কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৮

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৮
লাবণ্য ইয়াসমিন

সুলতান গ্রুপের অফিস কক্ষে ম্যানেজার আলভিয়ার সামনে বসে আছে কহিনুর। অধীর আগ্রহ নিয়ে আলভিয়া সামনে বসে থাকা চমৎকার মেয়েটিকে দেখছে। পূর্বে বহুবার কহিনুর সম্পর্কে শুনেছিলো আজ প্রথমবার সামনে থেকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠেছিলো। ধ্যান ভাঙলো দরজা খোলার আওয়াজ শুনে। গুটি গুটি পায়ে কালো কোট পরিহিত মধ্য বয়সী একটা লোক ভেতরে প্রবেশ করলো। সঙ্গে উনার নানারকম ফাইল। আলভিয়া উঠে গিয়ে লোকটাকে স্বাগতম জানিয়ে বসতে বসলো। কহিনুর তখনও চুপচাপ আছে। হাতে কলমটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। হয়তো কোনো রহস্য বা বাস্তব জীবনের পাটিগণিত মেলাতে ব্যস্ত। মধ্যবয়সী লোকটা এখানকার নামকরা উকিল। নির্জনতা কাটিয়ে লোকটা সামনে ফাইল খুলে বললেন,

ম্যাম আপনার কথা অনুযায়ী আমি ফাইল তৈরী করেছি। কোট পেপার পাঠিয়ে দিয়েছি এখন উনাদের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা। আপনি একশতভাগ নিশ্চিত থাকুন আমরা কেস জিতবো সঙ্গে কানাকড়ি পযর্ন্ত আপনাকে ফেরত দিতে বাধ্য ওরা।
উকিলের কথায় কহিনুর খুশী হলো। চটপট পায়ের উপর থেকে পা নামিয়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপনি মন দিয়ে কাজ করুন যা লাগবে আমাকে বলবেন সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন। মোটকথা রিজু শিকদারের সমস্ত সম্পত্তি কিন্তু আমার চাই যেভাবেই হোক। সামান্য পরিমাণ শস্য দানাও যেনো অবশিষ্ট না থাকে। সঙ্গে নওশাদ বারির সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগ দখলের অপরাধে উনাদের নামে মামলা ঠুকে দিন আগে।
জ্বী ম্যাম আপনার কথামতো কাজ হয়ে যাবে। আমি কি এখন আসবো ম্যাম?
নিশ্চয়ই তবে কাজকর্মে অবহেলা কিন্তু আমি মানবোনা উকিল সাহেব। আপনার গাফিলতির জন্য যদি আমাকে হারতে হয় তবে সেটা আপনার জন্য খুব একটা সুখের হবেনা। আমি মেয়েটা মোটেও সুবিধার না।

কহিনুরের ঠান্ডা মাথার হু/মকি শুনে উকিল সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন। মেয়েটা চোখেমুখে কথা বলবে। নেহায়েত একটা বাচ্চা মেয়ে তবুও কথার তেজ আছে। জুবায়ের ফারুকী আর অধরা বারির মেয়ে এর থেকে ভালো কিবা আশা করা যায়? দুজনে যেমন তার মেয়েটাও তেমন। লোকটা বিড়বিড় করতে করতে প্রস্থান করল। আলভিয়া এভাবে মুখ খুলল,

ম্যাম আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। সবটা একটু বলবেন প্লিজ? রিজু শিকদারের নামে মামলা করবেন বিষয়টা কেমন হয়ে যাবেনা? মিডিয়ায় প্রচুর তোলপাড় হবে। তাছাড়া উনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো কাজ হয়নি। শিকদার রিজুয়ান মাহীম ছেলেটা অনেক পরিশ্রমী তাই জুবায়ের স্যার চেয়েছিলেন উনার সঙ্গে কাজ করতে কিন্তু আপনি?
কহিনুর মৃদু হেসে উত্তর দিলো,

নিজের কোম্পানির সঙ্গে আবার কিসের ডিল আলভিয়া? ওদের সবটা আমাদের।শিকদার পরিবারের সঙ্গে আমার পুরাতন হিসাব জমা হয়ে আছে। আপনি বরং অন্যকাজে মনোযোগ দিন। খুব দ্রুত খান কোম্পানির এমডির সঙ্গে আমার মিটিংয়ের ব্যবস্থা করুন। বিষয়টা পাবলিক করবেন না। লাভিকে পুলিশ ধরেছে। কোম্পানির সঙ্গে বাটপারি করার জন্য তার জেল হয়েছে। আমাদের অর্থ আমরা পেয়ে গিয়েছি কিন্তু এর পেছনে যে আছে তাকে সামনে আনতে হবে। যদি সোজা কথা মানতে রাজি না হয় তবে হু/মকি দিবেন আমরা উনাদের বিষয়ে মুখ খুলবো। তখন কিন্তু বিষয়টা মোটেও শোভনীয় হবে না।

জ্বী ম্যাম বুঝতে পেরেছি। দারুণ বুদ্ধি আপনার।
সবটা পরিস্কার বুঝেছি।
ম্যানেজার সময় নষ্ট করলোনা দ্রুত বেরিয়ে গেলো। কহিনুর সেদিকে চেয়ে ফাইলটা বন্ধ করে ছিটে হেলান দিলো। সাঈদ ওর পাশে দাঁড়িয়ে এতোক্ষন সবটা শুনছিলো। কক্ষ জুড়ে আবারও নিরবতা নেমে এসেছে। কিছু একটা ভেবে কহিনুরের ওষ্ঠের হাসির রেখা মিলিয়ে রাগ দেখা গেলো।

সাঈদ বাড়ির অবস্থা কেমন?
শরবতের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিক্স করে আঙ্কেলকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি আপাতত ঘুমিয়ে আছেন।তবে উনার প্রাক্তন আয়েশ করে মালকিনের খাতির যত্ন গ্রহণ করছেন। জানিনা কতক্ষণ উনি সহ্য করবেন তারপর ঝাড়ু তুলবেন আমি সিউর।
অধরা বারি কিছুতেই জুবায়ের ফারুকীর বিরুদ্ধে যাবেনা সাঈদ। মেয়েটাকে সহ্য না হলেও ক্ষতি করবে না আমার বিশ্বাস। উনাকে আমি চিনি। কিন্তু সুলতান জুবায়ের ফারুকীকে নিয়ে আমার একটুও ভরসা নেই। বশ কেটে গেলে দেখে নিও গান ধরবে মেয়েটার কপালে। খু/লি উড়িয়ে দিতে সময় নিবেনা।

সাঈদ শব্দ করে হেসে ফেলল কহিনুরের কথা শুনে। জুবায়ের ফারুকী মানুষটাই এমন। ধৈর্য্য কম ঝামেলা বাধলে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে না। কহিনুরের ধ্যান শহরের অন্য প্রান্তে অবস্থান করা ব্যক্তির চিন্তাই। লোকটা কি করছে এখন?
এদিকে ফোন হাতে বসে আছে ইমরোজ। মেজাজ প্রচুর খারাপ। কিছুক্ষণ আগে সুলতান গ্রুপের ম্যানেজার ওকে ফোন করে হুমকি দিয়ে রাজি করিয়েছে নাইটে মিটিংয়ের জন্য।

লাভি পুলিশ হেফাজতে আছে যেকোনো সময় গোপন তথ্য ফাঁস হতে পারে। নাম খারাপ হলে ব্যবসার লাল বাতি জ্বলবে তখন নিজেদের পরিকল্পনা সব ভেস্তে যাবে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয়েছে। দাদুর কাছে কথাটা চেপে যাবে নয়তো ঝামেলা করবে। কথাগুলো ভেবে ও চোখ বন্ধ করলো। সুলতানাদের সম্পর্কে যা ভেবেছিল ওরা মোটেও তেমন না। বেশ চালাক আছে। লাভিকে জুবায়ের ফারুকীর মিসেস যেভাবে ধরেছে খবরটা শুনেই ওর গলা শুকিয়ে এসেছিলো।

কি বিখ্যাত মহিলা। বাঙালিদের বুদ্ধি নিয়ে আগে সন্দেহ করলেও এখন আর করেনা। বেশ চালাকচতুর। নয়তো মহিলা হয়ে এভাবে দৌড়ে দৌড়ে আসামি ধরতে যে কেউ পারেনা। তাছাড়া ভদ্রমহিলার বয়স নেহাত কম না। এলোথেলো চিন্তা ইমরোজকে পাগল করে তুলছে। গতকাল রাতের অদ্ভুত টাইপের টেক্সট নিয়ে ভাবতে গিয়ে রাতে ঘুম হয়নি। অসংখ্যবার ফোন করেছে কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ। কেউ ফাজলামি করে এমন টেক্সট করবে বলে ওর মনে হয়নি। অতিরিক্ত ভাবতে গিয়ে রাগ হচ্ছে। ভেতর থেকে কিছু একটা লাফিয়ে বাইরে আসতে চাইছে কিন্তু বিশেষ কারণে পারছে না।

নির্জন রাত ছোট্ট টর্চ হাতে নিয়ে শিকদার হাউজের পেছনের গেট দিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে আসলো অরিত্রী।। শরীরে অসংখ্য আঁকাবাঁকা কালো দাগ। র/ক্ত জমাট বেধেঁ আছে।রিজু ওকে ইচ্ছামতো পি/টিয়েছে। যার দরুন শরীর ব্যাথাতে নড়াচড়া করতে পারছে না। জ্বর এসেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে আছে। এলোমেলো চুলগুলো লেপ্টে আছেন মুখের সঙ্গে আর কিছুটা পিঠের দিকে ছড়িয়ে আছে। গায়ের ওড়নাটা অযত্নে পড়ে আছে কাধের একদিকে।

লোভ মানুষকে ধ্বংস করে। মানুষ অধিকাংশ পাপ তার যৌবনের প্রারম্ভকালেই করে থাকে। তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। পথির্ব ভোগ বিলাশে মানুষ দুনিয়া ভুলে যায়। অরিত্রীর ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে। বেচারী রিজুর প্রেমে মজে গিয়ে গালিবের বিরুদ্ধে ষড়/যন্ত্র করতে গিয়ে নিজে দুঃখের অতল সাগরে ডুবে গেছে। শিক্ষিত হয়েও কখনও শিকদার হাউজের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরের জগতে পা রাখতে পারেনি। ধুকে ধুকে চার দেয়ালের মধ্যে ম/রতে হয়েছে। নিজের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। বাবা মা যোগাযোগ বন্ধ করেছে সেই কবে।

কহিনুর পালিয়ে গেছে সেই দায় ওর উপরে পড়েছে। সুলতান গ্রুপের নোটিশ সঙ্গে কহিনুরের লাপাত্তা সব মিলিয়ে রিজু রেগে ছিল। সবটা অরিত্রীর উপরে ঝেড়ে দিয়েছে। বড় বউ বাইরে থেকে নিষেধ করেছিলো কিন্তু মনে মনে সে বড্ড খুশি। সতীন নিয়ে সংসার করতে কোনো মেয়েই চাইবে না। অরিত্রী কথাগুলো ভেবে সামনে এগিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে বাড়িটা আরেকবার দেখে নিলো। কত বছর এখানে আছে কেমন মায়া পড়ে গেছে। কথাগুলো ভেবে ও দীর্ঘশ্বাস ফেলল। যা ফেলে যাচ্ছে তা নিয়ে মায়া করে লাভ নেই। সিকদার হাউজের পেছনে বড়বড় গাছের সারি।

গভীর জঙ্গল নেই তবে মোটামুটি বড়সড় একটা বাগান। মানুষ অনায়াসে সেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে। এদিকে লোকজনের যাওয়া আসা খুব কম। বাগানের মাঝখান দিয়ে সরু চিকন রাস্তা। অরিত্রী রাস্তা ধরে কিছুটা গভীরে প্রবেশ করলো। হাতে থাকা টর্চের আলো নিভুনিভু অবস্থা চার্জ নেই। অরিত্রী নিচু একটা গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আশেপাশের তাঁকিয়ে আলোটা গাছের নিচে রেখে একটা চিকন ডাল ধরে উপরে উঠার চেষ্টা করলো। ওর থেকে খানিকটা দূরে একটা গাছের ডালে একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে।

অরিত্রীর মনোযোগ নিজের কাজে আশেপাশে তাকানোর সময় নেই।অনেক কষ্টের পরে সফল হলো গাছে উঠতে। অরিত্রী কোনোরকমে গাছের ডালে উঠে বসে গলা থেকে লম্বা ওড়নাটা খুলে নিয়ে পাশের ডালে বেঁধে মোটামুটি ফাঁস তৈরী করে নিলো। এতো কষ্ট,অপমান,লাঞ্ছনা নিয়ে পৃথিবীতে থাকার কোনো মানে হয়না । প্রস্তুতি অনেক আগেই নিয়েছে আজ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। সব কিছুর একটা শেষ আছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। অরিত্রীর চোখ থেকে পানি ঝরছে।

ফাঁ/সটা গলাতে পরিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। একটা ঝুল নিলে সবটা শেষ। এখানে ওর লা/শ পচে গলে নষ্ট হলেও কেউ আসবে না। রিজুর শা/স্তির জন্য অরিত্রী লম্বা একটা সুই/সাইড নোট লিখে নিজের সঙ্গে রেখেছে। পুলিশ আসলে নিশ্চয়ই এটা সকলের চোখে পড়বে। কথাগুলো ভেবে ও হুটকরে লা/ফিয়ে পড়লো। ঠিক তখনই ওর সামনে ভয়ং/কর একটা মুখ ভেসে উঠলো। যার এলোমেলো নাক চোখ আর প/চে যাওয়া শরীর। পচা মাং/স থেকে বা/জে গন্ধ আসছে। অরিত্রী তখন ম/রণ যন্ত্র/ণায় ছটফট করছে। চরমতম ভুল করে বসেছে সেটাই মনে মনে আফসোস করছে। গলা আটকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ বড়বড় হয়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে ভোতা যন্ত্রণা হচ্ছে। ওর চোখে বাঁচার জন্য আকুলতা। ওকে এভাবে যন্ত্রণা পেতে দেখে লোকটা মজা পাচ্ছে। শব্দ করে হেসে ওকে আরও কষ্ট দিয়ে বলল,

যথেষ্ট সময় ছিল ভাবার জন্য। আফসোসের সময় শেষ এখন যা হবে তার জন্য শুধুমাত্র তুমি দোষী। ত্যাগ করা জীবনের প্রতি তোমার কোনো অধিকার থাকলোনা।
লোকটা এইটুকু বলেই থামলো তারপর খানিকটা পরে যখন সবটা নিথর হয়ে গেলো উনার হাসির শব্দও থেমে গেলো। অর্ধ/গলিত পচে যাওয়া পি/শাচ নাকি অন্য কিছু কে জানে অদ্ভুত লোকটা আলগোছে গাছের ডালথেকে অরিত্রীর বাঁধা কাপড়সহ ওকে ঝুলন্ত অবস্থায় হাতের মুঠোয় নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। সঙ্গে চারদিকে আবারও সেই নির্জনতা নেমে আসলো। দক্ষিণের বাগান থেকে অদ্ভুত একটা প্রাণী অনবরত ডেকে বাগানের পরিবেশ রহস্যময় করে তুলছে। এখানে হওয়া অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী সে।হয়তো সেটাই সবাইকে জানানোর চেষ্টা করছে। লোকটার উদ্দেশ্য বা পরিচয় কি? কি করবে সে অরিত্রীর সঙ্গে? কঠিন কোনো পা/পে শামিল করবে নাকি এটাই এই লোকের নেশা?

রেস্টুরেন্টে এসে পায়ের উপরে পা রেখে বসে আছে ইমরোজ খান। বারবার ঘড়িতে টাইম দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেলো তবুও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। সুলতান গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ একজন আসছে এখানে কিন্তু কে আসবে সেটা ম্যানেজার বলেনি। ওয়াশিম খানকে এখানে আসার কথাটা বলা হয়নি ভেবেই বিরক্ততে ইমরোজের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। লা/থি দিয়ে আসবাবপত্র ভেঙে চলে যেতে পারলে শান্তি লাগতো। ইতিমধ্যে এক কাপ কফি শেষ আবারও অর্ডার করবে ঠিক সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে একটা মেয়ে ওর সামনে এসে বসলো। ইমরোজ সরাসরি সামনে বসা মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। কিছুদিন আগে আলফা ফারুকীকে এই মেয়েটাই বাঁচিয়েছিলো। অতিপরিচিত নাক মুখ চুল সবটা। বুকের মধ্যে অজানা কারণে ঢিপঢিপ করছে যা আজ পযর্ন্ত করেনি। ওর ধ্যান ভাঙলো সামনে বসা অতি সুন্দর রমণীর রিনরিনে সুরেলা আওয়াজ শুনে,

মিস্টার ইমরোজ খান পাথর নামটা ঠিক বললাম না?
ঈমরোজ কিছুটা অবাক হলো। পাথর নামটার সঙ্গে ওর তেমন পরিচয় নেই তাই ভ্রু কুচকে বলল,
দুঃখিত শুধুমাত্র ইমরোজ খান। যাইহোক আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। আপনার পরিচয়?
ইমরোজের প্রশ্ন শুনে কহিনুরের ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দর করে হাসছে। এমন সর্বনাশা হাসির মানে কি ওর জানা নেই তবে মনে হলো খুব পরিচিত কারো সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু কার সঙ্গে মনে করতে পারলোনা। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করলো,

আপনার সঙ্গে আমার পূর্বে কখনও পরিচয় ছিল? আপনাকে ঠিক মনে করতে পারছিনা। কে আপনি?
আমি কে বা আমার পরিচয় কি সেসব পরে হবে আগে বলুন সুলতান গ্রুপের সঙ্গে কিসের শত্রুতা আপনার? হুদাই পিছনে পড়ে আছেন কেনো? বোকা ছিলেন এখনো আছেন। আপনার কোনো পরিবর্তন কখনও হবেনা তাইনা?
কহিনুর হঠাৎ রেগে উঠলো। শেষে কথাগুলো ও বেশ কঠিনচিত্তে বলেছে সেটা শুনেই ইমরোজের ওকে ঘিরে তৈরী হওয়া সব ভালোবাসা অনূভুতি শেষ। ফুসে উঠে উত্তর দিলো,

প্রমাণ ছাড়া কথা বললে আমি কিন্তু আইনের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো। সম্মান দিয়ে কথা বলুন মিস।
আপনি কি পুলিশের সাহায্য নিবেন আমি নিজেই ভেবেছিলাম পুলিশে দিবো আপনাদেরকে। আপনার দাদু বয়স হয়েছে কিন্তু শয়/তানি বুদ্ধি যাইনি। উনার পেটে পেটে শয়/তানি বুদ্ধি লুকিয়ে আছে। তার নাতিরা আবার কেমন হবে। বলে দিলাম আর কখনও যদি সুলতান পরিবারের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন না আমি সেই আঙুলটা কে/টে নিব। চিনেন আমাকে? আপনার দাদুকে বলবেন সুলতানা কহিনুর ফারুকীর সামনে আসতে।

কহিনুর ইচ্ছে করেই আজেবাজে কথাবার্তা বলে ইমরোজকে রাগিয়ে দিচ্ছে। প্লান করেই এসেছে। ফলাফল হিসেবে ছেলেটা রেগে বো/ম হয়ে গেলো। ফর্সা নাক লাল টুকটুক করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এসি চলছে তবুও ঘামছে। কহিনুর আড়চোখে সেটা দেখে নিলো। আবারও কিছু বলবে ভাবলো তার আগেই ঠাস করে আওয়াজ শুনে চমকে গেলো। ইমরোজ হাতের কাপটা মেঝেতে আছাড় দিয়েছে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে। হয়তো বলার মতো কথা খুজে পাচ্ছে না। হঠাৎ ও টেবিল চাপড়ে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে হু/ঙ্কার ছেড়ে বলল,

ইডি/য়েট তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছো? তুমি জানো আমি কে? তোমাকে পৃথিবী থেকে গা/য়েব করতে আমার সময় লাগবে না। আমার একটা ইশারায় তোমার শরীর ছিন্ন/ভিন্ন হয়ে যাবে। বাচ্চা বলে ছেড়ে দিলাম নয়তো….
নয়তো কি মিস্টার ইমরোজ খান?
পাথরের কথা শেষ হলো না কহিনুর ওর চোখে চোখ রেখে প্রশ্নটা করে বসলো। ইমরোজ খানিকটা থতমত খেলো কিন্তু সামলে নিয়ে উত্তর দিলো,

নয়তো আমি যেটা বলেছি সেটাই করতাম।
ও আচ্ছা। কিভাবে করতেন? এভাবে?
কহিনুর মুখে বলতে বলতে ইমরোজের বুকে নিজের সরু ন/খটা বসিয়ে দিলো। গরমের জন্য বেচারা পাতলা পোশাকে এসেছিল সেই ফয়দা নিয়েছে কহিনুর। যার দরুন খানিকটা আলতা রঙের টুকটুকে লাল তরল বেরিয়ে আসলো। মেয়েটার সাহস দেখে ইমরোজ হতভম্ভ হয়ে বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। রাগ করার বদলে কৌতূহল আর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কি হচ্ছে সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। এখানে আসার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে। মেয়েটা মোটেও সুবিধার না। ধানী লঙ্কা যা ইচ্ছে করতে পারে। ইমরোজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি মেয়ে। যেখানে আমাকে দেখে সকলে ভয়ে জমে যায় সেখানে তুমি আমাকে আঘাত করলে?
বরাবর আমি একটু বেয়া*দব টাইপের। অনেকেই আমাকে পছন্দ করে আবার অনেকে করেনা। তো আমার কি? কহিনুর কি লোকদের তোষামোদ করে চলবে? কখনও না। আপনাকে বলে গেলাম পরের বার কিছু করতে আসলে শতবার ভাবনা চিন্তা করে করবেন। হৃদপিন্ড নিয়ে খেলতে আমার আবার বেশ ভালোলাগে। আপনারটার দিকে আমার অনেক আগে থেকে নজর আছে। সাবধানে চলবেন এখন আসছি।তবে আকাম করলেই আমার দেখা পাবেন।

কহিনুর কথাটা বলে উত্তরের আশা করলোনা। ইমরোজ রেগে ফুলছে। রেস্টুরেন্টেটা নিজের না হলে এতোক্ষন ধামাকা লাগিয়ে দিতো। কহিনুর যেমন এসেছিলো তেমনিভাবে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ইমরোজ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলোনা। লা\থি বসিয়ে দিলো টেবিলে। কর্মচারিগণ ততক্ষনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মালিকের এমন অদ্ভুত ব্যবহারে ওরা ভয় পাচ্ছে। ইমরোজ কাউকে কিছু বললনা।

কহিনুরের পিছু ছুটলো। ছুটতে ছুটতে রাস্তায় নামলো সেখানেও নেই। এভাবে ও আরও খানিকটা ছুটে আসলো তারপর আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা। দৌড়াতে থাকলো মাইলের পর মাইল। বিশাল সমুদ্রের তীর গিয়ে পৌঁছে গেলো তবুও চলছে। শরীর মচমচ করছে ব্যাথাতে।

শরীরের চামড়া ভেদ করে লম্বা লম্বা পশম গজাতে শুরু করলো। হাত পায়ের নক খসে গিয়ে কেমন অদ্ভুত আকৃতি নিলো। খানিকটা পরে পুরোপুরি অর্ধমানবে রুপ নিলো। আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ ঝলমল করছে। জোয়ারের ফলে সমুদ্রের পানি ফুলে উঠেছে। নির্জন সমুদ্রের তীরে অদৃশ্য এক অর্ধমানব চাঁদের দিকে মুখ করে হাটু ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে যেটা দেখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানবির ওষ্ঠে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। সামনে কি হতে চলছে হয়তো সবটা ওর জানা।

থমথমে মুখ নিয়ে রান্না করছে অধরা। জুবায়ের এখনো কক্ষে ঘুমিয়ে আছে। গতকাল থেকে লোকটার সঙ্গে ওর দেখা নেই। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বাড়িতে এনে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে লোকটা আরাম করে কক্ষে ঘুমিয়ে আছে যেটা ভাবলেই ওর মেজাজ তরতর করে বাড়ছে। জামসেদ ডাইনিং রুমের সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের মিটিং করছে। বেচারা কাজকর্ম করবেনা বললেও থেমে থাকতে পারে না। অধরা ওর জন্য কফি তৈরী করে কিচেন থেকে বের হতেই জুহির সঙ্গে দেখা। অধরা সরু চোখে তাকিয়ে সাইড করে বেরিয়ে আসলো। যেখানে নিজের বরের ভাগ দিতে হতে পারে সেখানে সামান্য কিচেনের ভাগ এটাতো সামান্য। জুহি ইতিমধ্যে একটা কাজের মেয়ের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। অধরা সেটা দেখেও দেখছে না। ও সোজা জামসেদের সামনে কফি রেখে বলল,

বাড়িতে এই যাত্রাপালা কতদিন চলবে বলবেন ভাই? আর নিতে পারছিনা। আপনার ভাইয়ের রুচি দেখলে না আমার বমি আসে। এই মেয়েকে বাড়িতে এনে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে কেমনে পারছে একটু বলবেন?
জামসেদ কফিটা তুলে নিয়ে অধরার দিকে চেয়ে উত্তর দিলো,
নিজেকে সামলাও। তুমি জানোনা ভাই কেমন? বেচারী সাহায্য চেয়েছে হয়তো তাই না করতে পারেনি। তুমি আর ঝামেলা করোনা। ভাইকে ডেকে দাও। দূরে থাকলে দুরুত্ব বাড়বে। তখন তৃতীয় পক্ষ মাঝখানে চলে আসবে। কখনও কখনও আমাদের চোখের দেখাও ভুল হয়। তুমি না বুঝলে কে বুঝবে বলো?

অধরা খানিকটা ভেবে উত্তর দিলোনা। যেভাবে এসেছিল সেভাবে কিচেনের দিকে চলে গেলো। তাড়াতাড়ি করে একটা কাফে কফি ঢেলে নিজেদের কক্ষে দিকে এগিয়ে গেলো। জুহি এতোক্ষন ওকে দেখছিলো। জুবায়ের এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। গতকাল রাত থেকে লোকটা লাপাত্তা। অধরা কক্ষে এসে কফিটা পাশে রেখে জুবায়েরের মাথা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

কতটা বছর এক সঙ্গে আছে কখনও আলাদা ঘুমানো হয়নি। লোকটা ওকে ছেড়ে একটা রাত কিভাবে পার করলো ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। ভালোবাসার মানুষের হঠাৎ পরিবর্তন মেনে নেওয়া কঠিন। অধরার চোখ ছলছল করছে। নিজের অজান্তেই ডান হাতটা জুবায়েরের মুখের উপরে রাখলো। কপালের উপরে চলে আসা চুলগুলো নাড়াচাড়া করতেই লোকটা পিটপিট করে চোখ খুলে চাইলো। অতিরিক্ত ঘুমের জন্য চোখে ঝাপসা দেখছে জুবায়ের। মুখের উপরে আসা মুখটা বেশ আপনার।নিজের একান্ত কাছের একজনের ভেবেই ওর ওষ্ঠে হাসি ফুটলো কিন্তু মুখ থেকে চরম কঠিন একটা শব্দ বেরিয়ে গেলো। ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো,

জুহি!
নামটা অধরার কর্ণকুণ্ডলে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে ও জুবায়েরের থেকে হাতটা তুলে নিলো। চোখ থেকে আপনা আপনি দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সঙ্গে গাঢ় অভিমান ভর করলো মনের মধ্যে। অধরা ছাড়বেনা লোকটাকে। কথাটা ভেবে ও দুম করে কি/ল বসিয়ে দিলো জুবায়ের বুকে।সঙ্গে এলো/পাথাড়ি মারতে মারতে ফুপিয়ে কাঁদলো। জুবায়ের হতভম্ভ বউয়ের আচরণে। ও দ্রুত উঠে অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৭

আরে এমন করছ কেনো? কি করেছি আমি?
বলুন আমার নাম কি? আমাকে আপনার জুহি মনে হয়?
জুবায়ের ওকে ছেড়ে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে চাইলো। সামনে থাকা মেয়েটাকে চেনা লাগলেও হঠাৎ কেনো জানি চিনতে পারছে না। নামটা মনে নেই। আপাতত জুহি ছাড়া কোনো নাম মনে আসছে না। কেনো এমন হচ্ছে?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৯

1 COMMENT

  1. পরের পার্ট টা আরো তারা তারি দিবেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ

Comments are closed.