আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩২

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩২
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

অনেক ভেবেচিন্তে মেঘ একটা প্ল্যান করেছে। আবির ভাইয়ের জন্মদিনের দিন ই সে আবির ভাইকে নিজের ভালোবাসা র কথা বলবে। হ্যাঁ হোক বা না সে এই লুকোচুরির সমাধান চাই। অষ্টাদশী যতটা উত্তেজিত ঠিক ততটায় আতঙ্কিত। মনটা শুধু কু গাইছে। সকাল থেকে বন্যা কে কম করে হলেও ১০০ বার কল করেছে।

মেঘ বিশাল এক লিস্ট তৈরি করেছে কিন্তু শপিং করতে সে যাবে কিভাবে! গতকাল ই রেজাল্ট দিল। এই অবস্থায় শপিং এ যাবে বললে আব্বু কি করবে আল্লাহ জানেন। আলী আহমদ খান আর মালিহা খান সকাল থেকে বেশ কয়েকবার মেঘকে বুঝিয়ে গেছেন। কিন্তু সেসব শুধুই পড়াশোনা নিয়ে। শপিং এ যেতে দিবে কি না! আবার যেতে দিলেও যদি আম্মু বা বড় আম্মু সঙ্গে যায় তাহলে তো আবির ভাইয়ের জন্য কিছুই নিতে পারবে না সে।
বিকেলের দিকে আবারও বন্যা কে কল দিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেঘঃ আমি কি করবো বল না, প্লিজ।
বন্যাঃ তোকে তো বললাম, তুই বাসা থেকে বের হলে আমায় জানাইস আমি শপিং এ যাব তোর সাথে । কিন্তু বাসায় বসে থেকে কি করব, কি করব করিস না।
মেঘঃ বাসা থেকেই তো বের হতে পারবো না।
বন্যাঃ তাহলে একটায় উপায় আছে৷ অনলাইনে অর্ডার করতে পারিস৷
মেঘঃ সেটা কিভাবে করে? আমি তো কখনও করি নি।
বন্যাঃ আমিও করি নি। কিন্তু আপু মাঝে মাঝে অনলাইনে কেনাকাটা করে। কিন্তু বিস্তারিত জানি না৷
মেঘঃ এখন কি করব?

বন্যাঃ তোর ভাইকে জিজ্ঞেস করতে পারিস।
মেঘঃ ভাইয়া কে বলার সাহস নাই আমার। যদি জিজ্ঞেস করে কি আনবো বা বলে আমি এনে দেয়, তখন?
বন্যা চিন্তিত স্বরে বলল,
সেটাও হতে পারে। কিন্তু কিছু করার নেই। বের হতে যেহেতু পারবি না তাহলে রিস্ক তো নিতেই হবে। আর না হয় বাদ দে৷
মেঘ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,

“বাদ দিতে পারবো না। আমার জানতেই হবে ওনি কাকে ভালোবাসেন।”
বন্যা পুনরায় বলল,
“যদি বলেন জান্নাত আপুকে ভালোবাসেন তখন কি করবি?”
মেঘের কন্ঠস্বর ভিজে আসছে, ভেজা কন্ঠে বলল,

“তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ই ভর্তি হবো, সেখানের হোস্টেলে চলে যাব। আর বাসায় ফিরবো না। চোখের আড়াল হলে ধীরে ধীরে হয়তো আবির ভাই মনের আড়ালও হয়ে যাবেন।”
শেষ কথাটুকু বলে কান্না শুরু করে দিয়েছে। বন্যা কিছু বলার আগেই কল কেটে দিয়েছে মেঘ।
রাত ১০ টার দিকে মেঘ তানভিরের জন্য বেলকনিতে পায়চারি করছে। তানভির কে কিভাবে কি বলবে সেই শব্দগুলো সাজাচ্ছে। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেছে তানভির ফিরছে না। কিছু একটা ভেবে মেঘ আবিরের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

দরজায় দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল,
“আসবো?”
আবির ফোনে কথা বলছিল, মেঘের কন্ঠ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ফোন কানে রেখেই বলল,
“আয়।”
মেঘ বিছানার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে কে যেনো কি বলেছে,
আবির উচ্চস্বরে হেসে উত্তর দিল,

” আমার চিন্তা না করে এখন নিজের চিন্তা করো। রাখছি। ”
কল কেটে মেঘের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“কিছু বলবি?”
আবির ভাইয়ের ফোনে বলা কথাটা মেঘের মাথায় ঘুরছে। এক মুহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কার সাথে কথা বলছিল, কিসের কথায় বা বলছিল? মেঘ এসব ভাবনায় মগ্ন।
আবির কপাল কুঁচকে ভারী কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“কি হয়েছে? কথা বলছিস না কেন?”
মেঘ নড়ে উঠল। শীতল কন্ঠে বলল,
“অনলাইনে শপিং কিভাবে করে?”
মেঘের এমন প্রশ্ন শুনে আবির ভ্রু জোড়া কপালে তুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। আবির ভেবেছিল এখনও হয়তো রেজাল্টের চিন্তায় মেঘ মন খারাপ করে আছে। কিন্তু সে যে রেজাল্টের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে শপিং করার কথা ভাবছে বা শপিং করতে চাচ্ছে এতে আবির খুব খুশি হয়েছে।
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,

“কি লাগবে বল৷ আমি এনে দিব নে৷ ”
মেঘ মাথা নিচু করে জানাল,
“আমায় শিখিয়ে দিবেন, প্লিজ। ”
আবির নিজের ফোন থেকে কিছু টাকা মেঘের নাম্বারে দিয়ে, শপিং এর সিস্টেম বুঝিয়ে দিয়েছে।
মেঘ চলে যেতে নিলে আবির ভারী কন্ঠে বলল,
“দাঁড়া ”

মেঘ দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরেছে। আবির নিজের ওয়ালেট থেকে একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে মেঘের দিকে এগিয়ে দিলো।
আবির পুরু কন্ঠে জানাল,
“এই কার্ড টা আমার ছিল। আজ থেকে এটা তোর। যখন যা ইচ্ছে কিনতে পারিস।”
সাথে ক্রেডিট কার্ড এর পিন নাম্বার টাও বলে দিয়েছে। আবিরের এমন কান্ডে মেঘ আশ্চর্য বনে গেল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, বৃহৎ নয়নে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবির বড় করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ভ্রু গুটিয়ে বলল,

” এভাবে তাকাইস না, প্লিজ।”
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে । আবির নিশ্চুপ চেয়ে আছে তার প্রিয়তমার যাওয়ার পানে।

আজ রাত ১২ টায় আবিরের জন্মদিন৷ বন্ধুরা আবিরকে আঁটকে রেখেছে। আবির কখনো জন্মদিন পালন করে না৷ কিন্তু এতবছর পর বন্ধুর জন্মদিনের সময় বন্ধুকে কাছে পেয়েছে৷ তাই সবাই মিলে প্ল্যান করেছিল, তানভির কেও আগে থেকে সবকিছু জানিয়ে রেখেছিল। কাছের ৪ বন্ধু আর তানভির বাদেও আরও ২০ জন বন্ধু আসছে। ওদের সাথে তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না ৷ আবিরের জন্মদিন উপলক্ষে সবগুলো প্ল্যান করেই আসছে।

বিশাল বড় কেক সাথে গিফট, পার্টি স্প্রে সব নিয়ে আসছে। ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব না বলে রাত ১০ টার পরেই কেক কে*টে ফেলছে।বন্ধুদের হৈ-হুল্লোড় শেষে সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় গেছে। খাওয়াদাওয়া শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে আবির আর তানভির বাসার দিকে চলে আসছে । ঘড়ির কাঁটা যখন ঠিক ১২ টায়, তখন আবির আর তানভির বাসায় ঢুকেছে৷ বাড়ির সবাই অনেক আগেই ঘুমিয়ে পরেছে।

খান বাড়িতে কখনোই কারো জন্মদিন পালন করা হয় না। তাই জন্মদিন আর অন্য দিনের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। হাতে বন্ধুদের কিছু গিফট নিয়ে আবির রুমের দিকে যাচ্ছে। তানভিরও রুমে চলে গেছে। আবির মেঘের রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো, একবার তাকিয়ে দেখলো। নিচ থেকেও তাকিয়ে দেখেছে বেলকনিতে মেঘ ছিল না, দরজাও চাপানো, লাইট অফ। প্রতিদিন অপেক্ষা করলেও আজ মেঘ ঘুমিয়ে পরেছে৷ এটা ভেবে আবিরের মন কিছুটা খারাপ হলো। যত ব্যস্ত ই থাকুক না কেন, আবিরের মাথায় সবসময় থাকে, বাসায় কেউ একজন তার অপেক্ষা করছে। ভাবতেও ভাল লাগে৷ তবে আজ তার ব্যতিক্রম ঘটলো। আবির কয়েক মুহুর্ত থেমে আবার নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

এক হাতে গিফট গুলো নিয়ে অন্য হাতে দরজা ধাক্কা দিতেই আশ্চর্য নয়নে তাকালো। রুম জুড়ে মাটির প্রদীপ জ্বলছে। বিছানার উপর একটা কেক রাখা, তার আশেপাশে ছোট বড় বেশকয়েকটা গিফট বক্স৷।
অকস্মাৎ মেঘ পাশ থেকে একগুচ্ছ লাল রঙের গোলাপ আবিরের সামনে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“Happy Birthday Abir Vai ”

একটা সাদা রঙের জামা পরনে, চুলগুলো ছাড়া এই কয়েক মাসে মেঘের চুলগুলো বেশ লম্বা হয়ে গেছে, চোখে ঘাড় করে কাজল দেয়া, ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিকও লাগিয়েছে আজ ৷ রুম জুড়ে জ্বলজ্বল করা প্রদীপের আলোতে মেঘকে দেখে আবির বশিভূত নয়নে তাকিয়ে আছে। বুকের বা পাশে থাকা হৃদপিণ্ডের তীব্র স্পন্দন জানান দিচ্ছে, খুব শীঘ্রই একটা অঘটন ঘটতে যাচ্ছে। আবির ফুলগুলো হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

কিন্তু হৃদপিণ্ডের ছুটোছুটি কমছে না বরং দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। মেঘও তাকিয়ে আছে আবিরের মুখের পানে। আবির ভাইকে দেখে সবসময়ের মতো আজও মেঘের হৃৎস্পন্দন জোড়ালো হলো। আবিরের মোহময় দৃষ্টি তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। মাথায় থাকা প্রশ্ন গুলো ভুলতে শুরু করেছে৷ মেঘের কাজল দেয়া চোখ আবিরকে নিয়ন্ত্রণহীন করে তুলছে।
আবির হাতে থাকা গিফট গুলো ড্রেসিং টেবিলে রাখতে রাখতে গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,

“এসবের মানে কি?”
আবিরের কন্ঠস্বরে মেঘ স্বাভাবিক হলো৷ মাথা নিচু করে ফেললো সঙ্গে সঙ্গে। কিছুই বলল না। নিস্তব্ধতায় কাটলো কিছুক্ষণ। আবির ফুলগুলোতে আলতো হাতে ছুঁয়ে সেগুলো বিছানার উপর কেকটার পাশে রেখে একটা টাওজার নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেছে। আবির চলে যাওয়ায় মেঘ ধপ করে বিছানার পাশে বসে পরেছে। আবির ভাই কিছু না বলেই চলে গেছেন৷ আল্লাহ জানে আজ কপালে কি আছে।

আবির ভাই যদি কেক ফেলে দেন, যদি আবারও থা*প্পড় দেন আনমনে হাবিজাবি ভাবছে ৷ মেঘ বুঝতে পারছে না, আবির ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করবে নাকি রুমে চলে যাবে। ৫-৭ মিনিট বসে থেকে মেঘ সিদ্ধান্ত নিলো, রুমে চলে যাবে। তারপর আবির ভাই যা করার করতে থাকুক।
মেঘ উঠে কয়েক পা এগোতেই আবির ওয়াশরুমের দরজা থেকে বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস, কেক কাটবো না?”

মেঘের পা থেমে গেছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরেছে সেখানেই । আবির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটা সাদা রঙের টিশার্ট পরেছে। হয়তো ইচ্ছে করেই পরেছে। ভেজা চুল গুলো থেকে এখনও পানি পরছে৷ তবে মুছার চেষ্টাও করছে না। মেঘের কাছে এসে দাঁড়াতেই মেঘ কিছুটা কেঁপে উঠলো,এই বুঝি থা*প্পড় টা মা*রবেন। নিজেকে বাঁচাতে সহসা দুহাতে দুগাল চেপে ধরলো।

অষ্টাদশীর কান্ড দেখে আবির নিজের ভ্রু যুগল নাকের ডগায় টেনে নিল। স্বভাব সুলভ তপ্ত স্বরে বলল,
“এসব করার জন্যই সেদিন অনলাইনে শপিং শিখতে এসেছিলি?”
মেঘ মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির পুনরায় বলল,
“অনেক সুন্দর সাজিয়েছিস। অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে এটায় যেনো লাস্ট টাইম হয়। আমার জন্মদিন পালন করা ভালো লাগে না। আর এই বাড়িতে এসব কিছু চলে না। প্রথমবার পা*গলামি করেছিস তাই কিছু বললাম না। ”

মেঘ আবিরের মুখের দিকে তাকিয়েছে। আবির তখনও তাকিয়েই ছিল৷ দ্বিতীয় বার সেই কাজল কালো চোখে চোখ পরায় আবির সঙ্গে সঙ্গে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বিছানার কাছে চলে গেলো। এই চোখে দীর্ঘসময় তাকালে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সে। মেঘ ও আবিরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তবে মনে থাকা প্রশ্ন গুলো করার বিন্দুমাত্র সাহস অবশিষ্ট নেই। তাই ভাবল, আজকের মতো কেক কেটে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচি।

আবির কেক কেটে প্রথমেই মেঘকে অল্প একটু খাইয়ে দিল। যথারীতি মেঘও খাইয়ে দিয়েছে। ফুচকা খাওয়ানোর পর আজ আবির ভাইয়ের মুখে তুলে কেক খাওয়াতে গিয়েও মেঘের সেই পূর্বের অনূভুতি কাজ করছে। আবির নিচু হয়ে বাকি কেক টা কাটছিল আচমকা মেঘের আঙুলে লেগে থাকা ক্রিম দু আঙ্গুলে আবিরের গালে ছুঁইয়ে দৌড় দিতে নিলে এক সেকেন্ডেই আবির হাত চেপে ধরে ফেলল। আবির ঘুরে দু পা এগিয়ে মেঘের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো৷ আবির ভাইয়ের কাছে আসাতে মেঘ আ*তঙ্কে দু পা পিছালো৷ আবিরের হাতে মুঠোয় থাকা নিজের হাতটা ছুটানোর খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু আবির শক্ত হাতে ধরে রেখেছে।

আবির এক পা এগুচ্ছে আর মেঘ এক পা পিছাচ্ছে। মেঘ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলছে,
“আর জীবনেও এমন করবো না। প্লিজ এবারের মতো ছেড়ে দেন। ”
আবির তপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। মেঘ পেছাতে গিয়ে অনুভব করলো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তার। আবিরের হাতে থাকা মেঘের হাতটা দেয়ালে চেপে ধরে, একটু নিচু হয়ে অপর হাতে ছুঁয়ে দিলো অষ্টাদশীর গাল। মেঘ গালে ক্রিম লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে আবির কেকের উপর হাত রেখে সবটুকু ক্রিম নিজের হাতে লাগিয়েছিল। সেটায় মেঘের দু গালে লাগিয়ে দিয়েছে।

মেঘের হাত-পা কাঁপছে। আবির মাথা নিচু করাতে ভেজা চুলগুলো কপালে পরেছিল। আবির অকস্মাৎ মাথা ঝাঁকাতে কপালে থাকা চুলগুলো কিছুটা সরে গেছে। সাথে সাথে চুলের পানি ছিটকে পরেছে অষ্টাদশীর চোখে মুখে। সহসা দুচোখ বন্ধ করে ফেলেছে মেঘ।
আবির বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল,

“আর কত জ্বালাবি? তুই কি একটুও শান্তি দিবি না আমায় ? যা না করতে বলি তাই বেশি বেশি করিস, চোখে কাজল দিতে না করেছিলাম, তারপর ও কেনো দিয়েছিস? আমার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করতে কেনো উঠেপড়ে লেগেছিস? ”

আবির বুঝতে পারছে মেঘের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আবিরের হাতে থাকা হাতটা খুব জোরে কাঁপছে। অষ্টাদশীর সম্পূর্ণ দেহ তীব্রভাবে কম্পিত হচ্ছে। আবির আপাদমস্তক দেখলো একবার৷ আবির মেঘের হাতটা ছেড়ে দু পা পিছিয়ে গেলো। আবির দূরে সরাতে মেঘ যেনো হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে রুম থেকে ছুটে পালালো। আবিরও দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গেলো। ততক্ষণে মেঘ নিজের রুমে চলে গেছে। আবির বিছানায় বসে ফুলগুলো হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকে দীর্ঘ চুমু এঁকে দিল। হাত ধৌয়ে এসে ধীরে ধীরে সবগুলো গিফট খুলে দেখলো। অনলাইনে ছেলেদের জন্য যা যা পেয়েছে সবই নিয়ে নিয়েছে। সবগুলোই মোটামুটি সুন্দর ছিল। আবির জিনিসগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।

আজ শুক্রবার, সেই রাতের পর মেঘ আর আবিরের সামনে পরে নি। ভ*য়ে, আতঙ্কে, নিজেকে রুমের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। আব্বুর সামনেও যায় না। দুপুরের দিকে যেই না রুম থেকে বের হতে যাবে তখনই আবিরের মুখোমুখি হলো। আবির নামাজের জন্য বের হইতেছিলো। মেঘকে দেখে থামলো, মৃদুস্বরে বলল,
“নামাজ পরে রেডি হইস৷ একটা প্রোগ্রামে নিয়ে যাব তোকে। ”
মেঘ আস্তে করে বলল,

“কিসের প্রোগ্রাম? ”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে উত্তর দিল,
“সেটা গেলেই বুঝতে পারবি। রেডি হয়ে বের হয়ে পরিস। আমি বাহিরে ই থাকবো। ”
মেঘ আর কিছু বলল না। আবির টুপি মাথায় দিতে দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছে। আবিরের কথামতো নামাজ পরে মেঘ একটা গর্জিয়াছ ড্রেস পরে সুন্দর করে সেজেছে। তবে আজ ভুল করেও সে কাজলে হাত দেয় নি। ঘন্টা দুয়েক পর মেঘ রুম থেকে বেড়িয়েছে৷ বিকেল বেলা ড্রয়িং রুম সবসময় ফাঁকা থাকে৷ তাই কারো কোনো প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় নি তাকে। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুটা যেতেই চোখে পরলো আবির ভাই দাঁড়িয়ে আছে। প্রতি শুক্রবারের মত আজও পাঞ্জাবি পড়েছেন তবে আজকের টা একটু গর্জিয়াছ। মেঘ কাছাকাছি আসতেই আবির মৃদু হেসে বলল,

“মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।”
মেঘ মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বলল,
“আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। ”

আবির কথাটা শুনে নিঃশব্দে হেসে হেলমেট পরে নিলো৷ তারপর মেঘকেও নিজের হাতে হেলমেট পড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিল। ৩০ মিনিটের রাস্তা জ্যাম পেরিয়ে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে পৌছেছে। বাইক পার্ক করে মেঘকে নিয়ে ঢুকলো একটা কমিউনিটি সেন্টারে। মেঘ কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ভ*য়ে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। তাই বাধ্য মেয়ের মতো আবিরের পিছন পিছন গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩১

কিছুদূর যাওয়ার পরই চোখ পরলো স্টেজের দিকে। অসংখ্য ফুল দিয়ে সাজানো সুন্দর একটা স্টেজে লাল লেহেঙ্গা পরে বউ বেশে বসে আছে এক সুন্দরী ৷ ওনার পাশে জামাই সেজে এক সুদর্শন এক পুরুষ বসে আছে৷ ফটোগ্রাফার বিভিন্ন স্টাইলে তাদের ছবি তুলায় ব্যস্ত। মেঘ স্টেজের দিকে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখে চমকে উঠে বলল,
” জান্নাত আপু ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৩