কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১২

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১২
লাবণ্য ইয়াসমিন

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই পিটপিট করে তাঁকালো কহিনুর। শরীর ভীষণ দুর্বল কোনোরকমে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু হলোনা। হঠাৎ সাঈদের আওয়াজ শুনে ও চমকে উঠলো। পাশে সাঈদ বসে আছে। কহিনুর বেশ অবাক হলো ওকে দেখে। ভেবেছিল বাইরে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এখানে কিভাবে আসলো কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

তুমি কিভাবে আসলে? কেউ কিছু বলেনি?
সাঈদ ওর কথার উত্তর করলোনা। চামুচে করে ওষুধ নিয়ে ওর মুখের দিকে এগিয়ে দিয়ে মলিন হেসে বলল,
কাউকে কিছু বলতে হয়নি। কারণ কেউ জানেনা আমি এসেছি। আগে তুমি সুস্থ হয়ে উঠো তারপর বলবো সবটা। ওষুধটা খেয়ে নাও। অপেক্ষায় ছিলাম তোমার জ্ঞান ফেরার জন্য। অনুমতি ছাড়া তোমার নেকাবে হাত ছোঁয়ানো উচিত হবেনা তাই বসে আছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাঈদ মাথা নিচু করে কথাগুলো বলছে। কহিনুরের শুনতে বেশ খারাপ লাগলো। ছেলেটা ওর কথা ভেবে কতকিছু করছে তাকে অবিশ্বাস করা উচিত হবে না। তাই কোনোরকমে উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। মুখের উপর থেকে নেকাবটা সরিয়ে বলল,

তোমাকে অবিশ্বাস করছি না আমি। ওষুধ দাও।
সাঈদ অবিশ্বাস্য চোখে কহিনুরের দিকে চেয়ে আছে। এরকমটা কিভাবে হতে পারে মাথায় আসছে না। টুইন বেবি হলে সে আলাদা কথা কিন্তু একজনের সঙ্গে অন্যজনের এমন মিল কেনো থাকবে? কহিনুরের শক্তি যেকারো মধ্যে প্রবেশ করতেই পারে কিন্তু তাই বলে মানুষটা তো আর এক রকম হতে পারেনা।

সাঈদের মাথা ঘুরছে। সেই চোখ নাক মুখের আকৃতি কিছুই পরিবর্তন হয়নি।ঠোঁটের নিচের তিলটা পযর্ন্ত আছে। সাঈদের ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে। খুশীতে পাগল পাগল লাগছে। রহস্য যাইহোক পরিচিত চেনা আর ভালোবাসাতে মোড়ানো মুখখানা দেখে হৃদয়ে প্রশান্তি হচ্ছে। একবার যদি মালকিন এই মেয়েটাকে দেখতে পেতো তবে কেমন হতো? সাঈদকে থমকে যেতে দেখে কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। কৌতূহলী হয়ে জিঙ্গাসা করলো,

তুমি ঠিক আছো? কি দেখছো এভাবে? ওষুধ সামনে ধরে রাখলে হবে?
সাঈদ মিষ্টি করে হাসলো। ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা হচ্ছে সেটাকে দমিয়ে রাখা বেশ কঠিন। হাত ঠকঠক করে কাঁপছে। কহিনুর বুঝতে পারলো না হঠাৎ এরকম করার মানে কি তাই নিজেই ওর হাত থেকে ওষুধটা নিয়ে খেয়ে নিলো। ঘড়িতে আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট এতোক্ষন বাইরে থেকে ডাকার কথা ছিল কিন্তু কেউ আসলোনা ভেবে ও প্রশ্ন করলো,

সাঈদ কেউ ডেকেছিল আমাকে? তুমি কখন এসেছো? গতকাল ঘুমিয়েছিলাম জানিনা কি হলো। অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। জানিনা ওটা বাস্তব নাকি স্বপ্ন।যাইহোক তুমি কখন এসেছো?
কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। চিন্তা করোনা একবার ডেকেছিলো কিন্তু আমি তোমার হয়ে উত্তর নিয়েছি। বলেছি ক্ষুধা নেই। আমি তোমার ভয়েজ হুবহু নকল করতে না পারলেও কিছুটা পারি বুঝলে?
সাঈদের কথা শুনে কহিনুর হাসলো। ওষুধের কাজ শুরু হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যে ও সুস্থ হয়ে উঠবে।হঠাৎ ওর বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে,

আমার বাবা মা কোথায় আছে কিছু জানতে পেরেছো তুমি?
খোঁজ চলছে ইনশাআল্লাহ পেয়ে যাবো চিন্তা করোনা।
সাঈদ আমার একটা কাজের প্রয়োজন তুমি কি ব্যবস্থা করতে পারবে? এখানে চুপচাপ বসে থাকলে আমার আরও খারাপ লাগবে। আন্টিকে বলতে পারবোনা উনি শুনলে রাজি হবেন না। এদের ভালো মানুষি সুযোগ নিতে চাইছি না। প্লীজ খোঁজ করো। আমি পারবো কাজ করতে।
কহিনুরের কথা শুনে সাঈদের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। মেয়েটার মাথা সত্যি খারাপ হয়ে গেছে।ও কহিনুরের সঙ্গে একমত হতে পারলতনা তাই বলল,

একদম না তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমি সাহায্য করবো। বিপদে পড়বে তখন উদ্ধার করতে পারবো না আমি। বাইরে তোমার জন্য খুব একটা নিরাপদ হবে না।
কিছু হবে না আমার উপরে ভরসা রাখো। এখানে সারাদিন আমার কোনো কাজ নেই। এভাবে থাকলে সত্যিই খারাপ লাগবে। তারচেয়ে ভালো বাইরে গিয়ে কাজ করবো। আমি বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জানতে চাই সাঈদ। যখন পাশে কেউ ছিল না তখন বুঝেছি কতটা বোকা আমি।

কহিনুরের সঙ্গে ও তর্ক করে জিততে পারলোনা বিধায় মেনে নিলো। ভাবলো একটা কাজের খোঁজ এনে দিবে। কাজ পাওয়া এখানে কঠিন কিছু না। ছোটবড় সকল কাজকেই এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কহিনুর ততক্ষনে চোখ বন্ধ করেছে ঘুমানোর জন্য। সাঈদ ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কাছে থাকা লকেটটা কহিনুরের গলাতে পরিয়ে দিলো। এটা বহুকাল ধরে ওর কাছে গচ্ছিত ছিল।

ভেবেছিল এটা কাউকে দিবে না। কিন্তু আজ সিদ্ধান্ত বদল করতে হলো। কথাগুলো ভেবে ও বাইরে বেরিয়ে আসলো। মালকিনের সঙ্গে কতদিন দেখা হয়না। উনার মলিন মুখটা দেখলে বুকটা কেঁপে উঠে। সহ্য হয়না। কিন্তু আজ আর কষ্ট হবে না। কহিনুরের মতো দেখতে মেয়েটার জন্ম রহস্য সাঈদ খুঁজে বের করবে। মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুতভাবে অন্য একটা শক্তির আভাস পেয়েছে কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব সবটা মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।

সিক্রেট কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশিম খান। কক্ষটা বাইরে থেকে দেখতে যতটা স্বাভাবিক আদো এটা এতোটা স্বাভাবিক না। এই কক্ষের চারদিকে ধোয়াসা সৃষ্টি করা হয়েছে।মায়া দ্বারা বেষ্টিত। কেউ এসে বুঝতেই পারবে না কক্ষের মধ্যে মায়াবি পাহাড় ঝর্ণা আর খেপাটে রাক্ষসেরা বন্ধি আছে। এটা বিশেষ ভাবে তৈরী করেছেন। কারণ এখানে একজনকে উনি বন্ধি করে রেখেছেন যার দ্বারা সহজে উনি কহিনুরের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে উনি ঝর্ণা থেকে মায়াবি ঝিনুকটা তুলে নিলেন। খুঁলে দিলেন ঝিনুকের মুখ। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজ কোনো আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসলোনা। উনি হন্তদন্ত হয়ে ঝিনুকটা পরখ করলেন কিন্তু ফলাফল শূণ্য। সাঈদ ভেতরে নেই পালিয়েছে। কত কষ্ট করে ছেলেটাকে এখানে বন্ধি করেছিলেন তবে কে ওকে উদ্ধার করলো? খান সাহেবের চোখেমুখে বিস্ময়। এখানে কি কহিনুর এসেছিল কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? কহিনুর ছাড়া এহেন কাজ করার কার সাধ্য আছে? উনি আশপাশ পর্যবেক্ষণ করলেন এখানে কোনো মেয়ে সত্যি এসেছিল। খান সাহেব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করে ইমরোজের কক্ষে গিয়ে হানা দিলেন। রাগি কণ্ঠে বললেন,

আমার অনুমতি ব্যতিত সিক্রেট কক্ষে তুমি কাকে আটকে রেখেছিলে? তোমার সাহস দেখে আমি হতবাক হয়ে যায়। ছেলে মানুষি করে আমার কতবড় বিপদে ফেলেছো বুঝতে পারছো?
ইমরোজ অবাক হলো। ওই কক্ষে কি আছে ওর জানা নেই। কি এমন আছে যার জন্য উনি এমন করছেন?
দাদু কি আছে ওখানে? সামান্য কয়েক মূহুর্ত্তের জন্য একজনকে শাস্তি হিসেবে বন্ধ করে রেখেছিলাম। ও কি কিছু নিয়েছে তোমার?
দাদু টেবিল চাপড়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন,

ওই মেয়েটাকে আমার চাই যেভাবেই হোক ওকে আমার সামনে হাজির করবে। কোনো বাহানা শুনতে চাইনা আমি।
দাদু যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বেরিয়ে গেলো। ইমরোজের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বদ মেয়েটার জন্য দাদুর ঝাড়ি শুনতে হলো। ওকে হাতে পেলে সত্যি আছাড় দিবে।

ফাজিল মেয়ে পালিয়ে গেছে কিন্তু জট বাঁধিয়ে গেছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও কক্ষের বাইরে চলে আসলো। আজকের মধ্যেই মেয়েটাকে খুজেঁ বের করতে হবে। হন্তদন্ত হয়ে বের হওয়ার সময় ঐশ্বর্য নামের প্যারাটা পিছু নিলো। গতকাল একটা কাজে এই মেয়েটার সাহায্য নিয়েছিলো দাদুর কথা শুনে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি উল্টো মেয়েটা এখন কাঁধে চড়ে নাচতে চাইছে। ইমরোজ গাড়িতে গিয়ে বসতেই ঐশ্বর্য ওর পাশে উঠে আসলো। মিষ্টি হেসে বলল,

সুইটহার্ট চলো ক্লাবের দিকে যায়। দারুণ জমা হবে ।
ইমরোজ থমথমে মুখ করে বসে ছিল। মেয়েটার কথাটা সহ্য হলো না তাই দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল,
ইমরোজ খানের এমন খারাপ দিন এখনো আসেনি যে সস্তা টাইপ মেয়ের সঙ্গে ক্লাবে গিয়ে নাচানাচি করবো। এখুনি আমার গাড়ি থেকে নেমে যাও নয়তো ভয়ংকর খারাপ কিছু করে বসবো।তখন আফসোস করে কুল পাবেনা।
ইমরোজের হুমকি শুনে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে না। বরং মজা করে উত্তর দিলো,

তোমার এই ডাইলগ গুলো আমাকে জাষ্ট পাগল করে দেয় বিশ্বাস করো। কি খারাপ করবে করোনা তোমার হাতে আমি মরতেও রাজি। তোমার ছোঁয়া পেলে আমি দুঃখী না বরং সুখী হবো। দেবে নাকি সামান্য একটু ছোঁয়া?
ঐশ্বর্যের ওষ্ঠে দুষ্টু হাসি খেলা করছে। দাদুর উপরে ভরসা আছে তাই পাথরের সঙ্গে এধরণের কথা বলতে ওর ভয় করছে না। কিন্তু এদিকে ইমরোজের রাগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে হাতটা প্রসারিত করে বাঁকা হেসে ঐশ্বর্যের একদম কাছাকাছি চলে আসলো। তারপর বলল,

সুইটহার্ট আমার ছোঁয়া পেতে তুমি এতটা উতলা আগে বলবে না? কাছে আসো।
ইমরোজ চোখের পাপড়ি ঘটঘট ফেলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডান হাতটা দিয়ে ঐশ্বর্যের গাল টিপে ধরলো। মৃদু মৃদু তরঙ্গ হচ্ছে সঙ্গে গাড়ি কাঁপছে। বন্ধ গাড়ির মধ্যে ছিটকে যাওয়ার সুযোগ নেই তাই বাইরে পড়তে পারলোনা। ইমরোজের ছোঁয়াতে অজস্র যন্ত্রণা হচ্ছে।ঐশ্বর্য চিৎকার শুরু করলো,

ইমরোজ প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। মুখটা পুড়ে গেলো। আমি ম/রে যাবো প্লিজ প্রা/ণ ভিক্ষা দাও। আর কখনও তোমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবো না। প্লিজ ছেড়ে দাও।
ঐশ্বর্য ঈমরোজের হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না। ছেলেটার মুখে বিজয়ের হাসি। খানিকটা পরে ঐশ্বর্য অচেতন হয়ে ছিটের সঙ্গে ঢলে পড়লো।

ঈমরোজ ওর গাল ছেড়ে দিয়ে তাঁকিয়ে দেখলো দুপাশে বেশ খানিকটা জায়গা বাজেভাবে পুড়ে গেছে। কিছুটা তক হাতের সঙ্গে উঠে গেছে। এই দাগ আদো মিলবে কিনা সন্দেহ আছে। মেয়েটা নিজের রূপের বড্ড অহংকার করতো আজ সবটা শেষ। ইমরোজ গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। নিজের কৃতকর্মের জন্য একটুও আফসোস হচ্ছে না বরং খুশি লাগছে।

থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে জুবায়ের। মেজাজ চরম খারাপ ছেলের উপরে।অধরা না বললেও আলফার চোখমুখ দেখে যা বোঝার বুঝে গেছে। বিশেষ কিছু বলতে হয়নি। রাগ হচ্ছে অধরার উপরে। ছেলের অন্যায়ের শাস্তি দিবে কিনা সেটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। বাচ্চাদের মাথা বিগড়ে যায় অতিরিক্ত ভালোবাসার জন্য যেটা ও একদম চাইছে না। অধরা কফি হাতে ওর সামনে বসে আছে। না বলে ভুল করেছে বলে ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু লোকটা কথা বলছে না। অধরা কফির মগটা সামনে রেখে ছলছল চোখে বলল,

প্রথমবার ভুল করেছে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। বাচ্চাদের শাসন করার চেয়ে ভালোভাবে বোঝাতে হয়। আমাদের ছেলেটা কেমন আপনিতো ভালো করে জানেন। ও বলছে কেউ জুসের সঙ্গে ওসব মিশিয়ে ওকে দিয়েছিলো। ও জানতে পারলে খেতোনা। প্লিজ এবারের মতো।
জুবায়ের নড়েচড়ে বসলো। কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

ওকে আমি আগেই ক্ষমা করেছি কিন্তু তোমাকে করতে পারছি না। কথা লুকিয়ে অপরাধ করেছো।
কিন্তু কেনো? আমিতো মা তাইনা? মায়েরা এমনিই হয় একটু বুঝুন বিষয়টা।
জুবায়ের জোর‍দিয়ে বলল,
একদম বুঝতে পারছি না আমি। কেনো লুকিয়ে রাখতে হবে বলো? তুমি অন্যায় করেছো শাস্তি হিসেবে আগামী দুদিন তুমি আমার কথা অনুযায়ী চলবে। যা বলবো তুমি শুনতে বাধ্য থাকবে।

মগের মুল্লুক নাকি? পারবো না কি করবেন?
মগের মুল্লুক না জানি কিন্তু এটাযে সুলতান জুবায়ের ফারুকীর মুল্লুক। এখন বলো রাজি কিনা? কথা না শুনলে মা ছেলে দুজনের কপালে শনি আছে। আগামী এক সপ্তাহ আমাকে পাবেনা। তাই ভেবে ভেবে সিদ্ধান্ত নাও।
অধরা ভ্রু কুচকে আছে। লোকটার মাথায় কি চলছে বুঝতে পারছে না। তাই কিছু না ভেবেই বলল,
রাজি আছি সবটা শুনবো তবে অতিরিক্ত কিছু করলে কিন্তু মানবো না। লিমিটের মধ্যে থাকবেন। অন্যায় আবদার আমি মানি না মানবোনা।

এসব বলে পার পাবেনা। রাজি হয়েছো তুমি। এবার প্রস্তুত থেকো কিছুক্ষণ পর থেকেই শাস্তি কার্যকর শুরু হবে।
অধরা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। ভেবেছিল জুবায়ের প্রচুর রাগারাগি করবে কিন্তু কিছুই করলোনা এটাইতো অনেক । নির্জনতা কাটিয়ে জুবায়ের বলে উঠলো,

মেয়েটা কি করছে?এতো ঝামেলার মধ্যে মেয়েটার নাম জানা হয়নি। ওর বাবার খোঁজ নিতে লোক পাঠিয়েছিলাম। সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে উনার চেম্বারে একটা ফাইল পেয়েছে আমার লোকেরা। সেটা পেয়েছি গতকাল। হিসেব মিলছেনা। পরে তোমাকে বলবো ।
অধরা মাথা নাড়ালো। মেয়েটাকে আপনার লেগেছে। এখানে যতদিন আছে মেয়ের মতো আগলে রাখবে।

সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। মুখটা সবুজ রঙের ওড়না দিয়ে বাঁধা আছে। পরণে সবুজ রঙের গাউন। সাঈদের মাধ্যমে এখানে একটা কাজের সন্ধান পেয়েছে। কোম্পানির মালিক এখানকার স্থানিয় না বাংলাদেশি। সেই হিসেবে বাংঙ্গালীদের উপরে উনার বেশ নজর আছে। এক কথায় উনি ভালো মানুষ। কহিনুর এখানে হিসেব রক্ষকের কাজ করবে।অফিসের কর্মচারিগণের মাসিক বেতন আর বার্ষিক আয় ব্যায়ের হিসেব রাখতে হবে।

কহিনুর রাজি হয়েছে। কম্পিউটার থেকে নিজের কাগজপত্র তুলে অফিসে জমা দিতে এসেছিলো। সাঈদ একটা কাজে গেছে ওকে রেখে। সুলতান ভিলাতে কহিনুরের নতুন জবের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বললে হয়তো আসা হতোনা। তাই মিথ্যা বলেছে। পরে বুঝিয়ে বলবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কহিনুর রাস্তায় উঠে আসলো। অফিসের কাজ আপাতত শেষ। ফিরতে হবে।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১১

আনমনে হাটার দরুন রাস্তা পেরিয়ে আসার সময় হুট করে একটা কার এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে দিলো। কহিনুর ছিটকে গিয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে পড়লো। গাড়িটাও খানিকটা দূরে গিয়ে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে আসা অগন্তুক কহিনুরের পাশে গিয়ে থমকে গেলো। কহিনুর কপালে আঘাত লেগেছে খানিকটা কেটে গেছে। পায়ের অবস্থাও খারাপ। মেয়েটার জ্ঞান নেই। লোকটা হন্তদন্ত হয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৩