেখছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার প্রানোচ্ছল মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে এমন আরো অনেক সৌন্দর্যের সাথে আমি তোমার পরিচয় করিয়ে দিবো, ইনশাআল্লাহ।” (শান্ত সুরে)
নক্ষত্রের কথা তিতিক্ষা মুচকি হেসে মাথা নিচু করে বললো,
— “আমিন! আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুক।”
তিতিক্ষার এই কথাটাতে নক্ষত্র খুশি হয়েছে। দুজনেই নৌকাতে বসে আছে। দূরের মেঘালয়ের পাহাড় আর লোভাছড়া নদী। ওদের নৌকা ছুটে চলেছে পরিচ্ছন্ন সুরমা নদী দিয়ে। লোভার মুখ হচ্ছে সুরমা ও লোভাছড়া নদীর সঙ্গমস্থল। সুরমা নদী দিয়ে ওদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছুটে চলে লোভাছড়া নদীর অভিমুখে। নদীর বুকে যদিও কোন ভিড় করা নৌকা নেই। এক-দুটো ইঞ্জিনচালিত নৌকা হঠাৎ হঠাৎ ঢেউ খেলিয়ে চলে যাচ্ছে। দূরে পাহাড়ের বুকে সূর্যরশ্মি। সুরমা নদী পেরিয়ে লোভাছড়ার শুরু। নক্ষত্র এই কথা তিতিক্ষাকে বলতেই তিতিক্ষার মাঝে এক চঞ্চলতা প্রকাশ পেল। তিতিক্ষার এমন চঞ্চলতা দেখে নক্ষত্র হাসলো। তিতিক্ষার চোখে মুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট। নক্ষত্র বুঝে গেছে তিতিক্ষা প্রকৃতিপ্রেমী। যদিও বা তিতিক্ষার চঞ্চলতা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ চোখের সামনে এমন মনোরম সৌন্দর্য দেখলে সবার মাঝেই চঞ্চলতা আসেই। দ্রুত গতিতে নৌকা ছুটে চলেছে সঙ্গে বেশ জোর বাতাস।
তিতিক্ষার চুলের ঝুঁটি দুলছে অনবরত। কপালের উপরে থাকা চুল গুলো মুখে এসে পড়ছে বার বার।
নদীর পানি ছিটে ছিটে উঠছে নৌকায়; আছড়ে পড়ছে নক্ষত্র আর তিতিক্ষার চোখে-মুখে। আর তখন তিতিক্ষা শব্দ করে হেসে ওঠছে।
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার আম্মুর সাথে কথা বললো। তিতিক্ষার আম্মুকে নক্ষত্রের আম্মু জানালো তিতিক্ষাদের ঘুরতে যাওয়া কথা। উনারা বেশ কিছু সময় গল্প করলো। মিস্টার আবরার জুরুরী কাজের জন্য বাসায় চলে গেছে। রান্নাঘরে বড়মামী কাটাকুটি করছে। নানু চেয়ারে বসে পান চিবুচ্ছে। আর হরেক রকমের গল্প জুরে দিয়েছে। একটু পরে ছোট মামা এসে গাছের টাটকা পেয়ারা সবাইকে দিলো। পাতা আর অদ্রি দুজন মিলে ফোনে লুডু খেলছে। পাতা অদ্রিকে ফিসফিস করে বললো,

— “অদ্রি আপু ভাবিমণির সাথে নক্ষত্র ভাইয়া জোড়া লাগলো কি করে?”
অদ্রি আরামদায়ক ভাবে বসে পেয়ারাতে কামড় দিলো। পাতার একটা গুটি কেটে ঘরে ঢুকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
— “এতকিছু আমি জানি না। শুধু জানি ভাইয়া ভাবিমণিকে আগে থেকে চিনতো।”
আহান ওয়াশরুমে থেকে চিৎকার করে বিভাকে ডাকছে। আর বিভা কানে ইয়ারফোন গুজে বসে বসে ম্যাথ করছে। এটা বিভার একটা পুরনো অভ্যাস। আহানের চিৎকার যে বিভার কানে যায়নি তা না। বিভা ইচ্ছে করেই উঠছে না। মামনি হাতে খুন্তি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। তনুকা ওর ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরলো। মামনি বাজখাঁই গলাতে আহানকে বললো,
— “আহান বাছুরের মত চেচাঁমেচি করবি না। না হলে খুন্তি দিয়ে মেরে তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো।”
আহান ওর আম্মুর বাজখাঁই গলা শুনতে পেলো। তখন সে ওয়াশরুমে বসেই করুণ গলায় বললো,
— “আম্মুনি ওয়াশরুমে পানি আসছে না।”
মামনি আহানের কথা শুনে ছাদে গেল। যা ভেবেছিলো তাই। ছাদে আজকেও ছোট বাচ্চারা এসে পানির মেইন লাইন বন্ধ করে দিয়ে গেছে। মামনি ওনার বাজখাঁই গলাতে চেচাঁমেচি করে চুপ হয়ে গেল। তনুকা ড্রেস বদলে এসে খেতে বসলো। আর বিভা তার আপনমনে কানে ইয়ারফোন গুঁজে ম্যাথ করছে।
তিতিক্ষা একমনে নদীর উথালপাথাল ঢেউ দেখছে। দূরে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের গায়ে সূর্যের উঁকিঝুঁকি আর সবুজের ঝিলিক। নক্ষত্র সাথে করে খাবার এনেছিলো। নৌকার মাঝি সহ ওরা একসাথে খেয়েছে। মাঝি যদিও প্রথমে খেতে চাচ্ছিলো না। নক্ষত্রের যুক্তির কাছে হার মেনে খেয়েছে। বেশিকিছু নক্ষত্র মাঝিকে বলেনি। শুধু বলেছে,

— “মাঝি ভাই আপনার জন্য সামান্য কিছু খাবার। ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের লজ্জা দিবেন না। আপনার ভরসাতে আমরা মাঝ নদীতে এসেছি। তাই আপনাকে আমরা অভুক্ত রাখতে পারবো না।” (হাসি হাসি মুখে)
মাঝি আর টু শব্দ করেনি। তবে মন থেকে দোয়া করেছে। খাবার দিয়েছে এজন্য দোয়াটা করেনি। করেছে এমন অমায়িক ব্যবহারের জন্য। কোনো ব্যক্তি এমন মার্জিত ব্যবহার করলে, তার প্রতি আপনাআপনি দোয়া চলে আসে। মাথার উপর বিশাল আকাশ দেখতে দেখতে ওরা খেয়ে নিলো। এত সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ওদের নৌকা সামনে দিকে আরো এগিয়ে চলল। বেশ কিছু ঘুরাঘুরি করে ওরা চলে আসে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে হাত ধরে নৌকা থেকে নামালো। তিতিক্ষাকে দাঁড় করিয়ে নক্ষত্র মাঝিকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো,
— “অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আমাদের সাবধানে নিয়ে যাওয়া এবং সাবধানে ফিরিয়ে আনার জন্য। ভালো থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।”
মাঝি ছলছল চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। মাঝি তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আমার বুইনের জন্যি নীল চুড়ি কিনছি। ভাই আমি আফামনিরে চুড়ি গুলান দিতে চাই। আপনাগো আমার খু্ব আপনজনের মতো লাগছে।”
তিতিক্ষার মাঝির পাশে এসে দাঁড়ালো। আর মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বললো,
— “ভাই বোনকে জিনিস দিবো, এখানে পারমিশন নেওয়ার কি আছে? ভাইয়া আমি আপনার ছোট বোনের মতো। আপনি আমাকে চুড়ি গুলান পড়িয়ে দিন।”
মাঝি তিতিক্ষার কথা শুনে ভীতু চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র চোখের ইশারায় বললো পড়িয়ে দিতে। মাঝি চুড়ি গুলো এনে তিতিক্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

— “আফামনি আমার হাতে মাটি লাইয়া আছে। নৌকা বান্ধার সময় মাটি লাইগা গেছে গা। আপনি পরে পইড়েন।”
তিতিক্ষা কোনো কথা না শুনে মাঝির হাতেই চুড়ি পড়লো। মাঝির মুখে তৃপ্তির হাসি। মাঝি চোখের পানি মুছে এটাও জানালো যে উনার বোন এক সপ্তাহ হলো মারা গেছে। তিতিক্ষার কথা শুনে খুব কষ্ট লাগলো। তিতিক্ষা চুড়িগুলোতে শব্দ করতে করতে বললো,
— “চুড়ি গুলো আমার খুব পছন্দ হয়েছে ভাইয়া। আপনার এই অমূল্য ভালবাসাটুকু আমি স্বযত্নে আগলে রাখবো।”
তারপর দুজনেই মাঝি থেকে বিদায় নিলো। তিতিক্ষা বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছিলো। ওই মাঝি ভাই আর এই জায়গাটার প্রতি অদ্ভুত এক মায়া জমে গেছে। এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না, তবুও যেতে হবে। নক্ষত্র খেয়াল করলো তিতিক্ষা মন খারাপ করে আছে। ওর চোখের কোণে অশ্রুকণা জমা হয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে দাঁড় করিয়ে বললো,

— “এই রকম আরো মনোরম সৌন্দর্য তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। প্লিজ মন খারাপ করো না।” (আদুরে সুরে)
তিতিক্ষার মাথা নাড়ালো। এরপর ওরা সিএনজি নিয়ে রিসোর্টে চলে আসলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। নক্ষত্র নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলো। সারাদিনের ঘুরা-ঘুরির পর সাওয়ার নেওয়াটাই উচিত। তিতিক্ষা ব্যাগ থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। নক্ষত্র ফোনে কথা বলতে ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করলো। কথা বলা শেষ করে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। এখন শীতের দিন, এজন্য দুজনেই হট সাওয়ার নিলো। তিতিক্ষা সাওয়ার নিয়ে বেলকনিতে কাপড় মেলে দিয়ে রুমে আসলো। সাওয়ারের পর এখন খুব ফ্রেশ লাগছে। রুমে এসি চলছে এজন্য আর শীত লাগছে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে চারপাশে। তিতিক্ষা চুল থেকে টাওয়াল খুলে চুলে হাত বুলাচ্ছে।
নক্ষত্র দুই মগ কফি নিয়ে তিতিক্ষার রুমে ঢুকে বললো,
— “উহুম! উহুম! ম্যাম আপনার জন্য কফি এনেছি।”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা মুচকি হাসলো। নক্ষত্রকে দেখে বেলকনিতে থেকে তিতিক্ষার রুমে আসলো। সাওয়ারের পর চুল আচঁড়ানো হয়নি। চুলো গুলো অগোছালো হয়ে আছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের থেকে একটু দূরে বসে কফিতে চুমুক দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার লেয়ার কাট করা চুল গুলো দেখছে। ভেজা চুলে তিতিক্ষাকে দেখতে মন্দ লাগছে না। নক্ষত্র তিতিক্ষার বেডে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বললো,
— “বউয়ের এটো করা খাবার খেলে নাকি সম্পর্কটা সুমিষ্ট হয়। ভাবছি সেই পথটাই এখন থেকে অবলম্বন করবো।” (মুচকি হেসে )

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু ??
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_11

নক্ষত্র তিতিক্ষার বেডে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বললো,
–“বউয়ের এটো করা খাবার খেলে নাকি সম্পর্কটা সুমিষ্ট হয়। আমি ভেবেছি সেই পথটাই এখন থেকে অবলম্বন করবো।” (মুচকি হেসে )
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা মাথা নিচু করে নিলো। ইস! আবারও এই ছেলেটা ওকে লজ্জাতে ফেললো। নক্ষত্র বেড থেকে উঠে ওর কফির মগটা তিতিক্ষার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর তিতিক্ষার মগটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। তিতিক্ষা চুপ করে বসে রইলো। নক্ষত্রের এমন কাজে তিতিক্ষা রাগ করেনি। বরং মনে মনে খুশি হয়েছে। একটু পর নক্ষত্রের ডাকে তিতিক্ষা ধীর পায়ে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে পেতে রাখা বেতের সোফাটাতে দুজনেই পাশাপাশি বসলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কফির মগে ঠোঁট ছোয়ালো। নক্ষত্র মুচকি হেসে দেখেও না দেখার ভান করে থাকলো। তিতিক্ষা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটাও নক্ষত্র নেই। চাঁদটাও মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে । তখন নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বলে উঠলো,

–“ডিনারটা সেরে তারাতারি ঘুমিয়ে যাবে। কালকে উঠে আমাদের আরেকটা জায়গাতে যেতে হবে।”
তিতিক্ষা কফির মগে চুমুক দিলো। ওর মাথা ব্যাথা করছিলো। কফিটা খেয়ে আপাতত ভালোই লাগছে।
কালকেও ঘুরতে যাবে শুনে তিতিক্ষার মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো। নক্ষত্র ঘাড় ঘুরিয়ে তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে কফি খাওয়াতে মন দিলো। তিতিক্ষা কফির মগটা পাশে রেখে বললো,
–“কালকে আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
নক্ষত্র মুচকি হেসে ছোট্ট করে বললো,
–“বিছানাকান্দি।”
বেলকনিতে শীত শীত লাগছে। এজন্য নক্ষত্র তিতিক্ষাকে আর বসতে দিলো না। দুজনেই ওদের বাসায় কথা বলে নিলো। এরপর রাতের খাবার খেয়ে দ্রুত শুয়ে পড়লো। তিতিক্ষা যতক্ষণ না ঘুমিয়ে নক্ষত্র তিতিক্ষার রুমের সোফাতে শুয়ে ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তিতিক্ষা ঘুমিয়ে গেলে এসির পাওয়া কমিয়ে, জানালা আটকানো কি চেক করে, নক্ষত্র তিতিক্ষার গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট টেনে দিলো। চলে যাওয়ার সময় নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
–” মনের বিরুদ্ধেই এখন আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। কারন যে কোন মুহূর্তে আমার মাথাতেও কু বুদ্ধির উদয় হতে পারে। তোমার পবিত্র শরীরে আমার অপবিত্র স্পর্শের কালিমা কিছুতেই লাগাতে দিতে পারবো না।”
নক্ষত্র আর না দাঁড়িয়ে তিতিক্ষার রুম লক করে ওর রুমে চলে গেল। বন্ধ রুমে একটা অবিবাহিত ছেলে আর মেয়ের সাথে অদৃশ্য ভাবে থাকে শয়তান। আর শয়তানের কু বুদ্ধিতেই এখন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না। এটা বলাও যায় না, আর এমন রিস্ক নক্ষত্র নিতেও চাইনা। তবে সব সময় যে পরিস্থিতি নাগালে মধ্যে থাকে, এমন ভাবাটাও বোকামি। আর সেটা স্ট্রং পারসোনালিটির ছেলেদের ক্ষেতেও।
পরেরদিন সকালে____!!

একেবারে রেডি হয়ে ওরা রিসোর্ট থেকে বের হলো।
বাইরে থেকে ব্রেকফাস্টও সেরে নিলো। নক্ষত্র একটা সিএনজি নিলো, পাশাপাশি দুজনেই বসে আছে। নক্ষত্র ফোনে কথা বলছে। একটু পর পর ওর ফোনের রিংটোন বেজে উঠছে। তিতিক্ষা রাস্তার পাশে গাছগুলো দেখছে। সিএনজি ছুটে চলছে এয়ারপোর্টের সিএনজি স্টেশনের দিকে। ওদের বিছনাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে।
এই সিএনজিটা সরাসরি বিছানাকান্দি অবধি যাবেনা। এজন্য বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। ওই সিনএনজি গুলো সরাসরি হাদারপার নামক জায়গা পর্যন্ত যাবে। হাদারপার একটি বাজারের নাম। তবে হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাওয়া যায়। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়।
নক্ষত্র হাদারপার বাজারে নেমে তিতিক্ষাকে নিয়ে বাজারে ঢুকলো। তিতিক্ষার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে স্থানটা পর্যবেক্ষণ করছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে লেডিস শপে ঢুকে তিতিক্ষাকে ড্রেস নিতে বললো। তিতিক্ষার ফট করে বলে উঠলো,
–“ড্রেস লাগবেনা। আমার অনেকগুলো ড্রেস আছে।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা ড্রেস নিবে না বলে চলে যাচ্ছিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে আস্তে করে বললো,
–“বিছানাকান্দিতে গিয়ে পানিতে নামবে। পানিতে নামলে তো ড্রেস ভিজে যাবে। ভেজা ড্রেস নিয়েই কি সারাদিন ঘুরবে?”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা জিভে কামড় দিল। তিতিক্ষা এবার বুঝতে পারলো, নক্ষত্রের ওকে ড্রেস নিতে বলার কারন। তিতিক্ষা বেশ কয়েকটা ড্রেস নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। কিন্তু কোনটা নিবে বুঝতে পারছেনা । তিতিক্ষার মতিগতি বুঝতে পেরে নক্ষত্র এবার নিজেই ড্রেস চুজ করতে লাগলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার জন্য ব্ল্যাক এ্যান্ড ব্লু কালারের লেডিস টি-শার্ট নিল। সাথে দুইটা হোয়াইট এ্যান্ড পিঙ্ক কালারের স্কার্ট , দুইটা ওড়না, আর লেগিংস নিল। তিতিক্ষা পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে নক্ষত্রের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। কারণ নক্ষত্র কালারের সাথে কালার মিলিয়ে ড্রেস গুলো কিনেছে। নক্ষত্র বিল মিটিয়ে তিতিক্ষাকে বলল,
–” এই ড্রেসটা পড়ে পানিতে নামবে। আর পানি থেকে উঠার পরে চেঞ্জ করে এর মধ্যে থেকে একটা পড়বে।”

দুজনে মিলে আবার একটা অটোতে উঠলো। আর
এগিয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত সেই জায়গাটির উদ্দেশ্যে। একটু পরে ওরা পৌঁছালো সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তম ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম বিছানাকান্দি। বাগান এবং পাহাড়ের নজরকাড়া সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত প্রকৃতির এই অপরূপ লীলাভূমির উভয় প্রান্ত থেকে খাসি পাহাড় এসে যুক্ত হয়েছে। তিতিক্ষা বিস্ময় নিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। আল্লাহর সৃষ্টি যে এতোটা সুন্দর হতে পারে । সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবেনা। নক্ষত্রের তিতিক্ষার রিয়াকশন দেখে মুচকি হাসলো। তিতিক্ষা এখনো চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। হালকা হালকা কুয়াশার মাঝে পাহাড়ের এক কোণে সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। মৃদু বাতাস শরীরে লাগলে শরীর শিহরিত হচ্ছে। মিষ্টি রোদের দুষ্টু আলোর ছোটাছুটিতে পাহাড়ের সবুজ গাছ গুলো যেন আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে।
তিতিক্ষা বিষ্ময়কর চাহনী নিয়ে মনোরম দৃশ্যটাতে চোখ বুলাচ্ছে। নক্ষত্র দুই পা পিছিয়ে ওর ফোনটা বের করে তিতিক্ষার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিল। তিতিক্ষার সেদিকে খেয়াল নেই। সে মনোরম সৌন্দর্য দেখে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিক্ষা একপা একপা করে সামনের দিকে এগুলো। তিতিক্ষার পেছন পেছন নক্ষত্রও আসছে। শীতের হালকা কুয়াশাতেও যেন, আকাশ, গাছপালা, স্বচ্ছ পানি, পাথর, ঝর্না এসবের সৌন্দর্য যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরণাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরণার কাছে গিয়ে পানি ছোঁয়ার কোনও সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। এর কারণ সবগুলোই ভারতে। তিতিক্ষা শুনেছিলো বিছানাকান্দি এই স্থানটি অপূর্ব সৌন্দর্যের সমাহার। কিন্তু এতটা যেন সুন্দর হতে পারে এটা তিতিক্ষা কল্পনাও করতে পারেনি। নক্ষত্র নিজেও প্রকৃতিপ্রেমী। মাঝে মাঝে ওর আসা হয় এদিকে। তবে আজকে নক্ষত্রের নিজেকে একটু স্বার্থক মনে হচ্ছে । কারণ তিতিক্ষাকে এমন সৌন্দর্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছে। তিতিক্ষা এমন মনোরম সৌন্দর্য দেখে খুব খুব খুশি হয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের চাহনি আর ঠোঁটে হাসি দেখে এটা অনায়াসেই বুঝে গেছে। আর মোট কথা হলো, তিতিক্ষার খুশির থেকে নক্ষত্রের আর কিছু পাওয়ার থাকতেই পারে না।

তিতিক্ষা পাহাড় দেখতে দেখতে এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগোচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার
হাত ধরে সাবধনতার সুরে বলল,
–” সাবধানে পা ফেলো পায়ের নিচে অনেক পাথর।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে ছল ছল চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। তিতিক্ষার চোখের কোণে অশ্রুকণা দেখে নক্ষত্র অবাক হয়ে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের সামনে এসে মাথা নিচু করে বলল,
–“আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।”
তিতিক্ষার এমন কথা শুনে নক্ষত্র অবাক হল। এই মুহূর্তে তিতিক্ষার কেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে? এটাই নক্ষত্রের ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র ধীর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
–“কেন? কি হয়েছে, কোন সমস্যা? আমাকে বল?”
নক্ষত্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা কম্পিত ঠোঁটে নক্ষত্র কে বলল,
–“এমন মনোরম সৌন্দর্য আমি নিজের চোখে কখনো দেখিনি। আজকে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে এত কাছে থেকে দেখতে পেয়ে আমার খুব কান্না পাচ্ছে।”
নক্ষত্র এবার তিতিক্ষার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। মানুষ যখন অতিরিক্ত খুশি হয় তখন তার সাথে এমন টাই হয়ে থাকে। এ কান্না কান্নার অনুভূতিটা হয় সেরেব্রাম থেকে। সেরেব্রাম হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। এজন্য সেরেব্রামকে বলা হয় ‘গুরুমস্তিষ্ক’। সেরেব্রামেই থাকে আমাদের সব ধারণা, কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা, মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত। অন্তঃক্ষরা তন্ত্র আমাদের চোখে হরমোন পাঠায়। এটিই জল হয়ে চোখের ভেতরে থাকে। যখনই আমরা কান্না, বেদনা, আঘাত বা শোকে থাকি তখন এ জল কান্না হয়ে চোখ দিয়ে পড়তে শুরু করে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার দুই গালে হাত রেখে আদুরে সুরে বললো,
–“আপনার চোখের অশ্রুুকণা আমার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টির অন্যতম একটা কারন।”

নক্ষত্রের কথাটা বলতে বলতে তিতিক্ষার চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্র মুচকি হেসে ওর বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। নক্ষত্র আলতো করে তিতিক্ষার হাত ধরে সামনের দিকে এগোলো। পাহাড়ের কাছেই দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা। আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্নাধারার তীব্র প্রবাহ। এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় হাজার কোটি পাথর। সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ। আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা। এ সব পাথর মেঘালয় পর্বতমালার ওপর থেকে প্রবাহিত ঝর্নার ধারায় চলে এসেছে, পিয়াইন নদীর বিছনাকান্দির অংশে।
দুজনেই মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে চেয়ে দেখছে বিছনাকান্দির চারপাশ। তিতিক্ষা যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। ওর ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে পাথর ভরা পিয়াইন নদীর সু-শীতল সেই পানিতে। তিতিক্ষা সেই পানিতে পা ডুবালো সাথে শরীর এলিয়ে দিয়েই পাথর জলের বিছানায়।
রোদের তাপে পানি খুব বেশি ঠান্ডা নেই। রোদের কিরণের উত্তাপে কুয়াশাও অনেক আগে কেটে গেছে। পিয়াইনে চলতে চলতে দূরে দেখা যাচ্ছে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কেয়ারি। তবে বর্ষায় পাথর কেয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু থাকে। এখান থেকে একটু সামনেই সীমান্ত ঘেঁষা পাথর-জলের বিছনাকান্দি। বিছনাকান্দিতে পাথর-জলের বিছানা মুগ্ধ হওয়ার মতো। এখানে পাথরের বিছানার উপরে পাশের পাহাড় থেকে অনবরত স্বচ্ছ পানির ধারা বহমান। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ সময়ে মূল ধারায় স্রোত অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। এই তথ্যটাও সবার জেনে রাখা প্রযোজ্য।

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে পানিতে নামলো। তিতিক্ষা খুব মজা করেছে। স্বচ্ছ পানিতে স্পষ্টভাবে পানির নিচের সবটা দেখা যাচ্ছে। নক্ষত্র ওর প্যান্ট জড়িয়ে শুধু পা ভিজিয়ে একটা পাথরের উপরে বসে তিতিক্ষার হাসামাখা মুখটা দেখছিলো। কিছুক্ষণ পর ওরা পানি থেকে উঠলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে একটা স্থানে গিয়ে ড্রেস বদলে নেওয়া সুযোগ করে দিয়েছে। তিতিক্ষা থ্রি কোয়াটার ব্লু টি-শার্টের সাথে সাদা স্কার্ট আর গলায় স্মার্টলিভাবে সাদা ওড়না পেচিয়ে নিলো। ওর ভেজা ওড়না দিয়ে প্রথমে চুল মুছে নিলো পরে নক্ষত্রের রুমাল দিয়ে মুছলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে ওর চুলের পানি ঝরানো দেখনো। তবে একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওদের দুইজনকে মাঝ বয়সী একটা মহিলা অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছিলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা যখন চলে আসবো তখন ওই মহিলাটি এসে তিতিক্ষাকে
বললো,
–“তোমরা কি হাজবেন্ড-ওয়াইফ? আই মিন তোমরা কি লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ?”
তিতিক্ষা মহিলার কথাটা শুনে মাথা নাড়িয়ে বললো,
–” না! আমাদের শুধু এনগেজমেন্ট হয়েছে।”

মহিলাটি আর কিছু বললো না। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা ওখানে আর সময় অপচয় করলো না। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে আশে পাশের আরো বেশ কয়েকটা স্থান ঘুরে দেখালো। এরপর হাদারপাড় বাজারে গিয়ে দুজনেই খেয়ে নিলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ওরা রাস্তায় এসে ওরা দাঁড়ালো একটা সিএনজির জন্য। কিন্তু নক্ষত্র আশেপাশে একটাও সিনএনজি দেখতে পেলো না। এজন্য তিতিক্ষাকে দাঁড়াতে বলে নক্ষত্র কয়েকপা সামনে এগোলো। হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেয়ে সিএনজি আসছে ভেবে নক্ষত্র বামে তাকিয়ে ডানে তাকালো। আর তখনই দেখতে পেলো একটা ব্রেকফেল গাড়ি তিতিক্ষার দিকে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে। তিতিক্ষা গাড়িটাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে চোখ মুখ খিঁচে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মারাত্মক কিছু কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। এটা ভেবে
নক্ষত্রের মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ওর নিঃশ্বাসটাও যেন কয়েক সেকেন্ড জন্য থমকে গেছে।
হঠাৎ স্বজোরে টান খেয়ে তিতিক্ষা কারো বুকের হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তিতিক্ষা মুখ তুলে নক্ষত্রকে দেখে নক্ষত্রের বুকে মুখ লুকালো। তিতিক্ষার শরীর থরথর করে কাঁপছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ওর বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। যেন এখন তিতিক্ষাকে ছেড়ে দিলেই সে হারিয়ে যাবে। নক্ষত্র চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। ওর হৃদপিন্ডটা দ্রুত গতিতে বিট করছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। নক্ষত্র মুখে কিছু না বললেও, নক্ষত্রের বুকে মাথা রেখে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকের হৃদস্পন্দের কম্পনের গতিবেগ অতি সহজেই অনুভব করতে পারছে।

নক্ষত্র নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার জন্য শুকনো ঢোক গিলে নিলো। কপাল বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে। কয়েকজন পথচারী ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আর একটু হলেই কত্তবড় একটা এক্সিডেন্ট ঘটতে যাচ্ছিল। নক্ষত্রের এটা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে। তিতিক্ষা এখনো মুখ লুকিয়ে আছে নক্ষত্রের বুকে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দুই গালে আলতো করে হাত রাখলো। তিতিক্ষার অশ্রু ভেজা চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র ছলছল চোখে ধরা গলায় তিতিক্ষাকে বললো,
–“তুমি নামক আমার মনোপ্যাথির কিছু হলে আমার মৃত্যু অনিবার্য।”

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু ??
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_12

–“তুমি নামক আমার মনোপ্যাথির কিছু হলে আমার মৃত্যু অনিবার্য।”
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে স্বাভাবিক করে সামনের দিকে এগোলো। তিতিক্ষার মুখটা ভয়ে চুপসে গেছে। তিতিক্ষা এখনো নক্ষত্রের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো। ওরা এখন যাচ্ছে ওদের রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এজন্য আপাতত রিসোর্টে ফিরে যাওয়াই ভালো।
সিএনজিতে বসে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে এটা ওটা দেখাচ্ছে, কিন্তু তিতিক্ষা চুপ করে বসে আছে। আসলে ভয়টা এমন একটা জিনিস যেটা আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে ঢুকে গেলে সহজে বের হতে চায় না। বারবার সে ভয়টাই কেন জানি মনের মধ্যে হানা দিতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা রিসোর্টে পৌঁছালো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে শান্ত সুরে বললো,
–“প্লিজ! মন খারাপ করে থেকো না। তোমার বিষন্ন চেহারাটা আমার ভাল থাকার সবটুকু এনার্জি কেড়ে নেয়।”
তিতিক্ষা কথাটা শুনে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের মুখটাও শুকিয়ে গেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছু হারানোর ভয় ওকে আঁকড়ে ধরেছে। তিতিক্ষা মৃদু হেঁসে ধীরকন্ঠে নক্ষত্রকে বললো,
–“আমি এখন ঠিক আছি। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।”

নক্ষত্র মুচকি হাসলো তিতিক্ষার কথা শুনে। তিতিক্ষাও আর বসে না থেকে নক্ষত্রের কথামতো ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে, ওর রুমে চলে গেল।
বিভা বসে বসে গান শুনছে। আহান বসে গ্রামীণ দৃশ্য ড্রয়িং করছে। তনুকা কিছু পেপারস নিয়ে একটা নোট তৈরি করছে। আর ওদের ঠিক সামনে মামনি মাথাতে আইসব্যাগ ধরে বসে আছে। এই শীতের মধ্যে আইসব্যাগ নিয়ে বসে থাকার প্রধান কারণ হলো একটা শাড়ি। আজকে শপিংমলে গিয়ে মামনি একটা শাড়ি পছন্দ করেছিল। কিন্তু শাড়িটার যে মূল্য সেই টাকা মামনির কাছে ছিল না। এজন্য উনি বাসাতে এসেছিলো টাকা নিয়ে গিয়ে শাড়িটা কিনবে বলে। কিন্তু গিয়ে দেখে শাড়ীটা নেই। কেউ একজন শাড়িটা নিয়ে চলে গেছে। এই কারণে মামনি প্রচন্ড রেগে যে শাড়িটা কিনেছে তাকে উড়াধুড়া গালি দিচ্ছে। তবে আহান, বিভা, তনুকা কেউ মামনির কথা শুনছে না। মামনি একা একা নিজের মত করে বিলাপ করছে।
অদ্রি আর পাতা বসে টিভিতে একটা তামিল মুভি দেখছে। ওদের সামনে আছে মুড়ি মাখানো; সাথে কফি। পলক এসে দুজনের মাথাতে ঠুয়া মেরে এক মুঠো মুড়ি মুখে পুরে সোফাতে বসলো। মাথাতে ঠুয়া মারার পরেও ওদের কারো চেঁচামেচি শোনা গেল না। অন্য সময় হলে এতোক্ষন দুজনে পলককে মেরে, চুল টেনে একাকার করে ফেলতো। কিন্তু এখন তারা দু’জনেই চুপ করে বসে আছে। দু’জনেই টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ওদের মুখের এক্সপ্রেশন টা দেখে মনে হচ্ছে, দু’জনেই এক্ষুনি কেঁদে দিবে। পলক এদের মতিগতি বুঝতে না পেরে টিভির দিকে তাকালো। আর টিভি দিকে তাকিয়ে বুঝলো, যে মুভির হিরো পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছে। খুব ব্লিডিং হচ্ছে আর হিরোইন পাশে বসে খুব কাঁদছে। এত উঁচু থেকে হিরো পরলো, মনে হয় পটল তুলবে থুক্কু মারা যাবে। হিরোইন কে বাঁচাতে গিয়ে হিরো পড়ে মারা যাচ্ছে। এই কারণে এরা দুজন বসে সেই শোক পালন করছে। হঠাৎ পলক চিৎকার করে বললো,

–“ওরে আল্লাহ রে নায়ককে মাইরালাইছে রে! ওরে কেউ হসপিটালে নিয়ে যাও রে!”
পলকের চিৎকার শুনে এবার অদ্রি আর পাতা দুজনেই ভ্রু কুঁচকে রাগী চোখে তাকালো। মনে হয় এখনই পলককে দু’জন মিলে চোখ দিয়েই গিলে খাবে। এমন ভাবে চিৎকার শুনে মামী, বড় মামা, ছোট মামা দৌড়ে আসলো। উনারা এসে পলকের কাছে এদের কাহিনী শুনে উনারাও হাসিতে ফেটে পড়লো। নক্ষত্রের আম্মু চিৎকার শুনে দ্রুত পায়ে এসে পুরো কাহিনী শুনলো। সাথে অদ্রি আর পাতাকে বললো,
–“দুটোই হয়েছে মেন্টাল টাইপের। ইমোশনাল কিছু দেখলেই কেঁদে ভাসায়। আল্লাহ জানে, এদের দুটোর বিয়ের বিদায়ের সময় কি হবে? না জানি চোখের পানিতে আমাদেরকেই ভাসিয়ে দিয়ে যায়।”
পরেরদিন সকালে….
নক্ষত্র একটা প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেছে। আজকে এই গাড়ি নিয়েই তিতিক্ষাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবে। সিলেট জেলার কোথায় কি আছে; খুঁটিনাটি সবকিছু তিতিক্ষাকে দেখাবে। যদিও ঘুম থেকে উঠে বের হতে সকাল দশটা বেজে গেছে। এখন থেকেই শুরু হোক ওদের আজকের ভ্রমণ। তিতিক্ষার মনটাও এখন ভালো। দুজনে আজকেও ম্যাচিং করে ড্রেস পড়েছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে পারফেক্ট কাপল। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখে কাজল দেখে মুচকি হাসলো। নক্ষত্র একাই বিড়বিড় করে বললো,
–“আমাকে ঘায়েল করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।”

তিতিক্ষা চুপটি করে বসে আছে আর নক্ষত্র ড্রাইভ করছে। নক্ষত্র মাঝে মাঝে তিতিক্ষাকে ডেকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে এটা-ওটা দেখাচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে হযরত শাহাজালাল রহমত উল্লাহ-এর মাজারে নিয়ে গেল। গাড়ি এক সাইডে পার্ক করে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে মাজারের ভিতরে ঢুকলো। মাজারে কোথায় কি আছে; নক্ষত্র তিতিক্ষাকে খুঁটিনাটি সব দেখালো। সালমান শাহ-এর কবরটাও দূর থেকে দেখালো। আসলে মাজার ঘুরাঘুরি নক্ষত্রের কোনো কালেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু দর্শনীয় একটি স্থান হিসেবে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে দেখালো। মাজারের পশ্চিম দিকে একটা ঝর্ণা দেখা যায়। সেই ঝর্ণার পানি বোতলে ভরে বিক্রিও করা হয়। এখানে অনেক মানুষের সমাগম। তবে এতো কিছুর মধ্যে এখানকার কবুতর গুলো তিতিক্ষার খুব পছন্দ হয়েছে। নক্ষত্র ওখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আলী আমজাদের ঘড়ি দেখালো। এটা বিশাল আকৃতির একটা ঘড়ি। যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিলো না। তখন সুরমা নদীর তীরে এই ঘড়িটি স্থাপন করা হয়েছিলো। এরপর নক্ষত্র শাহ পরাণের মাজার, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল সবটাই ঘুরে ফিরে দেখালো। এতক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“আমার প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে। অলরেডি দুইটা বেজে গেছে। চলো আমরা আগে লাঞ্চটা সেরে ফেলি।”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। যদিও ঘুরাঘুরির মাঝে ওরা টুকটাক খাওয়া-দাওয়াও করেছে। নক্ষত্র পানসী নামক একটা রেস্টুরেন্টে গেল। গাড়ি পার্ক করে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসলো। একজন ওয়েটার আসলো খাবারের অর্ডার নেওয়ার জন্য। তিতিক্ষা তো জানে না এখানে এখানে কি পাওয়া যায়। এজন্য নক্ষত্র মেনু কার্ড ছাড়াই অর্ডার দিল। নক্ষত্রের অর্ডার দেওয়া দেখে তিতিক্ষার চোখ কপালে উঠে গেল। তিতিক্ষা অবাক হয়ে নক্ষত্রকে বললো,
—“এত গুলো খাবার কে খাবে?”
নক্ষত্র মুচকি হেঁসে কাধের শার্ট দেখালো। তিতিক্ষা কিছু বলার আগেই ওয়েটার এসে খাবারের প্লেট দিয়ে টেবিল ভর্তি করে ফেললো। নক্ষত্র আর কথা না বাড়িয়ে খেতে আরম্ভ করলো। তিতিক্ষা বুঝতে পারছে না কোনটা দিয়ে শুরু করবে। এখানে ৩০ পদের ভর্তা পাওয়া যায়। নক্ষত্র ভর্তাই অর্ডার করেছে ২০ পদের। টাকি, টমেটো, বেগুন, ডাল, কলা, পটল, শাক, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, তিল, ডিম, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, মগজ, কলার মোচা, মিক্সড, চিংড়ি, সিম ও শুটকি ভর্তা।

এর সাথে কাটারী ভোগ A+ গ্রেডের চালের ভাত, মাছের ডিম, পামফ্রেট ফ্রাই, রুই মাছ ভুনা, পাবদা মাছ, বেগুন ভাজা, মুরগীর মাংস, টিকিয়া, সাতকড়া দিয়ে গরুর মাংস আর কোয়েল পাখি ভুনা। সর্বশেষ, এখানকার বিখ্যাত মালাই চা।
নক্ষত্র খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। তিতিক্ষাও আর বসে না থেকে এক এক করে খাওয়া শুরু করলো। এক একটা খাবারের টেস্ট অসাধারণ । নক্ষত্র খেতে খেতে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা খেতে খেতে বলেই ফেললো,
–“প্রতিটা আইটেমের টেস্ট অসাধারণ। উম! এক কথায় দারুন, দারুন।”
নক্ষত্র হাসলো। তিতিক্ষা আর কথা না বাড়িয়ে ওর খাওয়াতে মন দিলো। এখন কথা বলে সময় নষ্ট করতে চায় না সে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে গরুর মাংসটা খেতে বললো। তিতিক্ষা একপিস নিয়ে মুখে দিতেই অবাক হলো। তিতিক্ষার এক্সপ্রেশন টা দেখে নক্ষত্র হেঁসে ফেললো। দুজনেই একটা একটা করে আইটেম শেষ করছে। নক্ষত্র এবার ইশারাতে তিতিক্ষাকে কোয়েল পাখির ভুনাটা খেতে বললো। তিতিক্ষা জানে নক্ষত্র ওকে বেস্ট টাই খেতে বলবে। এজন্য তিতিক্ষা প্লেটে তুলে খাওয়া শুরু করলো। এটার টেস্টটাও অসাধারন। তিতিক্ষা ভুলে গিয়েছিলো কবে এতো খাবার একসাথে খেয়েছে। আর খাওয়াটাও বেশি হয়ে গেছে। সত্যি বলতে খাবারের টেস্ট ভালো হলে ক্ষুধাটা বেড়ে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। ওদের খাওয়া শেষ হলে ওয়েটার এসে সব নিয়ে গেল। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা উঠে হাত ধুয়ে এসে বসলো। এবার আরেকজন ওয়েটা এসে মালাই চা দিয়ে গেল। এত খাবার খেয়ে তিতিক্ষার চা টা খেতে চাচ্ছিলো না। নক্ষত্র বললো,

–“শুধু একটাবার মুখে দাও ভালো না লাগলে খেও না।”
তিতিক্ষার নক্ষত্রের কথা শুনে চায়ে চুমুক দিলো। গাঢ় দুধ আর কড়া লিকারের সংমিশ্রণে মালাই চা। চা টাও দারুন খেতে, যা বলে প্রকাশ যাবে না। চা শেষ করে নক্ষত্র বিল মিটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো। গাড়িতে উঠে বসতেই তিতিক্ষা বললো,
–“আমার খাওয়া বেশি হয়ে গেছে। এভাবে খেলে আমি দুই দিনেই গলুমলু হয়ে মিনি হাতিতে পরিণত হবো।”
নক্ষত্র তিতিক্ষার কথার প্রতি উত্তরে দুষ্টু হেসে বললো,
–“গার্লফ্রেন্ড স্লিমে মানানসই। আর বউ গলুমলুতে।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথাটা ঠিক ধরতে পারিনি। একটু পরে কথাটা বুঝে লজ্জা পেলো। তিতিক্ষাকে লজ্জা পেতে দেখে নক্ষত্র হাসলো। তিতিক্ষা আর কথা বাড়ালো না, সিটের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বাইরে তাকালো। একটুপর তিতিক্ষা নক্ষত্রকে বললো,
–“আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনি এতো ভোজনরসিক। আচ্ছা, আপনি ভোজনরসিক হয়েও স্লিম থাকেন কিভাবে?”
তিতিক্ষা এই কথাটা শুনে, নক্ষত্র ওর নিজের ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো। নক্ষত্রকে হাসতে দেখে তিতিক্ষার ভ্রু কুঁচকে গেল। সাধারণ একটা কথাই তো জানতে চেয়েছে। তাহলে এভাবে হাসার কারন তিতিক্ষা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নক্ষত্র এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে, আর আরেক হাত দিয়ে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছে। তিতিক্ষা আর কথা বাড়ালো না চুপ করে বসে থাকলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ৭+৮+৯

–“আমার পেট টান টান না হলে আমার বউ আমাকে বিয়ে করবে না। এজন্য নিজেকে সব সময় স্লিম রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করি।”
নক্ষত্র কথাটা বলেই হো হো করে হেসে দিলো।
ইস! কি লজ্জা, কি লজ্জা। নক্ষত্র এই গোপন তথ্য কিভাবে জানলো তিতিক্ষার জানা নেই। নক্ষত্রের মুখে এই কথাটা শোনার সাথে সাথে তিতিক্ষা লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার এমন কান্ড দেখে আবারও শব্দ করে হেসে উঠলো।
রাত ১০টা…
নূরজাহান গ্র্যান্ড হোটেলে …
নক্ষত্র একটু দূরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। ওর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু। তিতিক্ষা হোটেলের রিসিশনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত সে ওর নিজের চিন্তায় মশগুল।
একজন ভদ্রলোক এসে তিতিক্ষাকে বললো,
–“ম্যম নাহিয়ান স্যার আপনার কে হয়?”
তিতিক্ষার লোকটির দিকে এক নজর তাকিয়ে মৃদু সুরে বললো,

–“হাজবেন্ড।”
ভদ্র লোকটি এই কথা শুনে যেন খুব খুশি হলেন। উনি তিতিক্ষাকে আবার বললো,
–“স্যারের বিয়ে হলো অথচ আমরা জানি না। এজন্যই আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি ম্যম। তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। প্লিজ! কিছু মনে করবেন না। আচ্ছা ম্যম কত দিন হচ্ছে আপনাদের বিয়ের?”
তিতিক্ষার এবারও মৃদু স্বরে ছোট্ট করে বললো,
–“ঠিক ১৭ মিনিট ২৩ সেকেন্ড আগে।”

অনুভূতির শীর্ষবিন্দু পর্ব ১৩+১৪+১৫