উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ৭

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ৭
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

শীত শীত আমেজে মধ্যাহ্নের শেষ বেলায় মিঠে হয়ে এলো রোদ্দুর। তেজ হারিয়ে নিশ্চুপ বিদায় নেওয়ার ক্ষণ। অবেলায় গোসল সেরে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে টুকরো চুমুক বসালো রিয়া। গোসলে গিয়ে একটা ব্যাপার লক্ষ করেছে। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় সাদা রঙের ফোঁটা চিহ্ন।

অনেক আগে খেয়াল করলেও পাত্তা দেয়নি সে। আজ হঠাৎ নজর পড়লো। ফোঁটা চিহ্ন গুলোর আকৃতি ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আরেকটা ভয়*ঙ্কর ব্যাপার হলো গালের একপাশে ও গলাতেও একই রকম চিহ্ন ফোটে উঠেছে। সে ধারণা করলো পড়ার চাপে রাত জাগতে হয় বিধায় এমন পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এখন ব্যস্ততা কমেছে। খাওয়া আর ঠিকঠাক ঘুম প্রয়োজন। তবেই সবকিছু আগের মতো হবে। স্কিন ঠিক থাকবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিয়ের পর আজ প্রথম ক্লাস ছিলো উষার। বাড়ি ফিরে একাকী সময় কাটাতে গিয়েও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভাবলো রিয়ার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করা যাক। তার সাথে বিয়ের পূর্বে রিয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল। বিয়ের পর পরিস্থিতির কারণে হয়তো কথা বলা হয়নি। তারউপর সেদিন শাশুড়ীর উপর জে*দ মেটাতে গিয়ে অযথাই মেয়েটাকে টে*নে আনলো। তার একটা সরি প্রাপ্য ভেবে রিয়ার ঘরে পা বাড়ালো উষা। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে দু’বার ঠকঠক শব্দ তুললো। ভেতর থেকেই রিনরিনে সুর ভেসে এলো,

-“এসো।”
নৈঃশব্দে প্রবেশ করলো উষা, পায়ে কোনো ব্যস্ততার ছাপ নেই। যেন সবকিছু সুস্থ, স্বাভাবিক হওয়া চাই।
উষাকে নিজের ঘরে দেখে বেশ অবাক হলো রিয়া। কেননা, সেদিন দুজনেই অল্পকথায় খুব বা*জে একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো। এর পর আর কথা হয়নি দুজনার। রিয়া উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো,

-“হঠাৎ আমার ঘরে?”
উষা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
-“পাশে বসতে পারি?”
রিয়া চেপে বসে একপাশে জায়গা করে দিলো। লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল উষা,
-“সরি সেদিনের ঘটনার জন্য। তোমার দো*ষ ছিলো না। তবুও অযথা তোমাকে টে*নে আনলাম। মাথা গরম ছিল আমার।”
রিয়া শুকনো হেসে বলল,

-“ইট’স ও’কে। আমি তেমন কিছুই মনে করিনি। মায়ের কথায় তোমার খা*রা*প লেগেছে বিধায় তুমি আমাকে বলেছো। দো*ষ আমাদের পরিবারের ও আছে।”
উষার চোখে তীব্র অপরাধবোধ। নত দৃষ্টি উঁচুতে তুলে আশাবাদী চোখে চাইলো সে। রিয়াকে ফের প্রশ্ন করলো,
-“আমাদের সম্পর্ক কি আগের মতো হতে পারে?”

রিয়া এবার সত্যিই হাসলো। মিষ্টি হেসে বলল,
-“সেদিন তো ভাবি ডেকেছি, আজও কি ভাবিই ডাকবো?”
দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। খুব ভালো সময় কাটলো উষার। আযানের মিষ্টি সুর কর্ণগোচর হতেই উঠে পড়লো।

তার যাওয়ার পথে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রিয়া। পরক্ষণেই ঊর্মির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফে*ল*লো। মা ভাই কিভাবে এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে সংসার ছাড়া করলো? এদের নিয়তি বড্ড খা*রা*প। নয়তো এমন হীরে কেউ হাত ছাড়া করে?
যেখানে মায়ের সিদ্ধান্তে ভাইও শামিল, সেখানে ভাবির হয়ে কথা বলাটা বোকামি। তবুও সেই বোকামি করেছিলো রিয়া। মায়ের হাতে গড়ে ওঠা সংসারে তার ছায়ায় থাকতে গিয়ে খামোশ হতে হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক, সেখানে পরের মেয়ের পক্ষ নিয়ে রিয়ার মতামতের কোন গুরুত্বই ছিলোনা।

লিলিকে নাসিমা বেগমের ঘরেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে দেখা যায়। মেয়েটার মতিগতি বুঝতে পারেনা উষা। কখনো মনে হয় মেয়েটা খুবই সহজসরল, আবার মত বদলে যায়। মনে হয় ‘উহু এ খুব চালাক প্রকৃতির মেয়ে।
আজকাল উষা যেন তার চোখে কাঁ*টা*র মতো। যদিও প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবুও লিলির চাহনিতে এতটুকু উষা ঠিকই টের পেয়ে যায়।

নাসিমা বেগমের কথার জের ধরেই কোন কাজকর্মে হাত লাগায়নি উষা। আজ মত পাল্টে রান্নাঘরে ঢুকলো। নিজের দো*ষ*গু*লো একটু একটু করে উপলব্ধি করলো। নাসিমা বেগমের মতো একই কাজ করলে তাদের দুজনের মধ্যে তফাৎ রইলো কী? সে নিজেও তো দো*ষী*র সাথে বিনাদো*ষীকে মিশিয়ে বে*য়া*দ*বি করেছে। নিজের দো*ষ দেখতে পেলেও সব কিছু সে ভুলে যায়নি।

বোনের মুখটা ভেসে উঠলেই ভেতরকার হিং*স্রতা বেরিয়ে আসে। নাসিমা বেগমের সাথে তার সম্পর্ক ইহজন্মে আর ঠিক হবেনা। তবে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে তাকে। সৃষ্টিকর্তার বিচারের অপেক্ষায় সে। উষার যতটুকু মনে হয়েছে, রাহাত একটা অঘটন ঘটিয়েই ছাড়বে। বড়সড় জড় আসবে নাসিমা বেগমের ওপর। তবে সেটা কী হতে পারে, তা উষার ধারণার বাহিরে।
রান্নায় খুব বেশি পটু না হলেও কিছু কিছু রান্না পারে সে। বাকিটা মায়ের রান্না দেখাদেখি থেকেই চালিয়ে দেবে। লিলি অর্ধেক পথ এসেই ফিরে গেলো। উষাকে দেখে আর রান্নাঘরে এলোনা। কোথাও না কোথাও মেয়েটির জন্য তার মনে ক্ষো*ভ জমে আছে। তাই আর এগোলোনা।

টুকটাক কাঁচা হাতে মোটামুটি রান্না শেষ হলো। রিয়া নিজের জন্য চা করতে এসে অবাক হলো।
-“বাহ্ একা একা রান্না করা হচ্ছে? অথচ আগে আন্টি তোমার নামে না*লিশ করতো কাজ করো না বলে।”
উষা হেসে ফেললো। বলল,

-“ওই একটু আধটু।”
শামীম আজ দেরি করেই ফিরেছে। নিজের জন্য চা করে ঘরে ফেরার পথেই শামীমের সাথে দেখা। রিয়া মজার ছলে বলল,
-“আজ তো পাতিলে খাবার থাকবেনা। কারো বউ রান্না করেছে বলে কথা।”

উষা রান্না করেছে শুনে খানিক অবাক হলেও শামীমের চেহারায় তা ফোটে উঠলো না। বরং এই ভেবে খুশি হলো, উষা রিয়ার সাথে সম্পর্ক ঠিকঠাক করে নিয়েছে। হয়তো তার বোঝানো কাজে দিয়েছে।
রান্না শেষে ঘরে ফিরতেই গা ঘেঁষে শামীমের আগমন। হাত জোড়া কটিদেশ স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠলো উষা। হৃদয় ছলকানো শীতল ঢেউ বয়ে গেল দেহে। কানের লতিতে আলতো ছোঁয়ায় তড়িৎ বেগে ছিটকে পড়লো। কপালে ঢেউ খেলে গেলো শামীমের। ভ্রু কুঁচকানো দৃষ্টি প্রশ্ন তুললো,

-“কী হলো?”
উষা আমতাআমতা করেই বলল,
-“আমার রোমান্টিকতার মুড নেই।”
এবার যেন কপালের ভাঁজ আরেকটু খানি গাঢ় হলো। অতঃপর উষার কথার অন্য মর্মার্থ বের করেই দুষ্টু হাসলো শামীম। রসিকতার ছলে বলল,

-“আমার কিন্তু বেশ মুড আছে।”
অপ্রস্তুত হয়ে বড় বড় দৃষ্টিতে চোখ রাঙিয়ে তাকালো উষা। লজ্জায় আলুথালু গাল। ব্যস্ত পায়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো। হাত জোড়া বাঁধা পড়লো শক্তপোক্ত হাতের ভাঁজে। আরেকটুখানি সান্নিধ্য বাড়িয়ে দূরত্বের পরিমাণ কমিয়ে দিল। নরম গাল দুটোই আলতো চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো।

-“এবার যেতে পারো। আপাতত মুড এতটুকুই।”
দ্রুতই কক্ষ ত্যাগ করলো উষা। তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে মৃদু হাসলো শামীম।

গোল টেবিলে সবাই উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত নেই দুজন মানুষ। রাহাত বেশ রাত করেই এখন বাড়ি ফেরে। অথচ আগের সময় ছিলো ভিন্ন। কাজ শেষেই ত্রস্তব্যস্ত হয়ে বাসায় ফিরতো। ঊর্মি আর তার খুনসুটিময় সময় কাটতো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তো ভালোবাসা।

সে ছাড়াও নাসিমা বেগম অনুপস্থিত। উষার রান্না করা খাবার তিনি মুখে তুলবেন না। নিজের সিদ্ধান্তে তিনি অনড়। মাকে অনেকক্ষণ বোঝানোর পরও তিনি খাবেন না। শামীমও নাছোড়বান্দার মতো মায়ের ঘরে দাঁড়িয়ে রইলো। আজ একবার মায়ের দো*ষ গুলো চোখের সামনে তুলে ধরলো।

-“কেন খাবেনা মা? উষা রান্না করেছে বলে? কতদিন না খেয়ে থাকবে? কতদিনই বা মনমালিন্য ধরে রাখবে। একটা বিরাট বড় অ*ন্যা*য় হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করেছো, যা এখন চাইলেও ঠিক করতে পারবেনা। যা’ই করতে যাবে, কারো না কারো সাথে অ*ন্যা*য় হবে। তিনটা মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলেছো। নিজের অ*ন্যা*য়*কে একবার উপলব্ধি করতো? শান্তি আপার সাথে যদি এমন ঘটনা ঘটতো বা ভাবির জায়গায় যদি ভাইয়া থাকতো, তাহলে মা হিসেবে তুমি কি করতে?”

বিস্ফোরিত নয়নে তাকালেন নাসিমা বেগম। রণমূর্তি ধারণ করে ধমকে উঠলেন শামীমকে,
-“এগুলো কেমন ধরনের কথা শামীম? আমি এমন ভাবনা কল্পনাতেও আনতে পারিনা।”
তাচ্ছিল্য হাসলো শামীম। বলল,

-“অথচ অন্যের সন্তানের বেলায় ঠিকই কল্পনার চেয়ে দশগুণ এগিয়ে আছো। নিজের সন্তানকেই প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়ে যাচ্ছো। ভাবি, ভাই কেউ কি ভালো আছে? আচ্ছা ভাইয়াকে একবারও কি জিজ্ঞেস করেছো সে কেমন আছে?
নাই বা জিজ্ঞেস করলে। মায়েরা তো সব বুঝে। তাহলে তাকে দেখেও কি তুমি টের পাওনা সে কেমন আছে, কিসে সে ভালো থাকবে?

ভাই – ভাবির সাথে অন্য আরেকটি মেয়ের জীবন ও কি তুমি দুর্বিষহ করে তুলছো না? সন্তানের ভালো চাইতে গিয়ে কেন খা*রা*প*টা*ই করছো? নিজের বিবেককে নাড়া দাও মা।”
জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্বিধাহীন কন্ঠেই গর্জে উঠলেন নাসিমা বেগম।

-“সন্তানের কিসে ভালো সেটা আমি বুঝি। কিভাবেই ওই প*ঙ্গু মেয়ের সাথে ঘর করতো আমার ছেলে? এখন মায়া দেখাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু দুদিন পরই ওই চেহারা দেখে একঘেয়েমি চলে আসবে। যেখানে আমার ছেলের সেবা যত্ন সে করবে, সেখানে আমার ছেলেই তার পেছনে দিনরাত কাম*লার মতো খাটবে। সুস্থ হওয়ার পরও ভ*য় থেকে যাবে। এই বুঝি একটুখানি হোঁচট খেয়ে পুরোনো ভাঙা নড়বড়ে হয়ে গেলো। কতদিন চোখে চোখে রাখবে? আমার ছেলে কি সস্তা নাকি? যাকে এমন একটা মেয়ে নিয়ে ঘর করতে হবে? কোন অংশে কম আমার ছেলে?”

মায়ের কথায় স্থির থাকতে পারলোনা শামীম। ক্রমশ তার রা*গের মাত্রা বৃদ্ধি পেলো। তার বিদ্বেষী গলায় বিদ্রু*পের ছাপ। মায়ের প্রতিত্তোরে কঠোর কন্ঠস্বর।
-“তার মানে অন্যের মেয়েরা সারাজীবন তোমার ছেলেদের পেছনে কা*ম*লা খাটতে পারবে। এটাই তাদের ধর্ম, আর তারা খুবই সস্তা। এটাই তোমার ধারণা? আসলে কি বলো তো মা। তুমি কোনদিন কাউকে ভালোইবাসতে পারোনি। সবারই সুশ্রী দেখে কাছে টেনে নাও। দুদিন পর আবার দূরে ঠেলে দাও। আমারই বোঝা উচিত ছিল ‘যে নারী ননদকে কটা*ক্ষ করে বলতে পারে, এমন কু*ৎসিত সন্তান হলে আমি তাকে গলা টিপেই মে*রে ফেলতাম, সে আর যাই হোক ভালোবাসতে জানেনা’।

যদি আমরা কোন ভাই – বোন কুচকুচে কালো কিংবা লাবন্যহীন হয়ে জন্মাতাম, তাহলে আমাদের কি করতে তুমি?
ফুফুকে যেমন তার সন্তান নিয়ে বলেছিলে, তেমনই আমাদের ও গ*লা টি*পে মে*রে ফেলতে?”
উত্তেজিত হয়ে পড়লেন নাসিমা বেগম।
-“তুই আর আমার চোখের সামনে ও আসবিনা। যে যাদুকরীর পাল্লায় পড়ে আমাকে কথা শোনাতে শিখেছিস, তাকে নিয়েই থাকিস। তার চোখেই ফুল হয়ে ভাসিস।”

শামীম আফসোসের সুরে বলল,
-“তুমি আজও নিজের অ*ন্যা*য়*টা চোখ মেলে দেখলেনা, মা। আর আমি কারো পাল্লায় পড়িনি। শুধু তোমায় নিজেকে শুধরে নিতে সাহায্য করেছি। যাকে নিয়ে থাকতে বলেছো, তাকে নিয়ে অবশ্যই থাকবো। আমি খুঁটি হীন, নড়বড়ে, মেরুদণ্ডহীন নই। আর যাই হোক ভাইয়ার মতো ভুল অন্তত আমার দ্বারা হবেনা।”

-“বউ ছাড়বিনা, মাকে ঠিকই ছাড়তে পারবি।”
-“মায়ের কথায় বউকে শাসন আর বউয়ের কথায় মাকে শাসন করার মতো ছেলে আমি নই। সবার দো*ষ গুণ বিচার করার ক্ষমতা আমার ভান্ডারে আছে। আল্লাহ আমাকে বিচার করার জন্য বিবেক দিয়েছেন। কাজেই এক পাক্ষিক কথা শুনে অন্যজনের উপর অ*বি*চা*র আমি করবোনা। সেই অধিকার আমার নেই। স্ত্রী – মা দুজনেরই আমার উপর হক আছে। কেউই আমার পর নয়।”

মায়ের জবাবের অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে এলো শামীম। রাতে আর তার ও খাওয়া হলোনা। শামীমের অপেক্ষায় আর উষাও খেলোনা। ছোটখাট হাত দু’টোয় শামীমকে জড়িয়ে রেখে মিশে রইলো তার সাথে।

তিমিরে তলিয়ে যাওয়া রজনী। শোঁ শোঁ বাতাসে বিষাদের গন্ধ। নির্ঘুম রজনী কাটছে তিনটি প্রাণের।
প্রতিটি শ্বাশ-প্রশ্বাসে চিনচিনের ব্যথার আভাস। রাহাতের ফেরার অপেক্ষায় অনিদ্রায় কাটছে লিলির চোখজোড়া।
অন্ধকার রাস্তায় প্রিয়তমাকে দেখার তৃষ্ণায় কাতর আরেক জোড়া চোখ।

ঊর্মির এভাবেই কতরাত অনিদ্রায় কে*টে*ছে। আজও বেহায়া চোখ দুটো নিষ্ঠুর মানুষটির জন্য কাঁদে। অথচ দিনের বেলায় সে কতটাই না স্বাভাবিক।
ঘড়ির কাঁটা ১২ এর ঘর পেরিয়েছে। মুঠোফোনে অপরিচিত নম্বরের ডাক। এটা নতুন নয়। বেশ কদিন ধরে এমন রাত হলেই কল আসছে। রিসিভ করলেও কথা বলেনা। ঊর্মি ভেবে পায়না এমন মজা করে মানুষগুলো কী পায়?

সকাল নাগাদ বাড়ি ফিরতেই মায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হলো রাহাতকে।
-“বাড়িতে বউ রেখে রাত বিরেতে কোথায় থাকছিস তুই? সংসারে কবে মন দিবি?”
রাহাতের সোজাসাপটা জবাব,

-“এভাবে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ঊর্মিকে ফিরিয়ে আনতে চাই। তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো। এবার আর তোমার ইমোশন আমার উপর বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবেনা।”
নাসিমা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কি করতে চাইছে এই ছেলে? এবার বুঝি তার জীবন থেকে শান্তিটুকু গায়েব হতে চললো।

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ৬

( সবগুলো চরিত্র নিজ জায়গা ঠিক না-কি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে? প্রত্যেকের মতামত প্রত্যাশা করছি।)

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ৮