অনেক সাধনার পরে পর্ব ৫

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৫
অরনিশা সাথী

বাসায় ফেরার পথে জারাফকে দেখলো রুজবা। দোকানের এক সাইডে জারাফ আর কয়েকটা ছেলে ক্যারাম খেলছে৷ ভ্রু কুঁচকে গেলো রুজবার৷ জারাফ গ্রামে আসলো কবে? কাল রাতেও তো কথা হয়েছে, তখন তো কিছু জানায়নি। ব্রীজের সামনে এসে রিকশা থামলো। এখান থেকে রুজবা আর ফারিন হেঁটেই যাবে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিলো ফারিন৷ রুজবা তখনো জারাফকে দেখছে। জারাফ রুজবাকে দেখেই ফোন বের করে সময় দেখে নিলো।

কলেজ ছুটি হয়েছে আরো ঘন্টা খানেক আগে৷ রুজবা এখন বাড়ি ফিরছে? সবসময় তো আগে আগেই বাড়ি চলে আসে। তার মানে ছেলেটার সাথে নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছিলো ও। এইসব ভেবে জারাফের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। রুজবার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ক্যারাম খেলায় মনোযোগ দিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রতিবারের মতো এবারেও জারাফ উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছে না রুজবাকে, যা রুজবার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। যে ছেলেটা রুজবাকে একপলক দেখার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে এসে ওর বাড়ির সামনে যায় সেই ছেলেটা আজ তাকাচ্ছে না ওর দিকে? ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগছে রুজবার। মনে নানা রকম জল্পনা কল্পনা করছে। ফারিন কিছুদূর গিয়ে আবার পেছন ফিরে রুজবাকে ডেকে বললো,

–“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল।”
ফারিনের কথায় রুজবা হাঁটতে শুরু করলো। রুজবা চলে যেতেই জারাফ মুখ তুলে তাকালো রুজবার দিকে। জারাফ এতক্ষণ বেশ বুঝতে পেরেছে রুজবা ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। ও ইচ্ছে করেই তাকায়নি রুজবার দিকে। সকালের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে। রুজবা নুহাশের বাইকে করে কোথাও একটা গেছে সেটা মানতে পারছে না।
ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে বসলো রুজবা। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে তাই আর খেলো না। এফবিতে গিয়ে দেখলো জারাফ অনলাইনেই আছে। রুজবা টেক্সট করলো,

–“গ্রামে এসেছো কবে?”
ম্যাসেজ পাঠিয়ে রুজবা রিপ্লাই এর জন্য অপেক্ষা করছে। মিনিট দুয়েক বাদে জারাফ ম্যাসেজ সিন করলো। লিখলো,
–“কাল রাতে।”
রুজবা সাথে সাথেই বললো,
–“কাল রাতে তো কথা হলো আমাদের, বললে না যে?”
–“প্রয়োজন মনে করিনি।”

জারাফের কথায় ভ্রু কুঁচকে গেলো রুজবার। ও হঠাৎ করে এমন ভাবে কথা বলছে কেন? রুজবা আবারো বললো,
–“মন খারাপ তোমার?”
–“নাহ।”
–“কিছু তো একটা হয়েছে, সবসময় গ্রামে আসলে জানাও আমাকে, বাসার সামনে আসো। অথচ কাল বাসায় এসেছো জানাওনি, কোনো টেক্সটও করোনি, আজ দেখা হলো তাকালেও না আমার দিকে।”
–“কে তুমি?”
জারাফের এমন প্রশ্নে রুজবা হকচকিয়ে যায়। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

–“মানে?”
–“মানে কে তুমি? কি হও তুমি আমার? যে আমার সবকিছু তোমাকে জানাতে হবে।”
জারাফের কথাগুলো রুজবাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ছেলেটা হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন? রুজবার কোনো রিপ্লাই না পেয়ে জারাফ নিজেই বললো,
–“ছেলেটা কে ছিলো রুজ?”
–“কোন ছেলে?”
–“যার সাথে আজ বাইকে করে গেলে।”

এতক্ষণে রুজবার কাছে সবটা পরিষ্কার হলো। নুহাশের সাথে দেখেই কি জারাফ রেগে আছে তাহলে? রুজবা এবার আর ম্যাসেজ না দিয়ে ফোন দিলো জারাফকে। জারাফ কেটে দিচ্ছে ফোন৷ রুজবা বারবার ফোন দেওয়া স্বত্তেও জারাফ ফোন রিসিভ না করে কেটে দিচ্ছে। রুজবা এবার ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো,

–“কি সমস্যা জারাফ? ফোন কেটে দিচ্ছো কেন বারবার?”
–“যা বলার ম্যাসেজে বলো।”
–“চুপচাপ ফোন রিসিভ করো। আর একবার যদি ফোন কেটেছো তো___”
–“তো কি?”
–“জানি না, তুমি চুপচাপ ফোন রিসিভ করো।”
এই বলে রুজবা আবারো ফোন দিলো। এবার আর জারাফ ফোন কেটে দেয়নি। সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করে নিলো। রুজবা বললো,

–“ওটা নুহাশ ভাই ছিলো জারাফ।”
–“নুহাশ কে?”
–“ফারিনের বয়ফ্রেন্ড কিয়ান ভাই, তার বেস্টফ্রেন্ড।”
–“তো ওই ছেলের বাইকে তুমি উঠেছো কেন?”
আজ সকালের সব কথা রুজবা জারাফকে খুলে বললো। সব শুনে জারাফ বললো,

–“তোমার লাইফ, তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো। রাখছি।”
–“জারাফ সত্যিই নুহাশ ভাইয়ের সাথে আমার কোনোরকম সম্পর্ক নেই। উনি কিয়ান ভাইয়ের বন্ধু সেই সুবাদেই কিছুটা কথা বলা, এর বাইরে আর কিচ্ছু না।”
–“বুঝলাম তো, এখন রাখছি।”
–“নাহ তুমি রেগে আছো এখনো__”
জারাফ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

–“তাতে তোমার কি?”
জারাফের প্রশ্নে রুজবা চুপ হয়ে গেলো। এই প্রশ্নের জবাবে রুজবা কি বলবে জানা নেই ওর। তাই চুপ করেই রইলো। জারাফ নিজেই বললো,
–“তোমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। রাগ হয় প্রচন্ড৷ এদিকে আমি রেগে থাকলে তুমি আমার রাগ ভাঙানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠো। কি সম্পর্ক আমাদের? নাম কি এই সম্পর্কের?”

–“ব্ বন্ধুত্ব।”
–“বন্ধুত্ব? তোমার মনে হয় এটা শুধুমাত্র বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ আছে?”
জারাফের প্রশ্নে রুজবা এবারো চুপ করে থাকলো। এটা সত্যিই বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ নেই। বন্ধুত্বের বাইরেও অনেক দূর এগিয়েছে এই সম্পর্ক। রুজবা অনেকটা সময় নিরব থেকে বললো,

–“এরকম করছো কেন জারাফ? এতদিন তো সব ঠিক ছিলো, তাহলে আজ__”
–“সব ঠিক ছিলো কারন এতদিন তোমাকে অন্য ছেলের সাথে আমি দেখিনি রুজ, কিন্তু আজ দেখেছি।”
–“এতে কি হয়েছে জারাফ? শুধু বাইকেই তো বসেছিলাম আর__”
–“আচ্ছা টপিক চেঞ্জ করো।”
–“তুমি এমন করছো কেন__”

রুজবাকে পুরো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই জারাফ কিছুটা চেঁচিয়ে বললো,
–“জানি না আমি।”
জারাফকে আচমকা এমন চেঁচাতে শুনে চমকে উঠে রুজবা৷ চেঁচানোর মতো কি এমন করেছে রুজবা ভেবে পেলো না। জারাফ কি তাহলে ওকে ভালোবাসে? এজন্যই কি নুহাশের বাইকে দেখে এতটা রিয়্যাক্ট করছে? রুজবাকে চুপ থাকতে দেখে জারাফ আবারো বললো,

–“হ্যালো রুজবা, শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?”
–“বলো।”
–“স্যরি, আসলে আমার মাথা ঠিক নেই তাই___”
রুজবা কোনো কথা না বলে চট করে লাইন কেটে দিলো। রুজবাকে বারবার ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে জারাফ। রুজবা কিছুতেই ফোন তুলছে না৷ রুজবা কি তাহলে রাগ করলো? মনে মনে এরকম সাতপাঁচ ভেবে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। উদ্দেশ্য রুজবাদের বাসার সামনে আসবে৷

জারাফের ফোন কেটে দেওয়ার পর বেশ কয়েক মিনিট স্তব্ধ হয়ে বসে আছে রুজবা। ছেলেটা এতক্ষণ এসব কি বললো ওকে? ভালোবাসে কি? না না, ভালোবাসলে তো বলতোই ভালোবাসি। কিন্তু জারাফ রুজবাকে অন্যকারো সাথে দেখলে জেলাস ফিল করে। প্রতি সপ্তাহে ভার্সিটির ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে শুধুমাত্র রুজবাকে একপলক দেখার জন্য৷ তারমানে, তারমানে জারাফ সত্যিই ভালোবাসে রুজবাকে৷ নাকি ও ভুল ভাবছে এসব? আর যদি ভালোবেসে থাকে তাহলে ওকে ভালোবাসি বলছে না কেন? এই ভেবে দ্রুত উড়না গায়ে জড়িয়ে ফারিনদের বাড়ি চলে গেলো রুজবা৷ ফারিনকে সবকিছু বলতেই ফারিন বললো,

–“তোদের কথার হাবভাবে আমি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম এরকম কিছুই হবে। ভালোবাসে বলেই হয়তো এরকম করে। নুহাশ ভাইয়ের সাথে দেখে রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে।”
–“তাহলে ও নিজের মুখে বলছে না কেন ভালোবাসি কথাটা?”
–“জারাফ ভালোবাসার কথা বললে তুই রাজি হয়ে যাবি?”
–“জ্ জানিনা।”
ফারিন হাসলো। বললো,

–“পজিটিভ আসার চান্স বেশি। নুহাশ ভাইকে তোর পছন্দ না কেন রুজবা? সে’ও তো তোকে অনেকটা ভালোবাসে। জারাফের আগে থেকে।”
এই মূহুর্তে ফারিনের মুখে নুহাশের কথা শুনে ক্ষানিক বিরক্ত হলো রুজবা। সেটা প্রকাশ না করে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“এখানে আবার নুহাশ ভাইকে টানছিস কেন?”
–“কারণ উনি’ও তোকে ভালোবাসে, আর তুই সেটা জেনেও অবহেলা করছিস উনাকে।”
–“উনি কি নিজ মুখে কখনো ভালোবাসার কথা বলেছে আমায়?”
–“বললে তুই রাজি হবি?”
–“নাহ।”
ফারিন এবারেও হাসলো। বললো,

–“জারাফ ছেলেটা আসলে কেমন সত্যিই জানি না আমি। কিন্তু নুহাশ ভাইকে জানি আমি। কিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড প্লাস চাচাতো ভাই ও। জান্নাতের বিয়ের পর থেকেই জানি ছেলেটাকে। সেই থেকেই নুহাশ ভাই ভালোবাসে তোকে। ছেলেটা তোকে ভালোবেসে যাচ্ছে তিন বছর শেষের দিকে রুজবা। একটা ছেলে ঠিক কতটা ভালোবাসলে তিন তিনটে বছর এক তরফা ভালোবেসে যেতে পারে ভাবতে পারছিস একবারো? নুহাশ ভাইয়ের ব্যাপারে তুই এত উদাসীন কেন রুজবা? জারাফ ক’দিন হলো তোর লাইফে এসেছে? বড়জোর নয়/দশ মাস। আর এতেই ছেলেটা তোর এত প্রায়োরিটি পাচ্ছে। কেন রুজবা? তবে কি জারাফে মত্ত হলি?”

–“তুই আজ হঠাৎ করে এভাবে বলছিস কেন ফারিন?”
–“তোর খারাপ লাগলে স্যরি দোস্ত। কিন্তু বলতেই হলো আজ। যাই হোক তোর লাইফ তোর ব্যাপার তুই কাকে ভালোবাসবি আর কাকে ভালোবাসবি না। আমার কথায় কিছু মনে করিস না প্লিজ।”
ফারিনের কথায় রুজবা ছোট করে শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। তারপর আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে সন্ধ্যার দিকে রুজবা বাড়িতে ফিরে এলো।

রাত সোয়া আটটা বাজে। রুজবা বই নিয়ে বসেছে ঘন্টা খানেক হবে। সামনেই ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম। রুপশা সমুচা পুরি নিয়ে এলো রুমে৷ বাবা পাঠিয়েছে একটু আগেই৷ রুজবা বই খাতা গুছিয়ে সমুচা নিলো খাওয়ার জন্য। ফোন হাতে নিয়ে অনলাইনে যেতেই দেখলো জারাফের অনেকগুলো ম্যাসেজ৷ জারাফের ফোন কেটে দেওয়ার পর আর ফোন হাতে নেয়নি রুজবা৷ জারাফের এত এত ম্যাসেজ দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ওর। একে একে সবগুলো ম্যাসেজ পড়লো ও৷ এমন সময় আবারো জারাফ ম্যাসেজ দিলো৷

–“রাগ করেছো রুজ?”
–“নাহ।”
–“তাহলে ওভাবে ফোন কেটে দিলে কেন? তারপর এত ফোন ম্যাসেজ দিলাম কোনো রেসপন্স নেই।”
–“ফোন হাতে ছিলো না।”
-“বাসার সামনে গেছিলাম, সেখানেও আপনার দেখা মিললো না৷”
–“কখন এসেছিলে?”
–“তুমি ফোন কেটে দেওয়ার পরই।”
–“ফারিনদের বাসায় ছিলাম।”
–“দেখা করবে?”

জারাফের ম্যাসেজ দেখে আবারো চুপ করে রইলো রুজবা৷ কি বলবে ভেবে পেলো না। রুজবার জবাব না পেয়ে জারাফ এবার ফোন দিলো৷ জারাফের ফোনে রুজবার বুক কেঁপে উঠলো৷ ধীর হাতে ফোন রিসিভ করতেই জারাফের সুমধুর কন্ঠস্বর শুনতে পেলো৷ রুজবা আমতা আমতা করে বললো,

–“ব্ বলো।”
–“কন্ঠ কাঁপছে কেন?”
–“ক্ কই না তো।”
–“বুঝি আমি।”
–“বুঝলে ভালো।”
–“তোমার উত্তরটা কিন্তু আমার জানা রুজ।”
জারাফের এমন কথায় আবারো কেঁপে উঠলো রুজবার বুক৷ শ্বাস বন্ধ করে রাখলো কয়েক সেকেন্ড৷ তারপর আবার বুকে হাত দিয়ে জোরে একটা শ্বাস নিলো৷ জারাফ বললো,

–“আমি আসছি।”
কথাটা কর্ণগোচর হতেই মৃদু কেঁপে উঠলো রুজবা৷ এক শীতল বাতাস যেন ছুঁয়ে গেলো রুজবার সারা শরীর। নিজেকে সামলে নিয়ে রুজবা জিজ্ঞেস করলো,
–“কোথায়?”
–“তোমার বাড়ির সামনে।”
–“পাগল তুমি।”
–“বলতে গেলে তাই। আমি আসছি, তুমি বের হও।”
–“পারবো না আমি।”
–“তুমি আসবে, আমি জানি।”
–“যদি না যাই?”
–“যতক্ষণ না আসো, তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”

জারাফের কথায় রুজবা মৃদু হাসলো৷ তারপর বললো,
–“ম্যাসেজ করে জানাচ্ছি, কোথায় থাকবো।”
রুজবার কথায় এবার জারাফ হাসলো৷ তারপর আচ্ছা বলে লাইন কেটে দিলো। রুজবা ওর মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো ওর বাবা নেই। তাই জিজ্ঞেস করলো,

–“মা, আব্বু আসেনি এখনো?”
–“নাহ, তোর আব্বুর আসার সময় হয়েছে এখনো?”
–“ফারিনদের বাসায় যাচ্ছি একটু।”
–“এত রাতে কেন?”
–“কিছু নোটস লাগবে।”

রুজবা ওর মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ তারপর ফারিনকে ফোন করে ওদের বাড়ি আসতে বললো৷ মিনিটের মাঝেই ফারিন এসে হাজির হলো৷ জিজ্ঞেস করলো,
–“আসতে বললি যে?”
রুজবা হাঁটতে লাগলো৷ ওর সাথে ফারিনও আসছে৷ রাস্তার দিকে এগোতে এগোতে বললো,
–“জারাফ আসবে, দেখা করবো চল।”

কথাটা শুনে ফারিনের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। ফারিন হাঁটা থামিয়ে রুজবার হাত ধরে ওর সামনে দাঁড় করালো। রুজবা হেসে জিজ্ঞেস করলো,
–“কিছু বলবি?”
–“নাহ চল।”

অতঃপর দুজনে আবার হাঁটা লাগালো। ফারিন হাঁটছে আর ভাবছে নুহাশের কথা। ছেলেটা অসম্ভব ভালোবাসে রুজবাকে। রুজবাকে একটু খুশি দেখার জন্য ফারিনের মাধ্যমে অনেক কিছুই করেছে ও। টুকটাক রুজবার পছন্দের অনেক জিনিস গিফট’ও দিয়েছে। কিন্তু রুজবা জানে ওসব ফারিনের দেওয়া। ফারিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর টুকটাক কথা বলতে বলতে রুজবা আর ফারিন রাস্তায় চলে এলো।

রুজবাদের বাড়ির পাশে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। তারপরই একটা ফাঁকা বাড়ি৷ রাস্তার সাইড আর রুজবাদের বাড়ির সাইডে দেয়াল করা সেই বাড়িটা৷ বাড়ি বললে ভুল হবে। এখানে শুধু ফলের গাছ লাগানো। জায়গাটা রাস্তার লেভেলে করা। আর বাড়ির তিনপাশ রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা নিচু। রুজবা আর ফারিন সেই ফাঁকা বাড়ির ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালো। জারাফকে ম্যাসেজ করে এখানেই আসতে বলেছে। রুজবা আর ফারিন দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।

দুজনেরই ভয়ে বুক কাঁপছে। যদি কেউ একবার টের পেয়ে যায় তাহলে অনর্থ ঘটে যাবে৷ রুজবা বুকে একরাশ ভয় এবং এক আকাশ পরিমান ভালো লাগা নিয়ে অপেক্ষা করছে জারাফের জন্য। কিছু সময় বাদেই ধপ করে কেউ একজন লাফিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকলো। রুজবা আর ফারিন ভয় পেয়ে একে অপরের হাত শক্ত করে ধরলো। কিছু সময় বাদেই দেখলো জারাফ এগিয়ে আসছে৷ পরনে কালো থ্রি কোয়াটার আর কালো টি-শার্ট। তারমানে জারাফই ওভাবে লাফিয়ে উঠেছে? জারাফ গিয়ে রুজবার সামনে দাঁড়ালো। রুজবার স্পন্দন যেন মূহুর্তেই বেড়ে গেলো কয়েকশো গুন। জারাফ নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–“অনেক সময় অপেক্ষা করালাম?”
রুজবা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দিলো। ফারিন ওদের দুজনের থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোন দেখছে। রুজবাকে কাঁপতে দেখে জারাফ প্রশ্ন করলো,
–“কাঁপছো কেন? ভয় পাচ্ছো?”
–“এভাবে কেউ লাফিয়ে আসে? আর একটু হলেই হার্ট অ্যাটাক করে মরতাম দুজনেই।”
–“জায়গাটা বেশ উঁচু ছিলো, তাই লাফিয়ে আসতে হলো।”

রুজবা আর কিছু বললো না৷ চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো৷ জারাফ ধীর পায়ে এগোচ্ছে রুজবার দিকে৷ রুজবা মাথা নিচু করেই পিছিয়ে যাচ্ছে৷ একসময় একটা গাছের সাথে পিঠ ঠেকে যায় রুজবার৷ রুজবা পেছনে ফিরে তাকিয়ে আবারো সামনে দাঁড়ানো জারাফের দিকে তাকালো। জারাফ বাঁকা হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে৷ রুজবা আবারো সরে যাচ্ছে৷ কারন জারাফ এখনো ওর দিকেই এগিয়ে আসছে৷

মাটি উঁচুনিচু হওয়ায় কিছুর সাথে বেজে রুজবা পড়ে যেতে নিলেই জারাফ রুজবার বাহু টেনে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দুজনের মধ্যে এখন দূরত্ব নেই বললেই চলে। জারাফ রুজবার বাহু ধরে রেখেই রুজবার দিকে তাকিয়ে আছে৷ রুজবাও মাথা উঁচু করে জারাফের সেই ভয়ংকর চোখজোড়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলছে৷ একজনের শ্বাসপ্রশ্বাস আরেকজন একদম কাছ থেকে স্পষ্ট শুনতে পারছে৷ দুজনেই দুজনের চোখের দিকে পলকহীন ভাবে দেখছে৷ যেন অনেক বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে একে অপরকে দেখার। এমন সময় এদিকে কেউ টর্চলাইট মারায় ঘাবড়ে যায় রুজবা৷ ওর বাহু থেকে জারাফের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,

–“ক্ কেউ এসেছে বোধহয়৷ যদি আমাদের একসাথে দেখে ফেলে?”
জারাফ রুজবাকে বললো,
–“ফিসফিস করে কথা বলো। নয়তো কেউ থাকলে শুনে ফেলবে।”
–“ত্ তুমি যাও। কেউ চলে এলে__”
–“হুশ! আস্তে কথা বলতে বললাম না? তুমি দাঁড়াও এখানে। আমি গিয়ে দেখি, কেউ না থাকলে ম্যাসেজ দিবো৷ চলে যেও তোমরা।”

রুজবা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই জারাফ যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই চলে গেলো। রুজবা আর ফারিন একে অপরের হাত ধরে রেখেছে, দুজনেরই প্রচুর ভয় লাগছে৷ মিনিট দুয়েক বাদে জারাফ ম্যাসেজ দিলো,
–“রাস্তায় কেউ নেই, তোমরা বাড়িতে চলে যাও।”

রুজবা ম্যাসেজটা দেখে নিলো। তারপর দুই বান্ধবী একসাথেই লাফিয়ে নামলো উঁচু বাড়িটা থেকে৷ রুজবাদের বাড়ি আর এই বাড়িটার মাঝে যে নিচু খেতটা আছে সেখান দিয়ে এক দৌড়ে রুজবাদের বাড়ি চলে গেলো৷ বাড়িতে এসে দুজনেই বুকে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে৷ ভাগ্যিস কেউ দেখেনি৷ এমন সময় জারাফ আবারো টেক্সট করলো,

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৪

–“বাসায় গেছো?”
–“হুম। তুমি কোথায়?”
–“বাসায় যাচ্ছি।”
–“আচ্ছা, তাহলে পরে কথা হবে।”
এই বলে অনলাইন থেকে বেরিয়ে গেলো রুজবা৷ ফারিন রুজবাকে বলে নিজেদের বাড়ি চলে গেলো৷ রুজবাও বিল্ডিংয়ের ভিতর ঢুকে পড়লো।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৬