আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৭

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৭
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

কেমন যেনো বিষন্নতার ছাপ কুশানের চোখেমুখে!বাহিরে ঠিকভাবে সবার সাথে কথা বললেও সে যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।সকালে নাস্তার টেবিলে বসে চুপচাপ ভাবেই কুশান নাস্তা খেয়ে নিলো,সে নিজের থেকে কারো সাথে একটা কথাও বললো না।কিন্তু তাকে নিয়ে তো বাড়ির লোকের কৌতুহলের শেষ নাই।সবার সেই একই প্রশ্ন কুশান এখন কেমন আছে?

কিন্তু কামিনী যখন হঠাৎ সেই একই প্রশ্ন নিজেও করলো, কুশান তখন কি মনে করে যেনো নাস্তার প্লেট রেখেই তার রুমে চলে গেলো।কামিনী তা দেখে চিৎকার করে করে বলতে লাগলো,
বাবা কুশান! কি হয়েছে তোর?বাবা!কিছু বলছিস না কেনো?কেনো চলে যাচ্ছিস বাবা?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কুশান তার আম্মুর এমন আবেগঘন কথা শুনেও পিছন ফিরে তাকালো না।বাসার সকল সদস্য তখন অবাক নয়নে কামিনীর দিকে তাকিয়ে রইলো।সবাই ভাবতে লাগলো কুশান কামিনীর সামান্য একটা প্রশ্নে এতো বাজে রিয়্যাক্ট কেনো করলো?হঠাৎ করে কি হলো কুশানের?

কামিনী হয় তো নিজেও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।সেজন্য সে তার মুখ টিপে ধরে নিজেও রুমের মধ্যে চলে গেলো।আর জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।
কামিনীর মেয়েরা তখন নিজেরাও দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে চলে গেলো।কিন্তু কামিনী তার মেয়েদের আসা দেখে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো, তোরা আবার আসলি কেনো?যা তোরা খাবার খেয়ে নে।আমি একটু কিছুক্ষন একা একা থাকতে চাই।

এদিকে কুশানকে রুমে যাওয়া দেখে তোড়াও কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো রুমে।তোড়া রুমে গিয়েই দেখে কুশান ঝিম লেগে বসে আছে।কেমন যেনো অদ্ভুত দেখা যাচ্ছে কুশানকে।চোখ দুটো পুরাই লাল,আর জ্বল জ্বল করছে।তোড়া তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কুশানের পাশে বসে ওর হাত টা ধরে নরম সুরে বললো,

কুশান কি হয়েছে তোমার?তুমি ঠিক আছো তো?
কুশান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো হুম।
তোড়া তখন আবার জিজ্ঞেস করলো,
আম্মুর প্রশ্নে এরকম বিহেভ কেনো করলে?কেনো উত্তর না দিয়ে এভাবে চলে এলে?আম্মু তো তোমার ব্যবহারে কান্দাকাটি করছে।

কুশান তোড়ার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ওর হাত দুটি সরিয়ে দিয়ে একটু উচ্চ কন্ঠে বললো, তোড়া তুমি কি যাবে এখান থেকে?আমার এখন কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।প্লিজ চলে যাও আমার সামনে থেকে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

আমি আবার কি করলাম কুশান?আমার সাথে কেনো এরকম বিহেভ করছো?আমি তো জাস্ট আম্মুর,,,,,,
তোড়া পুরো কথা শেষ না করতেই কুশান তোড়ার উপর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তারপর রাগ করে তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।তোড়া কুশানের এমন রিয়্যাক্ট দেখে অনেক বেশি অবাক হয়ে গেলো।

আসলে কুশানের মনে কিসের ব্যাথা সেটা কুশান ছাড়া কেউই বুঝতে পারছে না। না বোঝার ই কথা।কার মনে কিসের দুঃখ সেটা আঘাত পাওয়া ব্যক্তি ছাড়া আর কারো বোঝার ক্ষমতা নেই,যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের মুখ ফুটে বলছে অন্যকে।
এদিকে কুশানকে বাসা থেকে চলে যাওয়া দেখে জারিফ চৌধুরী চিল্লায়ে বললো, কুশান কই যাচ্ছিস?তুই কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হস নি।আজ কোথাও যাস না কুশান?

কুশান জারিফ চৌধুরীর কথাও শুনলো না।বরং দ্রুত বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।
সোলেমান চৌধুরী তখন জারিফ চৌধুরীর কাছে এগিয়ে এসে বললো,
জারিফ তোমরা কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?কুশানের আসলে হয়েছে টা কি?কেমন যেনো অন্যমনস্ক লাগছে কুশানকে।
জারিফ সোলেমান চৌধুরীর প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর বললো,
না বাবা,কই কি লুকাচ্ছি?

–না জারিফ?তোমরা সবাই আমার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছো।সত্যি করে বলো তো কাল ডাক্তার সাহেব তোমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে কি বললো?
জারিফ চৌধুরী পড়ে গেলেন মহা বিপদের মধ্যে।কারণ এই মুহুর্তে তিনি কি উত্তর দিবেন সোলেমানের প্রশ্নের।সোলেমান একজন ধার্মিক লোক।তিনি যদি শোনেন কুশান নেশা করেছিলো কাল,নির্ঘাত তার উপর ভীষণ রেগে যাবেন।তিনি এসব মোটেও পছন্দ করেন না।

–কি হলো জারিফ?কিছু তো বলো?চুপ হয়ে গেলে কেনো?
জারিফ চৌধুরী তখন বললো,আসলে বাবা,কুশানের যে কি হয়েছে সত্যি আমি নিজেও জানি না।ও বাসায় ফিরুক ওর থেকে ভালোভাবে শুনে নিবো।এই বলে জারিফ তার রুমে চলে গেলো।

তোড়া ঘরের মধ্যে বসে কান্দাকাটি করছে।এমনিতেই কাল থেকে কুশানের টেনশনে সে শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ আবার কুশানের এমন ব্যবহারে তার আরো বেশি খারাপ লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না তোড়ার।কেমন যেনো ভয়ানক একটা চিন্তায় ভিতর টা তার হু হু করে কেঁদে উঠছে।

সে শুধু ভাবছে মানুষ কেনো পুরোপুরি সুখী হতে পারে না?যখনই একটু সুখের সন্ধান পাওয়া যায় পরক্ষনেই তার পিছু পিছু দুঃখ চলে আসে।কোনো না কোনো একটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবেই হবে।এইজনই মনে হয় বলা হয়েছে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন।এই জীবনে কেউ পুরোপুরি সুখী হতে পারে না।সুখ থাকলে দুঃখ থাকবেই,আবার শান্তিতে থাকলে অশান্তিও ভুগতে হবে।

সকালের নাস্তা যদিও সবাই খেয়েছে,কিন্তু দুপুরে আর কেউ ই খাওয়ার জন্য টেবিলে গেলো না।কুশানকে নিয়ে সবাই যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।
তোড়া তার রুমেই শুয়ে আছে।সে কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো ফুলে তুলেছে একদম।কারণ কুশান তার সাথে একটু উচ্চস্বরে কথা বললেই কেনো জানি তার মন টা খারাপ হয়ে যায়,আর চোখের পানি থামতেই চায় না।
হঠাৎ ঠান্ডা কারো হাতের স্পর্শে তোড়া চমকে উঠলো।

তোড়া পাশ ফিরতেই সেই ঠান্ডা হাত দুটি তার পুরো শরীর জড়িয়ে নিলো।
তোড়া চুপ করে রইলো।সে কোনো কথা তো বললোই না,বরং বাঁধাও দিলো না কেনো তাকে জড়িয়ে ধরা হচ্ছে?
কারণ কুশানের উপস্থিতি তোড়া এমনিতেই টের পেয়ে যায়।
কুশান চুপচাপ আছে।তবে মনে হচ্ছে সে কাঁদছে।কারন দুই ফোঁটা পানির মতো কি যেনো তোড়ার ঘাড়ে পড়লো।তোড়া তা অনুভব করা মাত্র কুশানের পাশ ফিরে বললো,

কুশান?কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেনো?
কুশান তোড়ার মুখে এই কথা টা শোনামাত্র আরো জোরে তোড়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
তোড়া এখন আমি কি করবো তুমিই বলো?আমি তো কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।কাকে বলবো আমি এই কথা?আমি ভালো নেই তোড়া।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

তোড়া কুশানকে কাঁদা দেখে আর কুশানের মুখে এই কষ্ট শব্দ টা শুনে মুহুর্তের মধ্যে তোড়া যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারণ এক, কুশান কাঁদছে,আর দুই সে কষ্টের মধ্যে আছে।নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো তোড়ার মনে। কিন্তু তোড়া কোনো প্রশ্ন না করে কুশানের মুখ টা উপরে তুলে ওর চোখের পানি মুছে দিলো।

তারপর ওকে ভালোভাবে জড়িয়ে তার বুকের সাথে মিশে নিলো।কারণ সবার প্রথম কুশানকে কাঁদতে দেওয়া উচিত।কাঁদলেই সে হয় তো হালকা হবে কিছুটা।তারপর তোড়া জেনে নিবে আসলে কি হয়েছে কুশানের?কেনো সে কষ্টে আছে?
কিছুক্ষন পর কুশান নিজেই তার মুখ খুললো।কুশান এবার শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসলো।আর তোড়ার হাত ধরে বললো,

তোড়া?আমি এই পরিবারের কেউ না।আমাকে আমার নানীমনি কিনে নিয়েছে।
তোড়া এই কথা টা শোনামাত্র কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।তবুও কুশানকে জড়িয়ে ধরে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,

কার থেকে শুনেছো এসব আজগুবি কথা?এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে কুশান?আমাকেও তো আমার মামিরা বলে আমাকে নাকি পুলের নিচ থেকে কুড়ে নিয়ে এসেছে।কই আমি তো বিশ্বাস করি না এই কথা?
কুশান তখন বললো, তোড়া আমি কিন্তু সিরিয়াস।সত্যি বলছি।এটা কিন্তু ফান করার টাইম না।
তোড়া তখন বললো, কে বলেছে তোমাকে এই কথা?

–বলে নি, আমি শুনেছি।
–কার থেকে?
কুশান তখন বললো, জামিলা আন্টির মামী সেলিনা বেগম আছে না?উনি পেশায় একজন নার্স।উনি নিজে আম্মুকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছে,
তাহলে কুশানই হলো আপনার সেই পালক পোলা?
আম্মু সেলিনা বেগমের কথা শুনে ওনাকে ধমক দিয়ে বলে,কি ভুলভাল বলছেন?পালক ছেলে হবে কেনো?সে আমার নিজের ছেলে।
তখন সেলিনা বেগম বলেছেন,

আমি হলাম সেই নার্স,যার থেকে আপনার মা কুশান কে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে।সেদিন তো আপনি মৃত ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন।আপনি তো ছেলের শোকে প্রায় পাগল ই হয়েছিলেন।
আম্মু সেলিনা হকের কথা শোনামাত্র ওনার মুখ টিপে ধরে বলে,প্লিজ চুপ করুন।আর একটা কথাও মুখ দিয়ে বের করেন না।আপনি এর জন্য তো অনেক টাকা নিয়েছেন,তাহলে সেই কথা কেনো মনে করে দিচ্ছেন আবার?

সেলিনা বেগম সেই কথা শুনে বললো, আমি তো আর জানতাম না আপনারা এতো বড় লোক?আগে জানলে ডিমান্ড টা একটু বাড়িয়ে দিতাম।এখন মনে হচ্ছে সেদিন ডিমান্ড টা বেশ অল্প ছিলো।আরো কিছু পেলে তবেই মনে হয় চুপ থাকতে পারবো।

আম্মু আর সেলিনা বেগমের এইসব কথা শুনে আমি আর বাকি কথা শোনার প্রয়োজন মনে করি নি।আমি তো ভাবতেই পারছি না এই ফ্যামিলির সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্কই নাই।যাদের কে আমি এতো ভালোবাসি,যারা আমাকে এতো ভালোবাসে যখন শুনি তারা আমার আপন কেউ নয় তখন নিজেকে কি করে শান্ত্বনা দেবো তোড়া?তুমিই বলো?আমি তো বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করা উচিত?

কারণ আমি যে এই ফ্যামিলির লোকদের কে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি।যাদের কে ছেড়ে থাকা ইমপসিবল ব্যাপার।কিন্তু আমি যে মায়ের সন্তান, যে আমার আসল বাবা মা তাদের কে খুঁজে বের করাও তো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।যখন আমি তাদের কে খুঁজে বের করবো, তাদের কে বলে দিবো আমার পরিচয় তখন কি তারা সেটা বিশ্বাস করবে?আমি এখন কোন দিকে যাবো তুমিই বলে দাও।
তোড়া তখন কুশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

কুশান?প্লিজ শান্ত হও।এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।মাথা ঠান্ডা করে তোমাকে ডিসিশন নিতে হবে।আর যত কিছুই হোক তুমি তো এই ফ্যামিলির কাউকে ভুলতেও পারবে না আবার তাদের ছাড়া থাকতেও পারবে না।সেজন্য এখন তোমার সেলিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।ওনার সাহায্য নিয়ে তোমার আসল বাবা মাকে খুঁজে বের করে তোমার সাথে রাখা উচিত।দুই পরিবার একসাথেই থাকবে।তোমার তখন দুইজন বাবা মা হবে।এতে চিন্তা করার কি আছে?

কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো, এতো সহজে সমাধান করে দিলে তুমি?এতো সহজ মনে হলো ব্যাপার টা তোমার কাছে?এটা একটা অন্যায় ছিলো।মারাত্নক রকমের অপরাধ এটা।আরেকজনের বাচ্চা আরেকজনের নামে চালিয়ে দেওয়া বা চুরি করা এটা কিন্তু সহজ বিষয় নয়।যখন আমি আমার আসল বাবা মাকে খুঁজে পাবো ওনারা যদি এই সব কথা শুনে আম্মু আর আব্বুর নামে কেস করে।তখন কি হবে ভেবে দেখেছো একবার?ওনারা আমার নিজের বাবা মা না হলেও ওনাদের কে আমি প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি।চোখের সামনে ওনাদের শাস্তি আমি কি করে দেখবো?

তোড়া এবার চুপ হয়ে গেলো।হ্যাঁ ঠিকই তো কথা।এই কথা জানাজানি হলে কত বড় একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে?সবাই ছিঃ ছিঃ করবে।কামিনী কে সবাই বাচ্চা চুরির অপবাদ দিতে থাকবে।
হঠাৎ ডাইনিং রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া গেলো।মিঃ সোলাইমান চৌধুরী কাকে যেনো বকছে।তোড়া আর কুশান মিঃ সুলেমান চৌধুরীর এমন উচ্চ কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হলো রুম থেকে।

সুলেমান চৌধুরী সবার সামনে ঠাস ঠাস করে কামিনী কে চড় মারলো কয়েকটা।আর বললো, তুই যে আমার মেয়ে ভাবতেই আমার ভীষণ অবাক লাগছে।যা বের হয়ে যা বাড়ি থেকে।আসলে আমারি ভুল হয়ে গেছে তোদের নামে সবকিছু লিখে দিয়ে।আমি যখন দিয়েছি তখন আমিই সবার থেকে কেড়ে নিবো সব।
কুশান তখন দৌঁড়ে গিয়ে কামিনী কে জড়িয়ে ধরে সুলেমান চৌধুরী কে বললো, নানু ভাই?কি করছেন?আম্মুকে মারছেন কেনো?

সুলেমান তখন কুশানকে কামিনীর থেকে আলাদা করে দিয়ে বললো, তুই ঘরে যা কুশান।এই বলে সুলেমান কুশানকে সরিয়ে দিয়ে সবার চোখের সামনে কামিনী কে বললো,
যা বের হয়ে যা বাড়ি থেকে।আজ থেকে তুই এ পরিবারের কেউ না।তোকে আর আমি এই বাড়িতে দেখতে চাই না।
কামিনী হঠাৎ সুলেমানের পা ধরে বললো,বাবা প্লিজ কুশানকে কিছু বলো না।বাবা আমাকে ক্ষমা না করলে তাতে আমার কোনো আফসোস নাই।আমি চলে যাচ্ছি।তবুও কুশানকে কিছু বলো না।

কুশান কামিনীর এই অবস্থা দেখে নিজেই টেনে তুললো।আর টেনে ঘরে নিয়ে গেলো কামিনী কে।আর বললো,
খবরদার আম্মু কোথাও যাবে না তুমি।এই বাড়িতেই থাকবে তুমি।আমি কথা বলছি নানু ভাই এর সাথে।
কামিনী তা শুনে বললো, না তুই কথা বলবি না।যা বলার আমি বলবো।তুই তোর ঘরে চলে যা বাবা।না হয় কিছুক্ষনের জন্য বাহিরে যা।তোর নানুর সাথে আমার একটু পার্সোনাল কথা আছে।

কুশান তার আম্মুর কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তার আম্মু যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সেটা তো সে অনেক আগেই জেনে গেছে।আর কিভাবে লুকাবে তার আম্মু?
এদিকে বাসার সবাই সুলেমান কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।কেনো তিনি কামিনী কে এভাবে চড় মারলেন?আর কেনোই বা তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছেন?

সুলেমান চৌধুরী কোনো দিনও কোনো অন্যায় কে সাপোর্ট করেন না।তিনি কামিনীর ব্যাপার টা জানতে পেরেছেন।সুলেমান কে বলেছে কামিনী নিজেই।
কিন্তু সুলেমান চৌধুরী শোনামাত্র এভাবে রিয়্যাক্ট করবে কামিনী তা ভাবতেই পারে নি।
সবার প্রশ্নের উত্তর সুলেমান চৌধুরী দিলো না।এদিকে কামিনী আবার এগিয়ে আসলো তার বাবার কাছে।আর বললো,বাবা প্লিজ কাউকে কিছু বলো না।আমি তোমাকে বিশ্বাস করে বলতে চেয়েছি।প্লিজ বাবা।আমার ছেলেটাকে এভাবে আমার থেকে আলাদা করো না।

সুলেমান কোনো উত্তর দিলো না।অন্যদিকে জারিফ চুপচাপ হয়ে আছে।কারণ বাপ মেয়ের মধ্যে সে আর কি বলবে?কামিনী জারিফ কেও বলেছে কথাটা।কারণ কামিনী এখন নিরুপায়।সেলিনা বেগম এই কুশানকে ইস্যু করে তাকে ব্লাকমেল করছে।এতো টাকা এখন কামিনী কই পাবে যার জন্য সে প্রথমে জারিফ কে বলে।জারিফ তখন নিজে কামিনী কে তার বাবাকে বলতে বলে।কারণ আজ না হয় কাল তো জেনেই যাবে সবাই।তার চেয়ে এতো বড় একটা সত্য লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করাই ভালো।

কুশান এবার সবার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর বললো, সবাই প্লিজ এখন চুপ করো।আমি কিছু কথা বলতে চাই সবার উদ্দেশ্যে।
কুশানের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
কামিনী এগিয়ে গিয়ে বললো, বাবা কি কথা বলবি?আমাকে বল বাবা।
কুশান তখন কামিনীর হাত ধরে বললো, না আম্মু।শুধু তোমাকে না।আমি সবার উদ্দেশ্যই বলতে চাচ্ছি কথাটা।কারণ ব্যাপার টা খোলাসা করা প্রয়োজন।আমি যে এ বাড়ির কেউ না এটা সবার জানা উচিত।

কামিনী কুশানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে তার পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।সে যেনো কারো কথা শুনতে পাচ্ছে না।তার দুই কানের শ্রবন শক্তি বোধ হয় সত্যি সত্যি কমে গেছে।
এদিকে কুশান বলা শুরু করেছে।সে আর থামছেই না।কুশান সবাইকে সত্যি টা জানিয়ে দিলো।কুশান বললো,

আমাকে আম্মু আর নানী মনি টাকা দিয়ে সেলিনা বেগমের থেকে কিনে নিয়েছে।কারণ আম্মুর সেদিন মরা ছেলে হয়েছিলো।যার কারণে আম্মু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে,সেই মুহুর্তে সেলিনা বেগম নানী মনিকে এই অফার টা দেয়।যে তার কাছে একটা ছেলে সন্তান আছে।টাকার বিনিময়ে তিনি বিক্রি করতে চান।নানি মনি শোনামাত্র অফার টা গ্রহন করে।আর আম্মুর কোলে আমাকে তুলে দেয়।

কুশানের কথা শুনে পুরো বাড়ির লোকজন অবাক হয়ে গেলো।কেউ এটা বিশ্বাস করতেই পারছে না।এটা কি শুনছে তারা?
সবাই মনোযোগ দিয়ে কুশানের কথাই শুনছে শুধু।এদিকে কামিনী কখন যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে
সে দিকে কেউ খেয়াল করে নি।
কুশান হঠাৎ যখন তার আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য পাশ ফিরলো সে দেখতে পেলো তার আম্মু নাই।

–আম্মু?আম্মু?এই বলে কুশান পুরো বাড়ি খুঁজতে লাগলো।যখন দেখলো বাড়ির মধ্যে তার আম্মু নাই,তখন সে বাহিরে চলে গেলো।বাহিরেও কামিনী কে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
সুলেমান কুশানের এমন ছোটাছুটি দেখে বললো,কুশান থাম এখন।ও যেদিকে মন চায় চলে যাক।যার জন্য তুই আজ নিজের বাবা মার কাছে থাকতে পারিস নি, যে তোকে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে তার জন্য এতো মায়া দেখাতে হবে না।অন্যায় তো অন্যায়।আমি কখনো অন্যায় কে সাপোর্ট করি নি।আর তুই ও করবি না।

কুশান তখন বললো, নানু ভাই, মা তো মা ই।সে এখন নকল মা হোক আর আসল মা হোক।আম্মু আমার নিজের মা না হলেও আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন তাকেই মা বলে ডাকবো।কারণ তিনি আমাকে কখনো পরের সন্তান মনে করে বড় করেন নি।

একজন মা তার সন্তান কে যেভাবে আদর, স্নেহ দিয়ে বড় করে,আমি বলবো তার থেকেও বেশি আদর স্নেহ পেয়ে বড় হয়েছি আমি।আম্মুর ভালোবাসা আমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না।আর হ্যাঁ আরেকটা কথা। আর কোনোদিন আমার আম্মুকে চড় মারবে না তুমি,আর বকতেও পারবে না।আম্মুর গালে যে কয় টা চড় মেরেছো মনে হলো সব গুলো চড় যেনো আমার গালেই পড়েছে।আম্মুকে তুমি এই কষ্ট টা না দিলেও পারতে।

এখন যদি আমার আম্মুর কিছু হয় তখন কিন্তু আমি একদম সবকিছু ধ্বংস করে দিবো।কাউকে ঠিক থাকতে দিবো না।এই বলে কুশান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
এদিকে কামিনী রাগে,দুঃখে,আপমানে আর লজ্জায় কোন দিকে যে যাচ্ছে নিজেও জানে না সে।সব সত্য তো সবাই জেনে গেছে।এখন এই মুখ টি সে কি করে কুশানকে দেখাবে?কামিনী ধরেই নিয়েছে তার কুশান আর তাকে আম্মু বলে ডাকবে না।যখন তার কুশানই আর তাকে ডাকবে না তখন সে বেঁচে থেকে আর কি করবে?কামিনী এলোমেলো ভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো।

হঠাৎ কামিনী দের পাশের বাসার এক লোক কামিনীর সামনে এসে বললো,কুশানের আম্মু?এভাবে কই যাচ্ছো?এক্সিডেন্ট করবে তো।
কামিনীকে এভাবে কুশানের আম্মু বলায় কামিনী একদম ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।আর হঠাৎ রাস্তার মাঝখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।

লোকটি কামিনীর এমন পাগলামি দেখে তাড়াতাড়ি করে কুশানের কাছে কল করে।কুশান নিজেও কামিনী কে খুঁজতে বের হইছে।সেজন্য কল করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসে হাজির হলো।
কুশান তার আম্মুকে রাস্তায় পড়া থাকা দেখামাত্র দৌঁড়ে গিয়ে কোলে তুলে একটা গাড়িতে ওঠালো।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৬

এদিকে সুলেমান আর জারিফ চৌধুরী সেলিনা বেগমের বাড়ি চলে গেলেন।কারণ সেলিনা বেগম ছাড়া কেউ কুশানের বাবা মার কথা বলতে পারবে না।সেলিনা বেগমের বাড়ি যেতেই তাদের প্রথম জামিলার সাথে দেখা হয়ে গেলো।কারণ জামিলা নিজেও তার নানার বাড়ি থাকে।জামিলা জারিফ চৌধুরী আর সুলেমানকে দেখে সে কি খুশি?জামিলা খুশিমনে তাদের ঘরে নিয়ে গেলো।আর তাদের খাতির যত্ন করতে লাগলো।

আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৩৮