আমার আছে জল পর্ব ৭

আমার আছে জল পর্ব ৭
মাহিমা রেহমান

সবে মাত্র নাস্তায় জন্য নিচে নেমে এলো তাহসিন।তার পিছু পিছু রিমি ও এলো।তাহসিন চেয়ার টেনে মায়ের পাশে বসে পড়ল।রিমি বসতে নিবে সহসা আকলিমা বেগম বলে উঠল,
-“আগে সকলকে নাস্তা সার্ভ করো। শিথি থাকা কালিন আমাদের সব খেয়াল সেই রাখতো।এখন শিথির জায়গা তো তুমি দখল করে নিলে (কিছুটা তাচ্ছিল্যে) তা কেবল জায়গা দখল করলেই তো আর হবে না?তার মতো হতেও হবে।”
শিথির নাম কর্নিগোচর হতেই রাগে ফুঁসতে লাগল রিমি।

আয়নার সমীপে দাঁড়িয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে তাহসিন।তার ঠিক কিছুদূরে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত রিমি।রিমির উদ্দেশ্যে তাহসিন হাঁক ছেড়ে উঠল,
-“রিমি এই রিমি! যাওতো আমার জন্য গরম গরম এক কাপ কফি নিয়ে এসো। মাথাটা বেশ ধরেছে।”
রিমি কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“পারবো না আমি।নিজের কফি নিজে করে খাও নয়তো কাউকে বল করে দিতে। এতো স্টাফ থাকতে কি তোমার আর তোমার মায়ের খালি আমাকেই চোখে পড়ে?আর তুমি(তর্জনী আঙ্গুল তুলে)আমাকে কি এখানে কাজ করার জন্য নিয়ে এসেছো হ্যা? এসেছি পড়ে থেকে শান্তি নেই।এটা কর ওটা কর।খালি করেই যাবো তাই না? খুব তো বলেছিলে,,আমি তোমার মনের রাণী! তা এখন কি হলো?এখন তো চাকরানীর মত খাটাচ্ছো!”
কথাগুলো বলেই রিমি মুখ ঘুরিয়ে নিল।তাহসিন বেশ অবাক হয়ে বলে উঠল,

-“কি বলছো কি? তোমাকে কখন চাকরানীর মত খাটালাম?আর সকালে মা যা বলেছে বা করিয়েছে তাতো ভুল কিছু ছিল না।তুমি এই বাড়ির বউ।আর বউ হিসাবে তোমার অনেক দায়িত্ব।”
-“তাহলে এতো স্টাফ থাকার কি দরকার ছিল?”
-“থাকুক তাতে কি? এতো স্টাফ থাকার পরও কিন্তু শিথি নিজ হাতে ভালোবেসে আমার আর মায়ের সব কাজ করে দিত।আমাদের তিনবেলা রান্না করে খাওয়াতো।কই ও তো কোনো অভিযোগ করে নি। বরং ও নিজ ইচ্ছায় এসব করতো।”
রিমি এবার রাগে বিভৎস হয়ে বলে উঠল,

-“তাহলে শিথিকে রেখে আমার কাছে আসতে গেলে কেনো?তুমি কি জানতে না আমি শিথি না, আমি রিমি। আর এতই যখন শিথির জন্য প্রেম উতলে পড়ছে তাহলে যাওনা শিথির কাছেই যাও।”
কিছু আর বলল না তাহসিন। নিজের মত করে তৈরি হতে লাগল।

চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি লি. এর সামনে রিকশা থামলে নেমে পড়ল শিথি। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।ভিতরে ঢুকতেই চারপাশে আঁখি বুলিয়ে নিল শিথি।রিসেপশনে থাকা মেয়ের অভিমুখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল ,
-“ইন্টারভিউ…”
পুরো কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই মেয়েটি দেখিয়ে দিল। শিথি সায় জানিয়ে সেদিকে পা বাড়াল। অহরহ মানুষ দেখে মাথা ঘুরে উঠল শিথির।সে সিউর হলো তার আর হবে না!

একের পর এক লোক বেরিয়ে আসতে লাগল।সকলের মুখে কেবল একটাই কথা,
-“বাপরে! বস সেই লেভেলের কড়া।আর এমন এমন প্রশ্ন করে যে দাঁত খুলে হাতে আসার উপক্রম।
সকলের এহেন কথাবার্তা শুনে ঈষৎ ভয় অনুভব করতে লাগল শিথি।এতো শিক্ষিত লোকেদের কিনা বস নামক ব্যক্তি এভাবে সাবান ছাড়া ধুয়ে দিচ্ছে।না জানি তার সাথে কি করে? ললাটের কার্নিশে জমে থাকা স্বেদবারি টুকু আলতো হাতে মুখে নিল।তার খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে।আকস্মাৎ ‘হুমায়রা শিথি’ বলে কেউ আহ্বান করল।সহসা চমকে উঠল সে।নিজেকে ধাতস্থ করে দুরুদুরু বুকে ভিতরে প্রবেশ করল।প্রবেশ করতেই কয়েকজন ব্যক্তির দর্শন পেল।তবে তাদের মধ্যে একজন হাস্যোজ্জল ব্যক্তির ও মুখের দর্শন পেল শিথি। সন্মুখে এগিয়ে গেল।তাকে দেখে লোকটা হাসি মুখে বলে উঠল,

-“হ্যালো মিস. হুমায়রা শিথি।প্লিজ বসুন।”
শিথি মলিন হেসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।লোকটি শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“তো মিস. হুমায়রা শিথি আমি কি তাহলে আপনার ইন্টারভিউ নেয়া আরম্ভ করতে পারি।”
শিথি মাথা নেড়ে সায় জানাল।সহসা লোকটি শিথির উদ্দেশ্যে একটি আজব প্রশ্ন ছুঁড়ে মারবো,
-“আপনি কি কখনো “আই এম এ ডিস্কো ড্যান্সার” গানটি শুনেছেন?”
থমথম খেয়ে গেল শিথি।অবাক নয়নে তাকিয়ে বলে উঠল,

-“জি স্যার শুনেছি।কিন্তু কেনো?”
-“পরের লাইন টুকু বলুনতো।”
শিথি আমতা আমতা করে বলে উঠল,
-“সিগারেট খাইলে হয় ক্যান্সার।”
-“রং অন্স্যার দিলেন মিস.।এখানে সিগারেটের জায়গার হবে বিড়ি।”
শিথির পেট ফেঁটে হাসি বেরিয়ে যাচ্ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠল,

-” স্যার বি/ড়ি আর সিগারেট তো একই জিনিস।”
কথাটা শুনে লোকটি ভাবুক ভঙ্গিতে কিছু একটা ভাবলো।পরমুহুর্তে বলে উঠল,
-“তাও ঠিক।আচ্ছা তাহলে আপনাকে নেক্সট কোয়েশ্চেন করি।বলুন’তো পৃথিবীতে ডিম আগে এসেছে নাকি মুরগি?”
শিথি কিছুক্ষন ভেবে সত্বর বলে উঠল,
-“স্যার দেখতে গেলে,,এই পৃথিবীতে পুরুষের আগমন আগে ঘটেছে,,,পরবর্তীতে নারী।সেই নারী পুরুষের সংমিলনে আদম সন্তানদের আগমন এই পৃথিবীতে।ঠিক তেমনি করে না আগে ডিম আর না মুরগি।সর্বপ্রথম পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে মোরগের।”

লোকটি কিছু একটা ভেবে পুনরায় বলে উঠল,
-” একদম ঠিক বলেছেন মিস.। আপনি খুব বুদ্ধিমতি।আচ্ছা এই নিন একগ্লাস পানি খান।”
কথাটা বলে একগ্লাস পানি শিথির দিক এগিয়ে দিল লোকটা। শিথি কিছুটা পানি খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রেখে দিল।লোকটা তার উদ্দেশ্যে পুনরায় জিজ্ঞেস করে উঠল,
-“আপনি কি পানিটা খেয়েছেন?”
শিথি ‘হ্যা’ বলতে নিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে উঠল,

-“না স্যার আমি পানি খাই নি।পানি পান করেছি।”
আকস্মিৎ লোকটার আঁখি জোড়া চকচক করে উঠল।তিনি গদগদ কণ্ঠে বলে উঠল,
-“ইউ আর অ্যাবসুলুটলি রাইট মিস.! আপনি সত্যিই খুব বুদ্ধিমতি।এবার আপনি আসতে পারেন।”
শিথি মলিন হেসে উঠে দাঁড়াল। সহসা কিঞ্চিৎ আঁখি ঘোরাতেই তার দৃষ্টিতে এসে ধরা দিল এক সুঠাম দেহী পুরুষ।যে কিনা প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে কাঁচের বিশাল দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে আছে।তার পরিধেয় এক্সপেন্স ব্ল্যাক-হোয়াইট কম্বিনেশন জ্যাকেট।লম্বাটে দেহ।কেবশ পুরুষটির পৃষ্ঠদেশ দেখতে পেল শিথি। অকস্মাৎ করো ডাকে সংবিৎ শক্তি ফিরে পেল সে। কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে তরান্বিত জায়গা প্রস্থান করল।

কিয়ৎ কাল বাদ পুনরায় শিথির ডাক পরল।চমকে উঠল শিথি।
আশেপাশের সকলে আঁখি গোল গোল করে তার পানে তাকিয়ে রইল। শিথি আলতো পায়ে সম্মুখে এগিয়ে গেল।তাকে ভিতরে ঢুকতে পারমিশন দিলে সে ভিতরে এগিয়ে গেল।পূনরায় সেই লোকটি শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“কংগ্রেস মিস. আপনি সিলেক্টেড হয়েছেন।আপনি চাইলে কাল থেকেই জয়েন করতে পারেন। সো আপনি যদি কাল থেকে জয়েন করতে চান তো আগামীকাল সকাল দশটায় অফিসে এসে হাজির থাকবেন।”
শিথি সায় জানিয়ে স্থান ত্যাগ করল।

খাবার টেবিলে বসে আছে সকলে।মুখটা বাংলো প্যাঁচার মত করে তাদের সকলকে দুপুরের খাবার সার্ভ করছে রিমি।রিমি পারলে আকলিমা বেগমকে খুন করে দিক।আকস্মাৎ আকলিমা বেগম রিমির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“কাল থেকে সকলের নাস্তা তুমি বানাবে।বুঝতে পেরেছো?এমন কি দুপুর এর রাতের রান্নাটা ও তুমি করবে।”
রিমি চোখ-মুখ লাল করে তাহসিনের দিকে তাকাল।তাহসিন আমতা আমতা করে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“ইয়ে মানে মা! এতো স্টাফ থাকতে রিমি কেনো কষ্ট করতে যাবে?”

আকলিমা বেগম সত্বর ছেলের দিকে নির্নিমেষ তাকালেন।পরমুহুর্তে বলে উঠলেন,
-“তা শিথি কেনো এতো স্টাফ থাকতে করতো?”
তাহসিন আর কিছু বলতে পারল না।চুপচাপ খেতে লাগল। ক্ষাণিক বাদে বলে উঠল,
-“আমি কিছুদিনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছি অফিসিয়াল কাজে?আজ রাতেই বের হবো।”

লামিয়া ঋতুর চোয়াল অলরেডি ঝুলে পড়েছে।ঋতু বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠল,
-“শিথিরে!মামা তুইতো একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস।আমরাতো বিশ্বাসই করতে পারছি না।এটা কি করে সম্ভব! তোর আসলেই চাকরি হয়ে গেছে? তাও আবার চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি লি. এ। ও এম জি, শিথি এবার কিন্তু ট্রিট দিতেই হবে।”
শিথি কপোলে হাত চেপে মাথা কাৎ করে এতক্ষন দুজনের কথা শুনছিল।ঋতুর এহেন কথা শুনে শিথি আনমনে বলে উঠল,
-“আমারো বিশ্বাস হচ্ছে না!”

আকাশের বুকে সাঁঝের বেলা নিজের রং নিয়ে এসেছে ক্ষানিক পূর্বেই।এখন ঘড়িতে ছয়টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।কেবল বাড়িতে ফিরল তাহসিন।রুমে কোথাও রিমিকে দেখতে না পেয়ে রিমির নাম ধরে হাঁক ছাড়ল তাহসিন।অনেক্ষন যাবত ডাকার পরেও যখন রিমি এলো না তখন ব্যালকনিতে গিয়ে চেক করল।রিমিকে ব্যালকনিতেও না পেয়ে এবার আকলিমা বেগমকে ডাকতে লাগল ।তিনি কেবল মাগরিবের নামাজ শেষ করেছেন। ছেলের এহেন হাঁক-ডাকে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি।তাহসিন মাকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল,

-“রিমি কোথায় মা?সেই কখন থেকে ডেকে চলছি। সারাই দিচ্ছে না।তুমি কি ওকে কোথাও দেখেছো।”
আকলিমা বেগম অকপট জবাব দিলেন,
-“তোমার বউ কি কোথাও যাওয়ার আগে আমাকে বলে যায়? বা জিজ্ঞেস করে যায়?তুমি খুঁজে দেখো পাও কিনা?তার আগে এটা দেখো, তোমার বউ আদো বাড়িতে আছে কিনা?”
কথাটা বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।সত্বর তাহসিন ফোন লাগল রিমির নাম্বারে।রিং হচ্ছে ঠিক তবে কেউ ফোন ধরছে না।কয়েকবার ফোন দেয়ার পর,,, ফোন রিসিভ হলো।তাহসিন কিছু বলতে নিবে তার আগে রিমি ত্বরান্বিত কণ্ঠে বলে উঠল,

-“তাহসিন আমি আমার ফ্রেন্ডের বাড়িতে আছি।কিছুক্ষন পর আমরা সবাই এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি এনজয় করতে ক্লাবে যাচ্ছি।তাই এখন রাখি কেমন? আমি এখন রেডি হচ্ছি। বায়!”
কথাটা বলে রিমি ফোন কাটতে নিবে সহসা তাহসিন কিঞ্চিৎ কঠোর কণ্ঠে বলে উঠল,
-“রিমি আজকের দিন অন্তত এসব না করলে কি হতো না তোমার?সকালে তো বলে গেছিলাম আমি রাতে ঢাকা যাচ্ছি।এটা জানার পরেও কেনো তুমি আজ বাড়ির বাহিরে গেলে?”
তাহসিনের কথার উল্টোপিঠে রিমি বলে উঠল,

-“তোমার কথা শেষ হলে এবার আমি রাখি বায়।”
কথাটা বলে রিমি সত্ত্বর ফোন কেটে দিল।রাগে গা জ্বলে উঠল তাহসিনের।হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলখানা ছুঁড়ে মারল অদূরে।

আমার আছে জল পর্ব ৬

বেশকিছু সময় পর নিজের ব্যাগ গোছাতে আরম্ভ করল তাহসিন। এয়ারলাইনে ঢাকা যাবে সে।তাই খুব একটা খাটুনি কিংবা সময় ব্যয় হবে না তার।

আমার আছে জল পর্ব ৮