এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৩ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৩
লেখনীতে: তানজিল মীম

“আচমকা একজন অপরিচিত মানুষের কন্ঠ শুনে হাল্কা চমকে উঠলাম আমি!’তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে তাকালাম ছেলেটার দিকে,ব্লাক হুডি,ব্লাজ প্যান্ট সমৃদ্ধ এক সুদর্শন যুবক,কিন্তু ছেলেটিকে কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে, বড্ড চেনা চেনা লাগছে,,আমার ভাবনার মাঝে বলে উঠল ছেলেটিঃ
—“কি হলো মিস কি ভাবছেন?’
—“হ্যাঁ না কিছু না…
—“আপনার কি মন খারাপ মিস…
—“না তেমন কোনো ব্যাপার নয়….
—“তাহলে কাঁদছেন কেন?’
—“আমার ইচ্ছে হচ্ছে তাই কাঁদছি আপনার তাতে কি!’
—“যাহ বাবা,আপনি কাঁদছিলেন তাই জিজ্ঞেস করলাম…
—“দেখুন আমার মন ভালো নেই তাই খামোখা মেজাজ বিগড়াবেন না…(রেগে)
—“আচ্ছা কুল ডাউন মিস,,
“বলেই ছেলেটি চুপ হয়ে গেল!’কিছুক্ষন পর আবার বলে উঠলঃ
—“একটা কথা বলবো মিস,আপনাকে না চেনা চেনা লাগছে কোথায় দেখেছি বলুন তো…
“ছেলেটির কথা শুনে আমিও অবাক হলাম,এর মানে আমার ভাবনা মিথ্যে ছিল না, সত্যি সত্যি ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছিল,কিন্তু কোথায়?’আমিও কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললামঃ
—“আমারও মনে হচ্ছে, আপনাকে কোথায় দেখেছি বলুন তো…
—“কি জানি মনে পরছে না!’
—“তারপর বলুন মিস আপনি কাঁদছেন কেন?’
“ছেলেটির কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালাম আমি,সাথে সাথে ছেলেটি চুপ!’

“রাত_৮ঃ০০টা….
“নিজের রুমে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে রিয়াদ,নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে তার,কেন সে সেদিন রাতে তানজুর সাথে খারাপ ব্যবহার করলো,ভালো না বাসতো ঠিক আছে কামছেকাম ওর মুখটা তো দেখতে পেতো রিয়াদ..বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো রিয়াদের,কি করে বসলো সে,,বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রিয়াদ, চলে যায় বেলকনিতে সেখানেও শান্তি মিললো না বিরক্ত নিয়ে চলে আসে,তারপর বিছানায় বসলো তাতেও ভালো লাগছে না রাগ,দুঃখ, ক্ষোভ সব হচ্ছে তার,কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না রিয়াদ, সব কেমন পাগল পাগল লাগছে, একরাশ হতাশা নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রিয়াদ,টেবিলের উপর থাকা বইপএ সব ফেলে দিল,বিছানার চাদর টেনে এলেমেলো করে ফেললো এতেও শান্তি মিলছে না, রিয়াদ রেগে দেয়ালে বেশ কয়েক ঘুষি মারলো,কষ্ট হচ্ছে তার,বড্ড কষ্ট, মানসিক যন্ত্রনায় পাগল হয়ে যাচ্ছে রিয়াদ,এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত বুজতে পারছে না,ধাপ করে রিয়াদ বসে পরলো ফ্লোরে হঠাৎই চোখ গেল তার ক্যামেরার দিকে,কিছু না ভেবেই ক্যমেরাটা হাতে নিলো রিয়াদ তারপর একটার পর একটা ছবি দেখতে লাগলো সে তানজুর’!!আর বললোঃ

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—“এইভাবে চলে যেতে পারলে প্রিয়সী,মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে,রাগের বসে ভুলভাল কথা বলে ফেলেছি, তোমায় আঘাত করেছি,তাই বলে ছেড়ে চলে গেলে!’ আমায় কি একটু ভালোবাসা যেত না….
“এই বলে সিগারেট খেতে শুরু করলে রিয়াদ,,!!সে জানে না আজ রাতটা কি করে কাটাবে ?’সবকিছু যেন শূন্য মনে হচ্ছে তার,চোখ বেয়ে পরছে নোনা পানি…..

—“এই তো মনে পড়েছে আপনাকে আমি কেথায় দেখেছি….
“আচমকা পাশে বসা থাকা ছেলেটিকে চেঁচিয়ে উঠতে দেখে চমকে উঠলাম আমি!’বিস্ময় নিতে তাকালাম ছেলেটির দিকে’!!ছেলেটির দিকে তাকাতে বলে উঠলঃ
—“আপনার সাথে সেদিন ভার্সিটিতে ধাক্কা লেগেছিল আমার তাই না…
“ছেলেটির কথা শুনে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম মনে হয়,,কিছুক্ষন ভেবেই বলে উঠলামঃ
—“হুম মনে পরছে আপনার জন্য কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম হুহ….
—“সেদিনের জন্য সরি মিস আসলে একজনকে খুঁজতে গিয়েছিলাম বাট পাই নি,,বাই দা বে আপনার নাম কি?’
—“আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন?’
—“যাহ বাবা এতক্ষণ যাবৎ আপনার সাথে বক বক করলাম আর আপনার নাম জানবো না…
—“না আমার নাম জেনে আপনার কাজ নেই আর আপনার সাথে আমি এতো কথা কেন বলছি…
“বলেই জানালার দিক মুখ করে বসে রইলাম,আবারে কষ্ট হচ্ছে,এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না আর,নিশ্চয়ই ভাইয়াও আমার মতো কষ্ট পাচ্ছে?’কিন্তু আমি জানি কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে,চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো,
— ভালোবাসা মানুষকে সত্যি খুব যন্ত্রণা দেয়…?

—“ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলেছেন তাই না,
“কিছুটা নীরবকন্ঠে কথাটা বললো পাশে বসে থাকা ছেলেটি,ছেলেটির কথা শুনে দু’মিনিটের জন্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম’!!অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম আমি ছেলেটির দিকে’!!ছেলেটির দিকে তাকাতেই বলে উঠলঃ
—“জানেন আমিও না একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম,অবশ্য বাসতাম বললে ভুল হবে এখনও বাসি,প্রায় দু’বছর যাবৎ তাকে খুঁজে চলেছি কিন্তু পাই নি,,
“ছেলেটির কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম আমিঃ
—“দু’বছর যাবৎ খুঁজে চলেছেন?’
—“হুম,তবে জেনে ছিলাম আপনার ওই ভার্সিটিতে সে পরে তাই খুঁজতে গিয়েছিলাম কিন্তু পাই নি,তাই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে গিয়ে ধাক্কা লাগে আপনার সাথে,সেদিন এতটা মন ভেঙে গিয়েছিল যে আপনাকে ঠিকভাবে সরিও বলতে পারি নি,,

—“কি হয়েছিল আপনাদের মাঝে?’
—“শুনবেন আমার লাভ স্টোরি…
—“হুম বলুন…
—“আমাদের লাভ স্টোরিটা ছিল একদমই ভিন্ন,আমাদের প্রথম আলাপ ছিল ফেসবুকে,আমি বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকায় থাকতাম তখন,পড়াশোনার জন্যই আমেরিকায় আসা,ফেসবুকে আলাপ হলো তার সাথে কথা হলো,আমি তাকে ফটো ছাড়া বাস্তবে এখনও দেখি নি,,সবই ঠিক ছিল….
“কিন্তু একদিন এক মেয়ের সাথে একটা পিক আপ দিয়েছিলাম ফেসবুকে,সেটাই ছিল আমার ভুল,মেয়েটাকে নিয়ে অনেক বাজে মন্তব্য করেছিল ও,আমি অনেক বুঝিয়েছি তাকে কিন্তু আমার কথা ঠিক ভাবে শুনতেই চাই নি,সেদিন প্রচুর ঝগড়া হয়েছিল আমাদের মাঝে,আমিও রেগে গিয়ে ওকে অনেক বাজে কথা বলেছিলাম,দেন শেষে ওহ রেগে গিয়ে আমায় ব্লক করে দিলো,সাথে আইডি ডিলেট করে দিল,,তারপর অনেক খুঁজেছি ওকে বাট পাই নি,আজও খুঁজে চলেছি জানেন?’ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য সব শেষ হয়ে গেল…

—“দোষ তো আপনারই ছিল কেন ফটো দিয়েছিলেন….
—“আপনি বুঝতে পারছেন না,পিকটা ছিল আমার আর আমার বোনের,মেয়েটা আমার বোন ছিল….
—“কি তাহলে সেটা বলেন নি কেন ওকে…
—“আমাকে বলার সুযোগই দিলো না,যতবার ফোন করে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছি,ততবারই ও কথার উল্টো মিনিং বের করে ঝগড়া করতো …
—“ক্যাপশন কেন দিলেন না পিকের ওপর….
—“সেটাই তো ভুল ছিল আমার,আর সেই ভুলের মাসুল এখনো দিচ্ছি দেখুন,,
—“আমার মতে ভুলটা মেয়েটারই ছিল আপনাকে একবার বিশ্বাস করা উচিত ছিল….
—“সেটাই তো…
—“আপনার ওকে ভুলে যাওয়া উচিত….

—“দু’বছর যাবৎ তো সেটার চেষ্টাও কম করি নি,মাঝে মাঝে মনে হয় আমি হয়তো ওকে কোনোদিন খুঁজেই পাবো না,তারওপর ফেমেলির বিয়ের পেসার সবমিলিয়ে বুঝতে পারছেন আমি কিসের উপর দিয়ে যাচ্ছি,তাই কিছুদিনের জন্য ফেমিলির কাউকে কিছু না বলে আমেরিকায় চলে এসেছিলাম কিন্তু দু’দিন আগে জানতাম মা নাকি আমার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই ফিরে যাচ্ছি,অনেক ভেবে দেখলাম বুঝলেন নিজের জন্য ফেমিলিকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি….
“বলতে বলতে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ছেলেটি,,ছেলেটির কথা শুনে যেন কেমন লাগলো আমার,,

—“ফেস টু ফেস না দেখেও এতো ভালোবাসে,,সত্যি কখন কার প্রতি কার ভালোবাসা চলে আসবে কেউ জানে না,,ছেলেটির কথা শুনে সত্যি খুব খারাপ লাগলো….(মনে মনে)
—“দেখছেন আমিও না কত কথা বলে ফেললাম,আসলে আমি না এমনি তবে কেনো জানি না আমার ভিতরের কথাগুলো আপনাকে বলতে খুব ইচ্ছে করলো তাই বললাম কিছু মনে করবেন না….
—“না আমি কিছু মনে করি নি,আরো ভালো লাগলো,,সত্যি বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি এতো ভালোবাসেন মেয়েটাকে,দোয়া করি আপনি যেন খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যান মেয়েটাকে…
“বিনিময়ে ছেলেটি কিছু বললো না হাল্কা হাসলো’!!আনমনেই আমি আমার হাতটা এগিয়ে দিলাম ছেলেটির দিকে তারপর বললামঃ

—“আমি তানজু,,নাইস টু মিট ইউ….
“আমার কথা শুনে ছেলেটিও তার হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“আমি অভ্র,এখন তো তবে বলতে পারেন মন খারাপ কেন আপনার?’
“এরই ভিতর মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হলো আর পনেরো মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ লেন্ড করা হবে!’
—“সময় কখন কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না,
—“আমিও,
“২০ মিনিট পর…..

“এয়ারপোর্টের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছি আমি,কারন দিহান ভাইয়া নিতে আসবে আমায়’!!এমন সময় অভ্র বলে উঠলঃ
—“তাহলে মিস,বাই এন্ড নাইচ টু মিট ইউ,,ভালো থাকবেন,ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে…
—“অবশ্যই,আর দোয়া করি আপনি যেন আপনার ভালোবাসার মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যান…
—“সেটা হয়তো আর নাও হতে পারে,সে হয়তো আমার ভাগ্যে নেই,,,
—“সবই তো বললেন মেয়েটার নাম বলবেন না?’নাকি নাম বলতে প্রবলেম আছে…
—“না বলতে প্রবলেম কিসের এতকিছু বললাম আর নাম বলবো না…
—“তাহলে বলুন কি নাম ছিল মেয়েটির?’
“ছেলেটি কিছু বলতে যাবে এরই ভিতর ভাইয়া ডাক দিলো আমায়’!!নাম আর শোনা হলো না দিহান ভাইয়াকে দেখেই অভ্রকে বাই জানিয়ে চলে আসলাম আমি….
“তারপর ভাইয়ার সাথে বেরিয়ে গেলাম এয়ারপোর্ট থেকে,
“এদিকে অভ্র কিছুক্ষন তানজুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,তারপর সেও চললো তার গন্তব্যে….

“গাড়ির জানালার দিকে মুখ করে নীরবে বসে আছি আমি,সবকিছুই কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে,হুট করেই রিয়াদ ভাইয়ার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা মনে পরলো,সাথে সাথে বুকের ভিতর দক করে উঠলো,জানি না কবে রিয়াদকে ভুলে যাবো বা আদোও ভুলতে পারবো কি না..
“কি জানি ভাইয়া এখন কি করছে?’এখনও হয়তো কষ্ট পাচ্ছে….?”

“সময় গতিশীল!’সাথে সময় কারো জন্য থেমে থাকে না’…..
“সেদিনের পর….
“দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো ৮ মাস…..
“এই ৮ মাসে তানজু অনেক চেষ্টা করেছে রিয়াদকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারে নি,কিন্তু সে এটা ভেবে নিয়েছে রিয়াদ তাকে ভুলে ভালো আছে,এখন আমেরিকার নাম করা ডাক্তার হয়ে গেছে কি না?’এই ৮ মাসে কোনোভাবেই যোগাযোগ হয়নি রিয়াদ তানজুর,না তানজু চেষ্টা করেছে রিয়াদের সাথে যোগাযোগ করার আর না রিয়াদ করেছে তানজুর সাথে যোগাযোগ করার?’তানজু তো ভেবেই নিয়েছে রিয়াদ তাকে ভুলে খুব সুন্দর ভাবে জীবন কাটাচ্ছে?’আর সে… “ভাবতেই হাসি পাচ্ছে তানজুর”….

“অনেককিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে তার, আগে মতো চঞ্চলভাবটা চলে গেছে,সারাদিন নীরবে ঘরে বসে থাকে,বাচ্চাদের সাথেও তেমন আড্ডা দেওয়া হয় না তার,মাঝে মাঝে রুহি শিফার সাথে ঘুরতে বের হয় ঠিকই কিন্তু বেশি কথা বলে না,,পুরোই পাল্টে গেছে,,তানজুর পরিবর্তনের জন্য প্রথমে সবাই একটু চিন্তিত ছিল কিন্তু পড়ে আর তেমন ভাবে নি,এখন আর আগের মতো কারো সাথে তর্কে জড়ায় না তানজু,,পুরোই চেঞ্জ,কে জানে তানজু আবার আগের মতো হবে কি না’…

“এয়ারপোর্টে তানজু বাদে সবাই দাঁড়িয়ে আছে দিহান,শিফা,রুহি,রিয়াদের বাবা মা,(রিয়াদের মা তিনমাস পড়েই ফিরে আসে বাংলাদেশে),তানজুর বাবা মা,শিফার বাবা মা,এরা সবাই অপেক্ষা করছে রিয়াদদের জন্য!’
“প্রায় বহুদিন পর আজ রিয়াদরা বাড়ি ফিরবে,এবার রিয়াদের সাথে আফরিন সায়ানও আছে,সাথে আছে আহানের বাবা মা, এই ৮ মাসে একটা জিনিস খুব ভালো হয়েছে সেটা হলো আহান আর শিফার সম্পর্কের কথা সবাই জেনে গেছে আর সেই জন্য ওনারাও এসেছে একে বারে আহান শিফার বিয়ে দিয়ে বউমাকে নিয়ে আমেরিকা ফিরবে তাঁরা….
“অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকলের সামনে চলে আসলো,রিয়াদ,আফরিন,সায়ান,আফরিনের বেবি মুগ্ধ,আহানের বাবা-মা, সাথে আহান…

“ওদেরকে দেখেই সবাই খুশি মনে চলে গেল ওদের সামনে!’শিফা তো কিছু না ভেবেই দৌড়ে আহানকে জড়িয়ে ধরলো’!!ঘটনাচক্রে আহানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল’!!কারন তার যতদূর মনে পড়ে শিফা বলেছিল বিয়ের আগে এসব কিছুই হবে না’!!আহান অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা কি হলো তুমি তো বলেছিলে বিয়ের আগে এসব কিছুই হবে না…
“আহানের কথা শুনে শিফা কি বলবে বুঝতে পারছে না,কি করতো সে কত দিন আহানকে দেখছে সে এক্সাইটিং এ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি নিজেকে, তাই তো দৌড়ে জড়িয়ে ধরল আহানকে’!!এখন লজ্জা লাগছে তার,,তাড়াতাড়ি আহানকে ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরলো সে,,,,

“এদিকে সবাই নিজেদের কথায় ব্যস্ত থাকায় আহান আর শিফাকে তেমন খেয়াল করে নি…
“অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াদের চোখ খুঁজছে তানজুকে,কিন্তু কোথাও তানজুর দেখা মিললো না তাহলে কি আসে নি তানজু?’এমন সময় রুহি বলে উঠল রিয়াদকেঃ
—“কেমন আছো ভাইয়া….
—“হুম ভালো তুই…
—“আমিও ভালো আছি,,
—“আচ্ছা তানজু আসে নি তোদের সাথে….
—“না আসে নি ওর নাকি প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে তাই….
—“ওহ,,
—“জানো রিয়াদ ভাইয়া তানজু যেন কেমন একটা হয়ে গেছে আগের মতো আর কারো সাথে তেমন কথা বলে না চুপচাপ থাকে সবসময়, কে জানে ওর কি হয়েছে?’
“বিনিময়ে রিয়াদ আর কিছু বললো না!’রিয়াদ চুপ থাকায় রুহিও আর কিছু বললো না!’

“সোফায় উপর শুয়ে টিভি দেখছি আমি সাথে পপকন খাচ্ছি,আজ বহুত দিন পর টিভিতে “টমেন এন্ড জেরি” দেখছি,,ভালো লাগছে নাকি খারাপ লাগছে বুঝতে পারছি না,এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো হয়তো আম্মুরা চলে এসেছে,আমি বেশি কি না ভেবে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,দরজা খুলতেই সবাই ঢুকে পরলো,আমিও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করে দিলাম,আপির বেবিটাও কত বড় হয়ে গেছে,আমি আফরিন আপুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ
—“কেমন আছে আপু…?’
—“তুই আমার সাথে কথা বলবি না….
—“ওমা কেনো?’
—“এয়ারপোর্টে যাস নি কেন?’
—“আর বলো না আপু মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছিল তাই যাই নি,আর যাই নি তাতে কি হয়েছে তুমি তো চলে এসেছো তাই না….

“বিনিময়ে হাল্কা হাসলো আফরিন আপু!’তারপর একে একে সবাই গিয়ে বসলো সোফায়’!!হঠাৎই চোখ গেল আহান ভাইয়ার দিকে,আর তার পাশে দুজন ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলার দিকে,আমি বুঝে গেছি এরা আহান ভাইয়ার বাবা মা,বেশি কিছু না ভেবে আমি চলে গেলাম ওনাদের সামনে তারপর মুচকি হেঁসে বললামঃ
—“আসসালামু আলাইকুম “আঙ্কেল – আন্টি”…..
—“ওলাইকুম আসসালাম….
—“আপনারা ভালো আছেন তো শিফা আপনাদের কথা অনেক বলেছে…
“আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন ওনারা!’তারপর চলে গেলাম আমি আহান ভাইয়ার সামনে তারপর বললামঃ
—“কেমন আছো ভাইয়া….
—“হুম ভালো তুমি…
—“আমি তো বিন্দাস আছি?’
—“তা তো দেখতেই পাচ্ছি…
—“মানে….
—“না কিছু না…

“এতটুকু বলে আহান ভাইয়া চলে গেলেন!’অবশেষে এতক্ষণ পর দেখা মিললো রিয়াদ ভাইয়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন উনি,,
“রিয়াদের দৃষ্টি তানজুর দিকে,তানজু পরনে খয়েরি রঙের ট্রাউজার সাথে ওয়াইট টিশার্ট,চুলগুলো বেনুরী করা,এতদিন পর তানজুকে দেখে রিয়াদের কেমন রিয়াকশন দেওয়া উচিত ভুলে গেছে সে’!!চোখ ছলছল করছে রিয়াদের বেশিক্ষণ তাকালো না রিয়াদ তানজুর দিকে,কোনো কথা না বলেই রিয়াদ ঢুকে পড়ে ভিতরক টোটালি এবোএট করলো তানজুকে সে’!!

“বিকেল_৫ঃ০০টা…..
“ছাঁদের এক কিনারায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি আমি,,মনটা খুবই খারাপ এমনটা নয় আমি রিয়াদ ভাইয়ার ইগনোরে কষ্ট পাচ্ছি,এটা হওয়ারই ছিল হয়তো রিয়াদ ভাইয়া এখন আমায় ঘৃনা ছাড়া কিছু করে না!’তবে যাই হোক সবটা ভালোভাবে হয়ে গেলেই ভালো…
“এরই মধ্যে রিয়াদ এসে পাশে দাঁড়ালো তানজুর’!!তানজু খেয়াল করে নি, সে তো তার মতো ভাবনায় বিভোর!’তানজুর ভাবনার মাঝে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“কেমন আছিস তুই….
“আচমকা কারো কন্ঠ শুনে পিছন ঘুরে তাকালাম আমি!’সামনেই রিয়াদ ভাইয়াকে দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো আমার’!!কিছুটা আমতাআমতা করে বললামঃ

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩২

—“হুম ভালো তুমি…
—“আমি তো ভালোই আছি….
—“তা এখানে কি করছিস একা একা…
—“না তেমন কিছু নয় এমনি দাঁড়িয়ে আছি,তুমি নিচে যাও না…
—“তাড়িয়ে দিচ্ছিস আমায়…
—“কি সব বলছো তুমি আমায় তাড়িয়ে দিবে কেন?’
—“তাহলে চলে যেতে বলছিস যে…
—“না মানে নিচে আহান আর শিফার বিয়ের কথা চলছে কি না….
“বিনিময়ে রিয়াদ আর কিছু বললো না চুপ হয়ে গেল সে’!!কত ভাবলো সে তানজুর সাথে একটা কথাও বলবে না কিন্তু তা আর হলো কই সেই তো কথা বলাই লাগলো,,রিয়াদ এটা ভেবে অবাক হয়ে
“এতদিনে তানজুর প্রতি তার ভালোবাসা এতটুকুও কমে নি….!’
“অনেক বলে যোগাযোগ বন্ধ মানেই ভালোবাসা শেষ কিন্তু রিয়াদ মানলো না কারন তার ভালোবাসা এতটুকুও কমে নি আরো বেড়ে গেছে তানজুকে দেখা তৃষ্ণা আর ওকে জড়িয়ে ধরার তীব্র বাসনা,রিয়াদ জানে না এই মুহুর্তে তার কি বলা উচিত….

“এমন সময় শিফা ডাকলো আমায় আর রিয়াদ ভাইয়াকে,আমিও আর বেশি কিছু না ভেবে চলে গেলাম নিচে,
“বুঝলাম না আমায় ডাকলো কেন?’

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ৩৪