কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৩

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৩
লাবণ্য ইয়াসমিন

ঘুমন্ত মেয়েটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে অরিত্রী। বহুকাল প্রতিক্ষার পর মেয়েটাকে হাতে পেয়ে প্রতি/শোধের নেশা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গালিবের চতুরতার জন্য ওর জীবনটা কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। এতোগুলো বছরে ও না পেয়েছে রিজুর ভালোবাসা আর না পেয়েছে স্ত্রীর সম্মান। এদিকে রিজু নিজের স্ত্রী পুত্রদের নিয়ে দিব্যি আছে। এক বাড়িতে সতিনের সঙ্গে থাকতে হয় তবুও একটা শব্দও উচ্চারণ করে প্রতিবাদের ক্ষমতা ওর নেই।

মনে হয় সবটা হয়েছে শুধুমাত্র গালিবের জন্য। রিজু বউ বাচ্চা নিয়ে চুটিয়ে সংসার করেছে অরিত্রীকে রেখেছে নিজের শান্তির জন্য। মেয়েটার পরিবার কবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যাওয়ার কোনো যায়গা নেই তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা রিজুর হাতে কিছু ডকুমেন্ট আছে যেগুলোর জন্য ও থাকতে বাধ্য হয়েছে। কহিনুরের নামে গালিবের সম্পত্তির সবটা প্রায় দলিল করা আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিজু লোক লাগিয়েছিলো কহিনুরকে খোঁজার জন্য ফলাফল হিসেবে মেয়েটা ওখান ওদের হাতের মুঠোয় বন্ধি। এবার এমন বুদ্ধি খাটিয়ে গালিবকে কাবু করবে পৃথিবীর কোনো উকিল মুক্তার এসেও তা সমাধান করতে পারবেনা। অরিত্রী কহিনুরের মুখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিয়ে কিছুটা চমকে উঠলো। মেয়েটা কপালে সামান্য ক্ষতচিহ্ন আছে যেটা নেকাবের জন্য দেখা যায়নি। এলোমেলো চুলগুলো মুখের উপরে কিছুটা এসে পড়েছে।

শুস্ক ওষ্টদ্বয় তবুও দেখতে কেমন মায়া পরীর মতো। পালঙ্কে আজ সত্যি পরী নেমে এসেছে। রিজু ডাক্তার ডাকতে বাইরে গেছে। বাড়িতে লোকজন অনেকে আছে তবে ওদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। রিজু শুধুমাত্র অরিত্রীকে আসার অনুমতি দিয়েছে। গালিবের প্রতি এই বাড়ির প্রতিটা সদস্য ভীষণ ক্ষেপে আছে। তার মেয়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কেউ সহজে করবে না ওর ভালো করে জানা কিন্তু আপাতত রিজু সেটা চাইছে না। গভীর পরিকল্পনা করে রেখেছে সেটা ধরে এগোতে হলে মেয়েটাকে হাতে রাখতে হবে। অরিত্রীর ধ্যান ভাঙলো ডাক্তারের আগমনে সঙ্গে রিজুও এসেছে। ডাক্তার এসেই ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা দেখে নিলো। রিজু কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

মেয়েটার র/ক্তের রঙ সাদা মেবি আপনি বুঝতে পারছেন? কেমন অদ্ভুত না? গালিব বা ওর স্ত্রীর কিন্তু এমনটা না।
পৃথিবীর খুব কম মানুষের র/ক্ত এমন আছে। চিন্তা করবেন না। আঘাত অতটা গুরুতর না।
রিজু চুপ করলো। গালিবের মেয়ে এতোটা সুন্দরী ওর কোনোমতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়েটি দেখতে কার মতো হয়েছে বুঝতে পারছে না। এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে। না বাবার মতো না মায়ের ততো। মেয়েটিকে এই বাড়িতে আজীবনের জন্য বন্ধি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যেই ডাক্তার ড্রেসিং করে ওষুধ দিয়ে বিদায় নিলেন। রিজু এবার পুরোপুরি অরিত্রীর দিকে চাইলো। মুখটা আরও কঠিন করে বলল,

ওকে দেখে রাখবে। কোনোরকমে পালিয়ে গেলে বা ওর অসুবিধা হলে তোমার খবর আছে। ওর বাবার থেকে সবটা কেড়ে নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে তবে আমার দম। বহুকাল পরে এহেন সুযোগ পেয়েছি। এই কাজে যদি তোমার থেকে আমি প্রপার সাহায্য পেয়ে থাকি তবে কথা দিচ্ছি তোমাকে মুক্তি দিব।

মুক্তির কথা শুনে অরিত্রীর চোখ খুশীতে চকচক করে উঠলো। এখানে থাকতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। একটা অপরাধের শাস্তি আজীবন বহন করে আসছে। জানা নেই কতকাল এমন চলবে। তবে এবার কিছুতো একটা হবে। হয় এই বাড়ি থেকে মুক্তি নয়তো জীবন থেকে। কথাটা ভেবে ও রিনরিনে কণ্ঠে উত্তর দিলো,

তোমাকে বিশ্বাস করতে বড্ড ইচ্ছা করে কিন্তু বিশ্বাস করো মন থেকে কিছুতেই সাড়া আসেনা। তোমার কুমন্ত্রণাতে একটা পাপ করে আমি আজীবন নরক যন্ত্রণা সহ্য করছি। আরেকটা পাপে জানিনা আমার কি হবে তবুও করবো। এবার নাহয় পৃথিবী থেকেই মুক্তি মিলবে। ওকে দেখে রাখবো।

অরিত্রীর দিকে বাঁকা হেসে রিজু প্রস্থান করলো। দুদিন ধরে সুলতান হাউজের সামনে দুজন গার্ডকে রেখেছিলো কহিনুরের জন্য। আজ যখন মেয়েটা বেরিয়ে এসেছে তখনই ও ইচ্ছা করে ওকে ধাক্কা দিয়েছিল ফলাফল হিসেবে মেয়েটা এখন অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। কথাগুলো ভেবে ও ছেলের কক্ষে গিয়ে হানা দিলো। ওর ছেলে বছর তিনেক হচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের ব্যবসার হাল ধরেছে। বদ মেজাজী কিন্তু ব্যবসায়ী বুদ্ধি আছে প্রখর।

রিজুর প্রথম স্ত্রী রুশির বড় পুত্র মাহিম রিজুয়ান। বাবার প্রতি ছেলেটা একটুও সন্তুষ্ট হতে পারেনা। মায়ের প্রতি ভালোবাসা ওর প্রথম থেকেই বেশি। লোকটা ওর মায়ের সামনে অন্য একটা মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে এই বাড়িতে রেখেছে যেটা বড্ড দৃষ্টিকটু লাগে। যদিও এখানে কেউ ওকে এই বিষয়ে তেমন কিছু বলেনা কিন্তু বাংলাদেশ থাকতে বহুজনের বহুরকম কথা শুনতে হয়েছে।মায়ের চোখের পানি দেখতে হয়েছে। যেটা ভুলে যাওয়ার না। হঠাৎ অসময়ে বাবাকে নিজের কক্ষে দেখে ওর ভ্রু কুচকে গেলো। বিরক্তিতে মুখটা আচ্ছাদিত হয়ে উঠলো। ছেলের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে রিজু যা বোঝার বুঝে গেলো তাই না ঘাটিয়ে সোজাসুজি বলল,

জানি আমার উপরে তুমি ভীষণ বিরক্ত কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সব সময় তোমাদের ভালো চেয়েছি এখনো চাই। তোমার মায়ের সঙ্গে আমি কিন্তু কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করিনা। সে আমার উপরে তোমার মতো এতোটা অসন্তুষ্ট না। আমাকে বরং ভালবাসে। যাইহোক যে জন্য এসেছি আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।আশাকরি আমার পছন্দের পাত্রীকে তোমার খুব একটা অপছন্দ হবে না। যার জন্য আমাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে হয়েছে বলতে পারো তাঁর প্রতিশোধ নিতেই তোমার সাহায্য নিতে হচ্ছে। একবার ওকে দেখে নিয়ে তারপর মতামত জানাও।

বাবা নামক লোকটাকে মাহিমের যতটা বিরক্ত লাগতো আজ তার সীমানা ছাড়িয়ে গেলো। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। স্বার্থছাড়া ভদ্রলোক জীবনে কিছু করেছে কিনা সন্দেহ আছে। তাই মুখটা কঠিন করে উত্তর দিলো,

আপনার কি মনে হয় অরিত্রীর ন্যায় আরও একটা জঞ্জাল মেয়েকে এই বাড়িতে এনে আমার জীবনটা আমি নষ্ট করবো? কখনও না। আপনার পছন্দ কতটা ভালো সে আমার জানা আছে। আপনি স্বার্থের জন্য গণিকা পাড়া থেকে কোনো গণিকাকে ধরে আনবেন না সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়না। অর্থের জন্য গণিকাকে ছেলের বউ করে আনতেও রুচিতে বাঁধবে না।
রিজু হতবাক চোখে ছেলেকে দেখছে। ছেলের মনে নিজের জন্য কতটা ঘৃণা লুকানো আছে আজ আন্দাজ করতে পারছে। যতই ঘৃণা করুক তাই বলে ছেলের জন্য গণিকা আনবে এটা কেমন কথা? রিজু ধমক দিয়ে উঠল,

আজেবাজে কথাবার্তা একদম বলবে না। মেয়েটা তোমার গালিব আঙ্কেলের একমাত্র মেয়ে। তুমি জানো কার সম্পর্কে কি বলছো? যাকে গণিকার সঙ্গে তুলনা করছো সেই মেয়েটিকে গালিব কতটা যত্ন নিয়ে মানুষ করেছে জানো? গালিব নিখোঁজ মেয়েটা রাস্তায় আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিলো তাই নিয়ে এসেছি। ভেবেছি বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই রাখবো। অন্যায় করেছে ওর বাবা মেয়েটার কি দোষ বলো? মুখে মুখে তর্ক করা শিখেছো। রুশি নিজের মতো তোমাকে বেয়াদব তৈরী করেছে। ভালো শিক্ষা না দিয়ে হিংসা সন্দেহ এসব শিখিয়েছে?

আমার মায়ের নামে আর একটা শব্দও উচ্চারণ করবেন না। আপনি নিজে কেমন যে আমার মাকে এসব বলছেন? গালিব আঙ্কেল আপনার জন্য বাধ্য হয়ে এই বাড়ি ছেড়ে নাটকীয়ভাবে চলে গিয়েছিলেন। উনি বাইরে গিয়েও আপনার কুনজর থেকে বাঁচতে পারেননি। উনার মেয়েকে পযর্ন্ত তুলে এনেছেন।

আমি এত কথা শুনতে চায়না। রাজি থাকলে ওকে দেখে আসো। না হলে তোমার ছোট ভাইকে বলতে বাধ্য হবো। আশাকরি সে আমার কথার অবাধ্য হবে না।
মাহিম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে হনহন করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। লোকটার সামনে থাকা মানেই তর্কাতর্কি করা। মাহিম হন্তদন্ত হয়ে অরিত্রীর দরজায় গিয়ে নক করলো। জীবনে প্রথমবার এই কক্ষের সামনে আসা যদিও রুচিতে বাঁধছে কিন্তু কিছু করার নেই। কহিনুরকে দেখতে হবে।

বিয়ে করবে কি পরের বিষয় আগে মেয়েটার খোঁজ নিতে হবে।। মাহিমের ধ্যান ভাঙলো দরজা খোলার আওয়াজ শুনে। ও একপা দুপা করে ভেতরে প্রবেশ করলো। অরিত্রী এক পাশে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিম সোজা গিয়ে পালঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে হতভম্ভ হলো। এতোটা সুন্দর পবিত্র আর শুভ্র মুখটা দেখে ওর নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। কয়েকবার ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

ডাক্তার কি বলেছে? সুস্থ হতে কতদিন লাগবে? ক্ষত ঠিক হবে নাকি দাগ পড়বে?
অরিত্রী অতিরিক্ত অবাক হওয়ার দরুন কথা বলতে ভুলে গেলো। এই প্রথমবার মাহিম ওর সঙ্গে কথা বলেছে তাই কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল,

সপ্তাহ খানিকটা লাগবে ঠিক হতে। নিয়মিত ওষুধ আর ড্রেসিং করতে হবে। ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙবে।
ঘুম থেকে উঠলে আমাকে ডাকবেন। ড্যাডকে বলে দিবেন উনার প্রস্তাবে আমি রাজি তবে সেটা আগামী দুদিনের মধ্যে হলে হবে নয়তো না।

মাহিম কিছুক্ষণ কহিনুরের দিকে চেয়ে থেকে যেভাবে এসেছিল সেভাবে চলে গেলো। অরিত্রী ওর পিছু নিলো। কক্ষ খালি হতেই সাঈদ ভেতরে প্রবেশ করলো। কহিনুরকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বুঝতে পেরেছে। খানিকটা চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য। কহিনুরের শক্তি সম্পর্কে মেয়েটা এখনো অবগত না এর মধ্যে কিছু হয়ে গেলে তখন বিপদের শেষ নেই। সাঈদ দ্রুত এসে কহিনুরের কপালে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। কাটা জায়গাগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলো। সবটা মূহুর্তে গায়েব। কহিনুর বিছানায় উঠে বসতে বসতে চার‍দিকে তাঁকিয়ে জিঞ্জাসা করলো,

সাঈদ আমি কোথায় আছি? রাস্তায় একটা গাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো তারপর কিছু মনে নেই।
সাঈদ কহিনুরের কাছে উঠে বসলো। কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
আমি তেমন কিছু জানিনা নূর তবে মনে রেখো এটা তোমার বাবার শত্রুদের বাড়ি। আমি শুনেছি রিজু নামের লোকটা উনার ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন। তোমার নামের সম্পত্তিগুলোর জন্য এরা উঠেপড়ে লেগেছে। আজ পূর্ণিমা কহিনুর।
সাঈদ শেষের কথাটা বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল। আজ পূর্ণিমা তার সঙ্গে এই বাড়ি বা কহিনুরের কি সম্পর্ক ও বুঝতে পারলোনা তাই জিঞ্জাসা করলো,

আজ পূর্ণিমা সেতো আমিও জানি কিন্তু তাতে কি? সাঈদ আমার মনে হচ্ছে এরা বাবাকে লুকিয়ে রেখেছে। বাবাকে উদ্ধার করতে এই বাড়িতে থাকতে হবে বুঝলে? তুমি আমার সঙ্গে থাকবে তো?
নিশ্চয়ই থাকবো চিন্তা করোনা।
কহিনুর ভরসা পেলো। বাবার জন্য খারাপ লাগছে। সুলতান ভিলাতে ফোন করে বলে দিবে দুদিন ফিরছে না নয়তো ওরা চিন্তা করবে।

মুখ ফুলিয়ে বসে আছে অধরা। জুবায়ের ল্যাপটপে কাজ নিয়ে ব্যস্ত অধরা মাঝেমাঝে ওর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। শাস্তি চলছে তাই প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। আলফা আর দৃষ্টি গেছে ইউনিভার্সিটিতে। ছেলেমেয়ে দুটো থাকলে এটা নিয়ে ভীষণ মজা নিতো জুবায়ের সেসবে পাত্তা দেয়না কিন্তু অধরা বেশ চটে যায়। খাওয়া শেষে জুবায়েরের সঙ্গে ওকে অফিসে যেতে হবে। কাজ শেষ করে জুবায়ের একবার বউয়ের দিকে চেয়ে সামান্য হেসে নিলো। বহুদিন পরে বউকে জব্দ করার একটা জব্বর হাতিয়ার পেয়ে ভীষণ খুশী লাগছে। বউ একটুকুও কথা শুনেনা এবার কি হবে বাছা? অধরা ওষ্ট ফুলিয়ে টেনেটেনে বলল,

লোকে দেখলে কি বলবে? এই বয়সে আপনি আমার হাতে খাচ্ছেন ছেলেমেয়েগুলোর সামনে পড়লে লজ্জা পাবেন না বলুন?
জুবায়ের ল্যাপটপ বন্ধ করে অধরার দিকে সোজা হয়ে বসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
আমি লজ্জা পাচ্ছি না তো কে আমাকে লজ্জা দিবে শুনি? ফাঁকিবাজি বহুত হয়েছে এবার মন দিয়ে স্বামীসেবা করো আল্লাহ খুশি হবেন। নিয়মিত আমাকে নিজে হাতে খাওয়াবে কাছাকাছি থাকবে। মাঝেমাঝে নিজ দায়িত্বে চুমুটুমু দিবে। বউদের কাজকর্ম তুমি ভুলে গেছো তাইতো বাধ্য হয়ে পূণরায় তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি।

আমার দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে লেকচার দিতে হবে না। আপনি সবসময় সুযোগ খুঁজেন কিভাবে আমার সঙ্গে চিপকে থাকতে পারেন। বয়স হচ্ছে সঙ্গে ভিমরতি বেড়েছে। এই আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। যেকোনো সময় আমি কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবো।
অধরা শেষের কথাগুলো দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কটমট করে বলল। জুবায়ের মজা পাচ্ছে। আরও খানিকটা রাগিয়ে দিতে বলল,

আমিওতো চাইছি তুমি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে কিছু একটা করো। আমি পরম যত্নে বউকে আগলে নিয়ে আদর দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। প্রেয়সীর হৃদয়ের উর্বর প্রেমকুঞ্জে ভালোবাসার বীজ বপন করতে পারি।
অধরা ঘনঘন চোখের পাপড়ি ঝাপটে উত্তর দিলো,

ভূমির উর্বরতা নিয়ে পরে চিন্তা করবেন আজকের দিনটা ভুলে গিয়েছেন? মিটিং কি বাদ দিবেন? আপনার হাতে এক ঘন্টা সময় আছে।
মিটিংয়ের কথা ভাবতেই জুবায়ের গম্ভীর হয়ে গেলো। অধরাকে তৈরী হতে বলে নিজেও সবটা গুছিয়ে নিলো। আজ একজনের সঙ্গে দেখা করার আছে তাই জুবায়ের ওকে সঙ্গে নিচ্ছে যেটা অধরা কিছু জানেনা। মানুষটার সঙ্গে ওদের আজ প্রথমবার দেখা হবে। কেমন হবে প্রথম সাক্ষাৎ?

মেঘমুক্ত পূর্ণিমা রাত। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে কহিনুরের মুখের উপরে আছড়ে পড়ছে। ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ও বিকালে ঘুমিয়েছিল আর ঘুম ভাঙেনি। সাঈদ বাইরের রাস্তায় আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তাল সমুদ্রের পানি উপছে পড়ছে জোয়ার এসেছে। কহিনুরের কর্ণকুণ্ডলের সমুদ্রের গর্জন এসে আঘাত করছে। শব্দ শুনে কহিনুর মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চোখ খুঁলে চাইলো। সোজাসুজি বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে এসে খানিকটা চাঁদের দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১২

আমি সুলতান কহিনুর ফারুকী,সুলতান জুবায়ের ফারুকীর কন্যা। এর চেয়ে সত্যি পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সচেতন বা অচেতন যায় হয়ে যাক কখনও ভুলে যাবোনা আমার সত্যিটা।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৪