অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৭

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৭
অরনিশা সাথী

সম্পূর্ণ ঘর সুন্দর পরিপাটি ভাবে ফুল দিয়ে সাজানো দেখেই রুজবার পিলে চমকে উঠে৷ সাথে নুহাশের সেই মাত্রাতিরিক্ত ভয়ংকর কথাটা তো আছেই৷ রুজবা শুকনো ঢোক গিলে নুহাশের পানে তাকায়৷ নুহাশের অধরে দুষ্টু হাসি। রুজবা দ্রুত কদমে এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে।

পরনে গয়নাগুলো খুলতে হবে গাঁ থেকে৷ দুপুরে শাহানা বেগম উনার কিছু ভারী গয়না পড়িয়ে দিয়েছিলো রুজবাকে। সেগুলো এত সময় যাবত পড়ে থাকায় এখন ক্লান্ত ও। রুজবা ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল টেনে বসে পড়ে৷ নুহাশ ঠোঁট টিপে হেসে ঘরের দরজা ভেতর থেকেও বন্ধ করে দেয়। বলা তো যায় না আবার কে কখন এসে বাইরে থেকে দরজা খুলে উঁকি মারে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুজবা দুল খোলার জন্য কানে হাত দিতেই নুহাশ এসে রুজবার হাত ধরে। রুজবা আয়নার ভেতরেই নুহাশের দিকে তাকায়৷ রুজবার চোখে চোখ রেখেই নুহাশ বলে,
–“আমি খুলে দিচ্ছি।”
–“আপনার সময় লাগবে। সরুন দেখি, আমিই খুলতে পারবো। শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে দ্রুত৷ এর আগে এতটা সময় শাড়ি পড়ে থাকিনি আমি।”
–“শাড়িটা’ও না’হয় আজ আমিই পালটে দেবো।”

মূহুর্তেই রুজবার কান গরম হয়ে এলো লজ্জায়৷ ইশ্! কি লাগামহীন কথাবার্তা! লোকটা দিন দিন ভারী অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। সময় সুযোগ পেলেই অশ্লীল কথা বলে। নুহাশ রুজবার গাঁয়ে থেকে সব গয়না খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে৷ কাঁধের আঁচলে হাত লাগাতেই রুজবার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।

চটজলদি উঠতে গেলেই নুহাশ রুজবার দুই কাঁধ ধরে আবার বসিয়ে দেয়৷ খুলে দেয় রুজবার খোপা করা লম্বা চুলগুলো। রুজবা আর কিছু বলতে পারে না। নুহাশের স্পর্শে রুজবার কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। চুপচাপ নিজের এই অদ্ভুত অনুভূতি গুলোকে আপ্রাণ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে ও। তবুও শরীরে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। নুহাশ রুজবাকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে।

আলগোছে খুলে দেয় রুজবার শাড়ির কুচির ভাজে আটকানো সেইফটি-পিন। আবার উঠে দাঁড়িয়ে রুজবার পেছনে দাঁড়ায় ও। রুজবার ব্লাউজ আর আচঁলের সাথে আটকে রাখা সেইফটি-পিন’টা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে৷ সেই সাথে শব্দ করে চুমু খায় রুজবার ঘাড়ে। অন্যরকম অনুভূতিতে চোখ বন্ধ করে নেয় রুজবা৷ নুহাশ এক ঝটকায় কোলে তুলে নেয় রুজবাকে।

রুজবা দ্রুত চোখ মেলে তাকায়৷ খামচে ধরে নুহাশের বুকের কাছের পাঞ্জাবি। নুহাশ রুজবার চোখের দিকেই নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুজবা দৃষ্টি সরায়। তাকিয়ে থাকার সাধ্য যে নেই ওর। আচমকা নিজের কপালে নুহাশের ঠোঁটের স্পর্শ পায় ও। চটজলদি আবার তাকায় নুহাশের দিকে। নুহাশ মুচকি হেসে রুজবাকে নিয়ে এগোয় বিছানার দিকে৷ রুজবা’র আর বুঝতে বাকী নেই এই ছেলে আজ থামবে না। আগেই তো বলে দিয়েছে আজকের রাতটা তার। নুহাশের ঠোঁটের কোনের হাসির মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় নুহাশের বুকের সাথেই মিশে রইলো সে।

–“এই ফারু, আর কতক্ষণ চাদড়ে মুখ লুকিয়ে বসে থাকবে? নুহাশ চলে গেছে অনেক আগেই তো। এবার চাদড় সরাও প্লিজ।”
–“উঁহু, সরাবো না চাদড়। আমার লজ্জা লাগছে।”
কিয়ান জোর করে ফারিনের মুখ থেকে চাদড় টেনে সরিয়ে বললো,
–“আজ আমাদের স্পেশাল একটা রাত ফারু, এভাবে লজ্জা পেয়ে এত সুন্দর রাতটাকে স্পয়েল করো না প্লিজ।”
ফারিন কাঁদোকাঁদো স্বরে বলে,

–“আমি নুহাশ ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে কিয়ান? সব তোমার দোষ।”
কিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
–“আমি কি করলাম?”

–“তুমি দেখলে আদিরা ভাবী, রুজবা ছিলো এই ঘরে। তারপরেও ভালো করে পুরো ঘর না দেখে চুমু খেলে কেন? নুহাশ ভাই দেখে ফেললো তো সব। আমার লজ্জা লাগছে এবার। আমি আর কোনোদিনও নুহাশ ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।”

–“চুমুর কথা বলে আবার সেই নেশা’টা জাগিয়ে দিলে বউ। তখন ফুলফিল করতে পারিনি, এবার আর বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ নেই। এবারে আশেপাশে খুনোখুনি হয়ে গেলেও নো ছাড়াছাড়ি। আজ আমাদের বাসর রাত, বাসর করবো না তা কি হয়?”

কথাটা বলে এক মূহুর্ত দেরী করে না কিয়ান। ফারিনকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। গভীর ভাবে চুমু খেতে থাকে ফারিনের ঠোঁটে। ফারিন কিয়ানের চুল খামচে ধরে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে থাকে কিয়ানের ভালোবাসার স্পর্শগুলো।

রাত তিনটে। গলা অব্দি গায়ে শুধুমাত্র চাদড় টেনে নুহাশের উম্মুক্ত বুকে মুখ লুকিয়ে আছে রুজবা৷ ওর ভীষণ রকমের লজ্জা লাগছে। কিছুক্ষণ আগের নুহাশের সেই স্পর্শগুলোর কথা মনে হতেই বারবার লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে ও। লোকটা যেন তখন আর নিজের মধ্যেই ছিলো না। ওর মাঝে হারাতে উতলা হয়ে ছিলো। কত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলো দুজনে, কত গভীর ভাবে মানুষটা ছুঁয়ে দিয়েছে ওকে।

ভাবতেই রুজবার সারা শরীরে আবারো কাঁপুনি সৃষ্টি হচ্ছে। অদ্ভুত অনুভূতিরা এসে হানা দিচ্ছে। অনুভূতি গুলো এসে বারবার জানান দিচ্ছে নুহাশের স্পর্শের কথা। ব্লাশ করছে রুজবা। নুহাশ তো আগেও কমবেশি স্পর্শ করেছে তখন তো এত লজ্জা লাগেনি। আজ এত লজ্জা কেন লাগছে ওর? কেন চোখ তুলে তাকাতে পারছে না নুহাশের দিকে?

নুহাশ আদুরে স্পর্শ করছে রুজবার মাথায়। আর ও আঙুল দিয়ে আকিঁবুকিঁ করছে নুহাশের লোমশ বুকে। নুহাশ রুজবাকে টেনে নিজের মুখ বরাবর নিয়ে আসলো। দুহাতে রুজবার দুই গাল ধরে শব্দ করে চুমু খায় তার ঠোঁটে। রুজবা এবার আর দৃষ্টি সরায় না। চেয়ে থাকে নুহাশের গভীর চোখজোড়া’তে। নুহাশ রুজবাকে বুকে জড়িয়ে বলে,
–“আজ আমি অর্ধেক পরিপূর্ণ রুজবা৷ যেদিন বাবা হবো, আমাদের কোল জুড়ে ছোট্ট একটা ফুটফুটে সন্তান আসবে সেদিন সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হবো।”

এবারে রুজবার লজ্জা লাগতে শুরু করে। লোকটা এখনই বাচ্চা অব্দি চলে গেলো? ইশ্! রুজবার ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যেতে। নুহাশ ঠোঁট কামড়ে হাসে রুজবার লজ্জা রাঙা মুখ দেখে। রুজবার নেশা যেন আজ কিছুতেই কাটতে চাইছে না নুহাশের। কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে আবারো মুখ গুজে গলায়। আদুরে স্পর্শ আর ছোট ছোট কামড়ে অস্থির করে তুলে রুজবার সারা শরীর। রুজবা শক্ত করে নুহাশকে জাপ্টে ধরে ওর পিঠ খামচে ধরে রেখেছে। নখের আঁচড়ে ছিলে কয়েক জায়গায় বিন্দু বিন্দু রক্ত দেখা যাচ্ছে। নুহাশের সেদিকে হেলদোল নেই। সে তো ব্যস্ত তার বউয়ের ঠোঁটের স্বাদ নিতে।

গুটিশুটি মেরে নুহাশের বুকে বিড়াল ছানার মতো ঘুমাচ্ছে রুজবা। তখনো দুজনের গায়ে শুধুমাত্র চাদড় জড়ানো। নুহাশ অপলক দেখছে ওর ঘুমন্ত রুজবাকে। ঘন্টা খানেক হবে বোধহয় রুজবা ঘুমিয়েছে। নুহাশ আলতো ভাবে রুজবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুজবার বুক, ঠোঁট, গাল, গলা সবকিছু দেখে বড্ড মায়া হচ্ছে ওর। ইশ্! অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে বুঝি। সব জায়গায় লাভ বাইট। ঠোঁটজোড়া ফুলে আছে। এক কোনে ক্ষানিকটা রক্তও জমাট বেঁধে আছে। নুহাশের এবার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। ওর উচিত ছিলো নিজেকে আরো একটু নিয়ন্ত্রণে রাখার। অনেক বেশিই ব্যাথা পেয়েছে বুঝি মেয়েটা।

নুহাশ ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখলো। আর কিছুক্ষণ বাদেই ফজরের আজান পড়বে। নুহাশ রুজবার গালে হাত রেখে ডাকতে থাকে ওকে। রুজবা ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে তাকায়। আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। নুহাশ আবার ডাকে। রুজবা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

–“ঘুমাতে দিন না। কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়েছি।”
–“একটু পড়েই ফজরের আজান পড়বে রুজবা৷ শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাবে উঠো।”
–“উঁহু, আমি তাকাতে পারছি না। ঘুমাবো আমি প্লিজ।”
নুহাশ রুজবার কানের কাছে ঝুঁকে যায়। ফিসফিস করে বলে,

–“শাওয়ার নিবা না?”
–“পড়ে নিবো।”
–“উঁহু, এক্ষুনি উঠো।”
কথাটা বলে নুহাশ জোর করেই রুজবাকে টেনে বসায়৷ রুজবা গায়ে চাদড় জড়িয়ে নেয় ভালোভাবে। তা দেখে নুহাশ বাঁকা হেসে বলে,

–“এতক্ষণ তো দিব্যি লেপ্টে ছিলে আমার সাথে। আর আমার দেখার কিছু বাকী নেই রুজবা। এখন নিজেকে চাদড় দিয়ে ঢেকে কি আড়াল করতে চাইছো আমার থেকে?”
নুহাশের কথায় মূহুর্তেই রুজবার ঘুম ছুঁটে গেলো। এক পলক নুহাশের দিকে তাকিয়ে আবার লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় ও। নুহাশ টাওয়াল কোমড়ে পেঁচিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। হাত বাড়িয়ে দেয় রুজবার দিকে। রুজবা উঠতে চাইলেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। নুহাশ দ্রুত রুজবার পাশে বসে বলে,

–“এই কি হলো? ব্যাথা পেলে কোথাও?”
রুজবা চোখমুখ খিচে জবাব দেয়,
–“আমার পুরো শরীর ব্যাথা করছে নুহাশ, শরীর নাড়াতে পারছি না আমি।”
নুহাশ অসহায় স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

–“ভীষণ ব্যাথা করছে? ইশ্! আমার আর একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিলো। নিজের অনুভূতিগুলোকে আরো কন্ট্রোল করার দরকার ছিলো। আ’ম স্যরি রুজবা।”
–“স্যরি বলার কিছু নেই৷ একদিন আগে হোক আর একদিন পরে হোক কাছে তো আসতেই হতো। এখন আমাকে নিয়ে চলুন তো ওয়াশরুমে।”
নুহাশ আর কথা না বাড়িয়ে কোলে তুলে নেয় রুজবাকে। রুজবা গলা পেঁচিয়ে ধরে নুহাশের। রুজবাকে কোলে নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় সে।

আজানের সাথে সাথেই নামাজ আদায় করেছে কিয়ান আর ফারিন। দুজনেই বিছানায় শুয়েছে মিনিট পাঁচেক হবে৷ ফারিন ঘুমে চোখে দেখছে না কিছু৷ কিন্তু কিয়ান’টা বারবার বিরক্ত করছে ওকে। কখনো কোমড়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে তো আবার কখনো ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ফারিন প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে কিয়ানের দিকে ঘুরে বলে,

–“কি সমস্যা?”
কিয়ান ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বলে,
–“কোনো সমস্যা না।”
–“তাহলে সুড়সুড়ি দিচ্ছো কেন? আমি ঘুমাবো কিয়ান। সারা রাত তো জ্বালিয়েছো, এবার একটু ঘুমাই?”
–“আমার না আবার প্রেম প্রেম পাচ্ছে ফারু। আবার একটু ছুঁয়ে দেই? প্লিজ বউ?”
–“কোনো কথা শুনছি না আমি। নো ডিস্টার্ব।”
–“প্লিজ বউ।”

ফারিন জবাব দিলো না। কিয়ান বলে,
–“ও বউ, তুমি একটু কাছে আসো না? ও বউ, তুমি কি আমায় ভালোবাসো না? ও বউ?”
–“কাছে আসার সময় অনেক পড়ে আছে কিয়ান, আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।”
–“আমার এখন আবার কাছে পাওয়ার মুড জেগেছে।”
–“আমার দ্বিতীয় বার শাওয়ার নেওয়ার ইচ্ছে নেই।”
–“এক রাতে দুই বার শাওয়ার নিলে আহামরি কিছু হয়ে যাবে না।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৬

কথাটা বলেই কিয়ান ফারিনের সকল বাঁধা নিষেধ অগ্রাহ্য করে কাছে টেনে নেয় ফারিনকে। শেষমেশ ফারিনও হার মেনে যায় কিয়ানের ওরকম এলোমেলো গভীর স্পর্শের কাছে।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৮