আমি মায়াবতী পর্ব ৩৩

আমি মায়াবতী পর্ব ৩৩
তাহমিনা মিনা

মায়া প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে সোহাগের দিকে তাকিয়ে বলে,”বের হয়ে যান আমার বাসা থেকে। আর কখনো এইমুখো হবেন না। আমি আপনার কাছে পড়বোও না। আপনার মুখও দেখতে চাই না আমি। চলে যান আপনি।”
সোহাগ হতভম্বের মতো তাকিয়ে বলে,”আমি আবার কি করলাম মায়া?”

মায়া প্রচন্ড ঘৃণা আর আক্রোশ নিয়ে সোহাগের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি একজন জঘন্য মানুষ। এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যান।”
মায়া সোহাগের হাত ধরে তাকে টেনে বের করার চেষ্টা করতেই কোথা থেকে তার বাবা এসে তাদের এই অবস্থায় দেখে মায়ার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে দেখে সে সম্পূর্ণ ঘেমে গেছে। তার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সে রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখে সাবিহা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমুচ্ছে। কাছেপিঠে কোথাও আজান দিচ্ছে। উফফ, তারমানে সে স্বপ্ন দেখছিল? মায়ার যেন বিশ্বাসই হতে চাচ্ছে না। এমন মনে হচ্ছিল যেন বাস্তবেই এমন হচ্ছে। যাক, এটা স্বপ্ন ছিল। মায়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে । সে ধীরে ধীরে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ শেষ করে কিচেনের দিকে গেলে দেখে আম্মা নাস্তা বানাচ্ছে। মায়ার মনে হলো আম্মাকে জানানো উচিত। একবার ভাবছে জানানো উচিত আরেকবার ভাবছে সে না জানানোই ভালো হবে। সাগরিকা মায়ার শুকনো মুখ দেখে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে মায়া? কিছু বলতে চাও আমাকে?”

“না মানে আম্মা আসলে…. ”
সাগরিকা একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। হাত ধুয়ে এসে মায়ার কাধে হাত রেখে বলে,”কি হয়েছে মায়া? আমাকে বলো।”
“আমি আসলে রিজার ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলাম আম্মা। রিজা আসলে রিজা আ.আমার আমার মনে হচ্ছে ও আসলে সোহাগ ভাইকে পছন্দ করে। সোহাগ ভাই বাসায় আসলেই ও সেজেগুজে ঘুরঘুর করে। তুমি কি লক্ষ্য করেছো? ও আসলে নিজের অজান্তেই সোহাগ ভাইকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমি জানিনা….”

“তুমি আমাকে এই কথাগুলো না বললেও আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম মায়া। আমিও লক্ষ্য করেছি। কিন্তু বলতে পারছিনা কিছুই। কিভাবেই বা বলবো? ওর মায়ের সাথেও তো এতোটা ফ্রি হতে পারিনি। তাছাড়া ওদের ধ্যান ধারণা তো আমাদের মতো না।”

” তাহলে কি করবো আম্মা? আমি কি ওর সব জিনিস ফেলে দিব? যাতে ও না সাজতে পারে?”
“বোকার মতো কথা বলোনা মায়া। এইরকম করে কিছুই হবে না। আমি আগে জানলে সোহাগকে এই বাসায় পড়ানোর জন্য বলতাম না। কিন্তু এখন তো আর ছেলেটাকে মুখের উপর বলেও দিতে পারিনা যে আমাদের বাসায় এসোনা।”
“তাহলে কি করবো আম্মা?সোহাগ ভাইকে দেখলেই রিজা এমন করবে।”

“তোমার বাবা তো অনেক বিজি এখন। তোমার ফুপিকে নিজের সম্পদ দিয়ে দিচ্ছেন। আবার তোমার কাকাদেরও দিচ্ছে। রেজিস্ট্রির কাজ শেষ হলেই রিজাকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিব। আর যে সময়ে সোহাগ আমাদের বাসায় আসে, সেই সময় ওকে অন্য কোনো কোচিং এ ঢুকিয়ে দিব। তাহলেই ওদের আর দেখা হবে না।”

“ভালো বুদ্ধি আম্মা। কিন্তু এখন এই কয়েকদিন কি করবো?”
সাগরিকা ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার কেন মনে হচ্ছে তুমি অনেক বেশিই চিন্তিত? কিছু কি হয়েছে মায়া?”

“আসলে আম্মা রিজাকে অনেক অপমান করে সোহাগ ভাই। কিন্তু বেচারি রিজা বুঝেও না কিছু। শুধু হাসে। আমার অনেক খারাপ লাগে। আমার উনার কাছে পড়তেও ইচ্ছে করেনা।”
“এখানে তো ওর কোনো দোষ নেই মায়া। বেচারা কে কেন শুধু শুধু খারাপ ভাবছো?”
“আমি জানি আম্মা। কিন্তু আমি রিজাকে অপমানিত হতে দেখতে পারিনা।”

“কবিতাকে ডেকে তুলো মায়া।ওকে নামাজ পড়তে বলো। তোমার ফুপিও উঠে পড়বে। ওর সামনে এইসব কথা বললে ও মন খারাপ করবে।”
“হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি আম্মা।”

“শোনো, মায়া, আজকে কলেজ এ না গেলে হয় না? তোমার কাকা রা আসবে। সোহাগ এর বাবাও আসবে। আজকে রান্নাবান্নাও করতে হবে। ঘরদোর গোছাতে হবে। রিজা তো পারবে না। তুমি কি একটু সাহায্য করতে পারবে?”
“কোনো সমস্যা নেই আম্মা। আমি আজকে বাসায়ই থাকবো।”
“মায়া। সোহাগও আসবে। তুমি কি রিজাকে ব্যস্ত রাখতে পারবে?”
মায়া প্রায় হতাশ গলায় বলে,”উফফ, আম্মা। আমি শেষ হয়ে যাবো এদের জন্য। ”

“তোর বান্ধবী আজ আসেনি কেন?সমস্যা কি?”
“ওর কাকা রা আসবে। ওকে যে প্রাইভেট পড়ায়, তার বাবা আর সেও আসবে। এইজন্য আসে নি ও।”
“ঐ ছেলে আসবে। তাতে ওর কি?”
“প্যাঁচপ্যাঁচ করিস না তো। বাসায় কাজ থাকে না মানুষের? কেউ বাসায় আসলে তো তোর ঘরে ঢুকতেই পারে না। যে গন্ধ করে রাখিস। আর যে নোংরা।আমাকেই তো পরিষ্কার করতে হয়।”

“তোকে কে পরিষ্কার করতে বলে আমার রুম?”
“আম্মু বলে। না হলে তোর ঘরে আমার ঢুকার কোনো ইচ্ছেই নেই।”
“কবিতা, আমার মোটেও ভালো লাগছে না। সেদিন আমি ওর চোখে মায়ার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। আমার মনে হচ্ছে মায়াকে ও ভালোবাসে। মায়া আর ও অনেকটা সময় একসাথে থাকবে। যদি মায়ার ওকে ভালোলেগে যায় ? তাহলে আমার কি হবে?”

“এইরকম কিছুই হবে না। আর মায়ার ঐ ছেলের প্রতি কোনো অনুভুতি নেই। থাকলে আমাকে অবশ্যই বলতো। অযথা টেনশন করিস না।”
” তারমানে আমার প্রতিও নেই। থাকলে তোকে অবশ্যই বলতো।”
“তোর কথা আমাকে জানাবে না। কারণ, তুই আমার ভাই। আমার কাছে বলতে লজ্জা পাবে।”

“শোন না, তুই যা না আজকে ওদের বাসায়। দেখ যদি আবার ওদের বিয়ের কথা উঠায়। আমি জাস্ট আর কিছুই ভাবতে পারছি না।”
“হাবিজাবি বলিস না প্লিজ। আজ ওদের বাসায় ফ্যামিলির মানুষ আসবে। আমি সেখানে কীভাবে যাবো? ওদের ফ্যামিলি টাইমে ডিস্টার্ব করা উচিত হবে না মোটেও।”
কাব্য চুপ করে যায়। কিন্তু বুকের ভিতরের উৎকন্ঠা দূর হয় না কোনোমতেই।

“বাবুরা কেমন আছে? দাদাভাইকে আনেননি কেন কাকা?”
সাব্বিরের প্রশ্নের জবাবে মেজোকাকা বলে,”সবাই ভালো আছে। ওরা তো আসতে চেয়েছিল। কিন্তু গাড়িতে চড়তে পারে না। তোমার দাদাভাইও পারে না। তাই আসেনি।”
“অহ। বিলে কি এখনও শাপলা আছে?”
“অনেক আছে।”

মায়া সাব্বিরের কাছে এসে বলে,’কাকাকে ডিস্টার্ব করোনা। জার্নি করে এসেছেন কাকা। রেস্ট নিতে দাও। তুমি আমার সাথে চলো।”
“সমস্যা নেই মায়া। ও থাক। অহ, মায়া৷ মইরম তোমার জন্য কিছু একটা পাঠিয়েছে আমার কাছে। বলেছে তোমাকে দিতে। আমাকে খুলতেও মানা করেছে। আর বলেছে তোমাকেই শুধু একা খুলতে। ”
মায়া একটু লজ্জা পায়। লজ্জা পেয়ে বলে,” আমি তো কিছু জানিনা কাকা।”

“অহ, ভালো কথা। ওর তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। সামনেই ওর বিয়ে। তোমাকে যেতেই বলেছে আর তোমার ফোন নাম্বার দিতে বলেছে আমার কাছে।”
“বিয়ে? মারিয়ামের? ওর বয়স কত? ওর তো বিয়ের বয়স হয়নি। এখনই কেন বিয়ে দিচ্ছে ওর?”
“ওদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালোনা মায়া। তাছাড়া গ্রামে এইসবই হয়। শুধু আনোয়ারের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করছে ভালোভাবে। ”

“অহ। আচ্ছা। সাব্বির কাকাকে বিরক্ত করোনা।”
মায়া চলে আসে রুম থেকে। মনটা খারাপ হয়ে যায় তার। বয়স কত হবে মরিয়মের? এতো কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার কি দরকার? হাতের বাক্সটার দিকে তাকিয়ে দেখে মরিয়ম পরম যত্নে বাক্সটা বেঁধে দিয়েছে। মায়া বাক্সটা নিয়ে নিজেদের ঘরে গেলে দেখে রিজা সেজেগুজে রেডি। মায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে কেন সাজছো রিজা?”

“বাসায় না মানুষ এসেছে। তাই সেজেছি। পাগলের মতো থাকলে কি ভাববে সবাই?’
‘রিজা, সেজেগুজে থাকা আর পাগলের মতো থাকা মানে কি? শহরের মানুষ এইভাবে থাকে না। মানুষ সিম্পল থাকে। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছো।”

“আমাকে দেখে কি তোমার হিংসা হচ্ছে আপু? আমাকে যে তোমার থেকেও সুন্দর দেখতে লাগছে তাই?সোহাগ ভাই যে রোজরোজ আমার দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করে, তাই কি তোমার হিংসা লাগে?তাহলে তুমিও সাজো না।”

আমি মায়াবতী পর্ব ৩২

“কিহ? কি বলছো তুমি এইসব?” রিজার কথায় মায়ার হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছিলো। খাটের উপর বসে থাকা সাবিহা অবাক হয়ে রিজার দিকে তাকিয়ে আছে। এ কোন রিজাকে দেখছে তারা? তবে কি এটাই সত্যি যে ভালোবাসলে মানুষকে অন্ধ হতে হয়? অবিবেচক হতে হয়?

আমি মায়াবতী পর্ব ৩৪