আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৪

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৪
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

ঠিক হওয়া বিয়ে! কীভাবে পাত্রপক্ষকে ইনডাইরেক্টলি না করা যায়?
বিভিন্ন উপায় ভাবতে লাগলো কুশান।

তবে কুশান মনে মনে ভীষণ রাগ হলো সোনিয়ার উপর।এতো করে বলার পরও কেনো সে কাউকে ভালোবাসতে গেলো?সে তো জানেই এই ফ্যামিলিতে বিয়ের আগে প্রেম করা বারণ।জেনেবুঝে সোনিয়ার এই কাজটা করা মোটেও ঠিক হয় নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্রাবণ ছেলেটা কত ভালো?আর তার ফ্যামিলির লোকজনও কত ভালো?এতো ভালো একটা ফ্যামিলি কেউ এভাবে হাতছাড়া করে?

কিন্তু কুশান পড়ে গেছে মহা বিপদে,সে তোড়ার সামনে সোনিয়াকে এখন একটু বকতেও পারছে না।তাকে যে ইচ্ছামত শাসন করবে,একটু গালাগাল দিবে কোনো টাই তার পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না।

কারণ সে যে নিজেই এই বাড়ির নিয়ম ভঙ্গ করে বসে আছে।সে দীর্ঘ এক বছর ধরে গোপনে তোড়ার সাথে প্রেম চালিয়ে গিয়েছে।নিজে প্রেম করে অন্যকে প্রেম করতে নিষেধ করা যে বড়ই হাস্যকর ব্যাপার!

পাত্রপক্ষকে না হয় সে বারণ করে দিলো কুশান কিন্তু ফ্যামিলির লোকদের কি বলবে এখন?এদিকে তো লুতফা চৌধুরী সোনিয়াকে ওই ফ্যামিলিতে বিয়ে দেওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।টেনশনে কুশানের মাথা এবার বনবন করে ঘুরতে লাগলো।সামনে আবার তার ফাইনাল এক্সাম।

কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে তোড়া বললো,
কি ব্যাপার প্রেমিক স্বামী?এতো চুপচাপ হয়ে গেলেন কেনো?কিছু তো বলুন?কি পরিকল্পনা করছেন আমাকেও একটু জানান।

কুশান তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো কোনো আইডিয়া এখন পর্যন্ত বের করতে পারি নি।তোমার মাথায় যদি কিছু এসে থাকে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।কারণ মেয়েরা এসব ব্যাপারে একটু ফাস্ট হয়।

তোড়ার মাথায় অনেক আগেই একটা বুদ্ধি এসে গেছে।সে তখন কুশানের টেনশন দূর করার জন্য বললো,তা অবশ্য ঠিক বলেছো।মেয়েরা আসলেই এসব ব্যাপারে ফাস্ট।ইতোমধ্যে আমার মাথায় দুর্দান্ত এক আইডিয়া এসেও গেছে।
–কি আইডিয়া?

তোড়া তখন বললো,এখন শ্রাবনই পারবে এই বিয়ে আটকাতে।তাছাড়া আর কেউ পারবে না।তুমি শ্রাবণের সাথে কথা বলে দেখতে পারো।ওকে না হয় পার্সোনালি একদিন ডেকে নিয়ে বলে দাও সোনিয়ার প্রেমের কথা।

আমি সিওর কোনো ছেলে চাইবে না যাকে সে বিয়ে করতে যাচ্ছে তার অন্য কোনো ছেলের সাথে রিলেশন আছে।

কুশান তোড়ার কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে বললো,পাগল হইছো তুমি?এটা আমাদের ফ্যামিলির মানসম্মানের ব্যাপার।সোনিয়া অন্য ছেলেকে পছন্দ করে এটা কেউ যদি জানতে পারে বিশেষ করে দাদু,তাহলে একদম মেরেই ফেলবে।কোনোভাবেই এটা প্রকাশ করা যাবে না।অন্য আইডিয়া ভাবো।

–ওকে।তাহলে আমরা শ্রাবনকেই দোষারোপ করি?বাসার সবাইকে বলবো,শ্রাবণ ছেলেটাই ভালো না।অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তার।তাছাড়া শ্রাবণ ডেইলি ডেইলি নেশা করে বাড়ি ফেরে,রাস্তায় রাস্তায় মাতলামি করে বেড়ায়। বিশেষ করে লুতফা চাচীকে ভালো করে বোঝালেই হবে।আমি সিওর এসব শুনলে কেউ আর শ্রাবনের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হবে না।

কুশান তোড়ার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর বললো,
তোড়া?তুমি কি আমাকে এই বয়সে সবার বকুনি বিশেষ করে আমার দাদুর হাতের পিটন খাওয়াতে চাচ্ছো নাকি?

এখন যদি শ্রাবনের নামে এসব বলি তাহলে তো উলটো সবাই আমার কান ঝালাপালা করে দিবে।সারাক্ষণ বলতে থাকবে আমি ভালো করে না খোঁজ নিয়ে কেনো শ্রাবনের সাথে সোনিয়ার বিয়ে ঠিক করেছি?

তোড়া তখন বললো,তোমার বোন তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করুক,এটা কি তুমি চাও না কুশান?তার সুখ টাই তো আসল?তার ভালোবাসাকে তোমার শ্রদ্ধা জানানো উচিত। উচ্চ বংশ,অঢেল সম্পদ এসব কিন্তু সোনিয়া কে সুখী রাখতে পারবে না।আমি নিশ্চিত সায়ক ভাইয়াকে বিয়ে করলে সোনিয়া অনেক সুখী হবে,তার জন্য যদি তোমাকে সবার বকুনি খেতেই হয় তাতে প্রবলেম টা কোথায়?

আর আমার বিশ্বাস সায়ক ভাইয়া অনেক বেশি সুখে রাখবে সোনিয়াকে।সায়ক ভাইয়া যে প্রেমে পড়েছে ভাবতেই তো আমার খুশি লাগছে।কারন উনি যথেষ্ট ভালো একজন ছেলে।ওনার মতো ভদ্র ছেলে আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।

–তাহলে আমি কি অভদ্র?
তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো হ্যাঁ অবশ্যই অভদ্র।তোমার মতো অভদ্র ছেলেও আমি জীবনে দেখি নি।তুমি হলে মুখোশ ভরা একজন ভদ্র ছেলে।বাহিরে এমন ভাব নিয়ে থাকো যে বোঝাই যাবে না,,,, থাক আর বললাম না।কারণ বললে প্রবলেম হয়ে যাবে।

কুশান তখন তোড়াকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,বলো?থেমে গেলে কেনো?কোনো প্রবলেম নাই।শুনতে রাজি আছি আমি।
এই বলে কুশান তোড়ার ঘাড়ে তার নাক ঘষতে লাগলো।

তোড়া তখন কুশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো, কুশান আমরা কিন্তু এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।এখন কিন্তু রোমান্স করার টাইম নয়।প্লিজ সিরিয়াস হও একটু।
কুশান তখন তোড়ার ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো, ওকে সিরিয়াস হলাম।বলো।

তোড়া তখন বললো এভাবে না।আমার কাছ থেকে দশ হাত দূরে সরে যাও।এতো কাছাকাছি থেকে আমরা কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবো না।
এই বলে তোড়া নিজেই চলে গেলো দূরে।

কুশান তোড়াকে এতো দূরে সরে যাওয়া দেখে বললো,আমি এখন ঘুমাবো তোড়া।যাও তুমি একা একা বুদ্ধি বের করো।এই বলে কুশান কোল বালিশ টা জড়িয়ে ধরে সত্যি সত্যি শুয়ে পড়লো।

তোড়া তা দেখে দৌঁড়ে এসে কুশানের কাছ থেকে কোলবালিশ টা কেড়ে নিয়ে নিজেই ঢুকে গেলো কুশানের কোলের মধ্যে।

কুশান তা দেখে হাসতে হাসতে বললো,আমার পাগলিটা কোলবালিশ টাকেও হিংসা করে।না জানি অন্য কোনো মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে কি করবে?
তোড়া অন্য মেয়ের কথা শুনে বললো, কি বললা?অন্য মেয়ে মানে?যা থাকবোই না তোর কাছে।তুই অন্য মেয়েকে নিয়েই থাক।

কুশান তখন বললো,এই? এই?কই যাচ্ছো আবার? আমার এতো সাহস আছে নাকি?তোমার সামনে অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরবো?
–তাহলে বললা কেনো?
–সরি বাবা!ভুল হয়ে গেছে।আর বলবো না।এখন একটু ঘুমাই চলো।কাল আলোচনা করবো এসব নিয়ে।এই বলে কুশান তোড়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল বেলা সবাইকে অবাক করে দিয়ে শ্রাবণ, শ্রাবণী আর মিসেস লাবুনি বেগম আসলেন কুশানদের বাসায়।
কুশানদের ফ্যামিলির সবাই একসাথে নাস্তা করছে।
শ্রাবন দের দেখামাত্র সোনিয়া তোড়ার কানে কানে বললো,

ভাবি!ভাইয়াকে ম্যানেজ করো নি?বলো নি আমি শ্রাবনকে বিয়ে করতে চাই না?তারপরেও এনারা কেনো আবার এসেছে?
তোড়াও ফিসফিস করে বললো,হ্যাঁ বলেছি তো?কুশান মেনেও নিয়েছে তোমার আর সায়কের সম্পর্ক টাকে।কিন্তু এনারা কেনো যে এসেছে বুঝতে পারছি না।

এদিকে লুতফা আর কামিনী মেহমানদের দেখে তাড়াতাড়ি করে চেয়ার থেকে উঠে গেলো।আর তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।তবে শ্রাবণের চোখ ছিলো তোড়ার দিকে।

তোড়া যখন খেয়াল করলো ব্যাপার টা তখন সে তার চোখ সাথে সাথে সরিয়ে নিলো।অথচ সোনিয়া তোড়ার পাশেই বসা।তার তো চোখ সোনিয়ার দিকে থাকবে।এই বেটা যে আসলেই একজন লুচ্চা ছেলে বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইলো না তোড়ার।

তোড়া কাউকে কিছু না বলে মেহমানদের খাতির যত্নের ব্যবস্থা করতে লাগলো।কারণ বিয়ে হোক বা না হোক তারা এ বাড়ির গেস্ট হয়।
তোড়াকে চলে যাওয়া দেখে শ্রাবণ এগিয়ে এসে বললো,
আসসালামু আলাইকুম ভাবি?ভালো আছেন ভাবি?

শ্রাবণের কথা শোনামাত্র তোড়ার বুক টা ধক করে উঠলো।তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কাল আননোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া ছেলেটা আর অন্য কেউ নয়।তোড়া নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়ে সালামের উত্তর দিলো।

শ্রাবন তখন তোড়ার বুকের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাবির চোখ দুই টা কিন্তু মাশাল্লাহ।
হঠাৎ সেখানে কুশান আসলো।কুশানকে দেখামাত্র শ্রাবণ তার কথার স্বর পালটিয়ে বললো,ভাইয়া আপনাদের কি লাভ ম্যারেঞ্জ না এরেঞ্জ ম্যারেজ?
কুশান তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো এরেঞ্জ ম্যারেজ?

–ও আচ্ছা।আসলে এরেঞ্জ ম্যারেজ ই বেটার মনে হয় আমার কাছে।বড়দের আশির্বাদ থাকে এ বিয়েতে।
–হ্যাঁ।তা তো থাকেই।
তোড়া এই ফাঁকে চলে গেলো সেখান থেকে।তোড়া মেহমান দের জন্য নাস্তা রেডি করছে ঠিকই কিন্তু তার মন পড়ে আছে অন্য দিকে।হঠাৎ টুনি চিল্লায়ে বললো,ভাবি কোন দিকে তাকিয়ে আছো?পুড়ে যাবে তো হাত?

–ও, হ্যাঁ।হ্যাঁ।এই বলে তোড়া মনোযোগ দিলো তার কাজে।
গেস্ট রুমে বসিয়ে রাখা হইছে শ্রাবণদের।সেখানে বাসার সবাই বসে গল্প করছে।গল্প করতে করতে লাবুনি বেগম হঠাৎ করে বললো,

যে জন্য আপনাদের না জানিয়ে আজ আসতে হলো সেটাই তো বলা হলো না।আসলে আমরা বিয়ে টা একটু তাড়াতাড়িই নিতে চাচ্ছি।শুনলাম কুশান দুই মাস পিছিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।আচ্ছা অনুষ্ঠান না হয় দুই মাস পরেই হোক।আপাতত বিয়ে টা পড়িয়ে রাখা যাক।কি বলেন আপনারা?

লুতফা শোনামাত্র বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ,ঠিক বলেছেন।আমিও এটাই ভাবছিলাম।যেহেতু কুশানের পরীক্ষার জন্য পিছিয়ে নিতে চাচ্ছে সে সেজন্য আপাতত বিয়েটা পড়িয়ে রাখা হোক।

কামিনী সেই কথা শুনে কুশানের দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা তুই কি বলিস?তোর কি মনে হয়?
কুশান কোনো উত্তর দিতে পারলো না।কুশানকে চুপ থাকা দেখে লাবুনি বেগম বললো,
কোনো সমস্যা?

–না,না আন্টি।নো প্রবলেম।কিন্তু,,,
–কিন্তু কি বাবা?
কুশান তখন বললো আচ্ছা আমি পরে কল করে জানিয়ে দেবো।আব্বু,দাদু আর দুলাভাই রা একটু বাহিরে গেছে।ওনারা সবাই আগে ফিরুক,তারপর সবার মতামত নিয়ে জানাচ্ছি।

–ওকে বাবা।আমরা তাহলে আজ উঠি।
কামিনী লাবুনির কথা শুনে বললো,আগেই কোথায় যাচ্ছেন?কিছু তো একটু মুখে দেন।
এই বলে কামিনী তোড়াকে ডাকতে লাগলো।

তোড়া কামিনীর ডাক শুনে বুঝতে পারলো নাস্তা নিয়ে যেতে বলছে তাকে।সেজন্য তোড়া টুনি আর জয়ার হাতে নাস্তার ট্রে টা দিয়ে দিলো।কারণ সে আর শ্রাবণের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলো না।কেউ তার দিকে এভাবে খারাপ নজরে তাকালে খুব অস্বস্তি লাগে তোড়ার।তোড়া নাস্তা পাঠিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলো।

টুনি আর জয়াকে নাস্তা নিয়ে আসা দেখে লুতফা আর কামিনী ভীষণ অবাক হলো।অন্তত তোড়ার সাথে থাকা উচিত ছিলো।এদিকে সোনিয়াও একবারের জন্যও আসে নি।

শ্রাবণী তখন বললো, আমাদের নতুন ভাবি কই?ওনাকে দেখছি না যে?
লুতফা সেই কথা শুনে ইরা কে চোখের ইশারা দিয়ে দিলো,যাতে সোনিয়াকে একটু নিয়ে আসে।

ইরা লুতফার ইশারা দেখে সাথে সাথে সোনিয়ার রুমে চলে গেলো।কিন্তু রুমে গিয়ে ইরা দেখে সোনিয়া রুমে নাই।কই গেলো সোনিয়া?

হঠাৎ ইরা খেয়াল করলো সোনিয়া বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে?
ইরা তখন জোরে জোরে করে ডাকতে লাগলো,সোনিয়া? সোনিয়া?কার সাথে কথা বলছিস রে?

সোনিয়া ইরার ডাক শোনামাত্র দৌঁড়ে চলে এলো।আর বললো, আপু তুমি?
–হ্যাঁ আমি।কার সাথে কথা বলছিস?দেখি ফোনটা?এই বলে ইরা কেড়ে নিলো ফোনটা।কিন্তু ইরা ফোনটা দেখার আগেই লুতফা এসে বললো, সোনিয়া?তাড়াতাড়ি আয়।তোকে খুঁজছে তোর শাশুড়ী।

সোনিয়া তখন বললো হ্যাঁ যাচ্ছি।এই বলে সোনিয়া ইরার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো, আপু যাই আমি?
ইরা কোনো উত্তর দিলো না।তবে সে এ ব্যাপার টা নিয়ে পড়ে কথা বলবে। সোনিয়া এভাবে লুকিয়ে কার সাথে কথা বলছে?

এদিকে কুশান আজও যখন মেহমানদের সামনে তোড়াকে দেখলো না তখন সে নিজেও তোড়াকে ডাকার জন্য গেলো।সে বুঝতে পারলো কিছু একটা গড়বড় তো আছেই।তা না হলে তোড়া কেনো আসে না শ্রাবনদের সামনে।

কুশান রুমে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলো,তোড়া কোনো প্রবলেম?কেনো তুমি শ্রাবনদের সামনে যাও না।
তোড়া এই সময় টার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।কুশান কখন তাকে জিজ্ঞেস করে এই কথা।

তোড়া তো সুযোগ পেয়ে গেলো।সে তখন কুশানের হাত ধরে বললো, একটা কথা বলবো তোমাকে রাগ করবে না তো?
–কি কথা?

–শ্রাবণ ছেলেটা আসলেই ভালো না।সে এতোদিন কি করে বেড়িয়েছে জানি না সেটা আমি।তবে আমার কেনো জানি মনে হয়েছে শ্রাবণের চরিত্রে সমস্যা আছে।কারণ,,,,,,, বলেই থেমে গেলো কুশান।

কুশান তখন বললো, কি হলো? থেমে গেলে কেনো?
তোড়া তখন বললো, শ্রাবণ আমাকে খারাপ নজরে দেখতেছে কুশান।সোনিয়া সামনে বসে থাকা সত্ত্বেও বার বার শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।আমি খেয়াল করেছি তার চোখ সবসময় আমার বুকের,,,,,

–স্টপ,,,,,,,।এই বলে কুশান তোড়ার মুখ টিপে ধরলো।আর রাগান্বিত স্বরে বললো,
এই কথা আমাকে আগে বলো নি কেনো?আমার বউ এর দিকে তাকানোর সাহস ওর হয় কি করে?ওরে আজ আমি একদম খুন করে ফেলবো।

তোড়া তখন বললো,কুশান আমি ভেবেছিলাম এটা আমার মনের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।কিন্তু যখন দেখলাম সে আমাকে অন্য নাম্বার থেকে কল দিয়ে বিরক্ত করছে তখন দিয়ে বুঝতে পারলাম আসলেই আমার ধারণা ঠিক।আর আজও,,,,

–কি?শ্রাবণ তোমাকে ডিস্টার্ব করেছে?কুশানের মেজাজ একদম ১০০ ডিগ্রি তে পৌঁছে গেলো।সে শ্রাবণের চোখ দুটো আজ তুলেই ফেলবে।তার প্রাণের প্রিয় বউ এর দিকে নজর দেয় শ্রাবণ?

কুশান কোনো কিছু না ভেবে রুম থেকে বের হলো।
তোড়া তা দেখে পিছন দিক থেকে ডাক দিয়ে বললো কুশান?প্লিজ কিছু বলো না।কুশান?

কিন্তু কুশান কিছুতেই আর পিছন ফিরে তাকালো না।এদিকে কুশানকে এমন রাগান্বিত হতে দেখে তোড়ার ভয় হতে লাগলো।না জানি রাগের বশে কি করে ফেলে।
তোড়া এবার আর বসে না থেকে দৌঁড়ে কুশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আর ওর হাত ধরে বললো,

প্লিজ কুশান!কিছু বলো না এখন।রাগ কে একটু নিয়ন্ত্রণ করো।প্লিজ।
কুশান তখন বললো, তোড়া সামনে থেকে সরে যাও বলছি।আমি সবকিছু সহ্য করতে পারবো,কিন্তু আমার বউ এর দিকে কেউ খারাপ ভাবে তাকাবে এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।

–ওকে কুশান।বুঝতে পারছি আমি।কিন্তু এখন যদি কিছু বলো কেউ কি বিশ্বাস করবে আমাদের কথা?কোনো প্রমাণ কি আছে আমাদের কাছে?উলটো তোমার বউ এর ই বদনাম হবে।

সেজন্য এখন আমাদের চুপ থাকতে হবে।প্লিজ,আমার রিকুয়েষ্ট টা রাখো।
কুশান তোড়ার এমন মিনতি শুনে থেমে গেলো।সে আর কিছু বললো না।রাগ করে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
এদিকে শ্রাবনরাও কিছুক্ষন পরে চলে গেলো।

কুশান এখন পর্যন্ত রেগে আছে।সে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না।যতক্ষন পর্যন্ত সবাইকে বলতে না পারছে শ্রাবণ একজন দুশ্চরিত্র ছেলে ততোক্ষণ পর্যন্ত সে কিছুতেই স্থির হতে পারবে না।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা ভাঙ্গতেই হবে।কুশান এসব ভাবতে ভাবতেই পার করে দিলো কয়েক ঘন্টা।
এদিকে তোড়া সোনিয়াকে বোঝাচ্ছে।কারণ শ্রাবনদের আসা দেখে সে আবার ভেবেই নিয়েছে সত্যি তার বিয়ে হয়ে যাবে।কেউ এই বিয়ে আটকাতে পারবে না।

আজ জুম্মার দিন ছিলো।সেজন্য জারিফ চৌধুরী, সুলেমান চৌধুরী, আর তিন জামাই শাহিন,মাহিন,তুহিন সাড়ে বারোটার আগেই বাসায় চলে এলো।সবাই গোসল করে একসাথে নামাযে যাবে।কুশান কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
তোড়া যখন রুমে এসে দেখলো কুশান এখনো গোসল করে নি,তখন সে ঘুমন্ত কুশানের কপালে একটা কিস করে বললো,

কুশান?মসজিদে যাবে না?নামাযের সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে।
কুশান নামাযের কথা শুনে চোখ ডলতে ডলতে বললো কয় টা বাজে?
তোড়া তখন মুচকি হেসে বললো,সাড়ে বারো টা বাজে কুশান।গোসল করবা কখন?আর মসজিদে যাবে কখন?

কুশান তোড়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে উঠে গোসল করতে গেলো।তারপর ঝটপট রেডি হয়ে নিলো।
কালো পাঞ্জাবি যাতে সোনালি কালারের সুতা দিয়ে কাজ করা।আর সেম রঙের টুপি পড়ে কুশানকে কত হ্যান্ডসাম লাগছিলো যা বলে বোঝানো যাবে না।

তোড়া আবার কুশানের প্রশংসা মনে মনে করে শুধু।সে মুখ ফুটে কখনো বলে না।কুশানের মাথায় টুপি,হাতে একটা জায়নামাজ তারপর সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো তোড়ার কাছে।আর তার কপালে একটা কিস করে বললো,

আসছি?
তোড়া শুধু মাথা নাড়লো।
কুশান তা দেখে বললো, কিছু তো বললে না?কেমন লাগছে আমাকে?
তোড়া তখন বললো, আগে নামায টা পড়ে আসো।তারপর বলছি।এখন কিছু বলা যাবে না?

কুশান সেই কথা শুনে বললো,কেনো?
–না,যাবে না।
হঠাৎ বাহির থেকে ডাক এলো কুশান?কুশান?তুই কি আজ যাবি না নামাযে?
–আসছি,আসছি।এই বলেই কুশান তোড়ার কপালে আরেকটা কিস করে বের হয়ে গেলো।

বাহিরে গিয়ে দেখে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।কুশান সবাইকে একসাথে দেখে বললো,চলো,চলো।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সুমন তখন বললো, তুই কবে দেরি করিস না?তোর তো সবসময়ই দেরি হয়।আর এখন ভাবি আসার পর থেকে আরো বেশি দেরি হচ্ছে।

কুশান তা শুনে বললো, খুব বড় হয়ে গেছিস তুই।তোর বয়স কতো রে এখন?
–কেনো?
–কারণ তোর ও সময় হয়ে আসতেছে।
সুমন সেই কথা শুনে আর কোনো কথা বললো না।মুচকি হেসে সবার আগে বের হলো বাসা থেকে।

শুক্রবারের দিন যেহেতু সবাই বাসায় থাকে সেজন্য অনেক রকমের খাবার দাবার রান্না হয়ে থাকে।সাদা পোলাও,গরুর মাংসের কালা ভুনা, খাসির মাংসের রেজালা,মুরগির দোঁ পেয়াজা,চিংড়ি মালাইকারি,ভাঁপা ইলিশ সাথে স্পেশাল মিক্সড ভেজিটেবল আর মুগ কালাই এর ভারি ডাল।আর সালাদ তো আছেই।

তোড়া টুনি আর জয়ার সাথে মিলে সবকিছু রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে তবে দিয়ে গোসল করতে চলে গেলো।তারপর নামায পড়ে তোড়া নিজেও একটা কালো কাপড়ে,সোনালি পাড়ের একটা সুতি শাড়ি পড়ে নিলো।
বাসার সবাই রেডি হয়ে ছেলেদের আসার অপেক্ষা করছে।তারা কখন আসবে আর কখন খেতে বসবে।

এদিকে ছেলেরা নামায পড়ে গল্পে মেতে আছে।তাদের বাড়ি আসার কথা মনেই নেই।
হঠাৎ কলিং বেল বাজায় সবাই ভাবলো এসে গেছে ছেলেরা।কিন্তু টুনি দরজা খুলে দেখতে পেলো দুইজন মহিলা এসেছেন।একজন একটু মধ্য বয়সের,আর আরেকজন ২৩ -২৪ বয়সের মেয়ে হবে।টুনি তাদের কে না চিনতে পারায় জিজ্ঞেস করলো তারা কারা?

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৩

মধ্যবয়সী মহিলা টি তখন একটা ছেলের ছবি দেখিয়ে বললো, এই ছেলেটাকে কি চেনো তুমি?
টুনি ছবিটা উলটে পালটিয়ে দেখে বললো, হ্যাঁ চিনি তো?কেনো খুঁজছেন তাকে?

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৫