কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১১

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১১
লাবণ্য ইয়াসমিন

নির্জন কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। মস্তিষ্ককে দুনিয়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সুলতান হাউজের প্রতিটা সদস্য এতোটা অমায়িক ওর কল্পনার বাইরে ছিল। কহিনুর ভেবেছিল চলে যাবে কিন্তু এরা যেতে দেয়নি। জুবায়ের ফারুকীর মতো বাবা আর অধরা বারির মতো মা থাকলে ছেলেমেয়েদের জন্য আর কি চাই?আলফার ভাগ্য দেখলে যেকোনো ব্যক্তির হিংসা হবে। কহিনুর ভীষণ খুশি এমন লোকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার দরুন।

কিন্তু নিজের বাবা মায়ের কথা ভেবে খারাপ লাগছে। সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। ছেলেটা ওকে এখানে রেখে গেলো কিন্তু কখন আর কিভাবে দেখা করবে সেটা বলে যায়নি। কহিনুর কথাগুলো ভাবতে ভাবতে লাগেজ থেকে নিজের ড্রেস বের করে ফ্রেস হয়ে নিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাবা বলেছিলো নিজের পরিচয় গোপন রাখতে হবে কিন্তু কাকতলীয়ভাবে বাবা মায়ের নাম ব্যতিত এখানে কেউ ওর নাম জানতে চাইনি।জানতে চাইলে তখন কি বলবে বুঝতে পরছে না। সবটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে পারলে বলতে সুবিধা হবে। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো দরজা থেকে আসা খটখট আওয়াজ শুনে। ও দ্রুত ওড়না নেকাবের ন্যায় আটকে নিয়ে দরজা খুঁলে দিলো। অধরা খাবার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ওর পেছনে জুবায়ের দাঁড়িয়ে আছে। নির্জনতা ভেঙে জুবায়ের বলে উঠলো,

এখানে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। যতদিন তোমার বাবা মায়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ততদিন তুমি এখানে নিজের বাসা ভেবে থাকবে। আমি খোঁজ নিবো উনাদের উদ্ধার করতে। তোমার বাবার নাম আমি অনেক শুনেছি। আমার এক বন্ধুর চিকিৎসা করেছিলেন উনি। ভেবেছিলাম দেখা করবো কিন্তু হয়ে উঠেনি। ভালো মানুষের সঙ্গে কে এমন শত্রুতা করতে পারে আল্লাহ ভালো জানেন। তুমি চিন্তা করবে না। আলফার ন্যায় তুমিও আমাদের মেয়ে।
জুবায়েরের স্নেহ মাখা আবেগপূর্ণ কথা শুনে কহিনুরের চোখ ছলছল করে উঠলো। পৃথিবীর সব বাবারা বুঝি এমন কোমল হয়? অধরা ততক্ষণে টেবিলে খাবার রেখে ওর কাছে এসে বলল,

তুমি হয়তো আমাদের সঙ্গে খেতে অস্বস্তিতে পড়বে। তাই এখানে নিয়ে এসেছি। তোমার যেমন খুশি এখানে থাকতে পারো কেউ কিছু বলবে না। যখন যা প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে ঠিক আছে?
কহিনুর চোখ মুছে মাথা নাড়ালো। জুবায়ের ওর মাথায় হাত রেখে বেরিয়ে গেলো। অধরা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ওর পিছু নিলো। মেয়েটাকে দেখে ওদের পুরাতন ব্যাথা জেগে উঠছে। কহিনুর ঠিক এমনটাই ছিল। এই মেয়েটাকে ওর মতোই লাগে। বারবার মনে হচ্ছে ওটা কহিনুর কিন্তু এটাকি আদো সম্ভব? অধরা এসেছিল যদি মুখটা দেখা যায় কিন্তু পারলোনা।

জুবায়েরের মনেও ঠিক এমনটা আশা ছিল। একটা অচেনা মেয়েকে হঠাৎ কিভাবে বলবে তোমার মুখটা দেখতে চাই? কথাটা শুনতে কেমন লাগতো তাই বলা হয়নি। বিপদের দিনে মেয়েটাকে সাহায্য করতে পারলেও শান্তি। ওরা চলে যেতেই কহিনুর দরজা বন্ধ করলো। মুখোশের আড়ালে থাকাটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ছোটবেলাতে সেই দুর্ঘটনার পর থেকে নিয়মিত নেকাবের ব্যবহার করছে। বিপদ থেকে লুকিয়ে থাকতে নাকি অন্য কোনো কারণে এসব কহিনুর জানেনা। বাবার কাছে কখনও প্রশ্ন করা হয়নি। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও খাবার নিয়ে বসলো।

ওয়াশিম খানের সামনে বসে আছে আলেক্স লয়েড। ওয়াশিম খান পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছেন। উনার মুখে বাঁকা হাসি যার অর্থ বোঝার সাধ্য আপাতত কারো নেই। সেদিন কহিনুর সুলতানার করা ধ্বংস লিলা থেকে বেঁচে ফেরারটা অনেকটাই ওদের ভাগ্যে ছিল নয়তো আলেক্স লয়েড কহিনুরের জন্য খান পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে কালো জাদুর চর্চা করতো না।

খান সাহেব মনে মনে হিসেব করছেন কিভাবে সুলতান পরিবারের থেকে কঠিন প্রতিশোধ নিতে পারেন। কিন্তু আলেক্সের মন অস্থির হয়ে উঠেছে। খানদের প্রতি সামান্য পরিমাণ বিশ্বাস নেই। কহিনুর পেতে ওদেরকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছিলো কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। এখন নিজের বোকামির কারণে এদের হাতে জীবন দিতে না হয়। ঠান্ডার মধ্যেও ঘাম ঝরে যাচ্ছে। স্থির থাকতে না পেরে বলে উঠলো,

আপনি কৃতজ্ঞ ছিলেন আমার প্রতি এমনটাই বলেছিলেন একদিন। তবে এখন কেনো সাহায্য করছেন না? আমি আপনাদের জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছি। ফিরিয়ে এনেছি তবে কহিনুর পেতে সাহায্য করতে কিসের অসুবিধা বলবেন? আমি জানতাম না কহিনুর কোথায় আছে তাই আপনাদের ফিরিয়ে এনেছি।

আলেক্স লয়েডের উপরে অসন্তুষ্ট হলেন খান সাহেব। এই ভদ্রলোকের বোকামির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কিভাবে ভাবলো যেকোন পরিবারে জন্ম নিলেই সেই শিশুর মধ্যে কহিনুরের শক্তি প্রবেশ করবে? বেকুব এখন কহিনুরের জন্য লোভ করছে । উনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। গর্জন করে বলে উঠলেন,

কহিনুরের প্রতি লোভ তোমাকে অন্ধ বানিয়েছে তাই বুঝতে পারোনি ওটা সাধারণ কোনো পাথর ছিল না। ওটা অতি মূল্যবান আর রহস্যময় পাথর। কিভাবে ভাবলে সাধারণ কারো কাছে ওটা ধরা দিবে? তোমাদের বোকামির জন্য পাথরটা এখন কোথায় আছে জানিনা। সর্বশেষ পাথর কহিনুর সুলতানার কাছে ছিল। ওর মৃ/ত্যুর পরে পাথর ওর সমাধিতেই ছিল যেটা কেউ জানেনা। কিন্তু তুমি বোকামি করে কহিনুরের লকেট চুরি করে কালোজাদুর করেছো।

কোন এক বাচ্চার মধ্যে কহিনুরের শক্তি প্রকাশের জন্য অযথা বলি দিয়েছো যা কোনো কাজেই আসেনি। কহিনুরের শক্তি শুধুমাত্র সুলতান পরিবারের কাছে ফিরতে পারতো নয়তো না। ওটার মালকিন কহিনুর ছিল ও যদি ইচ্ছে করে কাউকে দিতো তবে সেটা আলাদা। তোমার জন্য পাথর গায়েব হয়েছে এখন আমাকে বলছো কহিনুর পেতে সাহায্য করতে? আমি পারবোনা। আর কি যেনো বলছিলে আমাদের সাহায্য করেছো তুমি? কিসের সাহায্য? আমরা একদিন না একদিন ফিরে আসতাম। আমাদের তুমি না বরং ইমরোজের করা ছোট্ট বোকামি ফিরিয়ে এনেছে। জাদুলিপিতে ওর করা ভুল আমাদের ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। তোমাকে এতগুলি কথা বলতে বাধ্য হলাম যাতে আর কখনও আমার সম্মুখে না আসো। এখন ফিরে যাও আর আমাকে একা থাকতে দাও।

খান সাহেব কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ করলেন। মেজাজ তরতর করে বাড়ছে। নিজেকে সামলাতে না পারলে ঝামেলা আছে। আলেক্স লয়েড যা ভেবেছিলেন তাই হচ্ছে। এরা বেইমানি করবে জানতেন তবে হতাশ হলেন না। এমন কিছু আছে যেটার জন্য এই খানরা ওর পা ধরতে বাধ্য হবে তখন মজা দেখবেন বলে দ্রুত প্রস্থান করলেন। কিন্তু খান সাহেব অবকাশের সময় পেলেন না। তখনই ইমরোজ কক্ষে ভেতরে প্রবেশ করলো। চুপচাপ দাদুর সামনে বসে মুখটা গম্ভীর করে বলল,

জুবায়ের ফারুকী বেশ চালাকচতুর ব্যবসায়ী। উনাকে ব্যবসা থেকে টলানো অনেক কঠিন তাই সময়ের প্রয়োজন। উনার সম্পদের চাইতে বুদ্ধির পরিমাণ বেশি। যতই বিপদে ফেলি দুভাই মিলেমিশে ঠিক করে ফেলছে। কি করবো অন্য কিছু ভাবতে হবে । কোম্পানির প্রডাক্ট হাউজে আ/গুন লাগিয়ে দিলে কেমন হবে?
ইমরোজ বেশ বিরক্ত হচ্ছে কথাগুলো বলতে কিন্তু দাদু বেশ খুশী। উনি নড়েচড়ে বসে উপরের দিকে তাঁকিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন,

অর্থ যাদের কাছে মূল্যহীন তাদের মধ্যে অন্যরকম একটা মমতা আর ভালো মানুষি লুকিয়ে আছে বুঝলে? সুলতান জুবায়ের ফারুকী ভালোবাসার কাঙ্গাল। তুমি ওর অর্থ না বরং ওর কাছের মানুষদের একটা একটা করে কেড়ে নিতে থাক দেখবে এমনিতেই ভেঙে পড়বে। উনি বড্ড বউ পাগল।

নিজের স্ত্রী সন্তানকে আগলে রাখতে ভীষণ পারদর্শী। যখন দেখবে একে একে ওর থেকে সবাই চলে যাচ্ছে তখন দেখবে কেমন মজা হয়। তুমি প্রথমে সুলতান আলফা ফারুকীর প্রা/ণ নাশের খবরটা আমাকে এনে দাও। অধরা বারিকে আমি দেখতে যাবো দ্বিতীয়বার সন্তান হারিয়ে সে কিভাবে ছটফট করে।
ইমরোজ চোখ বন্ধ করে ফেলল দাদুর এমন কঠিন পরিকল্পনা শুনে। কিন্তু কিছু করার নেই। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এসব করতেই হবে। নয়তো দাদু চটে যাবেন। কথাগুলো ভেবে ও কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো। গন্তব্য আজ কঠিন স্থানে নিয়ে যাবে যেখানে মায়া মমতার কোনো স্থান নেই।

বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে উড়াধুড়া নেচে চলেছে আলফা ফারুকী। উজ্জ্বল ফর্সা তকে কালো রঙটা ওকে বেশ মানিয়েছে। মায়ের পছন্দের ড্রেস তাই হয়তো এতোটা সুন্দর লাগছে। বাবা মায়ের জন্য কখনও ওকে শপিং করতে যেতে হয়না। বাইরে কোথাও অনুষ্ঠানে গেলে এখনো ছেলেকে নিজের পছন্দে সাজিয়ে তুলে অধরা। একমাত্র ছেলে যাকে নিয়ে ওর দিন যায়। পার্টিতে যাওয়ার নিষেধ আলফার নেই তবে নেশাযুক্ত তরলের প্রতি বাবার কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভুল করেও মুখে তোলা যাবেনা। আলফা মেনে নিয়েছে তাই যতটা পারে দূরে থাকে। নাচতে নাচতে হঠাৎ রিনরিনে মেয়েলী আওয়াজে ও থমকে গেলো। পাশ ফিরে অবাক হলো। একটা অতি সুন্দরী মেয়ে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখে মায়া আর চোখ আছে নেশা যেটা মূহুর্তে ওকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মেয়েটা ওর দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

সুইটহার্ট এটা ছাড়া ঠিক জমছে না।
আলফা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় গ্লাসটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। কিছু না ভেবেই মুখ ডুবিয়ে দিলো গ্লাসে। মনে হলো কোনো অমৃতরস গ্রহণ করছে। এতোটা মধুর ভাবতে পারলোনা। ঢকঢক করে গিলে নিলো। তারপর কেমন উন্মাদ হয়ে উঠলো। আরও দরকার এই অমৃত তাই মিষ্টি হেসে বলল,

এটা প্রথম থেকেই অমৃত নাকি সুন্দরীর হাতের ছোঁয়া পেয়ে গরল থেকে অমৃত হয়ে উঠেছে কোনটা?
মেয়েটা খিলখিল শব্দে অষ্টাদশি তরুণীর ন্যায় হেসে উঠলো। ওর উন্মুক্ত এলোমেলো চুলগুলো কাধের উপরে লুটিয়ে আছে। আলফা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মেয়েটা ওর অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের অর্ধেক খাওয়া গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দিলো। আলফা নিঃশব্দে কোনো সংকোচ ছাড়া গ্রহণ করলো।

কিন্তু দ্বিতীয়বারের সময় মাথা ঝিমিয়ে আসলো। মেয়েটা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তারপর দুজনে চুপচাপ পার্টি ছেড়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আলফার যতক্ষণ চোখ খোঁলা ছিল বুঝতে পারলো মেয়েটা ওর সঙ্গেই গাড়িতে উঠেছে। আপাতত ড্রাইভ করার মতো অবস্থা ওর নেই তাই এখন মেয়েটাকে ভরসা করতে হবে। মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। ছিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে আলফা পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লো।

মেয়েটা একবার চেয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে আসতো ঠিক তখনই ইমরোজ খান গাড়িতে গিয়ে বসলো। পাশ ফিরে কিছুক্ষণ থমকে গেলো। আলফার মুখটা দেখে মায়া হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। এই ছেলেটাকে আজ ম/রতে হবে। পৃথিবী থেকে বিদাইয়ের ক্ষণকাল উপস্থিত । কথাটা ভেবে এগিয়ে চললো জঙ্গলের দিকে। আগামীকাল দেশের সবগুলো পত্র পত্রিকা আর টিভিতে নিউজ চলবে “বেকিং নিউজ বিখ্যাত ব্যবসায়ী সুলতান জুবায়ের ফারুকীর একমাত্র পুত্র সুলতান আলফা ফারুকীর মৃ/তদেহ উদ্ধার ” ইমরোজ পাশ থেকে রিভ/লবার বের করে দেখে নিলো।

খ/ঞ্জর চালালে শক্তির প্রয়োজন কিন্তু রিভ/লবার দিয়ে দ্রুতগামী কাজ শেষ হবে। ছেলেটাকে বেশি কষ্ট দিতে চাইছে না। গভীর জঙ্গলের মাঝামাঝি গিয়ে ও গাড়ি থামিয়ে দিলো। রিভ/লবার কোমরে গুজে নিয়ে আলফাকে বের করতে হাত বাড়িয়ে দিবে ঠিক তখনই কারো হাসির শব্দে ও থমকে গেলো। ইমরোজের হৃদপিণ্ড ধক করে উঠলো। কে এমন করে হাসে দেখার জন্য সামনে তাঁকিয়ে চমকে গেলো। ওর গাড়ির সামনে একটা মেয়ের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। পেছন ফিরে তাঁকিয়ে আছে যার দরুন মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মেয়েটার কোমর ছেড়ে যাওয়া উন্মুক্ত চুলগুলো বাতাসে দুলছে। পরণে টকটকে সবুজ শাড়ি। ইমরোজ এধরনের পোশাক কখনও দেখেছে কি মনে করতে পারলোনা তাই কৌতূহল নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসলো। ততক্ষণে মেয়েটা চলতে শুরু করেছে। ইমরোজ দৌঁড়ে গেলো মেয়েটার পিছু পিছু কিন্তু ধরতে পারলোনা। ও যতই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা ততই ওর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। ওক পর্যায়ে ও থমকে গেলো। কেউ ইচ্ছা করে ওকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। বুঝতে লেট হলো ভেবে রাগে দাঁত কিড়মিড় করলো। মেজাজ হারালে চলবে না তাই কোমর থেকে রিভ/লবার বের করে চিৎকার করে বলল,

সাহস থাকলে সামনে আসো মেয়ে। কছম প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবেনা। আমার সঙ্গে ছলচাতুরি একদম চলবে না।
ওর আওয়াজ আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো ঠিক সেই সময় মেয়েটা ওর সামনে দৃশ্যমান হলো। সুন্দর একটা অবয়ব বড্ড চেনাচেনা। ইমরোজ থমকে গেলো মেয়েটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে। কালো পিচঢালা রাস্তার মাঝখানে মুখোমুখি দুজন মানব মানবি দাঁড়িয়ে আছে।

একজনের মুখে রহস্যময় হাসি আরেকজনের মুখে বিস্ময় খেলা করছে। ইমরোজ একপা দুপা করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। আনমনে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার মুখের উপরে উড়ে আসা এলোমেলো কেশ পল্লবগুলো কানের পিঠে গুজতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। মেয়েটা দ্রুত নিজের স্থান পরিবর্তন করে রিনরিনে আওয়াজে বলে উঠলো,

ইমরোজ খান পাথর আজকাল কাপুরুষের ন্যায় ঘুমন্ত বালকের প্রাণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা থাকলে সামনে অবস্থানরত মানবির সঙ্গে লড়তে আসবেন দেখিয়ে দিবো সুলতানা কহিনুর ফারুকীর ক্ষ/মতা।
মূহুর্ত্তের মধ্যে ইমরোজের মধ্যে থাকা মুগ্ধতা কেটে গেলো। মেয়েটা যেমন সুন্দরী তেমনি কণ্ঠের ঝাঁঝ। অপমানে শরীর ওর জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হচ্ছে।

এইটুকু একটা মেয়ে ওকে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে কাবু করতে চাইছে তাও ইমরোজ খানকে? কথাটা ভেবে ও হাতে থাকা রিভল/বার পূণরায় উঁচু করে ধরলো। কহিনুর শব্দ করে হেসে উঠে হাতের মুঠোয় থাকা খঞ্জ/রটা ছুড়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ইমরোজের হাত থেকে রিভলবার পড়ে গেলো। হাতের কব্জি সামান্য কেটে গেছে সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে র/ক্ত বের হচ্ছে। মেয়েটা কথাতে না কাজেও পারদর্শী বুঝতে পেরে ও তেড়ে আসলো। কহিনুর ভূবন ভোলানো হাসি দিয়ে হঠাৎ থমকে গিয়ে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চাপা কণ্ঠে বলল,

ইচ্ছে ছিল খঞ্জ/রটা আপনার হৃদপিণ্ড বরাবর ছুড়ে দিব কিন্তু সেখানে কহিনুরের রাজত্ব চলে তাই ক্ষমা করলাম। এহেন ভুল করার আগে দুবার ভাববেন। নয়তো আফসোস করে কুল পাবেননা।
এতো দম্ভ তোমার নিজের ক্ষমতার উপরে? ইমরোজ খানকে ভালো করে চিনলে এসব বলতে তোমার বুক কে কেঁপে উঠতো মেয়ে। আমি ইচ্ছে করলে এই শহর তোমার জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।

কিন্তু আমি বলছি কহিনুর ফারুকীকে চিনতে পারলে নিজেকে সামলাতে আপনার যে নরক যন্ত্রণা হবে খান সাহেব তখন কি করবেন? শরীর না হৃদপিণ্ড পুড়বে। চিন্তা করবেন না আমি নিজ দায়িত্বে পুড়িয়ে দিবো।
ইমরোজের হাতে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে তাই পকেট থেকে টিস্যু বের করে হাত পরিস্কার করার জন্য রিভলবার কোমরে গুজে নিলো। আপাতত তর্কাতর্কি করবে না।

মেয়েটাকে আজ দেখে নিবে তার আগে হাতটার একটা ব্যবস্থা করা জরুরি। কিন্তু ঝামেলা হলো যখন ও হাত টিস্যু দিয়ে বাঁধতে গেলো পাশ ফিরে মেয়েটাকে আর পেলনা। শূন্য রাস্তা কোথাও কেউ নেই। মেয়েটা গাড়ির দিকে যেতে পারে ভেবে দৌঁড়াতে শুরু করলো। মিনিট পাঁচেক পর গাড়ির কাছে ফিরে এসে হতবাক হলো। সেখানে না মেয়েটা আছে না আলফা আছে। ইমরোজ রাগে দুঃখে গাড়িতে লাথি বসিয়ে দিলো। মেয়েটা বড্ড চালাক। প্রতিজ্ঞা করলো ওকে কিছুতেই ছাড়বে না।

বেলকনিতে অচেতন হয়ে পড়ে আছে কহিনুর। বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে অধরা। সকাল হয়েছে কিন্তু মেয়েটার এখনো ঘুম ভাঙেনি। চিন্তা হচ্ছে এদিকে গতকাল ছেলেটা কখন পার্টি থেকে চুপিচুপি ফিরে এসেছে সেটা বাড়ির কেউ জানেনা। জুবায়ের যেটা নিষেধ করেছে ছেলেটা তাই করে ফিরেছে। লোকটা জানতে পারলে ভীষণ বকাবকি করবে ভেবে অধরা সেটা বলতে পারেনি।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১০

ছেলের একটা দোষ স্বামীর থেকে লুকিয়েছে। আলফাকে লেবুর শরবত দিয়ে মেয়েটাকে ডাকতে এসে বিড়ম্বনার শেষ নেই। উঠছে না দেখে ও কিছু একটা ভেবে ফিরে গেলো। জানতেও পারলোনা মেয়েটা একটুও স্বাভাবিক নেই। শরীরে প্রচণ্ড উত্তাপ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। গতকাল রাতে হওয়া ঘটনা দুজন বেমালুম ভুলে গেছে কিন্তু একজন মনে রাখলো গভীরভাবে।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১২