কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৭

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৭
লাবণ্য ইয়াসমিন

পাশে বসে থাকা অচেনা রমণীর কণ্ঠটা জুবায়েরের কাছে কেমন চেনাশোনা মনে হচ্ছে। মেয়েটাকে পূণরায় দেখার জন্য জুবায়ের পাশ ফিরে ভ্রু কুচকে ফেলল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আদলের পরিবর্তন ঘটে। মেয়েটাকে ওর খুব চেনা একজনের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করতেই চমকে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা ফুপিয়ে উঠে অভিযোগের সুরে বলে উঠলো,

কেনো করলে এমনটা জুবায়ের? তোমাকে ভালোবাসে আমি কি অন্যায় করেছিলাম বলতে পারো? ওরা আমাকে এতগুলো বছর আটকে রেখেছিল। তুমি জানো ওরা আমাকে কিভাবে নির্যাতন করেছে। শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে। তুমি দিব্যি আছো আমাকে ভুলে। কেনো জুবায়ের কেনো? সুলতান জুবায়ের ফারুকী কথা দিয়ে কথা রাখেনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তুমি না আমাকে কথা দিয়েছিলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচবে? আমরা ছোট একটা সংসার সাজাবো তবে সবটা কি তোমার ছলনা ছিল?
বহুকাল পরে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকাকে দেখে হতভম্ব জুবায়ের। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। হুট করে ওর মনে হলো জুহি মা/রা গিয়েছিল তবে ফিরে আসলো কিভাবে? তাছাড়া জুহির সঙ্গে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল সেও কি তবে মিথ্যা ছিল?কথাগুলো ভেবে ও মুখটা কঠিন করে উত্তর দিলো,

বেইমা/নদের কথা রাখা আর না রাখা সব সমান। তাছাড়া তুমি না মা/রা গিয়েছিলে? তোমার বয়ফ্রেন্ড আর তোমাকে কে জানি মে/রে সুইমিং পুলে ফেলে গিয়েছিল আমার চোখের সামনে ঘটেছিলো আমি দেখেছি সবটা।
ও রিয়েলী? তবে জেনে নাও সত্যিটা হচ্ছে ওটা আমি ছিলাম না। এক রকম দেখতে হলেই কি সে আমি হয়ে যাবো? ওটা আমার বোন ছিল। আমরা তিন বোন দেখতে প্রায় এক। মা/রা যাওয়ার পরে ওর চেহারার আদল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল তবে এমনটা না যে তুমি বুঝতে পারবেনা। তুমি ওকে কাছ থেকে দেখেছিলে? নাকি খবর পেয়ে চলে এসেছিলে কোনটা?

একটু যদি খোঁজ করতে তবে আমাকে এভাবে বন্ধি থাকতে হতোনা। তোমার জন্য ওরা আমাকে আটকে রেখেছিলো। তারপর যখন প্রয়োজন শেষ হলো অমনি কোথায় একটা পাচার করে দিলো। কত কষ্ট হয়েছে তোমার কাছে আসতে যদি সেটা জানতে। আমার অন্যায়টা কি বলবে জুবায়ের? শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমি সবটা হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছি। আমার দোষী তুমি। তোমাকে ক্ষমা করবোনা আমি কখনও না।

জুবায়েরর ভেতরেটা কেমন আনচান করছে তবে সেটা পাশে বসে থাকা মেয়েটার জন্য না। নিজের ঘরে অবস্থান করা চমৎকার সেই মেয়েটার জন্য। যার জাদুকরী ছোঁয়া পেয়ে জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছিলো। মেয়েটাকে পেয়ে ভালোবাসা কি বুঝতে পেরেছিলো। নিজের কৃতকর্মের জন্য প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। অধরা কিভাবে বিষয়টা মেনে নিবে বুঝতে পারছে না। দিশাহারা অবস্থা। কোনোরকমে নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা। জুবায়েরকে চুপচাপ দেখে জুহি ফুলে উঠলো। ঝাঝালো কণ্ঠে পূণরায় বলল,

চুপচাপ থেকে কি প্রমাণ করতে চাইছো সুলতান জুবায়ের ফারুকী একজন ভণ্ড প্রেমিক? কথা দিয়ে কথা রাখেনা।আচ্ছা তুমি বিয়ে করেছো তাইনা? যাইহোক আমাকে নিয়ে চলো তোমার বাড়িতে। তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী হতে আমার অসুবিধা নেই। খুব ভালোবাসি তোমাকে জুবায়ের প্রচণ্ড ভালোবাসি। তোমাকে ছেড়ে আমি আর বাঁচতে পারবোনা বিশ্বাস করো।
জুহির কথা শুনে জুবায়ের চমকে উঠলো। দ্বিতীয় স্ত্রী মানে কি? কখনও না। সুলতান জুবায়ের ফারুকী অধরা ছাড়া কাউকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবেনা কখনও না।

কত টাকার প্রয়োজন তোমার? এক কোটি,দুই কোটি নাকি আরও বেশি? আচ্ছা যাও দশ কোটি ফাইনাল।আমার বোকামির জন্য তোমাকে ভুগতে হয়েছে তাই আমি দশ কোটিতে তোমার সঙ্গে ডিল করলাম। এই টাকায় তুমি বাকীটা জীবন আরামদায়কভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে। শহরের বাইরে আমার ফার্ম হাউজটা আছে তুমি চাইলে নিতে পারো। প্রমিজ যেকোনো দরকারে সাহায্য করবো কিন্তু প্লিজ আমার দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়ার স্বপ্নটা দেখোনা। আমার ঘরে একজন বাঘিনী আছে। বিশ্বাস করো আমার হৃদয়ের বন্ধ খাচায় তার বসবাস ছাড়া সেখানে কেউ নেই। তোমার জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু ভালোবাসাটা আসছে না। তুমি আমার কাছে বিষের সমান। আমার শান্তি তোমাতে নেই।

জুবায়ের এক নিশ্বাসে সবটা বলে মাথা খানিকটা ঝুকে উত্তরের আশায় চুপ করলো। জুলি হতভম্ভ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। যে একটা সময় ওর জন্য পাগল ছিল, মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। যাকে পাওয়ার জন্য অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে পযর্ন্ত করেছিল সেই ছেলেটা আজ বলছে ও নাকি বি/ষের মতো। মানুষের জীবনে ভালোবাসা বলতে কি কিছু নেই? জুহি রাগে গিয়ে বলল,

সুলতান জুবায়ের ফারুকীকে ভালোবাসার মূল্য মাত্র দশ কোটি টাকা? চমৎকার। তোমার লজ্জা করছে না একটা সময় তুমি আমার জন্য কতটা পাগল ছিলে মনে আছে তোমার?
পুরাতন কথা মনে করিয়ে লাভ নেই। পুরাতন কথাবার্তা মনে করাতে আসলে তোমাকে আমি একটা টাকাও দিবনা প্রমিজ। খালিহাতে তোমাকে ফিরতে হবে। স্বার্থের জন্য নিজের প্রেমিকের বিয়ে দিতে তোমার অসুবিধা হয়না আর আমি নিজের হৃদয়ের অংশ, বিবাহিত স্ত্রীর জন্য তোমার মতো মেয়েকে টাকা অফার করতে আসলেই দোষ। যাইহোক নামো আমার গাড়ি থেকে। টাকা তোমার একাউন্টে চলে যাবে চিন্তা নেই।
জুবায়ের খানিকটা তেড়ে উঠেছে জুহির আচরণ দেখে,

নামব না কি করবে? আমি তোমার জন্য এতটা কষ্ট পেলাম আর তুমি এখন আমাকে দোষারোপ করছো? মানবতার খাতিরে হলেও একটু ভালো ব্যবহার তোমার থেকে আমি আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম জুবায়ের ফারুকী হয়তো এখনো আমাকে ভালোবাসে। আমারই ভুল। যাইহোক আমাকে ওরা খোঁজ করছে সেখান থেকে আমি পালিয়ে এসেছি। প্লিজ তোমার বাড়িতে কয়েকদিন থাকতে দাও পরে আমি চলে যাবো।
জুবায়ের চুপচাপ মেয়েটার অনুরোধ শুনলো। তারপর গাড়ি ছেড়ে দিয়ে গভীর চিন্তাই মগ্ন হলো। পাশের মেয়েটার মুখে রহস্যময় হাসি ফুঁটে উঠেছে। গাড়ির কাচে সুক্ষ একটা আলোর গোলক জ্বলজ্বল করতে করতে জুবায়েরের কপাল সোজা গিয়ে মিলিয়ে গেলো।

কহিনুরের কক্ষে বসে আছে দৃষ্টি আর আলফা। বোনকে পেয়ে দুজনেই প্রচণ্ড খুশি। সাঈদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইবোনদের কথার মধ্যে হঠাৎ দৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে কহিনুর বলে উঠল,
মাহীম রেজুয়ানকে চিনো? তোমাকে প্রপোজ করেছে আমি তার কথা বলছি।
কহিনুরের কথা শুনে দৃষ্টি লজ্জা পেলো। তবে আলফা খানিকটা অবাক হয়েছে। দৃষ্টির উত্তরের আগেই ও বলে উঠলো,

পার্টিতে দেখা হয়েছিল। কিন্তু একদিন দেখে কাউকে প্রপোজ কিভাবে সম্ভব? লোকটার মাথা ঠিক আছে?
কহিনুর আলফার কথাটা এড়িয়ে গিয়ে দৃষ্টির দিকে মন দিলো। মেয়েটা হঠাৎ চনচল হয়ে উঠলো। ঘনঘন চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,

এই জন্যই আমি উনাকে হ্যাঁ না কিছুই বলিনি। সত্যি উনার জন্য আমার মনে কিছু নেই। বন্ধুদের জন্য উনাকে ঝুলিয়ে মজা নিয়েছি, খুব সরি।
আলফা দৃষ্টির মাথায় থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে কটাক্ষ করে উত্তর দিলো,
পে/ত্নি, ভুলভাল কাজকর্ম করে আমাদের হার্ট দুর্বল করা তোর স্বভাব। দেখতে বাচ্চা কিন্তু বুদ্ধি ভয়ঙ্কর।
কহিনুর হাতের মুঠো শক্ত করে বলল,

ওর থেকে দূরে থেকো তোমার জন্য ভালো হবে। আমার বোন কিছুতেই মাহীম রিজুনের বাড়িতে যাবেনা। সুলতান পরিবারের মেয়েরা সস্তা না। তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
কহিনুর কথা শেষ করে অপেক্ষা করলোনা। মন আনচান করছে। কিছু একটা হচ্ছে। কহিনুর সোজাসুজি বেলকনিতে গিয়ে সাঈদের পাশে গিয়ে বলল,

সাঈদ বাতাসে কিসের একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে বলোতো? মন অস্থির হচ্ছে।
ও টার্গেট করে সফল হয়েছে নূর। আমি যেতে যেতে সবটা শেষ। চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা দুজনে ঠিক করে ফেলবো।
সাঈদের এলোমেলো কথাবার্তা শুনে কহিনুর অবাক হলো। বুঝতে না পেরে জিঞ্জাসা করলো,

বুঝিয়ে বলো কি হয়েছে বলবে?
সাঈদ উত্তর দিতে পারলোনা তার আগেই নিচ থেকে অধরার কণ্ঠ ভেসে আসলো। কহিনুর দ্রুতগতিতে বেরিয়ে এসে করিডোরে দাঁড়িয়ে পড়লো। নিচে জুবায়েরের সঙ্গে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের মুখটা দেখে ও ভ্রু কুচকে ফেলল। কষ্ট পাচ্ছে কেনো বুঝতে পারছে না।
জুহিকে নিয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে জুবায়ের বাড়িতে ফিরেছে। অধরা এক পলক দেখে একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো জুবায়েরকে উদ্দেশ্য করে,

ওকে এতদিন পরে কিভাবে পেয়েছেন? ও মা/রা যায়নি তবে কোথায় ছিলো? আপনি ওকে বাড়িতে কেনো এসেছেন? ওর পরিবার কোথায়?
জুবায়ের মলিন কণ্ঠে উত্তর দিলো,
কেউ ওকে আটকে রেখেছিল সেখানে ছিল এতদিন। আজ পালিয়ে এসেছে আমার সঙ্গে রাস্তায় দেখা। মেয়েটা অসহায় যাওয়ার জায়গা নেই। সাহায্য চেয়েছে তাই এনেছি। আজ থেকে ও এখানেই থাকবে। ওর জন্য রুমের ব্যবস্থা করো। মেয়েটা না খেয়ে আছে খেতে দাও।
জুবায়েরের এতো কেয়ার দেখে অধরার মাথায় আ/গুন জ্ব/লে উঠলো। বরের প্রাক্তনকে দেখে চুল ছি/ড়তে ইচ্ছা করছিলো। তবুও রাগ নিয়ন্ত্রণ ছিল হঠাৎ জুবায়েরের আলগা পিরিত দেখে সহ্য হলোনা। ঝাঝালো কণ্ঠে বলল,

আমাকে বলতে হবেনা আমি সবটা জানি। রুবাইদা এই মেয়েকে গেষ্ট রুমে নিয়ে যাও। দরকারি ওষুধ আর পোশাক দাও আমি খাবার দিচ্ছি।
অধরা কাজের মেয়েকে ডেকে দিয়ে হনহন করে কিচেনের দিকে চলে গেলো। জুবায়ের চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। অধরার উপরে বিরক্ত লাগছে হঠাৎ করেই। এভাবে কাজের মেয়ের উপরে সবটা ছেড়ে দিয়ে কিভাবে চলে যেতে পারে ও ভাবতে পারছে না। তাই নিজেই জুহিকে নিয়ে গেষ্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। জামসেদ অবাক হলো ভাইয়ের ব্যবহার দেখে।

বাইরে থেকে এসে আগে জুবায়ের অধরাকে নিয়ে নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করে। যায় হয়েযাক দুজনের মধ্যে কখনও সামান্যতম ভুল বোঝাবুঝি ঠাই হয়না সেখানে আজ গার্লফ্রেন্ড পেয়ে বউকে ভুলে গেলো? নাকি কাহিনী ভিন্ন? জামসেদ কৌতূহলী হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে হঠাৎ কহিনুরের দিকে ওর নজর গেলো। মেয়েটা ইশারায় ওকে ডাকছে। জুহির ঝামেলায় কহিনুরের খবরটা জুবায়েরকে দেওয়া হয়নি। জামসেদ অপেক্ষা করলোনা সোজা উপরে গিয়ে কহিনুরের কাছে গিয়ে থামলো।

কি হচ্ছে বলোতো? জুবায়ের অদ্ভুত আচরণ করছে না?
করতে দাও চাচ্চু। আপাতত আমার খবর এখানে প্রকাশ করোনা। সবাইকে নিষেধ করো আমি ফিরেছি এটা বাইরের কাউকে বা বাবাকে জানাত।দারুণ মজা হবে। একজনকে সামনে আনতে চলেছি যা হচ্ছে হতে দাও।
জামসেদ অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,

জুবায়েরকে টার্গেট করা হয়েছে? আল্লাহ এবার বুঝেছি। কি হবে এখন?
কিছু হবে না। ওরা সুলতান জুবায়ের ফারুকীকে চিনতে পারেনি এবার চিনবে। ভদ্রলোক যা রাগি উনাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এটাই দেখতে চাইছি। তুমি দেখে যাও মজা পাবে। আমি সামলাতে পারবো ভরসা রাখো। চাচ্চু তোমাদের অফিসে আগামীকাল থেকে দুদোদিন আমি যাচ্ছি। কোনো অসুবিধা নেইতো?
কহিনুর আবদার শুনে জামসেদ হাসলো। ওর মাথায় হাত রেখে উত্তর দিলো,

আরে দূর,কিসের আমাদের অফিস? সবটা তোমার। মানে আমার মায়ের। ওয়াশিম খান উঠেপড়ে লেগেছে আমাদের পেছনে। জানিনা কিসের শ/ত্রুতা।
আমি দেখে নিবো তুমি চিন্তা করোনা। তুমি শুধু বাড়ির দিকে নজর রাখো। ছোট আম্মুকে টাইম দাও।দুটোদিন ফ্রি বলতে পারো তারপর আবারও কাজে লেগে পড়বে।
জামসেদ উল্লাসপূর্ণভাবে বলে উঠলো,

দুদিন টাইম মানে আমার ঈদ?
জামসেদ কহিনুরকে জড়িয়ে ধরে পূণরায় বলল,
ঈদ মোবারক আম্মা।
কহিনুরের হাসি পাচ্ছে লোকটার পাগলামি দেখে। জামসেদ ওকে ছেড়ে দিয়ে ঘরের দিকে ছুটলো। কাজের প্রেসারে জীবন ছন্নছাড়া টাইপ হয়ে আছে। দুদিন ছুটি মানে বিশাল কিছু। এই টাকা পয়সার চাপে পড়ে সুখ নামক অদৃশ্য বস্তুটা গায়েব হয়ে গিয়েছিলো। জামসেদ শান্তি পেলো কহিনুর সবটা দেখবে বলেছে। কহিনুর সেদিকে তাঁকিয়ে গেষ্ট রুমের দিকে উঁকি দিলো। জুবায়ের জুহির কাটা জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে পরিধেয় পোশাক দিয়ে তবেই বের হলো। ততক্ষণে অধরা খাবার নিয়ে জুহির রুমে হাজির। কি যে হবে কে জানে। কহিনুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কক্ষের দিকে চলে গেলো।

মধ্য রাত জুবায়ের গভীর ঘুমের অচেতন হয়ে আছে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি চলছে। ইদানীং রাতে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে নয়তো তুষারপাত । আবহাওয়া খারাপ থাকে। হঠাৎ জানালার কাচে বিকট শব্দ হওয়ার দরুন জুবায়েরের ঘুম ভেঙে গেলো। ও পিটপিট করে চোখ খুঁলে অভ্যাসগতভাবে পাশে হাত রেখে অধরাকে খোঁজ করলো কিন্তু পেলোনা। বিছানা শূন্য অধরা নেই। জুবায়ের ভ্রু কুচকে ফেলল। রাতে রুমে আসার পরে আর বাইরে যাওয়া হয়নি। রুমে এসে বিছানায় বসতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করেছিলো চোখে।

তাই অধরার খোঁজ করা হয়নি। মেয়েটা অভিমান করে রুমে আসেনি এমনটা কখনও হয়না। জুবায়েরের প্রচুর রাগ হলো অধরার উপরে। সামান্য কারণে এমন রিয়েক্ট করছে। কথাটা ভেবে ও বিছানা থেকে নেমে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো। নির্জন সুলতান ভিলা আজ কেমন রহস্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। আবছা আলোতে কেমন জানি অচেনা অচেনা লাগছে। জুবায়ের সেসব পাত্তা দিলোনা। আলফার কক্ষের সামনে থেকে ফিরে তারপর কিছু একটা ভেবে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে আসলো।

সিঁড়ির মাঝামাঝিতে এসে জুবায়ের অবাক হলো। দরজা খোলা বাইরে থেকে আবছা আলো আসছে। বৃষ্টি থেমে আকাশ পরিস্কার হয়েছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না। জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো। বাইরে পা ফেলে বুঝলো বৃষ্টি থেমে সত্যি মেঘ কেটে আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। জোছনা ছড়িয়ে পড়েছে চার‍দিকে। জুবায়ের উতলা হলো অধরার জন্য। রাগারাগি না হলে আজ এই রাতটা দুজনে সুখের করে তুলতে পারতো।

হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়তো জোছনা বিলাশ করতে। কথাটা ভেবে ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাগানের দিকে এগিয়ে আসলো। সামনে বাগানের শেষের দিকে গেটের কাছাকাছিতে টেনিস কোড বসানো হয়েছে। আলফা আর দৃষ্টি সুযোগ পেলে খেলতে লেগে পড়ে। ছেলেমেয়ে দুটো বাড়ির প্রাণ। জুবায়ের সেদিকে এগিয়ে এসে থমকে গেলো। ওর থেকে কিছুটা দূরে অধরা বসে আছে। আবছা আলোতে চিনতে ওর অসুবিধা হচ্ছে না।

মেয়েটা শাড়ি পরেছে। শাড়ির আচল খানিকটা ঘাসের উপরে ছড়িয়ে আছে। খোলা চুল বাতাসে এলোমেলো হয়ে উড়ছে। জুবায়ের দ্রুতগতিতে প্রেয়সীর পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভাবলো পেছন থেকে দুহাতে আগলে নিবে তার আগে মেয়েটার চুলের গন্ধ নিতে খানিকটা ঝুকে এসে থমকে গেলো কপালে চিন্তার রেখা দেখা গেলো তারপর নিজের হাতটা মুঠোয় পুরে পুরুষালী কঠিন আওয়াজে জিঞ্জাসা করলো,

কে তুমি?
জুবায়েরের প্রশ্ন শুনে অধরা হুটকরে পেছনে ফিরে অবাক হয়ে উত্তর দিলো,
প্রাক্তনকে পেয়ে বউকে ভুলে গিয়েছো? আমাকে চিনতে পারছোনা? পুরুষ মানুষ এমনিই হয় জানা আছে।
সব জানা আছে তাইনা?
একদম। লু/চ্চা টাইপ।
মেয়েটার কথা শেষ হলোনা জুবায়ের ঠাটিয়ে একটা থা/প্পড় বসিয়ে দিলো ওর গালে। দ্বিতীয় থা/প্পড় দিয়ে গিয়ে দাঁত কিটমিট করে বলল,

জুবায়ের ফারুকী বউ ছাড়া কারো সঙ্গে লু/চ্চামি করেনা। বহুকাল আগে একটা পা/প করেছিলাম তারপর থেকে ভালো হয়ে গিয়েছি। আমার বউয়ের আদল নিলেই কি ওর শরীরে গন্ধ, চুলের গন্ধ এক করতে পারবে? ওই গন্ধ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে। কে তুই বল?
জুবায়েরের থা/প্পরে মেয়েটার নাজেহাল অবস্থা। ছাড়া পেয়েই ছুট লাগালো। মূহুর্ত্তের মধ্যে হারিয়ে গেলো অন্ধকারে। দোতালায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো কহিনুর। জুবায়ের উপরে একটা প্রহর কোনো জাদুশক্তি কাজ করবেনা। কিন্তু তারপর?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৬

ফোনের দিকে চেয়ে আছে ইমরোজ। অচেনা নাম্বার থেকে টেক্সট এসেছে,
” বক্ষস্থলে বহমান প্রেমগাথার পরিপূর্ণতা লিখতে এসে গেছি প্রিয়তম। প্রস্তুতিপর্ব শেষ দেখা হচ্ছে।”

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৮