কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩৪

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩৪
লাবণ্য ইয়াসমিন

পাথর লা*শ রিজু শিকদারের স্টোর রুমে ফেলে এসে চিন্তা মুক্ত হলো। এদিকে আরেক ঝামেলার সুত্রপাত ঘটেছে। মানুষ বেঁচে থাকলে যতটা অনাদর করা হয় মা/রে গেলে হয়তো ততটাই কদর করা হয়। অরিত্রীর বেলাতেও তাই ঘটেছে। নিখোঁজ হবার খবর পেয়ে ওর বাবা মা রিজুর উপরে চাপ সৃষ্টি করছে। মেয়েকে তাদের এতোদিন মনে ছিল না। মানুষ ভুল করে যখন অনুশোচনা করে ভালো হতে চাই তখন তাকে সুযোগ করে দিতে হয়।

অথচ কিছু বাবা মা সন্তানের করা আঘাত সহ্য করতে না পেরে দূরে চলে যায় সন্তানকে শেষ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। অরিত্রী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো অনেক আগেই কিন্তু এই পিশাচ পুরি থেকে নিজেকে বের করতে পারেনি।সেই সময় না পরিবার পাশে ছিল,না নিজের কোনো সঠিক বুদ্ধি ছিল। সব মিলিয়ে মাঝখানে এসে নিজের জীবন দিতে হলো। পাথর চেয়েছে রিজু শিকদারের কিছুটা হলেও শাস্তি হোক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়েটার সঙ্গে করা অপরাধ যাতে ওর আত্মাকে আঘাত করতে পারে। তাই স্টোর রুমে লা/শ রেখে জার্মানির পুলিশের নিকট খবরটা পৌঁছে দিলো। ফলাফল এতে রিজু ঘাবড়ে যাবে আর দ্বিতীয়ত মেয়েটার লা\শ বাংলাদেশে ওর বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে যাবে। মেয়েটা জীবিত থাকতে যা পাইনি মৃ/ত্যুর পরে সেটা পাবে অসুবিধা কোথায়?পাথর কাজ শেষ সুইমিং পুল থেকে গোসল করে কহিনুরের কক্ষে গিয়ে হাজির হলো। পরণে কালো প্যান্ট আর সাদা রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি গায়ের সঙ্গে মিশে আছে। ফর্সা নাক লাল হয়ে আছে। সাদা জুতার নিচ থেকে ধুলাবালি সাদা ফ্লোরের উপরে ছাপ লাগিয়ে দিচ্ছে। কহিনুর বাইরে ছিল হঠাৎ কক্ষে এসে থমকে গেলো। ফ্লরে কাদামাটি আর পানির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। কহিনুর সেদিকে চেয়ে চিৎকার করে প্রশ্ন করলো,

কি করছেন আপনি? নোংরা করছেন কেনো আমার কক্ষ?
পাথর অসহায় চোখে নিচের দিকে চেয়ে থতমত খেয়ে গেলো। সত্যি বেশ নোংরা করে ফেলেছে। তাই মিনমিনে কণ্ঠে ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
পরিস্কার করে দিব চিন্তা করোনা। সামান্য কারণে বরকে ধমক দিয়ে চিৎকার চেচামেচি করছো এই তোমার ভালোবাসা? একদম উচিত হচ্ছে না নূর।

কি উচিৎ হচ্ছে না শুনি? আর ভালোবাসি কখন বললাম? একটুও নিজের মতো ভেবে নিবেন না। চেঞ্জ করে আসুন আমি পরিস্কার করছি। মাথা পুরোপুরি গেছে।
পাথরের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি ঘুরছে সেটা কাজে লাগিয়ে মাথা এগিয়ে কয়েকবার ভেজা চুলের পানি ঝেড়ে দিলো সামনের দিকে। বিন্দু বিন্দু পানি গিয়ে কহিনুরের মুখে পতিত হলো। মেয়েটা চোখ গরম করলো কিন্তু পুরোপুরি রাগ দেখাতে পারছে না। হাসি পাচ্ছে সেটা দেখেই পাথর ভরসা পেলো। দ্রুতগতিতে কহিনুরকে পেছন থেকে ঝাপটে হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর কাধে থুতনি রেখে বলল,

তোমার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শেষ করেছি এবার গিফট দাও। গিফট ছাড়া আমি কাজ করিনা। ফাকিবাজি চলবে না কিন্তু।
কহিনুর ওকে আশকারা দিলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা না করে অমায়িক হাসলো। কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
নিশ্চয়ই দিব। বলুন আপনার কি প্রয়োজন? সুলতানা কহিনুর ফারুকী কথার খেলাপ করেনা। তাছাড়া যায় দিব তাতে বিন্দু পরিমাণ আফসোস বা অস্বস্তি হবে না কারণ যাকে দিব সেতো আমারই। একান্ত নিজের মানুষ। গিফট দিতে বরং আমার ভালোই লাগবে।

পাথর বেশ জব্দ হলো। ভেবেছিল কহিনুরকে ভড়কে দিবে কিন্তু মেয়েটা ভীষণ চালাক। প্রিয়জনকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার বাসনা প্রতিটা প্রেমিক পুরুষের হৃদয়েই থেকে থাকে। ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশের জন্য মানুষ প্রিয়জনকে একান্তে পেতে কতকিছু করে কিন্তু পাথরের ভাগ্যে সেটা নেই। তাই ঝটপট ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

জমা থাক সময় মতো ঠিক নিয়ে নিব। ইমরোজ খান পাথর পাওনা ছাড়ে না। প্রয়োজনে অতিরিক্ত নিবে এমনকি সুদ পর্যন্ত ছাড়বে না। যা তোমার আছে সবটাই আমার নামে লিখে নিব। আমার হৃদয়ের মাঝে অলিখিত দলিলভুক্ত হয়ে থাকবে সেই সম্পত্তির ইতিকথা। তখন না শুনবো না বুঝলে?

পাথর অপেক্ষা করলোনা। কথা শেষ করে দ্রুতগতিতে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। কহিনুরের চোখ ছলছল করছে। পাথর কথাগুলো যতটা স্বাভাবিকভাবে বলেছে আসলেও সেটা অতটা সোজা কথা ছিল না। অভিশপ্ত জীবন ওর কহিনুরকে ওর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিলে কতটা ভয়ংকর হবে সেটা ওরা ভালো করেই জানে। দুজন দুজনাকে এতোটা চাওয়ার পরেও দূরে থাকতে হবে। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো সাঈদের আগমনে। সাঈদ এসেই ফ্লরের দিকে চেয়ে বলল,

জনাব এসেছেন?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে বলল,
ওর কাপড়গুলো এনে দিতে পারবে? বেচারা কাপড় ছাড়াই ওয়াশরুমে ঢুকেছে। তুমি বরং ওর কাপড় এনে দাও আমি কাউকে বলে ফ্লর পরিস্কার করি নিব। অরিত্রীর লা\শ ওদের হাতে পৌঁছে গেছে শুনেছো? নাকি আবারও গুম করা হয়েছে?
সাঈদ উৎফুল্ল হয়ে উত্তর দিলো,

সব ঠিকঠাক পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে। পুলিশ লা/শ পেয়েছে। রিজু শিকদারকে জিঞ্জাসাবাদ করা হচ্ছে। আশাকরি অরিত্রী ন্যায়বিচার পাবে। এখানকার আইন বেশ কড়া। ঘুষের কারবার নেই তাই ভঙ্গি টঙ্গি করে বিশেষ সুবিধা হবে না।
কহিনুরের ওষ্ঠে হাসি ফুঁটলো। মেজাজ ফুরফুরে লাগছে। তফসিলের সামনে যাওয়ার বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে তবে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখবে না সেটা খুব তাড়াতাড়ি করবে। শরীর নেই বেচারীর অবস্থা ভেবেই হাসি পাচ্ছে। কহিনুরকে ভাবতে দেখে সাঈদ চাপা কণ্ঠে বলল,

নূর তোমার মারিয়া ফুপির কথা মনে আছে?
কহিনুর মাথা নাড়ালো। ফুপিদের সঙ্গে ওর তেমন দেখাশোনা হয়নি। যদিও বা একটু হয়েছে সেটা কয়েক মূহুর্ত্তের জন্য। হঠাৎ মারিয়ার কথা ভেবে কহিনুর বিড়বিড় করে বলল,

সাঈদ নিজের লোক যখন বেইমানি করে বারবার ক্ষতি করতে আসে তখন কি করা উচিত বলোতো? এড়িয়ে চলবো নাকি শাস্তির ব্যবস্থা করবো? ফুপি নেই অথচ মেয়েটা কি সুন্দর শত্রু পক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে চাইছে। সাঈদ সত্যি হচ্ছে র\ক্ত কথা বলে। হৃদয়ের সম্পর্ক যতদিন আদর যত্ন আর ভালোবাসা থাকে ততক্ষন স্থায়ী হয় আর না থাকলে সব মূল্যহীন। তুমি ওর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করে দাও।
কহিনুরের কথা শুনে সাঈদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভেবে বলল,

নিশাচর প্রাণী সে,হয়তো আছে নাইট ক্লাবে রঙিন পানির গ্লাস হাতে নেশায় বুদ হয়ে। অর্ধেক শয়/তান আর অর্ধেক মানবির রূপে তাই ইচ্ছে করলেই যখন যা ইচ্ছা করতে পারেনা। দিনের বেলায় স্বাভাবিক মানুষের রূপে থাকতে হয়। ওকে শক্তি দিয়ে সাহায্য করছে অন্যকেও।
কহিনুর সোফায় গা এলিয়ে দিলো। যা ভাবার ভেবে নিয়েছে। সাঈদ কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে নিজেই ফ্লর পরিস্কার করতে শুরু করলো। কহিনুর নিষেধ করলোনা। করলেও শুনবে না ভেবে নিজের মতো পরিকল্পনা করতে শুরু করলো।

অর্ধনগ্ন পোশাকে উন্মুক্ত কোমর দুলিয়ে নেচে চলেছে অষ্টাদশী এক তরুণী। বাম হাতের মুঠোয় রেড ওয়াইনের গ্লাস। মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছে। ওষ্ঠে মাতাল করা হাসি। চেহারা অহামরি সুন্দরী না তবে একবারে খারাপ বলাও চলে না। মোটামুটি সুন্দরীদের তালিকাভুক্ত বলা চলে। কহিনুর জুস হাতে গভীর মনোযোগ দিয়ে মেয়েটাকে লক্ষ করে হেলতে দুলতে ওর দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে থমকে গেলো।

তার আগেই মাস্ক পরিহিত এক যুবক মেয়েটার সঙ্গে যুক্ত হলো। কহিনুর পিছিয়ে আসলো। যুবকের পা হতে মাথা অবধি নোটিশ করলো। ছেলেটার উচ্চতা মেয়েটার থেকে কিছুটা উচু তবে দূর থেকে সমান লাগছে। এখানকার প্রায় ছেলেদের উচ্চতা বেশ চোখে পড়ার মতো তার ভেতর থেকে হাইটে শর্ট এই ছেলাটাকে সকলের নজরে পড়ছে। দেখতে ছোট কিন্তু কাজকর্ম মোটেই ছোট না।

নাচের বহরে একাই মাতিতে ফেলেছে। মেয়েরা ওর আশেপাশে ভিড় করছে। কহিনুর মূদু হাসলো। শারীরিক দুর্বলতাকে গুণ দ্বারা আবৃত করার চেষ্টা খারাপ লাগছে না। ছেলেটা বুদ্ধিমান। কহিনুর পূণরায় গ্লাসে চুমুক দিয়ে টেবিলের উপরে রাখা লাল রঙের পদ্মপাতার মাস্কটা ঝটপট পরে নিয়ে এগিয়ে গেলো। কহিনুর নাচগান কিছুই পারেনা। পারেনা বলতে কখনও চেষ্টা করা হয়নি আর হয়তো হবেও না। ও ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কিছু একটা ভেবে পাশের একটা মেয়েকে উচ্চ কণ্ঠে বলল,

হেই আমি নাচতে জানিনা তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?
মেয়েটা গুরুত্ব দিলোনা। হিন্দি গানের তালে তালে বেতালে লাফিয়ে যাচ্ছে। কহিনুর বিরক্ত হলো। কথা বললে কেউ শুনছেনা। মিউজিকের সাউন্ডে কান ভারি হয়ে উঠছে। হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে পাশ থেকে সেই ছেলেটা ওর পাশে এসে দাঁড়ালো। সঙ্গের মেয়েটা ওকে ইশারায় চোখ রাঙাচ্ছে ছেলেটা চোখ বন্ধ করে আশ্বস্ত করলো।

স্পর্শ ছাড়াই সাহায্য করবে। মেয়েটা হাসলো। কহিনুর দুজনের চোখের ভাষা বুঝে মনে মনে সাঈদকে স্মরণ করলো। সাঈদ পাশেই ছিল ও এসে মেয়েটার সঙ্গে যোগদিলো। কহিনুর ছেলেটার সঙ্গে মোটেই তাল দিচ্ছে না। বরং লজ্জা পাওয়ার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্বের গান বন্ধ হয়ে হঠাৎ স্লো মিউজিক বেজে উঠলো। ছেলেটা ফিসফিস করে বলল,

বাঙ্গালী?
কহিনুর মাথা নাড়ালো। আপাতত ওর লিপস্টিকে মুড়িয়ে রাখা রক্তিম ঠোঁট ছাড়া মুখের অবয়ব বোঝা যাচ্ছে না। ছেলেটা এহেন উত্তরে হয়তো খুশী হলো। নাচের তালে তালে বলল,
সো সুইট,আরে লজ্জার কি আছে? এটাতো স্বাভাবিক। তুমি চাইলে আমি তোমার দায়িত্ব নিতে পারি। এই ক্লাবের সবচেয়ে সেরা আমি। প্রতিদিন নাচবে আমার সঙ্গে? এসো বন্ধু হয়ে যায়।
কহিনুর রিনরিনে কণ্ঠে বলল,

নিশ্চয়য,কেনো না? আপনার মতো বন্ধু পেয়েও হাতছাড়া করবো এমন বোকা আমি নয়। যাইহোক বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমার গ্লাস হতে একটু খানি সুধা গ্রহণ করবেন? আমার ভীষণ ভালো লাগতো।
ছেলেটা অমায়িক হাসলো। দ্বিধা ছাড়াই গ্লাসটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে ঢকঢক করে বাকিটা গলাই ঢেলে নিয়ে মাতাল হওয়া কণ্ঠে বলল,

স্বাদটা জাষ্ট অমৃত লাগলো। এমনটা আমি কখনও খাইনি বিশ্বাস করো। এইখানে তোমার ওষ্ঠ ছিল বিধায় এমন টেষ্ট বুঝি?
ছেলেটার নেশা চড়ে গেছে ভুলভাল বকছে। কহিনুর সুযোগ বুঝে অন্য একটা মেয়েকে ওর সামনে রেখে সরে পড়লো। আপাতত নিজের কাজটা শেষ করে পিছিয়ে আসতে গিয়ে ধাক্কা খেলো। ওর ঠিক পেছনে পাথর অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। কহিনুর ওর অহেতুক রাগের কারণ বুঝতে পারছে না তাই ফিসফিস করে বলল,

আপনি ঠিক আছেন? ভুল করে ওয়াইন খেয়ে নিয়েছেন নাতো? তাহলে কিন্তু ভীষণ খারাপ হবে।
পাথর উত্তর দিলো না। ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে টানতে টানতে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে হুঙ্কার ছাড়লো,
তুমি ওই মাতালের কাছাকাছি গিয়েছিলে? বলেছিলাম না আমি ব্যবস্থা করবো তবুও শুনলে না? নিজে ঠিকই স্বার্থপরের মতো আমাকে সিল মেরে নিজের জন্য রেখে অন্য সব নারীর জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছো। তাহলে আমার বেলায় কেনো এমন অবহেলা অবিচার শুনি? তুমি জানতে এসব আমি পছন্দ করিনা তবুও ওই বেহায়া পুরুষের কাছাকাছি যেতে হবে? এতোক্ষন কিভাবে সহ্য করতেছি সে আমি আর আমার আল্লাহ জানেন।

কহিনুর মহা বিরক্ত হলো। ওদিকে সাঈদ ঝুলে আছে মেয়েটার সঙ্গে। বেচারারা নাচতে জানেনা লাফালাফি করছে আর বারবার কহিনুরকে ডাকছে। মেয়েটাকে কিছুতেই মাতাল করলে চলবে না। ওর চোখে আঙুল তুলে সত্যির মুখোমুখি আনতে হবে। পাথর একের পর এক অভিযোগ শুনিয়ে যাচ্ছে। কহিনুর মুখে কিছুই বললোনা। হুট করে দুহাত মেলে পাথরকে জড়িয়ে ধরে বলল,

কক্ষে গিয়ে আপনার সব অভিযোগ শুনবো প্লিজ এখন আর কিছু বলবেন না। বেচারা সাঈদকে দেখুন। মেয়েটার সঙ্গে লাফিয়ে যাচ্ছে ওকে উদ্ধার করতে হবে।
পাথরের রাগ কিছুটা কমে এসেছিল কিন্তু সাঈদের নাম শুনে আবারও জ্বলে উঠলো। সবটা জেনে বুঝেও রাগ হচ্ছে।
নূর আমার সম্মুখে ওই আহাম্মকের নাম নিবে না তুমি । গাধা নিজে উচ্ছন্নে যাচ্ছে যাক আমার বউটাকেও সঙ্গে নিচ্ছে কেমন লাগে বলো? কু বুদ্ধি দিচ্ছে আর তুমি ওর তালে তাল দিচ্ছ। ওর মাথাতে জৈব স্যার আছে। অথচ তুমি ভাবো মুল্যবান ম্যাগনেট আছে। জ্বীন ভুতে আমার মোটেই বিশ্বাস নেই। ওরা মাথামোটা হয়।

দুর্নাম কেনো করছেন? পাপ হবে। এখানে প্রেম করতে আসিনি ঠিক আছে? বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছেন আমি একটুও পছন্দ করছি না। আমার সঙ্গে চলুন।
কহিনুর ওকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। একবারে সাঈদের সামনে গিয়ে থামলো। ইতিমধ্যে মেয়েটার সঙ্গে সাঈদ ভাব জমিয়ে নিয়েছে। ছদ্মবেশে থাকার দরুন ওদেরকে চেনা মুশকিল। সাঈদ হাত উচু করে কহিনুরকে দেখিয়ে বলল,

আমার বোন আর পাশের ওর হাজবেন্ট।
মেয়েটা নাচ থামিয়ে ওদেরকে নিয়ে কিছুটা দূরে আসলো। হাই হ্যালো এই পযর্ন্ত বলেই সকলে চুপচাপ। কহিনুর হঠাৎ মৃদু কণ্ঠে বলল,
তোমার নাম?
মেয়েটা দাম্ভিকতা বজায় রেখে উত্তর দিলো,

মোহ অনেকেই মায়াবী বলে। আমি মায়াবি মোহ বলি। তোমরা যেকোনো একটা বলতে পারো।
মোহ এটাই ঠিক আছে। তোমার সঙ্গে বেশ যায়।তোমার সঙ্গের ছেলেটা বেশ নাচিয়ে বলতে হয়। কিন্তু কোথায় সে?
মেয়েটা চনচল হয়ে উঠলো। কিন্তু আশেপাশে খুজেঁও সেই উদ্ভট ছেলেটাকে কোথাও পাওয়া গেলোনা। কহিনুর বক্র হেসে বলল,

ওকে ওইদিকে যেতে দেখেছিলাম চলো গিয়ে খোঁজ করি।
মেয়েটা মাথা নাড়ালো। চারজন বেরিয়ে পড়লো সেই যুবকের সন্ধানে। এই বিল্ডিং এর নিচের ফ্লোরে রেস্টুরেন্টে দ্বিতীয় ফ্লোরে নাইট ক্লাব আর বাকী দুটোতে হোটেল। ওরা উপর নিচে ভালো করে খোঁজ করে যখন পেলোনা তখন একবারে ছাদে উঠে গেলো। ছাদের একপাশে ফুলের বাগান আছে সঙ্গে সুইমিং পুল আর একপাশে বেশ সুন্দর একটা কক্ষ সাজিয়ে রাখা। যেখানে প্রবেশ করার অনুমতি মালিক পক্ষের বাইরে কারো নেই।

ওরা সেখানেই হাজির হলো। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। পাথর চুপচাপ গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে পিছিয়ে আসরো। ভেতরে কি হচ্ছে সেটা দেখার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে বা রুচি ওর নেই। কহিনুর আর সাঈদ মেয়েটাকে এগিয়ে দিলো। মেয়েটা চুপচাপ উঁকি দিয়ে চোখ বন্ধ কে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। কহিনুর পেছন থেকে ওর মুখ আটকে পিছিয়ে আনলো। পাথর পূণরায় দরজা বন্ধ করলো। কহিনুর মেয়েটার চোখমুখ বন্ধ করে সাঈদকে ইশারা করলো জায়গা বদল করতে। কয়েক মূহুর্ত লাগলো ওদের সমুদ্রের তীরে এসে পৌঁছাতে। মেয়েটা ছটফট করছে। কহিনুর ওকে ছেড়ে দিয়েই হুঙ্কার ছেড়ে বলল,

কে তোমরা? আমাকে এখানে কেনো এনেছো? ওই বেইমানটাকে আমি জাষ্ট খু\ন করে ফেলবো। কত সাহস আমাকে সঙ্গে কথার খেলাপ করে।
কহিনুর গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,

শয়তানের কাজ মানুষকে ধোকা দেওয়া। যার কাজ যেটা সেতো সেটাই করবে তাইনা? ওর থেকে অহেতুক বেশি কিছু চেয়ে বরং তুমিই দোষ করেছো মেয়ে। আর আমি কে সেটা তোমার না জানলেও চলবে। তুমি বরং নিজেকে নিয়ে ভাবো। যাদের কথাশুনে সুলতান পরিবারের উপরে বারবার আক্রমণ করছো তারা সত্যিই কি তোমার নিজের লোক? যদি সত্যি হতো তবে ও কিভাবে পারলো তোমাকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে বাজে সম্পর্ক করতে?
মোহ রাগে ফুলছে। সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে। দ্বিধান্বিত হয়ে বলল,

ওর সঙ্গে আমি পরে কথা বলবো কিন্তু সুলতান পরিবার আমার আর আমার মায়ের সঙ্গে বেইমানি করেছে। কিভাবে পারলো একটা বাচ্চাকে অনাথাশ্রমে রেখে আসতে? বাচ্চাদের মধ্যে শুনেছি ফেরেশ্তা থাকে তবুও কেনো এমন অবহেলা করলো? আমি প্রতিশোধ নিব। কাউকে ছাড়বোনা।
কহিনুর বিরক্ত হচ্ছে। সবটা ধৈর্যের বাইরে। ইচ্ছে করছে একে দুটো থায/প্পড় দিতে। সাঈদ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো শান্ত থাকতে। কহিনুর চোখ বন্ধ করে বলল,

বাবা মা ছাড়া কোনো শিশুকে নিজেদের কাছে রাখা যায়না যতক্ষণ না সেই শিশুকে কোনো সংস্থা থেকে দত্তক নেওয়া হয়। এই দেশের আইন কানুন সম্পর্কে আশাকরি তোমার ধারণা আছে নাকি ওদের কাছে থেকে তোমার বিবেক বিবেচনাবোধ নষ্ট হয়ে গেছে? তোমার মা সুলতান জুবায়েরের ফারুকীর আত্মা ছিলেন।

বোনের মৃত্যুর পরে তার মেয়েকে নিজের কাছে রাখতেই এমন পরিকল্পনা উনি করেছিলেন কিন্তু তার পূর্বেই তোমাকে অন্যকেও নিয়ে গিয়েছিলো এখানে দোষটা কার? সাধারণ মানবি হয়ে পিশাচের সন্তান জন্ম দিয়ে তোমার মায়ের মৃত্যু হয়েছিলো। এমনতো না যে সুলতান জুবায়ের ফারুকী তোমার মাকে হত্যা করেছেন? শুনো মেয়ে নিজের বুদ্ধিতে চলো। নানারকম ঝামেলায় দিন যাচ্ছে তুমি তার মধ্যে ঝামেলা তৈরী করছো। প্লিজ এবার ক্ষান্ত দাও।

কহিনুর অনুরোধ করলো। যেখানে সেখানে নিজের ক্ষমতা দেখানো যায়না। তাছাড়া জুবায়ের নিজের বোন আর তার মেয়েকে ভালোবাসে। কহিনুর কিছুতেই নিজের বাবার ভালোবাসা মানুষদের উপরে কখনও আঘাত করতে পারবেনা। বুঝিয়ে বলবে না শুনলে পরের টা পরে ভাবা যাবে। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো সামনের দিকে চেয়ে। সবাইকে অবাক করে মেয়েটা পিছিয়ে গেলো। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউের উপরে লম্বা লম্বা পা ফেলে গভীরে এগিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। সাঈদ ফিসফিস করে বলল,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩৩

কাজ হবে?
কহিনুর আনমনে উত্তর দিলো,
জানিনা। কথা না শুনলে বন্ধী করবে। প্রাণ নিতে হলে নিবে। বারবার এহেন ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে তারমধ্যে আসল কাজটাই হচ্ছে না। আমি বাঁধা পছন্দ করছি না।
সাঈদ মাথা নাড়ালো। বারবার মনে হচ্ছে মেয়েটা কথা শুনবে তো?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩৫