কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৮

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৮
লাবণ্য ইয়াসমিন

গোপন সুড়ঙ্গের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে আছে সাঈদ। ভেতরে প্রবেশ করার কোনো উপায়ন্তর মিলেনি। ভেতরে জ্বীন প্রবেশ নিষিদ্ধ, হয়তো কোনো বস্তু দ্বারা বন্ধ করা আছে। তাছাড়া প্রাচিরের গায়ে মশাল জ্বালিয়ে রাখা সেখান থেকে আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ছে। সাঈদের আগুনে ফোবিয়া আছে। ইতিমধ্যে বেচারার শরীরে কয়েক জায়গায় ফোসকা নিয়েছে ।কালো শক্তির রাজত্ব এখানে।

কহিনুর ভালো খারাপ সবখানেই যেতে পারে কারণটা সকলের জানা আছে। কহিনুরের মধ্যে থাকা শক্তির উৎস হচ্ছে অশুভ কালো শক্তি। যার সামনে শুভ অশুভ বলতে কিছু নেই। সাঈদ প্রচণ্ড টেনশন করছে। ভেতরে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। দূর থেকে ঠকঠক আওয়াজ ভেসে আসছে। কেউ এদিকে এগিয়ে আসছে। সাঈদ চমকে উঠে নিজেকে আড়াল করে নিলো। বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে থাকতে অসুবিধা নেই তবে গায়ের গন্ধ প্রকাশ পেলে সমস্যা আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রহেলিকা ভেতরে প্রবেশ করলো। মহিলার পায়ে উঁচু হাই হিল। যেটা ফ্লরের সঙ্গে লেগে খটখট শব্দ করছে। ভদ্রমহিলা সাঈদের সামনে এসে থমকে গিয়ে আশেপাশে তাঁকিয়ে আবারও সামনে এগিয়ে গেল। মাটির নিচে শহর বা রেস্টুরেন্ট থাকাটা নতুন কিছু না। মানুষ রহস্য বা অদ্ভুত জিনিস সৃষ্টি করতে পছন্দ করে রহস্য টানে। তাইবলে মাটির নিচে এভাবে লম্বা দীর্ঘ রাস্তা পরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করা মোটেও স্বাভাবিক না।

মেয়েটা ভেতরে কোনো বিপদে পড়েছে নিশ্চিত। প্রহেলিকা খানিকটা দূরে চলে গেছে। ওপাশের রাস্তা থেকে কয়েকজন মেয়ে এসে প্রধান দ্বারে অপেক্ষা করছিলো। প্রহেলিকা আসা মাত্র একজন দরজা খুঁলে দিলো। সকলে মিলে ভেতরে প্রবেশ করেই প্রহেলিকা থমকে গেলো। বাইরের কেউ ভেতরে এসেছে গন্ধে তা প্রকাশ পাচ্ছে। ও আর অপেক্ষা করলোনা। দ্রুত এগিয়ে গেল। দরজা খোঁলা দেখে সন্দেহ শক্ত হলো।

কিন্তু ভেতরে গিয়ে কাউকে পেল না। দ্বিতীয় কক্ষে গিয়ে কিছুটা শান্ত হলো। সেখানে সবটা আগের মতোই আছে। কিছু একটা মনে হতেই ও দ্রুত আগের কক্ষে গিয়ে চমকে গেল। কক্ষে পাথর নেই। যেই পাথরটা কৌশলে অধিকার করেছিল সেটা এভাবে হারিয়ে গেলো মানতে পারছে না। পূর্ণিমা চলছে পাথরের প্রয়োজন ছিল। প্রহেলিকা শব্দ করে চিৎকার করে উঠলো। দরজার আড়ালে পাথর দাঁড়িয়ে আছে কহিনুরকে কোলে নিয়ে। এতগুলো চোখ ফাঁকি দিয়ে বাইরে যাওয়া কঠিন। তবুও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। নিজেকে প্রস্তুত করে ঝড়ের গতিতে কহিনুরকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। প্রহেলিকা কিছু বোঝার আগেই কহিনুর হাতের নাগালের বাইরে। তাছাড়া পাথর আরও একটা কাজ অতি কৌশলে করে ফেলেছে।

নির্জন সমুদ্রের বালুচলে নিথর শরীরে পড়ে আছে কহিনুর। ওর মুখের উপরে হামু হয়ে হাটু ভেঙে বসে আছে পাথর। পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি ফুলে উপরে উঠে আসছে। শনশন বাতাস হচ্ছে। পাথর খানিকটা পানি কহিনুরের মুখে ছিটিয়ে দিয়ে মৃদু কণ্ঠে ডাকল,

নূর শুনতে পাচ্ছ? প্লিজ সাড়া দাও আমি ভয় পাচ্ছি।
পাথর বেশ কয়েকবার ওকে ডাকলো। কিন্তু মেয়েটা সাড়াশব্দ করছে না। জোছনার আলোতে নূরের মুখটা ভীষণ মায়বী লাগছে। পাথর ওর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সঙ্গে আগলে নিলো। মেয়েটার এলোমেলো একরাশ কেশগুচ্ছ বালি মাটিতে ছড়িয়ে আছে। ক্ষণেক্ষণে চাঁদের উপরে মেঘের আবরণ পড়েছে।

কখনও ঝলমল করছে প্রান্তর আবার কখনও অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। পাথর কিছু একটা ভেবে আকাশের দিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল।ফুল চন্দ্রগ্রহণ চলছে। ঘড়িতে টাইম বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। পূর্ণিমা চাঁদে গ্রহণ লেগেছে।এটার সঙ্গে কহিনুরের কোনো যোগ সুত্র আছে কি কে জানে। পাথর মেয়েটাকে কোলের মধ্যে জড়িয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে গ্রহণ না ছাড়লে ওর জ্ঞান ফিরবে না।

অপেক্ষার প্রহর জানি শেষ হয়না। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে বেশ দূরে একজোড়া চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। শকুনের দৃষ্টি কহিনুরের উপরে পড়েছে। পাথর চোখ বন্ধ করে নিজেদের রক্ষা বলয়ে আবদ্ধ করে নিলো। কতটা কার্যকরী হবে কোনো আইডিয়া নেই তবুও ভরসা করতে হচ্ছে। এভাবে প্রায় আধাঘন্টা অতিবাহিত হলো। দীর্ঘ গ্রহণ শেষে চাঁদ আলোকিত হয়ে উঠলো। পাথর হাপ ছেড়ে বাঁচল। পূর্ণ জোছনার আলো কহিনুরের মুখের উপরে পড়তেই পিটপিট করে মেয়েটা চোখ খুঁলে চাইলো। পাথরকে মুখের সম্মুখে ঝুকে থাকতে দেখে ভড়কে গিয়ে হুড়মুড় করে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে আনমনে বলল,

এখানে কেন এনেছেন আমাকে?
পাথর উত্তর না দিয়ে নিজের মতো বালুচরে শুয়ে পড়ে ডান হাত কাজে লাগিয়ে কহিনুরকে টেনে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
টেনশনে টেনশনে মারা যাচ্ছি একটু শান্তি দাও। এখানে না আনলে প্রহেলিকা সুইটি তোমাকে পানি ছাড়া গিলে নিত।
কহিনুর কয়েক মূহুর্ত শান্ত থাকল। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু পারলনা। পাথর ওকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। কহিনুর জোর করতে চাইছে না তাই মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,

কি হচ্ছে এটা? আমাকে ছাড়ুন। ওখানে যেতে দিন।
ওখানে গিয়ে কি করবে? তুমি যাদেরকে খোঁজ করছ ওরা ওখানে নেই। আমি তোমার কাজ করে দিয়েছি।
পাথর কথাটা বলামাত্র কহিনুর ওর চোখের দিকে চাইল। সত্যি বলছে কি মিথ্যা বলছে জানার প্রচেষ্টা করল। দুজনের দৃষ্টি এক হতেই পাথর থমকে গেল। মেয়েটার চোখে জাদু আছে। বশবর্তী হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। কয়েক সেকেন্ড যেতেই পাথর দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল,

আমাকে বশ করতে চাইছ কেন? সত্যি ওদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। এভাবে আমার দিকে তাকাবেনা।
কহিনুর হাসল। এই শক্তিটা ওর কাছে ছিল না। পরিক্ষা করতে চেয়েছিল কিন্তু ধরা পড়ে গেল। কহিনুর কিছু একটা ভেবে চিন্তিত হয়ে বলল,
আমাকে নিয়ে চলুন। দেখা করা জরুরি ওদের সঙ্গে।
পাথর আচমকা কহিনুরকে ছেড়ে উঠে বসল। ওদের থেকে কিছুটা দূরে একজন দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে চেয়ে উত্তর দিল,

ওদিকে দেখ ঠিক আমারই মতো দেখতে একজন দাঁড়িয়ে আছে। ও কেন এসেছে কিছু বুঝতে পারছ?
কহিনুর সেদিকে চেয়ে হাসল। মাথা নেড়ে বলল,
হিংস্রতা আমাকে পেয়ে বসেছে। কিছু একটা করে বসলে আমাকে থামাতে পারবেন না। নির্বোধ লোকেরা বুঝেনা।
কহিনুরের কথা শেষ হলোনা লোকটা হন্তদন্ত হয়ে ওদের কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে বলল,

নূর তুমি ওর থেকে দূরে যাও। ও তোমার ক্ষতি করে ফেলবে। তোমার মধ্যে শক্তি এখন নেই যে শত্রুর মোকাবেলা করবে। প্রহেলিকা তোমার মধ্যে থাকা পাথরটাকে অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছিল। যার দরুন তোমার র*ক্তের রঙ সাদা হয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে শত্রুতা তোমার ক্ষতি করতে চাইছে। তোমার পাশে ও ছদ্মবেশে থাকা বহুরূপি।
লোকটার কথা শুনে কহিনুর হাসল। কিছু একটা ভেবে পায়ের কাছে থাকা ঝিনুকের টুকরো তুলে নিয়ে হাতের তালুতে আঘাত করল। সঙ্গে সঙ্গে ফিনকি দিয়ে কয়েক ফোটা লাল তরল বেরিয়ে আসল। সেদিকে চেয়ে বলল,

কোথায় সাদা? এটা দিয়ে আলতা পরে আমার স্বামীর হৃদয়ের চরণভূমিতে আমি অনায়াসে বিচরণ করতে পারব।
বহুরুপি লোকটা এমনটা মোটেই আশা করেনি। ও দুপা পিছিয়ে গিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
এটা কিভাবে সম্ভব? এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
কি হওয়ার কথা ছিল মিস্টার আঁধার? অনুমতি ব্যতিত নিজের ভাইয়ের রূপে ভ্রাতৃ স্ত্রীকে ভুল বোঝাতে এসেছেন? কাজটা মোটেই শোভনিয় হয়নি। আমি আর কাউকে ক্ষমা করতে পারব না।

কহিনুর কথা বলতে বলতে হাতে থাকা খ*ঞ্জর ওর দিকে ছুড়ে দিল। সেটা গিয়ে আঁধারের বুকের ডান দিকে বিধলো। লোকটা চিৎকার করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেলো। পাথর ভ্রু কুচকে আছে। ওর কপালে চিন্তার রেখা। ওকে ভাবতে দেখে কহিনুর চাঁদের দিকে চেয়ে বলল,

চলুন সেই লোভী মানুষটার কাছে। যে আমাকে নিজের স্বার্থে এতোদিন আদর ভালোবাসা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছিল।
পাথর উত্তর দিলোনা। এগিয়ে এসে কহিনুরের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে মুষ্টিমেয় করে এগিয়ে গেলো।

বন্ধি গালিবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। ওর ডান দিকে মেহুল চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে কাঁদছে। কহিনুর ভনিতা ছাড়াই প্রশ্ন করল,
কি লাভ হলো এসব করে? আমাকে আমার পরিবার থেকে দূরে রেখে লাভতো কিছুই হলোনা। পাথর নিজের উত্তরাধিকারীর কাছে পৌঁছে গেছে। মস্তিষ্ক সত্যি শূণ্য আপনার। কখনও প্রশ্ন আসেনি সুলতান জুবায়ের ফারুকীকে কেন অধরা বারিকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছিল?

কহিনুরের জন্য অন্য কোনো মেয়েকে নির্বাচন করতে পারতেন। নয়তো জুবায়েরের ফারুকীর গার্লফ্রেন্ড ছিল সেও একটা মেয়ে। তবুও অধরা বারিকেই খোঁজা হয়েছে। কারণ কহিনুর শুধুমাত্র এই দুজন মানুষের ঘরেই জন্ম নিবে এমনটা উল্লেখ্য ছিল ডায়রির পাতায়। তবুও আফসোস আপনি যথেষ্ট সময় নষ্ট করলেন।
গালিবের চোখে আজ হিংস্রতা নেই। সব হারিয়ে ধোকা পেয়ে হয়তো রাগ জিদ সব ধুলোর সঙ্গে লুটিয়ে পড়েছে। উনি উদাসীন হয়ে বলতে শুরু করলেন,

আমার মা প্রহেলিকা শিকদার যৌবনের প্রারম্ভে নিজের অর্ধমানব প্রেমিকের প্ররোচনাতে কালোজাদুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বাবা মা ছাড়া মেয়েটার অভিভাবক ছিল না বিধায় যেমন ইচ্ছা তেমন চলাফেরা করতে পারতেন। নিজের সৌন্দর্যের প্রতি উনার ছিল ভীষণ দুর্বলতা।

নিজেকে আরও সুন্দরী করতে কালোজাদুর সাহায্য নিয়েছেন। প্রথমে আমার বাবা সঙ্গে থাকলেও উনি বাবাকে টেক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। উনাকে সঙ্গ দিতো শয়/তান। ওই বলেছিল বাবাকে হ/ত্যা করতে। মা তাই করল। আমি জন্মানোর পরে আমাকে রেখে শয়/তানের কথায় এখানে চলে আসলেন। আমি অভিশপ্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিলাম। অবিবাহিত বাবা মায়ের সন্তান আমি। দুজনই কালো শক্তির সঙ্গে জড়িত।

তাছাড়া মা আমাকে শয়তানের নামে উৎসর্গ করেছিলেন। নিজের বিবেক বিবেচনা ছিল না। ছোট থেকে যখন একটু একটু করে বড় হলাম মা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। আমাকে লোভ দেখালেন কহিনুরের। আমি কৌশলে নিজের পরিচয় গোপন করে সুলতান পরিবারে বিয়ে করলাম। তোমার মা আমাকে ভালো করে চিনেন। উদ্দেশ্য ছিল কহিনুর হাছিল করা। তবে সেটা হলোনা। কারণ তোমাকে নিয়ে তোমার মা পালিয়ে গেলেন। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। যখন আবারও তোমরা ফিরে আসলে শুরু হলো আমার নতুন কৌশল।

গালিব এইটুকু বলে থামলো। কহিনুর তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলল,
বাকীটুকু আমি জানি মিস্টার গালিব রেজা। ওইদিন আমার মৃত্যু হয়নি বরং কহিনুরের মধ্যে থাকা পাথরটা যখন শত্রুদের বিনাশে মত্ত ছিল আপনি সুযোগ বুঝে কহিনুরকে বশবর্তী করে প্রহেলিকার হাতে তুলে দিলেন। ভেবেছিলেন কহিনুরকে পেলেই পাথরটাকে পাবেন কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা।

কালোজাদুর প্রভাবে কহিনুরের শরীর থমকে গেল। যখন শুরু হলো নতুন উপায় খোঁজা। ভেবেছিলেন নতুন শরীর পেলে পাথরটা কাজ করবে তাই সরোগেসির মধ্যমে নতুন একটা প্রাণকে পৃথিবীতে আনলেন। অভিশপ্ত অর্ধমানবের সঙ্গে সাধারণ কোনো মেয়ের নরমাল সম্পর্ক হতোনা বিধায় এই ব্যবস্থা তাইনা মিস্টার গালিব? যাইহোক সেদিন জ্বীন শক্তিকে কাজে লাগালেন। ওই মহিলা সাধারণ ছিল না তাই বাচ্চা জন্মানোর পরেই মারা গিয়েছিলেন আর ওর শরীর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। মারা যাওয়ার পূর্বে ও আপনাকে কি বলেছিল মনে আছে আপনার?

ওর দোষী হয়ে কিয়ামতের দিন আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে তৈরী থাকবেন। যেটা বলছিলাম, আপনি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। এক নিজের সৎ খালাকে পথে বসালেন দুই বাচ্চাটাকে কোনো বাঁধা ছাড়া পৃথিবীতে নিয়ে আসলেন। অরিত্রী সাধারণ মানবি তাই কখনও ভাবেনি ওরা যাকে ব্যবহার করতে চাইছে আসলে সেই ওদেরকে ব্যবহার করছে। কি অদ্ভুত! বাচ্চাটাকে নিয়ে আপনি কৌশলে অন্য কোথাও চলে গেলেন। মায়ের পরামর্শে বাচ্চার মধ্যে পাথরের প্রবেশ নিশ্চিত করতে শুরু হলো নতুন খেলা।

অদ্ভুতভাবে পাথরটা বাচ্চা মেয়েটার মধ্যে প্রবেশ করলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা। অদৃশ্য হয়েগেলো। আপনি ভাবলেন পাথর পেয়ে গেলেন তাই মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগলেন। কিন্তু সেখানেও হতাশা দেখা দিল। বাচ্চাটাকে মারতে গিয়ে বুঝলেন ওর মধ্যে পাথরের অস্তিত্ব নেই। পরে আবারও জার্মানিতে ফিরে আসলেন। অনেক সময় অতিবাহিত হলো। এদিকে কহিনুরে শরীর তেমনই পড়ে আছে।

পরে আপনি আবারও আপনার মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে কহিনুরের শরীর কালো শক্তি মুক্ত করলেন। কহিনুর প্রাণ পেলেও পেলনা নিজের শক্তি। সব ভুলে গিয়ে সাধারণ হয়ে গেলো। বেশ কিছু বছর অতিবাহিত হয়েছে বাড়েনি কহিনুরের বয়স। সবটা থমকে গিয়েছিল। আপনারা ইচ্ছে করে ওর মস্তিষ্কে ভুলভাল তথ্য প্রদান করলেন। মেয়েটা ভাবলো গালিব রেজা হয়তো ওর বাবা। এভাবেই চলছিলো। অন্যদিকে খান পরিবার হঠাৎ নিজেদের শক্তি পেয়ে কহিনুরের খোঁজে উঠেপড়ে লাগলো। ওরা বুঝে গিয়েছিল কহিনুর আপনার কাছে ।

বারবার আক্রমণ করতে চাইছিল। আপনি পাথরের লোভে আবারও নিজের মায়ের সঙ্গে বেইমানি করতে চাইলেন। নিজের কাছে বড় হওয়া মেয়েটাকে কহিনুরের মতো রূপ দিয়ে কলকাঠি নাড়তে কহিনুরের রিপোর্ট তৈরী করলেন। ডিএনএ টেস্ট সেই জন্যই করেছিলেন। সরোগেছির কাগজপত্র সেটা সুইটির ছিল তাইনা? সুইটি আপনার নিজের মেয়ে। আপনি প্রথমে ওর চেহারা আমার মতো করতে চাইলেও পরে ওকে বাঁচানোর জন্য জার্মানি থেকে দূরে পাঠিয়ে দিলেন।

পরবর্তীকালে আমাকে নিজের হাতের মুঠোয় আনার পূর্বে আপনি নিজেই বন্ধি হলেন প্রহেলিকার হস্তে। পাথরটা আপনার মা ঠিকই উদ্ধার করেছিলেন কিন্তু আফসোস ওটার মধ্যে শক্তি ছিল না। পাথর আর ওর শক্তি আলাদা ছিল। যেটা দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় নিদ্দিষ্ট সময়ে আপন ইচ্ছেতে নিজ মালিকের কাছে ফিরে এসেছে। কহিনুর এখন নিজ ফর্মে আছে। দেখবেন আমার র/ক্ত? এই রক্তের সন্ধানেই অর্ধমানবরা হন্যে হয়ে কতগুলো সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়েছিল ভাবুন একবার?

কহিনুরের বলা শেষ হতেই মেহুল শব্দ করে কেঁদে উঠলো। ছলছল চোখে বলল,
আমি এমনটা হোক চাইনি বিশ্বাস করো। সুইটিকে আমি নিজে বড় করেছি। ওকে নিজের মায়ের জায়গা দিয়েছি। এই লোকটার বুদ্ধিতে মেয়েটা আমাকে মা ডাকেনা। তোমার থেকে কথা লুকিয়েছি।
কহিনুরের চোখের হিংস্রতা কমে গেল। কোমল কণ্ঠে বলল,

তুমি চিন্তা করোনা মম। এই লোকটা তোমার ক্ষতি করতে কিছুতেই পারবেনা। সারাজীবন সম্পর্কের সঙ্গে উনি ছলচাতুরি করেছেন এখন সবটা বুঝতে পারবেন। নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকতে কতটা যন্ত্রণা হয় বুঝবে। ওরা ভালো করে জানতো পাথর জাদুলিপিতে আমার জীবন চেয়েছিলো। সেই সুযোগ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছে।
কহিনুর আবারও গালিবের দিকে চাইলো। লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

কালো শক্তি প্রচণ্ড খারাপ নূর। এখানে সম্পর্কের কোনো নাম হয়না। শক্তির জন্য এরা আপন পর বাছ বিচার করেনা। মা ছেলের সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সবটা মিথ্যা। প্রয়োজন পড়লে শ/য়তানের নামে যাকে ইচ্ছা তাকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকতে হয়। শয়/তান সম্পর্কের গভীরতা পছন্দ করেনা। মায়া মমতা সবটা এখানে মূল্যহীন। তবুও আমি সুইটি আর মেহুলকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি নিজের স্বার্থে ওদেরকে ব্যবহার করেছি ঠিক কিন্তু ওদের ক্ষতি চাইনা। মমের থেকে আমি ছলচাতুরি করে কৌশলে তোমাকে উদ্ধার করেছিলাম। তুমি গোপন কক্ষের ওই পালঙ্কে কয়েক বছর অচেতন হয়ে পড়ে ছিলে। পাথরের প্রতি আমার যে লোভ ছিল না তেমনটা না। নিজের পরিচয়ে তোমাকে পরিচিত করেছি। তোমাকে আগলে রেখেছি যখন তুমি বাচ্চাদের ন্যায় সরল ছিলে। শত্রুদের থেকেও দূরে রেখেছি।

লোকটার কথা শুনে কহিনুরের কপালে ভাজ পড়লো। শব্দ করে হেসে বলল,
সেসবের এখন কি প্রতিদান চাইছেন? ভুলে যাচ্ছেন কেন আমাকে পরিবার ছাড়া আপনারাই করেছিলেন। লোভে পড়ে করেছেন এখন ভালো সাজাতে চাইলেতো হবে না। সম্পর্কে আপনি আমার ফুপা কিন্তু আফসোস আমার ফুপি যে আপনাকে মানেনা। উনি ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড বাংলাদেশ এমন বিভিন্ন দেশে মেয়েদের উন্নয়নে কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছেন সেসব নিয়ে বেশ ভালো আছেন। সে যাইহোক এবার বলুন কি করব আপনার সঙ্গে?
কহিনুর কথা শেষ করতেই সেখানে সাঈদ এসে হাজির হলো। কহিনুর সেদিকে চেয়ে বলল,

সাঈদ তুমি মমকে নিয়ে সুইটির কাছে পৌঁছে দাও। ওকে জার্মানিতে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখানে বিপদ আছে। তুমি ওদের দুজনকে সেভ করবে। এদিকটা সামলে আমি দুজনকেই কাছে ডেকে নিব।
সাঈদ মাথা নাড়িয়ে মেহুলকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে কহিনুর মেহুলকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। দোষ না করেই মানুষটা দোষী। খারাপের সঙ্গে থাকলে যা হয়। মেয়েকে মানুষ করতে এই মেহুলের সাহায্য নিয়েছিল গালিব। এক সঙ্গে থাকতে থাকতে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু কতটা হয়েছে সেটা জানাশোনার বাইরে। গালিবকে আটকে রেখেই কহিনুর পাথরের হাত ধরে বেরিয়ে আসলো।

সকাল সকাল সুলতান হাউজে দুজন মেয়ে গৃহ পরিচারিকার আগমন ঘটেছে। জামসেদ মেয়ে দুটোকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে যেটা জুবায়েরের পছন্দ হচ্ছে না। অল্প বয়সী বেশ সুন্দরী মেয়ে দুটো। অধরা প্রশ্ন করল,
কোন সংস্থা থেকে এসেছেন?আপনারা চাইলে আমরা সাহায্য করতে পারি সেটা অন্যভাবে। কাজ বা অর্থ দুটোই পাবেন তবে এই বাড়িতে থেকে না। আমাদের অতিরিক্ত কাজের মানুষের প্রয়োজন নেই।
মেয়ে দুটোর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মিনমিনে কণ্ঠে উত্তর দিল,

ক্ষমা করবেন ম্যাম আমরা এই শহরের বাইরে থেকে এসেছি। বাবা মা দুজনেই ভূমিকম্পে মারা গেছেন। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের জন্য বাইরের পরিবেশ নিরাপদ নয়। শহরের একজন পরামর্শ দিলেন এখানে আসলে নিরাপত্তার সহিত কাজ পেতে পারি। দয়াকরে সাহায্য করুন।
অধরা বুঝতে পারছে না এর পরে কি বলবে। আলফা সোফায় বসতে বসতে বলল,

নাম ঠিকানা বলো আমি খোঁজ নিব। আপনাদের মুখের কথা আমি একদম বিশ্বাস করছি না। শহরে মুখোশধারী কিছু মেয়ের প্রবেশ ঘটেছে। দুদিন আগে বারে কয়েকজন যুবকের লা/শ উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়ে মানেই সহজ সরল এমনটা না। আপডেট হচ্ছে সব কিছু।
আলফার কথা শুনে দৃষ্টি ভয় পেয়ে ওর কাছাকাছি সরে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

কিন্তু ভাইয়া আমিতো আপডেট হতে পারছিনা। ভয় পাচ্ছি কেন?
আলফা ফোনের দিকে চেয়ে উত্তর দিল,
তুই গাধা বলে হ্যাঙ মেরে আছিস। সুলতান পরিবারের সবচেয়ে অপদার্থ মেয়ে।
আলফার উত্তর শুনে দৃষ্টি নিভে গেল। বাড়ির এই একটা মানুষ আছে যে ওকে এক পয়সারও দাম দিতে রাজি না। দৃষ্টি মুখ ফুলিয়ে মেয়ে দুটোকে বলল,

এই তোমরা ছদ্মবেশী সেই মেয়েগুলোর কেউ নাতো? শুনেছি ওদের আচরণ অদ্ভুত ছিল। বারে কয়েকদিন আগুনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চারটা কামরা গোপনীয়তার সহিত তৈরী করে ওদের রাখা হয়েছিল। আমাদের বাড়িতে কিন্তু এমন কোনো সুযোগ তোমরা পাবেনা। বাড়ির কাজ বলতে বড় আম্মুর সঙ্গে কিচেনে দিন যাবে। তার আগে আমি কিছু পরিক্ষা করতে চাই। রুশিয়া মোমবাতি আর লাইটার নিয়ে আসো।
দৃষ্টির ভাবভঙ্গি দেখে মেয়েদুটো ভড়কে গেলো। আলফা বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৭

গাধা।
সেটা দৃষ্টির কর্ণগোচর হলোনা তবে অধরা দৃষ্টির সঙ্গে একমত। শহরে কিছু অদ্ভুত মেয়েদের প্রবেশ ঘটেছে। যুবকদের কারণ ছাড়াই হত্যা করছে। এদের উদ্দেশ্য কি জানা যায়নি। সকলের প্রশ্ন এরা কারা?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৯