আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৫

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৫
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

“এই ছেলে তো আমাদের হবু দুলাভাই।মানে আমাদের সোনিয়া আপার লগে এনার বিয়ের কথা চলতেছে।”

টুনির কথা শোনামাত্র ইয়ং মেয়েটি চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর বললো,
ইনি আমার স্বামী হন।দীর্ঘ দেড় বছর ধরে আমি এনার স্ত্রী।বেশ কয়েকদিন ধরে আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাল শুনলাম তিনি আবার বিয়ে করছেন।সেজন্য আপনাদের বাড়ির ঠিকানা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি।
টুনি মেয়েটির কথা শুনে চিল্লায়ে বললো,ও খালা মনি,আপা মনি,ভাবি তাড়াতাড়ি বের হও রুম থেকে।দেখে যাও কারা এসেছে।ও আল্লাহ সোনিয়া আপার কত বড় ক্ষতি হতে যাচ্ছিলো?

টুনির চিৎকার শুনে সবাই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।কিন্তু তোড়া ওনাদের সামনে এসেই বললো,
আরে জামিলা আন্টি যে?আন্টি কি হইছে?কোনো প্রবলেম?

জামিলা তোড়াকে দেখে যেনো এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,সে তো ভেবেছিলো শ্রাবণের সম্পর্কে এসব বললে না জানি এই বাড়ির লোক তাদের উল্টো মিথ্যাবাদী বানিয়ে দেয়?সেজন্য জামিলা নিজে এগিয়ে এসে তোড়ার হাত ধরে বললো,

মা তোড়া?এটা তোমার শশুড় বাড়ি নাকি?
তোড়া মিষ্টি হেসে বললো, হ্যাঁ আন্টি।এটাই আমার শশুড় বাড়ি।আন্টি আপনারা ভিতরে এসে বসুন।
এই বলে তোড়া নিজে হাত ধরে জামিলাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।আর জারাকে বললো,
তুমিও ভিতরে আসো।

জারা তোড়ার কথা শুনে নিজেও গেস্ট রুমে চলে গেলো।
গেস্ট রুমে বসতেই জামিলা শ্রাবণের ছবি দেখিয়ে বললো,
মা তোড়া!এই ছেলে নাকি তোমাদের বাড়ির কাউকে বিয়ে করতে চলেছে।দয়া করে এই বিয়ে টা আটকাও মা।এই আমার জারার স্বামী।

তোড়া জামিলার কথা শুনে কি উত্তর দেবে ভেবেই পাচ্ছে না,একদিকে এটা একটা গুড নিউজ অন্যদিকে রাগে তোড়ার শরীর শিরশির করে উঠলো।এতো বেয়াদব ছেলে শ্রাবণ?শ্রাবনকে তোড়া আগেই চিনে ফেলেছে।

তার চোখের লোলুপ চাহনি আর আননোন নাম্বার থেকে কল করে তাকে বিরক্ত করা দেখেই বুঝে গেছে শ্রাবণ কেমন প্রকৃতির ছেলে।তোড়া মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলো।

জামিলার কথা শুনে কামিনী বিস্তারিত ভাবে শুনতে লাগলো শ্রাবণের সম্পর্কে।শ্রাবণের এমন খারাপ চরিত্রের কথা যতই শুনছে কামিনীর রাগ যেনো আরো বাড়ছে সেজন্য কামিনী জামিলাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

আচ্ছা, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।আমরা দেখছি ব্যাপার টা।সেজন্য কিছু মনে না করলে আপনারা আজ আমাদের বাসাতেই থেকে যেতে পারেন।আমাদের বাসার সকল ছেলে জুম্মার নামায পড়তে গেছে।সবাই বাসায় ফিরুক। তারপর আমরা ডিসিশন নিবো কি করা যায়?

জামিলা কামিনীর কথা শুনে খুব খুশি হলেন।সে তো ভেবেছিলো তাদের কে বাসার মধ্যে বসতে দেওয়া তো দূরের কথা,তাদের কথা বিশ্বাস করে কি না করে সবাই?

কুশান নামায পড়তে গিয়েছে বিধায় ফোনটাও সাথে করে নিয়ে যায় নি।সেজন্য তোড়া কুশানকে কল করে জানিয়ে দিতেও পারছে না যে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।এদিকে নামায পড়া কখন শেষ হয়েছে।কুশানরা সবাই মিলে এখন বোধ হয় আড্ডা দিচ্ছে।তোড়া রুমে দাঁড়িয়ে একা একাই বলছে কথাগুলো।

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর কারো স্পর্শে তোড়া চমকে উঠলো। তোড়ার বুঝতে আর বাকি রইলো না ব্যাক্তিটি কে?এভাবে হঠাৎ করে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরা,ঘাড়ে গভীরভাবে চুমু খাওয়া কুশান ছাড়া আর কে হবে?
কুশান তোড়াকে এবার তার পাশ করে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে তোড়ার শাড়ি ভেদ করে পেটে চলে গেলো।

তোড়া তখন কুশানের হাত আটকিয়ে বললো,
কু..শা..ন..ছাড়ো না এখন।আগে শোনো কি হয়েছে?
কুশান তখন ঘোরলাগা কন্ঠে নিজের ঠোট দিয়ে তোড়ার গাল স্লাইড করতে করতে বললো,

শাড়ি পরে সাজগোছ করে আমাকে পাগল করবে আর আমি রোমাঞ্চ করতে চাইলেই দোষ? নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারি না তোড়া?এটা কি আমার দোষ?
তোড়া তখন প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো, আলমারিতে কি তাহলে শুধু শাড়ি তুলেই রাখবো? পড়বো না?

–হ্যাঁ পড়বেই তো।না পড়লে নেশা লাগবে কেমনে?
–সরো তো কুশান এখন।আগে শোনো তো কি হয়েছে?সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য কথাটা বলবো বলে?আর তুমি এতোক্ষণে চলে আসলে।

কুশান তখন বললো,এখন অন্য কোনো কথা শুনতে চাই না।আমার বউ আজ শাড়ি পড়েছে,তাকে একদম হট লাগছে, আমি নিজেকে এখন কি করে সামলাবো সেই চিন্তায় আছি?

তোড়া কুশানের কথা শুনে বাঁকা হেসে ওর মুখ টিপে ধরে বললো,
–তুমি খুব অসভ্য হয়ে গেছো কুশান।তোমার লজ্জা শরম দিন দিন কমে যাচ্ছে।আমি আমার আগের কুশানকে চাই।যে এতোটাই ভদ্র ছিলো যে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেও লজ্জা করতো।

কুশান সেই কথা শুনে তোড়াকে টেনে এনে আলতো করে ঠোঁট দুটি মুখে পুরে নিলো।তারপর কিছুক্ষন পর তোড়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

বউয়ের কাছে লুচু, অসভ্য হতে আমার কোনো প্রবলেম নেই।অন্য মানুষ ভালো বললেই হলো।তোমার কাছে ভালো হতে চাই না কিছুতেই।আমাকে যদি তোমার অসভ্য মনে হয় তাহলে আমি অসভ্যই।

তোড়া তখন বললো এই ছেলেটাকে যত কিছুই বলি না কেনো জীবনেও শুধরাবেনা সে।বলছি খুব দরকারী কথা আছে।আর উনি পড়ে আছেন ওনার প্রেম ভালোবাসা নিয়ে।এই বলে তোড়া রাগ করে কুশানকে সরে দিয়ে চলে যেতে ধরলো।

কুশান তখন আবার তোড়াকে তার কাছে টেনে এনে বললো, এই পাগলি!রাগ করতেছো কেনো?এই যে ভালো সভ্য ছেলে হয়ে গেছি।নো ডিস্টার্ব নো রোমান্স। কি বলবে বলো?
–না, বলবো না।

–ওকে।না বললে নাই।এই বলে কুশান বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো। আর তোড়াকে বললো, এই আমার পা দুটো একটু টিপিয়ে দাও তো,কেমন যেনো ব্যাথা করছে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, কুশান প্লিজ একটু সিরিয়াস হও।আমার কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শোনো।জামিলা আন্টি আর তার মেয়ে জারা এসেছেন।

জারার সাথে নাকি শ্রাবণের দেড় বছর আগে বিয়ে হয়ে গেছে।
কুশান তোড়ার কথা শোনামাত্র এক লাফে বেড থেকে উঠলো,আর বললো কি বলছো এসব?কই ওনারা?এই বলেই কুশান বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

জামিলা বেগম আর জারা এখনো গেস্ট রুমেই আছে।তাদের কে খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করলো কামিনী কিন্তু ওনারা জানিয়ে দিলো এই মুহুর্তে কিছুই মুখে দেবেন না তারা।

কুশান গেস্ট রুমে যেতেই জামিলা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আর বললো, বাবা কুশান আমাকে চিনছো তুমি?সেদিন যে তোড়ার বাড়িতে দেখা হয়েছিলো তোমার সাথে আমার।

কুশান তা শুনে বললো জ্বি আন্টি।চিনেছি।শুনলাম আপনার মেয়েকে অনেক আগেই শ্রাবণ বিয়ে করেছে।

–হ্যাঁ বাবা।আমরা বুঝতে পারি নি ওই ছেলের চাল।মিথ্যে বাবা মা সাজিয়ে আমার বাড়িতে পাঠায়, আমরাও ভাবি মেয়ে বড় হয়ে গেছে এখন তো বিয়ে দিতে হবে।আর যেখানে ছেলের বাবা মা এসেছে সেখানে তো কথাই নাই।বিয়ের পর শ্রাবণ আমার মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠে।আর জানিয়ে দেয় তার বাবা মা গ্রামে থাকবে।

কিন্তু এখন শুনতেছি তারা শ্রাবণের আসল বাবা মা না।শ্রাবণের আসল বাবা মা এখন শ্রাবণ কে তোমাদের সোনিয়ার সাথে বিয়ে পাকাপোক্ত করেছে।
কুশান তখন রাগ দেখিয়ে বললো, কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি।এই শ্রাবণের বাচ্চাকে আমি এমন শাস্তি দিবো যে ভুল করেও আর অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে না।ওর চোখ দুটো আগে আমি তুলে ফেলবো।

জারা সেই কথা শুনে বললো, ভাইয়া প্লিজ এমন কাজ করবেন না।ওনাকে শুধু এনে দিন আমাকে।আমার পেটে ওনার সন্তান আছে।আমার সন্তান কার পরিচয়ে এখন বড় হবে?আপনি শুধু ওর ফ্যামিলিকে জানিয়ে দিন ব্যাপার টা।

কুশান তখন বললো, তুমি এতো কিছুর পরও শ্রাবণের সাথে সংসার করতে চাচ্ছো?ওকে শাস্তি দিতে চাও না?
–না চাই না।আপনারা শুধু সোনিয়ার সাথে ওর বিয়ে টা ভেঙে দিন।আর ওনার ফ্যামিলির সাথে আমার ব্যাপার টা নিয়ে একটু কথা বলে দেখেন।

–আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।কথা দিলাম।এখন চলেন দুপুরের খাবার টা আগে খেয়ে নেই।
জামিলা আর জারা কুশানের কথা শুনে একসাথে বলে উঠলো, না, না।আজ না।অন্যদিন খাবো।

কুশান তখন জামিলা আর জারার হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলে আনলো।আর বললো, মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট থাকবেই।কার জীবনে কখন কি ঘটবে কেউ বলতে পারে না।কিন্তু তাই বলে না খেয়ে বসে থাকলে কি প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে?আগে খাবার খাবেন।তারপর আমরা এ নিয়ে ডিসকাশন করবো।

এদিকে বাসার সকল ছেলে এক এক করে ফিরলো।জারিফ চৌধুরী আর সোলেমান চৌধুরী একসাথে ফিরলেন।সবাই যখন শ্রাবণের এসব কুকীর্তির কথা জানলো, ভীষণ রেগে গেলো সবাই।কত বড় বিপদের হাত থেকে তারা বেঁচে গেলো।
অন্যদিকে সোনিয়া তো শোনামাত্র খুশির ঠেলায় সায়ক কে জানিয়েও দিলো যে তার আর শ্রাবণের বিয়ে হচ্ছে না।

দুপুরে কুশানদের ফ্যামিলির সাথে জামিলা বেগম আর জারা একসাথে খাবার খেলো।জামিলা তো কুশানদের ফ্যামিলির সবার এমন ব্যবহার দেখে বেজায় খুশি হলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তোড়া কি সুন্দর একটা ফ্যামিলি পেয়েছে।সবাই কত ভালো।তার মেয়ে কি ক্ষতি করেছিলো খোদা!তার মেয়ের কপাল কেনো এতো খারাপ হলো?

আসলে সুন্দরী মেয়েদের শুধু রুপ থাকলেই হয় না তার সাথে ভাগ্য টাও ভালো হওয়া প্রয়োজন।
জামিলা বেগম ও যথেষ্ট সুন্দরী একজন মহিলা,যার আচার, আচারণ, ব্যবহার সবই মনোমুগ্ধকর। তবুও তার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার করছে।

আর জামিলা সেই স্বামীর স্মৃতি ধারন করে মেয়েকে নিয়ে এই কঠিন পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।ভেবেছিলো তার জীবন কিছু হোক,অন্তত মেয়েটা যেনো একটু সুখী হয়।কিন্তু তার মেয়েরও কি একই কপাল হতে হলো?

জামিলা খেতে ধরে আর খেতে পারলো না।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি খাবার থালার মধ্যে পড়তে লাগলো।যার কারণে জামিলা আর না খেয়ে তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়ে নিলো।অন্যদিকে জারা কিছুই মুখে দিচ্ছে না।তখন তোড়া বললো,

বোন,এতো দুশ্চিন্তা করো না।প্লিজ খেয়ে নাও।আমরা ওই শ্রাবণ কে উচিত শাস্তি দিবো।
জারা তখন বললো আমি ওর শাস্তি চাই না।আমি শুধু সংসার করতে চাই।আমার সন্তানকে তার বাবার পরিচয়ে বড় করতে চাই।বাবা ছাড়া একজন ছেলে মেয়ের এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকা যে কত টা কঠিন তা আমি নিজেও জানি।পদে পদে মানুষের কথা শুনতে হয়।

তোড়া বুঝতে পারছে না কি বলে শান্ত্বনা দেবে জারাকে।তার নিজেরও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।অন্যদিকে কুশান জারার কান্দাকাটি দেখে নিজেও ভীষণ ইমোশনাল হয়ে গেলো।সে বুঝতে পারছে না ছেলেরা কেনো যে এইভাবে একটা মেয়ের সাথে প্রতারণা করে?

তোড়াকে সে এক নজর না দেখলে থাকতে পারে না,আর তার থেকে দূরে থাকার কথা সে কল্পনাও করতে পারে না।সে তো ভাবে যদি এইভাবে তারা অনন্তকাল থাকতে পারতো একসাথে।যদি তাদের কে দুনিয়ার কোনো শক্তি আলাদা না করতে পারতো?

কিন্তু দুনিয়ার বাস্তবতাকে তো মানতেই হবে।একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।এসব কথা মনে হলেই কুশানের বুক টা হু হু করে কেঁদে ওঠে।
তার আম্মু,ভালোবাসার বউ,এই ফ্যামিলির মানুষদের কে ছেড়ে সে যে কখনোই কোথাও যেতে পারবে না।ভীষণ ভালোবাসে কুশান তার ফ্যামিলিকে।

সুলাইমান চৌধুরী নিজে কল দিলো মিঃ শহিদুল সাহেবকে।তাদের কে জারা আর শ্রাবণের বিয়ের কথা বললো না কিছু।শুধু বললো শ্রাবণ আর আপনার মিসেস কে নিয়ে একটু বাসায় আসেন।

সুলায়মান চৌধুরীর কথা শুনে মিসেস লাবুনি বেগম আর মিঃ শহিদুল সাহেব ভাবলো হয়তো বিয়ের কথা ফাইনাল করার জন্য ডাকছে তাদের।সেজন্য তারা শোনামাত্র সদলবলে চলে এলো।কিন্তু তারা তো জানে কি হতে চলেছে আজ?

এদিকে লুতফা চৌধুরী মন খারাপ করে ঘরের কোনায় বসে আছেন।তার কত স্বপ্ন বড় কোনো ফ্যামিলিতে মেয়ের বিয়ে দিবেন।কিন্তু এটা কি হয়ে গেলো?তিনি একবার চিৎকার করে বলতে চাচ্ছেন,এই মেয়ে যা বলছে তা মিথ্যা বলছে,পরে আবার ভাবছে, একটা মেয়ে কি করে তার পেটের সন্তান নিয়ে এতো বড় মিথ্যা কথা বলতে পারে?কারণ কেউ জানুক বা না জানুক একজন মা জানে তার পেটের সন্তানের বাবা কে?

লুতফা এবার তার মন কে কন্ট্রোল করে নিলো।যদি সোনিয়ার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যেতো শ্রাবণের সাথে তখন কত বড় একটা ক্ষতি হতো তার মেয়ের?আল্লাহ যা করেন আসলেই ভালোর জন্যই করেন।

কুশান রাগে রুমের মধ্যে শুধু পায়চারি করতে লাগলো।সে শুধু ভাবছে কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় শ্রাবনকে।তাকে এমন ভাবে শাস্তি দিতে হবে যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়।

কারণ জারা বার বার বলেছে তার স্বামীর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।কারন সে সংসার করতে চায় শ্রাবণের সাথে।শ্রাবণের কোনো ক্ষতি হোক সে সেটা চায় না।কিন্তু শ্রাবণকে ভালো কোনো শাস্তি না দিলে যে কুশানের মেজাজ ঠান্ডা হবে না।কারন শ্রাবণ যে তার তোড়াকেও খারাপ নজরে দেখেছে।ওর চোখ দুটো উঠিয়ে ফেলতে পারলে তার শান্তি হতো।

হঠাৎ তোড়া এসে বললো, কুশান শ্রাবণ রা এসে গেছে।তুমি তাড়াতাড়ি এসো। এই বলেই তোড়া চলে যেতে ধরলো।
কুশান তখন তোড়ার হাত ধরে টেনে বললো,

তুমি এই রুমেই থাকো।আমি চাই না শ্রাবণের ওই পাপী চোখ তোমার দিকে তাকাক।এই বলে কুশান তোড়াকে রুমের মধ্যে রেখে চলে গেলো।
অন্যদিকে জামিলা আর জারাকেও অন্য আরেকটা ঘরে রাখা হয়েছে।আর বলা হয়েছে তাদের না ডাকা পর্যন্ত তারা যেনো রুম থেকে না বের হয়।

মিসেস লাবুনি বেগম,শ্রাবণ আর শ্রাবণী সবাই বেশ হাসিখুশি।এখনো কিছু বলা হয় নি ওনাদের।কুশানদের ফ্যামিলির সবাই আগের মতোই সুন্দর করে কথা বলছে মেহমানদের সাথে।আর অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য অন্যান্য দিনের মতো সব কিছুর আয়োজন করা হয়েছে।খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আলাপ আলোচনা শুরু করবেন সুলেমান চৌধুরী।

কিন্তু হঠাৎ কুশান শ্রাবণ কে বললো,
তুমি আমার সাথে একটু এসো।এখন যেহেতু বড়রা কথা বলবে তুমি না থাকাই ভালো।
শ্রাবণ কুশানের কথা শুনে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে উঠে এলো।নতুন বিয়ে করছে লজ্জা না দেখালে হবে?শ্রাবণী তখন বললো,ভাইয়া আমি আছি না?যা তুই।আপটেড নিউজ সব জানিয়ে দেবো।

শ্রাবণ সেই কথা শুনে কুশানের সাথে চলে গেলো।কুশান শ্রাবণ কে নিয়ে অন্য আরেকটা রুমে চলে গেলো।শ্রাবণ তখন হঠাৎ করেই বললো,ভাবি কে দেখছি না যে?ভাবি কই?
কুশান কোনো উত্তর দিলো না।

হঠাৎ বেলকুনি থেকে শাহিন,মাহিন আর তুহিন বের হয়ে আসলো।আর তারা এসেই কেউ শ্রাবণের মুখ বাঁধলো,কেউ হাত আর কেউ বা পা।তারপর কুশান একটা লাঠি দিয়ে ইচ্ছামতো পেটাতে লাগলো শ্রাবনকে।তার মনের মধ্যে যতো রাগ ছিলো আজ সব দূর হয়ে গেলো।শাহিন,মাহিন,তুহিন মারতে চাইলে কুশান তাদের বাঁধা দিলো।

এদিকে শ্রাবণ চিল্লাতেও পারছে না,আবার হাত পা ছড়াছড়ি করতেও পারছে না।মারতে মারতে শ্রাবণ যখন আধামরার মতো হলো তখন দিয়ে কুশান শ্রাবণের হাত,পা,আর মুখের বাধন খুলে দিলো।বাধন খোলার সাথে সাথে শ্রাবণ ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলো।

শ্রাবণ কে এভাবে পরে যাওয়া দেখে শাহিন বললো,শালা আবার মরলো নাকি?
কুশান তখন বললো, না,মরে নি।এতো তাড়াতাড়ি মরে নাকি?এই বলে কুশান তাদের ফ্যামিলি ডাক্তার কে কল করে আসতে বললো।এদিকে শ্রাবণ একদম নেতিয়ে পড়েছে।সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে পানি দাও,আমাকে একটু পানি দাও।

কুশান তখন এগিয়ে এসে বললো, না,তুই পানিও পাবি না।যদি জারার পেটে সন্তান না থাকতো তাহলে আজ আমি তোর চোখ দুইটা ওঠায়ে ফেলতাম।আমার তোড়ার দিকে তাকানোর সাহস সারা জীবনের জন্য শিখিয়ে দিতাম।

কিন্তু আজ তোর ঐ আগত সন্তান তোকে বাঁচিয়ে দিলো।এখন থেকে ভালো হয়ে যা শ্রাবণ।আর সবকিছু ভুলে জারাকে নিয়ে সংসার কর।যদি আর কোনো দিন শুনছি তুই অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাস বা জারার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস তাহলে কিন্তু এবার আর তোর রক্ষা নাই।

শ্রাবণ এতোক্ষণ দিয়ে বুঝতে পারলো কুশান তাকে এ ঘরে কেনো আনলো?আর কেনোই বা এভাবে উরাধুরা মারতে লাগলো।কিন্তু তার যে এখন এসব ভাবার সময় নাই।সে এখন একটু পানি খেতে পারলেই বাঁচে।

কুশান এবার নিজে পানি এনে খাইয়ে দিলো শ্রাবণ কে।তারপর বিছানায় শুয়ে রাখলো।
এদিকে সুলাইমান চৌধুরী মিঃ শহিদুল সাহেব আর মিসেস লাবুনি বেগমকে সবকিছু বলে দিয়েছেন।মিসেস লাবুনি বেগম তো শোনামাত্র বললো,

না,না।এ হতে পারে না।নিশ্চয় মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে।এটা তাদের বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত।এসব মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা টাকা হাসিল করার জন্য বড়লোক ছেলেদের কে ফাঁসায়।কার বাচ্চা কে জানে?আমার ছেলের ঘাড়ে চাপালেই হবে নাকি?

কামিনী তা শুনে বললো,আপনাকে ভদ্র আর ভালো মহিলা ভেবেছিলাম।কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি তেমন মহিলা নন।একজন মেয়ে কি কম দুঃখে তার বাচ্চার পরিচয় চাচ্ছে?সে কেনো মিথ্যা কথা বলবে? সমস্ত প্রমাণ নিয়েই সে মেয়ে এসেছে।তাছাড়া এই আধুনিক যুগে এসে কেউ কি মিথ্যা কথা বলতে পারে?ডি এন,এ টেস্ট করলেই তো বোঝা যায় কার সন্তান কে?এই ডাকো তো জারা কে?

কামিনীর কথা শুনে টুনি জারা আর জামিলাকে ডেকে আনলো।
লাবুনি বেগম মা মেয়েকে দেখামাত্র দাঁড়িয়ে গেলো।লাবুনি বেগম ভাবতেই পারে নি অভিযোগ করা মেয়ে এই বাসাতেই আছে।তিনি তো ভেবেছেন হয় তো এনারা কারো মুখে এই মিথ্যে অপবাদ শুনেছেন।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৪

জারা আর জামিলা শুরুর থেকে আবার সমস্ত কাহিনী খুলে বললো শ্রাবনের মা বাবাকে।
এদিকে শ্রাবণী শ্রাবনকে এসব কথা বলার জন্য কল করেই যাচ্ছে,করেই যাচ্ছে।কিন্তু শ্রাবণ কিছুতেই কল রিসিভ করছে না।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৬