আকাশে তারার মেলা পর্ব ১৩+১৪

আকাশে তারার মেলা পর্ব ১৩+১৪
আসরিফা সুলতানা জেবা

শত শত তারার মেলা দেখানো মানুষ টা নিমিষেই তুলির কল্পনার আকাশ টা ঢেকে দিল মেঘে।
ফ্লোরে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে তুলি। দু চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অবাধ্য জল। এলোমেলো হয়ে আছে শরীরের কাপড় টা। চুল গুলোও কেমন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আজ তুলি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। নিজের অস্তিত্বে যেই মানুষ টা কে মিশিয়ে নিয়েছিল সেই মানুষ টাই বিলীন করে দিল তুলির অস্তিত্ব। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তুলির।

পাথর হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। ভিতর টা কাঁদছে চিৎকার করে অথচ সেই কান্নার কোনো আওয়াজ নেই। কি অবলীলায় শব্দবিহীন হু হু করে কেঁদে উঠছে মনটা। গভীর চিন্তায় নিমগ্ন তুলি। তাচ্ছিল্যের হাসি পাচ্ছে তার নিজের সতেরো বছরের জীবন টা কে নিয়ে। প্রত্যেক টা মানুষ তার হৃদয়ভঙ্গ করতে যেন সর্বদাই প্রস্তুত থাকে। ভালোবাসা কি এতোটাই বাজে নেশা? কেন এই নেশায় ডুব দিয়ে তুলি ভেঙে পড়ছে বার বার? কেন তুলির যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ঠিক মাঝখান টায়? কেন মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার? সে তো বিশ্বাস করেছিল, ভালোবেসেছিল। তবে কেন আদ্র এতো যত্ন করে ভালোবাসা শিখিয়ে কঠোরভাবে ভেঙে দিল? এতো নিখুঁত অভিনয় হয়? এতো যত্নে গড়া মায়ায় জড়ানো তীব্র ভালোবাসা কখনও অভিনয় হতে পারে? প্রশ্নগুলো মনে আঁকড়ে ধরেই ডুকরে কেঁদে উঠল তুলি। এতোক্ষণের চেপে রাখা কান্না গুলো মুক্তি পেল। উচ্চশব্দে তুলির চিৎকার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল চার দেয়ালের মাঝে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“ভালোবাসায় এতো যন্ত্রণা আদ্র? আগে কেন জানলাম না আমি? তবে তো আমি আমার মন টা কে বেঁধে রাখতাম। কখনও আপনার নিকট সঁপে দিতাম না। কেন এই অসহনশীল যন্ত্রণা আমার ভাগে ঢেলে দিলেন আদ্র? কোথায় আপনি? আমায় ডুবিয়ে হারিয়ে গেলেন? সারাটা জীবন এই যন্ত্রণা যে আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে আদ্র। আমি পারছি না। আমার পক্ষে যে সহ্য করা সম্ভব না। কি করবো আমি? কি করব একটু বলে দেন প্লিজ। যেদিন থেকে আপনার ভালোবাসায় জড়িয়েছি প্রতিটা দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ভয়ে ভয়ে কাটত আমার। মনে হতো এই বুঝি আমার আদ্র কে কেঁড়ে নিবে কেউ। অথচ আমার ভয় পাওয়া তো নিছক ছিল। আপনি তো কখনও আমার ছিলেন না আদ্র। কখনও আমার ছিলেন না। আপনি তো অন্য কারো। পাপ করেছি আমি। অন্য কারো স্বামী কেঁড়ে নিতে চেয়েছি।”

তুলির আত্ম চিতকার সারা ঘরময় ভেসে বেড়াচ্ছে। আবেগি মনে দু দু বার বেদনার সম্মুখীন হয়েছে মেয়েটা। একজন কে বিশ্বাস করে এবং অপরজনকে নিজের অস্বস্তিে মিশিয়ে। কষ্ট গুলো সময় বেধে বাড়তেই লাগল। সেই সাথে বেড়ে গেল কান্নার বেগ। এ বয়সে এতো ধাক্কা কিভাবে সইবে মেয়েটা? কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ও লাল আলতার মতো টুকটুকে লাল হয়ে আছে। যেই চোখে কল্পনায় কিছু সময় আগেও ফুটে উঠেছিল লজ্জার ছাপ, বউ সেজে আদ্রর জন্য অপেক্ষা করার মুহুর্ত ডাগরডাগর সেই আঁখি দু’টো তে সময়ের ব্যবধানে কষ্টের ছাপ। সময়ের সাথে কতকিছু বদলে যায়। কেউ কষ্ট কাটিয়ে সুখের আভাস পায় তো কেউ হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করে সারাক্ষণ।

হাতের নীল কাঁচের চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে হা হা কার করে উঠল তুলির বুকটা। চুড়ি গুলোও যে আদ্রর কিনে দেওয়া। নিমিষেই মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট অভিমানে পরিণত হল। রাগে-কষ্টে, অভিমানে হাত টা আছাড়তে লাগল ফ্লোরে। রিমঝিম আওয়াজ তুলে একের পর এক ভাঙতে লাগল চুড়ি গুলো। সাদা ফ্লোরে গড়িয়ে যেতে দেখা গেল লাল তরল রক্ত। কাঁচের টুকরো গেঁথে গেছে তুলির কোমল হাতে। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে মেয়েটা। এই ব্যাথা যে তাকে ব্যাথিত করতে পারছে না। সামান্য ব্যাথা টুকু কিভাবে ভাঙবে তুলি কে? সে তো পুড়ে যাচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে প্রণয়ের দহনে। এক সময় রক্ত দেখেও চিৎকার দেওয়া মেয়েটা নেতিয়ে পড়েছে কষ্টের ভারে।

ইনশিতা রুমে পায়চারী করছে চিন্তিত হয়ে। খুব কান্না ও পাচ্ছে তার। তুলি কে রুমে নিয়ে যাওয়ার পর শরীর খারাপ লাগছে বলে রেষ্ট নিবে জানাল। তাই ইনশিতা ও সামিরা চলে এসেছে। কিন্তু ইনশিতার কিছুই ভালো ঠেকছে না। দুশ্চিন্তা হচ্ছে তুলির জন্য। আমরিন গিয়ে ঢেকেছিল অনেকবার কিন্তু তুলি দরজা মেলে নি। অজানা ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে এল আমরিনের। ভুলেও নিচে গিয়ে জানানো যাবে না কোনো কিছু। তাই তড়িঘড়ি করে ফোন দিয়ে আদ্র কে জানাল। মিনিট দশেক অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমরিন উপর থেকে সদর দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আদ্র ঢুকছে হুড়মুড়িয়ে। পঁচিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটেই পার করে চলে এসেছে। অস্থির ভাব স্পষ্ট। সবাই ডাকলেন অথচ ফিরে ও তাকাচ্ছে না আদ্র। আদ্রর বাবা রাদিফ সাহেব রেগে গেলেন প্রচন্ড। আদ্র সবসময় ওনার কথার অবাধ্য হন তা আজ নতুন নয়। সায়েরা বেগম সামলে নিলেন কোনোমতে। ছেলের পিছু পিছু ছুটে চললেন তিনিও। ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল আমরিন। একদমে বলল,,

–“তুলি কোনো সাড়া দিচ্ছে না ভাইয়া। আমি অনেকবার ডেকেছি। ভিতর থেকে দরজা লক করা।”
নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে গেল আদ্র। সায়েরা বেগম মেয়ের কথায় বুঝতে পারছেন খারাপ কিছু ঘটেছে। যেতে নিলে আমরিন আটকে দিল মাকে।
–“তুৃমি যেও না আম্মু।”
–“তুলির কি হয়েছে আমরিন?”(চিন্তিত কন্ঠে)
–“একটু শরীর খারাপ। তুমি ইনশিতা আপু কে নিয়ে নিচে যাও। ভাইয়া ঠিক সামলে নিবে।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইনশিতা কে নিয়ে নিচে চলে গেলেন সায়েরা বেগম। আমরিন ও নিজেকে স্বাভাবিক করে সামিরার সাথে নিচে চলে আসল।

বারান্দা টপকে তুলির রুমে আসল আদ্র। মেঝেতে তরল রক্ত চাক্ষুষ হতেই আদ্রর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল সাথে সাথেই। অগ্নি বর্ষণ হতে লাগল দু চোখ থেকে। কপালের রগ গুলো ফুলে গেছে। রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগল পুরো শরীর। চোখের পলকেই যন্ত্রণা গুলো হৃদপিণ্ডে ছুরি গাঁথতে লাগল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে দু হাঁটু গেড়ে বসল তুলির সম্মুখে। কারো আভাস পেতেই মেঝে থেকে অশ্রুসিক্ত চোখ সরিয়ে উপরের দিকে তাকাল তুলি। প্রচন্ড জোরে ধুক করে উঠল তুলির বুক টা। আদ্রর রক্তিম চোখে পানি টলমল করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্র তার দিকে।

তুলির কষ্ট যেন হু হু করে আরো বেড়ে গেল। কিছু বলতে চেয়েও অভিমানে আঁটকে যাচ্ছে সব কথা। হাতে আদ্রর স্পর্শ পেতেই জ্বলে উঠল হাতটা। নীল বর্ণের চোখে রক্তিম আভা, চোয়াল শক্ত, কপালের রগ ফুলে আছে তবুও সবকিছু উপেক্ষা করে আদ্র ব্যস্ত হয়ে পড়ল তুলির হাতে গেথে যাওয়া কাচ গুলো খুলতে। কোনো ব্যাথাই উপলব্ধি করতে পারছে না তুলি। অযাচিত নয়নে আদ্রর দিকে তাকিয়ে। চোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে পানি। এতো রাগ আদ্রর চোখে মুখে অথচ তুলির কেয়ার করতে মগ্ন সে। তুলির মন বলছে আদ্রর এই রাগ, চোখে টলমল করা পানি তীব্র কষ্ট,যন্ত্রণার। ক্লেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আদ্রর বুকে।

এতটুকু ভালোবাসা পেয়ে যেন তুলির অভিমান গলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে আদ্রর বুকে ঝাপিয়ে করতে। আদ্রর বুক ভিজিয়ে সব কষ্ট মুক্ত করে দিতে। কিন্তু! কিন্তু তুলির যে আর সেই অধিকার নেই। ইনশিতার বলা কথাটা কানে এসে বাজতে লাগল। প্রচন্ড ক্ষোভে হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নিল আদ্রর হাত থেকে। ঢুলতে ঢুলতে উঠে দাঁড়াতেই ছিটকে পড়ল আদ্রর বুকে। এক হাতে আগলে নিল আদ্র। অন্য হাত দিয়ে গালে হাত রাখল। শরীরের অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে আদ্রর বুকে হাত দিয়ে ঠেলতে লাগল তুলি। গলায় জোর দিয়ে চিৎকার করে উঠল,,,
–“হাউ ডেয়ার ইউ? কোন সাহসে আপনি আমায় স্পর্শ করছেন? আপনার অপবিত্র হাত দিয়ে আমায় স্পর্শ করবেন না। লজ্জা করে না স্ত্রী থাকা স্বত্তেও অন্য একটা মেয়ে কে এভাবে স্পর্শ করতে? চরিত্রহীন একটা!”

কথাগুলো কর্ণধার হতেই ধপ করে বিছানায় ফেলে দিল আদ্র তুলি কে। কোমরে ব্যাথা পেয়ে কুঁকড়ে উঠল তুলি। শব্দ করে কেঁদে উঠল ভীষণ জোরে। মাথার চুল গুলো টেনে মাথা নিচু করে বসে পড়ল আদ্র। চোখ থেকে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ফ্লোরে।নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়ে ও পারছে না। তুলির মুখের বিষাক্ত বাক্য টা শুনে রাগের মাত্রা বেড়ে গেল চরচর করে। তুলির কান্নার আওয়াজ অস্বাভাবিক করে তুলছে তাকে। পাশের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে ড্রেসিং করতে লাগল তুলির হাতে। তুলি এখনও চোখ বুঁজে কেঁদেই যাচ্ছে। কেন অন্য কারো স্বামী হয়েও আদ্র তার এতো কেয়ার করছে? হাতটা বেন্ডেজ করে দিয়ে অন্য হাতে টেনে তুলল তুলি কে। ঝাপসা দৃষ্টিতে আদ্রর দিকে চাইল তুলি। আদ্রর ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি।

–” ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা যায়? তুই ও পারিস নি। কারো মুখের কথায় তুই আমায় চরিত্রহীন উপাধি দিয়ে দিলি। কি বলেছিলি সিলেটে? আমার উপর তোর অটুট বিশ্বাস তাই না? এই তোর বিশ্বাস? ”
কথাগুলো বলে মৃদু হাসল আদ্র। যেই হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে অজস্র বেদনা তীব্র আঘাত। তুলি নিশ্চুপ। রাগী স্বরে চিৎকার করে উঠল আদ্র।

–“তুই কি আদৌও অনুভব করতে পেরেছিলি আমার ভালোবাসা? যদি অনুভব করতে পারতি তাহলে বুঝতে পারতি তোকে ছাড়া কতগুলো কষ্টের প্রহর কাটিয়েছি আমি। তোকে নিজের কাছে আনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছি নিজের বাবা-মায়ের কাছে।একটুখানি বিশ্বাস রেখে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতি না? বিশ্বাস করলি অন্য কারো কথায়।কান খুলে শুনে রাখ আমি বিবাহিত না। নিজের সবটুকু দিয়ে তোকে ভালোবেসেছি তুলি তার বদলে এই প্রতিদান দিলি তুই? কি বলেছিস আমি ক্যারাক্টারলেস? আজ তোকে বুঝাব চরিত্রহীন কাকে বলে।”

কথাটা বলেই তুলির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল আদ্র। চুলের পিছনে হাত গলিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল নিজের সাথে। এতোক্ষণের জমানো রাগ ঝারতে লাগল ঠোঁটের উপর। আদ্রর ঘাড়ে খামচে ধরে কেঁদে দিল তুলি। ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় সজোড়ে কামড় বসাল আদ্র। তুলির মাথাটা বুকে চেপে ধরে ভেজা কন্ঠে বলে উঠল,,,
–“তোমার জন্য নিজেকে শেষ করে দিতে রাজি আছি তুলি তাহলে তুমি কিভাবে আমার ভালোবাসা টা অবিশ্বাস করলে? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার রক্ত গুলো দেখে জীবনে প্রথম হৃদয় টা কেঁপে উঠেছে আমার। কতো রক্ত দেখি প্রতিদিন এমন কষ্ট তো কোনোদিন হয় নি।তোমার কিভাবে সাহস হলো রক্ত জড়ানোর? তোমাকে খুন করে নিজে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমার এতো বছরের ভালোবাসা কে এক নিমিষেই বিষিয়ে দিলে তুমি। আমি কখনও ক্ষমা করব না তোমাকে। কখনও না।”

নীরবে কেঁদে যাচ্ছে তুলি। উপলব্ধি করতে পারছে আদ্রর কষ্ট। ভুল করে ফেলেছে। আদ্রর ভালোবাসা অনুভব করতে অক্ষম সে। একটুখানি বিশ্বাস রেখে আদ্রর কাছ থেকে সত্যি টা জানতে চাইতে তো পারত। সব অভিমান নিঃশেষ হয়ে গেল তুলির। আদ্র কে আঁকড়ে ধরতেই টেনে বুক থেকে সরিয়ে দিল। সাদা শার্টে লেপ্টে আছে তুলির রক্ত। মেঝেতে রক্ত গুলোর দিকে চোখ পড়তেই দু চোখ বন্ধ করে নিল আদ্র। হাত মুঠ করে বলে উঠল,,

—“তুই আমার ভালোবাসার না ঘৃণার যোগ্য। আজ থেকে তুই শুধু আমার ঘৃণাটাই অনুভব করবি।”
বিছানা থেকে উঠল তুলি। আদ্রর কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
–” আমার ভুল হয়ে গেছে আদ্র। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল আমাকে কেউ শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলেছে। ইনশিতা আপুর কথাটা আমায় স্বাভাবিক থাকতে দেয় নি আদ্র। আপনাকে হারানোর ব্যাথা টা আমি সহ্য করতে পারি নি। মনে হয়েছে আপনি বোধহয় আমায় ঠকিয়েছেন,,”

কথাটা শুনে পাশের দেয়ালে লাগাতার ঘুষি মারতে লাগল আদ্র। আজ যদি নিজের রাগ দমাতে না পারে তবে হয়তো সত্যি সত্যিই খুন করে বসবে তুলি কে। এতো ভালোবাসা দিয়েও আজ আঘাত পেতে হচ্ছে তার। বিরহ পাওয়ার জন্য তো সে এতোগুলো বছর অপেক্ষা করে নি। নিজেকে সংযত রেখে অপেক্ষা করেছে তুলির বড় হওয়ার। তবুও তুলি তাকে অবিশ্বাস করে নিজের ক্ষতি করল।আঁতকে উঠল তুলি। দৌড়ে গিয়ে থামাতে চেয়েও থামাতে পারছে না আদ্র কে। কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল আদ্রর পা জড়িয়ে। নরম স্বরে বলে উঠল-,,
–“আমি আর কখনও আপনাকে অবিশ্বাস করব না আদ্র। কোনোদিন ও আর নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করব না।”
আদ্রর হাত থেকে রক্ত ঝরছে। তুলির দিকে এক পলক চেয়ে এক হাত ধরে উঠিয়ে টেনে নিয়ে যেতে লাগল নিচে,,,

তুলি কে টেনে নিচে নিয়ে আসল আদ্র। সামিরার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।সবাই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার দৃষ্টি গেল আদ্রর হাতের মুঠোয় থাকা তুলির হাতের দিকে। ছ্যাত করে উঠল সামিরার বুক টা। পানিতে ভরে এল আঁখি দুটো। ছেলের হাত থেকে রক্ত ঝরতে দেখে আঁতকে উঠলেন সায়েরা বেগম। দৌড়ে ছেলের কাছে আসতেই আদ্র হাতের ইশারায় থেমে গেলেন তিনি। তিনি বুঝতে পারছেন আজ এখানে প্রলয় হবে। স্বামীর দিকে অসহায় চোখে চাইলেন। রাদিফ সাহেব রেগে আছেন। প্রচন্ড রেগে গেছেন আদ্রর কান্ডে। আদ্রর বড় চাচা তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে রইলেন। রাদিফ সাহেব রাগী স্বরে ধমকে উঠলেন,,,

–“এসব কি হচ্ছে আদ্র? তুমি তুলির হাত ধরে রেখেছো কেন? ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ব্যাথা পাচ্ছে। ছাড়ো ওকে।”
ইনশিতা,আমরিন,রনক সবাই অবাক চোখে চেয়ে আছে আদ্রর দিকে। কেউই আদ্রর ভাবভঙ্গি বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না।তুলির হাতে ব্যান্ডেজ দেখে আমরিনের বুঝতে বাকি রইল না তুলি কোনো পাগলামি করেছে যার কারণে তার ভাই এতোটা হাইপার হয়ে উঠেছে। আমরিন বয়সে ছোট হলেও তার মাঝে বেশ ম্যাচুরিটি লক্ষ করা যায়। কোনো কিছু বলা বা করার আগে ভেবে চিন্তা করে। সহজেই কোনো কিছুতে পা বাড়ায় না। বাচ্চামো স্বভাব ও তার মাঝে নেই। তুলির হাত টা দেখে কষ্টের জড়ো হলো মনে। মেয়েটা কয়েকদিনে কেঁড়ে নিয়েছে আমরিনের মনটা ও। বেস্ট ফ্রেন্ড কম বোন বলে আখ্যায়িত করে আমরিন। সূক্ষ্ম একটা উত্তপ্ত শ্বাস ছেড়ে আদ্রর দিকে মনোযোগ দিল। আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাদিফ সাহেবের দিকে৷ ওনার কথাটা কর্ণপাত হতেই তাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠল,,,

–“আপনি এই মেয়েটার সামান্য ব্যাথা টুকু অনুভব করতে পারছেন অথচ আমি যে বছর ধরে আগুনে পুড়ছি সেটা পরিলক্ষিত হয় নি আপনার? আমার বুকের তীব্র ব্যাথা কখনও বুঝতে চেষ্টা করেছেন বাবা হিসেবে? ছেলের আর্তনাদ বুঝার ক্ষমতা আছে আপনার? থাকলে এতো কঠিন হতে পারতেন না আপনি। আপনার পায়ে পড়ে কেঁদেছিলাম সেদিন কিন্তু আপনি তুলি কে আনার বদলে জুড়ে দিয়েছিলেন শর্ত। এ বাড়িতে ওকে নিয়ে তো আসলেন অথচ দেয়াল তুলে দিলেন ওর আর আমার মাঝে।”
রাদিফ সাহেবের ভিতরটা কেঁপে উঠল ছেলের কথা শুনে। তবুও তেজী স্বরে বলে উঠলেন,,
–“একটু বেশিই হচ্ছে আদ্র। এখন তুমি বাড়াবাড়ি কেন করছো? তুমি কিন্তু কথা দিয়েছ বিয়েটা তুমি করবে। সো এখন এসব বাদ দাও। সিন ক্রিয়েট করা বন্ধ করো।”

তুলি এতোক্ষণ চুপ করে সব শুনছিল। বুঝতে পারছে তার জন্য বাবা-ছেলের মধ্যে ঝামেলা বেঁধে যাচ্ছে। তাই আর চুপ না থেকে মাথা তুলে আদ্রর দিকে তাকাল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,
–“ঝামেলা বাঁধাবেন না আদ্র। খালু,,,
—“স্টপ,,,,,,!”

জোরে ধমকে উঠল আদ্র। ভড়কে গেল সবাই উচ্চ ধমকে। আদ্রর রাগ সম্পর্কে সবারই কম বেশ ধারণা আছে। তুলির শরীরের প্রত্যেক টা লোম খাঁড়া হয়ে গেল ভয়ে। কাঁপতে লাগল থরথর করে। তুলি কে সোফায় বসিয়ে দিল আদ্র। সামনের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল তুলির দিকে। ভয়ে শরীর এতো কাঁপছে যে গ্লাস টা পর্যন্ত ধরতে পারছে না মেয়েটা। তুলির পাশে বসে যত্ন করে পানি টা খায়ে দিল আদ্র। সবাই ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে রইল। এতো সিরিয়াস মোমেন্টে ও আদ্র তুলির জন্য শান্ত হয়ে গেছে। সবাইকে উপেক্ষা করে তুলির কেয়ার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কে কে উপস্থিত আছে তাতে যেন আদ্রর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার কাছে যেন তুলিই প্রথম প্রায়োরিটি। গ্লাসটা টেবিলে রেখে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে তুলির কপালের ঘাম গুলো মুছে দিল আদ্র। ভয়ে থরথর করে ঘামছে মেয়েটা। আদ্র গালে হাত রাখতেই লজ্জায় নুইয়ে গেল সাথে সাথে। শীতল হয়ে গেল আদ্রর বুক টা। এই মেয়েটার লজ্জামাখা মুখ আদ্রর রাগ কমানোর টনিক। হাত টা সরিয়ে কোমল স্বরে বলল,,

–” বড়দের মাঝে আর কথা বলবে না তুলি। বাবা আর আমাকে কথা বলতে দাও। বাঁধা প্রদান করা আমার একদম পছন্দ নয়। আর তোমার জন্য কোনো ঝামেলা বাঁধে নি। বাবা তোমাকে খুব পছন্দ করেন। ওনার সব প্রবলেম তো আমাকে নিয়ে। আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না তিনি। ওনার কথা মোতাবেক আমি ছোট থেকেই ওনার অবাধ্য।”
–“রিলেক্স থাকো। এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আ’ম স্যরি উচ্চস্বরে ধমক দেওয়ার জন্য।”
আবারও নরম স্বরে কথাটা বলল আদ্র।

মনের মধ্যে ভালো লাগা ছেয়ে গেল তুলির। প্রকাশ না করতেই আদ্র সবসময় তার মনের কথা বুঝে যায়। এমন একরোখা, রাগী মানুষ এতো সুন্দর করে ভালোবাসতে পারে? তুলির নিজেকে এমুহূর্তে পেশেন্ট মনে হচ্ছে যার আদ্রর মতো বেস্ট একজন ডাক্তার সাহেব আছে। কথাগুলো শেষ করে রাদিফ সাহেবের সামনে এসে দাঁড়াল আদ্র। রাদিফ সাহেব গম্ভীর মুখে আদ্রর দিকে চেয়ে আছেন। হালকা হাসল আদ্র। দৃষ্টি স্থির রেখেই বলতে শুরু করল,,
–“আমি তো সিনক্রিয়েট করছি। আর আপনি বাবার অধিকার পেয়ে আমার জীবন টা শেষ করে দিচ্ছেন। আমি তুলি কে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি জানা সত্ত্বেও আপনি আমায় বাধ্য করছেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে। আসলে আপনি বললে ভুল হবে করছে তো আপনার ভাই। ”

আদ্রর কথা শুনে রাদিফ সাহেবের বড় ভাইয়ের দিকে ফিরে তাকাল সবাই। কারো মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সামিরার চোখের পাপড়ি পানিতে ভিজে যাচ্ছে বার বার। আদ্রর মুখে তুলি কে ভালোবাসার কথা শুনে আর্তনাদ করে উঠল ভিতরটা।আদ্র ইনশিতার মাথায় হাত রাখল।
–“ভাইয়ের উপর বিশ্বাস আছে তোর? আমি তোর খারাপ চাইতে পারি কখনও?”
ভাই কে জরিয়ে ধরল ইনশিতা। কিছু না বুঝতে পারলেও আলতো হেসে বলল,,

–” কখনও না। আমরিন ও আমার কাছে তুমি শুধু একজন বড় ভাই না আমাদের ভালোবাসার আরেক নাম তুমি ভাইয়া। ”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আদ্র। অনেক সহ্য করেছে। আর থাকতে পারবে না অশান্তির এই বেড়াজালে। বোনের জন্য চিন্তিত ছিল তাও যেন অনেকাংশে দূর হয়ে গেল। গত একটা বছর ধরে চিন্তা টা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাকে। কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থাকা রনকের দিকে তাকিয়ে বলল,,

–“আমি জানি তুই ইনশিতা কে অনেক ভালোবাসিস। ভালোবাসার মানুষ টার পাশাপাশি পরিবার ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু তুই কি এটা জানিস তোর বাবা আমার ও সামিরার বিয়ের শর্ত রেখে তোর ও ইনশিতার বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে? আমার বাবা কে বলা হয়েছে সামিরা কে আমি বিয়ে না করলে কখনও ইনশিতা কে তোদের বাড়ির বউ করে নিবে না।”
বিস্ময়ে থ মেরে রইল রনক। সায়েরা বেগম, রাদিফ সাহেব ও ওনার বড় ভাই বাদে সবাই রীতিমতো চমকে আছে। আদ্রর থেকে চোখ ফিরিয়ে সামিরা ও রনক তাদের বাবার দিকে তাকাল এক নজর। বিস্ময় কাটিয়ে সামিরা বলে উঠল,,

–“এসব সত্যি বাবা?”
অপরাধীদের মতো মাথা নিচু করে ফেললেন জুনায়েদ সাহেব।
–“হুম। তুই আদ্র কে ছোট থেকেই পছন্দ করিস। বয়সের সাথে ভালোবেসে ফেলেছিস সেটা জানতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দু বছর আগে যখন আদ্র তোর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছিল আর তুই অশ্রু ঝরিয়ে আমার কাছে আদ্র কে চেয়েছিলি তখন বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছিল। রাদিফের কাছে সরাসরি তোর ও আদ্রর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াতে ফিরিয়ে দিয়েছিল আদ্র। অবশেষে রনক ও ইনশিতার সম্পর্ক জানতে পেরে আবারও প্রস্তাব দিলাম যে আদ্র তোকে বিয়ে করলেই আমি ইনশিতা কে রনকের বউ করব।”
মাথা নত করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি। সামিরার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল মুহূর্তেই। অশ্রুকণা মুছে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,,

–” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদ্র। তাই বলে জোর করে চাই না কখনও। জোর করে তোমাকে স্বামী তো বানাতে পারব কিন্তু কখনও তোমার ভালোবাসা টুকু পাবো না। বাবা কে ক্ষমা করে দিও। আমি বা রনক ভাইয়া কেউই জানতাম না এইসব। ইনশিতা আমারই ভাবী হবে।”
রনক ও সম্মতি জানাল সামিরার সাথে। তুলি চমকিত নয়নে চেয়ে রইল। সামিরা নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করে দিচ্ছে। কতটা ভালোবাসলে এমনটা করা যায়? সামিরা কে দেখে তুলি ভাবতেই পারি নি ওর মনটা এতো সুন্দর। ইনশিতা তুলির কাছে এসে বসে হাতটা ধরল।
–” আমায় ক্ষমা করে দে তুলি। আমার জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিস। আমি জানতাম না ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। ”
–“তুমি ক্ষমা চাইছো কেন আপু? তোমার কোনো দোষ নেই। ”

এতোদিনের সব অবসাদ দূর হয়ে গেল আদ্রর। কথা না বাড়িয়ে তুলির কাছে গিয়ে বসল। এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ভাই হিসেবে বোনের জন্য ঠেকে গিয়েছিল কিন্তু সামিরা কে কখনও বিয়ে করত না সে। মনটা হুট করে বলল,,,
~”কোনো শর্তই আমি মানতাম না কারণ আমার জীবনের প্রথম শর্তই যে আমার তুলা।”
মুচকি হেসে মুগ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–” তুমি বিহীন শূন্য আমি। আমার জীবনসঙ্গীনি হবে তো তুলা?”

প্রচুর পরিমানে জড়তা-সংকোচ ঘিরে ধরল তুলি কে। মনের কোণো উদয় হল আবারও সুখের ঝলক। মুছে গেল সব অভিমান। বহু কষ্টে মাথা তুলে আদ্রর বাবার দিকে চাইল। সবার চোখে মুখে জানার আগ্রহ। একটু হেসে মাথা উপর থেকে নিচে করল তুলি। সাথে সাথেই কানে ভেসে এল করতালির শব্দ। নিজের পকেট থেকে একটা আন্টির বক্স বের করল আদ্র। আজ সকালে কিনেছিল আন্টি টা। ইচ্ছে ছিল তুলি কে সারপ্রাইজ দিবে আর সবকিছু ঠিক করে নিবে। কিন্তু এভাবে কিছু ঠিক করতে চাইনি সে তবুও হয়ে গেল। পরিবারের কাউকেই কষ্ট দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না তার। কিন্তু তুলির অবস্থা দেখে নিরুপায় ছিল সে। সামিরা ও রনকের কাছে ছোট করতে চাই নি ওদের বাবা কে। রিং টা তুলির আঙ্গুলে পড়াতেই হিমশীতল বাতাস বয়ে গেল তুলির পুরো দেহ জুড়ে। ভালোবাসার পরিণতির প্রথম ধাপ। তুলির চোখ ভরে এল।এই বুঝি আরেকটু সুখ পেলেই আষাঢ়ে বর্ষণ হবে দু চোখ থেকে। সবার মুখে ফুটে উঠল হাসি। সামিরার ঠোঁটের কোণায় হাসি লেগে থাকলেও চোখে জমে আছে জল।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার প্রহর অতিবাহিত হওয়ার পথে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আদ্র। ব্যস্ত ভঙ্গিতে কিছু একটা ভেবে চলেছে। ইনশিতার বিয়ের ডেট ঠিক হয়েছে সামনের মাসের দুই তারিখে। বড় চাচা ক্ষমা চেয়েছেন অনেক বার। তবুও কিছু ভালো ঠেকছে না আদ্রর। সামিরার ব্যবহার আজ তাকে ভীষণ অবাক করেছে। মনে বাসা বেঁধেছে সন্দেহ। যেই মেয়ে সারাক্ষণ মেসেজ, কল দিয়ে জ্বালাতন করত বার বার ভালোবাসার দাবি নিয়ে উপস্থিত হতো তার এতো সহজে মেনে নেওয়া টা স্বাভাবিক লাগছে না আদ্রর কাছে। রনকের সাথে ভালো করে কথা বলা টা জরুরি।

বোনের জীবন টা কে অবহেলায় নেওয়া যাবে না কোনো ক্রমেই। তুলি কে নিজের হবু স্ত্রী বানিয়ে তৃপ্তির শ্বাস ফেললেও বাবার সাথে এই প্রথম উচ্চস্বরে কথা বলে খারাপ লাগছে অনেক। আদ্র নিজেই মাঝে মাঝে ভীষণ চমকে যায় একটা পিচ্চি মেয়ের জন্য কতটা ডেস্পারেট হচ্ছে দিন দিন। সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,,
–“কি আছে তোমার মাঝে তুলা? ছোট্ট একটা মেয়ে তুমি অথচ ধারালো তোমার দৃষ্টি। যতবারই তোমার লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখি নিমিষেই গায়েব হয়ে যায় আমার সব জেদ,রাগ,অভিমান। আমার মন বলে, মায়াবিনী তুমি।”
“এই যে হবু বর আপনি আবারও সিগারেট খাচ্ছেন? ”

অতি পরিচিত মধুর কন্ঠ শুনে সিগারেট টা হাতের মুঠোয় চেপে ধরল আদ্র। জ্বলে উঠল হাত টা। তুলি বেলকনি টপকে আসতে নিলে কোমড় আঁকড়ে ধরে নিজেই নিয়ে আসল আদ্র। বুকের সাথে জরিয়ে নরম স্বরে বলে উঠল,,
–” আবারও রিস্ক নিয়ে আসতে গেলে কেন? হাতে ব্যাথা ভুলে গেলে? ওষুধ খাইয়ে দিয়ে রেস্ট নিতে বলে আসলাম কিন্তু তুমি আমার কথা অমান্য করে চলে আসলে।”
আদ্রর বুকে মাথা রেখে তুলি জবাব দিল,,,
–“আপনি আমায় ক্ষমা করেছেন তো আদ্র? স্বস্তি পাচ্ছিলাম না আমি। এখনও খুব কষ্ট হয় কিভাবে পারলাম আমি আপনাকে অবিশ্বাস করতে।”

আকাশে তারার মেলা পর্ব ১১+১২

–” তুমি আমার অস্তিত্বে বাস করো তুলা। আমি যতই রাগ করি, অভিমান করি দিনশেষে একটাই সত্য আমি তোমায় অনিঃশেষ ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা কখনও তুমি পরিমাপ করতে পারবে না। আমি কখনও না থাকলে স্মৃতির পাতায় ও তুমি অনুভব করতে পারবে আমার ভালোবাসা। মনে হবে এইতো বর্তমানে ও আমি তোমার অনুভবে তোমায় ভালোবেসে জরিয়ে নিচ্ছি আমার বাহুতে। ”
আদ্রর দেয়ালে ঘুষি মেরে ছিলে যাওয়া হাত টা নিজের হাতে নিল তুলি। আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রর ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি। ভালোবাসা কখনও যন্ত্রণা দেয় তো কখনও আবার ছোট্ট একটা হাসি ফোটানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তুলির একটু ভালোবাসাই তার প্রমাণ। হাতের মুঠো খুলতেই চোখ পড়ল জ্বলন্ত জায়গা টা। তখন আদ্র যে সিগারেট চেপে ধরেছিল হাতে তা চোখ এড়ায় নি তুলির। মলিন হয়ে গেল চেহারা টা।মনে মনে বলে উঠল,,

–“আপনাকে শাসন করার বয়স আমার হয় নি আদ্র তবে আপনার যন্ত্রণা নিঃশেষ করার বুঝ টুকু আমার ঠিকি হয়েছে। নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে কেঁড়ে নিব আপনার সবটুকু কষ্ট। ”
হাতের ভাজে গভীর একটা চুমু খেল তুলি। আদ্রের পায়ের উপর উঠে দু হাতে গলা জরিয়ে প্রশ্ন করল,,
–” আপনি আমায় এতো ভালোবাসেন কেন আদ্র?”
–” এক বিন্দু সুখ লাভের আশায় তোমায় ভালোবাসা টা ভীষণ জরুরী তাই! ”

আকাশে তারার মেলা পর্ব ১৫+১৬