অবিনাশী পর্ব ১১

অবিনাশী পর্ব ১১
রেজওয়ানা আসিফা

তানিয়ার মন টা বড্ড খারাপ। ভেবেছিলো বেশি না হলেও দশ দিন থাকবে। কিন্তু সেটাও হলো না। কীভাবে সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে।
তানিয়া যখন কথা বলতে যায়। তানিয়ার সৎ মা তানিয়ার বাবাকে জিগ্যেস করো কে ফোন করেছে।
মানুষ টা এতোটাই সরল ভাবে তার মেয়ের খোজ নেওয়ার জন্য তার বিয়াইন ফোন করেছে। তানিয়ার মাকে বুক ফুলিয়ে বলে

-তাদের আদরের বউ নিয়ে এসেছি। বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য তানিয়া মার শাশুড়ি ফোন করেছে।
তানিয়া মোবাইল রেখে আবার সবার সাথে খেতে বসলো। তানিয়ার মা ময়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
-তানিয়ার মতো ময়নার ভাগ্য টাও যেনো ভালো হয়। এবার ময়নারে এমন ভালো জায়গায় দিতে পারলে আর কোনো চিন্তা নাই।
তানিয়া খাচ্ছিলো। হঠাৎ চেচিয়ে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-দরকার নেই!!!!
কাউছার তানিয়ার বাবা মা সবাই অবাক হয়ে গেলো। তানিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার এমন আচরণ সবাইকে অবাক করে দিলো। তানিয়ার বাবা তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
-কী হলো তোর? এমন করলি কেনো?
তানিয়া কিছু বলার আগেই ওর সৎ মা বলে উঠলো,

-তুই কী চাস না তোর মতো ময়নার ও এমন ভালো বাড়িতে বড়বাড়িতে বিয়ে হোক? ময়না সুখে থাকুক?
-আমি সেটা বলিনি মা! ময়না তো আমার থেকেও বেশি সুখি হবে। ও তো আমার লক্ষি বোন। আর মা বড়লোক হলেই যে মন ভালো হয় মানুষ ভালো হয় তা কিন্তু না। সব সময় ভালো মনের মানুষ কে ভালোবাসবে। আর ময়না অনেক লেখাপড়া করবে ও এখনো বাচ্চা ওর সামনে এসব কথা বলবে না।
তানিয়ার এমন আচরণে কেউ কিছু না বুঝতে পারলেও তানিয়ার বাবা ঠিকি বুঝেছে ওই বাড়ি এমন কিছু হচ্ছে যা তার আদরের মেয়ে তার থেকে লুকাচ্ছে।

নূহাকে দেখে পছন্দ হয়ে গেছে ছেলে পক্ষের। ছেলেদের দেখতে দেওয়া হয় নি। আর ছেলে নিজেও বলেছে সে দেখবে না। ছেলে মাওলানা।বয়স ২৩ বছর। ছেলের পরিবারও বেশ ধার্মিক। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পছন্দ করেন তারা। ছেলের ইনকাম যাই হোক তাদের কথা প্রতিষ্ঠিত কেনো ছেলেরা একা হবে। তার পাশে তার প্রিয়তম নারী থাকলে সে আরো বেশি সাহস পাবে।

নূহাকে ছেলের মা আর বড়ো বোন দেখেছে। তাদের কথা মতেও মেয়ের বয়স কম। তবে তাদের পছন্দ হয়েছে। ঘর ভরা মানুষ সবাইকে উদ্দেশ্য করে নূর বললো,

-আপনারা সবাই আমার গুরজন। বেয়াদবি মাফ করবেন।আপনাদের হয়তো আমার বাবার পছন্দ হয়েছে। কারণ আমার আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে। আর আমার পছন্দের সাথে সব সময়ই আমি আমার বাবার পছন্দের মিল পেয়েছি। আপনাদের ছেলের তেমন বয়স হয় নি এখনো আর আমার বোনরও বয়স খুব কম তাই আমার মনে হচ্ছে সব কিছু ঠিক করে রেখে আরো কয়েক বছর সময় দেই আমরা ওদের। তবে সব কিছু পাকা করা থাকলো। এটা একান্তই আমার মতামত। আপনারা গুরজনরা যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।

তিশার অনেক ভালো লাগলো নূরের কথা গুলো। তারও ছেলেদের পরিবারটা ভালো লেগেছে। কিন্তু নূহার বয়স খুব কম।
জামাল সিকদার সময় নিলেন আর মেহমান চলে গেলো। তারা সবাই রাজি। তাদের কোনো আপত্তি নেই।তারা এখন জামাল সিকদারের সিধান্তের অপেক্ষায় আছে।

বিকেলে সব মেহমান বিদায় দিয়ে তিশা গেলো নূরের ঘরে। নূর তৈরি হচ্ছে বাইরে যাবে। তিশা হঠাৎ বললো,
-ভালো সাহস দেখিয়েছো আজ। আমি তো ভাবিই নি তোমার এতো সাহস।
নূর একটু বুক ফুলিয়ে বললো,
-মেয়েদের এতো সাহস থাকে না বুঝলি।
তিশা হো হো করে হেসে উঠলো। আর বললো,

-এটা কোনো সাহসের কাজ হলো? আমি তো তোমাকে একটু বাজালাম। তারপরও বিয়েটা তো পেছানোর চিন্তা ভাবনা হলো।
তিশার হাতেই ফোন ছিলো। স্কিনে তানিয়ার নাম্বার দেখে ছাদে চলে গেলো তিশা। হ্যালো বলতেই তিশা খেয়াল করলো তানিয়ার মন খারাপ। কথা কেমন যেনো লাগছে। কান্নাও করছে বোধহয়
তিশা কৌতূহলি হয়ে জিগ্যেস করলো,

-কী হয়েছে তোমার? মা কিছু বলেছে নাকি?
-দুপুরে মা ফোন করেছিলো। ঈশান নাকি অসুস্থ হয়ে গেছে। আমাকে দুই দিনের মধ্যে যেতে বললো। কতো মাস পর বাড়ি এসেছি। এখন যদি বাড়ির সবাইকে বলি চলে যাবো তাহলে এরা খুব মন খারাপ করবে। কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তুমি কী কিছু করতে পারবে?

-ঈশান আর আয়ানের বিষয়ে আমি কখনো কোনো কথা বলি না। এখন যদি কিছু বলি তাহলে মা সন্দেহ করবে এটা শিউর। তারপরও দেখি কী করা যায়। আর যদি একেবাইরেই কিছু না করা যায়, তাহলে চলে আসো। পরে আবার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো।
-আচ্ছা তুমি দেখো কিছু করা যায় কিনা। যানো এতো দিন পর বদ্ধ বাড়ির বাইরে এসে নিজেকে কতোটা মুক্ত লাগছে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারবো না।

-আমার উচিৎ ছিলো তোমাকে বাইরে নিয়ে একটু ঘুরানোর। আমার মাথাই ছিলো না বিষয় টা। আর দেখেছোই তো মা কীভাবে সন্দেহ করে। একবারের জন্যও তোমাকে একা ছাড়ে না।
-সব কিছুই আমার কপাল! কি করবো বলো, বাবা মা ভাবছে আমি কতোই না সুখে আছি। কিন্তু আমার মধ্যকার কষ্ট আমি নিজে টের পাচ্ছি। এর থেকে কুড়ে ঘরে থেকে যদি নিজের স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমনো যায় তাহলে সেটা বেশি সুখের। আমার সপ্ন আশা ভরসা সব শেষ।

-আমি মা আর বাবাকে অনেক বার বলেছি যে ঈশানকে বিয়ে দিয়ো না। ওকে বিয়ে দিলে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হবে। কিন্তু ওরা আমার কোনো কথা শুনলো না। ওদের ধারনা ওকে বিয়ে দিলে ওর সুস্থ হওয়ার চান্স আছে। একটা মেয়ের কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই নাকি ওকে এসে সুস্থ করবে।
তানিয়া তিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-আদোও কী ঈশানের সুস্থ হওয়ার কোনো রকম চান্স আছে?
-আমি ঠিক জানিনা। আমার মনে হয় নেই। কিন্তু মার সব সময় মনে হতো ওকে বিয়ে দিলে ও ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব সময় বলেছি এসব নাটক বা সিনেমায় সম্ভব। আমার কথা কী আর তারা শোনে।
এখানে কী হয়েছ,আজকে মামার মেয়ে নূহাকে দেখতে এসেছিল, মেয়েটা একদম ছোট ওর বিয়েটা আটকালাম কতো কষ্ট করে। এই নিয়ে সারাদিন চিন্তায় ছিলাম। এখন বড্ড ক্লান্ত লাগছে। এখন রাখি দেখি মাকে কালক ফোন করে কিছু করা যায় কিনা। তুমি সাবধানে থেকো।

-ঠিক আছে। রাখি এখন।
তানিয়ার বার বার তিশার একটা কথাই মনে পরছে, ঈশান কে নিয়ে বলার কথা গুলো। সে কী আদোও সুস্থ হবে? তার কী সুস্থ হওয়ার চান্স আছে? সে কী সুস্থ হয়ে তাকে ভালোবাসবে। তানিয়া অনেক ভেবে সিধান্ত নিলো সে চলে যাবে। রাতে খেতে বসে তানিয়া সবাইকে বললো সে পরশু চলে যাবে। কথাটা শুনে সবার মন খারাপ হয়ে গেলো।
তানিয়ার বাবা বললো,

– এভাবে এসেই চলে যেতে পারবি না বলে দিলাম। আমি কথা বলবো ওদের সাথে। আমি জানি তো দুপুরে তোর শাশুড়ি তোকে ফোনে চলে যেতে বলেছে।
– না বাবা। তোমার জামাই অসুস্থ তাই আমি নিজেই চলে যেতে চাইছি।

অবিনাশী পর্ব ১১

-সেটা ওরাও তো দেখতে পারে। তুই এতো দিন পর এসেছিস। ওদের বোঝা দরকার।
তানিয়ার মা বললো,
-তুমি বুঝবে না। ওটা পরের বাড়ি। ওরা এতো ছাড় দেবে না। তানিয়া তুই বরোং চলে যা। আবার কিছু দিন পর আসিস।

অবিনাশী পর্ব ১২+১৩