আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৩

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৩
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

মেঘ তাড়াহুড়ো করে আইসক্রিম শেষ করেছে। দুঃশ্চিন্তায় আইসক্রিম টাও শান্তিমত খেতে পারে নি৷ একদৃষ্টিতে আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু আবিরের দৃষ্টি অন্য কোথাও। আবির নিরবধি আকাশের পানে চেয়ে আছে, রাস্তার পাশে থাকা লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, আবিরের চোখমুখের উজ্জ্বলতা বিলীন হয়ে গেছে। বিকেলে আসার সময় যতটা উৎফুল্ল আবির ভাইকে মেঘ দেখেছিল, এই আবির ভাই যেন অন্য কেউ, চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ৷ মেঘ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।
আবির শোণিত কন্ঠে বলে উঠল,

” এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলো মা। সেই মায়ের লা*শ দেখার বা ছোঁয়ার অধিকার যদি কোনো সন্তানের না থাকে তাহলে সেই সন্তান পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও মৃত।”
মেঘের ভ্রু কুঁচকালো। আবির ভাই কি বলছে, কি বুঝাতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। আবির অসীম দূরত্ব থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“যে মানুষটাকে দেখে এসেছিল, তিনি আর কেউ নয় তোর, আমার, আমাদের সবার একমাত্র ফুপ্পি ”
এই কথা শুনামাত্র মেঘের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে, মেঘ চিৎকার দিয়ে উঠল,
” কি? ”
আবির সরু নেত্রে তাকিয়ে আছে। মেঘের চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। এই কথা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ জন্মের পর থেকে মেঘ জেনে এসেছে তাদের বাবা-চাচা তিনজন। ১৮ বছর পর হঠাৎ করে ফুপ্পি আসবে কোথা থেকে! আচমকা এমন কথা শুনলে বিশ্বাস করবে না এটায় স্বাভাবিক।
আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” আমি জানি তুই বিষয়টা এত সহজে মানতে পারবি না কিন্তু কিছু সত্যি কঠিন হলেও মানতে হবে। ”
মেঘের দম বন্ধ হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, গলা দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না৷ এতক্ষণ যাবৎ কত প্রশ্ন ই মাথায় ঘুরছিল এক মুহুর্তেই যেন সব প্রশ্ন উধাও হয়ে গেছে।
মেঘ আতঙ্কিত কন্ঠে শুধালো,

“আপনি কি আমার সাথে মজা করতেছেন? প্লিজ সত্যি করে বলুন ওনি কে? ”
আবির কপাল কুঁচকে ভারী কন্ঠে বলল,
” তোর সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক? আর সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আমি মজা কেন করব? ওনার নাম মাহমুদা খান আমিনা। নাম শুনে কি মনে হচ্ছে তোর? ”
মেঘ এখনও অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। ঢোক গিলে ভারী কন্ঠে বলল,

” আপন ফুপ্পি?”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,
“হ্যাঁ! আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খানের একমাত্র ছোটবোন এবং ইকবাল খানের একমাত্র বড় বোন। ”
মেঘের দু’কান দিয়ে হিজাবের উপর দিয়েই গরম বাতাস বের হতে শুরু করেছে। নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে বারবার ৷ আবির ভাই তো মজা করার মানুষ না। আর ওনার চোখমুখ দেখে মনেও হচ্ছে না যে ওনি মজা করছেন। আর বিয়েতে ঐ মহিলার আচরণও বুঝিয়ে দিচ্ছিলো ওনার সাথে গভীর কোনো সম্পর্ক আছে৷ তাহলে কি ওনি সত্যি সত্যি ফুপ্পি হোন ! এত বড় কথাটা কোনোদিন ও শুনলো না । কিন্তু কেন?
মেঘ ভাবনাচিন্তা করে প্রশ্ন করল,

“এত বছরে কোনোদিন তো ওনাকে আমাদের বাসায় যেতে দেখি নি। আব্বুদের আপন বোন হলে বাসায় যান না কেন?”
আবির মৃদু হাসল, ভরাট কন্ঠে বলল,
“ওনাকে বাসায় যেতে দেখবি কিভাবে! তোর জন্মের প্রায় ১০ বছর আগে ওনি খান বাড়ি ছেড়েছেন। ২৭ বছর হবে ঐ বাড়িতে পা পড়ে নি ওনার। ”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“কেন? কি হয়ছিল?”
আবির শান্ত কন্ঠে বলা শুরু করল,

ফুপ্পি যখন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো তখন ফুপ্পির একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পুরো ঘটনা আমি জানি না, তবে বাসায় বিষয় টা জানাজানি হয়ে গেছিল। তখন আমার আম্মু নতুন বউ, বছরখানেক হবে আম্মুর বিয়ে হয়ছে। তোর আম্মুর তখনও বিয়েই হয় নি। ফুপ্পির এই ঘটনা জানার পর আব্বু আর চাচ্চু ফুপ্পিকে মে*রে,একটা রুমে ৩ মাস দরজা বন্ধ করে আটকে রাখছিল। তখন দাদু বেঁচে ছিলেন,তবে অসুস্থ ছিলেন, কথাও বলতে পারতেন না। আম্মু দাদুর যত্ন করতো আবার, ফুপ্পির দেখাশোনাও করত।

ফুপ্পি আম্মুর হাতে পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছে , কিন্তু আম্মুর কিছুই করার ছিল না। ৩ মাস ফুপ্পির উপর দুই ভাই অত্যাচার করেছে যেনো ঐ ছেলেকে ভুলে যায়। এক পর্যায়ে ফুপ্পি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়, ধীরে ধীরে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পরছিল। চিকিৎসা করে ফুপ্পিকে কিছুটা সুস্থ করার পর, ফুপ্পি বাড়ি থেকে চলে গেছিল। ভাইদের অত্যাচারে সেই যে বাড়ি ছাড়ছিল আর কোনোদিন বাড়িতে ঢুকতে পারে নি। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ফুফা কে বিয়ে করে বছরখানেক ঢাকাতেই ছিল।

চিঠির মাধ্যমে আম্মুর সাথে কয়েকবার যোগাযোগ ও করেছিল। ফুপ্পি বাড়ি ছাড়ার ১ বছরের মাথায় দাদু মারা গেছেন। ভাগ্যক্রমে তখন মেজো মামা আমাদের বাসায় ছিল। ঢাকা চাকরির পরীক্ষা দিতে আসছিল। আম্মু মেজো মামাকে ফুপ্পির বাসার ঠিকানা দিয়ে দাদুর মৃত্যুর খবর পাঠাইছিল৷ এই কথা আব্বুরা কেউ জানতো না। ফুপ্পি, ফুফা দু’জনেই আসছিল দাদুকে দেখতে, তখন আসিফ ভাইয়া ফুপ্পির পেটে ছিল। খান বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতেই আব্বুর চোখ পরে দরজায়।

চিৎকার দিয়ে, এক সেকেন্ডেই দাদুর লা*শ চাদর দিয়ে ঢেকে রান্নাঘর থেকে দা নিয়া বের হইছিলো। যদি ফুপ্পি চৌকাঠ পার হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে খু*ন করে ফেলবে। বাড়ি ভরা মানুষ থাকায় আব্বুকে আর চাচ্চুকে সবাই আটকিয়ে রাখছিলো। না হয় সেদিন খু*নাখু*নি হয়ে যেত। কত কত মুরব্বিরা উপস্থিত ছিল কিন্তু আব্বুর মাথা সেদিন কেউ ঠান্ডা করতে পারে নি। দাদুর লা*শ ছোঁয়া তো দূর, ফুপ্পিকে লা*শ দেখতে পর্যন্ত দেয় নি। লা*শ দাফন করে বাড়িতে পা রেখে প্রথম প্রশ্ন টায় করেছিলেন,

“আমিনারে খবর দিছে কে ?”
মায়ের মৃত্যুর শোকের থেকেও সেদিন হাজার গুণ বেশি তীব্র ছিল ওনার রা*গ । কোনোভাবে জানতে পারছে আম্মু খবর পাঠাইছে, সেইদিন সেই অবস্থাতেই আম্মুকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। অথচ ফুপ্পি ওনার ই মায়ের পেটের বোন। সেই বোনকে খবর দেয়ার শাস্তিস্বরূপ আম্মুকে ২ মাস নানা বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। একদম সংসার ভাঙার পর্যায়ে চলে গেছিলো৷ তখনকার সময়ে সংসার ভাঙা আম্মুর পক্ষে বা নানা বাড়ির মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না।

তারপর নানা, বড় মামা, আত্মীয় স্বজনরা অনেক বুঝিয়ে ২ মাস পরে আম্মুকে বাসায় নিয়ে আসছে। আব্বুর শর্ত একটায় ছিল আর কোনোদিন ফুপ্পির সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। নিজের সংসার বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল আম্মু। মেজো মামা ফুপ্পির বাসায় গিয়ে সব ঘটনা বলে আসছিল৷ সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত ফুপ্পির সাথে বাসার কারো যোগাযোগ নেই। ”
মেঘ এতক্ষণ যাবৎ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে আবিরের মুখে পানে তাকিয়ে ছিল৷ নিজের বাড়িতে এতবড় রহস্য লুকিয়ে আছে অথচ সে কিছুই জানে না।
আবির গলা খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” তুই আমায় পা*ষাণ, হি*টলার বলিস। অথচ আমার থেকেও বড় মাপের হি*টলা*র এতবছর যাবৎ খান বাড়িতে রাজত্ব করে আসছেন। যাদের কথার উপর কারো কথা চলে না, যাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারে না। ফুপ্পি নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার অপরাধে মায়ের লা*শ দেখার অধিকার টা পর্যন্ত হারিয়েছেন। ২৮ বছর যাবৎ বাবার বাড়ি পা রাখতে পারেন না। কতটা নিষ্ঠুর হলে মানুষ এমন কাজ করতে পারে!”
মেঘ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করল,

“আপনি ফুপ্পিকে কিভাবে চিনেন?”
আবির শ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলা শুরু করল,
” আমি ওনার সম্পর্কে জানতাম না। ছোটবেলা একবার আম্মু পুরাতন জিনিস পত্র বের করছিলেন, তখন একটা অ্যালবাম বের হয়ছিল। আমি অ্যালবাম টা খুলে দেখছিলাম। আম্মু আব্বুর বিয়ের ছবি থেকে শুরু করে দাদা-দাদুর, চাচ্চুর মোটামুটি অনেকের ছবিই ছিল। যেহেতু ছোট ছিলাম, আগ্রহ নিয়ে ছবিগুলো দেখছিলাম৷ আর সবাইকে চেনার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ কয়েকটা ছবি চোখে পরে। ছবিগুলো দেখে চিনতে পারছিলাম না বলে আম্মুকে জিজ্ঞেস করছিলাম, আম্মু কিছু বলার আগেই আব্বু রুমে চলে আসছিল।

আব্বু আমার হাত থেকে অ্যালবাম নিয়ে আমায় পড়তে বসতে বলেন। আমিও চুপচাপ পড়তে চলে গেছিলাম এই বিষয়ে আর ভাবি নি। তার কয়েক বছর পর, দেশ ছাড়ার আগে আব্বু আম্মুর কিছু কাগজ পত্রের দরকার ছিল৷ আমি তখন আব্বুর ফাইলে কাগজ খুঁজছিলাম। তখন একটা ফাইল চোখে পরে। ঐ ফাইলে সার্টিফিকেট, ছবি আরও কিছু কাগজপত্র ছিল। মাহমুদা খান আমিনা নামটা আমি প্রথমবার সেখানেই দেখছিলাম৷ বাবা মায়ের নামের জায়গায় দাদা-দাদুর নাম লেখা ছিল। ছবিগুলো দেখে ছোটবেলায় অ্যালবামে দেখা ছবিগুলোর কথা মনে হয়ছিল। আমি সেখান থেকে একটা ছবি নিয়ে গেছিলাম।

আম্মুকে একবার জিজ্ঞেস ও করেছিলাম, কিন্তু আম্মু বলছেন আম্মু কিছু জানে না আর এই বিষয়ে যেনো আর কোনোদিন কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করি। তখন কিছুদিন আমার মাথায় বিষয়টা ঘুরছিল। পরে ভাবছি হয়তো মারা গেছেন তাই আম্মু জানে না বা জিজ্ঞেস করতে না করেছেন। বিষয়টা সেখানেই ভুলে গেছিলাম। কিন্তু ছবিটা যে আমার কাগজপত্রের সাথে চলে গেছিল এটা আমি জানতাম না। ঐখানে গিয়ে ছবিটা দেখে ফেলতেও ইচ্ছে করছিল না তাই আব্বু আম্মুর ছবির সঙ্গে রেখে দিছিলাম৷ তবে কোনোদিন এই বিষয় নিয়ে ভাবি নাই। ”
কথাগুলো শেষ করে আবির একটু থামলো। মেঘ জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে থেকে আস্তে করে বলল,

“তারপর! ”
“গতবছরের শেষ দিকে জান্নাত আর আসিফ ভাইয়াকে নিয়ে একটু ঝা*মেলা হয়ছিল। তখন রাকিব আমাকে আসিফ ভাইয়ার ফে*সবুক আইডি পাঠাইছিল। ঐখানে কভার ফটোতে একটা ছবি ছিল। কেন জানি আমার ছবিতে থাকা মহিলাটাকে খুব পরিচিত মনে হয়তেছিল। আমি রাকিবকে বলে আসিফ ভাইয়ার বায়োডাটা সংগ্রহ করি। ঐখানে আমি দ্বিতীয় বারের মতো নাম দেখি- মাহমুদা খান আমিনা।

সেদিন প্রথমবারের মতো আমি বড়সড় ধাক্কা খাইছিলাম। আমি সবকিছু খোঁজে সেই পুরোনো ছবিটা বের করে বার বার ফে*সবুকের ছবির সাথে মিলিয়ে ছিলাম৷ অস্থিরতায় সেদিন প্রায় ম*রতে বসেছিলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো যে আমার একজন ফুপ্পি আছে তাও আবার জীবিত। সেদিন পরিস্থিতি সামলানোর বিন্দুমাত্র শক্তি ছিল না আমার। সেই রাতেই তানভির আর রাকিবকে আসিফ ভাইয়ার বাসায় পাঠাইছি। আমি ফুপ্পির সাথে সেদিন প্রথমবারের মতো ফোনে কথা বলছিলাম।

নাম পরিচয় বলার পর ওনার সে*কি কা*ন্না, তানভিরকে আঁকড়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল। ফুপ্পির ২৮ বছর চেপে রাখা সব কষ্ট কান্নায় পরিণত হয়েছিল । তারপর বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে ওনার সাথে। বারবার জিজ্ঞেস করেছি ঘটনা বলতে কিন্তু বলেন নি । বলছেন আমি দেশে ফিরলে বলবে। দেশে ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই আমি, তানভির আর রাকিব ওনাদের বাসায় গেছিলাম। সেখানে গিয়েই সব ঘটনা শুনেছি”
মেঘ আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। মেঘ পুনরায় প্রশ্ন করল,

“জান্নাত আপুর কি ঝামেলা হয়ছিল?”
আবির এতক্ষণ গম্ভীর থাকলেও এবার একটু হাসার চেষ্টা করল। ধীর কন্ঠে শুধাল,
“তেমন কিছু না”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“প্লিজ বলুন। ”
আবির না পারতেও বলল,

“ফুপ্পিরা এতবছর যশোর ছিল। গতবছর ভাইয়ার চাকরি হওয়ায় স্ব পরিবারে ঢাকা আসছে। কোনো এক অনুষ্ঠানে ভাইয়া জান্নাতকে দেখেছে। ভাইয়ার জান্নাতকে ভালো লাগছে। কোনোভাবে খবর নিয়েছে জান্নাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেই থেকে প্রায় প্রায় ই ভার্সিটির আশেপাশে, জান্নাতকে ফলো করতো। কিন্তু কোনোদিন কথা বলে নি। ৬ মাস শুধু দূর থেকে ফলো ই করেছে। একদিন সাহস নিয়ে কথা বলতে আসছিল। যদিও কথা বলতে পারে নি। কিন্তু সেটা রাকিবের কান পর্যন্ত পৌছে গেছিলো।

রাকিব ২-৩ দিন খেয়াল করে বিষয়টা আমায় জানাইছিল। রাকিবের ভাইয়াকে পে*টানোর চিন্তাভাবনা ছিল। আমাকে জানানোর পর আমি বলছিলাম, ছেলেটার একটু খোঁজ নিতে, যদি সমস্যা মনে হয় তাহলে পে*টাতে। রাকিব খোঁজ নিয়ে জানতে পারছে ভালো জব করে, অফিসের সবার সাথে নম্র ভদ্র আচরণ করে৷ সেখান থেকেই ফে*সবুক আইডি সংগ্রহ করে আমায় দিছিলো। যাকে পেটা*নোর প্ল্যান ছিল, সে আমার ভাই হয়ে গেলো। যখন জানতে পারছে ভাইয়া জান্নাতকে পছন্দ করে, তখন রাকিব আর বাঁধা দেয় নি। তবে রাকিবের একটায় কথা ছিল আমি দেশে না ফিরলে, আর ফুপ্পির পুরো ঘটনা না জানলে সে জান্নাতের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিবে না।

ধীরে ধীরে জান্নাত আর ভাইয়ার মধ্যে মোটামুটি ভালো সম্পর্ক হয়ছে। আমি দেশে ফিরলাম। ভেবেছিলাম দেশে ফিরেই ওদের বিয়ে দিব। কিন্তু দেশে আসার পর তোর কোচিং, টিউশন থেকে খবর নিয়ে দেখলাম তোর পড়াশোনার না*জেহাল অবস্থা। এভাবে পড়লে চান্স পাবি না। তোর পড়াশোনা গুছিয়ে দেয়ার জন্য একজন মানুষ দরকার ছিল। তখন জান্নাতের কথা মাথায় আসে আর জান্নাত কে আনি। জান্নাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার যেহেতু রাকিবের, আর রাকিব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

তাই বিয়ের আলোচনা হওয়ার আগেই ব*ন্ধ করে দিয়েছিলাম।
কিন্তু অফিসিয়াল কাজে ভাইয়াকে ছয়মাসের জন্য দেশের বাহিরে যেতে হবে। ভাইয়া চাইতেছিল বিয়ে করে বউ নিয়া কয়েকমাস ঘুরে তারপর যাবে। কিন্তু তোর এডমিশন টেস্টের থেকে আমার কাছে তাদের বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমি রাজি হয় না বলে ভাইয়া ঘুরাঘুরির প্ল্যান বাদ দিয়ে বলেছে শুধু বিয়েটা করবে৷ বিয়ের পর তোকে যত ইচ্ছে পড়াতে।

কিন্তু আমার কথা হলো, একবার বিয়ে হলো মানে জান্নাতের মাথায় সংসারের চিন্তা ঢুকবে। তখন তোর প্রতি তার দায়িত্ব কমে যাবে। এটা তো আমি কখনোই হতে দিব না।
ভাইয়া যখন বুঝতে পারছে আমায় মানাতে পারবে না তখন জান্নাতকে বুঝানো শুরু করছে। কিন্তু জান্নাত তো আমায় বা রাকিবকে সবই বলে দেয়। জান্নাতের মাথা যাতে না খেতে পারে, সেজন্য ২-১ মাস যাবৎ জান্নাতের সঙ্গে ভাইয়ার যোগাযোগ বন্ধ রেখেছি। রাকিব নতুন সীম কিনে দিছে জান্নাতকে।যেদিন রাতে তুই আমায় কল দিছিলি, সেদিন আমি,রাকিব আর তানভির ফুপ্পিদের বাসায় ই ছিলাম। বিয়ের কথাবার্তা বলতে গেছিলাম। তুই চান্স পেলেই বিয়ে হবে এরকম টায় শর্ত ছিল। কিন্তু রাতে ফেরার পর তোর খাতা ভর্তি হাবিজাবি লেখা দেখে আমার মাথায় র*ক্ত উঠে গেছিল।

যার জন্য আমি এত মানুষের বিরুদ্ধে লড়তেছি সে কিনা পড়াশোনা টাকে গুরুত্ব ই দিচ্ছে না। সেই রা*গে সেদিন খাতা পুড়িয়েছিলাম। যাতে তুই পড়াশোনায় মনোযোগ দেস। যাদের সামনে বার বার গর্ব করে বলেছি আমার মেঘ চান্স পাবেই। চান্স না পেলে, আমি তাদের মুখোমুখি হতে পারতাম না। তারা মুখে কিছু বলুক বা না বলুক, মনে মনে হলেও বলতো,

এতকিছু করেও তো মেঘ চান্স পেলো না। এই কথাটা পৃথিবীর কোনো মানুষ যাতে বলতে না পারে সেইজন্য আমি তোকে সারাক্ষণ পড়ার কথা বলতাম।
আলহামদুলিল্লাহ৷ তোর চেষ্টা, আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আল্লাহ আমার আশা পূরণ করেছেন আর তোকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩২

মেঘের গলায় আটকে থাকা নিঃশ্বাস টা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেড়িয়ে আসলো। মেঘের আড়ালে মেঘকে নিয়ে কত কত ঘটনা ঘটেছে। আবির ভাইয়ের গত চারমাসের করা আচরণগুলো বারবার মনে হচ্ছিল।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৪