অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৮

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৮
অরনিশা সাথী

কিয়ান দের বাড়ির নাস্তার টেবিলে সবাই এসে হাজির। নুহাশ আর রুজবা এখনো আসেনি৷ শাহানা বেগম, রাশেদা বেগম, জান্নাত আর আদিরা সবার প্লেটে প্লেটে খাবার দিচ্ছে। সেসময়েই নিবিরের পাশের চেয়ার টেনে নুহাশ বসে। নুহাশকে একা দেখে শাহানা বেগম ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,

–“তুই একা কেন? রুজবা কোথায়? ও নাস্তা করবে না?”
নুহাশ নিজের প্লেটে পরোটা ভাজি নিয়ে বললো,
–“ওর মাথা ব্যথা করছে। আসতে চেয়েছিলো আমিই শুইয়ে রেখে এসেছি।”
আদিরা নুহাশের প্লেটে ডিম দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“সে কি? কখন থেকে মাথা ব্যাথা?”
–“ফজর থেকেই।”
ফারিন অস্থির কন্ঠে বলে,
–“আমি যাই ওর কাছে?”
নুহাশ মুচকি হেসে বলে,
–“নাস্তা করো তুমি, তারপর যেও।”

ফারিন বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। শাহানা বেগম নুহাশকে ক্ষানিকটা ধমকের স্বরে বললো,
–“ফজর থেকে মাথা ব্যাথা আর এখন বলছিস? আর ওকে রেখে তুই খেতে চলে এলি? মেয়েটা এ বাড়িতে প্রথম নুহাশ, কোন আক্কেলে ওকে___”
নুহাশ খাবার প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
–“একা খাচ্ছি না মা জননী, আপনার পুত্রবধূর জন্যই খাবার নিতে এসেছি আমি। উনাকে খাইয়ে মেডিসিন দিতে হবে তো।”

শাহানা বেগম মুচকি হেসে বললো,
–“দুজনের নাস্তা একসাথেই নিয়ে যা। তুই আবার পড়ে একা নাস্তা করবি নাকি? খাওয়া শেষ হলে আমি কড়া করে আদা চা বানিয়ে আনছি।”

নুহাশ মাথা নাড়ায়। আদিরা দুজনের পরিমান নাস্তা প্লেটে তুলে দিতেই নুহাশ প্লেট নিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। নুহাশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে সকলেই মুচকি হাসে। নুহাশ রুজবাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সে কথা এই ফারদিন পরিবারের সকল সদস্যরা জানে। কারো জানতে বাকী নেই আর।
ঘরে এসে দেখে রুজবা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। নুহাশ খাবারের প্লেট রেখে রুজবার মাথায় হাত রাখতেই রুজবা চোখ মেলে তাকায়। তারপর মুচকি হেসে উঠে বসে ও। নুহাশ প্রশ্ন করে,

–“রুজবা? খুব বেশি কি ব্যাথা করছে?”
–“নাহ ঠিক আছি আমি, সমস্যা নেই।
–“হুম জানি তো কেমন ঠিক আছো। এখন উঠো। খাবার’টা খেয়ে মেডিসিন নাও।”
–“না খেলে হয় না? খেতে ইচ্ছে করছে না এখন, পরে খেয়ে নিবো?”
–“উঁহু এক্ষুনি খেতে হবে। মেডিসিন নিতে হবে রুজবা। খেয়ে তারপর শুয়ে থাকো কেমন?”
–“তাহলে খাইয়ে দিন। নাকি ইচ্ছে করে না?”

–“আরে আরে ম্যাম, রুকো যারা, ছাবার তো কারো। ওইটা আপনি না বললেও আমি খাইয়ে দিতাম, কিন্তু আপনি আমায় সুযোগ দিলেন কই? উপ্স! ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনি তো বেডি মানুষ!”
–“খবরদার বেডি মানুষ, বেডি মানুষ করবেন না। আপনি তো আমায় ভালোইবাসেন না, ভালোবাসলে এতক্ষণ যাবত বকবক না করে খাইয়ে দিতেন।”

–“আচ্ছা? তো আপনি কি বেডা মানুষ নাকি? যে আমি বেডি মানুষ বলবো না? আর কি যেনো বললেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি না? বিগত ৫ বছর ধরে যে একতরফা ভালোবেসে গেলাম তা কি ভালোবাসা নয়?
নুহাশ রুজবার দিকে খানিকটা ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফের বলে,

–“আর গত রাতে কি আপনি আমার ভালোবাসার প্রখরতা উপলব্ধি করতে পারেন নি? হায়, আমি কি ব্যার্থ? আপনাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতে? আপনি চাইলে কিন্তু এখনই আবার প্রমাণ করে দিতে পারি আমি রুজবা? কি? দিবো নাকি প্রমাণ?”
রুজবা ছিটকে দূরে সরে বলে,

–“ছি, আমি কি তা মিন করেছি নাকি? সব সময় শুধু অসভ্য চিন্তা-ধারা। আর কে বললো আমি আপনার ভালোবাসা উপলব্ধি করিনি। আপনার ওরকম ভালোবাসার জন্য আজ আমার….”
বলতে গিয়েও চুপ করে যায় রুজবা। নিজেকে নিজেই গালি দেয়। মনে মনে ভাবে,
–“ছি ছি! কি বলে ফেলছিলাম আমি? এই লোক’টার সাথে থাকতে থাকতে আমিও দেখি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছি। ইশ কি যে ভাবছে এখন নুহাশ।”

নুহাশ ভ্রু উঁচিয়ে, বাঁকা হেঁসে জিজ্ঞাস করে,
–“তোমার কি? বলো?”
–“কিছু না। খাইয়ে দিবেন নাকি শুয়ে পড়বো আবার?”
নুহাশ হেসে ফেলে রুজবার কথায়। সে ভালোই জানে রুজবা যে এড়িয়ে গেলো কথা’টা। কিন্তু নুহাশ যে তার কথার মানে বুঝে গিয়েছে অনেক আগেই তা কি জানে রুজবা? জানলে হয়তো এখান থেকেই পালাতো। নুহাশ আর বেশি না ঘেটে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুজবা’কে খাইয়ে দিতে থাকে। নিজেও খেয়ে নেয়।

নাস্তার টেবিলে বসে সকলে খেতে খেতে কথা বলায় ব্যস্ত। হুট করে আদিরা মৃদু চিৎকার করে। তার চেঁচানো’তে সবাই আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদিরা দুষ্টু হেসে কিয়ান এর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে,

–“কি ব্যাপার কিয়ান? তোমার গলায় কিসের যেনো দাগ দেখা যাচ্ছে? এলার্জি হয়েছে নাকি তোমার?”
আচমকা এমন কথায় ফারিনের কাঁশি উঠে যায়। সে তো জানে কিসের দাগ। আর এরা যে এভাবে পিছে পড়বে এই কথাটা তার তো ভাবা উচিৎ ছিলো। সে নাহয় ঘোম’টা দিয়ে দাগ লুকালো, কিয়ান যে তা পারবে না ভাবা উচিৎ ছিলো তার। ইশ কি লজ্জার ব্যাপার। এখন সবাই কি ভাববে তাকে? ভাবনার মাঝে কিয়ান তার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে আদিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“কি বলো তো? ভাইয়ার বাসরের পরের দিন দেখলাম যে, একটা বিড়াল তার নখ দিয়ে অনেক আঁচড় কেটেছিলো তার গলায় আর ঘাড়ে। সাথে কামড়ের দাগ’টাও দেখেছিলাম। আমি ভাবলাম যে এটা কিভাবে হয় তা এক্সপেরিমেন্ট করবো। তাই তো কাল রাতে একটা বিড়াল এনেছিলাম নিজের ঘরে। এটা তারই দাগ গো ভাবী। কোনো এলার্জি না।”

আদিরা ভাবতেই পারে নি এই কিয়ান’টা তাকে এভাবে লজ্জায় ফেলে দিবে। ছেলেটার কি এতোটা নির্লজ্জ হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো? একটু নাহয় লজ্জা পেতো। তা না। বিরক্তির শ্বাস ফেলে আদিরা। এদিকে ফারিন এর ভীষণ রাগ লাগছে। সে বিড়াল? তাকে বিড়াল বলা? ফারিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

–“কি বললা? আমি বিড়াল? হ্যাঁ? আমি বিড়াল? সব তো তোমার দোষ।তুমি নিজেই তো আমায় রাতে____”
কিয়ান টেবিলের নিচ দিয়ে ফারিনের হাত চেপে ধরে। তাতেই হুশ ফিরে ফারিনের। সে হয়তো ভুলেই বসেছে এখানে সবাই উপস্থিত।নিজের কথায় নিজেই যে এভাবে ফেঁসে যাবে এটা বুঝতে পেরে আবারো রাগ উঠছে তার। ওর’ই বা কি দোষ? এই কিয়ান’টা তাকে বিড়াল বলবেই বা কেনো? ফারিনের কথায় সবাই হো হো করে হেঁসে উঠে। আর কিয়ান? সে তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সে ভাবতেই পারে নি ফারিন এভাবে রেগে সবার সামনে মান-ইজ্জত পাঞ্চার করে দিবে। ফারিনের কথায় আদিরা আবারো সুযোগ পেয়ে যায় মজা নেওয়ার। সে হাঁসতে হাঁসতে বলে,

–“আহ-হা কিয়ান। এসব কি? মেয়ে’টাকে ঘুমাতে কেনো দাও না তুমি? দেখো মেয়েটার চোখ,মুখ কেমন ফুলে আছে ঘুমাতে না পেরে। একদম ডিষ্টার্ব করবা না ও-কে।”

কথা’টা বলেই সে শব্দ করে হেসে উঠে। শাহানা বেগম এবং রাশেদা বেগম ছোট’দের এমব লাগামহীন কথা-বার্তায় লজ্জায় সেখান থেকে উঠে চলে যায়। নোমান সাহেব আর রোমান সাহেব আরো আগেই নাস্তা করে বেরিয়ে পড়েছে।
লজ্জায় পড়ে যায় বেচারি ফারিন। লজ্জায় মাথা নিচু করে রয়েছে। কিয়ান? সে আর কি বলবে? সে তো এক প্রকার শক এর মধ্যে রয়েছে। তার বউ যে রেগে আছে বেশ বুঝতে পারছে। তার জন্য যে লজ্জায় পড়তে হয়েছে ফারিন’কে। তার-ই বা কি দোষ? সে তো আদিরা’কে চুপ করিয়েই দিয়েছিলো। মাঝখানে ফারিন-ই তো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলো।

নাস্তা শেষে জান্নাত ফারিন’কে বলে,
–“ফারিন? গিয়ে রেষ্ট কর তুই কাল সারাদিন অনেক ধকল গেছে। একটু বিশ্রাম নে।”
ফারিন মাথা নাড়ায়। জান্নাত হেঁসে কিয়ান’কে বলে,
–“আর কিয়ান তুই একদম ওকে জ্বালাবি না।”
কিয়ান গাল ফুলিয়ে বলে,

–“হাহ! আমার বউ রে আমি জ্বালামু-ই।
তোমার জামাই যখন তোমারে জ্বালায়, চুম্মা দেয় আমি কি কিছু বলি? আমার তো মনে পড়ে না আমি কখনো তোমার রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটাইছি বলে, তুমি এইভাবে আমার পিছনে পড়লা কেনো ভাবী? দিস ইজ নট ফেয়ার!”
জান্নাত হাঁসতে হাঁসতে বলে,
–” কি করবো বল।তোর থেকেই তো শিখা এগুলো। আচ্ছা ওয়েট, কিয়ান বল তো বাসর রাতে তোর ফিলিংস কি ছিলো?”

–“আর ফিলিংস! আমি যে দুঃখে কচু গাছে ফাঁসি দেয় নি এই তোমাদের জন্য অনেক। ওই নুহাইশারে তো আমি দেইখা নিবো। প্রথমে আদিরা ভাবী তারপর রুজবা এরপর লাস্টে নুহাশ সব যদি ঘাপটি মেরে আমার ঘরে বসে থাকে আর স্পেশাল স্পেশাল মোমেন্টে বেরিয়ে আসে তখন ফিলিংস আর কত ভাল হবে বলো?”
বিরক্তি সুরে কিয়ানের দুঃখের কথা শুনে ফারিন। আদিরা আর জান্নাত উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। কিয়ান এবার প্রচন্ড বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,

–“হইছে আদিরা ভাবী এতো হেঁসো না।তোমার আর ভাইয়ার রোমান্সের মেইন টাইমে যদি আমি এন্ট্রি না নেই, তবে আমার নামও কিয়ান না, হুহ।”
ভেংচি কেটে কিয়ান রুমের দিকে চলে যায়। কিয়ান এর পিছন পিছন ফারিন”ও উঠে পড়ে। তার শরীর’টা দুর্বল লাগছে। হয়তো রাতে ঘুম না হওয়াতে। রুমে গিয়ে একটু ঘুমাবে।
ফারিন রুমে ঢুকতেই হেঁচকা টান দিয়ে কিয়ান তাকে বুকে টেনে নেয়। ফারিন গোমরা মুখ করে অন্যদিকে চেয়ে আছে। কিয়ান মুখ টেনে নিয়ে অসহায় কন্ঠে বলে উঠে,

–“ফারু।”
ফারিন উত্তর দেয় না। কিয়ান ফের বলে,
–” আরে আমার কি দোষ বলো? আমি তো চেয়েছিলাম শুধু তোমাকে লজ্জা থেকে বাঁচাতে।
–“সরো তুমি। একদম ধরবা না আমায়। দূরে থাকো।”
–“এতোদিন যে দূরে ছিলাম তা-ই তো বেশী। এখন আবার তুমি বলছো দূরে থাকতে? সর‍্যি তো বেবী। আর বলবো না। এইযে কানে ধরছি।”

কিয়ান কানে ধরে কথা গুলো বলে। তা দেখে ফারিন ফিক করে হেঁসে দেয়। কিয়ান মুগ্ধ নয়নে তার প্রিয়তমার হাসির দিকে তাকিয়ে রয়। ইশ মেয়েটা কতদিন পর হাঁসছে। এখন থেকে সে আর কখনোই ফারিনের চোখে পানি আসতে দিবে না। নিজের কাছেই নিজের প্রমিস। সে ফারিনের চোখের কাজল নষ্ট না হওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারবে কিন্তু লিপষ্টিক নষ্ট না হওয়ার গ্যারিন্টি দিতে পারবে না। লিপষ্টিক তো সে-ই নষ্ট করবে। একমাত্র তার অধিকার। ফারিন হাঁসতেই হাঁসতে বলে,

–“হয়েছে আর কানে ধরতে হবে না। সরো তো। ঘুমাবো আমি, অনেক ঘুম পাচ্ছে।”
কিয়ান ফারিনের কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
–“আচ্ছা এখন আর ডিস্টার্ব করবো না। বের হবো একটু কাল থেকে তো বাসায়-ই আছি। তবে বেরোনোর আগে বউয়ের একটু স্পর্শ না পেলে চলে?”
বলে ফারিনের ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নেয় চুমু দিবে ঠিক এমন মুহুর্তে পিছন থেকে আওয়াজ আসে,

–“হাম তুম। এক কামড়েমে বান্দ হ্যা। আচ্ছা হে মে আন্ধা হুউউউ…..!
আচমকা নুহাশের কন্ঠে ফারিন কিয়ান’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সরে যায়। কিয়ান ফারিনের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো একবার নুহাশ এর দিকে। নুহাশ এতক্ষণ এক চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে ছিলো, চোখ মারার স্টাইলে। এবার কিয়ানের দিকে তাকিয়ে নুহাশ বাঁকা হেঁসে বলে,

–” ইয়ে কেয়া ভাই? আমাকে জ্ঞান দিয়ে এখন যে তুই নিজেই দরজা খুলে খুল্লাম খুল্লাম___”
–” ভাই রে! মাফ চাই তোর কাছে। আর জীবনেও তোর কিস’এ ক্যান? রোমান্সে ক্যান? বাচ্চা-কাচ্চা হইয়া গেলেও বাঁধা দিমু না। প্লিজ ভাই মাফ কর।”
–“এহ শা*লা! আমার বাচ্চা হইতে তুই বাধা দিবি কোন দুঃখে?”
–“উপ্স থুরি। আই মিন আর কিছু’তে ব্যাঘাত ঘটামু না। কাল রাত থেকে তোরা কি শুরু করলি? একটু তো প্রাইভেসি দে।”

–“উমম। তুই যে আমায় জ্বালিয়েছিস? তার বেলায়? আচ্ছা ভাই যা মাফ করে দিবো, যদি…….”
–“যদি কি ভাই? তাই করমু আমি তুই ক।”
–“প্রমিস?”
–“হ হ প্রমিস।”
–“বাহ বাহ। রোমান্সের এতো তাড়া তোর? যা বলবো তা-ই করবি? নে তাইলে এবার ২০ বার কানে ধরে উঠ-বস কর।”
কিয়ান দাঁত বের করে বলদের মতো হেঁসে নুহাশ’কে জড়িয়ে ধরে বলে,

–“হেহে নুহাশ! আমি না তোর ভাই? তোর প্রানের, কলিজার, নাড়ি-ভুড়ির পেয়ারে দোস্ত? আরো কমা না ভাই। নাইলে আমি তোরে ছাড়মু না আজ। এমনে জড়াইয়া ধরে ফারিন এর কিস তোরে দিয়া দিমু!”
ঠোঁট দুটো চুমু দেওয়ার মতো করে দেখিয়ে নুহাশ এর দিকে এগিয়ে যায়। নুহাশ ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে বলে উঠে,
–” ছি ছি! তুই গে নাকি? দেখছো ফারিন? তুমি রাতে ওর সাথে ছিলা কেমনে ভাই? তুমি বুঝো নাই এতোদিন ও কেমন?”

ফারিন খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। সঙ্গে নুহাশ’ও যোগ দেয় হাসিতে। ফারিন বলে,
–” আল্লাহ! নুহাশ ভাই আপনারা পারেনও। কিসব কথা-বার্তা। রুজবা কোথায় ভাইয়া?এখনো কি মাথা ব্যাথা করছে ওর?”

–“রুমেই আছে। মেডিসিন নিয়েছে, কমে যাবে।”
–“ঠিকাছে আপনারা থাকুন আমি ওর কাছে যাই।
নুহাশ মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। ফারিন কিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়। কিয়ান ফারিনের বেরিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। নুহাশ বলে,

–“জোস হইলো না ব্যাপার’টা? মামা ফিল কেমন এখন তোর?
–“শা*লা। তোর কল্লা, আমার মুন্ডু!”
–“হ ওইডা সবার আছে। এখন ২০ বার কানে ধর।”
–“একটু কমা না ভাই।”
–“উম ঠিকাছে ১৫ বার।”
–” আরেকটু….”

–“তোরে আর চান্স দিমুই না এটাই লাষ্ট। ১০ বার ধর। তাও কমাতে বললে ১০০ বার ধরবি কানে। নাইলে আজকে ফারিন রুজবার সাথে ঘুমাবে বন্ধুউউউউউ!”
–“হিসাব মতো রুজবা আজ চলে যাবে। কাল এরকমটাই কথা হইছিলো না?”
–“আমি ইচ্ছা করলে বরাবরের মতো রেখে দিতে পারি। তুই কানে ধরবি নাকি আমি___”
–” এই না না একদম না। এইযে আমি কান ধরছি।”

বলেই কিয়ান নুহাশ এর কান ধরে উঠ-বস শুরু করতে যায়। নুহাশ কিয়ানের কান টেনে বিরক্তির স্বরে বলে,
–“শা*লা তোর কান।”
–“ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ!”
কিয়ান এবার নিজের কান ধরে উঠ-বস শুরু করে। ৫ বার যেতেই নুহাশ বলে,

–“হইছে থাক আর ধরিস না। আমি ভাই আবার অনেক দয়ালু। আমার কারো কষ্ট সহ্য হয় না। নে পানি খা।”
নুহাশ পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় কিয়ানের দিকে। কিয়ান মুচকি হাঁসে। আসলেই সে লাকি নুহাশ এর মতো বন্ধু পেয়ে। এইযে নিজেই কানে ধরালো নিজেই পানি এগিয়ে দিলো আবার। এগুলা কি কেয়ার না? অবশ্যই। এসব ছোট-খাট কেয়ারিং’ই মনে গেঁথে থাকে সব-সময়।

এদিকে জারাফ একের পর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে। তার মাথা কাজ করছে না। যেই নিদ্রা তাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো সেই নিদ্রা এখন তাকে ইগনোর করে? বিয়ের কথা বললে এড়িয়ে যায়? ব্যস্ততা দেখায়? কিসের এতো ব্যস্ততা তার? জারাফ যে তার জীবনের কেউ হয় তা ইদানিং নিদ্রাকে দেখে বুঝা মুশকিল। জারাফ ভাবে,

–“আচ্ছা আমি কি হীরা ফেলে এতোদিন যাবত শুধুই কাঁচের পিছনের ছুটেছি? যাতে কোনো লাভ নেই! ধরলেই ধারালো আঁচে নিজের ক্ষতি’টাই হবে?”

জারাফও কি তবে রুজবা’কে পায়ে ঠেলে নিজের ক্ষতি’টাই করলো? খাঁটি ভালোবাসা ছিলো রুজবার। সে বুঝে নি। সে তো ব্যস্ত ছিলো টাকার পেছনে ছুটতে। তাহলে এই টাকা কেনো আজ তাকে শান্তি দিচ্ছে না? কেনো দিচ্ছে না? সে তো রুজবা’কে বলেছিলো, “জীবনে ভালোবাসা দিয়ে কিছু হয় না, টাকা’টাই সব” তাহলে কেনো আজ সে টাকা দিয়েও ভালো থাকতে পারছে না? কেনো বার বার মনে রুজবার বলা কথা গুলো বাঁজছে? রুজবার ভালোবাসার গভীরতা’টা যে, জারাফ বুঝতে বড্ড দেরী করে ফেলেছে। নাহ নাহ। আর ভাবতে পারছে না জারাফ। এই রুজবা’টা তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। নিজে সুখে থেকে ওকে পুড়াচ্ছে।

সিগারেট ফেলে দিয়ে চুল খামচে ধরে নিচে বসে পড়ে জারাফ। তার ভাল্লাগছে না কিছু। কেনো নিদ্রা হূট করে এমন করছে? জারাফ দ্রুত মোবাইল বের করে নিদ্রার নাম্বারে ডায়াল করে। প্রথম বার রিং হওয়ার সাথে সাথেই নিদ্রা কেটে দেয় কল। পর পর কয়েকবার কল দিতেই থাকে জারাফ। প্রায় ১২ বার কল দেওয়ার পর নিদ্রা রিসিভ করে চিল্লিয়ে উঠে,

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৭

–” সমস্যা কি তোমার জারাফ? এতোবার কল দিচ্ছো কেনো তুমি? আর ইউ ম্যাড? কোনো আক্কল নেই তোমার? একজন মানুষ দেখছো বার বার কল কেটে দিচ্ছে তাও তুমি বার বার কল দিয়ে ডিষ্টার্ব করছো। সমস্যা’টা কি তোমার? আমি এখন বিজি আছি। পরে কল দিবো বাই।”

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩৯