কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৯

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৯
লাবণ্য ইয়াসমিন

অজানা বন্ধ এই কক্ষে কহিনুর কতক্ষণ আটকে আছে সময়টা ওর জানা নেই। তবে খুশীর বিষয় কিছুক্ষণ আগে আসা সেই অদ্ভুত লোকগুলো চলে গেছে। যেভাবে এসেছিল সেভাবে পাহাড়ের গুপ্ত দরজার আড়ালে ওরা লুকিয়ে পড়েছে। কহিনুর কিছুটা সাহস পেয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর ক্ষতি করতে পারবে না তবুও মনের মধ্যে একটা ভয় থেকেই যায়।

বুক কাঁপছে সঙ্গে পায়ের শান্তি কমে আসছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানি যেখানে এসে পড়ছে সেই টলটলে পরিস্কার পানির নিচে একটা ঝিনুক খণ্ড ওকে বড্ড টানছে। ঝিনুকের আকৃতি বেশ বড় তবে উপরের সুন্দর কারুকার্য ওর নজর কেড়েছে। মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি ওকে টানছে। কহিনুর দ্রুতগতিতে পানিতে নেমে পড়লো। পানির নিচে থাকা পাথরের জন্য পা ঠিকঠাক রাখতে পারছে না।পানির ঝাপটা এসে ওকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। কহিনুর সেসবে পাত্তা দিলো না। মোটামুটি এখানে হাটু পানি হবে। ঝিনুকের নিকট পৌচ্ছাতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কহিনুর আলগোছে ঝিনুকটা পানি থেকে তুলে নিলো। কুলে এসে একটা পাথরের উপরে বসে ঝিনুকটা খুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই সেটা খুললো না। কয়েকবার চেষ্টার পরে যখন হলো না কহিনুর ধুম করে কিল বসিয়ে দিলো। রাগ হচ্ছে খুব। কি এমন ঝিনুক যে খুঁলতে এতো ঝামেলা? কহিনুর আবারও হাত উঁচু করে থাপ্পড় দিতে চাইলো তার আগেই ঝিনুকের মাঝখান থেকে ভেঙে গেলো। চার‍দিকে আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়লো।

কহিনুর চোখ বন্ধ করে পিছিয়ে আসলো। ভয় পাচ্ছে না জেনে কোনো ভুল করলো কিনা। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো। কহিনুর পিটপিট করে চোখ খুলে অবাক হলো। ঝিনুকটা ঠিক আগের জায়গায় ফিরে গেছে।যেভাবে ছিল সেভাবেই পড়ে আছে। এতো পরিশ্রম করে তুলে আনলো সব ব্যার্থ। ওর ধ্যান ভাঙলো রিনরিনে পুরুষালী কণ্ঠ শুনে। কহিনুর দ্রুত পাশ ফিরে চাইলো। পাশে অল্প বয়সী লিকলিকে গঠনের ফর্সা টাইপের একটা ছেলে বসে আছে। কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। কপালে চিন্তার রেখা ফুঁটে উঠেছে। ওকে অবাক করে ছেলেটা বলে উঠলো,

আমাকে চিনেছো নূর? আমি সাঈদ।ধন্যবাদ তোমাকে। ভাবতেই পারিনি এতো তাড়াতাড়ি এই বন্ধ কক্ষ থেকে আমার মুক্তি মিলবে। নূর সত্যি তুমি আমার জন্য আল্লাহর প্রেরিত দেবদূত। চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু তুমি এই গোপন কক্ষে কিভাবে এসেছো?
ছেলেটা বেশ চটপটে কথা বলে কিন্তু কহিনুরের চোখে বিস্ময় খেলা করছে। অচেনা ছেলেটা ওকে প্রথম দর্শনে চিনে ফেলেছে কিন্তু কিভাবে? মনে হচ্ছে বহুকালের চেনা কেউ। এর পূর্বে এই ছেলেটার সঙ্গে ওর কখনও দেখা হয়েছে কি মনে পড়ছে না। কহিনুরকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে সাঈদ আবার বলল,

বলো কিভাবে এসেছো? তুমি ঠিক আছো?
কহিনুর নিরবতা কাটিয়ে উত্তর দিলো,
তোমাকে চিনিনা আমি। ইমরোজ খান নামের এক অভদ্র ছেলে আমাকে এখানে আটকে রেখেছে। রাস্তায় উনার গাড়ির সামনে আসার জন্য আমাকে শত্রু ভেবে বন্ধি করেছেন। উনার ধারণা আমি উনার শত্রু পক্ষ থেকে এসেছি।
সাঈদ মলিন হাসলো। কপালের লিখন খণ্ডন করার সাধ্য কার আছে। যেটুকু ভোগ করার সেতো করতেই হবে। সাইদ চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল,

এখান থেকে মুক্তি পেতে চাও? যদি চাও তবে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
কহিনুরের চোখ খুশীতে ঝলমল করে উঠলো। বাইরে গেলে বাবা মায়ের খোঁজ পাবে এর চাইতে খুশীর কিবা আছে? কহিনুর দ্রুত মাথা নাড়িয়ে ওষ্ঠে হাসি আনলো।
অবশ্যই চাই। প্লিজ সাহায্য করো। এখানে আমি একটুও থাকতে চাইছি না। বাবা মায়ের খোঁজ করতে আমাকে বাইরে যেতে হবে।

তবে প্রশ্ন ছাড়া চোখ বন্ধ করে তিনবার বলো, আমি সুলতান জুবায়ের ফারুকীর কন্যা সুলতানা কহিনুর ফারুকী পূনরায় নিজের সব শক্তি ফিরে পেতে চাই। আমার মধ্যে কহিনুরের শক্তি প্রকট হোক। আমি চাই সেই শক্তিকে যা শুভ শক্তির প্রতিক।
সাঈদের কথা শুনে কহিনুরের কপালে ভাজ পড়লো। ভাবলো ওর নামে কিভাবে সুলতান পরিবারের টাইটেল যুক্ত হবে? ওতো জুবায়ের ফারুকীর কন্যা না। গালিব শিকদারের কন্যা তাই ওর নামে শিকদার ব্যবহার করা হয়। কহিনুর প্রশ্ন করতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। সাঈদ তাড়া দিলো। সময় কম তাই যা বলেছে সেটাই বলতে হবে। কহিনুর ওর কথা মতোই চোখ বন্ধ করে বলল,

আমি সুলতানা কহিনুর ফারুকী সুলতান জুবায়ের ফারুকীর কন্যা আমার সকল শক্তি ফিরে পেতে চাই। কহিনুরের শক্তি আমার মধ্যে প্রকট হোক।
কহিনুর এতটুকু বলতেই ওর কণ্ঠ রোধ হয়ে আসলো। কথা বলতে পারলোনা। গলা আটকে গেছে শরীর মূদু মৃদু কাপছে। ভয়ে ও চোখ খুঁলে আশেপাশে থাকিয়ে হতভম্ব হলো। সাঈদ নামের ছেলেটা এখানে নেই। কহিনুর ভয় পাচ্ছে। ছেলেটা এসব বলিয়ে ওকে বোবা বানিয়ে দিলো। এখন কি হবে? বিপদ হলেও চিৎকার করতে পারবে না। ছেলেটাকে বিশ্বাস করে ঠকাতে হলো ভেবে রাগ হচ্ছে। মানুষ এতোটা বোকা কিভাবে হতে পারে।

কহিনুর ঝর্ণার পানি থেকে পা তুলে দরজার দিকে এগিয়ে আসলো। আবারও চেষ্টা করবে ভেবে ধাক্কা দিতেই ওক অবাক করে দরজা খুলে গেলো। কি অদ্ভুত কহিনুরের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। মানে ছেলেটা ওকে ঠকাইনি। কিন্তু ও কোথায় গেলো? কহিনুর ভাবতে ভাবতে চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। বিশাল বাড়িটা দেখতে রাজমহলের ন্যায় ঝলমল করছে। তবে বেশ নির্জন লোকজন খুব একটা নেই। কহিনুর চুপিচুপি বেরিয়ে আসলো।

সিঁড়ির নিচ থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে পরিবেশটা দেখে নিলো। ডাইনিং রুমের সোফায় এক মহিলা বসে বসে হেয়ারস্টাইল করছে কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়ে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। কহিনুর অবাক হচ্ছে না। পূর্বে এর চেয়েও মারাত্মক ঘটনার সম্মুখে পড়েছে। কহিনুর কিছু একটা ভেবে দ্রুতগতিতে ভদ্রমহিলার সম্মুখে হাজির হলো। ভনিতা ছাড়া গলা ঝেড়ে বলল,
মালকিন আপনাকে কি আমি সাহায্য করতে পারি?

ভদ্রমহিলার বয়স ঠিক অনুমান করা কঠিন। কতোটা হবে চল্লিশ নাকি তার কম? তবে সাজিয়ে গুছিয়ে পূণরায় বিয়ে দেওয়া নিশ্চয়ই যাবে। ঝিলমিলে গাউন টাইপের পোশাক পরে আছে। গায়ের রঙ ফর্সা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিদেশি। কহিনুরের কথা শুনে ভদ্রমহিলা ওর পা থেকে মাথা অবধি লক্ষ্য করলো। সন্দেহ হচ্ছে হয়তো। কহিনুর তড়িৎ গতিতে বলল,

আমি এই বাড়িতে নতুন গৃহ পরিচারিকা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি। মুসলিম ধর্মীয় বিধায় পর্দা করি তবে বিশ্বাস করুন একদম ফাঁকিবাজি করবো না। প্রতিটা কাজ নিষ্ঠাভরে করবো ইনশাআল্লাহ।
কহিনুর মিথ্যা গুলো বলে বারবার ঢোক গিললো। জীবন বাঁচানো ফরজ। এই বাড়ির কোনো মানুষের সহায়তা ছাড়া বাইরে যাওয়া সহজ হবে না। বুদ্ধি দিয়ে চলতে হবে। বাইরে দারোয়ান আছে। মস্তিষ্ক হঠাৎ ভালো কাজ করছে। কিভাবে বাইরে যাবে সবটা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো ভদ্রমহিলার কথা শুনে,

খান সাহেব তোমাকে নিযুক্ত করেছেন কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? যাইহোক বেঁধে দাও দেখি তোমার কেমন গুণ।শুনো মেয়ে খুব সাবধানে বাঁধবে বুঝলে?
কহিনুর উত্তর করলোনা। চুপচাপ বাঁধতে থাকলো চুলগুলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে চমৎকার করে বেঁধে ফেললো। ভদ্রমহিলার বেশ পছন্দ হলো। কহিনুরকে অবাক করে উনি বলে উঠলো,

চমৎকার হয়েছে। যখনই ডাকবো চলে আসবে ঠিক আছে? ওডারহাভেলের রাজকন্যা লিয়া আমি। তবুও দেখো এই বাড়িতে আমি কতটা গুরুত্বহীন? সকলে শুধু বড় মালকিন বলে পাগল। যাইহোক তোমার নাম কি?
কহিনুর কি বলবে বুঝতে পারছে না। কোনো নাম মাথায় আসছে না। তাই খট করে বলে দিলো,

আপনি আমাকে মুন বলে ডাকতে পারেন। মালকিন আমি শূন্য হাতে এসেছি দয়াকরে কিছু পোশাকের ব্যবস্থা করে দিবেন? যেকোনো পোশাক হলে চলবে। বিনিময়ে আমি আপনাকে চমৎকার করে সাজিয়ে দিবো। অষ্ট্রেলিয়া থাকা অবস্থায় এক ডাক্তার পত্নীর মেকোভার করেছি আমি। নিরাশ হবেন না।আমার আল্লাহ সাক্ষী আছেন।
কহিনুরের মন খারাপ হলো শেষের কথাগুলো বলতে। মায়ের জন্য খুব যত্ন নিয়ে মেকাপ করতে শিখেছিলো পরিচিত এক আন্টির থেকে। আজ সেটা এভাবে কাজে লাগবে ভাবেনি। পোশাক পরিবর্তন করা অতি জরুরী। রাগী লোকটাকে ধোকা দিতে নতুন পোশাকের প্রয়োজন। কহিনুর আশা করেনি ভদ্রমহিলা রাজি হবেন তবুও ওকে অবাক করে উনি বললেন,

নিশ্চয়ই দিবো। কিচেনের পাশের কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করো আমি তোমার পোশাকের ব্যবস্থা করছি। তবে মনে রেখো মেয়ে পার্টির আগে কিন্তু আমার মেকাপ চাই বুঝেছো?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলো। ভয় করছে না তেমন না। তবে কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছে। আজ পার্টির সময় যখন লোকজন আসবে সেই সুযোগে ও ঠিক পালিয়ে যাবে।শুধুমাত্র রাতের অপেক্ষা।

মেয়ের কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। কক্ষটা ওর ভীষণ প্রিয়। যত্ন করে আগলে রেখেছে ধুলাবালি পড়তে দেয়নি। মেয়েটা নেই কিন্তু ওর রেখে যাওয়া স্মৃতি আছে যেটা নিয়েই ওর বেঁচে থাকা। ছেলের জন্মের পরে আবারও বাচ্চার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু হয়নি। ভেবেছিলো একটা মেয়ে হবে যেটা কহিনুরের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করবে। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। বাধ্য হয়েছিলো অন্য পথ অবলম্বনের কিন্তু সেখানেও কত ঝামেলা।

শেষমেশ আশা ছেড়ে দিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে বেঁচে আছে। জুবায়ের যখন বাড়িতে থাকে অধরা এই কক্ষে ভুলেও আসেনা। লোকটা কষ্ট পাবে। অধরা বিছানা থেকে শুরু করে প্রতিটা জিনিসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শেষমেশ কিছু একটা ভেবে ড্রয়ার খুঁলল। ঠিক তখনই ড্রায়ের ভেতর থেকে আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসলো। কহিনুরের দেহত্যাগের পরে ভাগ্যলিপি এখানে বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। সেটা আস্তে করে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো। ওকে অবাক করে সেটা শূন্যে ভাসতে ভাসতে মিলিয়ে গেলো। সবটা চোখের পলকে ঘটে গেলো। অধরার শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। কেমন গোলকধাঁধার মতো লাগছে। প্রশ্ন জাগলো এতো বছর পরে এমন কেনো হলো? ওর ধ্যান ভাঙলো জুবায়েরের কথা শুনে। লোকটা এতোক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো।

বাইরে এসো কথা আছে।
জুবায়েরের গম্ভীর আওয়াজে অধরা ভয় পাচ্ছে। লোকটা কি রাগ করেছে বুঝতে পারছে না। ভয়ে ভয়ে ওর পিছু পিছু এগিয়ে গেলো। নিজেদের কক্ষে গিয়ে ঢকঢক করে পানি গলাই ঢেলে নিয়ে বলল,
বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি। ওটা হঠাৎ করে কিভাবে জানি গায়েব হয়ে গেলো। এতোদিন ঠিক ছিল। এমন কেনো হলো?
জুবায়ের থমথমে মুখ নিয়ে উত্তর দিলো,

জাদুলিপির মালকিন এসে গেছে তাই সে আর বন্ধি হয়ে থাকতে চাইছে না। যার ছিল ওটা তাঁর কাছে ফিরে গেছে।
জুবায়েরের কথা শুনে অধরা চোখ বড় বড় করে ফেলল। জাদুলিপি শেষের দিকে কহিনুরের ছিল মানে ওটা কহিনুরের কাছে আবারও চলে গেছে কিন্তু কিভাবে সম্ভব?

প্রশ্ন করোনা আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না। রহস্য আবারও আমাদের ঘিরে ধরেছে। প্রথমধাপের সূচনা হয়ে গেছে। বিপদ কোন দিক থেকে আসবে জানিনা। সাবধানে থাকতে হবে। ছেলেটাকে ভাবছি দূরে পাঠিয়ে দিবো। এখানে থাকলে বিপদ পিছু ছাড়বে না। একদিকে মেয়েটাকে বহুকাল পরে দেখতে পাওয়ার বাসনা অন্যদিকে বিপদের ভয় কিভাবে কি করবো মাথা কাজ করছে না।

কেউ কোথাও যাবেনা। এই বাড়িতে কালো শক্তির উপাসনা হয়না তবুও কেনো বিপদ হবে বলুনতো? মেয়েটা নিশ্চয়ই আসবে । যার মধ্যে কহিনুরের শক্তি আছে। আচ্ছা মেয়েটা কি আমাদের নূরের মতো দেখতে হবে?
জুবায়ের মাথা নাড়ালো কিছুই জানেনা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেয়েটা কেনো ওদের নিজের হলোনা ভেবে। একটা বাচ্চার জন্য কতকিছু করেছে।

লাষ্ট অবস্থায় কঠিন একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলো কিন্তু সেটাতে ব্যার্থ কি সফল বোঝার আগে রহস্যজনক ভাবে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। এদিকে ব্যবসাতে লাল বাতি জ্বলছে প্যারা আর প্যারা। খান সাহেব হাত ধুয়ে পড়ে আছে। খবর নিয়ে জেনেছে সবটা এখন পানির মতো পরিস্কার। ইতিহাসের পূণরাবৃত্তি ঘটছে। একে একে সবাই ফিরছে। আচ্ছা তবে কি ওরাও ফিরবে? না না কিছুতেই হতে পারে না। জুবায়ের দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করলো। জামসেদের সঙ্গে কথা বলা জরুরী। বহু কষ্টের পর এই পরিবারে কাঙ্ক্ষিত সুখ এসেছিলো তবে সেটা কার ভুলে আবারও বিনষ্ট হতে চলেছে?

খাল ভিলাতে রমরমা আয়োজন চলছে। চারদিকে নানা রঙের মানুষের হাতে নেশাযুক্ত পানিয়। লোকেরা কোমর দুলিয়ে উদ্দাম নাচের সঙ্গে ঢকঢক করে কন্ঠনালিতে ঢেলে নিচ্ছে সেটা। দোতলায় দাঁড়িয়ে ইমরোজ খান সেটা লক্ষ করছে। এসব নেশাযুক্ত পানিয় দ্রবের প্রতি ওর প্রচণ্ড রকম অনিহা। আসলে সহ্য হয়না। রাগে পড়ে একদিন খেয়েছিলো তারপর অসুস্থ হয়ে দুদিন বিছানাতে পড়েছিলো।

হেকিম সাহেবের কড়া নিষেধ কিছুতেই এসব আহার করা চলবে না। তাই এসব থেকে ওর দূরে থাকে। আজ দাদু ওর জন্য পার্টি রেখেছে। এঙ্গেজমেন্টের অনুষ্ঠান এটা। কোনো কমতি রাখা হয়নি। মেয়েদের এমন বেহায়া নাচানাচিতে ও প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে। ভেতর থেকে রাগ হচ্ছে। লৌকিকতার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হচ্ছে। অনুষ্ঠান শেষ হতে এখনো কতদেরি হবে বুঝতে পারছেনা। ঘনঘন টাইম দেখছে।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৮

হঠাৎ নিচে থেকে দাদুর কণ্ঠ পেয়ে ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সময় এসে গেছে ভেবে দ্রুত নেমে আসলো। দাদুর সঙ্গে সুন্দরী একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে ও চিনতে পারলোনা। প্রশ্ন করার আগেই মেয়েটা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইমরোজ হাতটা ধরতে চাইলো কিন্তু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা ছিটকে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে লোকজন হৈচৈ করে উঠলো। ইমরোজ কৌতূহল নিয়ে চেয়ে আছে মেয়েটার দিকে। কি এমন হলো যে মেয়েটা এভাবে ছিটকে পড়লো?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১০