অবিনাশী পর্ব ১০

অবিনাশী পর্ব ১০
রেজওয়ানা আসিফা

নূহা কে দেখতে এসেছে আজ। এই নিয়ে তিশার প্রচণ্ড মন খারাপ। বার বার জামাল সিকদারকে বারন করেছে তারপরও শোনেনি। এতো ছোট বয়সে যাতে বিয়েটা না দেয় এইজন্য অনেক বারন করেছে। কিন্তু জামাল সিকদারের পরিবার অনেক ধার্মিক তাই অনেক ছোট থেকেই নিয়ম ছোট বেলায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়।

পরিবারের বাইরে গিয়ে আত্মীয়সজনের কথা অমান্য করে তমাকে অনেক দিন পযর্ন্ত লেখাপড়া করিয়েছে। কিন্তু পরে তমার এমন কাজ দেখে জামাল সিকদারের মন পাটলে যায়। এইজন্য সিধান্ত নিয়েছে নিজের মেয়েদের তারাতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবে।তিশা যদি তার নিজের মেয়ে হতো তাহলে তাকে আরো আগেই বিয়ে দিয়ে দিতো।নূহার বয়স ১৬ তিশার কাছে এখনো বাচ্চা সে।
তিশা বাড়ির দরজায় দারিয়ে বারবার বাইরে উকি দিচ্ছে তিশার মামী অনেক বার খেয়াল করেছে। এবার গিয়ে জিগ্যেস করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-কিরে! এভাবে এখানে দারিয়ে আছিস কেনো? বাড়িতে কতো কাজ আর তুই এখানে কী খুজছিস?
– না না কিছু না। এমনি দারিয়ে আছি।
-দেখ মা! তোর পরিবারের মতো না তোর মামা। জতোই বুঝাস কাজ হবে না।
-মামী তুমি একটু বুঝাও! মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এই সময় বিয়ে দিলে।
-মেয়েদের জীবন এমনি। আল্লাহ চাইলে ভালো হবে। কপাল ভালো থাকলে এমনি ভালো হবে। আর খারাপ হলে পরে বিয়ে দিলেও খারাপ হবে।

– তুমিও বুঝতেছো না।
-তোর এই সব কথা বাদ দে। তোর মামা শুনলে বকবে। এখন জা ঘরে গিয়ে নূহাকে তৈরি কর।
কথাটা বলেই মামী চলে গেলো।
তিশা এখানে তার আগের উদ্দেশ্য নিয়েই দারিয়ে রইল। কতোক্ষন পাইচারি করে।
পেছনে ঘুরতেই নূরের বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। নূর তিশার থেকে অনেক লম্বা।নূরের হাতে অনেক গুলো বাজার ছিলো বাজার গুলো সব নিচে পরে গলো।তিশাও পরে গেছে। নূর বাজার গুলো তুলতে তুলতে বললো,

-দেখে চলতে পারিস না? বাজার গুলো পরে গেলো ধাক্কা খেয়ে।
তিশা কমর ধরে উঠতে উঠতে বললো,
-তুমি এতো নিষ্ঠুর কেনো বলোতো? আমি পরে গেছি ব্যাথা পেয়েছি কিনা তা না দেখে তুমি বাজার গুলো তুলছো,
-এই তোরে বেচলে কয় টাকা হবে? আর এখানে কতো টাকার বাজার জানিস? চার হাজার টাকার বাজার।
– আচ্ছা বাদ দাও। আজকে তোমাকে আমার দরকার তাই ঝগড়া করবো না। একটু আমার ঘরে এসো না, কথা আছে।

-ছিঃ নাউজুবিল্লাহ আল্লাহ মাফ করো। এই কথা শোনার আগে আমি মরে গেলাম না কেন।
তিশা অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-কী হয়েছে ! এমন করছো কেনো তুমি?
– তুই তোর ঘরে ডাকলি কেন?
-হয়েছে ভাই! তোর ঘরে যেতে হবে না। বারান্দায় আসো জরুরী কথা আছে।
নূর বাজার গুলো রান্না ঘরে দিতে গিয়ে দেখলো তার মা সব কথা শুনছে। বাজার গুলো রেখে আসতে যাবে তার মা ডেকে বললো,

-দেখ নূর তিশার কথা গুলো আমার খারাপ মনে হচ্ছে না। তোর বাবাও বুঝতেছে না। তিশা আমাকে অনেক বলেছে। আমি ওকে শান্ত করার জন্য তোর বাবার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছি।তুই একটু কিছু কর।
নূর কিছু না বলেই চলে আসলো।
বারান্দায় দারিয়ে আছে তিশা। নূর একটা কমলা খেতে খেতে এসে বললো,

– তুই যা বলবি তা আমি জানি। এখন বাবাকে ম্যানেজ করা কষ্টকর। আর এইসব দোষ তো তোর মার। সে যদি এমন না করতো তাহলে কী আর বাবার এতো পরিবর্তন হতো?
-এখন এসব কথা রাখো না! তুমি একটু মামাকে বুঝিয়ে বিয়ে টা বাদ দাও।
-আচ্ছা এখন তো বিয়ে হচ্ছে না দেখতে আসছে। আসলেই তো বিয়ে হবে না। তারা আসুক তারপর চলে গেলে বাবাকে বলবো।

-তারপরও একটা মেয়ে মানুষ কে দেখে যাবে ওরা ! এমনিতেই মেয়েটা এতো পর্দা করে।
-কোনো ছেলেকে ঘরে যেতে দিবি না। শেষ !
শীতের সকালে চার পাশ হালকা কুয়াশায় ঢাকা। তানিয়া মোবাইল টা নিয়ে মাঠে গেলো। হালকা হালকা কুয়াশা পরে মাঠ ভিজে আছে। দূর থেকে দেখলো খেতে তার বাবা আর ছোট ভাই পেয়াজের ফুল ভাঙছে। তার মনে পরে গেলো গত বছরের কথা। সেও এই দিনে সকাল সকাল উঠে খেতে গিয়ে পেয়াজের ফুল ভাংতো। সেও আস্তে আস্তে খেতে গেলো। তার বাবা বললো,

-তুই এতো সকালে আসতে গেলি কেনো? আমি মানুষ নিয়েছি একটু পরেই আসবে।
-আমি সাহায্য করলে আর মানুষ নিতে হবে না। ৫০০ টাকা বেচে যাবে।
-ধুর পা*গল যা বাড়ি যা। ঠান্ডা লাগবো এখানে।
-এমন করছো মনে হচ্ছে আমি কখনো এই কাজ করিনি। কী ভাবো আমাকে? আমি সব কাজ ভুলে গেছি।
কথাটা বলেই তানিয়া কাজ শুরু করে দিলো।
তানিয়ার বাবা কাজ করতে করতে বললো,

– তোর যেই মা তোকে দেখতে পারতো না। তুই যাওয়ার সেই মা সারাদিন বলে, মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ঘর টি ফাকা ফাকা লাগে
– মা আমাকে দেখতে পারে না কে বললো তোমাকে। শুধু শুধু তুমি এসব কথা বলে তার মাথা গরম করে দাও।
পাশ থেকে তানিয়ার ছোট ভাই কাওছার বলে উঠলো,

-ওইদিন মা বলতেছিলো, ওরে এতো দূরে বিয়া দেওয়া ঠিক হয় নাই। কতো দিন দেখি না। কতো বকছি মারছি কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করে নাই। মেয়েটার সাথে কতো অন্যায় করছি।
-থাক বাদ দে, মার সামনে এইসব কথা তুলবি না। মার কাছে খারাপ লাগবে।
-যানো আপা! তোমার জন্য নানা বাড়ি থেকে হাস এনে রাখছে। তোমারে রান্না করে খাওয়াবে। নানি তো অবাক হয়ে গেছে। এমন কী জিগ্যেসও করেছে যে হঠাৎ তোমার জন্য এতো মায়া কেন!

– জানো বাবা ওই বাড়ি হাস রান্না করছিলাম। সবাই খেয়ে সে কী প্রশংসা।
– প্রশংসা করবে না তো কী করবে। বড়লোকরা তো শুধু বাইরের খাবার খায় এইজন্য ওদের মুখ সেদ্ধ হয়ে থাকে তারপর যখন কোনো দেশি খাবার মুখে পরে যখন ওদের মুখ তাজা হয়ে জায়। আমাদের স্কুলেও দুই টা ছেলে আছে। অনেক বড়লোক সারাদিন দোকান থেকে এটা ওটা খেতেই থাকে।

-ওই বাসায় তেমন বাইরের খাবার খেতে দেয় না আমার শাশুড়ি। জতো ধরনের খাবার আছে সব সে নিজের হাতে রান্না করে। আর তার কাজ এতো পরিষ্কার। ডাক্তার মানুষ তো অনেক দেখেশুনে কাজ করে।
-তুমিও সব কিছু শিখে নিবে তারপর আমাদের বানিয়ে খাওয়াবে।
-আচ্ছা কয়েকটা শিখেছি যেই কয়দিন আছি রান্না করে খাওয়াবো।

-আপা অনেক দিন থেকে যাও না। তুমি না থাকায় ঘরটা ফাকা ফাকা লাগে। ময়না তো ছোট ও কিছু বোঝে না তোমার মতো সকালে উঠেই ঘরের সব জানালা কেউ খুলে ঘরে আলো প্রবেশ করায় না।
তানিয়র মন টা খারাপ হয়ে গেলো। ছোট থেকে এই প্রকৃতির মধ্যে বড়ো হয়ে এখন ওইখানে তারও দম বন্ধ হয়ে আসে।
কিন্তু কিছু করার নেই তো। তাকে যেতেই হবে।
তানিয়া মনে মনে বললো,

-আমি যদি দুর্বল হয়ে যাই তাহলে এরা আমার জন্য আরো মন খারাপ করবে। আমি চাইনা এদের কষ্টের মুখ দেখে যাই, আবার কবে না কবে আসি। এমন হতে পারি আর নাও আসতে পারি।
দুপুরে সবাই খেতে বসেছে। হঠাৎ তানিয়ার বাবার ফোনে কল আসলো। সে খুশিতে হাসছে তার তানিয়ার কাছে ফোন টা দিচ্ছে। তানিয়া ফোনটা ধরতেই বুঝতে পারলো তার শাশুড়ি কল করেছে।
তমা কল ধরেই তানিয়াকে বলল একটু পাশে যেতে।
তানিয়া একটু দূরে গিয়ে বললো,

-হ্যা বলেন।
-তোমার বাবাকে কিছু বলোনি তো?
– না মা! কিচ্ছু বলিনি।
-শোনো তোমার জন্য ঈশান অসুস্থ হয়ে গেছে বার বার তোমার কথা বলছে। ওর বাবা রেগে যাওয়ার আগেই তারাতাড়ি চলে আসো।

অবিনাশী পর্ব ৯

-কিন্তুু মা! আমি তো কালকেই আসলাম।
-সে আমি বুঝি না। তুমি দুই দিনের মধ্যেই আসবে।
-মা মা………
কল কেটে গেলো। উপাশ থেকে কেটে দিয়েছে।

অবিনাশী পর্ব ১১