খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩১

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩১
আভা ইসলাম রাত্রি

বিশাল আয়োজনে গ্রামে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেহজাদ আয়ুষ্মান তপ্ত আওয়াজে সম্মেলনের ভাষন শেষ করে সবে স্টেজ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। শেহজাদকে একা পেয়ে সঙ্গেসঙ্গে কজন দুঃস্থ গ্রামবাসী দৌঁড়ে তার দিকে এগিয়ে আসে। তারা শেহজাদের পাশে ঘেঁষে দাড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে মর্তুজা ঘিরে ধরে শেহজাদকে। গ্রামবাসি বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ায় কাতর চোখে শেহজাদের দিকে চায়। শেহজাদ মর্তুজাকে ইশারা করে, সরে দাঁড়ায় মর্তুজা। শেহজাদ চোখ দিয়ে ভরসা দেয় গ্রামবাসিকে। একজন সবার আগে এগিয়ে আসে,

‘নেতাসাহেব, আমার একটা জোয়ান মাইয়া ঘরে আহে। এরে বিয়ে দিতাম পারতাসি না। মাইয়াডার একজায়গায় খুব কষ্ট কইরা বিয়া ঠিক করেছি। এহন তারা টাহা চায়। আমি বেটা গরীব, ধান চাষ করি। ষাইট হাজার টাহা কোথা থেকে দিমু? আফনে আমারে সাহায্য করেন নেতাসাহেব।’
লোকের কথা বলার ভঙ্গি নিতান্তই কষ্টকর ছিল। অর্ধবৃদ্ধ লোক শেহজাদের হাত চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শেহজাদ আলগোছে হাতে হাতে রেখে ভরসা দিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আপনার মেয়ের জন্যে ঠিক করা পাত্রকে আমার কাছে পাঠাবেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলব। যৌতুক দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেবেন না কখনো, হু?’

অর্ধবৃদ্ধ লোক শেহজাদের দিকে আকাশ সমান কৃতজ্ঞতা নিয়ে চায়। শেহজাদের প্রতি মন থেকে দোয়া করে দেয়। নেতাসাহেব তাদের একমাত্র ভরসার মানুষ, আজ পর্যন্ত কেউ বিপদে শেহজাদকে পাশে পায় নি এমন হয়নি। একে একে সবার সমস্যার সমাধান করে দেয় শেহজাদ। এবার বাড়ি ফেরার পালা। দুপুর হয়ে আসছে প্রায়। বাড়ির সবাই শেহজাদের জন্যে অপেক্ষায়। শেহজাদ মর্তুজাকে জিজ্ঞেস করে,

‘আর কিছু বাকি আছে? বাড়ি ফিরব।’
মর্তুজা নম্র কণ্ঠে উত্তর দেয় সঙ্গেসঙ্গে, ‘নেই নেতাসাহেব। তবে — ‘
‘কি খবর মেয়র সাহেব, কতদিন পর গ্রামে দেখলাম।’

চেনা শত্রুর কণ্ঠ শেহজাদের কানে প্রবেশ করল, শেহজাদ উঁকি দিয়ে সামনে চায়। অমল ঠাকুরের একমাত্র বন্ধু, উদয় শিকদার আসছেন এদিকেই। শেহজাদ তাকে দেখে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। বুক টানটান করে, দুহাত বুকের মধ্যে ভাঁজ করে ভ্রু কুঁচকে চাওনি নিক্ষেপ করল উদয়ের দিকে। উদয় শিকদার অর্ধবৃদ্ধ, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এদিকে আসছেন। শেহজাদ উদয় শিকদারের পায়ের দিকে একপল চেয়ে দেখে। পায়ের এ অবস্থা স্বয়ং শেহজাদের কাজ সেটা ভেবে শেহজাদ হঠাৎই মনের মধ্যে আত্মিক শান্তি অনুভব করে।

দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হলে শেহজাদ সালাম দেয়। উদয় সালামের উত্তর দেবার ধৈর্য্য রাখেন না। অপমান করার উদ্দেশ্যে বলেন,
‘গ্রামের একটা মেয়ে যৌতুকের জন্যে বিয়ে করতে পারছে না। তোমার উচিৎ তো তাকে বিয়ে করা নেওয়া,যেমন করেছিল সবুজ চাষার বেলায় ওর মেয়েকে বিয়ে করে। শুনেছি তোমার বউ নাকি কালো, গরীব একদম। তাহলে আরেকটা বিয়ে করে নাও, সময় তো এক্ষুনি।’

শেহজাদ শুনে, ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফেটে পরে একদম। মর্তুজা তাদের দুজনের কথার ধরন শুনে বুঝে ফেলে অনেককিছু। এখন যে এরা দুজন একজন আরেকজনের ব্যক্তিগত বিষয় ফাঁস করবেন সেটা আর ঘটা করে বলে দিতে হল না মর্তুজাকে। সে তাৎক্ষণিক সে জায়গা থেকে সরে যায়। শেহজাদ চোখ তুলে চায়, ঈষৎ হেসে জবাব দেয়,

‘শেহজাদ আয়ুষ্মান একজনেই সন্তুষ্ট। পথে–প্রান্তরে, মাঠে–ঘাটে বিয়ে করার মধ্যে পুরুষত্ব নেই। আমার মনে হয়, এবার আপনার একটা বিরতি নেওয়া উচিত। চার বিয়ের বেলায় আপনার বিয়ের সংখ্যা এগারো পেরুল। আপনি নিশ্চয়ই এত সম্পত্তি রেখে যান নি, আপনার এগারো বউয়ের সন্তানদের জন্যে।’
হাঁটুর বয়সী পুরুষের মুখে এমন অপমান সহ্য হয়না উদয়ের। মুখ–চোখ রক্তিম হয়ে যায়। উদয় দাত খিঁচিয়ে খিঁচিয়ে বলেন,

‘এত ফরফর করে কথা বলা শিখেছ আজকাল। মেয়র হয়ে মাটিতে যেন পা পরে না কারো। তা গ্রামের পদ এবার ছেড়ে দিলেই পারো। কদিক সামলাবে, অন্যরা কি সুযোগ পাবে না?’
শেহজাদ হালকা হেসে শান্ত স্বরে বলে,

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। নতুনরা এবার সুযোগ পাক। আমি ব্যাপারটা দেখব। এবার আসছি, বাড়িতে কাজ আছে।’
শেহজাদ আর এক মুহুর্ত দেরি করে না। সালাম দিয়েই মর্তুজাকে ডেকে বেরিয়ে যায়। উদয় পেছনে দাঁড়িয়ে রেগে ফোঁসফোঁস করতে থাকেন শুধু। শেহজাদের কথা শুনে বোঝা গেল, সে নিজের কাউকেই গ্রামের পদ দেবে। কিন্তু কাকে দেবে? উদয় খোঁজ লাগালেন।

মেহজাদসহ আয়ুষ্মান পরিবার এসেছেন গ্রামের দক্ষিণে একজন সাধারণ স্কুল মাস্টারের ছোট মেয়েকে দেখার উদ্দেশ্যে। রেখা বেগম এই সম্বন্ধ নিয়ে কিছুটা নারাজ বটে। বড় পুত্র এক গরীবের মেয়েকে বিয়ে করে আনল, মানা যায়। এখন ছোট পুত্রকে কি না সামান্য স্কুল মাস্টারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছে? কিন্তু রেখা বেগম মুখে তেমন কিছুই প্রকাশ করছেন না, শেহজাদ নিজে এ বিয়ে ঠিক করেছে। দ্বিমত প্রকাশ করলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে মেহজাদকে তেমন চিন্তিত দেখা যাচ্ছে না। সে আরাম করে গাড়িতে বসে গেইম খেলছে সেলফোনে। চিত্রা নিকাবের আড়ালে মেহজাদকে দেখে। তারপর পাশে থাকা শেহজাদের হাতে খোঁচা দিয়ে ডাকে নিজের কাছে। শেহজাদ চিত্রার কথা শোনার জন্যে কিছুটা ঝুঁকে এলে চিত্রা ফিসফিস করে বলে,

‘মেয়ে দেখার আগে আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল বোধহয়। তারও তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে।’
শেহজাদ সরে বসে। শান্ত স্বরে চিত্রাকে জানায়,
‘বিয়ে পরিবার থেকেই ঠিক করা উত্তম। আমি যা ভালো মনে করেছি, করব। মেয়ে পছন্দ না হলে অন্য একজন দেখব। ওর পছন্দ মাথায় আছে আমার।’

চিত্রার আর কিছু এবার বলার থাকল না। ফ্যালফ্যাল চোখে আরো একবার দেখে নেয় সামনে বসে থাকা মেহজাদকে।
মেয়ের বাড়িতে এলাহী আয়োজন না হলেও, বেশ ছিমছাম আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ি ততটা বিশাল না হলেও ছোট বাড়িতে যেন নরম এক আভিজাত্য আছে। বাড়ির সকল কোণ ঘিরে রয়েছে শৌখিনতার ছোঁয়া। কনের বাবা সবাইকে নিয়ে ছোট এক বাংলো ঘরে বসালেন। নাস্তা–পানি আনা হল। কনের বাবা নিতান্তই ভদ্র মানুষ। কথাবার্তায় কৃত্রিম আদিক্ষেতা না থাকলেও, মেহমানদারিতে কোনো খামতি ছিল না।

বাড়ির পুরুষরা এক ঘরে কনের বাবার সঙ্গে কথা বলছেন। মহিলারা ভেতরের ঘরে চলে গিয়েছেন। চিত্রা আশপাশ চেয়ে দেখে নিকাব খুলে বসল ফ্যানের নিচে। কনের মা সবাইকে শরবত করে দিলেন। রেখা বেগম খুব একটা কথা বলছেন না। যা বলার শেফালি এবং চিত্রা বলছে। শেফালি দু-একবার রেখাকে ইশারা করলেও তাকে কথা বলতে দেখা গেল না।
দুপুরে খাবার পরে, শেফালি কনের মাকে বললেন,

‘মেয়েকে এবার নিয়ে আসেন ভাবি।’
কনের মা সঙ্গেসঙ্গে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। কনেকে নিয়ে আসা হল। নত মুখে, বেগুনি রঙের সুতির শাড়ি গায়ে জড়িয়ে সুন্দরী এক মেয়ে তাদের সামনে এল। শেফালি নিজের পাশে কনেকে বসালেন। ছোটখাটো কথা জিজ্ঞেস করলেন। কনে বেশ নম্র গলায় উত্তর দিচ্ছে সবার কথা। চিত্রা এসব দেখে যাচ্ছে।

বারবার মনে পরছে, এত আয়োজন করে সব হচ্ছে, অথচ মেহজাদ এ বিয়েতে রাজি না। রেখা বেগম ফাঁকেফাঁকে জিজ্ঞেস করছেন, রান্না পারে কি না, বিয়ের থালা সাজাতে পারে কি না, পান সাজাতে পারে কি না, দোয়া দুরুদ কেমন পারে। রেখার কথা অনুযায়ী কনে সূরা ফাতেহা পরে শুনাল। রেখা এবার কিছুটা সন্তুষ্ট হলেন। কনে তাদের পছন্দ হয়েছে।

অতঃপর এক আকস্মিক সন্ধায় মেহজাদের বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে বিয়ের দিন ধার্য্য করা হল। মেহজাদ সব শুনেও কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে। কনেকে এখন অব্দি ভালো করে চোখে দেখার প্রয়োজনবোধটুকু সে করেনি।

শেহজাদ কনেকে উপহার স্বরূপ স্বর্ণের আংটি দিল। রেখা বেগম এবং শেফালি দুজন মিলে হাতের চুড়ি দিলেন।
চিত্রা কি দিবে ভেবে না পেয়ে নিজের গলা থেকে খুলে স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিল কনেকে। এভাবেই মেহজাদের জীবনের এক গুরুত্তপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার অমতেই নেওয়া হল।

সম্পূর্ন আয়ুষ্মান মহলে সাজসাজ রব লেগে গেছে। বসার ঘরে আয়ুষ্মান পরিবার আলোচনায় বসেছেন। বিয়ের আয়োজন ঘটা করে করা হবে এবার। ছোট ছেলে, তার উপর আবার বিলেতি। কনের বাড়ি এবার যে বিশাল অঙ্কের পণ গুনতেই হবে। রেখা বেগম নওশাদ আয়ুষ্মানের জন্যে পান সাজাতে সাজাতে বললেন,

‘বড় ছেলে বিয়ে করেছে অনাথের মত, আমাদের ছাড়া, মেনে নিয়েছি। কিন্তু এবার ছোট ছেলের বিয়ে হবে ধুমধাম করে, গ্রামের লোকেরা চেয়ে চেয়ে দেখবে, আয়ুষ্মান মহলের পুত্রের বিয়ে। তা, যৌতুক কত নেওয়া যায় ভাবলেন না কিছু শেহজাদের আব্বাজান?’
নওশাদ পান মুখে তুলেন। চিবুতে চিবুতে বললেন,

‘আমাদের তো আর কম নেই কিছু। তবুও একটা নিয়ম তো আছে। একটা বাছুর সহ গরু, সত্তর হাজার টাকা, আর মেহজাদের চালানোর জন্যে একটা ছোট মোটরসাইকেল দিয়ে দিবে। এতেই চলবে না?’
রেখা বেগম বললেন,
‘সত্তর হাজার টাকা কম পরে যায়। ছেলে আমার এতই নাটা নাকি, লাখ দিতে হবে।’
নওশাদ দিরুক্তি করে বসলেন,
‘ওরা গরীব মাস্টার, পারবে না লাখে যেতে।’

‘কেন পারবে না? এমনি এমনি আয়ুষ্মান পরিবারে মেয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না।’
বসার ঘরে মুহূর্তেই হইচই লেগে গেল। যৌতুকের মত ঘৃণ্য প্রথা নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা শেহজাদের মাথা ধরিয়ে দিল। শেহজাদ আচমকা তীক্ষ্ম চোখে চারপাশ চেয়ে বলল,

‘হয়েছে, আর না। কেউ যৌতুক নিয়ে আলোচনা করবেন না। আমরা মেহজাদের বিয়েতে কোনো প্রকার পণ নিচ্ছি না।’
শেহজাদের এরূপ কথা আয়ুষ্মান মহল এক মুহূর্তে ঠাণ্ডা করে দিতে সক্ষম হল। রেখা ছেলের দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকালেন। নওশাদও যারপরনাই বিরক্ত। সৌরুভ আরাম করে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছেন, যেন এ হবে তিনি আগেই জানতেন। চিত্রা এক কোণে ঘোমটা দিয়ে দাড়িয়ে এদের আলোচনা নির্বাক দেখে যাচ্ছে শুধু। এদের চাওনি দেখে শেহজাদের বুঝতে অসুবিধা হল না যে এরা কারো শেহজাদের মতের উপর ‘হ্যাঁ ‘ নেই। শেহজাদ ক্লান্ত অনুভব করে। মাথা নিচু করে জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলে তারপর নওশাদের দিকে চায়। শুধায়,

‘আব্বাজান, আমরা কি মেহজাদকে বিক্রি করছি যে তাকে এত টাকা না দিলে আমরা কনে আনব না। এসব বন্ধ করুন। আমি গ্রামের মানুষদের ভরসা দেই, যৌতুক বন্ধ করার জন্যে। আর আমার বাড়িতে যৌতুক নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি আমি বরদাস্ত করব না অবশ্যই। মেহজাদের বিয়ে হবে, যা দেবার আমরা দেব। কনে পক্ষ থেকে শুধু মেহমানদারির দায়িত্ত্ব পালন করা হবে, ব্যাস। তবে তার আগে মেহজাদের একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া ভালো। আপাতত আয়ুষ্মান বাড়ির ছোট ছেলে হিসেবে ওর কাছে সবাই মেয়ে দেবে। কিন্তু ওর নিজের বলে কিছু না থাকলে মেয়ে এসে এ বাড়িতে শান্তি পাবে না। আমি মেহজাদের জন্যে একটা ভালো কাজের ব্যবস্থা করেছি।’

বসার ঘরের সবার চোখ আপাতত শেহজাদের দিকে। শেহজাদের কথা শুনে রেখা বেগম বাঁধ সাধেন, আওড়ান,
‘ কি বললে? আমাদের ছেলেরা যদি সারাজীবন কাজ না করেও থাকে, তবুও আমাদের সম্পত্তিতে তারা আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে সারাজীবন চলতে পারবে।’

শেহজাদ হালকা হাসে, শান্ত স্বরে বলে,
‘তবুও এটা আপনাদের সম্পত্তি, ওর নয়। ওর নিজের সম্পত্তি করা উচিৎ, নিজের পরিচয় গড়া উচিৎ। তাই নয় কি?’
এতক্ষণে মেহজাদ মাথা তুলে সেলফোন থেকে, শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘তা, কাজটা কি?’

শেহজাদ উত্তর দেয়,
‘এ গ্রামের নেতাপদ হাতে নাও, আমি সাহায্য করব। গ্রামের মানুষের দায়িত্ত্ব কাধে নাও, এ পেশার চেয়ে সম্মানজনক কিছু হয়না।’

মেহজাদ কিছুক্ষণ শেহজাদের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হঠাৎ করে হেসে উঠে শব্দ করে। মেহজাদের হাসি কারো কাছেই সুবিধার মনে হয়না। মেহজাদ পাগলের মত কিছুক্ষণ হেসে তারপর হাসি থামিয়ে সরাসরি শেহজাদের চোখের দিকে চেয়ে বলে কিছু কথা,

‘বাহ, আমার লাইফের ডিসিশন সবই তো তুমিই নিচ্ছ। আমার তো তাহলে কিছু করারই থাকল না। তুমি বললে আমাকে সব ছেড়ে বিয়ে করতে হবে, তুমি বললে আমার ঠিক তোমার জায়গা নিতে হবে, অর্থাৎ তুমি যা বলবে আমাকে ঠিক তাই করতে হবে। কেন? আমার নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেই? আমি কি নিজেকে নিয়ে কিছু ভাবতে পারি না? তুমি এ গ্রামের নেতা, শহরের মেয়র হতে পারো। কিন্তু আমার উপর নিজের কোনো সিদ্ধান্ত তুমি চাপিয়ে দিতে পারো না। নিজেকে নিয়ে, আগত সন্তান, স্ত্রী নিয়ে ভাবা উচিত তোমার। আমার চিন্তা করার জন্যে আমি আছি। দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দাও। সম্মান করি আমি তোমাকে, সেই সম্মানটুকু আমাকে করতে দাও অন্তত।’

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩০

মেহজাদ আর একটা বাড়তি কথা না বলে সোফা ছেড়ে উঠে ধপধপ পা ফেলে ঘরে চলে যায়। শেহজাদ শান্ত দৃষ্টিতে সব কথা শুনে, বুকের ভেতরে কেঁপে উঠে তার। বসার ঘর মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়। সবার বুকের ভেতরে ভয় জেগে উঠে, এই সাধের পরিবার অবশেষে কি ভেঙেই যাবে?
সবকিছুর শুরুটা যেন এখান থেকেই শুরু।

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩২