এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩২ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩২
লেখনীতে: তানজিল মীম

—“কেন হয় না তানজু?’
“প্রচন্ড হতাশা নিয়ে কথাটা বললো রিয়াদ তানজুকে’!!রিয়াদের কথা শুনে চুপ করে রইলো তানজু’!!তানজু চুপ থাকাতে রিয়াদ আরো হতাশ’!!সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললোঃ
—“কথা বলছিস না কেন?’
—“তুমি যেটা চাইছো সেটা সম্ভব নয় ভাইয়া…
—“কেন সম্ভব নয়,তুই আমায় ভালোবাসিস না…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু অন্যদিক মুখ করে বললোঃ
—“না…

“রিয়াদ ছলছল চোখে তাকালো তানজুর দিকে,তারপর তানজুর হাত ধরে বললঃ
—“মিথ্যে বলছিস তুই, কেন মিথ্যে বলছিস আমি জানি তুই আমায় ভালোবাসিস…
—“তুমি ভুল জানো ভাইয়া,আমি তোমায় কেন ভালোবাসতে যাবো….
—“এমন করে কেন বলছিস…
—“কেমন করে বলছি?’যেটা সত্যি সেটাই বলছি আর তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমায় ভালোবাসি…
“তানজুর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল রিয়াদ,বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে সে,এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার তানজুকে মনের কথা না বললেই ভালো হতো!’অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রিয়াদ তানজুর দিকে তারপর বললোঃ

—“প্লিজ তানজু এমন করে বলিস না আমি তোকে খুব ভালোবাসি…
—“কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি না ভাইয়া,
“রিয়াদ তানজুর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললঃ
—“এমন করে কেন বলছিস কি হয়েছে তোর…
—“কিছু হয় নি ভাইয়া,তুমি যেটা চাইছো সেটা কখনো সম্ভব নয়,তুমি আমায় ভুলে যাও…
“এতটুকু বলে তানজু রিয়াদের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায়’!!হয়তো আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা তার নেই!’
“এদিকে রিয়াদ ধাপ করে বসে নিচে,তার সব কল্পনা জল্পনা, ভালোবাসা স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল,সে ভাবতেই পারে নি তানজু এইভাবে তাকে রিজেক্ট করে দিবে,,এই ভয়টাই পেয়েছিল রিয়াদ,রাগে দুঃখে ঠায় বসে রইলো রিয়াদ…পুরো রুমটার দিকে তাকাতেই কষ্ট হচ্ছে তার,বুকের ভিতর খা খা করছে,
“এই জন্যই হয়তো বলে ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই!’?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুমুল বেগে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে তানজু,তারও কষ্ট হচ্ছে,বাড়ির দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ঠুকরে কেঁদে উঠলো তানজু’!!আর বলে উঠল সেঃ
—“আমায় ক্ষমা করে দিও ভাইয়া,আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাই নি,কিন্তু কি করবো বলো হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে নেই!’
“এসব বলে কাঁদতে লাগলো তানজু’!!এমন সময় তার কাঁধে হাত রাখলো কেউ,কারো হাতের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠল তানজু,একরাশ ভয় এসে গ্রাস করলো তাকে, কোনোভাবে রিয়াদ নয় তো,,চোখের পানি মুছে পিছন ঘুরে তাকালো তানজু’!!সামনেই আহানকে দেখে বললো সেঃ

—“ভাইয়া তুমি….
—“হুম আমি এমন কেন করলে?’
—“কি করেছি আমি..
—“আমি জানি তুমি রিয়াদকে ভালোবাসো তাহলে মিথ্যে কেন বললে তুমি ওকে ভালোবাসো না…
—“তুমি ভুল ভাবছো ভাইয়া…
—“ভুল ভাবছি,আচ্ছা মানলাম তুমি সত্যি বলছো তাহলে কাঁদছো কেন?’
—“কই কাঁদছি না তো চোখে কিছু একটা পড়েছে তাই আর কি?’
—“মিথ্যে বলো না তানজু,কেন এমন করলে তুমি জানো রিয়াদ তোমায় কতোটা ভালোবাসে,তারপরও…
—“প্লিজ ভাইয়া আমরা এই টপিক বাদ দেই…
—“বাদ দিবো কেনো তুমি আগে বলো এমনটা কেন করলে,,
—“আমি রিয়াদ ভাইয়াকে ভালোবাসি না তাই করেছি….

—“মিথ্যে বলো না তানজু,তোমার চোখ বলছে তুমি রিয়াদকে কতোটা ভালোবাসো তাহলে…
—“আমি ভালোবাসি না রিয়াদ ভাইয়াকে….
—“এই লাস্টবার তোমার কাছে জিজ্ঞেস করছি তানজু,কেন এমন করলে তুমি,যদি তুমি সত্যি কথা না বলো তাহলে আমি এক্ষুনি গিয়ে রিয়াদকে বলবো তুমি কোনো কারনে মিথ্যে বলছো?’আর কষ্ট পেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছো?’
—“প্লিজ ভাইয়া এমন করবেন না…
—“তাহলে বলো তানজু এমন কেন করলে?’
—“ঠিক আছে ভাইয়া বলবো আমি,কিন্তু আপনাকে আমায় কথা দিতে হবে আপনি কাউকে বলবেন না বিশেষ করে রিয়াদ ভাইয়াকে?’
“তানজুর কথা শুনে আহান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললোঃ

—“ঠিক আছে,…
“আহানের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো তানজু’!!তানজুর নীরবতা দেখে বললো আহানঃ
—“কি হলো কথা বলছো না কেন?’
—“আসলে ভাইয়া রুহি ভালোবাসে রিয়াদ ভাইয়াকে…
“তানজুর কথা শুনে অবাক হয়ে বললো আহানঃ
—“কি..?
—“হুম ভাইয়া কিছুক্ষন আগেই ফোন করে বললো আমায় ও ভালোবাসে রিয়াদ ভাইয়াকে,তাই আমি চাই না আমার জন্য ওর ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যাক এমনিতেও ওর লাইফে একটা অতীত আছে তাই আমি চাই না ওহ আবার কোনো আঘাত পাক,
—“কিন্তু তানজু…
—“কোনো কিন্তু নয় ভাইয়া প্লিজ আপনি কাউকে বলবেন না…
—“কিন্তু তানজু তুমি যেটা করছো সেটা অন্যায়?’
—“কোনো অন্যায় করছি না, আমি যদি এদের মাঝখানে না থাকি তাহলেই রুহি রিয়াদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবে,আর বিয়ে হয়ে গেলে রিয়াদও আমায় ভুলে রুহিকে ভালোবেসে ফেলবে ওরা খুব ভালো থাকবে দেখবেন,,আর আমার কান্ড কারখানা তো দেখছেন ভাইয়া আমি কি দুষ্টু,আমার ধারা এসব ভালোবাসা টালোবাসো হবে না,ওরা ভালো থাকলেই হবে…

—“আর তুমি…
—“মানে…
—“মানে তুমি ভালো থাকবে রিয়াদকে ছাড়া…
“আহানের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় তানজু’!!
—“কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে…
—“আমায় একটু বাড়ি পৌঁছে দিবেন ভাইয়া…
“তানজুর কথা শুনে আহান কি বলবে বুঝতে পারছে না,সে এটাও বুঝতে পারছে না তানজু যা করছে সেটা আধও সঠিক কি না,আর রিয়াদ..
আহানের ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল তানজুঃ
—“কি হলো ভাইয়া কথা বলুন আমায় পৌঁছে দিবেন একটু,আসলে আমি এই মুহুর্তে চাচ্ছি না রিয়াদ ভাইয়ার মুখোমুখি হতে….

“তানজুর কথা শুনে আহান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললোঃ
—“ঠিক আছে, শুধু একটা কথা বলবো তোমায়’ ” তুমি যেটা করছো সেটা একদমই ঠিক হচ্ছে না”…
“এতটুকু বলে চলে যায় আহান বাহিরে,তানজু কিছুক্ষন বাড়ির উপরের দিকে তাকিয়ে চলে যায় আহানের পিছন পিছন….
!!
“সকালের আলোকিত প্রভাতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে রিয়াদ কাল রাত থেকে একই জায়গায় শুয়ে আছে সে,পুরো রুম এখনও সাজানো,লাইটিং বোডে এখনও জ্বল জ্বল করছে আই লাভ ইউ,,
“হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় রিয়াদের আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে’!!কাল রাতের কথা ভাবতেই আবারো বুকের ভিতর দক করে উঠলো তার,আশেপাশের তাকাতেই রাগ উঠলো রিয়াদের,রাগে ক্ষোপে পুরো রুম তছনছ করে ফেললো সে,সাজানো রুম পুরো অগোছালো করে ফেললো,বোডটাও ভেঙে গুড়োগুড়ো করে ফেলেছে!’খুব কষ্ট হচ্ছে তার,সাথে রাগও হচ্ছে,সবকিছু যেন এলেমেলো হয়ে গেছে তার..রিয়াদ পুরো রুম তছনছ করে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বেরিয়ে গেল…..

“মাঝখানে কাটলো দু’দিন!’….
“এই দু’দিনে একবারও তানজু রিয়াদের সামনে আসে নি,রিয়াদ চেয়েছিলো তানজুর সাথে কথা বলতে কিন্তু পারে নি,তার প্রচুর রাগ হচ্ছে কিন্তু তারপরও নিজের রাগকে বাহিরে বের করতে পারছে না সে…
“দু’দিনে রিয়াদের চেহারাও পাল্টে গেছে রোজ রাতে ড্রিংক করে বাড়ি ফিরতো সে,,আবার সকালে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেত ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়াও করে না!’
“রাত_১২ঃ০০টা….

“সোফায় বসে আছে তানজু,খুব খারাপ লাগছে তার কোনোকিছু ঠিক ভাবে হচ্ছে না,কোনোকিছু ভালো লাগছে না,সবাই ঘুমে বিভোর সেই সুযোগে নিচে এসে সোফায় বসে টিভি দেখছে সে,,তাতেও ভালো লাগছে না,কান্না পাচ্ছে তার,এই দু’দিনে আড়ালে অনেক কেঁদেছে আর পারছে না সে তারও তো কষ্ট হয়,,
“এমন সময় ঢুলতে ঢুলতে বাড়ির ভিতর ঢুকলো রিয়াদ,,রিয়াদকে দেখেই বুকের ভিতর দক করে উঠলো তানজুর,দুদিনে কি অবস্থা হয়েছে রিয়াদে চোখে নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে,চুলোগুলো এলেমেলো, চোখ মুখ কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে,…তানজু দু’পা এগিয়েও আর গেল না,ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, চায় না সে কোনো ভাবেই রিয়াদের সামনে যেতে….

“এদিকে রিয়াদ ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি উপর উঠেও আবার নেমে গেল,আস্তে আস্তে চলে যায় সে সোফার কাছে,তানজু তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছে না,,
“রিয়াদ সোফায় বসে বললোঃ
—“যা তো আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু কিছু না বলেই চলে ডাইনিং টেবিলের কাছে,তারপর এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে এগিয়ে দেয় রিয়াদের দিকে…

“রিয়াদ তানজুর দিকে এক পলক তাকিয়ে গ্লাসটা হাতে নেয়’!!তারপর শক্ত করে গ্লাসটা চেপে ধরে বললোঃ
—“দেখেছিস দু দিনে কি অবস্থা করেছিস আমার,অবশ্য দোষ তোর না দোষ আমারই যে আমি তোকে ভালোবেসেছি,তোকে যদি ভালো না বাসতাম তাহলে এগুলো কিছুই হতো না,
“এতটুকু বলে পানির গ্লাসটা মুখে নেয় রিয়াদ,তারপর অর্ধেক পানি খেয়ে বলেঃ
—“এমন কেন করলি, আমি জানি তুই আমায় ভালোবাসিস তারপরও কেন এমন করছিস জানা নেই,যাক গে ওসব বাদ দে দু’দিন আমার সামনে কেনো আসিস নি,,

“বলে পানির গ্লাসটা টি-টেবিলের ওপর থেকে উঠে দাঁড়ায় রিয়াদ’!!তারপর তানজুর সোজাসুজি দাঁড়ায়’!!রিয়াদের কাজে তানজু কিছুটা ঘাবড়ে যায় তারপরও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখে সে’!!
“হুট করেই রিয়াদ তানজুর হাত শক্ত করে ধরে বসে’!!তারপর নিজের কাছে এনে বলেঃ
—“আমায় কষ্ট দিতে তোর ভালো লাগছে তাই না,,কাল থেকে তোর চেহারা যেন না দেখি আমি,আর এখনো এখানে কি করছিস কালকেই তুই আমেরিকা ছেড়ে চলে যাবি,তোকে আমার আর সহ্য হয় না,অনেক হয়েছে অনেক কষ্ট পেয়েছি আর নয়,তুই কি ভেবেছিস তুই রিজেক্ট করে দিলে আমি ভেঙে চুড়ে চুরমার হয়ে যাবো,এই রিয়াদের জন্য কতো মেয়ে পাগল তুই জানিস,আর তুই কিনা ভাব নিচ্ছিস আমার সাথে….

“রিয়াদের হাতের চাপে ব্যাথা পাচ্ছে তানজু,তারপরও চুপচাপ রিয়াদের কথাগুলো শুনে গেল তানজু,,
তানজুকে চুপ থাকতে দেখে রিয়াদ আরো রেগে যায়’!!আরো শক্ত চেপে ধরে রিয়াদ তানজুর হাত তারপর বলেঃ
—“তোর কি কষ্ট হচ্ছে না…
“তানজু চুপ!’তানজু চুপ থাকায় রিয়াদ রেগে গিয়ে ধাক্কা মারে তানজুকে, সাথে সাথে তানজু গিয়ে ছিটকে পড়ে নিচে, টেবিলের কোনে কপাল লেগে হাল্কা কেটে যায় তার..রিয়াদ তানজুর দিকে না তাকিয়েই বলেঃ
—“তোকে আমার আর সহ্য হয় না আমার সামনে আসবি না….
“বলেই চলে যায় রিয়াদ!’
“এদিকে তানজু রিয়াদের আচরনে আর কাজে খুব কষ্ট পায়,চোখ থেকে দু’ফোটা পানি পড়লো তার….

“পরেরদিন……
“ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছি আমি, আফরিন আপু,খালামনি আর সায়ান দুলাভাই!’আমার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে বলে উঠল খালামনিঃ
—“কি ব্যাপার তানজু কপালে ব্যাথা পেলি কি করে…
—“ওটা কিছু না খালামনি কাল রাতে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে ছিলাম…
—“চোখ কোথায় থাকে তোর?’
—“খালামনি আমার তোমায় কিছু বলার আছে…
—“হুম বল না…
—“খালামনি আমি বিডি তে ফিরে যেতে চাই….
—“কি,হঠাৎ…

—“আসলে খালামনি বাড়ির সবার কথা মনে পরছে আমি আর এখানে থাকতে চাই না,আর তুমি তো আছো আফরিন আপুর সাথে আমি অকারণে এখানে থেকে কি করবো,তুমি আমার বিডিতে ফেরার ব্যবস্থা করে দেও…
—“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে তানজু,,এসেছিস কটা দিনই তো হলো এরই ভিতর চলে যাবি…(আফরিন)
—“প্লিজ আপু আমায় আর আটকিও না আমার এখানে ভালো লাগছে না প্লিজ তোমরা আমার বিডি তে ফেরার ব্যবস্থা করে দেও…
“বলতে বলতে কেঁদে উঠলাম আমি!’হুট করে আমার কান্না দেখে খালামনি আমায় জড়িয়ে ধরে বললোঃ
—“কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন?’
—“কিছু হয় নি খালামনি আমার এখানে আর ভালো লাগছে না প্লিজ আমায় বিডিতে ফেরার ব্যবস্থা করে দেও….
—“আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি তুই আর কাঁদিস না….

“এদিকে সিঁড়ি উপর থেকে তানজুর কান্না দেখে রিয়াদের বুঝতে নাকি নেই কাল রাতের জন্যই তানজু এমন করছে,কিছুক্ষণ আগেই ঘুম ভাঙে তার কাল রাতে নেশার ঘোরে তানজুর সাথে কেমন ব্যবহার করেছিল সে, ভাবতেই লাফ মেরে উঠে বসলো সে,,তারপর নিচে নেমে তানজুর কান্না দেখে বুকের ভিতর দক করে উঠলো তার…,,হয়তো কাল রাতে একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলে সে…

“মাঝখানে কেটে গেল কয়েকটা দিন!’এই কদিনে তানজু ভুল করেও রিয়াদের সামনে যায় নি,তবে রিয়াদ ভেবেছিল যাবে তানজুর কাছে সরি বলতে,কিন্তু কোথাও কিছু একটা আঁটকে দিচ্ছিলো তাকে তাই আর যেতে পারে নি সে….
|| “বিকেল_৪ঃ০০ ||
“আজকে তানজু বিডিতে ফিরে যাবে,সাথে রিয়াদকেও শান্তি দিবে সে,হয়তো তানজু না থাকলেই রিয়াদ ভালো থাকবে…

“সিঁড়ির ওপর দিয়ে নিজের ব্যাগপএ নিয়ে নিচে নামলাম আমি,নিচে সবাই দাঁড়িয়ে আছে আফরিন আপু,আপির বেবি, ওর নাম রেখেছি মুগ্ধ,সায়ান ভাইয়া নেই জরুরি কাজে তাকে যেতে হয়েছে,,তাই আজকে লাস্ট বারের মতো রিয়াদ ভাইয়ার সাথে গাড়ি করে এয়ারপোর্টে যেতে হবে আমায়,খালামনি থেকে গেল আফরিন আপুর কাছে এখনো আপু পুরোপুরি সুস্থ হয় নি আর একা বেবি নিয়ে সবটা সামলাতে পারবে না এসব ভেবে থেকে গেল সে….
“আমি একে একে সবাইকে বিদায় জানিয়ে উঠে বসলাম গাড়িতে,আহান ভাইয়াও ছিল,কিন্তু তেমন কিছু বললো না আমায় হয়তো এখনো রেগে আছে?’

“গাড়ির সামনেই হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল রিয়াদ,তানজুকে ভিতরে বসতে দেখে সেও গিয়ে বসলো গাড়িতে,তারপর গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো সে…..
“কুটকুটে নীরবতার মাঝেই এগিয়ে গেল রিয়াদ তানজু’!!কারো মুখে কোনো কথা নেই’!!জানালার দিকে মুখ করে নীরবে বসে আছে তানজু,পরনে তার ব্লাক জর্জেট থ্রি-পিচ,চুলগুলো খোলা,মুখে তেমন কোনো সাজ নেই,তারপরও তানজুকে খুব সুন্দর লাগছে রিয়াদের কাছে,,বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না রিয়াদ,তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললো সে,,হঠাৎই নীরবতার বাঁধ ভেঙে বললো রিয়াদঃ

—“তারপর চলে যাচ্ছিস…
—“হুম চলে যাচ্ছি এখন তুমি ভালো থাকবে তো ভাইয়া….
—“হুম ভালো তো থাকবোই,,,
“বিনিময়ে তানজু আর কিছু বললো না’!!রিয়াদ অনেককিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারলো না…..
“বেশকিছুক্ষন পর….
“তানজুদের গাড়ি এসে থামলো এয়ারপোর্টের সামনে,গাড়ি থামিয়েই জোরে শ্বাস ফেললো রিয়াদ!’
“গাড়ি থামতেই একবার রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে নেমে পরলাম আমি,,রিয়াদ ভাইয়াও নামলো আমার সাথে তারপর দুজন একসাথে ঢুকলাম এয়ারপোর্টের ভিতর…
“তানজু চলে যাচ্ছে ভাবতেই রিয়াদের খুব কষ্ট হচ্ছে,এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সেদিন রাতে ওইভাবে না বললেই হতো,রিয়াদ দৌড়ে তানজুর সামনে দাঁড়ায় তারপর ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“আমি কিছু বলতে চাই তোকে…
—“হুম বলো না….
—“একটু সাইডে যাবি প্লিজ….
“রিয়াদের চোখের দিকে তাকাতেই তানজু আর মানা করতে পারলো না…
“সবার আড়ালে একটু সাইডে দাঁড়ালো রিয়াদ তানজু!’রিয়াদ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল তানজুর দিকে’!!রিয়াদকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানজু বলে উঠলঃ
—“হুম বলো ভাইয়া….
—“আমি তোকে একবার জড়িয়ে ধরবো প্লিজ…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু কি উওর দিবে বুঝতে পারছে না’!!তানজুর চুপ থাকা দেখে রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“প্লিজ তানজু আমি তোকে একবার জড়িয়ে ধরতেই চাই,…
“তানজু চোখের ইশারায় বলে উঠল “ঠিক আছে”…..
“তানজুর চোখের ইশারা বুঝতে পেরে রিয়াদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না’!!শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তানজুকে’!!তারপর বললো সেঃ

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩১

—“প্লিজ তানজু আমায় ছেড়ে যাস না,আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে তোকে রাতে ওইভাবে বলা উচিত হয় নি,সেদিন আমার মাথা ঠিক ছিল না সরি বলছি তোকে,মন থেকে সরি প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস না,আমি যে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি…
“বলেই তানজুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো রিয়াদ’!!
“এদিকে রিয়াদের কান্না দেখে তানজুরও কান্না পাচ্ছে, ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে,তারপরও কিছু বললো না চুপ করে রইলো সে….
“কিছুক্ষন পর….
—“এখন ছাড়ো ভাইয়া, আমায় যেতে হবে…
—“তুই কি খুব রাগ করেছিস আমার উপর….
“বিনিময়ে তানজু আর কিছু বললো না রিয়াদকে ছাড়িয়ে দ্রুত চলে যায় সে’!!আর রিয়াদ নিশ্চুপে তাকিয়ে রইলো তানজুর যাওয়ার পানে,,,প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার……

“গাড়িতে চড়ে চলে যাচ্ছে রিয়াদ,কিছুক্ষন আগেই তানজুর ফ্লাইট চলে গেছে,,নীরবে ড্রাইভ করে চলছে রিয়াদ,অতিরিক্ত কষ্ট হলে মানুষ যেমন চুপ হয়ে যায় রিয়াদও তেমন চুপ হয়ে গেছে,ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার….
“এদিকে আরেকজন…..
“প্ল্যানের জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে তানজু,তারও কষ্ট হচ্ছে, বড্ড কষ্ট হচ্ছে,হুট করেই তানজুর মাথায় আসলো “সে কি ভুল করছে এমনটা করে”….
“তানজুর ভাবনার মাঝে হঠাৎই পাশে বসে থাকা একটা ছেলে বলে উঠলঃ
—“আপনার কি মন খারাপ মিস….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৩