কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৬

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৬
লাবণ্য ইয়াসমিন

বার্লিনের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় জার্মানির প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম। পাবলিক এই ইউনিভার্সিটিতে বিশ্বের ভিবিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।। ছোট থেকেই দৃষ্টি মেধাবী পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ তাই অনায়াসে এখানে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পেয়েছে। দৃষ্টি তিনটা ভাষাতে পারদর্শী। সমস্যা ওর এখানেই বেচারী মাঝেমাঝে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।

মিশ্র ভাষার ব্যবহার করে। কখনও বাংলা কখনও ইংরেজি আবার কখনও সে জার্মানির ভাষায় কথা বলে। যদিও ওর বন্ধু বা পরিবার পরিজনদের কাছে তেমন অসুবিধা হয়না। তবে মিরার অবশ্য মেয়ের এই ত্রিভাষি স্বভাবের জন্য আফসোসের শেষ নেই। অন্যদিকে আলফা একদম জুবায়েরের কপি। চলনে বলনে তার ত্রুটি পাওয়া মুশকিল। যদিও জুবায়ের সেসব পাত্তা দেয়না। বাবা মায়ের কাছে বাচ্চারা কখনও বড় হয়না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভুল না করলেও ভুল ধরতে উস্তাদ জুবায়ের। সুলতান পারিবারে যখন একমাত্র আশার আলো কহিনুরের আলো নিভতে বসেছিলো ঠিক সেই সময়ে এই দুজন নব আশার আলো নিয়ে ধরণীতে এসেছিলো। সেই জন্যই সুলতান পরিবারের কাছে দুজনের বেশ গুরুত্ব আছে । জার্মানির ইউনিভার্সিটিগুলতে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট টাইম জবের জন্য একটা সুযোগ আছে। দৃষ্টির ফ্রেন্ডের মধ্যে বেশিরভাগ প্রবাসী তবে স্থানীয়ও কয়েকজন আছে। লম্বা লিষ্ট বলা চলে।

দৃষ্টির জবের কোনো ঝামেলা নেই।নিজ গাড়িতে করে আসা যাওয়া করে। বেশিরভাগ আলফার সঙ্গে থাকে তবে মাঝেমাঝে একা যেতে হয়। আজও তেমনই একটা দিন। বন্ধুদের সঙ্গে বিশেষ কোন কারণে আলফা আজ আসেনি। দৃষ্টি ক্লাস শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসতে চেয়েছিল কিন্তু হলোনা।

গেটের কাছাকাছি গিয়ে দেখা হলো আলাভোলা টাইপ একটা ছেলের সঙ্গে। ছেলেটার মুখের তক অতিরিক্ত রোদ আর গরমে লাল হয়ে আছে। চুলগুলো হালকা বাদামি তবে সাদা বলাই ভালো। লোকটা বেশ বেকায়দায় পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। দৃষ্টি কৌতূহলী হয়ে ছেলেটার সঙ্গে আলাপ করে জানলো ও এখানে নতুন। পিএইচডির জন্য এসেছে তুরস্ক থেকে। এখানকার কোনো কিছু সে চিনে না। এক বন্ধুর ভরসাতে এসেছিল সে আসেনি। দৃষ্টির মায়া হলো তাই ওকে মোটামুটি সবটা চিনতে সাহায্য করে শেষমেশ বলল,

আপনি ঘাবড়াবেন না প্লিজ। এখানকার সকলে অনেক ভালো।দেখবেন দুদিনের মধ্যে আপনাকে আপন করে নিচ্ছে। সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে যাবেন আমার সঙ্গে?
দৃষ্টির প্রস্তাবে ছেলেটা লাজুক হাসলো। দৃষ্টির বেশ অবাক লাগছে কিছুতেই মনে হচ্ছে না এই ছেলেটা পিএইচডি করতে এখানে এসেছে। বয়সের বেশ তারতম্য লাগছে কিন্তু পরে আর চিন্তা করলোনা। ওরা কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। তারপর নিজের পছন্দসই খাবার অর্ডার করে দিলো। ছেলেটা হয়তো ক্ষুধার্থ তাই এখানে কৌশলে আসা। দৃষ্টি কথায় কথায় ওর নাম জেনে নিলো,

আচ্ছা আপনার নামটা কি?
ছেলেটা লাজুক হেসে উত্তর দিল,
আরেন খান আরিস, আমাকে আরিস বলেই ডাকতে পারেন।
আরিস যার অর্থ নিস্তেজ অন্ধকার বা কালো। আচ্ছা আরেন শব্দের অর্থ কি? এটাতো জানিনা।
দৃষ্টির প্রশ্ন শুনে ছেলেটা কিছু চমকে উঠলো। তবে সামলে নিয়ে উত্তর করলো,

আমিও জানিনা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি না থাকলে ভীষণ অসুবিধা হতো। আপনাকে আমার জন্য অনেক সময় নষ্ট করতে হলো।
আরে না না তেমন কিছুই না। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি এটা আমার দায়িত্ব। দয়াকরে আপনি আর নিজের মধ্যে জড়তা রাখবেন না। যাইহোক আপনি বসুন আমি এখুনি একটু আসছি।

দৃষ্টি উত্তরের আশা করলোনা ওয়াশরুমের দিকে ছুটে গেলো। এখানে আসার পর থেকে কেমন শরীর খারাপ লাগছে। এসি চলছে তবুও ঘামছে। এমনটা হওয়ার কথা না তবুও হচ্ছে। জন্ম থেকে আজ অবধি ও কখনও অজ্ঞান হয়নি যথেষ্ট ফিট। আজ হঠাৎ কি এমন হলো বুঝতে পারছে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে যখন ও ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে গেলো ঠিক তখনই ওয়েটার টেবিলে খাবার দিয়ে গেল।

সেটা দেখে ছেলেটা মিষ্টি করে হাসলো। হাতের মুঠো কয়েকবার ঘুরিয়ে খাবারের উপর গুড় জাতীয় কিছু ছড়িয়ে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। এখন শুধুমাত্র দৃষ্টির আসার অপেক্ষা। এক মিনিট দুই মিনিট করে সময় অতিবাহিত হয়ে সেটা আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টার উপরে রূপ নিলো কিন্তু দৃষ্টি আর ফিরে এলোনা। আরেন বেশ বেকায়দায় পড়লো। প্রশ্ন জাগলো মেয়েটা হঠাৎ উধাও কিভাবে হতে পারে? ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে আসলো সেখানে কেউ নেই। কিচেন এমনকি ছাদেও দেখলো। বাইরে যাওয়ার গেটের কাছে ও বসেছিলো।

একজন মানুষ হঠাৎ গায়েব অদ্ভুত লাগছে।আরেন খাবার ছেড়ে বিল দিতে গিয়ে চমকে গেলো। দৃষ্টি খাবারের বিল পরিশোধ করে গেছে। সবটা ওর কাছে ধোয়ার মতো। মেয়েটার মধ্যে কোনো অদৃশ্য শক্তি আছে নাকি সবটা কাকতলীয় কে জানে। তবে শিকার যে হাতছাড়া বুঝতে বাকি নেই। আরেন দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বাইরে চলে আসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে।

সারাদিনের গ্রীষ্মের তাপদাহের সমাপ্তি ঘটিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি নামবে।আলেনের কাছে জার্মানির আবহাওয়া আর মেয়েদের মন দুটোই এক মনে হয়। দিনে কতবার যে রঙ পরিবর্তন করে বোঝা মুশকিল। কখনও বৃষ্টি কখনও তুষারপাত আবার হঠাৎ করেই গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ উজ্জ্বল সূর্যের হাতছানি দিয়ে উত্তপ্ত করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলে। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।

আরেন দৌড়ে গিয়ে যাত্রী ছাউনির নিচে গিয়ে আশ্রয় নিলো। কালো পিচ ঢালা রাস্তার উপরে বড় বড় ফোঁটা বৃষ্টির দানা আছড়ে পড়ছে। শীতল হাওয়া দিচ্ছে। আলেন একধারে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে ছিল হঠাৎ রিনরিনে মেয়েলী কণ্ঠ শুনে ও চমকে গিয়ে পাশফিরে চমকে গেলো। কারণ সেখানে দৃষ্টি বসে আছে। মেয়েটার চোখে মুখে রহস্যময় হাসি বিরাজ করছে।

এভাবে কি দেখছেন মিস্টার নির্জন খান আঁধার? ওপস সরি আপনি তো আবার মিস্টার আরেন খান আরিসের রোল প্লে করছেন কিন্তু ফলাফল যে শূন্য। কি হলো অযথা সময় নষ্ট করে? কয়েকদিন ধরে আপনি আমাকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ছদ্মবেশে বিরক্ত করে চলেছেন কিন্তু কেনো? আমার বোনের থেকে প্রতিশোধ নিতে আমাকে ট্রাপে ফেলতে চাইলে আফসোস সেটা সম্ভব না।
দৃষ্টি কথার মধ্যেই খানিকটা ঝুকে আঁধারের কানের কাছে গিয়ে পূণরায় ফিসফিস করে বলল,

আপনি বড্ড বোকা জানেন তো? কহিনুরের আশা ছেড়ে দিন আপনার জন্য ভালো হবে। কর্ম দোষে দুষ্ট আপনি।ওরা কিন্তু প্রতিশোধ চাইছে। সকলে এক সঙ্গে আসলে পারবেন তো সামাল দিতে ?
আঁধার চমকে উঠলো। দৃষ্টি কাদের কথা বলছে ও বুঝতে পারছে না। তাছাড়া ধরা পড়ে কিছুটা নার্ভাস লাগছে। মনে হলো মেয়েটা সাধারণ হতেই পারেনা। কিছুতো একটা আছে। কিন্তু কি?

দীর্ঘ চার ঘন্টা ধরে প্রহেলিকাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেডি করতে ক্লান্ত কহিনুর । এতো খুঁতখুঁতে স্বভাবের মহিলা ও জীবনে দেখেনি। কোনো কিছু পছন্দসই হয়না। এক ড্রেস কতবার খুলেছে আর পরেছে ঠিক নেই। পুরোটা সময় পাথর সোফায় পা ঝুলিয়ে কহিনুরকে এক দৃষ্টিতে দেখেছে। এমন সুযোগ পেয়ে ছেলেটা হাতছাড়া করতে চাইনি। গতকাল রাতে দুজনে ফিরে এসেছিলো জঙ্গল থেকে। ওখানে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য উদ্ধার হয়নি। আশেপাশের সবটা চেক করেছে বেশিরভাগ কক্ষ শূন্য পড়ে আছে। আপাতত শান্ত থাকতে হবে ভেবে কহিনুর চুপচাপ আছে। পাথর ক্লান্ত কহিনুরের মুখের দিকে চেয়ে বলল,

এতো প্যারা নিচ্ছ কেনো? অনুমতি দাও এই মহিলার মেকাপ কক্ষে কক/টেল ফাঁটিয়ে আগু/ন লাগিয়ে সর্বনাশ করে ফেলি। যখন প্রিয় জিনিস নিজ চোখে জ্ব/লতে দেখবে তখন মস্তিষ্কের বারোটা এমনিই বাজবে। ভুলভাল বকবে সেই সুযোগে আমরা সত্যিটা জেনে নিব। কেমন বুদ্ধি বলো? আমাকে নিয়ে তোমার গর্ব হওয়া উচিত। এমন অসাধারণ একটা বর পেয়েছো তোমার ভাগ্য দেখে আমার হিংসা হচ্ছে নূর।

কহিনুরের এমনিতেই টেনশনে অবস্থা খারাপ তারপরে আবার পাথরের এলোমেলো কথাবার্তা শুনে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঝামেলা হবে তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
ফাজলামি করবেন না।এখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছি।
কহিনুরের গম্ভীর আওয়াজ আর ক্ষিপ্ততা দেখে পাথর নড়েচড়ে সামান্য সামনের দিকে ঝুকে বসলো,

বাদ দাওনা এসব চলো ঘুরতে যায়। পাশাপাশি হাতে হাত রেখে চলব।তুমি চাইলে আমাকে একটা চুমুও দিতে পারো আমি কিছু মনে করবনা। দিবে একটা?
কিসের মধ্যে কি?
কহিনুর বেশ রেগে আছে ভেবে পাথর উত্তর করলোনা চুপচাপ সোফায় হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
আর বলনা। আফসোস বরের জন্য সময় নেই কারো।

কহিনুর পাত্তা দিলনা। আজ এই বাড়িতে একটা ইভেন্ট আছে। এইটাই সুযোগ এই বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে চিনে নেওয়ার। কহিনুর নিজেকে যথেষ্ট আড়ালে রাখতে চেষ্টা করবে। থ্রিম পার্টি তাই সবাইকে কালো রঙের ড্রেস পরতে হবে সঙ্গে কালো রঙের মাস্ক। কহিনুর কালো গাউন পরেছে। সাঈদ এখানে নেই। পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বাসার সামনে সুইমিং পুলের কাছে। এরা চাইলে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে যেতেই পারতো কিন্তু যায়নি।

কহিনুর বুঝতে পারছে না এরা মানুষের থেকে এতটা দূরুত্ব মেনে কেনো চলাফেরা করে? এই বাসার দক্ষিণে বিশাল একটা বৃক্ষ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা বাসার এরিয়ার মধ্যে চলে এসেছে। কহিনুর সেদিকে চেয়ে বেলকনি ধরে বাইরে বেরিয়ে আসলো। সুইমিং পুলের কাছাকাছি আসতেই একটা ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গেলো। পাথর ওকে সজাগ করে দিয়েছিলো। কহিনুর নিজেকে সামলে পাশে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল।

ওকে ধাক্কা দিতে আসা ছেলেটাকে ওর কেমন চেনা চেনা লাগছে। অনেকটা ভাবার পরে ওর খেয়াল হলো একে বছর খানিকটা আগে গালিবের সঙ্গে দেখেছিলো। কহিনুর দ্রুতগতিতে ওর পিছু নিলো। ছেলেটা হুই/স্কির বোতল নিয়ে এলোমেলো পায়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। দূরে একটা মেয়েকে অশালীন ইঙ্গিতে ইশারা করছে। মেয়েটাও কম যায়না সেও রিপ্লাই করছে। পাথর বিরক্তি নিয়ে বলল,

নিকৃষ্ট এই লোকদের ব্যবহার করে কাজ হাছিল করা হয়।তাইতো এখানে এদের এতো গুরুত্ব। গতকাল রাতে ড্রাম নিয়ে এসেছিল এই ছেলেটা ওর মধ্যে ছিলো। তুমি চাইলে প্রথমে একেই নিশানা করতে পারো। রুম নাম্বার টুয়েন্টি ফাইভ। একা থাকে নারী সঙ্গ হুই/স্কি বি/য়ার ও/য়াইন সব চলে তবে সেটা গৃহের বাইরে। এখানে পরিচারিকাদের সেফটি আর ক্লিন ইমেজের জন্য প্রহেলীকা কিউটি সবটা নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করে।
কহিনুর প্রথম কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনলেও শেষের কথাটা শুনে থমকে গেলো। ওষ্ঠ ফুলিয়ে উত্তর দিলো,

কিউটিকে বিয়ে করে নিন। কি দেখে ওরে আপনার কিউটি মনে হয় শুনি? একদম আমার পেছনে আসবেন না। আমার মিশন আজ রুম নাম্বার টুয়েন্টি ফাইভ।
কহিনুর উত্তরের আশা করলনা। দ্রুতগতিতে হাটতে হাটতে হাত বাড়িয়ে ওয়েটারের থেকে ওয়া/ইনের গ্লাস হাত তুলে নিয়ে সামনে গিয়ে গেল।চুপচাপ ছেলেটার পাশে দাঁড়ালো। ওষ্ঠে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে বলল,

হাই আমরা কি পরিচিত হতে পারি?
ছেলেটা চমকে উঠে পাশ ফিরে সুন্দরী মেয়েকে দেখে আকাশের চাঁদ পেলো হাতে। উৎসাহী হয়ে উত্তর দিলো,
কেন না? আমি রমেন ইব্রাহিম,প্রহেলিকা ম্যামের ম্যানেজার।
আমি নূর ফারুকী, ম্যামের মেকাপ আর্টিস হিসেবে নতুন জয়েন করেছি। আপনাকে দারুণ দেখতে একদম অন্যরকম। প্লিজ আপনার সঙ্গে কি আমি ডেট করতে পারি? এখানে নতুন তাই বোরিং লাগে। প্লিজ প্লিজ।

কহিনুরের পাশে থাকা পাথরের মাথা ঘুরছে। নিজে এতোটা সুদর্শন অথচ বউ তার দিকে ফিরেও দেখেনা আবার বাইরের ছেলেদের দিকে নজর দিচ্ছে।বিষয়টা মানা যায়না। পাথর চুলের মধ্যে আঙুল টেনে ফিসফিস করে বলল,
বেশি বেশি হচ্ছে নূর। ওকে দেখতে চোর চোর লাগছে অথচ সেটা না বলে তুমি মিথ্যা কেনো বলছো?
পাথরের কথার উত্তর আসলোনা। কহিনুর ছেলেটার সঙ্গে মোটামুটি ভাব জমিয়ে ফেলেছে। আজ রাত বারোটার পরে ডেট ফিক্সড করে কহিনুর হাফ ছেড়ে বলল,

বয়স্ক মহিলার চেয়ে এটা ঠিক আছে। আপনি আপাতত কক্ষে ফিরে যাবেন এখন। দুপ্রহর বাদে আপনার ওষুধের প্রভাব কাটতে শুরু করবে। আজ রাতের মধ্যে কিন্তু রহস্যের সমাধান করা চাই। সাঈদ ফিরছে আমি একা থাকবো না তাই চিন্তা করবেন না। আশাকরি দ্রুত আসবেন।
পাথর মুখটা গম্ভীর করে কহিনুরের কপালে চুমু দিয়ে বলল,

সাবধানে থাকবে।
কহিনুর মাথা নেড়ে ওকে বিদাই জানিয়ে প্রহেলিকার দিকে এগিয়ে গেলো। অনেক অপেক্ষার পরে সেখানে আলেক্স লয়েডের দেখা মিলল। ভদ্রলোক প্রথম ঘরের স্ত্রী সন্তানের প্রতি বেশ সন্তুষ্ট।হেসে হেসে কথা বলছে। কহিনুর সুইমিং পুলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাজকর্ম নেই খুব গুরুত্ব দিয়ে সুইমিং পুলের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে একটা সুক্ষ রেখা দেখে ভ্রু চুকচে ফেলল। চারকোনা টাইপের রেখা। খুব ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে এখানে একটা গুপ্ত দরজা বিদ্যামান। কহিনুর সেটা ভেবেই হেসে ফেলল। শস্যের মধ্যেই ভুত কথাটা সত্যি। এই পাপের রাজ্য ধসে পড়তে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, তারপর?

ঘুমন্ত পাথরের পাশে বসে আছেন ওয়াশিম খান। মস্তিষ্কে ভয়ঙ্কর সব ভাবনারা উঁকিঝুঁকি কাটছে। নিথর শরীরটার মধ্যে যদি অন্য একজন বাসা বাঁধে তাহলে কেমন হবে? কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আঁধার এসে হাজির হলো। নির্জনতা কাটিয়ে খান সাহেব বলে উঠলেন,

তুমি পারবেতো কাজটা করতে? সিউর হয়ে বলো।
আঁধারের চোখে পরাজয়ের চিহ্ন জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। দুদিন খুব চেষ্টা করেও দৃষ্টিকে বশে আনতে পারেনি। ওকে বোকা বানানো হয়েছে তবে এবার আর ভুল কিছু করবে না। বিশেষ কৌশলে অবলম্বন করবে। কথাটা ভেবে ও মাথা নাড়লো। বিছানার পাশেই পাথর মুখে হাত রেখে বসে আছে। দুজন ব্যক্তির কুটিল বুদ্ধি বুঝতে ওর বাকি নেই। কহিনুর বুঝতে পেরেই ওকে এখানে পাঠিয়েছে। পাথর বউয়েদের বুদ্ধির তারিফ করতে করতে অদৃশ্যে মিলিয়ে গেলো।

নির্জন কক্ষে নেশাগ্রস্ত এক যুবককে পাশে বসে আছে কহিনুর। হাতে ওয়াইনের গ্লাস । সেটা যুবকের দিকে এগিয়ে দিয়ে জিঞ্জাসা করল,
প্রহেলীকা ম্যাম অনেক কিউট তাইনা? হতেই পারে বয়স যে অনেক কম।
ছেলেটা ঢকঢক করে গলাই ওয়াইন ঢেলে নিয়ে উত্তর দিলো,

দূর ওসব কিছুই না।ওকে আর যাইহোক সুন্দরী বলোনা। একশো হতে চললো ওর বয়স। কালো ছাদু না করলে এতোদিন বুড়ি হয়ে মা/রা যেতো। নিষিদ্ধ বক্স তাতে বন্ধি আছে বয়স। তুমি বুঝবে না।
কহিনুর নড়েচড়ে বসে উৎসাহী হয়ে বলল,
বুঝিয়ে বলো আমার প্রচণ্ড জানতে ইচ্ছা করছে। কৌতূহল না মিটিয়ে তুমি আমাকে দুঃখ দিতে চাইছ?
কহিনুরের ছেলেমানুষি আবদার শুনে ছেলেটা আল্লাদি হয়ে উঠলো। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

একদম না কিউটি। আসলে এগুলো সিক্রেট বিষয় তবুও বলছি।এখানে সুইমিং পুলের নিচে আছে গোপন কক্ষ। সেখানে আছে সেই বক্স আর পাশের কক্ষে আছে দুজন খাচা বন্ধি মানুষ। ওখানেই আছে প্রহেলিকার সব রহস্য। মানুষের বয়স ওরা ইচ্ছে করলে থমকে দিতে পারে। ধরো একজন মানুষের শরীরে প্রাণ নেই অথচ সে জীবিত। শরীরের গঠন বৃদ্ধি হয়না। খাদ্য বা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সব বন্ধ।

মানুষকে অচেতন করে তাকে আর শরীরে আত্মার প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না। প্রাকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ যেটাকে বলে ওরা সেটাই করে। নিজের বয়স কিভাবে কমিয়ে এনেছে ভাবতেও পারবেনা। অনেক পূর্বে ওই কক্ষে একজন মেয়ে ছিল যার চেহারা নূরের ন্যায় ঝলমলে। আমি একবার দেখেছিলাম। প্রহেলিকা প্রচণ্ড জেদি আর খারাপ মহিলা। দয়ামায়া নেই স্বার্থের জন্য নিজের ছেলে আর বউমাকে আটকে রেখেছে। তুমি বুঝতে পারছ কতটা ভয়/ঙ্কর? যাইহোক তুমি নিকটে আসো দূরে থেকনা প্লিজ।

কহিনুর সোজাসুজি প্রশ্ন করল,
শিকদার গালিব রেজাকে চিনতে তুমি? ভদ্রলোকের সম্পর্কে তোমার কতটা জানাশোনা আছে?
ওটাকে নিয়ে কিছু বলার নেই। বুইড়া বয়সে ছলাকলা করে অল্পবয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। একদম ছিঃ মার্কা চরিত্র। দেখতে যেমন দেখাই আসলে ভেতরে তেমন না। সুলতান পরিবারের প্রাক্তন মেজ জামাই।
কথাটা শুনে এক মূহুর্ত্তের জন্য কহিনুর থমকে গেলো।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৫

একদম হজম হচ্ছে না। লোকটা ভালো মানুষের মুখোশ পরে ছিল কিন্তু কেনো? মেজ ফুপির সঙ্গে যদি এই লোকটার বিয়ে হয় তবেকি উনিও অভিশপ্ত ছিলেন? মানব নিষিদ্ধ মানবিদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিয়ে হবে না সিউর তারমানে গালিব মোটেই সাধারণ ছিল না। তাইতো অনায়াসে সবাইকে ধোকা দিতে পেরেছে। লোকটা সুলতান ভিলার বাইরে থেকে কহিনুর হাছিলের চেষ্টা করেছে কি অদ্ভুত। কহিনুরের মাথা আউলে গেলো। চুপচাপ উঠে আসলো উদ্দেশ্যে সেই গোপন কক্ষ। সেখানেই আছে ওর সব প্রশ্নের উত্তর।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৭

4 COMMENTS

Comments are closed.