কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ১০

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ১০
সাবিকুন নাহার নিপা

পলাশ অপেক্ষা করছে শাওনের জন্য। ওর পকেটে পাঁচশ টাকার একটা বান্ডেল। শাওনের টাকাটা আজ ফের‍ত দিবে। সেদিন শাওনের টাকা নিয়ে ওভাবে বলার পর ওর রাত কেটেছে নির্ঘুম। বিষয় টা কতো লজ্জার!
পলাশ ঘড়ি দেখলো। ও বসে আছে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে। শাওন এলো মিনিট দশেকের মধ্যে। আজ এসেছে একদম নরমাল সালোয়ার কামিজে। শাড়ি পরে আসে নি। হাতেও কোনো বক্স নেই। পলাশ একটু মন খারাপ করলো। শাওন বসতে বসতে বলল,

“বার্গার অর্ডার করে দাও। খুব খিদে পেয়েছে। সঙ্গে কোল্ড ড্রিংকসও। কী গরম টাই না পড়ছে উফ!”
পলাশ হাসলো। শাওনের কথাবার্তা শুনতে ওর সবসময়ই ভালো লাগে। শাওন বোধহয় জানেও না যে একটা সময় পর্যন্ত পলাশ শুধু ওর কথা শোনার জন্যই পিছু পিছু ঘুরতো।
বার্গার এসে গেছে। শাওন অতি দ্রুত খাচ্ছে। ইশারায় পলাশ কে খেতে বলল। পলাশ একটু একটু করে খাচ্ছে। ওর অবশ্য খিদে নেই। অতিরিক্ত সিগারেট খাওয়ার কারণে খিদেটা মরে গেছে।
শাওন কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে একটু গলা ভিজিয়ে নিলো। তারপর বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি আজ তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। ”
পলাশ একটু ভয় পেল। ভয়ার্ত গলায় বলল,
“তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
“না হয় নি। বাবা আমাকে সময় দিয়েছেন। কিন্তু মা বড্ড অস্থির হয়ে আছেন। ”
পলাশ চোখ নামিয়ে নিলো। হঠাৎ শাওনের হাত ধরে বলল,
“চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
শাওন বিস্মিত গলায় বলল,

“আজ ই করবে?”
“তুমি চাইলে আজ ই… নাহয় কাল।”
শাওন শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল,
“ধ্যাৎ! আচ্ছা বিয়ে নাহয় করলে। তারপর! ”
“সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুমি বড়পার বাসায় কয়েকটা দিন থাকবে, এদিকে আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলব।”
“এসব চিন্তা বাদ দাও। আগে তুমি নিজে কিছু করার চেষ্টা করো। এমন হুটহাট বিয়ে আমি জীবনেও করব না।”
পলাশ মন খারাপ করে বলল,

“আয়োজন করে বিয়ে হবে তো! তোমার মা কী বিয়ে হতে দিবে আমাদের।”
এই ভাবনা শাওনের মনেও বহুবার এসেছে। তবুও শক্ত হয়েছে। কোনো কিছুই সহজ না। আর যাই হোক, জোর করে বিয়ে কখনোই দিতে পারবে না।
শাওন বলল,

“আমার মায়ের এতো অপছন্দ হবার পিছনে তুমি নিজেও অনেকটা দায়ী। কী হতো পড়াশোনা টা শেষ করলে?”
পলাশ চুপ করে থাকে। ওর সন্দেহ সত্যি মনে হচ্ছে। শাওন পাল্টে গেছে। ওর মা হয়তো সত্যিই ব্রেনওয়াশ করে ফেলেছেন।
পলাশ স্মিত হেসে বলল,
“জীবনে বড় হতে গেলে সবসময় পড়াশোনা লাগে না। ”
শাওন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে,

“আমিও তোমার সেই বড় হওয়ার অপেক্ষায় থাকব। তবুও তুমি আমার দিক টা ভেবে দেখবে প্লিজ।”
“আমাকে আরও একটু সময় দাও শাওন। ”
শাওন জবাব দেয় না। মনে মনে আরও কিছু কথা গুছিয়ে নেয়। পলাশ আধ খাওয়া বার্গার টা আর ছুঁয়েও দেখে না। খানিকটা কোল্ড ড্রিংকস গলায় ঢেলে ভিজিয়ে নেয় গলাটা।
শাওন হঠাৎ গভীর গলায় বলল,

“তুমি আমার জন্য রাজনীতি টা ছেড়ে দিতে পারবে?”
পলাশ বিস্মিত চোখে তাকায়। শাওন আজ অবধি কখনো ওর কাজ নিয়ে কখনো অভিযোগ করে নি। পলাশ কিছু বলার আগে শাওন আবারও বলে,

“এই সেক্টরে যত টা চালাক হওয়া দরকার, তুমি ততোটা চালাক না। তুমি হলে আলাভোলা মানুষ। তুমি সকালে কাজে যাবে, বিকেল বা সন্ধ্যায় ফিরবে। ফেরার সময় কাগজের ঠোঙাতে করে গরম পিয়াজু, জিলিপি আনবে। আমি চায়ের জল চাপিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করবে। তোমাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে ফুটতে থাকা গরম জলে চা পাতা দেব। ঘরে ঢুকে চায়ের মিষ্টি গন্ধে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। কারণ তুমি নরম মনের মানুষ। ”
পলাশ মুগ্ধ হয়ে শুনলো। এরকম একটা জীবন বোধহয় সবাই ই চায়। পলাশেরও ভারী লোভ হয়। শাওন বুঝতে পারে ওর মনে কী চলছে। হাত ধরে বলে,

“একটা বার ভেবে দেখবে প্লিজ।”
পলাশ মাথা নাড়ে। শাওন হাসে। আনন্দে ঝলমল করে ওঠে ওর মুখ টা।
রাস্তায় বেরিয়ে রিকশা নেয়। শাওন রিকশায় উঠে বলে,
“আজ আমি রিকশায় এভাবেই হাত ধরে ঘুরব তোমার সঙ্গে। ”
পলাশও শক্ত করে হাত ধরে রাখে। দুজনের কেউই জানেনা যে এটাই ওদের জীবনের শেষ আনন্দঘন মুহুর্ত।

“এখন তোর ভাত খাওয়ার সময়। আমি এসে খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে দিলাম তাই না?”
দিলশাদ চৌধুরী হাসলেন। ঘড়িতে বাজে চারটা বিশ। বললেন,
“আমি অনিয়ম করি না একটার মধ্যে আমার খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট।”
“তোর ছেলে, মেয়ে দুটো বড্ড ভালো হয়েছে। ঠিকঠাক মানুষ করতে পেরেছিস।”
দিলশাদ বুঝে ফেলেন সুরমার কথার মধ্যে আক্ষেপ লুকিয়ে আছে। তিনি একটু হাসেন। বলেন,
“শাওনের মুখের আদল টা তোর মতো হলেও তোর চেয়ে সুন্দর হয়েছে। বাড়াবাড়ি রকমের ফর্সা না হয়েই ভালো হয়েছে।

“কলেজে ওঠার পর মাঝেমধ্যে মনে হতো আমার নজর লেগেই বোধহয় মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে। ”
“ধুর! যত আজেবাজে কথা। ”
সুরমা বেগম হাসেন। আজ এখানে এসেছেন কাউকে না জানিয়ে। দিলশাদের সাথে তার কিছু কথা আছে। যে কথাগুলো সে আর কাউকে বলতে চায় না। দিলশাদ বললেন,
“যা বলতে চাচ্ছিস বল। এতো আগপিছ ভেবে কী হবে।”
সুরমা বেগম কাতর গলায় বললেন,

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৯

“শাওনকে আমি বিয়ে দেব। বড্ড নিরুপায় হয়েই তোর কাছে এসেছি। জীবনে এই প্রথমবার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছি না। মেয়েটার বিয়ে দেয়া খুব দরকার। তোর তো অনেক জানাশোনা, অনেক লোকের সাথে পরিচয়। শাওনের জন্য একটা পাত্র খুঁজে দিতে পারবি?”
দিলশাদ চৌধুরী অবাক চোখে তার সামনে বসা এক ক্লান্ত মা’কে দেখলেন। মাথা নেড়ে বললেন,
“আমি চেষ্টা করব। নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। ‘

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ১১