অবিনাশী পর্ব ১২+১৩

অবিনাশী পর্ব ১২+১৩
রেজওয়ানা আসিফা

তানিয়া চলে যাবে আজ। বাড়ির সবার মন অনেক খারাপ। তানিয়া নিজের কান্না কোনো মতে আটকে রেখে সবাইকে বিদায় দিয়েছে। তানিয়ার বাবা সাথে যেতে চেয়েছে কিন্তু তানিয়া নেয় নি। বাসে প্রচণ্ড কান্না করলো তানিয়া। তিশার ফোন আসতেই কান্না থামলো।

-হ্যা বলো তিশা!
– কোথায় তুমি?
-বাসে ! চলে এসেছি।
-কি করবো বলো! এরা আসলে মানুষের কাতারে পরে না। আচ্ছা সাবধানে বাড়ি যাও। আর শোনো, পরের সপ্তাহে বাড়ি আসবো। আর এবার হয়তো মামারা সবাই যাবে বাড়ি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-কিন্তুু তুমি তো বলেছিলে তারা মার সাথে কথা বলে না।
-নূহার বিয়ের ইনভাইট দিতে যাবে। ওদের মনে হয় কাবিন করে রাখবে। মামা রাজি হয়ে গেছে। আর মামীও তাকে অনেক বুঝিয়েছে। ছেলেদের কোনো আপত্তি নেই। যানো ছেলেটা বেশ ভালো।

জতোটুকু দেখেছি ততোটুকুতে মনে হয়েছে ভালোই। বাকিটা পরে বোঝা যাবে। একটা কাজ করো বাড়ি গিয়ে আস্তে আস্তে মায়ের সাথে ভাব জমাবে। তার কথা মতো সব কিছু করবে। পরে আবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলবে।
-না গো। আর ভালো লাগে না। আমি এখন ক্লান্ত। জীবনের যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই চলুক। আমি দেখি পানি কতো দূর পযর্ন্ত গড়ায়।

-এভাবে বলো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমার ইচ্ছেতে সব। তুমি যদি চাও ডি*ভোর্স দিবে আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো। তোমারও বাচার জীবন আছে। কেউ সেটা এভাবে নষ্ট করতে পারে না। দরকার হয় আমি তোমার পরিবার দেখবো। তোমার যদি মনে হয় তুমি এই সম্পর্কটা রাখবে না তাহলে আমি সাহায্য করবো।
-আমি নিজেও যানি না আমি কী করবো। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ওর জন্য আমার বড্ড মায়া হয়। ওকে ছেড়ে কীভাবে যাবো? মা বাবা ওকে ভালোবাসে কিন্তু আমার তারপরও মনে হয় মানুষটার আমি ছাড়া কেউ নেই।
-তুমি কী ওকে ভালোবেসে ফেলেছো?

-কারো জন্য মায়া হলেই কী ভালোবাসা হয়ে যায়? আমি যদি এখন ওকে ছেড়ে যাই ও মরে যাবে। মাত্র একদিনে ও অসুস্থ হয়ে গেছে। বাবা অনেক বার বলেছে ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তোমার মা তো শুনলো না। সে নিজেকে কী ভাবে আল্লাহ যানে! মনে করে সে যেটা ভালো বোঝে ওটাই ভালো। বাকি সবার বুদ্ধি খারাপ।
-তোমার বাবা জেনে যাবে হয়তো এইজন্য এমন করেছে

-আজ না হোক কাল তো জানবেই। কতোদিন লুকিয়ে রাখবে?
তানিয়া রাখি বলে ফোন কেটে দিলো। তিশার খুব খারাপ লাগছে তানিয়ার জন্য। সব ঠিক হতো যদি ঈশান সুস্থ থাকতো। তাহলে আর কোনো ঝামেলা থাকতো না।
তানিয়ার বাড়ি ফেরার কথা শুনে ঈশান ঘর থেকে নিচে নেমে চলে এসেছে। তানিয়ার হাতের সব থেকে ছোট আঙুল টা ধরে টেনে নিয়ে বললো,

-তুমি চলে এসেছো! আমি জানতাম তুমি চলে আসবে।
তানিয়া খেয়াল করলো ঈশানের গা প্রচণ্ড গরম। বোধহয় জ্বর এসেছে।
তমা তানিয়ার কাছে এসে বললো,
-ওর জ্বর এসেছে। কালকে থেকে কিচ্ছু খায়নি। তোমার রান্না করা খাবার শেষ এইজন্য নাকি ও খাবে না অন্য খাবার।
তানিয়া ঈশান কে তমার কাছে দিয়ে বললো,

-তুমি মার কাছে বসো আমি তোমার জন্য খাবার করে নিয়ে আসছি।
-তুমি আবার চরে যেয়ো না। তোমাকে ছাড়া আমি খুব একা। তুমি চলে যেয়ো না প্লিজ!
-আমি কোথাও যাবো না। কথা দিলাম!
তানিয়ার কথাটা শুনে ঈশান কোনো রিয়েক্ট না করলেও তমা একটি জয়ের হাসি হাসলো। তানিয়া তমার হাসি টা খেয়াল করে তার খুব কাছে এসে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,

-আপনি এটা ভেবে খুশি হচ্ছেন যে আমাকে ঠকিয়ে এই বাড়ি এনেছেন আর আমি ঠকেও আপনার ছেলেকে ভালোবেসে ফেললাম! তাহলে শুনেন আপনার ধারনা একদম ভুল! হতে পারে আপনি আপনার স্বামী ঠকবাজ! হতে পারেন আপনারা বেইমান। কিন্তু এই মানুষ টা নিষ্পাপ। এই মানুষ টা সরল। মাঝে মাঝে আমার খুব সন্দেহ হয় এই ছেলেটা কী আপনার পেটে হয়েছে?

তানিয়ার কথা শুনে তমা রেগে তানিয়াকে ধমক দিলো। তানিয়া হঠাৎ চেচিয়ে বললো,
-গলা নিচে, একদম নিচে! আমার সাথে জোরে কথা বলবেন না। খুব খারাপ হবে।
কথা গুলো বলেই তানিয়া রান্না ঘরে চলে গেলো। মিসেস তমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে। মনে মনে ভাবছে এতো সাহস ও পেলো কোথা থেকে। রান্না ঘর বসার ঘরের সাথেই, দুই টার মাঝ খানে শিড়ি। তমা যখন ঈশান কে উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগালো। তানিয়া রান্না ঘর থেকে থামিয়ে বললো,

-ওকে উপর নিয়ে জাচ্ছেন কেনো? আপনার মেয়ে তো অনেক বলেছে দুই ছেলের জন্য নাকি আপনি পাগল। আপনার ছেলেদের জন্য নাকি আপনি সব করেছেন। আর ঈশানকে নাকি আপনি খুব ভালোবাসেন! এইজন্য দুই টা ছেলের জীবন’ই’ নষ্ট। ওর আলো বাতাসে থাকা দরকার। ওর আপনার সাথে থাকা দরকার ছিলো। সারাদিন কাজের লোকের কাছে রেখে টাকার পেছনে ছুটেছেন। ওই বন্ধ ঘরে থাকতে কার ভালো লাগে? সারাদিন কার একটা ঘরের মধ্যে থাকতে ইচ্ছে করে? ওর সব দেখাশোনা যেহেতু আমি করি তাই ওকে আমার কথা ছাড়া কিছু করবেন না। আশা করি এর ফল ভালো কিছু হবে। ওকে সোফায় বসান আমি খাবার নিয়ে আসছি।

তমা অবাকের শেষ সিমানায় পৌছে গেছে। তাকিয়ে আছে অপলকে তানিয়ার দিকে। মনে মনে বলছে,
ওর বাবার কী জমজ মেয়ে আছে নাকি, সিনেমার মতো এক মেয়ের জায়গায় অন্য মেয়ে দিয়ে দিলো নাকি।
তানিয়া তমাকে দারিয়ে থাকতে দেখে বললো,

-ওকে এভাবে দারিয়ে রেখেছেন কেনো? দুদিনে না খেয়ে তো শক্তি সব শেষ। এখন তো পরে যাবে। ওকে তারাতাড়ি বসান।
তমা ঈশানকে বসিয়ে দিলো। তানিয়া নিজ হাতে ঈশান কে খায়িয়ে দিলো। পানি এনে শরীর হাত পা মুছে দিলো। ঈশান এখন কিছু টা সুস্থ। তানিয়া ঈশানের হাত ধরে বললো,

-ছাদে গিয়ে চা খাবে? আমি চা করে দেবো। তোমার প্রিয় লেবুর চা।
-কিন্তুু ছাদে গেলে তো মানুষ পরে যাবে। ও মা বলো ছাদে গেলে মানুষ পরে যায় না? ও ছাদে যাওয়ার কথা বলছে।
তানিয়া রাগি চোখে তাকালো মিসেস তমার দিকে। মিসেস তমা ঈশানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-না বাবা আগে পরে যেতো এখন পরে না।
তানিয়া ঈশান কে আবার বললো,
-দেখেছো! মা বলেছে এখন পরে না। তুমি যাবে?
-হ্যা। আমি যাবো, কতোদিন হয়েছে যাই না। যানো দাদু চলে যাওয়ার পর আর ছাদে যাই না।
-দারাও আমি চা করে নিয়ে যাচ্ছি।

তানিয়া ঈশানকে নিয়ে ছাদে গেলো। পুরোটা বিকাল ঈশানের সাথে কাটালো। ওকে সময় দিলো। সন্ধ্যায় ঈশানকে ঘরে এনে ঔষধ খায়িয়ে নিজে নামাজ পরে নিলো। মোবাইল বের করে তিশাকে কল করলো।
ভর সন্ধ্যায় তানিয়ার কল দেখে তিশা বেশ আবাক হয়। কারণ এই সময় তিশার বাবা আমান চৌধুরী বাসায় থাকে আয়ান ও বাড়ি থাকে। সবাইকে চা করে দিতে হয়। তিশা কল রিসিভ করেই বললো,

-এ সময়ে ফোন করেছো? কেউ দেখেনি?
-দেখলেও যায় আসে না কিছু।
তিশার অবাক লাগছে তানিয়ার কথা শুনে। তিশা এবার জিগ্যেস করলো,
-এই তুমি তানিয়া তো?
-কেনো অন্য কাউকে মনে হচ্ছে?

-হ্যা! ভিতু মেয়েটার কন্ঠে অনেক সাহসের আভাস পাচ্ছি।
-এর পেছনে কারণ আছে। দেখা হলে সব বলবো।
-বুঝলাম! কিন্তু এখন তাহলে ফোন করেছো কেনো?
-তোমার দেওয়া আজকে নীল শাড়িটা পরেছি। তোমার পছন্দের তুলনা হয় না। যানো কি যে সুন্দর লাগছে। নিজেই নিজের প্রেমে পরে গেছি। গত চার মাসে বোধহয় নিজেকে এতো সুন্দর লাগেনি।

-বিষয় এটা না। বিষয় হচ্ছে তোমাকে কেউ সাহস দিয়েছে, তাই তুমি সাহস পেয়েছো। আর নিজেকে দেখার সময়ও হয়েছে চিন্তা মুক্ত ভাবে।
তানিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে চিৎকার করে উঠলো মিসেস তমা সাথে আয়ানও আছে। তমার চিৎকারে ঈশানের ঘুম ভেঙে গেছে।
তানিয়া পিছে ফিরে বললো,

-আস্তে কথা বলুন, ওর ঘুমটা ভেঙে দিলেন তো!
তানিয়ার কথায় কান না দিয়ে তমা বললো,
-আবার ফোন কোথায় পেলে? কে দিয়েছে? তোমার এতো সাহস কীভাবে হলো? আমি বলেছিলাম তো তুমি মোবাইল ব্যবহার করবে না। তাহলে কেনো শুনলে না আমার কথা।

-কেনো আমি মোবাইল ব্যবহার করবো না কেনো? আমি তো আপনার সব আকামের কথা কাউকে বলছি না। আপনি তো আমাকে ভয় পান এই ভেবে যে আমি কাউকে বলে দেবো। চিন্তা করবেন না। বলবো না কাউকে।
আয়ান খুব রেগে গেলো। তমাকে পিছে ফেলে সামনে এসে তানিয়ার গায়ে হাত তুলতে যাবে এর আগেই টি টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপ আয়ানের মাথায় উড়িয়ে মারলো তানিয়া।

আয়ানের মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তমা তানিয়ার এমন রূপ দেখে ভয় পেয়ে গেলো কিছু টা। আয়ান কে নিয়ে তারাতাড়ি বেড়িয়ে গেলো।
তানিয়া বিছানায় ধপাস করে বসে পরলো। চুল গুলোর ফাকে ফাকে দশ আঙুল দিয়ে মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে আছে তানিয়া। ঈশান তানিয়ার কাছে এসে বললো,

-ওর মাথায় রক্ত পরছিলো দেখেছো? আয়ান ব্যাথা পেয়েছে।
তানিয়া ক্লান্ত চোখে তাকালো ঈশানের দিকে। ঈশানের মুখটা নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
-খারাপ মানুষদের ব্যাথা পেতে হয়। ওরা ব্যাথা না পেলে ভালো হয় না।
ঈশান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তানিয়া ঈশান কে উঠিয়ে ফ্রেশ করে নিচে নিয়ে গেলো। সবার সাথে চা করে দিলো। সন্ধ্যাটা আমান চৌধুরীর কাছে রাখলো ঈশান কে। অনেক দিন পর ছেলেকে অনেক কাছে থেকে দেখছে আমান চৌধুরী।

আয়ানের মাথায় পট্টি বেধে দিয়েছে। তমা কোনো কথা বলছে না আয়ান রেগে অনেক ঘরের বাজে অবস্থা করে ফেলেছে। তমার উপরও চেচাচ্ছে।
-মাও আমাকে মারলো। ওর মতো সাধারণ একটা মেয়ে আমাকে মারলো। ছোট লোক মেয়েটা আমার মাথায় মারলো আর তুমি কিচ্ছু বললে না? ও এতো সাহস কোথা থেকে পেলো!

-আমি সেটাই ভাবছী। কী হলো হঠাৎ ওর?
-ওকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। নাহলে ও আমার হাতে মরবে। বলে দিলাম।
আয়ান বেড়িয়ে চলে গেলো। তানিয়া সবি সুনেছে। চা নিয়ে দারিয়ে ছিলো। আয়ান খেয়াল করেনি তানিয়াকে।
ভেতরে আসতেই তমা ঘাবরে গেলো।
তানিয়া চা টা তমার হাতে দিয়ে বললো,

-কোনো ভাল নাই! শুধু শুধু আপনার ছেলেটা মাথা গরম করছে। আমার সাথে লাগতে আসলে আগুনে ঝলসে মরবে। ওকে সামলান। কারণ আমি লাগাম ছাড়া হয়ে গেছি।
-দেখো তানিয়া, তুমি এমন করতে পারো না। তোমাকে কখনো আমরা কষ্ট দেইনি। তাহলে এমন কেনো করছো।
-আচ্ছা এটা বলুন তো মা! আমি কী আপনাদের কষ্ট দিচ্ছি? কোনো কাজের হুকুম করেছি? নাকি এই বাড়িটা নিজের বলে দাবী করেছি।

আপনারা আমার সাথে ঠিক যেমন ব্যবহার করেছেন আমি তেমনি করছি। আরো উল্টা আপনারা আমার ছোট থেকে দেখা সপ্ন গুলো ভেঙেছেন। নিজের স্বামীর আদর থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমি আপনাদের খারাপ ও চাই না। ভালোও চাইনা। ক্ষতি করতেও চাইনা। ভালো করতেও চাইনা। আমি এখানে ঈশানের জন্য আছি। আমার সাথে লাগবেন না কারণ আপনারা আমার সাথে যেমন করবেন আমি তেমনি করবো। আপনাদের জন্য আমার মায়া হয় না।
তানিয়া কথা গুলো চায়ের ট্রে টা নিয়ে চলে গেলো।

বাড়িতে বাবুর্চি এসে রান্না করছে। পুরো বাড়ি সুন্দর করে গোছানো হচ্ছে। মিসেস তমা আজ অনেক খুশি। তার ভাই নিজ ইচ্ছেতে আজ পুরো পরিবার নিয়ে তার বাড়ি আসছে। তমা আয়ান কে আগেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
তানিয়াও অনেক কাজ করেছে।

জামাল সিকদার, নূর,নূহা, ফাতেমা ও নূরের মা এবং তিশা সবাই একসাথে এসেছে। সবাই একসাথে বসে আছে। তানিয়া সবার জন্য চা নিয়ে আসলো। জামাল সিকদার তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে এই হচ্ছে বলির পা*ঠা।
তিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানিয়া বলে উঠলো,

-মাঝে মাঝে বলির পা*ঠা হয়েও বুদ্ধি করে ওই বলি জায়গা থেকে উঠে রুখে দারাতে হয়।
কথা গুলো শেষ করেই জামাল সাহেব কে সালাম দিলো তানিয়া।
তানিয়া আরো বললো,

-আসলে আপনার কথাটার উত্তর দিতে গিয়ে পরিচয়ের শুরুতেই সালাম দেওয়া হলোনা।
-সমস্যা নেই মা। কেমন আছো?
-এতো দিন খারাপ ছিলাম। এখন আলহামদুলিল্লাহ মানষিক আর শারীরিক দুই ভাবেই সুস্থ আছি।
-যাক ভালো।
-আপনারা আমার শাশুড়ির বাড়ির লোক। আমার হাতের রান্না না খেয়ে যেতে পারবেন না। আর তৃপ্তি করে থেকে যাবেন।
এই কথা গুলো বলার ইচ্ছে ছিলোনা তবে আমার শাশুড়ি আবার বলবে তার ভাই ভাবিকে সমাদর করিনি, তাই বললাম।

-না না মা, থাকবো না। তোমাদের দাওয়াত দিতে আসলাম।
জালাম সাহেব তমা আর আমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-নূহার বিয়ে ঠিক হয়েছে, কাবিনের তিন বছর পর অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে। এইজন্যই বলতে আসলাম। আর এক সপ্তাহ বাকি। তোমরা সবাই যাবে। তোমাদের সবার দাওয়াত।
তানিয়া হঠাৎ বলে উঠলো,

-আমার স্বামী যাবে তো? ওকেও ইনভাইট করেছেন তো?
নূরের মা বলে উঠলো,
-এ কেমন কথা বলছো মা? ওকে কেনো বলবো না? তো আমাদের ছেলের মতো।
-না আসলে মামী! এই বাড়ির কেউ কোথাও গেলে ওকে নেয়না এইজন্য ভাবলাম হয়তো ওকে আলাদা করে ইনভাইট করতে হয়।

নূরের মার বুঝতে বাকি রইল না কথাটা তমাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তাই সে আর কোনো কথা বললো না।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর তিশা তানিয়াকে নিয়ে নিজের রুমে গেলো।
তিশা তানিয়ার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-কী হয়েছে তোমার বলোতো? কীভাবে এতো সাহস আসলো মায়াবী মলিন মেয়েটার বুকে? কে দিচ্ছে এই সাহস?
-তাহলে শোনো,

বাসে আমার পাসের সিটেই বলেছিলো একজন ডক্টর। আমার যখন মনটা প্রচণ্ড ভাঙা। চিৎকার করে কান্না করতে না পেরে মুখে কাপড় গুজে কাদছিলাম তখন ওই ডাক্তার মেয়েটা জিগ্যেস করলো কী হয়েছে।
আমিও তাকে সব বললাম। সে সব শুনে বললো,

-এরা বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হয় না। তবে অনেক আদর যত্ন আর মানসিক সাপোর্ট পেলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। এই রকম যদি মায়ের পেট থেকেই হয় তাহলে সুস্থ হওয়া অনেক টা কঠিন। তারপরও তুমি চেষ্টা করতে পারো। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করো। আর ওদের ব্যবহারের কথা বলছো?

দুই দিন নিজের মধ্যের সব ভয় কে দূর করে ওদের বিরুদ্ধে কথা বলো দেখবে আর এমন হবে না। সাহস আনো নিজের মধ্যে। আমিও এমন দুর্বল ছিলাম। প্রেম করে বিয়ে করেছি। এতো শিক্ষিত ডাক্তার হয়েও তাদের সাথে পারছিলাম না। আমার মধ্যে আমার ছোট বোন সাহস জোগিয়েছে। আর হ্যা ভালো কথা, আমার ছোট বোন পুলিশ। তোমার শশুর বাড়ির ওইদিকেই। কিছু হলেই ভয় দেখাবে। মনে রাখবে বড়লোকরা যেমন অত্যাচারী হয়। আবার ওদের মনের মধ্যে একটু ভয় ঢুকিয়ে দিলে ওটা ওদের চিড়ে খায়। ভয় পেয়ো না বোন।

অবিনাশী পর্ব ১১

তিশা মন দিয়ে তানিয়ার কথা গুলো শুনছিলো। তানিয়া আরো বললো,
-ওনি ওনার বোনের নাম্বারও আমাকে দিয়েছে। কোনো ঝামেলা হতে যাতে ফোন করি।

অবিনাশী পর্ব ১৪+১৫