কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৯

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৯
সাবিকুন নাহার নিপা

ঢাউস সাইজের এক মগ চা নিয়ে বারান্দায় বসলো শাওন। সঙ্গে ভাজা মুড়ি। এই মুড়ি বাবা গ্রাম থেকে এনেছেন ওর জন্য। বাবা মানুষ টা অন্য সবার কাছে যেমন ই হোক, শাওনের কাছে হান্ড্রেড মার্কস পাবে। আজ অবধি সে শাওন কে ধমক দেয়া তো দূরের কথা জোরে নাম টা পর্যন্ত ডাকে নি। কিন্তু এই মানুষ টা’কেই ও দেখেছে ভাইয়াকে নির্মম ভাবে মারতে। সেসব দেখে ওর মন খারাপ হতো। এখনো হয়। বাবা আর ভাইয়ার শীতল সম্পর্ক দেখেও খুব মন খারাপ হয়।

সকাল সকাল এসব ভেবে মন খারাপ করতে চায় না শাওন। আকাশে আজ মেঘ নেই। অথচ কাল কী বৃষ্টিটাই না ছিলো। ঝলমলে রোদ উঠবে আজ। শাওন চায়ে মুড়ি ভিজিয়ে খাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলো। পলাশের অনেকগুলো মেসেজ এসেছে। গত রাতে সিম অফ রেখেছিল যে সেটা ওর মনে নেই। শাওন অতো তাড়া দেখালো না পলাশের মেসেজ পেয়েও। তবে কী পলাশের প্রতি ওর অভিমান টা এখনো আছে! আচ্ছা এই অভিমানের কী কোনো মানে হয়!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শাওন নিউজফিড স্ক্রল করতে লাগলো। হঠাৎ রিশাবের টাইমলাইনের ফটোগুলোতে চোখ আটকে গেল। ওদের বারান্দার গাছের ছবি দিয়েছে। কী সুন্দর বারান্দা। শাওন কমেন্টে লিখলো, এতো সুন্দর কেন!
সঙ্গে সঙ্গে রিশাব মেসেঞ্জারে লিখলো,
“হাই শাওন। আজ তোমার মন ভালো তো?”
শাওন হাসলো। ও জবাবে লিখলো,
“কেমন আছেন? আপনাদের বারান্দা টা এতো সুন্দর কেন?”
রিশাব লিখলো,

“সামনাসামনি আরও সুন্দর। এই তোমরা কবে আসছ?”
“ভাইয়া ছুটি ম্যানেজ করতে পারলে এই সপ্তাহেই।”
“গ্রেট! অপেক্ষায় থাকলাম।”
“আপনার অফিস নেই?”
“আছে। টি ব্রেক চলছে। ”
“আপনিও চা খাচ্ছেন?”
“না আমি কফি খাচ্ছি। তুমি চা খাচ্ছ?”

শাওন ওর চায়ের মগের ছবি তুলে রিশাব কে পাঠালো। রিশাব সেটা দেখে হেসে ফেলল। দুজনের আরও কিছুক্ষন টুকটাক গল্প হলো। শাওনের চ্যাটিং করতে ভালোই লাগছিল কিন্তু ম্যুড টা অফ হয়ে গেল পলাশের মেসেজ দেখে। পলাশ লিখেছে,
“তুমি অনেক বদলে গেছ শাওন। মেসেঞ্জারে থেকেও আমি মেসেজ দেখো নি এরকম খুব কম ই হয়েছে। তোমার মা বোধহয় সত্যিই জিতে গেলেন।”

মেসেজ দেখে শাওনের মন খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। পলাশের সঙ্গে ওর এখন কোনো রকম ঝগড়া ঝামেলা কিছু হয় নি। তবুও এড়িয়ে চলছে। কারণও অতি তুচ্ছ। এই ব্যাপার টা নিয়ে বাড়তি চাপের মধ্যে আছে ও। কারো সঙ্গে আলোচনা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু মা আর সৌমি দুজনেই পলাশ কে দেখতে পারে না। এদের হাবভাবে মনে হয় পলাশ এদের কাছ থেকে সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছে।
শাওনের চা খাওয়া শেষ। রান্নাঘরের সিংকে মগ রাখতে গিয়ে দেখলো দীপা রান্নাঘরে। ও’কে দেখে বলল,

“আপু কিছু লাগবে।”
শাওন একটু ভেবে বলল,
“হু। তুমি ফ্রী আছ?”
“হ্যাঁ। ”
“আমার ঘরে একটু আসবে? একটা সিরিয়াস টপিকে কথা বলব।”
“চলো।”

শাওন দরজা বন্ধ করে দিলো। বলল,
“মা’কে ব্যাপার টা শুনাতে চাচ্ছি না দীপা।”
“নিশ্চিন্ত থাকো আপু। আমি কাউকে কিছু বলব না।”
শাওন ঠোঁট কামড়াচ্ছে। দীপা তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শাওন ইতস্তত করে বলল,
“পলাশ কে নিয়ে ব্যাপার টা। ”
দীপা উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
“কিছু হয়েছে আপু?”
“আরে না। বলছি শোনো।”

দীপাকে পলাশের ঘটনা টুকু খুলে বলল। যে কারনে ওর মন খারাপ হয়েছে সেটাও বলল। সবকিছু বলার পর শাওন বলল,
” ব্যাপার টা কী ছোটলোকি হয়ে গেছে দীপা? আমার আসলে কিছুই ভালো লাগছে না। যদিও অল্প কিছু টাকা। কিন্তু ওর টাকা চাওয়ার রিজন টা শুনেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
দীপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পলাশ ছেলেটাকে ওর একটুও পছন্দ হয় নি। একবারই দেখেছিল। পাশে দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না ঠিকঠাক। মাঝে হচ্ছিলো সিগারেটের ফ্যাক্টরির পাশে দাঁড়িয়েছে। এইটুকু ব্যাপারে দীপার খারাপ লেগেছে ব্যাপার টা বলতেও শাওন কে খারাপ লাগে। শাওন জবাবের অপেক্ষায় আছে। দীপা বলল,
“আপু তোমার মন হয়তো পলাশ ভাইয়ের কাজ কর্ম এক্সেপ্ট করতে পারছে না। সেজন্য তোমার এতো মন খারাপ লাগছে।

শাওন চুপ করে রইলো। এই সত্যি এড়াতে চাইলেও এড়ানো সম্ভব না। দীপা আবারও বলল,
“এই যে তুমি তার জন্য এতো ত্যাগ করতে যাচ্ছ সে তোমার জন্য কিছু করছে না এই ব্যপার টা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে না তো আপু।”
শাওন বেখায়েলে বলে ফেলল,

“হ্যাঁ দীপা। আমি চাই ও বদলাক। অল্প একটু বদলাক। ও’কে দেখলে মায়ের, ভাইয়ার রুক্ষ চেহারা টা যেন নরম হয়। রাস্তা দিয়ে চলার সময় মিনিমাম শ্রদ্ধা টুকু যেন সবাই করে। ”
“তাহলে এই ব্যাপার টা তাকে বলো। তোমাকে পেতে হলে তাকে একটু বদলাতে হবে। ”
শাওন এলোমেলো দৃষ্টিতে দীপার দিকে তাকালো। বলল,
“ভালোবাসায় শর্ত খাটাবো?”

“ভালোবাসার সংজ্ঞা আমি অন্যরকম ভাবে বুঝি আপু। ভালোবাসা মানে ভালোয় যেমন থাকা, তেমনি মন্দতে থাকা। ”
শাওন চমৎকৃত হলো দীপার কথা শুনে। কী সুন্দর করে কথাগুলো বুঝিয়ে বলল। ওর এখন কতো হালকা লাগছে।
সুরমা বেগম দরজা ধাক্কাচ্ছেন।
“শাওন! দরজা বন্ধ করে কী করিস? দীপা কই? সুহাস কত্তোবার ফোন করেছে।”
দীপা দরজা খুলতে যায়। শাওন হঠাৎ হাত চেপে ধরে। বলে,
“থ্যাংক ইউ দীপা। ”

দীপা স্মিত হাসলো। শাওন আবারও বলল,
“একটা জিনিস দেখাই দাঁড়াও।’
শাওন বইয়ের ভাজ থেকে একটা রিসিট হাতে দিয়ে বলল,
“তুমি যে শাড়ি টা ভাইয়াকে ফেরত দিয়েছ সেটা আসলে ভাইয়া তোমার জন্যই কিনেছিল। বিবাহবার্ষিকীতে দেয়ার জন্য। তুমি কিন্তু ফেরত দিয়ে ঠিক ই করেছো।

সুহাস অস্থির হচ্ছে অকারণেই। দীপা ফোন ধরছে না, এরমানে ও ব্যস্ত আছে। ফ্রী হলেই কল ব্যাক করবে। অথচ ও শুধু শুধুই অস্থির হচ্ছে। সুহাস নিজের উপর বিরক্ত হলো। ফোনের দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে। বেশীক্ষন তাকাতে হলো না। তার আগেই দীপা ফোন করলো।
সুহাস ফোন ধরেই কঠিন গলায় বলল,

“তোমাকে এতবার ফোন কেন দিতে হয়? পড়ার সময় ফোন টা পাশে রাখা যায় না?”
“পড়ছিলাম না। আপুর রুমে ছিলাম। ”
“মানে কী? শাওনের সঙ্গে আড্ডা মারার সময় এটা? রাতেও তো নাক ডেকে ঘুমাও। পরীক্ষার সময় তো দুইটা গোল্লা পাবে। ”
দীপা নি:শব্দে হাসলো। সুহাস খানিকক্ষণ একা একা কথা বলে থামলো। তারপর বলল,
“তোমাকে একটা মেসেজ দিয়েছি। দেখে রিপ্লাই দাও।”
“আচ্ছা।”

দীপা ফোন রেখে মেসেজ টা দেখলো। সুহাস শুধু সরি লিখেছে।
কাল বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফেরার পর সুহাস একটা অপ্রিয় কাজ করে ফেলেছে। অলরেডি তার জন্য কয়েকবার সরিও বলেছে দীপাকে। আবারও বলছে এখন।

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ৭

সুহাস কাল ঘোরের মধ্যে দীপাকে চুমু দিয়েছে। দীপাও বাঁধা দেয় নি। যখন ঘোর কেটেছে তখন নিজেই নিজের কপাল চাপড়েছে। দীপাকে সরি বললেও লজ্জায় কোনো জবাব দেয় নি।
দীপা এখনো কোনো জবাব দেয় নি। ফোন টা রেখে সুহাসের কাবার্ড টা খুলল। সেই শাড়িটা আর একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।

কি করিলে বলো পাইব তোমারে পর্ব ১০