কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৭

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৭
লাবণ্য ইয়াসমিন

চন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সুলতান পরিবার অভিশপ্ত ছিল।মানব নিষিদ্ধ মানবিদের জন্য অভিশপ্ত অর্ধমানবদের প্রণয়ক্রীড়া সংঘটিত করতে বাধ্য হয়েছিল সুলতান পরিবার। এতে সুবিধা ছিল এক অর্ধমানবদের বংশবৃদ্ধি করা আর দুই সুলতান পরিবারের এই সুন্দরী রমনিদের অভিশপ্ত জীবনের একটা গতি করা। তবে সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল সঠিক জানা নেই। অভিশপ্ত সুলতান পরিবারে বারবার যমজ বাচ্চার জন্ম হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কহিনুর জন্মের সময় কি সুলতান পরিবার অভিশাপ কাটিয়ে উঠেছিল নাকি কহিনুর অভিশপ্ত হয়েই জন্ম নিয়েছিল? যদি অভিশপ্ত না হয়ে জন্ম নেয় তবে ওর ফুপিরা কেন বোবা বধির ছিল? আর অভিশপ্ত হলে তবে ও কিভাবে একা জন্মা নিয়েছিল? প্রথমদিকে প্রশ্নটা বারবার অধরার মস্তিষ্কে এসেছিল কিন্তু কখনও সেটা পাত্তা দিতে মন চাইনি। কহিনুর ফিরে আসার পর কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে সেদিন যে মারা গিয়েছিল ওটা কহিনুর ছিল না। হয়তো ওর মতোই কেউ ছিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু কে ছিল?নাকি ওটা সত্যি কহিনুর ছিল। জুবায়ের রুম পরিস্কার করছে। এই কক্ষে গৃহ পরিচারিকাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। জুবায়ের পছন্দ করেনা। অধরা নিজে সবটা দেখাশোনা করে ওর ভালো না লাগলে জুবায়ের করে। জুবায়ের ঝাড়ু রেখে অধরার দিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো। তখনও অধরা ভেবে চলেছে। জুবায়ের ঝাড়ু রেখে হাত পরিস্কার করে অধরার কোলের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ডান হাত উচু করে অধরার মুখটা সামান্য টেনে জিঞ্জাসা করলো,

ওই বরের দিকে না তাকিয়ে কি আকাশ পাতাল ভেবে চলেছো? কয়েকদিন পাত্তা দাওনি সেই জন্য তোমাকে আমি শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমারতো অনেক দয়া মায়া তাই বউকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কৃতজ্ঞতার বিনিময়ে ভালোবাসা দাও চুমু দাও সঙ্গে গরম গরম কফি দাও।

জুবায়েরের এলোমেলো কথা শুনে অধরা চরম বিরক্ত। লোকটার ছ্যাঁচড়ামি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজে দোষ করে এখন ওকে দোষী বানিয়ে শাস্তি দিতে এসেছে।কেমন লাগে? বয়স হচ্ছে সঙ্গে বুদ্ধি কমছে। অধরার কপালে বিরক্তির চিহ্ন দেখে জুবায়ের ভ্রু নাচিয়ে পূণরায় বলল,

ওই এমন করছো কেন? অনেক কম চেয়েছি বলছ? আচ্ছা যাও এগুলোর সঙ্গে তুমি খানিকটা সেবাযত্ন করতে পারো। রাতে হাতপা টিপে দিলেও আমি মানা করব না। বউয়ের একটা হক আছে না?
অধরা তেতে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,

শুধু চাই আর চাই। ঘুম নষ্ট করে আপনার হাত পা টিপতে আমি পারব না। কিসের শাস্তি শুনি? ঘরে বউ রেখে গার্লফ্রেন্ডের জন্য দরদ উথলে পড়ছিল। আপনার যা রেকর্ড না? শুধুমাত্র আমি হয়ে আপনার সংসার করে যাচ্ছি। অন্যকেও হলে কবেই আবার বিয়ে করে টাটা বাই বাই করে পালিয়ে যেত। আমি নেহায়েত ভালো মেয়ে তাই।

অধরার কথা শুনে জুবায়ের ঝট করে উঠে বসল। বউয়ের মুখে বিয়ের কথাটা ওর একদম পছন্দ হয়নি। আরকি কোন কথা ছিল না? প্রয়োজনে গালি দিত তবুও শুনতে ভালো লাগতো। বউকে ভালোবেসে গালিগালাজ হজম করতে খুব একটা অসুবিধা হতো না কিন্তু তাই বলে অন্যথায় বিয়ে? জুবায়ের মুখটা গম্ভীর করে থমথমে মুখে উত্তর দিল,

আমার জন্য সত্যি তোমার জীবন নষ্ট হয়েছে? তুমি আমাকে দোষী ভাব? কেয়ামতের দিন তোমার অপরাধী হয়ে আমাকে সাজা পেতে হবে? যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও অনেক বিরক্ত করি তোমাকে। এমন আর হবে না।
জুবায়ের কথা শেষ করে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। অধরা হতভম্ভ জুবায়ের এমন আচরণে। সামান্য কথাতে এমন রিয়েক্ট করবে ও বুঝতে পারেনি। অধরা ওর পিছু নামতে নামতে উত্তেজিত হয়ে বলল,

এই সরি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি চিন্তিত ছিলাম বিধায় মাথা ঠিক ছিল না। প্লিজ সরি।
জুবায়ের উত্তর দিল না। সোজা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। গভীর রাত নির্জন ড্রয়িং রুম পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। জুবায়ের কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য কফি তৈরী করতে দিয়ে একটা প্লেটে কিছু বিস্কুট নিয়ে নিলো। কফি মগে ঢেলে সোফায় গিয়ে বসলো। অধরা ওর পিছু পিছু ঘুরছে ক্ষমা চাইছে জুবায়ের সেটা পাত্তা দিচ্ছে না। নিজের উদ্দেশ্য হাছিল করতে কিছুক্ষণ নিরব থাকা জরুরি। বউকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিতে পেরে সেই শান্তি লাগছে। জুবায়ের কফিতে ছোট করে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বাদ নিতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় অধরা ওর হাত থেকে কফিটা কেড়ে নিয়ে নিজেও খানিকটা চুমুক দিয়ে বলল,

বাহ আপনিতো ভারি চমৎকার কফি তৈরী করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত সুগার দিয়েছেন এটা শরীরের জন্য মোটেই ভালো না। বয়স হচ্ছে খেয়াল রাখতে হবে। শুনন না এবারের মতো সরি। কান ধরছি ক্ষমা করে দিন না।
জুবায়ের বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থাকলো অধরার দিকে। মেয়েটার চোখ ছলছল করছে এখুনি হয়তো কেঁদে দিবে। নাকের ঢোগাই ঘাম চিকচিক করছে।এই ঠান্ডার মধ্যেও ঘামছে।

জুবায়ের বেশিক্ষণ তাকাতে পারলোনা। রাগ ধরে রাখা ভীষণ মুশকিল। আবেগপূর্ণ হয়ে যখন তখন চুমু টুমু দিয়ে বসলে নাটকের দফারফা। বউকে এমন টাইট দিবে জীবনে আর খোচা দিয়ে কথা বলবে না। প্রাক্তন কি মানুষ ইচ্ছে করে বানাতে চাই? উঠতি বয়স ছিল জুহিকে ভালো লাগতো। সময়ের সঙ্গে ভালোলাগা ভালোবাসার পরিবর্তন হয়েছে। অধরা যদি প্রথম থেকেই ওর জীবনে থাকত সেটা আলাদা ছিল। বিয়ের আগে এমন অতীত অনেকের থাকে তাইবলে কি খোটা দিতে হবে? বরং অধিক ভালোবাসা দিয়ে প্রাক্তনের স্মৃতি বরের মন থেকে ভুলিয়ে দিতে হবে। জুবায়েরের ধ্যান ভাঙলো ধাক্কা খেয়ে। অধরা ওকে ধাক্কা দিচ্ছে। জবাবে গলা ঝেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিল,

এভাবে ধাক্কা দিচ্ছ কেন? যাও বিয়ে কর। আমিতো ভালো না।
অধরা মুখ কাচুমাচু করে ফেলল,
সরি আমার ভুল হয়েছে।
একদম না,ঠিকই আছে। লোকে বলে স্ত্রী বুদ্ধি ভয়ংকর আমার কিন্তু তেমন মনে হয়না। তোমার অনেক বুদ্ধি। এবার সেই বুদ্ধিতে স্বামী ছেলেমেয়ে রেখে নতুন কাউকে বিয়ে করে সংসার শুরু কর। আমি দোয়া করব সুখী থাকবে। ভীষণ ভালোবাসি তাই বদদোয়া করতে পারবনা।

অধরা এমন শক্ত কথা শুনে নিজেকে শান্ত রাখতে পারলোনা। ঠোঁট ফুলিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল। জুবায়ের চমকে উঠে দ্রুত অধরার মুখ আটকে ফিসফিস করে বলল,
আরে কাঁদছ কেনো? ছেলেমেয়েরা আছে কি ভাববে বল? বাচ্চাদের মতো আচরণ করছ। তুমি নিজেই বিয়ে করতে চাইলে এখন আবার কাঁদছ।
অধরা মাথা নাড়িয়ে বোঝালো ও এমনটা চাইনি। জুবায়ের বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

কখনও এমন অসভ্য আচরণ করবে আমার সঙ্গে?পচা পচা কথাবার্তা বলে আমাকে রাগাবে আর?
অধরা পূণরায় মাথা নাড়ালো।
মনে থাকবে?
থাকবে।
অধরার বোঝার আগেই জুবায়ের ঝটপট ওকে কোলে তুলে উঠে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,
কতটা সময় নষ্ট করলে সবটা হিসেব করে রেখেছি। ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছ। এখন না ঘুমালে ভোরে উঠতে পারব?
আমার কি দোষ? আপনি হুটহাট রেগে গিয়ে বোম হয়ে যান এখন আমার দোষ দিচ্ছেন।
অপরাধ করে এখন তর্ক করছো? আবারও রেগে যাব কিন্তু

এই না না আর রাগতে হবে না।
জুবায়ের অধরাকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই দক্ষিণের কক্ষ খুলে গেলো। ঝিমুনি দিতে দিতে দৃষ্টি বেরিয়ে আসলো কক্ষ থেকে। ওর পেছনে সাঈদ আছে। দুপুরে রেস্টুরেন্টে থেকে বাড়িতে ফিরে আসার কাহিনীর কিছু মনে পড়ছে না। সেটা নিয়ে ও খানিকটা চিন্তিত। দৃষ্টি কফি তৈরী করে আবারও কক্ষে ফিরে এসে চমকে উঠলো। কারণ ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে একটা ছেলের অবয়ব রয়েছে। দৃষ্টি সামান্য মাথা ঘুরিয়ে থমকে গেল। পেছনে লিকলিকে চিকুন ফর্সা টাইপ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ও ভয়ে ভয়ে ফিসফিস করে বলল,

কে আপনি? এখানে কি করছেন?
সোজাসাপ্টা উত্তর পুরুষালী কণ্ঠে উত্তর আসল,
আমি সাঈদ আপনাকে দুপুরে বাড়িতে পৌঁছে দিতে আমি এসেছিলাম। আপনি তখন খানিকটা অসুস্থ ছিলেন। অচেনা মানুষকে যেচে সাহায্য করতে যাবেন না। বিপদ হতে পারে। সাহায্য করার জন্য অনেকেই আছে। যারা সত্যিকারে বিপদে পড়ে।
দৃষ্টি কিছু বুঝতে পারছে না। ওয়াশরুমে যাওয়ার পর থেকে ওর কিছু মনে নেই। মাথাটা ঘুরে চার‍দিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। সাঈদ বুঝতে পারল দৃষ্টি বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছে তাই সোজাসুজি বলে দিল,

ভয় পাবেন না। আমি আপনার বোনের বন্ধু। উনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন আপনাকে উদ্ধার করতে। কয়েকদিন ধরে আপনাকে একটা ছেলে বিরক্ত করছিল। আসলে ওটা কোনো সাধারণ মানুষ ছিল না। একটা শক্তি যে আপনার এবং আপনার পরিবারের শত্রু। আজ ছদ্মবেশে এসেছিল।আমাকে কি আপনি বিশ্বাস করছেন?
দৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলল,

জ্বী করছি।কিন্তু আমার কিছু মনে নেই কেন?
আপনাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করছিলাম তাই আপনার কিছু মনে পড়ছে না। আপনার মস্তিষ্ক আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছেলেটা আপনার ক্ষতি করতে এসেছিল। দয়াকরে কয়েকটা দিন বাড়িতে অবস্থান করুন। আমি কে বা আমার পরিচয় কি সবটা আপনাকে নূর বলবে। এখন আসছি। ও বিপদে আছে।

সাঈদ অপেক্ষা করলনা। দ্রুত বেলকনির দিকে এগিয়ে এসে বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে গেলো। দৃষ্টি ওর পেছনে ছিল। এমন দৃশ্য দেখে ও চমকে উঠল। রাতে একা ঘুমানোর মতো সাহস ওর নেই। বাবা মায়ের কক্ষে গেলে নানারকম প্রশ্ন করবে তাই বালিশ হাতে আলফার কক্ষে গিয়ে হানা দিল। ছেলেটা দরজায় ছিটকিনি দেয়না বিধায় সমস্যা হলোনা। দৃষ্টি ওর বেডের কাছে গিয়ে থমথমে মুখে বলল,

আমি আজকের রাতটুকু এখানেই ঘুমাব।তুমি একটু সোফায় গিয়ে ঘুমাও না। ভয় করছে খুব ।
আলফা ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিল হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলল। বিরক্তি নিয়ে বলল,
মামা বাড়ির আবদার? একদম বিরক্ত করতে আসবি না। জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। ভুল হলে এক সপ্তাহের পরিশ্রম নষ্ট হবে।

আলফা বেশ সিরিয়াস। দৃষ্টির মন খারাপ হয়ে গেলো। এতকিছু ঘটে গেল অথচ বাড়ির কেউ কিছু জানেনা। পাশে থাকার মতো কেউ নেই। কি করবে ভাবতে ভাবতে বালিশ নিয়ে চলে আসতে চাইলো। মাথা ঝিমঝিম করছে শরীর টলছে। আলফা একবার ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে ওর দিকে চেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে ওকে ধরলো। উত্তেজিত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

তুই ঠিক আছিস? এভাবে টলছিস কেন? ঠিকঠাক খেয়েছিস?
দৃষ্টির রাগ হচ্ছে সঙ্গে অভিমান হলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,

আমি পৃথিবী থেকে উধাও হলেও বাড়িতে কেউ জানতে পাবেনা। তুমি যাও আমি নিজের রুমে যাচ্ছি। লোক দেখানো ভালোবাসা আমার লাগবে না।
আলফা অধৈর্য হয়ে উঠলো। ওকে জোর করে সোফায় বসিয়ে পানির গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

ভুলভাল না বকে কি হয়েছে বলবি? একটা দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। তুই নিজের মতো ইউনিভার্সিটি গিয়েছিস তাতেই এই অবস্থা। তাহলে বাকিটা দিন কেমন হবে? আমি সামনের বছর আমেরিকা যাচ্ছি ভুলে গিয়েছিস?
মনে আছে। আমি ঠিক আছি। একটা ছেলে আমাকে ট্যাপে ফেলতে চেয়েছিল। নূর আপুর ফ্রেন্ড উদ্ধার করেছে। তুমি জানো ওই লোকটা আমার সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল? সবটা কেমন রহস্য রহস্য লাগছে। সেদিন সন্ধ্যায় যেই ছেলেটা আমাকে আক্রমণ করেছিল ওটাও সাধারণ কেউ ছিল না। ও বাড়িতে এসেছিল আজ বাইরে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। বারবার হুমকি দিচ্ছে। আমাকে কন্ট্রোল করতে চাইছে। জানিনা ওর কি লাভ এসব করে।

দৃষ্টি প্রথম থেকে সবটা বলে দিলো। আলফার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। এই বাড়ির ইতিহাস মায়ের থেকে কমবেশি সবটা ওর জানা। ভয় লাগছে দৃষ্টিকে নিয়ে। মেয়েটা সাদা সরল। তাছাড়া ওর কিছু হলে বাড়ির লোকেরা পাগল হয়ে যাবে। আলফা দ্রুত দরজা জানালা বন্ধ করে দৃষ্টিকে বিছানায় রেখে বলল,

এখন চুপচাপ ঘুমাবি। কথা বলবি না আমি পাশে আছি।আর শোন আপাতত বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে নতুন করে কি হচ্ছে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সব বিপদ বোনদের ঘিরেই কেন হয় আল্লাহ ভালো জানেন।

দৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলো। আলফার মনোযোগ নষ্ট হয়েছে বিধায় নতুন করে আর ল্যাপটপে মন বসলো না। জানালার পর্দা সরে গিয়েছিল সেটা ঠিক করতে গিয়ে খলখল হাসির শব্দ শুনে চমকে উঠল। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখল লনের পাশে একটা মেয়ে বাতাসে দুহাতে প্রসারিত করে ঘুরছে আর হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। চাঁদের আলোতে ভীষণ মিষ্টি লাগল সেটা দেখতে। আলফার ঘোর লেগে যাচ্ছে কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। ছেলেটা শব্দ করে জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

এসব ফালতু মোহে সুলতান আলফা ফারুকী পড়েনা। অন্য কিছু ট্রাই কর।
কথাটা বাইরে পযর্ন্ত পৌঁছে গেলো। সঙ্গে একজোড়া আগুন চক্ষু চেয়ে রইল ওর কক্ষের দিকে।

ঘনঘন দম নিচ্ছে কহিনুর। সুইমিং পুলের মধ্যে থাকা গোপন কক্ষে যাওয়ার প্রবেশদ্বার মোটেই সরল ছিল না। এটা বাড়ির পেছনের দিকে থাকা সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। খানিকটা হেটে তারপর সুইমিং পুলের এখানে দরজা। অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা চার‍দিকে পোকা মাকড়ে ভর্তি। কহিনুর বুঝতে পারছে না এখানে যদি নিয়মিত লোকজন যাতায়াত করে তাহলে পোকামাকড় কেন থাকবে?

ওর সঙ্গে চালাকি করা হয়েছে কি সেটা বুঝতে পারছে না। পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই বিধায় চুপচাপ দরজা পযর্ন্ত চলে এসেছে। এখানে এসে আরেক বিপদ। দরজার ওপাশ দিয়ে আরেকটি সুড়ঙ্গের মুখ। এখানে প্রবেশের দুটো রাস্তা আছে বিষয়টা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। কহিনুর দরজায় হাত ছোঁয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘটঘট শব্দে দরজা খুলে গেলো। বাইরে অন্ধকার হলেও ভেতরটা বেশ আলোকিত।

মানুষের তৈরী কক্ষ তাই সব রকমের সুবিধা এখানে আছে। আলো জ্বলছে এসি অন আছে চমৎকার দেখতে ড্রয়িং রুমটা। ড্রয়িং রুমের সামনে দুটো বন্ধ কক্ষ ।রুমের মাঝামাঝিতে টেবিল রাখা একপাশে আলমারি আর দুটো সোফা আছে। মোটামুটি গুছিয়ে রাখা। কহিনুর পা টিপে প্রথম কক্ষের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। উঁকি দিয়ে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো। আসবাবপত্র বলতে মাঝখানে শূন্য পড়ে আছে বিশাল পালঙ্ক।

সেটা দেখে ওর মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো। এখানে পূর্বে এসেছিল মনে হচ্ছে কিন্তু কখন এসেছিল সেটা মনে পড়ছে না। ভেতরে থাকা সেই শক্তি যে ওকে সর্বদা সাহায্য করত তাকে ও অনুভব করেনা। যদি সে সঙ্গে থাকত তবে সব নিয়ে ওকে ভাবতে হতোনা। কহিনুর ওকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। কথাটা ভেবে ও চলে আসতে চাইলো কিন্তু একটা জিনিসে ওর চোখ আটকে গেলো।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৬

কক্ষের ডানপাশে ফ্লর থেকে কিছুটা উপরে একটা গোলকের উপরে ভাসমান নীলাভ পাথরটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।কহিনুর মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ছুটে গেলো সেখানে। দ্বিধান্বিত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই পাথরটা আরও জ্বলে উঠে ভাসতে ভাসতে ওর মধ্যে মিলিয়ে গেলো। কহিনুরের পা টলমল করে টলতে টলতে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলো। তারপর আবারও সেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসলো। পাশের কক্ষ থেকে কারো চিৎকা ভেসে আসলো তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলোনা। বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে গেল।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৮

3 COMMENTS

Comments are closed.