অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৬

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৬
অরনিশা সাথী

নুহাশ, রুজবা, আদিরা তিনজনে মিলে কিয়ান আর ফারিনের জন্য ঘর সাজিয়ে মাত্রই বেরিয়ে আসলো৷ ফারিন জান্নাতের ঘরে তখনো। আদিরা জান্নাতের কাছে চলে যায় হাতে হাতে সবকিছু গোছগাছ করার জন্য। রুজবা পিছু পিছু যেতে গেলেই নুহাশ হাত ধরে টেনে বারান্দায় নিয়ে যায়৷ কিয়ান মুচকি হাসে ওদের বারান্দায় যেতে দেখে। কিয়ান এবার আর ওদের ডিস্টার্ব করলো না। সোজা জান্নাতের ঘরে চলে গেলো। ওখানে যে ওর বউটা অনেকটা সময় একা একা বসে বোর হচ্ছে।

জান্নাত আর আদিরা দুজনে মিলে শাহানা বেগম এবং রাশেদা বেগম (কিয়ানের মা) এর সাথে বেঁচে যাওয়া খাবার সব গোছগাছ করে রাখছে। তখনই পাড়ার মেয়ে-বউরা আসে নতুন বউ দেখার জন্য। রাশেদা বেগম আদিরা আর জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“এখানের কাজ তো প্রায় শেষ। তোরা একটু উনাদের নিয়ে বসা, ফারিনকে নিয়ে আয় বসার ঘরে। রুমে একা একা অনেক সময় বসে আছে ও। একা ভালো লাগে নাকি?”
আদিরা আর জান্নাত সম্মতি জানিয়ে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় কিচেন থেকে। আশপাশ থেকে আসা মেয়ে বউদের সোফায় বসিয়ে আদিরা যায় ফারিনকে নিয়ে আসতে। জান্নাতের ঘরের সামনে এসেই গলা ঝাড়ে আদিরা। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে কিয়ান সরে বসে ফারিনের থেকে। ফারিন মাথা নিচু করে নেয় তৎক্ষনাৎ। আদিরা ঘরে ঢুকে ফারিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–“আপাতত তোমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি কিয়ান, বাসর ঘরে ঢোকার আগ অব্দি আর পাচ্ছো না ওকে।”
ফারিন আদিরার হাত ধরে নেমে দাঁড়ায় বিছানা থেকে। কিয়ান অসহায়ের স্বরে বলে,
–“এটা কেমন কথা ভাবী? আজ সারাদিনও ওকে পাইনি৷ তার আগে সপ্তাহ খানেক বিরহের অনলে পুড়েছি। আর এখন তুমি আবার নিয়ে যাচ্ছো? বলি আমার অপেক্ষার অবসান হবে না?”

–“হবে হবে, সবুর করো ভাই। সবুরে মেওয়া ফলে।”
–“ওদিকে তোমার আরেক দেবর যে তার বউ নিয়ে ব্যস্ত আছে তাকে তো কারো চোখেই পড়ে না। সবাই শুধু আসে আমাকে বিরক্ত করতে।”
কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় কিয়ান। ফারিন আর আদিরা দুজনকে দুদিকে ঠেলে দিয়ে বলে,

–“দেখি সাইড দাও, আমি বরং গিয়ে নুহাশ আর রুজবাকে একটু খানি বিরক্ত করে আসি।”
বলে ওদের দুজনের মাঝ দিয়ে চলে গেলো কিয়ান। সেদিকে তাকিয়ে ফারিন আর আদিরা দুজনেই হেসে দেয়। আদিরা হাসি থামিয়ে বলে,

–“আস্তো ফাজিল একটা।”
ফারিনকে এনে সোফায় বসানো হয়। পাশেই আদিরা বসা। জান্নাত ট্রে তে করে কয়েক ধরনের মিষ্টি এনে রাখলো সবার সামনে। একজন বলে উঠলো,
–“কিয়ানের বউ তো মাশাল্লাহ দুধে আলতা গায়ের রং। ওর পছন্দ আছে বলতে হবে। তা আমাদের নুহাশের বউ কোথায়? আসেনি?”
আদিরা হাসিমুখে বললো,

–“হ্যাঁ হ্যাঁ আছে। আমি ডেকে আনছি ওকে। জান্নাত তুই থাক এখানে।”
ওদের চার চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে নিবির’ই সবার বড়ো। তারপর রিয়ান। নুহাশ আর কিয়ান সমবয়সী। আদিরা এই দুই পরিবারের মধ্যে বড় বউ হওয়ায় ও জান্নাতকে তুই করেই বলে। জান্নাত সম্মতি জানাতেই আদিরা উঠে যায়।

ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে নুহাশ রুজবা কিয়ান তিনজনেই গল্পের আসর জমিয়েছে। কিয়ান বেশ উৎফুল্ল মনে বলছে কিভাবে বা কি দেখে ফারিনের প্রেমে পড়েছে ও। এক পর্যায়ে কিয়ান প্রশ্ন ছুঁড়ে নুহাশের দিকে,
–“এক তরফা তো অনেক গুলো বছর ভালোবাসলি, কিন্তু কি দেখে ভালোবাসলি সেটা কখনো বলিস নি তো।”
–“আস্ত রুজবা’টাকেই তো আমি ভালোবাসি। হ্যাঁ ভালোবাসার জন্য বা প্রেমে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট একটা দিক লাগে, আমার ক্ষেত্রেও আছে। বাট সেটা সিক্রেট, বলা যাবে না।”

রুজবা এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো ওদের দুজনের কথা৷ কিন্তু নুহাশের কথায় এবার ভাবনায় পড়ে যায় ও। কি দেখে ভালোবেসেছে নুহাশ? আর সেটা সিক্রেট কেন? কেন বলা যাবে না কাউকে? রুজবার এমন আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই আদিরা উপস্থিত হয় সেখানে। কিয়ান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,

–“আবার কাকে চাই?”
আদিরা দাঁত বের করে হেসে বলে,
–“এবার রুজবাকে চাই।”
কথাটা বলে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না। রুজবার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো ওখান থেকে। নুহাশ অবাক স্বরে বললো,

–“কি হলো ব্যাপারটা?”
কিয়ান নুহাশের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–“আশেপাশের মেয়ে বউরা এসেছে নতুন বউ দেখতে তাই ফারিনকে নিয়ে গেছে। এবার বোধহয় রুজবাকেও দেখতে চেয়েছে।”
–“আচ্ছা।”
বলে মাথা নাড়ায় নুহাশ।

–“বাহ! আমাদের নুহাশের বউ’ও মাশাল্লাহ। কিয়ানের বউয়ের মতো দুধে আলতা গায়ের রঙ না একটু চাপা তবে দুজনেই বেশ।”
একজনের কথায় আরো মহিলারা সহমত প্রকাশ করে। আরো একজন মহিলা বলে,
–“তা তোমাদের নুহাশ তো বিদেশে থেকে পড়াশোনা করেছে। শুনেছি সেখানকার নামি-দামি কোম্পানিতে কাজও করছে। এমন সোনার টুকরা ছেলের জন্য তো আর সুন্দরী মেয়ে পেতে।”

রুজবার হাসিখুশি মুখটাতে মূহুর্তেই আঁধার নেমে এলো। আসলেই তো, কোথায় নুহাশ আর কোথায় ও৷ নুহাশ তো আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। চোখে পানি টলমল করছে রুজবার৷ ফারিন রুজবার হাত চেপে ধরে। রুজবা তাকাতেই ফারিন ইশারা করে না কাঁদতে। আদিরা হাসিমুখে জবাব দেয়,

–“কি বলুন তো কাকিমা, আমাদের নুহাশের রুজবাকেই পছন্দ। তাছাড়া ও কোনোদিক দিয়ে কম কোথায়? আমি তো বলবো আমার দেবরের খুব ভাগ্য যার কারণে ও রুজবাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছে। আর সুন্দরী হলেই কি ভালো হয়? বাহ্যিক সৌন্দর্য তো চোখের শান্তি দেয়। আর মনের দিক দিয়ে যে সুন্দর সে মনের শান্তি দেয়। চোখের সৌন্দর্য তো শেষ হয়ে যায় একদিন। বুড়ো হলেই শরীরের চামড়া ঝুলে পড়বে। চেহারা অন্যরকম হয়ে যাবে, তখন এই সৌন্দর্যের মূল্য কোথায়? সুন্দর মন’টাই তো আসল। তাছাড়া রুজবার গায়ের রং ফারিনের থেকে একটু চাপা হতে পারে কিন্তু রুজবা’ও ফেলে দেওয়ার মতো না৷ চোখ বন্ধ করে রুজবাকেও সুন্দরীদের দলে ফেলা যায়।”

আদিরার কথায় সেখানকার সবাই চুপ হয়ে গেলো। পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। আরেক জন মহিলা বলে,
–“শুনেছি, কিয়ান নুহাশ দুজনেরই প্রেমের বিয়ে। আর নুহাশের বউ নাকি রিয়ানের মামাতো শালী? কিয়ানের বউয়ের বাড়িও তো ওখানেই। তা রিয়ানের বউ কি জোট বেঁধেই নিজের বোনদের এ বাড়ির বউ করে নিয়ে আ___”

–“আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন কাকিমা?”
থমথমে পুরুষালি কন্ঠস্বর পেয়ে পেছনে তাকায় সেখানে উপস্থিত সকলে। নুহাশ আর কিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মূলত নুহাশ’ই বলেছে কথাটা। মহিলাটা কাচুমাচু হয়ে বলে,
–“তেমন কিছু না, আমরা এমনিতেই আলাপ আলোচনা করছিলাম।”
–“হ্যাঁ কি আলোচনা করছিলেন সেটা আমরাও একটু শুনি।”
–“কিছু না বাবা, তোমরা কথা বলো। অনেক রাত হয়েছে আমরা আসি।”

কথাটা বলেই মহিলা গুলো সুরসুর করে চলে গেলো বাড়ি থেকে। নুহাশ সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলে,
–“আর কি কি বলেছেন উনি?”
জান্নাত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
–“বাদ দাও, কিছু মানুষের কাজই তো অন্যের পেছনে লেগে থাকা।”
–“এসব মানুষকে বাসায় ক্যান ঢুকতে দেওয়া হয় এটাই মাথায় আসে না।”

কিয়ানের ঘরের সামনে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে জান্নাত, আদিরা আর নুহাশ। রুজবা’ও আছে তবে ও একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ঘন্টা দুই আগে বলে যাওয়া সেই মহিলার কথাগুলোই এখনো ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নুহাশ বুঝতে পারছে রুজবার মাথায় এই মূহুর্তে কি চলছে৷ কিন্তু আপাতত ও সেসবে মাথা ঘামালো না। ভাবতে দিলো রুজবাকে। ওর যা ইচ্ছে ভাবুক। নুহাশ দেখতে চায় রুজবার ভাবনার দৌড় কতদূর। কিয়ান ওদের সকলের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসে৷ বোকাসোকা ভাবে প্রশ্ন করে,

–“এখানে সবাই কি করছো?”
নুহাশ একগাল হেসে বলে,
–“কাবাডি কাবাডি খেলছি, তুই খেলবি?”
–“নাহ সর, আমাকে ভেতরে যেতে দে আমার বউ আমার অপেক্ষায় আছে। তোরাই খেল, আমার এখন মুড নাই কাবাডি খেলার।”

–“হ্যাঁ জানি তো এখন তোর অন্যকিছু খেলার মুড জেগেছে।”
জান্নাত আর আদিরা ফিক করে হেসে দেয়। রুজবা নুহাশের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বড়বড় চোখে তাকায়। ওর লজ্জা লাগছে ভীষণ। লোকটা এসবও বলতে পারে? ভেতরে ভেতরে এত ফাজিল? কই দেখে তো মনে হয় না। কিয়ান অসহায় স্বরে বলে,

–“বুঝতেই তো পারছিস ভাই, তাহলে লেট করাচ্ছিস ক্যান? দরজা থেকে সরে দাড়া।”
আদিরা বলে,
–“সরে যাবো, ঝটপট ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে দাও, চলে যাবো আমরা।”
–“এত টাকা কোথায় পাবো আমি?”
–“তাহলে আর তোর আজ ঘরে ঢুকতে হবে না কিয়ান। অন্য ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।”

জান্নাতের কথায় কিয়ান অসহায় চোখে তাকায়। সকলেই কিয়ানের ওরকম চাহনীকে জাস্ট ইগনোর করে। কিয়ান গোমড়া মুখে টাকা বের করে দিয়ে দেয় ওদের হাতে। জান্নাত তালা খুলে দেয়। কিয়ান ঘরে ঢুকতে গেলেই জান্নাত ওর হাত ধরে টেনে বলে,

–“কথা আছে তোর সাথে চলো।”
–“এখন আমার ঘরে যাওয়া বেশি ইমপোর্টেন্স ভাবী।”
–“তোর ঘরে যাওয়া যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কথা, চল চল।”
বলেই কিয়ানকে অন্যপাশে টেনে নিয়ে যায় জান্নাত।

ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে এগোয় কিয়ান। খাটের উপর বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে ফারিন। বহু অপেক্ষার পর আজকের এই রাতটা এসেছে ওদের জীবনে। এই রাতটার জন্য, একে অপরকে সারাজীবনের মতো নিজের করে পাওয়ার জন্য কত অপেক্ষায় না করেছে ওরা। ফাইনালি সে সময়টা এসে ধরা দিয়েছে জীবনে। কিয়ান ফারিনের মুখোমুখি বসে। ওর হাতদুটো আলতো করে ধরে বলে,

–“আজ আমি অনেক খুশি ফারু। ফাইনালি তোমাকে পেয়েছি আমার করে। আমার খুশিটা আমি হয়তো অতটা প্রকাশ করতে পারছি না। বাট বিলিভ মি, আজ আমার মনে হচ্ছে আমি দুনিয়ার সব থেকে সুখী মানুষদের মধ্যে একজন। যে কিনা তার ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছে। তুমি খুশি তো?”

–“হু।”
–“আমি জানি তোমার মন খারাপ, পরিবারের সবাইকে ছেড়ে আমার হাত ধরতে হয়েছে। তুমি একই সাথে তোমার বাবা আর আমাকে চেয়েছো আমি এটাও জানি। কিন্তু সিচুয়েশনটা ওরকম ছিলো না ফারু। প্লিজ মন খারাপ করো না। উনারা একদিন ঠিক মেনে নিবে আমাদের দেখো।”

–“হু।”
–“তখন থেকে শুধু হু হু করছো কেনো? কথা বলো।”
–“হু।”
–“উফস আবার? লজ্জা লাগছে কথা বলতে? কিন্তু লজ্জা লাগার তো কথা নয়৷ আমি তো অপরিচিত কেউ না। তোমার অনেকদিনের পরিচিত, তোমার ভালোবাসা আমি৷ তাহলে লজ্জা পাচ্ছো কেনো?”
–“হু।”

কিয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে। বুঝতে পারে এই মেয়ে আজ হু ছাড়া আর কিছুই বলবে না। কিয়ান ভালো করে বসে দুহাতে ঘোমটা তুলতেই মৃদু চিৎকার করে ক্ষানিকটা পিছিয়ে বসে। এদিকে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে আদিরা। ফারিনের জায়গায় লাল ওড়না মাথায় দিয়ে ঘোমটা টেনে এতক্ষণ ও’ই বসা ছিলো এখানে। কিয়ান বুকে হাত দিয়ে বলে,
–“তুমি এখানে কি করছো? আমার বউ কই?”

আদিরা হাসতে হাসতে বলে,
–“এত তো বউ পাগলা, আর বউয়ের হাত চেনো না? দাঁড়াও বলছি ফারিনকে। ফারিন, ভেতরে আসো।”
শেষ কথাটা আদিরা ফারিনকে উদ্দেশ্য করে বলে। ডাকের সাথে সাথেই ফারিন ব্যালকোনি থেকে রুমে আসে। আদিরার পাশে বসে ফারিন। আদিরা ভ্রু নাচিয়ে বলে,

–“কি কেমন দিলাম?”
–“খুবই বিচ্ছিরি! এরকম কেউ করে? ঘোমটা না সরিয়েই যদি বউ ভেবে কিছু করে বসতাম? তখন তো আমার চরিত্রে দাগ পড়ে যেতো ভাবী।”
ফারিন কিয়ানের বাহু তে থাপ্পড় মেরে বলে,

–“এই ভালোবাসো তুমি আমায়? অথচ আমার উপস্থিতি অনুপস্থিতি কিছুই বুঝতে পারো না তুমি। নুহাশ ভাইকে দেখছো রুজবাকে কত ভালোবাসে? রুজবার উপস্থিতি নুহাশ ভাই চোখ বন্ধ করেও টের পেয়ে যায় আর তুমি চোখ খোলা রেখেও চিনতে পারো না আমায়।”

–“আমি তোমার নুহাশ ভাইয়ের মতো হতে পারবো না৷ আমি কিয়ান, কিয়ানের মতোই থাকবো।”
–“হুহ।”
বলেই মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকায় ফারিন। কিয়ান প্রশ্ন করে,
–“তুমি এখানে কেন? কার আইডিয়া এটা? নিশ্চয়ই নুহাশের?”
আদিরা হাসতে হাসতে বলে,

–“তা আর বলতে? তুমি সবসময় ওর প্রাইভেট টাইমে এন্ট্রি নাও বলে আজ ও আমায় এখানে বসিয়েছে৷ আমিও বেশ এনজয় করেছি। যাই হোক আমি আসি, তুমি তোমার কাজ শুরু করো।”
কথাটা বলেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় আদিরা। কিয়ান আবার গিয়ে দরজা লক করে আসে। ফ্রেস হয়ে ওজু করে দুজনে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বিছানায় গিয়ে বসে। কিয়ান পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সোনার চেন বের করে পড়িয়ে দেয় ফারিনের গলায়৷ ফারিন লাজুক হাসে। কিয়ান দুই হাতে ফারিনের গাল ধরে ওর কপালে চুমু খায়৷ তারপর ঠোঁটের দিকে ঝুকতেই কেউ একজন বলে,

–“এই এক মিনিট।”
কিয়ান আর ফারিন ছিটকে দূরে সরে বসে একে অপরের থেকে। ফারিন তো রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়। ওরা দুজনেই পাশে তাকিয়ে দেখে রুজবা সোফার পেছন থেকে মাথা উচু করে আছে। কিয়ান কপাল চাপড়ে বলে,
–“তুমিও? তোমার রোমান্সে ভুল করে এন্ট্রি নেই বলে তুমি ইচ্ছে করে আমার রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটাতে চলে এসেছো শালীকা?”
রুজবা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

–“ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না বলেই তো তোমরা আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এলাম। আমি ওসব দেখতে পারবো না ভাই। তার থেকে বরং চলে যাই এটাই বেটার।”
রুজবা দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়৷ কিয়ান বলে,

–“আরো কেউ থাকলে আগেই বেরিয়ে যা ভাই। শেষে আমার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করিস না কেউ।”
কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। কিয়ান আশপাশে দেখে আবার গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসে। ফারিনের সামনে বসে। কিয়ান এবার আর কালবিলম্ব না করে ফারিনের ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়৷ কিছু সেকেন্ড গড়াতেই পুরুষালি কন্ঠে গান গেয়ে উঠে কেউ,

–“sardi ki raaton mein hum soye rahe ek chaadar mein….Hum dono tanha ho na koi bhi rahe is ghar mein…..”
প্রচন্ড বেগে এবার দুজনে একে অপরের থেকে দূরে সরে বসে৷ কিয়ান ফারিনের পেছনে তাকিয়ে দেখে খাটের পেছনে নুহাশ দাঁড়ানো। বিছানার হেডবোর্ডের উপর হাত রেখে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি। ফারিন লজ্জায় চাদড় টেনে মুখ ঢেকে ফেলে। কিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–“প্রথমে আদিরা ভাবী, এরপর রুজবা, এখন আবার তুই? তোর পর আবার কে বের হবে?”
নুহাশ হাত ঝেড়ে সামনে এসে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ে বলে,
–“আর কেউ না, আমিই লাস্ট।”
–“বের হো শা*লা।”
–“এবার বুঝলি তো প্রাইভেট টাইমে এন্ট্রি নিলে কেমন লাগে?”

–“বুঝছি ভাই, আমি মাফ’ও চাই আর দোয়া’ও চাই। এবার তুই বের হ ঘর থেকে।”
নুহাশ চট করে উঠে দাঁড়ালো। যেতে যেতে বললো,
–“যাচ্ছি তো, এভাবে তাড়ানোর কি আছে?”
–“আমার তো তোকে ঝাটাপেটা করে তাড়াতে ইচ্ছে করছে।”
–“আমার তো এর থেকেও বেশি কিছু ইচ্ছে হয় যখন তুই আমায় বিরক্ত করিস।”
কথাটা বলে বেরিয়ে যায় নুহাশ। কিয়ান এবার পুরো ঘর চিরুনি তল্লাশি দিয়ে তবেই ঘরের দরজা বন্ধ করেছে।

নুহাশ সোজা নিজেদের বাসায় চলে আসে। রুজবার খোঁজ করতেই জান্নাত জানায় আদিরার সাথে বাসায় চলে এসেছে ও। তাই নুহাশও চলে আসে বাড়ি। ঘরে ঢুকতেই দেখে আদিরা আর রুজবা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। নুহাশ কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–“বাকী সবাই কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
–“হ্যাঁ।”
আদিরার কথায় নুহাশ বলে,
–“তাহলে তোমারা জেগে আছো কেন?”
–“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
–“আমার জন্য?”
–“হ্যাঁ চলো।”

কথাটা বলেই আদিরা উঠে দাঁড়ায়। দুহাতে রুজবা আর নুহাশের দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নুহাশের ঘরের দিকে। দুজনকেই ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয় আদিরা। নুহাশ কয়েকবার দরজা ধাক্কায়। আদিরা বলে,
–“সকালের আগে দরজা খুলছি না। সুতরাং এই মাঝরাতে দরজা ধাক্কিয়ে সবার ঘুমে ডিস্টার্ব করার কোনো মানে হয় না নুহাশ।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৫

কথাটা বলে চলে যায় আদিরা। নুহাশ হার মানে। পুরো ঘর অন্ধকার। নুহাশ ঘরের লাইট জ্বালাতেই চোখ ছানাবড়া ওর। পাশে রুজবার দিকে তাকাতেই দেখে ওর’ও একই অবস্থা। রুজবা এক পলক নুহাশের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। নুহাশ ঠোঁট কামড়ে হাসে রুজবার লজ্জায় রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে। নুহাশ বাঁকা হেসে বলে,
–“আজকের রাতটা আমার মিসেস নুহাশ ফারদিন, বি রেডি।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৭