আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৬

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৬
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

মিসেস লাবুনি বেগম আর মিঃ শহিদুল সাহেব তার ছেলের অপকর্মের জন্য নিজেরা ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলেন।তারা ভাবতেই পারছেন না শ্রাবণ এই ধরনের একটা বাজে কাজ করতে পারে।মিঃ জারিফ চৌধুরীর সাথে মিঃ শহিদুল সাহেবের অনেক আগে থেকেই পরিচয় যার কারণে শহিদুল সাহেব লজ্জায় জারিফ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছেন না।

কত বড় মুখ করে এসেছিলেন জারিফ চৌধুরীর ভাতিজির সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দেবেন।কিন্তু শ্রাবণ এমন একটা অন্যায় করেছে যা খুবই লজ্জাজনক।তবে অন্যান্য আত্নীয়স্বজন তার ছেলের এই জঘন্য কাজ টা জানার আগেই তাকেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেজন্য মিঃ শহিদুল সাহেব মিসেস জামিলা বেগম কে প্রস্তাব দিলেন তিনি যেনো এ বিষয় টা নিয়ে আর কারো সামনে না বলেন।ভালো একটা দিনক্ষণ দেখে তিনি জারার সাথে শ্রাবণের নতুন করে আবার বিয়ে দিবেন।

মিসেস লাবুনি বেগম মনে মনে মোটেও খুশি হলেন না মিঃ শহিদুল সাহেবের এমন সিদ্ধান্তে। তিনি তো ভেবে রেখেছিলেন কিছু টাকা দিয়ে জারাকে বিদায় করে দিবেন।আর জারার পেটের সন্তান নষ্ট করতে বলবেন।কিন্তু জারিফ চৌধুরী আর মিঃ সুলেমান চৌধুরীর সামনে এরকম প্রস্তাব তিনি মুখে আনতেই পারলেন না।কারণ কামিনী ভীষণ ডেঞ্জারাস মহিলা।তিনি এই মুহুর্তে এই প্রস্তাব দিলে না জানি আবার তাকে কিভাবে অপমান করে?

সুলেমান চৌধুরী আর জারিফ চৌধুরী মিঃ শহিদুল সাহেবের কথা শুনে বললো,
না,কিছুতেই দেরি করা যাবে না।ভালো দিনক্ষন দেখে আপনি আপনার ছেলের বিয়ে ধুমধামে দিন,এতে কোনো সমস্যা নাই।কিন্তু আজ কালকের মধ্যেই জারা আর শ্রাবণের আগে বিয়ের কাজটা দ্রুত সেরে ফেলুন।

আর মেয়েটাকে আপনার বাড়িতে ঘরের বউ করে নিয়ে যান।এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হবে।কারন শুভ কাজে বেশি দেরি করতে নেই।
শহিদুল সাহেব মিঃ জারিফ চৌধুরী আর সুলেমান চৌধুরীর মুখের উপর আর কোনো কথা বলতে পারলো না।যেহেতু এটা তার আর তার ফ্যামিলির মানসম্মানের ব্যাপার।সেজন্য সবাই মিলে ঠিক করলো কালই জারার সাথে শ্রাবণের বিয়ে হবে।কিন্তু শ্রাবণ কোথায়?মিসেস লাবুনি বেগম তখন কুশানকে বললো,

শ্রাবণ কোথায়?ওকে দেখছি না কেনো?
কুশান মিসেস লাবুনি বেগমের কথা শুনে বললো, আন্টি ও যে কোথায় গেলো বলতে পারছি না।হয় তো লজ্জায় আপনাদের সামনে আসতেছে না।আপনি চিন্তা করেন না আন্টি ও যেখানেই থাক কাল বিয়ের সময় ওকে আমি নিজে হাজির করবো।

–লজ্জা?ওর লজ্জা পাওয়া শিখিয়ে দিবো আমি।ওরে আজ হাতের কাছে পাইলে আমি একদম খুন করে ফেলতাম।একদম অমানুষের মতো একটা কাজ করেছে।আমার যা মানসম্মান ছিলো সব শেষ।এই কথা বাহিরে জানাজানি হলে আমি যে কিভাবে মুখ দেখাবো ভাবতেই আমার দম আটকে যাচ্ছে।কথাগুলো বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে বললো মিঃ শহিদুল সাহেব।তার মতো একজন সম্মানিত ব্যাক্তির ছেলে যে এরকম একটা জা*নো*য়ার হয়েছে তিনি ভাবতেই পারছেন না।

জারা আর জামিলা বেগম কুশান আর তার ফ্যামিলি মেম্বার দের উপর অনেক বেশি খুশি হলেন।জামিলা বেগম তো সবার সামনেই কুশান আর তার ফ্যামিলি মেম্বার দের জন্য হাত তুলে দোয়াও করতে লাগলেন।তিনি ভাবতেই পারেন নি এতো সহজে এতো বড় একটা প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে।

তিনি তো ভেবেছেন তার মতো মনে হয় জারার ও সেম অবস্থা হবে।জারার অনাগত সন্তান ও বাবা ছাড়া বড় হবে আর লোকজনের হাসির পাত্র হয়ে বড় হবে।নতুন করে বিয়ের পর শ্রাবণ ভালো হবে কি হবে না সেটা জারা বুঝতে পারছে না।তবে তার সন্তান যে স্বীকৃতি পাবে এজন্যই অনেক বেশি আনন্দ লাগছে জারার।

জারারা আজ বাড়ি যেতে চাইলে তোড়া আর কামিনী কিছুতেই যেতে দিলো না।যেহেতু কালকেই বিয়ে হবে,আর জারাকে মিঃ শহিদুল সাহেব পুত্র বধু হিসেবে তার বাড়িতে তুলবে সেজন্য আজ জামিলা আর জারা কুশানদের বাড়িতেই রয়ে গেলো।
তবে কুশান এটাও জানালো চাইলে জামিলি তার নিকট কয়েকজন আত্নীয়কে কাল বিয়ের জন্য ইনভাইট করতে পারে।
জামিলি সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা বাবা।আমার নিকট আত্নীয় বলতে আমার এক ভাই আর ভাই এর বউ আছে।আর এক মামি আছে।অন্তত তাদের কে ডাকতেই হবে।

এদিকে রুমের মধ্যে শ্রাবণের ট্রিটমেন্ট চলছে।শ্রাবনকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।যতক্ষন না তার শরীরের ফোলা ফোলা ভাব না কমে ততোক্ষন তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতেই হবে।আর তাকে কুশানদের বাড়িতেই রাখতে হবে।কারণ শ্রাবণ কে কুশান যেমন সুস্থ সবল ছেলে এনেছিল ঠিক তেমন সুস্থ সবল করেই তার বাবা মার সামনে নিয়ে যেতে হবে।আর সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত শ্রাবণ কে কড়া নজরে রাখতে হবে যাতে সে পলায়ন করতে না পারে।

রাতের দিকে শ্রাবণের জ্ঞান ফিরলো সে চোখ মেলে তাকাতেই কুশানকে দেখতে পেলো।কারণ কুশান সেই থেকে শ্রাবণের রুমেই আছে।কুশান কোনো দায়িত্ব মাথায় নিলে তা যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করে।শ্রাবণ উঠতে ধরলে কুশান বললো,

কি ব্যাপার শ্রাবণ সাহেব?এখন কেমন বোধ করছেন?
শ্রাবণ কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে উঠতে ধরলো।
কুশান তা দেখে চিৎকার করে বললো, না উঠিস না শ্রাবণ। তুই আজ আমার কব্জায় থাকবি।যতক্ষণ পর্যন্ত জারার সাথে তোর নতুন করে বিয়ে না হয়?

–বিয়ে? ইম্পসিবল। আমি জারাকে করবো না বিয়ে।
কুশান শ্রাবণের কথা শুনে রাগ করে আবার কিল ঘুষি মারা শুরু করলো।আর বললো বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।যতক্ষন পর্যন্ত না না করবি ততোক্ষন পর্যন্ত তুই শুধু এভাবেই কিল ঘুষি খাবি।
এক পর্যায়ে শ্রাবণ কুশানের হাত পা ধরে বলে ভাই থাম,আর মারিস না।আমি করবো বিয়ে।ভাই আর মারিস না আমাকে।আমি তো মরেই যাবো।

কুশান শ্রাবণের আকুতি মিনুতি শুনে থেমে গেলো।
কুশান তখন বললো এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যা শ্রাবণ।বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস কর।মানুষ একটা বাচ্চা কত করে চাওয়ার পরেও পায় না,আর তোকে আল্লাহ না চাইতেই দিয়েছে।তুই কত বড় অমা*নুষ নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করছিস।অন্তত বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু মানিয়ে নেওয়া উচিত ছিলো তোর।কিন্তু তুই যেই শুনেছিস জারা মা হতে চলেছে আর তখনি পলায়ন করেছিস তার থেকে।আমার ভাবতেই রাগে গা শিউরে উঠছে,

এই বলে কুশান আরো কয়েকটা ঘুষি মারতে লাগলো শ্রাবনকে।শ্রাবণ বেচারা আজ কুশানের হাতের কিল ঘুষি খেতে খেতে একদম শেষ হয়ে গেলো।

পরের দিন জারা আর শ্রাবণের বিয়ে উপলক্ষে কুশানদের বাড়ি টা হালকা করে সাজানো হয়েছে।যদিও ধুমধামে হচ্ছে না বিয়েটা তবুও বিয়ে বাড়ি বলে কথা, সেজন্য হালকা করেই সব আয়োজন করা হয়েছে। শহিদুল সাহেব নিজেও কয়েকজন নিকট আত্নীয় এনেছেন।এখন পর্যন্ত কেউ জানে না জারা এই বাড়ির কেউ নয়,শহিদুল সাহেব নিজে বলতে নিষেধ করেছেন সবাইকে।কারণ জারিফ চৌধুরীর বাড়ির মেয়ের সাথে যে শ্রাবণের বিয়ে হচ্ছে তা শহিদুল সাহেবের সকল আত্নীয় অনেক আগে থেকেই জানেন।

তোড়া নিজের হাতে জারাকে হালকা করে সাজগোছ করে দিলো।প্রথমে তোড়া ইরা আর মিরাকে বলেছিলো সাজাতে।কিন্তু ইরা, আর মিরা নিজের মুখে বলেছে তুমিই সাজাও তোড়া।কারণ আমাদের থেকে তোমার সাজানো টাই সুন্দর হয়।তোমার শাড়ি পড়াটাও ভালো লাগে।বলতে গেলে তোমার সব কাজই একদম পারফেক্ট হয়।তোমাকে আমরা আনস্মার্ট,

আনকালচার, আরো অনেক কিছু বলেছিলাম তার জন্য সরি বলছি।তুমি আসলে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট একজন বউ।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো, আপু আজকের দিনে ওসব পুরাতন কথা না বললেই ভালো।আমি সব ভুলে গেছি।আপনারা যে আমাকে এ বাড়ির একজন যোগ্য বউ বলে ভাবছেন এটাই আমার কাছে অনেক।

আসলে ইরা,মিরা,লিরা তিন বোনই ভালো হয়ে গেছে এখন।তারা কেউ আর তোড়ার সাথে হিংসা করে না,বা তাকে আর কেউ কটু কথা শোনায় না।বরং তারা সব সময় এখন তোড়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে।
ইরা,মিরা,লিরা ঠিক করেছে সমস্ত ঝামেলা মিটমাট হলে আবার তারা তাদের শশুড় বাড়িতে যাবে।নিজের স্বামীর যা আছে সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে তারা।আর নিজেদের স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।

অন্যদিকে শাহিন,মাহিন,তুহিন তিন ভাই একসাথে একটা দোকান দিয়েছে।তিন ভাই মিলেমিশে সেখানে কাজ করছে।কুশান আর জারিফ চৌধুরী অনেক বার বলেছে তাদের বিজন্যাস টা সামলাতে কিন্তু তারা আর সেটা গ্রহণ করে নি।তারা সবসময় যেটা চেয়েছিলো আজ সেই দিন এসে গেছে তাদের।

শশুড় বাড়ির দয়ায় বেঁচে থাকার চেয়ে নিজেদের যা আছে তা নিয়ে নতুন করে শুরু করার মধ্যে যে কত খানি সুখ আজ তারা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।আসলে একজন পুরুষ মানুষের কিছু থাক বা না থাক আত্নসম্মানবোধ টা সবার আগে থাকা উচিত।

ভালো ভাবেই জারা আর শ্রাবণের বিয়ে টা হয়ে গেলো।মিসেস লাবুনি বেগম আর মিঃ শহিদুল সাহেব তাদের সাথে নিজের ছেলে আর পুত্রবধুকে বাসায় নিয়ে গেলেন।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে ছেলে এই বিয়ের জন্য এতো বেশি এক্সসাইটেড ছিলো,যার জন্য শ্রাবণ জারাকে বিয়ে করতে রাজি হলো,

যে বিয়ের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করলো সেই কুশানকে একবারের জন্যও কেউ দেখতে পায় নি আজ।এইভাবে কুশান কই চলে গেলো কেউ বুঝতে পারছে না কিছু।এতোক্ষণ সবাই ভেবেছিলো বিয়ে বাড়ির হৈ-হুল্লোড় এ হয় তো সে ব্যস্ত, কিন্তু এখন তো বিয়ে শেষ হয়ে গেছে।সব মেহমান চলেও গিয়েছে তাহলে কুশানকে দেখা যাচ্ছে না কেনো?

বিয়ে উপলক্ষে কুশান তার বন্ধুদের ও আসতে বলেছিলো।কারণ তার বন্ধুরা অনেক দিন থেকেই তোড়াকে দেখতে চাইছিলো।এজন্য কুশান ভাবলো এই সুযোগে ওদের ও আসতে বলি।কুশানের বন্ধু রা এসেই আগে কুশানের খোঁজ করলো।কিন্তু তাদের সাথেও কুশানের দেখা হলো না।অবশেষে তারা তোড়ার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে তার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে নিজেরাও চলে গেলো।

এবার তোড়ার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।এভাবে না বলে কুশান কই যেতে পারে?বিয়ে উপলক্ষে কত সুন্দর করে সেজেছিলো সে?
ব্রাউন কালারের শাড়িতে সেম সুতা দিয়ে হাতের কাজ করা কত গর্জিয়াস একটা শাড়ি পড়েসে সে।মাথায় খোঁপা করে তাতে বেলিফুল ও গুজিয়ে দিয়েছে।তোড়া যে দিকে যাচ্ছে সেই দিক থেকেই শুধু হাত ভর্তি চুড়ির ঝনঝন শব্দ আসছে।

কুশান একবারের জন্যও তোড়াকে দেখতে আসে নি আজ।কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা না।কুশান যত ব্যস্তই থাকে না কেনো অন্তত একবার হলেও তাকে দেখে যেতে পারতো।
এবার পুরো বাড়ির লোক টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।সবার মুখে এক কথা কুশান কোথায়?মুহুর্তের মধ্যে সবার আনন্দ যেনো মাটির সাথে মিশে গেলো।এতোক্ষন সবাই বেশ আনন্দেই ছিলো।

জামিলা বেগম আর তার ভাই,ভাই এর বউ,মামি এখনো কুশানদের বাড়িতেই আছে।জামিলা বেগম নিজেও ভীষণ টেনশন করতে লাগলো।যে ছেলে তার মেয়ের মানসম্মান রক্ষা করলো,তার হারানো সংসার ফিরে দিলো সেই ছেলের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য নামাযে বসে দোয়া করতে লাগলো জামিলা বেগম।

তোড়া এবার কান্দাকাটি শুরু করে দিলো।সে ধরেই নিলো নিশ্চয় কুশান বিপদের মধ্যে আছে।তা না হলে কেনো তার ফোন অফ থাকবে আর কেনো সে তাকে কিছু না বলে এভাবে উধাও হবে?…
তোড়ার কান্দাকাটি দেখে সবাই ওকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।ওদিকে মিসেস কামিনী বেগম ও কুশানের জন্য কান্দাকাটি শুরু করে দিলেন।মুহুর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির আনন্দ মাটি হয়ে গেলো কুশান না থাকায়।

মিঃ জারিফ চৌধুরী আর সুলেমান চৌধুরী এবার চুপ করে বসে না থেকে বাসার আশেপাশে খোঁজা শুরু করে দিলেন।যেহেতু সুলেমান চৌধুরীর বয়স হয়েছে সেজন্য জারিফ চৌধুরী সুলেমান চৌধুরী কে বাসাতে পাঠিয়ে দিলেন।আর তার তিন জামাই কে তিন জায়গায় পাঠালেন।কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে কুশানকে তাদের বাসার পাশের এক পুকুর পাড়ে দেখা গেলো।এক লোক অজ্ঞান অবস্থায় কুশানকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরীকে খবর দেন।জারিফ চৌধুরী আর তার জামাই রা শোনামাত্র কুশানকে নেওয়ার জন্য চলে আসে।কুশানকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে তাদের ফ্যামিলি ডাক্তার কে খবর দেয়।তখন বাজে রাত তিনটা।ডাক্তার সাহেব ঘুমিয়ে গেছেন।কিন্তু কুশানের অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে তিনি তাড়াতাড়ি করে রওনা দিলেন।

এদিকে জারিফ চৌধুরী আর শাহিন, মাহিন,তুহিন কুশানকে বাসায় নিয়ে আসে।
কুশানকে এরকম কোলে করে আনা দেখে তোড়া চিল্লায়ে দৌঁড়ে এলো।সে মনে মনে এটাই ধারণা করেছিলো।কারন কুশান কখনোই তাকে না বলে এভাবে কোথাও যেতেই পারে না।

অন্যদিকে কামিনী ছেলের এমন অবস্থা দেখে নিজেও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।এমনিতেই কামিনী ডায়াবেটিস এর রোগী তার উপর তার হাই প্রেসার,যার কারনে তিনি অল্পতেই দূর্বল হয়ে যান।একদিকে জামিলা আর সোনিয়া তোড়াকে সামলাচ্ছে অন্যদিকে ইরা,মিরা,লিরা তাদের মাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কি একটা অবস্থা হয়েছে বাড়ির প্রতিটা সদস্যের যা বলার মতো নয়। এদিকে ডাক্তার এখনো আসে নি।

কুশানকে তার নিজের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।জারিফ চৌধুরী কুশানকে বেডে শুয়ে দিয়ে ওর চোখে পানি ছিটিয়ে দিলো।কুশানের তবুও জ্ঞান ফিরলো না।হঠাৎ তোড়া দৌঁড়ে এসে কুশানের গা ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।আর চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,
কুশান?কুশান?কি হয়েছে তোমার?কুশান?কথা বলো।এই দেখো আমি তোড়া ডাকছি তোমাকে।কুশান?এই বলে চিল্লাতে লাগলো তোড়া।

সোনিয়া তা দেখে জোর করেই তোড়াকে নিয়ে গেলো সেখান থেকে।আর বললো, ভাবি ঠিক হয়ে যাবে ভাইয়া।কেঁদো না তুমি।এমনিতেই মাথা ঘুরে বসে গেছে হয় তো।
তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, কুশান আমার সাথেও কথা বলছে না।এটা আমি কি করে সহ্য করি?ও তো এভাবে কখনো আমার ডাকে সাঁড়া না দিয়ে থাকে নি।কি হলো ওর?

কুশান সেই আগের মতোই চুপচাপ। কেউ বুঝতে পারছে না আসলে হয়েছে টা কি?
কুশানকে এমন স্তব্ধ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরীর এবার আরো বেশি ভয় হতে লাগলো।সেজন্য তিনি কুশানের নাকের কাছাকাছি একটি হাত নিয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করলেন,শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না। হ্যাঁ চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস।
জারিফ চৌধুরী যেনো স্বস্তির নিঃশাস ফেললেন। সোলেমান চৌধুরী এবার নিজেও ডাকতে লাগলো,

নানু ভাই?আমার কুশান?কি হয়েছে তোর?
কুশান আজ কারো ডাকেই সাড়া দিলো না।
অবশেষে ডাক্তার সাহেব রুমে প্রবেশ করলেন।আর কুশানকে চেকাপ করতে লাগলেন।

প্রথমে ডাক্তার নিজেও কুশানের নাকের কাছে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস অনুভব করলেন।তারপর ডাক্তার সাহেব কুশানকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে কাত করে রাখলেন।কারন চিত বা উপুড় করে রাখলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এদিকে সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে ডাক্তার সাহেবের মুখে কুশানের অবস্থা জানার জন্য।ডাক্তার সাহেব কুশান কে ভালোভাবে দেখে জারিফ চৌধুরী কে সাথে করে নিয়ে একটু আড়ালে চলে গেলেন।আর বললেন,
আংকেল কুশান কি রেগুলার মদ্যপান করে?

–মদ্যপান?না তো।কুশানের তো মদ্যপানের কোনো অভ্যাস নাই।
ডাক্তার সাহেব তখন বললো তাহলে মনে হয় ফাস্ট টাইম পান করেছে।অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সে এমন বেহুশ হয়ে গেছে।তবে চিন্তার কোনো কারণ নাই।নেশা কেটে গেলে সে এমনিতেই জেগে উঠবে।
জারিফ চৌধুরী ডাক্তার সাহেবের মুখে কুশানের মদ্যপানের কথা শুনে যেনো বিদ্যুৎ এর ঝাটকার মতো শকড খেলেন।এটা কি করে হতে পারে?কুশান মদ্যপান করেছে।কিন্তু কেনো?

সবাই ডাক্তার সাহেব কে সেই একই কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। কিন্তু ডাক্তার সাহেব শুধু জারিফ চৌধুরী কেই বললেন কুশানের মদ্যপানের কথাটা।আর বাকি সবাইকে বললো,এমনিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।ভয়ের কোনো কারণ নেই।
জারিফ চৌধুরী ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলেন ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে।

কুশান যে মদ্যপান করেছে সেটা বিশ্বাস ই হচ্ছে না জারিফ চৌধুরীর। তবে কুশান যে সিগারেট খায় এটা ভালো করেই জানেন জারিফ চৌধুরী।কারণ তিনিও যখন লুকিয়ে মাঝেমধ্যে ছাদে যান সিগারেট খেতে মাঝেমধ্যে তার কুশানের সাথে দেখা হয়।যদিও দুই জন কখনোই বুঝতে দেয় নি তারা কি জন্য ছাদে এসেছে।তবে যেহেতু একজন গিয়েছে সিগারেট খেতে সেজন্য আরেকজন বুঝতে পেরেছে সেও ঠিক এই কাজেই এসেছে ছাদে।তাছাড়া অকারণে এই রাতের বেলা ঘুম বাদ দিয়ে কি জন্য আসবে এই ছাদে।

রাত গভীর হতে লাগলো।এক এক করে যে যার রুমে চলে গেলো।কুশান এখনো সেই আগের মতো শুয়ে আছে।তোড়ার চোখে আজ একটুও ঘুম নামলো না।সে কুশানের পাশে বসে ওর মাথার চুলগুলো বুলিয়ে দিতে লাগলো।আর একা একা কথা বলতে লাগলো।তোড়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে শুধু।এই মানুষ টার কিছু হলে সে নিজে বাঁচবে কি করে?তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ই তো সে?

কুশানের চুল বোলাতে বোলাতে তোড়া কুশানের মাথার পাশেই কখন যে শুয়ে পড়েছে নিজেও জানে না
ভোরের মৃদু আলো জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে সোজা তোড়ার মুখে এসে পড়লো।যার কারণে সে চোখ মিটমিটিয়ে হঠাৎ ধড়ফড় করে উঠে বসলো বেডে।কিন্তু তোড়া তো কুশানের মাথার পাশে বসে ছিলো।কিন্তু সে বিছানায় এলো কিভাবে?আর কুশান?কুশান কই?এই বলে তোড়া বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে গেলো।

কুশান হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো,
কাকে খুঁজছো?আমাকে?
তোড়া কুশানকে একদম সুস্থ সবল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর সেই আগের মতো ওর কথা শুনে একদম দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো কুশানকে।তারপর কুশানের একবার কপালে তো আরেকবার ঠোঁটে কিস করে আবার তাকে জড়িয়ে ধরলো। তোড়া কোনো প্রশ্ন করলো না এমনকি জিজ্ঞেসও করলো না কাল তার কি হয়েছিলো?সে তো কুশানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো।কিছুতেই আর ছাড়লো না কুশানকে।

কুশান তোড়াকে এমন করা দেখে বললো,
তোড়া?কি হইছে?এমন করছো কেনো?
তোড়া এবারও কিছু বললো না।
কুশান তখন তোড়ার মুখ টি উপর করে ধরে নিজেও তোড়ার ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

বিছানায় শোয়া বাদ দিয়ে চেয়ারে কেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলে?যদি পড়ে যেতে তখন কি হতো?ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম।
তোড়া তখন বললো তুমি কখন জাগা পেয়েছো কুশান?কেনো আমাকে ডাকো নি?
–তুমি ঘুমাইছিলে যার কারণে আর ডাকি নি।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী দরজাতে ধাক্কা দিয়ে তোড়াকে ডাকতে লাগলো।তোড়া তার শশুড়ের কন্ঠ শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিলো।জারিফ চৌধুরী রুমে এসে কুশানকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো,
বাবা কেমন আছিস এখন?

–কেনো কি হয়েছে?আমি তো ভালোই আছি।হেসে হেসে উত্তর দিলো কুশান।
জারিফ চৌধুরী তখন তোড়াকে বললো,তোড়া আমাদের জন্য দুই কাপ চা নিয়ে এসো তো একটু।
তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শোনামাত্র রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে জারিফ চৌধুরী কুশানকে বললো,কাল সারারাত আমরা কেউ ঘুমাতে পারি নি।তোর আম্মু তো সারারাত ভুল বকে গেছে শুধু।আর তুই বলছিস কি হয়েছে?কেনো নেশা করেছিলি কাল?না তুই রোজ রোজ ই নেশা করিস?

কুশান তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো, আব্বু জামিলা আন্টিরা কি চলে গিয়েছে?
জারিফ চৌধুরী তখন রাগ দেখিয়ে বললো আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি কুশান।আমার প্রশ্নের উত্তর দে আগে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৫

কুশান সেই কথা শুনে বললো সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না আব্বু।আর কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে অনেক কিছু পালটিয়ে যেতে পারে।আমি চাই না আমার এক টা কথায় সবকিছু পালটিয়ে যাক।সরি আব্বু।তোমার প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই আমার কাছে।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৭