কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২০

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২০
লাবণ্য ইয়াসমিন

মানুষের করা প্রায় প্রতিটা পাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থ।মানুষ ক্ষমতার দম্ভ আর টাকার অহমিকাতে পড়ে নিজেকে ভুলে গিয়ে দুনিয়ার ভোগ বিলাশে মেতে উঠে।পরবর্তীকালে কি হবে ভাবেনা। প্রতিযোগিতা করে সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এখানে অনেকেই সফল হয় আবার অনেকে মুখ থুবড়ে পড়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। সফলতার জন্য মানুষ খারাপ পথ অবলম্বন করতেও দ্বিধা করেনা।

তাইতো কহিনুরের জন্য সকলে এমন উন্মাদ। কহিনুর যার সঙ্গে থাকবে সে হবে শক্তিশালী আর বিপুল সম্পদের মালিক। অথচ এই কহিনুর পৃথিবীতে নতুন কিছু সৃষ্টিতে সাহায্য করেনি বরং ধ্বং/সকারী হিসেবে ইন্ধন জুগিয়েছে তবুও মানুষ পাগল হয়ে ওকেই খোঁজ করেছে। কহিনুরের কক্ষে ছোটোখাটো একটা জটলা তৈরী হয়েছে।অধরা মেয়েকে প্রশ্ন করে অতিষ্ঠ করে তুলছে। ও কিছুতেই রিজু শিকদারের সম্পত্তি দাবি করে আইনী পদক্ষেপ নিবেনা।। যেখানে ওর বাবা সবটা ছেড়ে এসেছিলো সেখানে ও কেনো দাবি করবে বুঝতে পারছে না। জামসেদ কহিনুরের পক্ষে সব সময় আছে তাই বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আম্মাজান আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার যেমন ইচ্ছে তেমন করবা কেউ বাঁধা দিবেনা। বেশ ভালো একটা কাজ করেছো। রিজু শিকদার আমার সঙ্গে একদিন ঝামেলা করেছে। দুই নাম্বার কাজকর্ম হয় ওর কোম্পানিতে আমি সবটা জানি।
কহিনুর চাচ্চুর কথা শুনে হাসলো। জুবায়ের কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

বুঝলাম না তুমি হঠাৎ ওদের নিয়ে কেনো ঝামেলা করছো? আমাদের কোনো সম্পত্তি লাগবে না। যা আছে যথেষ্ট। অতিরিক্ত কিছু করলে আল্লাহ নারাজ হবেন। তুমি বলো তোমার কি প্রয়োজন আমি তোমাকে সবটা দিব প্রমিজ করছি।
নিজের সম্পত্তি ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ নারাজ কিভাবে হবেন একটু বুঝিয়ে বলবে? আমি কারণ ছাড়া কিছু করছিনা। আমার বাবা মা নিখোঁজ ওদের উদ্ধার করা প্রয়োজন। আমাকে আমার মতো কাজ করতে দাও প্লিজ। উনাদের খোঁজ করা আমার দায়িত্ব।

কহিনুরের যুক্তি ফেলে দেওয়ার মতো না অধরা বুঝতে পেরে শান্ত হলো। জুবায়েরের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কহিনুর কোনো প্রশ্নের উত্তর করেনি। সবাইকে ধরে ধরে নিজের কাহিনী বলার মতো কিছু হয়নি। সময় হলে এমনিতেও প্রকাশ পাবে। আলোচনা সভায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা হলোনা বিধায় একে একে সকলে বেরিয়ে গেলো। কহিনুর বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে হয়তো কিছুক্ষণ পরেই অচেতন হয়ে পড়বে।

সাঈদ গেছে হাকিম সাহেবের কাছে ওষুধ আনতে ফিরবে কখন বলা মুশকিল। আপাতত চুপচাপ থাকতে হবে। অফিসে যাওয়ার দরকার নেই যেটুকু প্রয়োজন ছিল করে ফেলেছে। এসব অফিস ব্যবসা বা টাকা পয়সা ওকে টানেনা। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো বেলকনিতে লাফিয়ে পড়ার শব্দ শুনে। বিছানা ছেড়ে নামার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা নেই তাই নিজের সুরক্ষার জন্য আঙুল থেকে নীল রঙের পাথরের তৈরী আংটিটা সামনে তুলে ধরলো।

এটা গালিব ওকে দিয়েছিলো দশতম জন্মদিন উপলক্ষে। পূর্বে এটা কোনো আংটি ছিল না লকেট টাইপ ছিল সেটাই ভেঙে এমন করে তৈরি করা হয়েছে। কহিনুর আংটির গুণাগুণ সম্পর্কে জানে। এটা বিশেষ ভাবে তৈরী যেটা ওকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। কথাগুলো ভেবে ও চোখ বন্ধ করলো। বেলকনিতে যেই আসুক ওকে কিছু করতে পারবেনা এটাই ভরসা।

থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে অধরা। জুবায়ের বউয়ের রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। বেচারা একশোর উপরে সরি বলেছে কান ধরেছে কিন্তু অধরা ফিরেও দেখেনি। জুবায়ের হতাশ হয়ে পূণরায় সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল,
এবারের মতো ক্ষমা করো প্লিজ। আমার ভুল হয়েছে। জীবনেও কাউকে সাহায্য করতে গাড়ি থামাবোনা। তাছাড়া তোমার সঙ্গে কিন্তু আমি কোনো খারাপ আচরণ করিনি।সেদিন রাতে তুমি নিজে থেকে আমার কক্ষে আসোনি। আমার দোষটা কোথায়?
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা বিরক্ত হলো। ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,

আপনি তুলসী পাতা আপনার আবার দোষ কোথায়? আসলে দোষটা আমার। আপনার যে পুরাতন প্রেমিকা দেখে ভালোবাসা মনের কোণে দোলা দিতেছিলো আমি সেটা বুঝতে পারিনি। তো এখানে কি করছেন? আপনার জুহিকে খোঁজ করুন। গিয়ে দেখুন বেচারী কোথায় গেছে।

খোচা দিয়ে কথা বলছো কেনো? আচ্ছা পৃথিবীর সব বউয়েরা কি তোমার মতো বরের প্রাক্তন নিয়ে খোচা দিয়ে কথা বলে?
পৃথিবীর সব বউয়েরা কি করে জানিনা তবে আমি কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করছিনা। সপ্তাহ খানিকটা আগে কি করেছিলেন মনে আছে? সামান্য কারণে শাস্তি দিলেন আমিও দিব এবার। দিন এসেছে ভুলে যায়নি।
অধরার কথা শুনে জুবায়ের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই বিড়বিড় করে বলল,

আমি যেমন শাস্তি দিয়েছি তুমিও তেমন দাওনা আমি এক পায়ে রাজি। তোমার সপ্তাহ খানিকটা না বরং মাস খানিক সময়ের দায়িত্ব আমার। নিজের হাতে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল এমনকি ঘুম পাড়িয়ে পযর্ন্ত দিব প্রমিজ।
অধরা ভেঙচি কেটে বলল,

আমি আপনার মতো টিনেজার টাইপ না ওসব ফালতু কাজকর্ম আমার পছন্দ না। মাস খানিক আমি অন্য রুমে থাকবো। বিশেষ দরকার ছাড়া আপনার সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে না। এটাই আপনার শাস্তি। না মানলে আমি কিছুদিন বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকবো। এখন বুঝে নিন কি করবেন।
অধরার কথা শুনে জুবায়ের থমকে গেলো। মাস খানিক বউকে না দেখে থাকা ওর দ্বারা সম্ভব না। কি সাংঘাতিক মেয়ে। জুবায়ের তীব্র প্রতিবাদ করে উত্তর দিলো,

একদম না তুমি কোথাও যাবেনা। শুনো ভুল করলে ক্ষমা করতে হয়। আল্লাহ যেখানে রহিম রহমান সেখানে তুমি তার সৃষ্টি হয়ে আমার উপরে এমন জুলুম করবে? স্বামীদের কথা মানতে হয় জানোনা? তুমি রুমে থাকো নিজের মতো আমি বিরক্ত করবোনা। না ডাকলে বিছানায় পযর্ন্ত যাচ্ছিনা।
অধরা কিছু একটা ভেবে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,

আমার একটা প্রাক্তন থাকলে বুঝতেন কেমন লাগে। আপনার চৌদ্দ পুরুষের সৌভাগ্য আমার মতো নির্ভেজাল বউ পেয়েছেন কিন্তু আফসোস কদর করতে পারলেন না।
কিভাবে কদর করবো একটু বুঝিয়ে দাওনা।সকাল বিকেল রাত সব সময় কদর করবো।বউয়ের আফসোস পূরণ করে তবে আমার শান্তি।

জুবায়ের বেশ গম্ভীর ভাবে কথা বলছে কিন্তু ওষ্ঠে হাসির সুক্ষ রেখা। অধরা কপাল চাপড়ে চুপ করলো। লোকটার সঙ্গে তর্কাতর্কি করার কোনো মানেই হয়না। অধরা বিছানা থেকে বালিশটা ছুড়ে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। জুবায়ের অসহায় মুখ করে বালিশটা তুলে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। কান ধরলো জীবনে আর জুহির মুখ দেখবে না। কফি খেতে ইচ্ছা করছিলো তাই চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। অধরা রান্নার কাজকর্ম নিজে করে।কিন্তু আজ ওকে কফি না দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

জুবায়ের আফসোস করতে করতে নিচে গিয়ে কফি তৈরী করে কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো। কতদিন নিজ হাতে কফি করেনি মনে নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবার চুমুক দিয়ে ফেলে দিতে গিয়েও গিলে নিলো। বাজে স্বাদ তবুও কিছু করার নেই। কয়েক চুমুক নিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে কাপ রেখে সিঁড়িতে পা রাখতে গিয়ে হঠাৎ ও থমকে গেলো। বহুকাল পরে সিঁড়ির ভেতরে থাকা গোপন কক্ষ থেকে ঠুকঠাক আওয়াজ ভেসে আসছে।

সকলে নিজ নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে আছে বাইরে কেউ নেই। জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি থেমে নেমে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। পাশে রাখা চাবি দিয়ে দরজা খুঁলতেই চমকে গেলো। ওর সমানে পাথর দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের ওর পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলিয়ে নিলো। ছেলেটার পরনে থাকা নীল শার্টের উপরে কালো কোট ফর্সা তকের সঙ্গে ফুটে উঠেছে। পায়ে সাদা রঙের জুতা প্যান্ট আবার কালো। এমন এলোমেলো ড্রেসের আইডিয়া কে দিয়েছে কে জানে জুবায়ের আপাতত সেটা নিয়েই চিন্তিত।

শশুর মহাশয় কেমন আছেন? তা কেমন দেখলেন?আমাকে দেখতে সুন্দর তাইনা?
জুবায়ের খুকখুক করে কেশে ফেলল। ছেলেটা আস্ত পাজি বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু ও এখানে কি করছে বুঝতে পারছে না। কহিনুর ফিরেছে পাথর ফিরবে এটা ওর জানা ছিলো। কিন্তু এভাবে কেনো?
তুমি এখানে কি করছো? কি মতলব তোমার? ওয়াশিম খানের সঙ্গে মিলে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়/যন্ত্র করছো সেটা কিন্তু আমার কানে এসেছে। নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। ফিরে যাও নয়তো ভালো হবে না।
জুবায়ের বেশ রাগ নিয়ে কথা বলছে কিন্তু পাথরের কোনো হেলদোল হলোনা। বরং মুখে হাত রেখে চিন্তিত হয়ে বলল,

আপনার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তবেই ফিরছি। আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলবেন? শুনেছি বাঙ্গালীরা জামাইকে আদর যত্ন করে ভোজন করাতে পছন্দ করে।আর আমার কপালে দেখুন খাটাশ টাইপ শশুর পড়েছে যে আমাকে দেখতে পারেনা। আফসোস হচ্ছে জানেন? শাশুড়ি আম্মা এই জন্য আপনাকে বেঘর করেছে বুঝতে পারছি।
পাথরের কথা শুনে জুবায়ের চোখ বড়বড় করে ফেলল। এই ছেলে যে ওদের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে সবটা শুনে নিয়েছে। এমন জামাই থাকলে শত্রুর দরকার হবে না।মান ইজ্জত এমনিতেই নিলামে চড়বে। জুবায়ের তেড়ে গিয়ে বলল,

এই তোমার লজ্জা করলো না শশুর শাশুড়ির কক্ষে উঁকিঝুঁকি কাটতে? আমার মেয়েকে আমি জীবনেও তোমার সঙ্গে পাঠাবোনা। আর কিসের জামাই শুনি? কহিনুর নেই তুমি আসতে পারো। কহিনুরের মতো দেখতে হলেই কি সে কহিনুর হয়ে যাবে?
পাথর সামনে হাত বাড়িয়ে একটা ডাইরী দেখিয়ে ইশারা করলো,

দেখুন এটা? কহিনুর সম্পর্কে জানতে আমার কিছু বাকী নেই। আর আমি না ইচ্ছে করে আপনাদের ঝগড়া দেখিনি। আপনার মেয়ে নিজের কক্ষ বন্ধ রেখেছে বিধায় আপনাদের কক্ষের বেলকনি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছি তখন শুনলাম। যাইহোক আমি কিন্তু শাশুড়ি আম্মার পক্ষে।

পাথর কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে গেলো। জুবায়ের গেলো ওর পিছনে। আলমারির কাগজপত্র সব এলোমেলো করে ঘাটাঘাটি করা। আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জুবায়ের ভেবেছিল আচ্ছা করে বকাবকি করবে কিন্তু আপাতত সেই ইচ্ছা দমন করলো। কহিনুরের বিষয়ে জানতে হলে এই ছেলেকে হাত করতে হবে। জুবায়ের জামাই হিসেবে একদম চাইছে না পাথরকে মেনে নিতে। বাঙ্গালী ছেলে ছেড়ে এই ভিন্ন বর্ণের ছেলেকে মানতে একদম মন সাড়া দেয়না।

আমি দুঃখিত শশুর মশাই।আপনাকে আমি কহিনুরের বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পারছিনা। কক্ষে ফিরে জান শাশুড়ি আম্মা উঠে গেছেন আর আপনাকে খোঁজ করছেন। আমি আপনাদের ক্ষতি করবোনা প্রমিজ। অনেক কিছু জানার আছে।সবটা জেনে আপনাকে বলবো।
পাথর বলতে বলতে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। জুবায়ের চমকে উঠে বেয়া/দব বলে গালি দিতে ভুল করলোনা।

সুলতান হাউজে পরিবার নিয়ে বসে আছে রিজু শিকদার। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সৌভাগ্য ওর খুব একটা হয়না। আজ নেহায়েত স্বার্থের জন্য আসতে হলো। কিছুক্ষণ আগে কাজের মেয়েটা নাস্তা দিয়ে গেছে। মাহীম এদিক ওদিক নজর করছে দৃষ্টিকে দেখার জন্য। তুহিন বেশ শান্ত। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। মনে হচ্ছে অমৃত গ্রহণ করছে।

বাইরের জগতে ওর মাথাব্যথা নেই। নির্জনতা কাটিয়ে হৈচৈ করে দৃষ্টি আর আলফা ভেতরে প্রবেশ করলো। টেনিস খেলতে গিয়ে ঘেমে ঘেটে একাকার অবস্থা ওদের। তাই কোনোরকমে হাই হ্যালো বলে নিজেদের কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলো ঠিক তখনই নিচে নামলো জুবায়ের আর অধরা। অধরার চোখ আর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে। বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে সকাল থেকে। তখন থেকেই কান্নাকাটি করেছে তবুও জুবায়েরকে পাশে ঘেঁষতে দিচ্ছেনা। জুবায়ের আলাপ করে সামনে বসতেই রিজু বলে উঠলো,

জানেনতো আপনার দাদা শশুরকে শেষ বয়সে আমার বাবা মা দেখাশোনা করেছিলেন। উনারা ছেলের জন্য অনেক কান্নাকাটি করতেন কিন্তু তখন আপনার শশুর কিন্তু যায়নি। সে যাইহোক আপনাদের এতো টাকা পয়সা থাকতেও আমাদের দিকে নজর দিচ্ছেন কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
জুবায়ের চুপচাপ আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবুও মলিন হেসে বলল,

দেখুন আমার ওসবে কোনো লোভ নেই। কিন্তু আমার ছেলেমেয়েদের উপরে আমি কিছু বলতে পারবোনা। ওরা চেয়েছে তাই নোটিশ পাঠিয়েছে এখানে আমার কোনো হাত নেই। তাছাড়া আমার শশুরের কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তি ছিল আপনারা সেগুলো অনেক বছর ভোগ করছেন এটা কিন্তু অন্যায়। দেখাশোনা করেছেন বিনিময়ে ফল পেয়েছেন এখন ছেড়ে দিন। এগুলোর প্রাকৃত মালিক আমার স্ত্রী। ও ইচ্ছা করলে সবটা বিক্রি করতে পারে এটাতো মানছেন?
জুবায়ের বেশ বিনয়ের সঙ্গে কথা বলছে। রিজুর কপালে চিন্তার রেখা। এসির মধ্যেও ঘামছে। হঠাৎ পাশ থেকে রিজুর স্ত্রী বলে উঠলো,

জুবায়ের ভাই এসব টাকা পয়সা রাখুন দেখি। কতকাল পরে দেখা হলো। আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক নতুন করতে আমার ছেলের সঙ্গে আপনাদের মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছি। শুনেছি আপনার মেয়ে আছে। আমাদের ওখানে সেইতো নোটিশ পাঠিয়েছে। একবার দেখাবেন ওকে?

জুবায়ের বেশ বিরক্ত হলো এমন কথা শুনে। মাহীম ভ্রু কুচকে আছে। জুবায়ের ফারুকীর মেয়ে আছে ওর জানা ছিল না। তবে মনে মনে মায়ের বুদ্ধির প্রশংসা করলো। দৃষ্টির চেয়ে জুবায়ের ফারুকীর মেয়েকে বিয়ে করলে সম্পত্তির পরিমাণ অধিক পাবে এটা সিউর। বাবা মা মিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ নেহায়েত কম হবেনা। ওর ধ্যান ভাঙলো সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা মানবিকে দেখে। কহিনুর দৃষ্টি আর আলফার হাত ধরে নেমে আসছে। মেয়েটা অসুস্থ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রিজু চমকে উঠে বলল,

আর কহিনুর তুমি এখানে? ওর কি হয়েছে? আমার নিখোঁজ ভাইয়ের মেয়েটা এমন অসুস্থ অথচ আমি কিছুই জানিনা?
অধরা উঠে গিয়ে মেয়েকে নামাতে সাহায্য করতে করতে উত্তর দিলো,
এটা আপনার ভাইয়ের মেয়ে কে বলেছে? ও আমার মেয়ে কহিনুর ফারুকী।
মাহীমের চোখে বিস্ময় খেলা করছে। তুহিনের চোখে মুগ্ধতা প্রকাশ পাচ্ছে। সেদিন রাতে এই মেয়েকেই দেখেছিলো রাস্তায় তারপর থেকে খাওয়া ঘুম সব উবে গেছে। কহিনুর ততক্ষণে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছে। আলফা পাশ থেকে ওর হাত ধরে রেখেছে।

টাকা পয়সা বড্ড খারাপ জিনিস। সম্পর্ক নষ্ট করতে জুড়ি মেলা ভার। আশাকরি আমার মায়ের সম্পত্তি খুব দ্রুত ফিরিয়ে দিবেন। নয়তো এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হবে। আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনারা কিছুই করতে পারবেন না।
কহিনুর চোখ বন্ধ রেখেই কথাগুলো বলে দিলো।রিজুর বুদ্ধি ঘেটে গেছে। মেয়েটার পরিচয় জানতে এতোবড় ভুল করলো কিন্তু কিভাবে সম্ভব? মাহীম মুখে হাত রেখে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। নিজের মুখোশ নিজেই উন্মোচন করে ফেলেছে। কহিনুর ওর উপরে চটে গিয়ে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বুঝতে পারছে। নির্জনতা কাটিয়ে ছটফট করে বলে উঠলো,

কহিনুর তোমার সঙ্গে একান্তে একটু কথা বলা যাবে? আমার কিছু বলার ছিল প্লিজ না করোনা। বেশি সময় নিবোনা।
কহিনুর একান্তে কথা বলার পর্যায়ে নেই। সাঈদ এখনো আসেনি। শরীর ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। তবুও বলতে রাজি হলো। আলফা ওকে কক্ষ পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। মাহীম কহিনুরের কক্ষে এসে অবাক হচ্ছে। চমৎকার সাজানো গোছানো আর কারুকার্য খচিত আসবাবপত্র। কহিনুর সোফায় হেলান দিয়ে বসতে বসতে বলল,

যা বলার বলে ফেলুন সময় কম।
মাহীম নজর সরিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
সেদিন আমার মন মেজাজ ভালো ছিল না তাই ওমন খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। প্লিজ ওসব ভুলে গিয়ে আমাকে ক্ষমা করে মায়ের প্রস্তাবটা মেনে নাও। প্রমিজ তোমাকে ভালো রাখবো।
কহিনুর তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসলো। মানুষ অর্থের জন্য কিভাবে বদলে যায়।

আপনাকে বিয়ে করে আমার কি লাভ মিস্টার মাহীম রিজুয়ান? সেইতো আমার মায়ের পয়সাতে বসে বসে খাচ্ছেন। এখন আবার বুদ্ধি করছেন কিভাবে আমার বাবারটা দখল করা যায়। চমৎকার বুদ্ধি আপনাদের।
কহিনুরের কঠিন জবাব শুনে মাহীম থমকে গেলো। রাগ হচ্ছে কিন্তু নিরুপায় এখানে ঝামেলা করলে চলবে না,
আমাকে অপমান কেনো করছো? আমি ওসব ভেবে বলিনি। তোমাকে ভীষণ পছন্দ আমার। টাকা পয়সা কিছুই লাগবেনা আমার। আমি শুধুমাত্র তোমাকে চাই।
মাহীমের কথা শেষ হলোনা বেলকনি থেকে পাথর এগিয়ে আসতে আসতে জবাব দিলো,

ওকে স্পর্শ করে দেখাও যদি পারো প্রমিজ বিয়েতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। বউয়ের বিয়েতে ইমরোজ খান পাথর দুনিয়া জানিয়ে দিবে।
মাহীম চোখ বড় করে তাঁকিয়ে আছে। ইমরোজ খানকে এখানকার সকলেই প্রায় চিনে। কিছুদিন আগে একটা বারে আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকলের নজরে এসেছিলো। সেখান থেকেই বেশ ফেমাস। তাছাড়া খান গ্রুপের সুনাম আছে অনেক। বড় দুটো ফ্যাক্টরীতে কতশত লোকজন কাজ করে। সেই লোকটা এখানে কি করছে বুঝতে পারছে না তাই কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

আপনি এখানে?
পাথর দ্রুতগামী কহিনুরের পাশে বসে গেলো। মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে কপালে হাত রেখে কিছু একটা পরিক্ষা করলো। ততক্ষণে কহিনুর অচেতন হয়ে পড়েছে। কি হচ্ছে কিছু খেয়াল নেই। পাথর কহিনুরের শুকনো মুখের দিকে তাঁকিয়ে জবাব দিলো,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১৯

আপনি এখন আসুন। ও অসুস্থ পরে আসবেন তখন ওর থেকে জেনে নিবেন।
মাহীম বাধ্য হলো বেরিয়ে আসতে। পাথর কহিনুরকে বিছানায় রেখে দরজা বন্ধ করে পূণরায় ফিরে আসলো। চিন্তিত হচ্ছে।মেয়েটার শরীরের উত্তাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশ্ন জাগলো ওকে বশে আনতে কালো জাদু করা হচ্ছে?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২১

1 COMMENT

  1. ধন্যবাদ গল্প টা দাওয়ার জন্য।পরের পার্ট টা আরো তারা তারি দিবেন প্লিজ।

Comments are closed.